রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া ২৩

0
738

রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া

২৩
উতলা মনে সুস্হিরতা নয় অস্থিরতার প্রকাশ মিলে। মায়ার ক্ষেত্রেও তাই। তীব্র অস্থিরতায় কোচিং ক্লাসে মন ঠেকাতে পারছে না। কেমন নিশ্চল চোখে তাকিয়ে আছে হুয়াট বোর্ডের কালো লেখা গুলোর দিকে। একের পর এক লেসন বুঝাচ্ছে টিচার আর মায়া শুধু সেদিকে অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে। পাশেই জুই, শ্রেয়া নাদিয়া বসে। সবার মনোযোগ হুয়াট বোর্ডের লেখার উপর। থমথমে পরিবেশে উপস্থিত টিচারের লেসন বাক্যের শব্দ ছাড়া ক্লাসে কোথায় টুঁশব্দ পযন্ত নেই। এমন নিরবতা মাঝে হুট করেই উঠে দাঁড়াল মায়া। অধ্যায়নরত শিক্ষকে উদ্দেশ্যে বলল…

‘ স্যার আমার অসুস্থ লাগছে। আমি বাসায় যাব।

মায়ার হঠাৎ কথায় ক্লাসে উপস্থিত সকল স্টুডেন্টে নজর পরল মায়ার উপর। ততক্ষণ হুয়াট বোর্ডের লেসন বুঝানো অধ্যায়নরত রহমান সাহেবও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল মায়ার দিকে। মায়া তখন অসুস্থ মুখভঙ্গিতে তাকিয়ে। জুই, শ্রেয়া মায়ার দু-পাশে বসায় ওকে খোঁচাল। কি হয়েছে আকারে-ইঙ্গিতে জানতে চাইল। মায়া তেমন কিছুই বলল না আর না তাকাল ওদের দিকে। একরোখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রহমান সাহেবের দিকে বেড়িয়ে যাওয়ার সম্মতি পাওয়ার আশায়। হালকা ভ্রুর কুঁচকে মায়াকে দেখল রহমান সাহেব। মায়াকে অসুস্থ মনে হওয়ায় তিনি প্রশ্ন তুলে জানতে চাইল…

‘ কি সমস্যা?
মায়ার তৎক্ষনাৎ উত্তর আসল ক্লান্তিতে…
‘ স্যার আমার খারাপ লাগছে। বেশ অসুস্থ ফিল করছি। ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছি না। দূর্বলতা কাজ করছে শরীরে।

মায়ার অসুস্থতা নিয়ে আর ঘাটাল না রহমান সাহেব। সহজ গলায় সম্মতি দিল মায়াকে যাওয়ার..

‘ আচ্ছা যাও।

স্যারের পারমিশন পেতেই মায়া বই খাতা গুছিয়ে কাঁধে ব্যাগ চড়িয়ে বেড়িয়ে এলো স্যারকে সালাম দিয়ে। জুঁই তখনো ক্লাসে বসে সন্দিহান দৃষ্টিতে মায়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে। হুট করে মায়ার কি হলো বুঝতে পারল না সে। মায়া অসুস্থ হলে জুইকে কেন বললো না এতক্ষণ? কেন বা মায়া অসুস্থ অবস্থায় জুইকে সঙ্গে না নিয়ে একা চলে গেল? কিন্তু মায়াকে দেখে জুইয়ের মনে হচ্ছে না সে অসুস্থ। দিব্বি হেঁটে চলে যাচ্ছে। এমনকি যাওয়ার পূর্বে জুইকে একটু বলে পযন্ত গেল না। কিন্তু কেন? জুই বুঝল না মায়ার মন খারাপে বিষয়টি। শুধু মায়াকে ক্লাস হতে বেড়িয়ে যেতে দেখল। কোচিং ক্লাস শেষ হতে আরও এক ঘন্টা বাকি। আপাতত এই এক ঘন্টা জুই বাকি ক্লাস গুলো শেষ করে নিক তারপর না-হয় বাসায় গিয়ে জেনে নিবে মায়া আজ ক্লাস না করার কারণটি। এমনিতেও মায়ার হাবভাব ভালো না। বড় কিছু হওয়ার আগে বাসায় গিয়ে যেভাবে হোক আরিফের কানে তুলতে হবে বিষয়টি। ক্লাস পুনরায় কন্টিনিউ হতে জুই সেদিকে তাকিয়ে মনোযোগী হলো। মায়া ততক্ষণে কোচিং সেন্টারের বিল্ডিং হতে বেড়িয়ে রাস্তায় নামল। এদিক সেদিক তাকিয়ে হাঁটা ধরল বাসার রাস্তার দিকে। আজ আর অটো- রিকশা কিছু নিল না। কারণ সামনে ওর বিশেষ একটা কাজ আছে। আর এই কাজের জন্যই তো মায়া স্যারকে মিথ্যা বলে ক্লাস মিস দিলো। উহু! আসলে মিথ্যা নয় সত্যি মায়া অসুস্থ, তবে শারীরিক ভাবে নয় মানসিক ভাবে। সেই মানসিক যন্ত্রণার জন্য মায়ার কোনো কিছুতেই মন ঠিকছে না। মায়া ফুটপাত ধরে হেঁটে হেঁটে রাস্তার মুরে আসল। অনুসন্ধান চোখে এদিক সেদিক তাকাল। আজ দুপুরের তো রিদের সঙ্গে মায়ার এদিকটায় দেখা হয়েছিল। এখন আসিফদেরও এদিকটায় কোথায় পাওয়া যাওয়ার কথা। মায়া হেঁটে আরও একটু সামনে এগোল। আশেপাশে রিদ বা আসিফ কাউকে দেখল না। যে রেস্টুরেন্টে মায়া দুপুরে বসে রিদের সঙ্গে কথা বলেছিল সেখানটাও রিদ বা তাদের লোকদের দেখা গেল না। মায়ার হতাশায় বুক ভারি হলো। মনে মনে আরও একবার মায়া নিজেকে শুধালো, এই ভেবে যে, তখন মায়ার ঐভাবে রিদের কথায় রেগে গিয়ে রিয়েক্ট করা উচিত হয়নি। মায়াতো শুরু থেকেই জানতো রিদ খান যে ত্যাড়া স্বভাবের। মায়াকেও অপছন্দ করে। এমন অপছন্দের মানুষকে সাহায্য করতে গিয়ে যে রিদ খান মায়াকে একটু আধটু অপমান করবে সেটা মায়ার মাথায় আগেই রাখার দরকার ছিল। তাছাড়া প্রয়োজনটা মায়ার ছিল, রিদের নয়। তাই ব্যবহারে নমনীয়তা মায়ার মাঝে রাখা দরকার ছিল রিদ খানের কথায় রেগে না গিয়ে। ভুল মায়ার হয়েছে। সাহায্য মায়ার দরকার রিদ খান থেকে। এখন মায়া রিদ খানকে সরি বলে আবারও সুন্দর করে বুঝিয়ে বলবে মায়ার নিখোঁজ স্বামীকে খোঁজা কতোটা দরকার। এজন্য তো ক্লাস মিস করে রিদের সঙ্গে দেখা করতে বের হলো সে। মায়া আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক সেদিক তাকাল অনুসন্ধান চোখে। আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে আরও একটু সামনে এগোল। দৃষ্টি তখনো মায়া এলোমেলো রিদকে খুজতে। কিন্তু হঠাৎই
দেখা হলো সিনিয়র ভাই রাকিবের সঙ্গে। মূলত রাকিব রাস্তা পার হয়ে এদিকটায় আসছিল কোচিংয়ে সেন্টারে উদ্দেশ্যে। কিন্তু পথিমধ্যে মায়াকে দেখায় সে মত বদলিয়ে কোচিং সেন্টারের না গিয়ে মায়ার পথে এসে দাঁড়াল। এগিয়ে আসতে আসতে মায়াকে কুশলাদি বিনিময় করে জানতে চাইল…

