এক_ফালি_প্রণয়|১৩| #শার্লিন_হাসান

0
301

#এক_ফালি_প্রণয়|১৩|
#শার্লিন_হাসান

“তাহসিনা খানম রোদেলা রে’প হতে যাচ্ছে। তার প্রেমিক হিসাবে ব্যপারটা তোমার জানা দরকার মেয়র তাহিয়ান শিকদার পূর্ণ। তুমি শুনবে,তোমার সামনে দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে তুমি চেয়ে,চেয়ে দেখবে কিন্তু কিছুই করতে পারবে না। প্রেমিক হিসাবে এটা তোমার ব্যর্থতা।”

টেক্সট টা দেখে পূর্ণ ব্যাকে ক্লিক করে। এসব কিছুই সে বিশ্বাস করে না। কেউ তাকে দমানোর জন্য রোদকে ব্যবহার করছে এটা পূর্ণর ধারণা। কিন্তু নতুন করে আবার কে যোগ হলো? পূর্ণ র মাথা কাজ করে না। সাথে,সাথে একটা নাম্বারে টেক্সট করে, ” তোমার কথা মতো তো সবই হচ্ছে তাহলে আবার নতুন করে থ্রেট দেওয়ার কী আছে?”

অপরপাশ থেকে রিপ্লাই আসে,
“এখনো কিছুই হয়নি। তাহিয়ান তুমি কোন কাজের না। প্রোপার্টি আমি পেয়ে গেলে মনে করো তুমিও মুক্ত। তোমার ক্যারিয়ারের উপর আর কোন ঝড় আসবে না। মন দিয়ে কাজ চালিয়ে যাও।”

” তাহসিনাকে নিয়ে নতুন করে আবার কোন নাটক সাজানো হচ্ছে?”

“পুরোন টাই শেষ হলো না। আবার নতুন কী সাজাবো?”

পূর্ণ দেখে আর রিপ্লাই করে না। তাহলে নতুন কেউ আবার আসছে। পূর্ণর বেশ বিরক্ত লাগে। ঘড়ির কাটায় নজর দিতে দেখে রাত তিনটা বাজে। বেলকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। কয়েক টান দিয়ে অম্বরের দিকে নজর স্থির করলো। পাশের বেলকনিতে কারোর অস্তিত্ব টের পেতে পাশ ফিরে তাকায় পূর্ণ। রোদ এখনো জেগে আছে। একনজরে অম্বরের দিকে তাকিয়ে আছে। আজব! অম্বরে আজ শশীর দেখা নেই। অন্ধকারাচ্ছন্ন অম্বরের দিকে কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকতে পারে? অবশ্য আজকের অন্ধকার অম্বরের মতো মেয়েটার জীবনে ও অন্ধকার নেমে আসতে বেশী দেরী নেই। পূর্ণ বেশ টের পাচ্ছে। ফোন হাতে রোদকে মেসেজ দেয়, ” চলো ছাঁদে যাই।”

রোদ মেসেজ পেয়ে পাশের বেলকনিতে তাকায়। পূর্ণর আবদার টা ফেলতে পারেনি। কেনো জানি এই আবদার গ্রহণের তৃষ্ণায় খা খা করছিলে মনটা। রোদ সম্মতি দিতে দু’জনে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে।

ছাঁদ থেকে নেমে সিঁড়ি বেয়ে রুমে প্রবেশ করে তূর্ণ। তার পেছন দিয়ে পূর্ণ এবং রোদ একসাথে ছাঁদে যায়। দরজা লাগানোর সময় দু’জনকে একসাথে দেখে তূর্ণ।

আজকে রোদের হাত ধরেই পূর্ণ ছাঁদে আসে। শুনশান নিরব নিশিতে শো,শো করে বাতাস বইছে। বাতাসটা বেশ ঠান্ডা এনং হিমশীতল। পূর্ণ রোদের দিকে দৃষ্টি স্থির করে। তখন রোদ শুধায়, ” আমায় নিয়ে ছাঁদে আসলে যে?”

” আসলে মন টা ভালো নেই রোদ। ভাবলাম ছাঁদে আসি! বেলকনিতে যেতে দেখলাম তুমি জেগে আছো। তাই ভাবলাম একা আসার চেয়ে সাথে কেউ আসুক। কথা বললে হয়ত ভালো লাগবে। এর বাইরে কিছু না।”

“ওহ্!”

