দেওয়ানা_(আমার ভালোবাসা) #লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাল মায়া #পর্বঃ_০৯

0
1129

#দেওয়ানা_(আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাল মায়া
#পর্বঃ_০৯
.

🍂
ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে মনোযোগ সহকারে টিভি দেখছি আমি। সাথে রয়েছে হাতে আইসক্রিম বক্স,,,আইসক্রিম খাচ্ছি আর কাটুন দেখছিলাম। হঠাৎ বিজ্ঞাপন দেওয়াতে রিমোট হাতে নিয়ে চ্যানেল পাল্টাতে লাগলাম। হঠাৎ করে চোখে পড়ল একটা বাংলা ছবিতে, যেখানে রিনা খান, মৌসুমীকে ভিষণ ভাবে অত্যাচার করছে দেখে আমি নড়েচড়ে বসে আগ্রহ নিয়ে ছবিটা দেখতে লাগলাম। চোখ বুলিয়ে ছবিটার নামটাও দেখে নিলাম দজ্জাল শাশুড়ি। নামটা দেখে আগ্রহটা যেন আরও দ্বিগুন বেড়ে গেল আমার। তাই আগ্রহ মেটাতে ছবিটি দেখতে লাগলাম মনোযোগ সহকারে,,,

.
অতপর সম্পূর্ণ ছবিটা দেখার পর কষ্টে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে এই ভেবে যে,মৌসুমী এত কষ্ট করেছে সংসারের জন্য! নিজের হাতে ঘরের সব কাজ করেও শাশুড়ীর মন পেতো না। আর আমি সংসার তো বাধ দিলাম, ঘরের কোনো কাজও করি না কখনো। মৌসুমী সংসারের সব কাজ করেও ওর শাশুড়ি ওকে শেষ পযন্ত জবাই করে মারলো? হায় আল্লাহ! আর আমি কিনা বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছি কাজ না করে। না এটা ঘোর অন্যায় আমার সংসারে উপর। আর যায় হোক এই অন্যায়টা আমি কিছুতেই করতে পারি না। তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ থেকে আমি একা ঘরের সব কাজ করব। আমাদের কাজের লোকের আর দরকার নেই। ঘরে বউ থাকতে আবার কিসের কাজের লোক হ্যা? আমাকেও অবশ্যই মৌসুমীর মত লক্ষী বউ হতে হবে এই সংসারে।

.
কথাগুলো ভেবে উঠে দাঁড়িয়ে আইসক্রিমের বক্সটা টেবিলের উপর রেখে সোজা কিচেনের দিকে হাঁটা ধরলাম। উদ্দেশ্য কাজ করা। আমি কিচেন রুমে ঢুকতেই সার্ভেন্ডরা প্রথমে একটু করে চমকালেও পরবর্তীতে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে জিগ্যেসা করে বলে…

—” ম্যাম আপনার কিছু লাগবে? লাগলে আমাদের বলুন আমরা করে দিচ্ছি।

তাদের কথায় তেমন একটা প্রতিক্রিয়া জানালাম না। বরং আমি আমার মতো করে তাদের পাশ কাটিয়ে কাজে মনোযোগ হতে চেয়ে কিচেনের, এটা সেটা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে ধরে দেখতে দেখতে ওদের উদ্দেশ্য করে বলি,,,,

—” আমার কিছু লাগবে না বরং আমি এখানে কাজ করতে এসেছি। আপনারা সবাই বাহিরে যান। আমি সবার জন্য নাস্তা বানাবো, আমার এখন প্রচুর কাজ আছে বুঝলেন।

.
আমার এমন কথায় সবাই অদ্ভুত নজরে ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকাল। আমি সবার দৃষ্টি এরিয়ে কাজ করতে গেলে পাশ থেকে একজন সার্ভেন্ট আপত্তি করে বলে উঠে,,,,

.
—” ম্যাম আপনাকে যদি বড় স্যার বা বড় ম্যাডাম কিচেনে দেখে, তাহলে অনেক রাগ করবেন আমাদের উপর। হয়তো এর জন্য আমাদের চাকরিটাও থাকবে না ম্যাম। প্লিজ ম্যাম আপনি বলুন আমাদের কি কি করতে হবে আমরা করে দিচ্ছি আপনাকে।