‘ ভালো আছো মায়া?

অন্যমনা হয়ে হাঁটছিল মায়া। রাকিবের কন্ঠস্বর পেয়েই চোখ তুলে তাকাতে দেখল রাকিবের হাসিহাসি মুখখানা। মায়া অস্তিত্ব হলো। তারপরও সৌজন্য বজায় রেখে অল্প হেঁসে বলল…

‘ জ্বি ভাইয়া ভালো! আপনি?
‘ এইতো ভালো। তোমাকে পেয়ে আরও ভালো হয়ে গেলাম। তা এই সময়ের কোচিংয়ে বাহিরে কি করছো? তোমার তো ক্লাস চলছে মনে হয়?

রাকিবের কথায় হাসফাস করল মায়া। লোকটা সরাসরি মায়াকে আজকাল প্রেমনিবেদন করে বেড়ায়। মুখের ভাষায় অন্তত তাই প্রকাশ হয়। মায়া ইতস্ততায় মিইয়ে কাঁধে ব্যাগটা টেনে বলল…

‘ জ্বি ভাইয়া ক্লাস চলছে। আসলে আমি একটু অসুস্থ ফিল করছিলাম সেজন্য স্যারকে বলে বাসায় চলে যাচ্ছি।

মায়ার কথা শেষ হতেই উদ্বিগ্নতার দেখা গেল রাকিবের মাঝে। আগ বাড়িয়ে মায়া কপালে হাত রেখে অসুস্থতা প্ররখ করতে গেলে মায়া দ্রুততায় পিছু হাঁটে। রাকিব সেদিকে তাকিয়ে একই উদ্বিগ্নতায় বলল…

‘ কি হলো মায়া পিছিয়ে যাচ্ছে কেন? তুমি কি বেশি অসুস্থ? চলো ডাক্তারের কাছে যায়।

রাকিবের অযথা কেয়া দেখানোটা পছন্দ হলো না মায়া। মায়াকে কেউ অকারণে অযাচিত ভাবে সামান্য ছুঁয়ে দিবে সেটা মোটেও পছন্দ না। তারপরও মুখ বাড়িয়ে রাকিবকে কঠিন বাক্য বলল না। এই এলাকার ছেলে। তারপর আরিফের সহপাঠী বন্ধু। আবার মায়ার সিনিয়র। তাই মায়া কিছু বললে এখন ঝামেলা হতে পারে সেইভেবে কথা বাড়াল না। শুধু বিরক্তি চেপে রাকিবকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইল। কিন্তু অধৈর্য্যের রাকিব ফের মায়ার পথ আঁটকে দাঁড়িয়ে একই উদ্বিগ্নতা দেখিয়ে বলল…

‘ কি হলো কোথায় যাচ্ছে তুমি? চলো আমার সাথে ডাক্তারের কাছে যাবে। ভয় পেয়ো না, আমি আরিফকে ফোন করে বলে দেব তুমি আমার সাথে আছো।

বিরুক্তির জেদ্দি গলায় বলল মায়া…

‘ ভাইয়া প্লিজ পথ ছাড়ুন। আমার কিছু হয়নি! ভালো আছি আমি।

মায়ার কুঁচকানো চোখ মুখ দেখে রাকিব জানতে চাইল…

‘ তুমি কি আমার সাথে অস্তিত্ববোধ করছো মায়া?
মায়ার তৎক্ষনাৎ উত্তর…
‘ জ্বি!

‘ আসসালামু আলাইকুম ভাবি! কোনো সমস্যা?

