#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৩|
#শার্লিন_হাসান
এমন জামাই থাকলে রোগী হতে বেশীদিন লাগবে না।
-আচ্ছা একটু অপেক্ষা করো বাড়ী গিয়ে তোমায় প্রেগন্যান্ট বানাবো।
আনায়া চোখ গরম করে তাকায়। নিনরাস গাড়ী স্টার্ট দেয়। নির্দিষ্ট সময় তারা পিচঢালা নিরব সুনশান রাস্তায় এসে গাড়ী থামায়। তাদের গাড়ীর সামনে আরেকটা গাড়ী যেখানে জায়ান আর সীতারা আহমেদ দাঁড়িয়ে আছে। নিবরাস আনায়াকে নিয়ে তাদের সামনে যায়।
নাজিয়া সিএনজি ধরে গাড়ীর লোকেশন থেকে কিছুটা দূরে নেমে পড়ে। ভাড়া মিটিয়ে হাঁটতে থাকে। পিচঢালা রাস্তা নিরব সুনশান। দূরে,দূরে ল্যাম্পপোস্ট দাঁড়ানো। সেখানে আলো জ্বলছে! তবে চাঁদের আলোয় চারপাশটা আরো বেশী জ্বলজ্বল করছে। কেউ হেঁটে গেলে তার অবয়ব বুঝা যাবে।
কিছুটা সামনে আসতে কিছু কথাপোকথন কানে আসে। জায়ানের সাথে নিবরাসের তর্কাতর্কি হচ্ছে। মূলত তারা তাহিয়াকে নিয়ে তর্ক করছে।
সীতারা, জায়ান গাড়ী থেকে এগিয়ে নিবরাসদের সামনে আসে। নিবরাস সীতারা আহম্মেদের দিকে একবার তাকিয়ে রাস্তায় থুঃথুঃ ছুঁড়ে ফেলে। সীতারা আহম্মেদ তাতে চোয়াল শক্ত করে নেয়। নিবরাস ব্যঙ্গ করে বলে,
-জায়ান ভালো করে শাশুমাকে দেখে রাখিস। আবার অন্য মেয়েদের সাথে এনাকেও মেয়ে ভেবে পাচার করে দিস না। নাহলে খান পরিবারে শনির দশা লেগে যাবে।
-তোকে ডেকেছি একটা ঢিল করতে জনগণের নেতা। আপাতত তোর এসব জ্ঞান তোর পকেটে রাখ।
-কী জেনো ঢিল? এনি ওয়ে তোদের জন্য আজকের রোমান্সটা আমার মিস গেলো। মনে হয় না তোদের মামা আর নানু হওয়ার শখ আছে।
সীতারা আহম্মেদ ঘুরে দাঁড়ায়। আনায়া নিবরাসের হাতে চিমটি কাটে। তখন জায়ান বলে,
-আমাদের কোম্পানির গোপন যে বিজন্যাসটা সেখান থেকে তোকে থার্টি পার্সেন্ট শেয়ার দিবো। প্রয়োজনে তোকে নিরবাচনে ক্ষমতায় থাকার জন্য সাহায্য করবো। আর এসবে না হলে গাড়ী,বাড়ী যেটাই চাইবি অফার দিতে রাজী আমরা।
-এতো সুন্দর অফার! মনে হচ্ছে ভাবতে হবে। এনিওয়ে তোদের আবার কিসের বিজন্যাস?
জায়ান সীতারা আহম্মেদ ভরকে যায়। তাদের মনে হচ্ছে ভুল ইনফরমেশন শুনে ভুল জায়গায় ঢিল মেরেছে। নিবরাস কিছুই জানতো না তাহলে। কিন্তু জায়ান নিবরাসের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। ও ভোলাভালা ঠিকই কিন্তু খুবই চালাক।
তখন সীতারা আহম্মেদ বলে,
-আমাূের বিজন্যাস আছে সেসব তুমি জানো। প্রমাণ সংগ্রহ করাও তোমার বা হাতের কাজ সেটাও জানি! কিন্তু আমরা চাই না আমাদের বিজন্যাস বন্ধ হোক সেজন্য তোমায় অফার দিলাম। খবর পেয়েছি আমাদের পেছনে লোক লাগিয়েছো তুমি। টাকা নেও এসব থেকে সরে যাও।
-শাশুমা এতো সুন্দর অফার ফ্রিতে দিলে কী হতো? আমি তো আপনার মেয়ের জামাই।
-মুখটা বন্ধ রাখো নিবরাস।
-বাবুর মাম্মাম তুমি গাড়ীতে গিয়ে বসো বাবুর পাপা আসছে একটু পর।
আনায়া ব্রু কুঁচকে তাকায়। নিবরাসের কথায় সাথে,সাথে তার উদরে হাত চলে যায়। সে কী আসলেই প্রেগন্যান্ট? কই তার তো মনে হয়না। নিবরাস ধমকের স্বরে বলে,
-আমার বাবুর আম্মু কথা কানে যায়না তোমার?