.
তাদের কথায় আবারও আমার কোনো হেলদোল নেই, আমি আমার মতো মনোযোগ সহকারে কাজ করেই চলছি কোনো থামা থামি নাই,,,, যেন এ মুহূর্তে আমার কাজ ছাড়া অন্য কোন কিছু ভাবার সময় নেই, আমার পাশে কে কি বলছে, সেটা আমার কানে যাচ্ছেনা,,, তাই দাদা দাদির জন্য গ্রিন টি, আর বাকি সবার জন্য হট কফি বানিয়ে নিলাম আমি,,, সবাই বাড়ির বাগানে আড্ডায় মেতে উঠেছেন তাই আমি তাদের উদ্দেশ্যে নাস্তা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,, এবং সাথে আমার লাল ওড়না টা দিয়ে বউদের মতো করে ঘুমটা টেনে নিলাম,,,
আর যায় হোক বাড়ির বউ বলে কথা,, বউদের মতো তো থাকতেই হবে তাইনা,,, নয়তো মৌসুমির মতো লক্ষী বউ হবো কি করে,,, তাই আমার মন স্থির করে শত শত চিন্তা ভাবনায় পিছনে ফেলে নাস্তা হাতে অগ্রসর হলাম বাগানের দিকে,,,,

.

বাগানে সবাই গল্পে মেতে উঠেছে একটা সাথে,,, আমার পায়েল ঝনঝন শব্দ শুনে এক এক করে আমার দিকে তাকায় সবাই ,আমাকে এভাবে দেখে হয়তো চমকিয়েছে তা ওদের ফেস দেখেই বুঝতে পারছি আমি,,, সবাই কেমন হাঁ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে,, , হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে যে কি করছি আমি,,,, কিন্তুু এতোও আমার কোনো ভাবান্তর হলো না আমি লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে সামনে এগিয়ে হাতে থাকা ট্রেটা টেবিলের উপর রাখলাম, পরে সবাইকে এক এক করে দিতে লাগলাম,,,

.
আমার এমন অতি খাতির যত্ন হয়তো পছন্দ হয়নি কারও,,, তাই তখনি পাশ থেকে ফিহা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,

—” এ তুই বউ সেজে আছিস কেন নাস্তা হাতে নিয়ে হুম,,,

.
ফিহা কথায় আমি স্বাভাবিক ভাবেই বলে উঠি,,,

.
—“আমি এ বাড়ির বউ তাই ,,,

.
তখনি দাদুভাই সামনের থেকে বলে উঠে,,,

.
—” তা বুঝলাম কিন্তু তুই নাস্তা আনতে গেলি কেন ছাড়া সার্ভেন্টরা কই,, তুই কাজ করছিস কেন,,,

.
আমি আগের মতো করেই এক এক করে নাস্তা দিতে দিতে বলে উঠি,,,,

—” আজ থেকে আমি বাড়ির সব কাজ করব সার্ভেন্ট আর কোন কাজ করবে না তুমি তাদেরকে ছুটি দিয়ে দাও দাদাজান,,,

.
আমার এমন কথায় মূহুর্তেই ভ্রু কুঁচকে এলো সবার, আমি সবাইকে আবারও একপলক দেখে নিজের মতো করে কাজ করছি,,,

তখনি দাদী পাশ থেকে কপাট রাগ দেখিয়ে আমাকে প্রশ্ন করে বলে উঠে,,,,

.
—” কেন তুই কেন করবি বাড়ির সব কাজ তোকে কি বাড়ির কাজ করার জন্য আনা হয়েছে,,

দাদীর কথায় আমি উপর-নিচ মাথা নাড়ালাম যার অর্থ হ্যা বাড়ির কাজের জন্য আনা হয়েছে,,, আমার এমন মাথা নাড়ানোটা দাদীর রাগে ঘিঁ ঢালার মতো ছিল,,, আর সেটাই হলো,,, দাদী আমার আরও খানিকটা রেগে বলে উঠে,,,,