রাকিব কিছু বলার আগেই গমগমে গলার স্বর কানে আসল দুজনের। মায়া, রাকিব দুজনেরই হাল্কা চমকে পিছনে তাকাল। দেখল সুন্দর দেখতে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে। ছেলেটির নাম রাহাত। রাকিব চিনে। রিদ খানের ছেলেপেলে হলো রাহাত। মায়াও চিনে রাহাতকে তবে নাম জানে না। মায়ার সাথে রোজ সকাল বিকাল করে দেখা হয় রাস্তায়। তখন মায়াকে ভাবি ভাবি ডেকে কুশলাদি জিগ্যেস করে। প্রথম প্রথম মায়া ভয় পেলেও একটা সময় বিরক্তি হতো আগ বাড়িয়ে ভাবি ডাকা নিয়ে। কিন্তু এখন আর বিরক্তি হয়না। বরং ভালোই লাগে এতো বড় দামড়া দাামড়া ছেলেদের কাছে সম্মান পেতে। শুধু এরা নয়, দেখা যায় রাস্তা ঘাটে, কলেজে, ক্যান্টিনে সবখানে ছোট -বড় সবাই মায়াকে ভাবি ডেকে সম্মোধন করে এজন্য এখন আর মায়া ঐভাবে রিয়েক্ট করে না। বরং মায়া নিজেকে সেইফ ফিল করে। মায়ার মনহয় এই ছেলে গুলোর জন্যই মায়ার আশেপাশটা সবর্দা নিরাপদ থাকে। কেউ মায়াকে অহেতুক বিরক্ত করতে পারে না। যদিও বা কেউ মায়াকে ডিস্টার্ব করতে আসে তাহলে দেখা যায় তার কিছুক্ষণে মধ্যে রাহাতের মতোন একটা না একটা ছেলে হাজির হবে সেখানে আর মায়াকে ভাবি ভাবি ডেকে সম্মান দিয়ে ঐছেলেকে সঙ্গে করে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাবে তক্ষুনি। এতে মায়ার সুবিধা হয়। এখন আর বাজে কোনো পরিস্থিতির মুখে পরতে হয় না মায়াকে এদের জন্য। সেজন্য মায়াও নিজেকে সবার জাতির ভাবি বলেই মনে করে। যে জাতির ভাইয়ের জন্য মায়াকে ভাবি ডাকা হোকনা কেন? সেই জাতির ভাইতো আর মায়াকে ডিস্টার্ব করছে না, সেজন্য মায়াকে এই দামড়া দামড়া ছেলেপেলেদের ভাবি ডাকা নিয়ে আপত্তি নেই। বরং ডাকুক। এতে লাভ মায়ারই। এই যেমন এখন মায়াকে সিনিয়র ভাই রাকিবের হাত থেকে বাঁচাতে হাজির হলো এই ছেলে। এতে মায়ার সেই জাতির ভাইকে মনে মনে একটা ধন্যবাদ দিতে মন চাইছে। যদি কখনো জাতির ভাইকে সামনে থেকে মায়া পাই তাহলে অবশ্যই ধন্যবাদ একটা দিবে। মায়া রাহাত ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো। বেশ সৌজন্যতা দেখিয়ে বলল…

‘ ওয়ালাইকুম সালাম ভাইয়া। আপাতত একটু সমস্যায় আছি বলতে পারেন।

মায়ার কথায় রাহাত এগিয়ে আসল। রাকিব চোখ ঘুরিয়ে মায়ার দিকে তাকাল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। রাহাত ভাবি ডাকছে মায়া সেই ডাকে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে জবাব দিচ্ছে। আবার নিজের সমস্যা কথাও বলতে চাচ্ছে বলে ব্যাপারটা রাকিবের ভালো লাগল না। সে অসন্তুষ্ট চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে। রাহাত ততক্ষণে মায়ার সামনে দাঁড়িয়ে রাকিবকে সরাসরি দেখে মায়ার দিকে তাকাল। ব্যবহারে নমনীয়তা দেখে সম্মানে দিয়ে বলল…

‘ জ্বি ভাবি আমাকে বলুন কি সমস্যা? আমি আপনাকে হেল্প করছি।

রাকিবকে আঁড়চোখে এক পলক দেখে মায়া রাহাতের কাছে সরাসরি বলল…

‘ আসলে তেমন কিছু না। আমি আসিফ ভাইদের খোঁজ করছিলাম। আশেপাশে কোথাও দেখছিনা তাই আপনাকে জিগ্যেসা করলাম। আসলে আমার রিদ ভাইয়ার সাথে একটা জরুরি কাজ ছিল। এখন উনাকে কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারেন?

সন্দিহার৷ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাকিব মায়ার কথার পিষ্ট প্রশ্ন করে জানতে চাইল…

‘ তোমার রিদ ভাইয়ের সাথে কি কাজ?

রাকিবের কথায় মায়া বিরক্তি নিয়ে কিছু বলবে তার আগেই ঝটপট উত্তর করল রাহাত বলল…

‘ ভাবি! ভাইতো আমাদের সামনেই আছে। ঐযে, কালো থাই গ্লাসটা দেখছেন এটা পিছনে ভাই বসে আছে। এটা রিদ ভাইয়ের বাবার অফিস। এখন ভাই এখানেই আছে। কালো গ্লাস হওয়ায় আপনি দেখতে পারছে না তবে আমাদেরকে ভাই সরাসরি দেখতে পারছে গ্লাসের ওপাশ থেকে। আপনি ভিতরে যান। ভাইকে সেখানে পাবেন।

বিষন্নয়ে মায়া ঘাড় ঘুরে তাকাল কয়েক কদম দূরে রাস্তা পাশে বড়ো থাই গ্লাসের উপর। সূর্যের আলোয় ভিতরকার মানুষজন দেখা যাচ্ছে না তবে ভিতরে বসে থাকা মানুষ গুলো যে অনাহেষে মায়াদের দেখা যাচ্ছে সেটা বেশ বুঝতে পারলো মায়া। হঠাৎ মায়ার ধ্যান ভাঙলো রাহাতের পরবর্তী কথায়। রাহাত এগিয়ে এসে রাকিবের একবাহু ঝাপটে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলল…

‘ আরে রাকিব ভাই তোমার সাথে আমার অনেক দিন ধরে গল্প করা হয়না। তুমি আমার সাথে চলো। আজ আড্ডা দিব। এখানে দাঁড়িয়ে কি করবে? চলো! চলো!