“আচ্ছা রোদ একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

“করো?”

“তুমি সবচেয়ে বেশী কী হারানোর ভয় পাও?”

রোদ জবাব দেয়না। রোদকে চুপ থাকতে দেখে পূর্ণ পুনরায় শুধায়, ” জানো না?”

“জানি! তবে উত্তরটা আপাতত মানানসই না তাই দিতে পারছি না।”

পূর্ণ কিছু আন্দাজ করে মুচকি হাসে। রোদ পূর্ণর উপস্থিত খুঁটিয়ে,খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। অনেক কিছুই তার কাছে নাটকীয় লাগে। কিন্তু নিজেকে কীভাবে কন্ট্রোল করবে?

কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে দু’জনে পুনরায় ছাঁদ থেকে প্রস্থান করে। রুমে যাওয়ার পূর্বে পূর্ণ বলে, ” এখন আর রাত জেগো না। ঘুমিয়ে পড়ো নাহলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে।”

“আচ্ছা। তুমিও রাত জেগো না।”

মৃদু আলোয় পূর্ণর মুখশ্রী তে দৃষ্টি রেখে কথাটা বলে রোদ। পূর্ণ মুচকি হেসে রুমে চলে যায়। রোদ নিজের রুমে এসে আর দেরী করেনি। চুপচাপ শুয়ে পড়ে।

*********

পরের দিন সকালে যথাসময়ে পূর্ণ উঠে যায়। আজকে অফিস যাবে সে। কিছু ইমফরটেন্ট কাজ আছে। তূর্ণ, শরীফ শিকদারের সাথেই সে রওনা হয়।
শিশা তার এক্সামের প্রিপারেশন নিয়ে ব্যস্ত। তিশার বাইরে কিছু কাজ থাকায় গিয়েছে। রোদ আজকে উঠতে লেট করে ফেলেছে। বাড়ীতে এখন সাইখা ইসলাম এবং শারমিন আঞ্জুম, রোদ ব্যতীত কেউই নেই। তারা দুই জা মিলে ভালো মেয়ের সন্ধান করছে। রোদ ফ্রেশ হয়ে লিভিং রুমে আসে। দুই মামীকে দেখে বলে, ” কী দেখছো তোমরা? আমায় ও একটু দেখাও না?”

তখন সাইখা ইসলাম জবাব দেন, ” আসো তুমি সহ মিলে মেয়ে দেখি। তুমি বলো তূর্ণর জন্য কেমন মেয়ে হলে ভালো হয়?”

” অবশ্যই চঞ্চল মেয়ে চাই ভাইয়ার জন্য। কারণ ভাইয়া অনেক চুপচাপ। ভাইয়াকে জ্বালানোর জন্য বকবক করা একটা মেয়েই চাই।”

“কথাটা ভুল বলোনি রোদ। চঞ্চল মেয়েরা বেশ মিশুক হয়। আমাদের সাথেও জমে যাবে ভালো।”

শারমিন আঞ্জুমের কথায় রোদ হাসে। তখন সাইখা ইসলাম বলেন, ” তোমার জানা শোনায় কেউ আছে রোদ?”

” আরে না। কেউ নেই!”

**********

সন্ধ্যায় তূর্ণ, তিশা,শূন্য,রোদ বসে কফি খাচ্ছে। তখন শূন্য বলে, ” তূর্ণ ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখা জরুরী। অনেকদিন হলো বিয়েতে নাচি না।”

” মেয়ে দেখার কী দরকার আমি আছি না। আমার বিয়ে করার অনেক শখ।”

মুখ ফসকে কথাটা বলে রোদ। শূন্য এসব শোনেও না শোনার ভাণ করে। এসবে আর সে মাথা ঘামাবে না বলে শপথ গ্রহণ করেছে। তখন তিশা রোদকে থাপ্পড় দিয়ে বলে, ” তোকে আমার ছোট ভাইয়ের বউ বানাবো। বড় ভাইয়ের জন্য অন্য কাউকে আনবো।”

“না আমি তোর মতোই ওদের বউদের ননদিনী হবো। এর বাইরে কিছু না।”

তূর্ণ ওদের সবার কথাবার্তা শুনছে। তবে কোন রিয়েকশন দিচ্ছে না। শূন্য এসব না শোনার মতো করে বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। তখন তূর্ণ শুধায়, ” তিশার সাথে আমি একমত। রোদকে আমার ভাইয়ের বউ বানাবো।”