—” তোকে কে বলেছে এ কথা (দাদী)

দাদীর প্রশ্নে আমি স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে করতে বলি,,,,

—” রিনা খাঁন,,,

—” রিনা খাঁন কে (ফিহা) কনফিউজড হয়ে

আমি বিরক্তি নিয়ে ফিহার দিকে তাকায় রিনা খাঁন কে চিনেনা আজব মেয়ে,,, তারপর আবার মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে করতে বলে উঠি,,,,

.
—” মৌসুমির শাশুড়ি,,,

তখনি পাশ থেকে দাদি বলে উঠে,,,,

—-” মৌসুমি কে,,? (কনফিউজড হয়ে)

আমি অসহায় ফেস করে দাদীর দিকে তাকায়, দাদী আমার মৌসুমিকে চিনতে পারছে না এটা ভাবতেই খুন্ন হলাম আমি,,, পরে একরাশ কষ্ট নিয়ে বলে উঠি,,,,

—” তুমি মৌসুমি কে চেনো না দাদী,,,, রিনা খাঁনের ছেলে বউ মৌসুমি,,,

আমার কথায় রেগে গেলেন দাদী,,, কি এমন বললাম আমি সেটাই তো বুঝতে পারছি না আমি,,, আমি তো দাদীকে মৌসুমি কে তা চিনাচ্ছিলাম এতে করেও রেগে গেল দাদী আমার,,, দাদী কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠে,,,,

—” এই ওরা কারা,,,? আর তুই এভাবে কাজ করছিস কেন আমি তোকে বলেছি কাজ করতে,,,কে বলেছে কাজ করতে তোকে,,,

—” তোমাদের বলতে হবে কেন,,? আমি জানি বাড়ির বউদের সব কাজ করতে হয়,,, রান্না করা, কাপড় কাচা, খাবার খাওয়ানো, সবাই পা টিপে দেওয়া,,,,

.
কথাগুলো বলেই আমি দাঁড়িয়ে শতস্ফুত গলায় দাদীকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলে উঠি,,,

—” আমি বাড়ি বউ তাই তোমরা আমার সাথে বউদের মতো করে অাচরণ করবে,,,, তাই আজ থেকে তুমি হলে আমার দজ্জাল দাদাশাশুড়ি, আর তুমি হলে দজ্জাল ফুপিশাশুড়ী, (ফুপিকে উদ্দেশ্য করে),, তোমরা আজ থেকে আমাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করাবা, কথায় কথায় বকা দিবে, মারও দিবা,,,, আর ফুপি দজ্জাল শাশুড়ী তুমি আমার দাদী দজ্জাল শাশুড়ীকে কথায় কথায় আমার নামে কান ভরবা ঠিক আছে,,, সাথে এটাও বলবা মা দেখছো মেয়েটার বিয়ে হয়েছে আজ কতদিন হইছে,, এখনো পর্যন্ত একটা বাচ্চা দিতে পারল না,, আমাদের বংশে নামটাও রাখলো না মেয়েটা,, নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা আছে মেয়েটা মধ্যে,,, তখন দাদী দজ্জাল শাশুড়ী তুমি বলবা যে,,,” শুনো মেয়ে তোমাকে আমি দুইদিন সময় দিচ্ছি, তুমি দুই দিনের মধ্যে আমাকে একটা বাচ্চা দিবে,, বাচ্চা আমার চাইই চাই বুঝেছো,,,, আর তখনি আমি লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলবো আচ্ছা দিব,,,

পাশ থেকে নিহা আপুর এলোমেলো মাথায় বলে উঠে,,,

.
—” দুই দিনেননন বাচ্চা, কিমনে কি, রিদ ভাইয়া কি জানে,,,

.
আমার এমন বর্ণনার ধরণে মূহুর্তেই আয়ন ভাইয়ার কাশি নামক যক্ষা রুগে আক্রান্ত হয়ে গেল,,, আর ফুপি হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি থাকে এভাবে বলবো হয়তো ভাবতে পারেনি,,, আর দাদা-দাদী হাসচ্ছেন আর বাকিরা সবাই হা করে তাকিয়ে আছে, দাদী আমাকে টেনে তার কোলে বসালেন তারপর আমার মাথায় আদর করতে করতে বলে উঠে,,,