রাহাত কথা গুলো বলতে বলতে রাকিবের হাত টেনেটুনে জোর পূর্বক নিয়ে গেল নিজের সাথে। রাকিব তখনো মায়ার দিকে তাকিয়ে বলছে নিজের খেয়াল রাখতে। মায়া রাহাত চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। চাপা শ্বাস ছেড়ে কাঁধের ব্যাগটা আরও একটু টেনে ফুটপাত ছেড়ে কয়েক কদম এগিয়ে দাঁড়াল থাই গ্লাসের দরজার সামনে। মায়া ঢুকা দেওয়ার আগেই ভিতর থেকে আসিফ দরজা খুলে বত্রিশ পাটিদাঁত দেখিয়ে হাসলো। মায়া আসিফের হাসিহাসি মুখখানার দিকে তাকিয়ে বলল…

‘ ভাইয়া আপনাদের সাথে কথা ছিল। রিদ ভাইয়া কি ভিতরে আছেন?

‘ জ্বি আপু আসুন।

আসিফ দরজা ছেড়ে দাঁড়াতে মায়া পাশ কাটিয়ে ভিতর ঢুকতে মুখোমুখি হলো রিদের তীক্ষ্ণ প্রখর রোদে দৃষ্টির সঙ্গে। কেমন একঘোয়ামী কটমট চোখে তাকিয়ে মায়া দিকে। মায়া রিদের শক্ত দৃষ্টিতে থতমত খেয়ে বসল। ভাবল অসময়ে চলে আসায় হয়তো রিদ রেগে গেছে। কিন্তু মায়ার কথা বলাটা জরুরি ভেবে নিজেকে সাহস দিল। কয়েক কদম হেঁটে রিদের টেবিলের সামনে দাঁড়াতে দাঁড়াতে সালাম দিয়ে বলল…

‘ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।

রিদ উত্তর করলো না। বরং দৃষ্টিতে আরও তীক্ষ্ণতা তেজ বাড়লো মায়ার। মুখটাও কেমন শক্ত চোয়ালে দেখাল রিদের। মায়া বুঝল রিদ হুটহাট রেগে যাচ্ছে কেন? মায়া অনাকাঙ্ক্ষিত উপস্থিতে? নাকি অন্য কোনো কারণ? হয়তো মায়ার অসময়ে উপস্থিতর জন্য বিরক্ত। দুপুরে দিকে তো রিদ মায়াকে অপমান করেছিল আর তাতে মায়া রেগেমেগে পাল্টা জবাব দিয়েছিল। আর রিদ খানের সাহায্য চাইবে না বলে কর্ড়া কথাও শুনিয়েছিল। এখন আবার মায়াকে রিদ খানের দোয়ারে আসতে দেখে হয়তো মায়ার উপর রেগে যাচ্ছে। মায়া রিদের রাগ শান্ত করতে চাই বলে হাসফাস করে মিনমিন গলায় বলল…

‘ আই এমন সরি ভাইয়া। আসলে আমার তখন আপনার সাথে ঐভাবে রেগে কথা বলা উচিত হয়নি। আমার ভুল হয়েছে এজন্য আমি আবারও সরি। আমাকে ক্ষমা করে দিন ভাইয়া। আম…

মায়ার কথার মাঝেই শুনা গেল রিদের শক্ত তেজি গলার স্বর…
‘ আসিফ বাইরে যা।
‘ জ্বি ভাই!

মায়া চমকে পিছনে তাকাতে দেখল আসিফ ততক্ষণে দরজা বাহিরে চলে গেছে। এবং থাই গ্লাসটা টেনে বাহির থেকে বন্ধ করে দিচ্ছে। মায়া ঘাবড়ে সামনে রিদের দিকে তাকাল। রিদ তখনো মায়ার দিকে একই ভাবে তাকিয়ে। মায়া তাকানোতে চোখাচোখি হলো দুজনের। মায়া দৃষ্টি নত করলো। ভয়ার্ত মুখে আড়চোখে আশেপাশে তাকাল। বিশাল অসিফ কক্ষ জুড়ে মায়া আর রিদ ছাড়া অন্য কেউ নেই। মায়া হঠাৎ অজানা ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো। একা একটা মেয়ে হয়ে একটা ছেলে সঙ্গে এভাবে দেখা করতে চলে আসাটা মায়ার ঠিক হয়নি ভেবে আরও ভয়ার্ত হলো। এখন চলে যাওয়াটা মায়ার ঠিক হবে কিনা তাও ভাবল। যদি রিদের মতিগতি মায়ার নিকট ভালো না ঠেকে তাহলে টেবিলের উপর কাঁচের গ্লাস দিয়ে রিদের মাথা ফাটাবে বলে মনে মনে ঠিক করেও নিল। ভয়ার্ত ভাবুক মায়ার ধ্যান ভেঙে শুনা গেল রিদের স্বর…

‘ আমার রুচিতে পঁচা ধরেনি, যে আপনার প্রতি ইন্টারেস্ট দেখাব। অহেতুক ভয় পাওয়া বন্ধ করেন। রিদ খানের টেস্ট এতো নিচু নয় যে আপনার মতোন মেয়ের প্রতি রুচি দেখাবে। যার স্বামী থাকা শর্তেও রাস্তায় বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এমন একাধিক পুরুষে আসক্ত নারীরা আর যায় হোক রিদ খানের রুচিতে অন্তত পরে না তাঁরা।