-আমার বাবু কোথায়?
আনায়া বলে। নিবরাস তখন বলে,
-ঘুমাচ্ছে তোমার পেটে। এবার যাও তো! এসব কথা শোনলে যদি ভয় পাও! আমি চাইনা তোমার পেটে প্রভাব পড়ুক আর আমার বাচ্চাটার ক্ষতি হোক।
সীতারা আহম্মেদ আর জায়ান চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে রয়। আনায়া সোজা গাড়ীতে গিয়ে বসে পড়ে। নিবরাস পান্জাবির হাতা গোটাতে,গোটাতে বলে,
-শাশুমা এতো তেজ কোথা থেকে পান আপনি? লজ্জা করে না আপনার? খুব উড়ছেন মা ছেলে! এমন ভাবে খাঁচায় বন্দী করবো না।
-তোকে মেরে গুম করে দিতেও আমার সময় লাগবে না নিবরাস।বেশী মুখ চলে তোর। হয় আমাদের অফারে রাজী হয়ে যা নাহলে বউকে নিয়ে বাড়ী যা। বেশী ফটরফটর করলে বউ জামাই দুটোকে মেরে রাস্তার সাইডে ফেলে দেবো।
-কুল শাশুমা কুল! টাকা পয়সা আপনার বেশী হয়ে গেছে মনে হয়।
-ঠিকই ধরেছিস। আমার মনে হয় না আমার জীবনে কাউকে এতো তেল মাখতে হয়েছে। যতটা তোর পেছনে সময় ব্যয় করেছি আমি ততোটা সময় আমার অফিসের কাজ শেষ করলে কয়েক লাখ টাকা আসতো।
নিবরাস ঘুরে দাঁড়ায়। জায়ান সীতারা আহম্মেদ তার কান্ড দেখছে। তবে কিছুটা ভয়ে আছে তারা। আসার সময় পিস্তলটা আনেনি। যদি নিবরাস দু একটা বুলেট ছুঁড়ে চলে যায় গাড়ী নিয়ে।
-তোর উত্তরটা খুব তাড়াতাড়ি আমায় জানাবি। আর সময় মতো অফিসে এসে চেক/চাবি যেটাই লাগে নিয়ে যাবি।
নিবরাস তাতে পাত্তা দেয়না। সে যে কাজে এসেছে সে কাজ হয়ে গেছে। তার হাতেনাতে প্রমাণ দরকার ভিডিও করা ডান। সীতারা আহম্মেদের জলজ্যান্ত প্রমাণ নিয়ে নিয়েছে সাথে। নিবরাসের ভাব লক্ষণ তাদের কাছে ভালো ঠেকছে না। কিছুক্ষণ পর সীতারা আহম্মেদ জায়ান গাড়ীতে উঠে বসে।
নাজিয়া গাড়ীর পেছনের সীটে নাজিয়া গুটিশুটি মেরে বসে আছে। সামনেই জায়ান,সীতারা আহম্মেদ বসেছে জায়ানের গাড়ীর এক্সট্রা চাবি তার কাছে আছে আগে থেকেই। শুধু গাড়ীর না অনেক কিছুরই এক্সট্রা চাবি নাজিয়ার কাছে আছে।
সীতারা আহম্মেদ জায়ানকে বলে,
-সময়টা নষ্ট হলো আমার। এই নিবরাসটা এখানে এসে পড়লো কেন? মনে হয় মাঝেমাঝে উপরওয়ালা ভুল করে এখানের জিনিস ওখানে অদলবদল করে দেয়। নাহলে এতো খারাপ মানুষের মাঝে ও এতো ভালো মানুষ আসলো কীভাবে?