—” তোকে এসব কে বলেছে সোনামা যে বাড়ির বউদের কাজ করতে হয়,,,

আমি দাদী কথায় বাংলা মুভিটি বর্ণানা এক এক করে বলতে থাকি,, মৌসুমিকে কতটা অত্যাচার করেছে সেটাও বলি,, আমি সবকিছু খুলে বলতেই সবাই হোঁ হোঁ করে হেসে উঠে,,, তখনই দাদি বলে ওঠেন,,,,

—” এইসব তো শুধু সিনেমায় হয়ে থাকে সোনামা,,, বাস্তবে হয় না,,, আর তুই তো আমার সোনামা, তার মানে তুই আমার মা হোস, আর মা কি কখনো কাজ করে বল,,,

দাদী কথায় আমি না বোধক মাথা নাড়ালাম তারমানে মা কাজ করে না,,,, দাদী আমার মাথা নাড়ানো দেখে হাসি মুখে বলে উঠে,,,

—” তাই তোকেও করতে হবে না,,,,

🍁
আয়ন মায়াকে দেখছে এক অদ্ভুত নজরে কারণ যখন মায়া বউ এর মতো ওর সামনে এসে দাঁড়ায়,, তখন মায়াকে দেখে কেমন একটা অদ্ভুত ফিলিংস শিকার হয় যা সে নিজের ও বুঝে উঠতে পারিনি আবার মায়ার বোকা বোকা আচরণ গুলো তাকে আরো কেমন লাগাটা একধাপ বাড়িয়ে দেয়,,, যা সে কখনোই ফিল করিনি এই 27 বছরে কেন এইমেয়ের জন্য অদ্ভুত এক অস্থিরতা কাজ করছে যা সে নিজের ও বুঝতে পারছেনা,,,,

🍁
সবাই মিলে রেডি হচ্ছে উদ্দেশ্য বাহিরে ঘুরতে যাব,,,নেহা আপু কয়দিন পর এনগেজমেন্ট তাই এখনই গুরাগুরি পর্ব টা শেষ করতে চাই ওরা,,,নিহা আপু,ফিহা,আয়ন ভাইয়া,সাথে আমিও যাচ্ছি,,,
আমার জন্য বডিগার্ড নিতে পারছেন না কারণ আমি বলেছি যে যদি বডিগার্ড যায় তাহলে আমি যাব না,,, এজন্য বাধ্য হয়ে বডিগাড না নিয়ে বের হতে হয়েছে ওদের,,,,

পার্কে ঘোরাঘুরি করছে আমরা,,, আমার দুই হাতে আইসক্রিম,, আয়ন ভাইয়া ফোনে কথা বলার জন্য সাইট গিয়েছেন,নিহা আপুও ফোন এ কথা বলছে, ফিহা ছবি তুলতে ব্যস্ত, আমি এদিক ওদিক গোল গোল চোখে তাকাতে তাকাতে সামনে দিকে এগোছিলাম তখনি খুব স্পিডে একটা কার্র এসে আমার সামনে থামে,, যেন মনে হচ্ছিল এই মুহূর্তে এখানে গাড়িটি না আসতে পারলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত তার হুহ,, আর আমি যে এখন গাড়ির নিচে যেতাম তার কোনো ধারনা আছে,,,, ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে গেছে,, ভয়ে নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখি গাড়ি থেকে বের হল ঐ সুন্দরপুরুষটা,,,ভয় যেন আমার আরো এক ধাপ বেড়ে গেল প্রথমে আমার ফোন ভেঙেছে, পরে আমাকে দেয়ালে চেপে ধরে মাথায় বাড়ি খাওয়ালেন,,, এখন আবার না জানি কি খাওয়ায়,,,
তাই আর কোনো রকম চিন্তাভাবনা না করে পিছন ফিরে যেই না দৌড় দিতে যাব তখনি পেছন থেকে উনি বলে উঠলো,,,
,