রিদের কথার অপমানে মায়ার গায়ে কাটা দিয়ে উঠে রাগে। মায়া একাধিক পুরুষের আসক্ত নারী? এমন অপমানজনক কথা মায়াকে ওর জীবনেও কেউ বলেনি। ঘৃণায় মায়ার শরীর জ্বলে উঠল। এত সময় ধরে রিদ খানকে নিয়ে মনের ভিতরকার অজানা ভয়টা যেন মূহুর্তে কেটে গিয়ে তীব্র রাগ ভর করলো মায়ার শরীরে। কিন্তু তারপরও বোকামি করলো না। আর না দুপুরে মতোন রেগেমেগে আগুন হয়ে রিদকে অযাচিত কিছু বলতে চাইল না, যেটা মায়ার জন্য এই মূহুর্তে ভালো হবে না বলে মনে করল। কারণ মায়ার রিদের থেকে সাহায্য চাই। তাই ব্যবহারে নমনীয়তা মায়ার দরকার। রিদ খান তো তার ত্যাড়া স্বভাব দেখাবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মায়াকে আপাতত নিজের আত্মসম্মান সাইডে রেখে রিদের সঙ্গে ভদ্র ভাষায় কথা বলতে হবে। তবে একবার যদি মায়ার নিজের নিখোঁজ স্বামীর খোঁজ পেলে যায় রিদ থেকে তাহলে এই জীবনেও আর সে রিদ খানে দার সে দারবে না। তখন রিদ খান তার রাস্তায় আর মায়া ওর নিজের রাস্তায়। মায়া নিজের রাগ চেপে স্বাভাবিক ভাবেই রিদের শক্ত হয়ে থাকা মুখটা দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এসে ধুপ করে রিদের মুখোমুখি টেবিলের চেয়ারটা টেনে বসল। কাঁধের ব্যাগটা টেবিলে উপর রাখতে রাখতে রিদের কথার পিষ্টে সৌজন্যে হাসি বজায় রেখে বলল…

‘ কিযে বলেন না নেতা সাহেব? কোথায় আপনি আর কোথায় আমি। আপনি হলেন একজন অসাধারণ টাকাপয়সা ওয়া বড়লোক মানুষ আর আমি হলাম অতি সাধারণ একজন দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। আপনার রুচিতে আমাকে পরলে হবে বলুন? আপনার সাথে আমার যায়? আমাকে সাথে যায় আমার লেভেলের কোনো মধ্যবিত্ত পরিবারের অতি সাধারণ কোনো যুবককে। আমার ধরার হলে সেই টাইপেরই কাউকে ধরবো। তারপরও আপনার ইন্টারেস্টে আসার মতোন স্পর্ধা দেখাব না। আচ্ছা যায় হোক! আপনাকে একটু ঝালাতে চলে আসলাম। যদিও আমার উপস্থিতিতে আপনি বিরক্ত বোধ করছেন। তারপরও এই মূহুর্তে আপনাকে ছাড়া আমি দ্বিতীয় কোনো অপশন খোঁজে পাচ্ছি না বলেই বাধ্য হয়ে চলে আসলাম। আসলে আপনার কাছে আমার গোপনীয়তার বিষয়টি ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়ে গেছে, যেটা আপনি ছাড়া আমার পরিবারের বড়োরা আর কেউ জানে না। সেজন্য আপনাকে ছাড়া এই মূহুর্তে আমি দ্বিতীয় কোনো পথ দেখছিনা, যে আমাকে আমার নিখোঁজ স্বামী খোঁজ দিতে পারবে। আপনার তো অনেক ক্ষমতা, অনেক দাপট, আপনি চাইলেই আমার সমস্যাটি সহজেই সমাধান করে দিতে পারবেন। আসলে আমার এতো তাড়ার কারণ হলো ঐ যে তখন আপনি এই থাই (আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে) গ্লাসটা দিয়ে রাস্তায় আমার সাথে একটা ছেলেকে দেখেছিলেন না? উনার নাম রাকিব। আমার বয়ফ্রেন্ড। লোকটা আমাকে প্রচুর ভালোবাসে। বিয়েও করতে চাই। কিন্তু আমি করতে পারছি না। আসলে আমি আঁটকে আছি আমার অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়েটার জন্য। স্বামীকে চিনে না। তাই তাঁকে ডিভোর্সটাও দিতে পারছি না। আর মেয়েদের তালাক না হলে যে দ্বিতীয় বিয়ে করা যায় না সেটাতো আপনি জানেনই ভাইয়া। তাই প্লিজ আমার দুপুর কথা গুলো আপনি মনে রাখবেন না। ছোটবোন বা বিয়াইন হিসাবে মাফ করে দিয়ে আমাকে একটু সাহায্য করুন প্লিজ। আমার ঐ লোকটাকে মানে আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে তাঁকে খোঁজে পাওয়া খুব দরকার। প্লিজ ভাইয়া আপনি আমার প্রয়োজনটা বুঝে লোকটাকে খোঁজে দিননা।