শূন্য তূর্ণর দিকে তাকায়। তূর্ণ চোখ দিয়ে ইশারা করে কিছু না বলতে। ওদের এই দুষ্টুমির মাঝে ব্যঘাত ঘটে শরীফ শিকদারের আগমনে। তিনি তাদের কথপকথনের মানেটা আন্দাজ করতে পারেন। রোদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ” রোদ মাকে অদূরে পাঠাবো না। শিকদার বাড়ীতেই রেখে দেবো। আমার ভাইয়ের ভীষণ আদরের ছিলো রোদ। ”

শরীফ শিকদারের কথায় সবাই চুপ হয়ে যায়। রোদের মনে হলো কাটা গায়ে লবণের ছিটা দিলো শরীফ শিকদার। সেখানে তখন আবার পূর্ণ উপস্থিত হয়। শরীফ শিকদারের কথাটা তার কাণে আসে। রোদের দিকে নজর দিতে দেখে তার মুখ অন্ধকারে ঢেকে গেছে। পূর্ণর রাগ হয় বেশ। তবে রাগটা যার উপরই হয়েছে প্রকাশ করে না সে।

তিশার রুমে প্রবেশ করে রোদ। এসেই তিশার সামনের চেয়ারটা বসে পড়ে রোদ। মলিন কন্ঠে বলে, ” আচ্ছা তিশা তুমিও কী পূর্ণ ভাইয়ের মতো করে আমায় ঘৃ’ণা করো? অপবাদ দাও? খু’নি ভাবো?”

রোদের এমন কথায় তিশা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। রোদের গালে হাত রেখে বলে, ” তুমিও না রোদ। পুরোনো কথা কেন টানছো? তোমার কী দোষ বলো? বাবার হায়গায় হয়ত তুমি ম’রতে এটাই তো তফাৎ। উপরওয়ালা তোমার হায়াত রেখেছে তাই আছো। আর এটা একটা এক্সিডেন্ট রোদ এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই।”

“কিন্তু আমি পূর্ণ ভাইয়ার চোখে আমার জন্য এক আকাশ সম ঘৃ’ণা দেখতে পাই।”

” তাহলে এই ঘৃ’ণার আকাশে #এক_ফালি_প্রণয় নিয়ে আসো না?”

” এটা ছেলে খেলা নয় তিশা। আমি #এক_ফালি_প্রণয় নিয়ে আসবো কিন্তু হিতে বিপরীত হবে। হয়ত এই #এক_ফালি_প্রণয়ের তৃষ্ণায় আমি আজীবন ধুঁকে মরবো। জানো তিশা? আমি আমার আমিটাকে ভীষণ ভালোবাসি। শান্ত জলের মতো আমি মনে রাখি, আমার নিজের জায়গা টুকু ছাড়া আমার আর কিছুই নেই,কেউ নেই।”

“তোমার কথার অর্থের গভীরতা ভীষণ রোদ। অনেক ভাবলেই হয়ত এর মানে বোঝা যাবে। মেয়ে তুমি এতো ঘরিয়ে পেছিয়ে কথা বলো কেন? এর অর্থ আর গভীরতার মানে বুঝতে হলে আমায় মাথা খাটাতে হবে।”

“তবে তাই করো। আমি আসি।”

রোদ প্রস্থান করে। রোদ যেতে তিশা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। রোদ যা বলেছে তা হয়ত ঠিক তবে তিশা রোদের জন্য অন্য কারোর চোখে এক আকাশ সম ভালোবাসা দেখতে পায়। কিন্তু সে তো তার প্রকাশে ব্যর্থ। হয়ত গোপন জিনিসটা ভয়ংকর সুন্দর। তাই তো না পাওয়ার গল্প গুলো আড়ালে রেখে হাসিমুখে অন্য কারোর সাথে গোটা জীবন পার করে দেওয়া যায়।

#চলবে

( সামনে অনেক চমক আছে। সো গল্পের নতুন,নতুন চমক পেতে গল্পের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ❤️💁‍♀️)

আগের পার্টে লিংক,
https://www.facebook.com/100077548442342/posts/443297831598495/?app=fbl

গ্রুপ লিংক, (জয়েন হওয়ার অনুরোধ রইলো)
https://facebook.com/groups/582123563029858/

আমার পার্সোনাল আইডির লিংক,
https://www.facebook.com/profile.php?id=100076559331822

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here