—” স্টপ! ডোন্ট গো।

.
বলেই সাথে সাথে আমাকে টান দিয়ে কার এ সাথে চেপে ধরেন,,, উনার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে ফর্সা চেহারায় রাগটা স্পষ্ট,, তাই আমি ভিতু চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠি,,,,

–” আপনি কি আমাকে ওই দিনের জন্য সরি বলতে এসেছেন মাথায় ভারি খাওয়ানোর,,, আচ্ছা আপনাকে সরি বলতে হবেনা আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবার আমাকে যেতে দেন,,,

.
উনি সাথে সাথে আমাকে আবারো চেপে ধরে বলে উঠলেন,,,

.
—” তুই সাথে করে বডিগার্ড আনিস নি কেন? কার পারমিশন নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিস বল,,,

.
উনার কথায় আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠি,,,,

—” আপনাকে কেন বলব? আমাকে দাদা দাদী পারমিশন দিয়েছে, আমার স্বামী ও আমাকে স্বাধীনতার দিয়েছে তাই এসেছি,,,,

.

আমার এমন কথায় সুন্দর পরুষটা চোখ মুখ শক্ত করে উনি বলে,,,,

—” পারমিশন মাই ফুট। তুই আমার পারমিশন ছাড়া এক পাও নড়তে পারবিনা। তোকে যে স্বাধীনতা দিয়েছে, সে নিজেই তোর স্বাধীনতা অনেক আগেই কেড়ে নিয়েছে। অবাধ জিনিসটা আমার পছন্দ না। তোর জন্য আমাকে কতটা জার্নির করতে হয়েছে খবর আছে তোর হ্যা?(আরো চেপে ধরে)

ব্যাথায় আমি বলে উঠি,,,

—” লাগছে আমার ছাড়ুন প্লিজ,,,

.
সাথে সাথে উনি আমাকে ছেড়ে ওপরে তাকিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,

,
—” আমি ততক্ষণ ভালো যতক্ষণ আমাকে ভালো থাকতে দিবে,,, অবাধ্য জিনিসের প্রতি বরাবরই আমার আকর্ষণ বেশি থাকে,,তুমি যত অবাধ্য হবে আমি তোমাকে ততটাই বাধ্য করব তোমাকে। তুমি যত দূরে যাবে ততই তোমাকে আমি বন্দি করে রাখব,, আমাকে বাধ্য করো না হিংস্র হতে তাহলে তোমাকে এই হিংস্রতা ধংশ করে দিবে,,,
.

বলে আমাকে টানতে টানতে নিজের সাথে নিয়ে যেতে লাগলেন,,আমাকে পার্কের এক সাইডে এনে একটা বেঞ্চের উপর বসিয়ে নিজেও আমার পাশে বসে পড়লেন মাথা নিচু করে মাথায় দু’হাতে চেপে ধরে রেখেছেন,, পরক্ষণে আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাতে দুইটা আইসস্ক্রিম ফেলে দিলেন,,,,
দুজনে নিরব কিন্তু আমি নিরব থাকতে পারছিনা কারন আমার পেটের ভিতরে কথা গুড়গুড় করছে উনি হয়তো আমার মনে কথা বুঝতে পেরেছেন তাই আমাকে না দেখেই উনি বলে উঠেন,,,

–” এখন যদি একটা কথা বলতো এখান থেকে সোজা পানিতে ফেলে দিব আমি,,,

আমি ভয়ে কাঁচুমাচু করছি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি যদি কেউ আসে, আর আমাকে এখান থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যায় সেই আশায় কিন্তুু ফলাফল শূন্য,,, তখনই এক ঝাল মুড়িওয়ালা আসলো আমাদের সামনে,, আমি আস্তে করে বলে উঠলাম

—” প্লিজ আমি চুপ করে বসে থাকবো আমাকে একটা ঝালমুড়ি খাওয়ান প্লিজ প্লিজ,,,

উনি আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে ঝাল মুড়িওয়ালাকে ইশারা করেন যে আমাকে ঝালমুড়ি দিতে আমি সাথে সাথে বলি..

—‘ মামা বেশি করে ঝাল দিবেন কেমন?