মায়া কথা গুলো শেষ করতে করতে টেবিলের উপর থাকা পানির গ্লাসটার হাতে নিয়ে এক চুমুকে সবটা শেষ করে আওয়াজ তুলে টেবিলে রেখে ফের তাকাল রিদের দিকে। মূহুর্তে চোখাচোখি হলো রিদের শীতল দৃষ্টিজোড়ার সাথে। এতক্ষণের শক্ত রাগী চোয়ালটা আর নেই রিদের। কেমন ঠান্ডা আর শীতল দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে মায়ার দিকে। মায়া রিদের হুটহাট মুড পরিবর্তন হওয়া কারণটা বুঝল না। লোকটা এই রেগে যায়, তো এই শীতল। রিদ হঠাৎ রেগে গেলে যাও বুঝা যায় এখন তান্ডব হবে কিন্তু একদম শীতল হয়ে গেলে আরও ভয় লাগে। তখন মায়ার মনে হয়, ঠান্ডা মাথায় রিদ খান আরও ভয়ানক। এবার আল্লাহ জানে এই লোক মায়ার সাথে আবার উল্টাপাল্টা কিছু করে না বসে। ভালো ভালো মায়ার ঝামেলাটা মিটে গেলেই কেটে পরবে সে। এই রিদ খানকে চিনে বলে জীবনে দাবিও করবে না। মুখোমুখি হওয়ায় তো দূর। এমনই স্বামী খোঁজে দিশেহারা হয়ে মায়া কতোগুলো মিথ্যা কথা বললো রাকিব ভাইকে জড়িয়ে। এবার যদি রিদ খান মায়ার মিথ্যা তাড়া দেওয়াটা বুঝে অন্তত ওর নিখোঁজ স্বামীর খোঁজটা এনে দেয় তাহলে মায়া আর সামনে পরতে চাইবে না এই রিদের। প্রতিবারই রিদ খানের অপমান ভিষণ গায়ে লাগে মায়ার। তাছাড়া মায়া এতো দিনে এতোটাও বুঝতে পারে না রিদ খানের মতো লোক কেন শুধু শুধু মায়ার পিছনে পরে মায়াকে অকারণে অপমান করে বেড়ায়। কি এমন শত্রুতা রিদ খানের সাথে মায়ার যার জন্য এমন করে? কই জুই, শ্রেয়া বা অন্য কোনো মেয়েদের সাথে তো মায়া রিদ খানকে কথা বলতেও দেখে না। এমনকি মায়ার বোন জুই! পাশাপাশি রিদের আত্মীয় ও হয়। কই জুইয়ের সাথে আজ পযন্ত রিদ খানকে দেখল না মুখ খুলে একটা কথা বলতে। সেখানে শুধু মায়ার সাথে কথাও বলে আবার অপমানিত করে। আজব!

‘ জানে মারা পরবে মনে হয়!
ভাবুক মায়া ধ্যান ভাঙলো রিদের নিটোল খাপছাড়া কথায়। চমকে উঠে তড়াক করে তাকাল রিদ শান্ত মুখটার দিকে। ‘কে জানে মারা পরবে? বিষয়টি বোধগম্য না হওয়া মায়া রিদকে প্রশ্ন করলো তক্ষুনি…

‘ কে মারা পরবে?
‘ আপনার বয়ফ্রেন্ড।
‘ মানে? কেন?

রিদ মায়ার উত্তেজনার বাক্যে উত্তর করলো না। অযাচিত কথা বলে মাথাটা আর গরম বানাতে চাচ্ছে না রিদ। তার যা করার সে এমনই করে নিবে। এই মহিলাকে বলে আর লাভ নেই। বয়ফ্রেন্ড জুটিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রেম করাটাও না-হয় সে পরে দেখে নিবে। আপাতত এই মহিলাকে একা পেয়ে এই মূহুর্তে হাত ছাড়া করবে না রিদ। সুযোগের সদয় ব্যবহার সেও করবে। কাল রাত অবধি রিদের মনে হয়েছিল বউ তার প্রেমে দিশেহারা হয়ে তাঁকে খোঁজচ্ছে। কিন্তু আজ দুপুর থেকে রিদের মনে হচ্ছে বিষয়টা উল্টো। তার ধারণা হয়তো ভুল ছিল। বউ তাকে ভালোবাসে খোঁজছে না বরং ডিভোর্সের আশায় তাঁকে চায়। আবার বলছে বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করবে। এই বিষয়টা যে রিদের কোথায় গিয়ে আঘাত করছে সেটা কাকে বুঝাবে রিদ? রিদ মায়ার মতিগতি বুঝতে চেয়ে আর শক্ত হলো না। বরং শান্ত আর গম্ভীর থাকল। হুট করে বসা চেয়ারে গা এলিয়ে টেবিলে উপর থাকা ছোট কিউব বলটা হাতে নিয়ে খেলতে খেলতে প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে মায়ার উদ্দেশ্য বলল…

‘ আপনার স্বামীর খোঁজ দিলে আমার লাভ? আমি কি পাব??

রিদের নিরদ্বিধায় আবদারে থমথমে খেয়ে গেল মায়া। খানিকটা লজ্জাও পেল। আসলেই তো রিদ খান কি আর মায়াকে এমনই এমনই ফ্রীতে কাজ করে দিবে? অবশ্যই কাজের বিনিময় লাগবে। তাহলে মায়া কেন এতক্ষণ যাবত টাকাপয়সা কথা ভাবিনি? কেন মায়ার মাথায় আসেনি দুনিয়াতে ফ্রীতে কোনো কিছু হয়না টাকা ছাড়া। ভাবলেও বা কি মায়ার কাছে তো টাকাপয়সা নেই। রিদ যদি মায়াকে সাহায্য করতে চেয়ে মোটা অংকের টাকা চায় তাহলে মায়া কি করে দিবে? কিভাবে যোগাড় করবে এতো গুলো টাকা?

‘ আমার কাছে তো এই মূহুর্তে টাকা নেই। তবে আপনি আমাকে বলুন কতো দিতে হবে আপনাকে?? আমি টাকা যোগাড় করে দিয়ে দিব দ্রুত।

‘ বাকি কাজ ফাঁকি। বাকি শব্দটা আমার ডিকশনারিতে নেই। যা দেওয়ার নগদে দিবেন তারপর কাজ হবে।

মায়া বেশ অসহায় বোধ করল টাকা না থাকায় সাথে বের অপমান হলো। কতো টাকা চাই রিদের সেটাও মায়া বুঝতে পারছে না। তবে রিদের মতিগতি বলছে সে অনেক টাকা চাইবে মায়ার কাছে থেকে। মায়া এতো টাকা যোগাড় করবে কোথায় থেকে?

‘ কতো চাই আপনার?

‘ আমার তো অনেক কিছুই চাই। আপনি কতো দিতে পারবেন সেটা বলেন?