-আমাদের সবকয়টা কথা ও ইয়ার্কি করে উড়িয়ে দিয়েছে। মনে হয় ওর সাথে আমরা মজা করতে এসেছি।
-একে রাস্তা থেকে সরাতে হবে। যেভাবে আমি তাহিয়াকে সরিয়েছি।
-কিন্তু একে সরালে সবার আগে দোষ পড়বে শামিম সরদারের উপর। আর শামিম তো নিজের স্বার্থের জন্য আমাদের সব পাবলিশ করতে সময় ও নিবে না।
-এটাও দেখি পথের কাটা।
-একলও রাস্তা থেকে সরিয়ে দেই আর দোষ দেই নিবরাসের।
-তাহিয়াকেও তো সরিয়েছি তো দোষটা কার গাড়ে পড়লো জেনো? তোর বুদ্ধি আমি শুনি না। শামিম সরদার ও আমাদের অনেক উপকারে আসবে।
বাড়ীতে এসে গ্যারেজে গাড়ী রেখে ভেতরে চলে যায় সীতারা আহম্মেদ আর জায়ান। তার যাওয়ার পেছন দিয়ে নাজিয়া গাড়ীর লক খুলে বেড়িয়ে আসে। একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে তার কাছে তাহিয়ার খু*নী নিবরাস না। কিন্তু আহিয়া তো এটাই ভাবে।কীভাবে বিশ্বাস করাবে তাকে?
এতো,এতো ভাবনা,ভুল বোঝাবুঝি নাজিয়ার তেমন সময় ও নেই এসবে মাথা ঘামানোর। কিন্তু নিবরাস সব জানতো আর তাকে বললো না। তাহিয়ার ব্যপারটাও বলেনি। কী জানি!
নাজিয়া খুব সাবধানে ভেতরে প্রবেশ করে নিকের রুমে চলে যায়। রুমে এসে দরজা লক করতে হাফ ছেড়ে বাঁচে। ভাগ্যিস চাবিটা ছিলো আর বুদ্ধি করে গাড়ীর পেছনে বসে পড়ে। এই রাস্তায় গাড়ী পাওয়া দুষ্কর। আর সীতারা আহম্মেদ বা জায়ান পেছনে তাকানোর প্রয়োজন মনে করবে না।
আনায়াকে নিয়ে একটু ঘুরাঘুরি চন্দ্র বিলাস করে বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে নিবরাস। আনায়া চুপচাপ বাইরে দেখছে। চাঁদের আলোয় চারপাশটা জ্বলজ্বল করছে। মনে হচ্ছে পূর্ণিমা লেগেছে।
নিবরাস আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-শুনেছো?
-বলুন?
-আজকে তো চাঁদে পূর্ণিমা এসেছে। আমার হৃদয়কোঠায় চাঁদের পূর্ণিমা এসেছে সে অনেক আগে। আজকে পূর্ণিমারচাঁদকে দেখে মনে পড়লো সে কথা।
-আপনার যে কত প্রেম মনে,মাথায়,শরীরে। আমার ভালো লাগছে না তো! এসব ভেজাল কবে যাবে? প্লিজ এসবে আমাকে আর আনবেন না আমি শুনতে চাইনা।
-আরে আমি তো তোমায় এনেছি রাতে ঘুরার জন্য। আর ওঁদের সাথে কথা বলার রুচি ছিলো না আমার। তবুও এসেছি আমার কিছু দরকারে। তবে দরকার শেষ হয়ে গেছে।
*****
কেটে যায় বেশ কয়েকদিন। নাজিয়া হোস্টেলে এসেছেও কয়েকদিন হলো। আজকে আনায়া আসবে দেখা করার জন্য। তার মিসকে বলে ছুটি নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয় নাজিয়া। রিকশা করেই যাবে সে।
আনায়ার দেওয়া ঠিকানার উদ্দেশ্য রওনা হয় নাজিয়া। তবে সুদূরে চোখ যায় তার। চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। মুখ দিয়ে আপনাআপনি বের হয়,
-মৃ*ত মানুষ জীবিত হয়ে কীভাবে? তাও এই শহরের অলিতেগলিতে কেন?
#চলবে
(দ্রঃ গতকাল একটা মিস্টেক গিয়েছে সেটা হলো, আনায়া তার মায়ের সাথে দেখা করতে গেছে। সেখানে মা ওরফে মামী লিখে ফেলেছিলাম। ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আমি এডিট করে নিয়েছি। আশা করি এটা নিয়ে আর কেউ অভিযোগ করবেন না। পার্ট ছোটর জন্য দুঃখিত। আমি ব্যস্ত সেজন্য লেখতে পারছি না ঠিকঠাক।)