ঝালমুড়িওয়ালা মামা মাথা নাড়িয়ে সুন্দর করে আমার জন্য ঝালমুড়ি বানাতে বানাতে হাসি মুখে প্রশ্ন করে বলল…

‘ আফামনি উনি কি আপনার জামাই হন?

আমি তীব্র গতিতে মাথা নাড়িয়ে বলি,

—” আরে না না উনি আমার স্বামী নন, আমার স্বামী তো অন্য কেউ। উনি না।

আমার কথা শুনে দুইজনই আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায় তাদের তাকানোতে আমি খানিকটা ইতস্ত বোধ করে বলে উঠি,,,

—” না মানে বলছিলাম মামা, আসলে আমার স্বামী অন্য কেউ,, আর উনি আমার দাদাজানের অফিসে কাজ করেন আর কি।

মামা যেন আমার কথায় বিশ্বাস করলেন না তাই পুনরায় আমাকে আবার প্রশ্ন করলেন..

‘ ভাইজান আফনার স্বামী নাহলে আফনার স্বামীর নাম কি আফামনি? (মুড়ি বানাতে বানাতে)

আমি লোকটার এরকম প্রশ্ন ইতস্ত বোধ করে আমতা আমতা করে বলে উঠি,,,,

—“রিদ খান,,,

মামা মনে হয় আমার স্বামীকে চিনেন এজন্য বিষন্ন একবার আমার পাশের সুন্দরমানুষটাকে দেখে তৎক্ষনাৎ চোখ ঘুরাল আমার দিকে। খানিকটা দ্বিধা নিয়ে আবারও প্রশ্ন করে বলল..

—” পুরা নাম কি আফামনি?

উনি আমার স্বামীর পুরো নাম জানতে চাই, আর আমি নিজের স্বামীর পুরো নাম না জানাতে পড়লাম ব্যস বিপাঘে। বেশ চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা চুলিয়ে স্বামীর নাম মনে করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি অনেকক্ষন ধরে কিন্তু ফলাফল এবারও শূন্য। আমি যখন মনে করতে পারছিলাম না তখনই আমার পাশ বসা সুন্দরমানুষটার দিকে চেপে বসে চিন্তিত স্বরে উনাকে প্রশ্ন করে বলি..

—” আচ্ছা আমার স্বামীর পুরো নাম কি বলুনতো? আপনি তো উনার পুরো নাম জানেন তাই না? আমাকে একটু বলুন না আমি মামাকে বলবো।

আমার এমন কথা শুনে উনি ভুত দেখার মত চমকে আমার দিকে তাকালেন হয়তো বা ভাবছেন যে আমি আমার নিজের স্বামীর নাম জানিনা এ কেমন বউ। কিন্তু আমি কি করবো আমাকে কেউ কখনো বলেনি উনার পুরো নামটা কি সেটা এজন্য জানিনা,,,হুহহ,,,
উনি আমার দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে মামার হাতে কিছু টাকা তুলে দিয়ে বলেন মামাকে চলে যেতে,,,
আমাকে ঝালমুড়ি খাওয়াবেন না এটা নাকি আমার শাস্তি, নিজের স্বামীর নাম না জানা জন্য,,
তাই আমি অসহায় ফেস করে বলে উঠি,,,,

—“আমি এই শাস্তি মানিনা আমি আমার স্বামীর নাম না জানলে নাই সে নাহয় আমি বুঝবো। কিন্তু আপনার ব্যথাটা কোথায়?

উনি আমার দিকে শান্ত ভাবে তাকিয়ে বলে উঠেন,,,

—” আমার ব্যথাটা যে কোথায় নিজে ও বুঝতে পারছি না। নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে আমার। এক সাপ্তাহ বাহিরে থেকে তোমার খবর পেয়ে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে আসা। কি জন্য আসলাম নিজের ও জানিনা শুরু জানি তোমাকেও পুড়াতে হবে। এবার থেকে আর লুকোচুরি নয় যা হবে সবার সামনেই হবে, যা করার সবার সামনে নাহয় করব,,,
.
চলবে,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here