‘ আপনি বলুন!
‘ দু লাখ

মায়া চমকে চোখ বড়ো বড়ো করে রিদের দিকে তাকায়। এতো টাকা মায়াকে বিক্রি করলেও পাওয়া যাবে না। সামান্য একটা লোকের তথ্য জন্য দু লাখ টাকা চাইছে এই লোক? আল্লাহ! মায়া এতক্ষণ বুঝতে পারছে এসব নেতাফেতারা শুধু মায়ার মতোন অসহায় মানুষের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে টাকা উশুল করে টাকার পাহাড় বানাচ্ছে। আর কিছু না।

‘সামান্য একটা মানুষের তথ্যর জন্য কেউ এতো টাকা চাই? এতো টাকা আমাকে বিক্রি করলেও পাওয়া যাবে না।
‘ আমি কিনব আপনায় হবেন বিক্রি আমার কাছে?

রিদের আপত্তিকর কথায় মায়া থমথমে খেয়ে বসে। রিদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়াতে হাসফাস করে মায়া ফের আপত্তি জানিয়ে মিনমিনিয়ে বলল…

‘ আমার কাছে এতো টাকা নেই। আপনি কমিয়ে বলুন।

‘ উহুম কমানো যাবে না। দু লাখই লাগবে আমার। তবে আপনাকে একটা পরামর্শ দেয়। দুইটা কিডনি দিয়ে কি করবেন? স্বামীর জন্য একটা কিডনি আমাকে দিয়ে দেন। আমি সেটা বিক্রি করে দেয়। আমার দু লাখ টাকাও আসবে, সাথে আপনি আপনার নিখোঁজ স্বামীর তথ্যও পেয়ে যাবেন। কি বিক্রি করবেন স্বামীর জন্য নিজের একটা কিডনি?

রিদের কথায় ভাবুক হলো মায়া। কথা গুলোও বেশ যুক্তিসংগত মনে হলো মায়ার কাছে। মায়া আসলেই দুইটা কিডনি দিয়ে কি করবে? একটা কিডনি বিক্রি করে দিলেই তো সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। তাছাড়া একটা কিডনি দিয়ে ও তো মানুষ স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারে। সেক্ষেত্রে মায়াও বাঁচবে। কিন্তু কথা হলো একটা কিডনি দিয়ে মানুষ বাঁচে কতোদিন? সেটাও তো মায়া জানে না। মায়ার আগে সেটা জানতে হবে তারপর বাকি সবকিছু। মায়া বেশ ভাবুক হয়ে প্রশ্ন করলো রিদকে…

‘ আচ্ছা একটা কিডনি দিয়ে মানুষ বাঁচে কতোদিন?

মায়াকে নিজের কথা জালে ফাঁসাতে পেয়ে রিদ বাঁকা হাসলো। তীক্ষ্ণ চোখ ঘুরাল মায়ার ভাবুক চেহারার দিকে। দীর্ঘ সময়ে নিয়ে হাতের মুঠোয় চেপে রাখা কিউব বলটা এবার টেবিলের রাখল। আর তাতে ছোট শব্দ হলো। কিউবটা টেবিলের উপর রাউন্ড তুলে রিদ মায়াকে বলল…

‘ এই ধরেন, অর্ধাঅর্ধি বছর বাঁচবেন! যেখানে ষাট বছর বাঁচতেন সেখানে এক কিডনি দিয়ে ত্রিশ বছর বাঁচবেন। তবে ত্রিশ বছরও কিন্তু কম না হ্যা? অনেক দিন কিন্তু! তাই স্বামী জন্য একটা কিডনি বিক্রি করায় যায়। কি বলেন?

রিদের কথায় তৎক্ষনাৎ মত বদলাল মায়া। আপত্তি করে বলল…

‘ উহুম! তাহলে কিডনি দেওয়া যাবে না! কিডনি প্ল্যানিং ক্যান্সেল। অন্য কিছু বলেন থাকলে।

‘ কেন? মত বদল করলেন নাকি? এখন আর স্বামীর লাগবে না?

‘ উহুম! স্বামীকে অবশ্যই চায়। তবে নিজের জীবনের বিনিময়ে নয়। আমার সংসারে পর নারী চায় না। দেখা গেল তাঁকে খোঁজতে গিয়ে একটা কিডনি আমার চলে গেল। বাকি এক কিডনি নিয়ে স্বামীর সাথে ত্রিশ বছর সংসার করার পর, আমি মারা গেলে, সে বাকি ত্রিশ বছর পার করার জন্য ধেই ধেই করে আরেকটা বিয়ে করে নিবে। আমি যে তারজন্য জীবন দিলাম সেটা দেখবে না। সব পুরুষ মানুষ একিই হয়। এদের বুড়ো বয়সেও কুড়ার ডাক দেয়। তাঁর জন্য স্বামীদের বিশ্বাস করতে নেই। আমিও করবো না। সেজন্য অল্পতে আমাকে মরলে চলবে না। আমি মরলে, আমার জায়গায় তার জীবনের ঠিক আরেক জনের জায়গায় হবে। আমি যে তাঁকে খোঁজতে গিয়ে নিজের আয়ু কমালাম সেটা আর সে দেখবে না। বরং সে দেখবে তার নতুন বউ। এবং আমাকে ভুলে দিব্যি সে সুখের সংসার করবে। আর সমাজ দেখানো অযুত দিবে আমাদের ইসলামের শরীয়তে চারটা বিয়ের বিধান আছে বলে, সেজন্য তার বউ নেই বলে সে আরেকটা বিয়ে করছে। আমি জীবিত থাকার অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করেনি এমনটা বলে আলগা পিরীতিও দেখাতে পারে। এজন্য কিডনির প্ল্যানিং ক্যান্সেল। এর চেয়ে ভালো আমি বরং দুই কিডনি নিয়ে জীবিত থেকে স্বামীর উপর নজর রাখি। মরে গেলে তো সবশেষ।

মায়া লম্বা চওড়া কথা রিদ হতভম্ব হয়ে গেল। সে কখনো ভাবিনি মায়া এতোটা গভীরে ভাবে। দুজনের পরিচয় এখনো হয়নি অথচ না দেখেই রিদকে সন্দেহ তালিকা ফেলে দিল তার বউ। তাছাড়া এই মেয়ের কথায় স্পষ্ট সে স্বামীর সংসার করতে চায়। রিদ বাজিয়ে দেখবে একটু?

‘ সংসার করতে চাও?
অন্যমনস্ক হওয়া রিদের কথা প্রথমবারের বুঝল না মায়া…
‘ জ্বি?
‘ সংসার করতে চান স্বামীর সাথে?
মায়া হাসফাস করে দৃষ্টি করলো রিদের থেকে। রিদ মায়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বুঝল মায়া রিদকে উত্তরটা দিতে সংকোচ বোধ করছে। সেজন্য রিদ মায়াকে উভয় দিয়ে বলল…

‘ নির্ভয়ে বলেন। আমি কাউকে বলবো না।
‘ হুম!
মায়া ছোট সম্মতিতে রিদের ভিতর কাঁপলো। সেই কম্পন শক্তপোক্ত হাতেও দেখা গেল। যার তুপে হাতের মুঠোয় থাকা বলটা বেখেয়ালি ছুটে ফ্লোরে পরল শব্দ করে। হঠাৎ শব্দে কেঁপে উঠল মায়া। বলটা ঘুরাতে ঘুরাতে কক্ষে একপাশে গিয়ে ঠেকল। মায়া সেদিকে এক পলক তাকিয়ে রিদের দিকে তাকাতে চোখাচোখি হলো রিদের ঘোলাটে অদ্ভুত দৃষ্টির সাথে। মায়ার শরীর কাটা দিল রিদের অদ্ভুত দৃষ্টিতে চোখাচোখি হতে। মায়া দৃষ্টি নত করলো। রিদ সেইভাবে জিগ্যেসা করল…

‘ আপনি যে বললেন, আপনার স্বামী পূর্ব বিবাহিত?
‘ উনি মিথ্যা বলেছেন আমায়। উনার কোনো বউ নেই।
‘ কি করে বুঝলেন?
‘ আমার বিশ্বাস সে বিবাহিত না।
‘ আপনার বিশ্বাস মিথ্যাও তো হতে পারে।
‘ হবে না।
‘ এতোটা কনফিডেন্স?
‘ না আত্মবিশ্বাস!
‘ যদি লোকটা খারাপ হয় তো?
‘ খারাপ হবে ভেবেই গ্রহণ করেছি তাঁকে।

রিদ আর কিছু বলতে পারলো না। তার বুক কাঁপছে। প্রচন্ড কাঁপছে। হয়তো না চাইতেও অনেক কিছু জেনে গেছে তাই। মায়া উপর অনেকক্ষণ দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকল একই ভাবে। তারপর হুট করে বলল…

‘ তাহলে এক কাজ করেন, আপনার জায়গায় আপনার স্বামীর একটা কিডনি দিয়ে ঢিল ডান করি। কি বলেন? তাঁকে খোঁজে পেলে, তাঁর একটা কিডনি না-হয় আমি রেখে দিব। এবং সে ত্রিশ বছর পর মারা গেলে তখন না-হয় আপনি আমাকে বিয়ে করে নিলেন কি বলেন?

এতক্ষণ যাবত রিদের সহজ ভাষায় মায়াও নরম হয়ে ছিল কিন্তু হঠাৎ রিদকে আগের ভঙ্গিতে ফেরতে দেখে মায়া হতাশ হয়। সেই সাথে বিরক্তও। আশ্চর্য মায়ার স্বামী মরলে এই লোককে কেন বিয়ে করতে যাবে? এই লোক আসল কোথায় থেকে আবার।

‘ আপনাকে কেন বিয়ে করবো?

‘ তো কি করবেন পরকীয়া চালাবেন আমার সাথে?

‘ বাজে কথা কেন বলছেন পরকীয়া কেন করবো?

‘ আপনার স্বামীর প্রতি দরদ দেখে আমার আপনার প্রতি একটু একটু ইন্টারেস্ট জাগছে। আপনাকে বিয়ে করা তো সম্ভব না। তবে পরকীয়া চালাতে সমস্যা নেই। ঘরে আপনার জামাই থাকবে, সেই ঘরে আমারও বউ থাকবে। রাতে জামাইকে সময় দিবেন আর দিনে আমাকে। পরকীয়া সম্পর্ক গুলা তো এমনই হয় নাকি? তারপর আপনার স্বামী যখন মারা যাবে তখন একেবারে না-হয় আমাকে বিয়ে করে নিলেন। কি করবেন বিয়ে আমাকে?

‘ অসম্ভব!

মায়ার নাক মুখ ছিটকে বলা কথাটাতে রিদ হাসলো। মায়াকে উদ্দেশ্য করে ফুরফুরে মেজাজে বলল…

‘ কি জানি অসম্ভব কিনা? তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনার ইজ্জত, আমার ইজ্জত, আমার ইজ্জত আপনার ইজ্জত টাইপ সম্পর্ক আছে। তাই আমাকে বেশি ভাই ভাই না ডেকে পরকীয়া স্বামীও ডাকতে পারেন আমি মাইন্ড করব না।

রিদের অসভ্য কথায় মায়া আর বসে থাকতে পারলো না। ঠাস করে উঠে কিছু না বলে চলে যেতে নিয়ে পিছনে ডেকে রিদ ফের বলল…

‘ রাগ দেখালে তো হবে না ম্যাডাম? কাল সকালে আপনাকে আবারও হাজিরা দিতে হবে এখানে, যদি স্বামী খোঁজ চান তো? তবে একা আসবেন অবশ্যই।

#চলিত….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here