##এক_ফালি_সুখ🌼 |২০|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
বৃষ্টির কারণে শুটিং বন্ধ ছিলো দুদিন। অবশেষে আজ আবারো শুটিং সেটে হাজির হয়েছে সকলে। দিয়া নেই আজ, আছে আবরাজ,তূর্য আর বাকি সহকর্মীরা। আজকের শুটিং এ তূর্যকে কিছুটা ভিলেইন টাইপ লুক দেওয়া হবে, আবরাজ থাকবে স্বাভাবিক। তূর্য এমন চরিত্রে খুব একটা অভিনয় করেনা, তবে এটা অনেকটা বড় বাজেটের নাটক। রুবেল ও জোর করছিলো বলে রাজি হয়েছে তূর্য। পরবর্তীতে ভাগ্যক্রমে আবরাজও যুক্ত হয়েছে এই কাজে।
মৌরিন বরাবরেই সময়ের ব্যাপারে সচেতন,তাই সে আগেভাগেই এসে সবার স্ক্রিপ্ট গুছিয়ে নিচ্ছে। এমনকি সে এখন রুবেল কেও কিছুকিছু বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
তূর্য আজ দেড়ি করে আসছে, তবে আবরাজ আগেই এসেছে। মৌরিন তার কাছে স্ক্রিপ্ট নিয়ে গিয়ে বলে,
_”স্যার এটা আপনার আজকের স্ক্রিপ্ট, একটু দেখে নেবেন।”
আবরাজ স্ক্রিপ্টটা নিতেই মৌরিন চলে আসতে নেয়। তবে তাকে আটকে দেয় আবরাজ। সে উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলে,
_”আরে আমাকে স্যার ডাকছো কেন? ভাইয়া ডাকলেই পারো।”
মৌরিন সৌজন্যমূলক হেসে মাথা নাড়ায়। আবরাজ আবারো তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
_”তুমি মৌরিন?”
_”জি ভাইয়া।”
_”নাইস নেইম। কিন্তু আমি খুব অলস, মৌ বলেই ডাকি?”
_”আপনার যা ইচ্ছে।”
আর অপেক্ষা করেনা মৌরিন। অন্যান্য আর্টিস্ট দের স্ক্রিপ্ট দিয়ে দেয়। তূর্যও চলে এসেছে খানিকক্ষণ আগেই। মূলত তার ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হয়ে গেছে। সেটে এসে চেয়ারে বসতেই আবরাজ তাকায় তার দিকে। পায়ের উপর পা তুলে স্ক্রিপ্ট দেখতে দেখতে বলে,
_”ভালো অ্যাকটর হতে গেলে টাইম মেইনটেইন করা উচিৎ। তা না করেই কিছু মানুষ আবার নিজেকে বেস্ট অ্যাকটর দাবি করে,হাহ..”
তেতে ওঠে তূর্য। আবরাজ এর দিকে ঘুরে বলে,
_”অন্যের দিকে নজর না দিয়ে নিজের চরকায় তেল দেওয়া উচিৎ। কে কখন আসলো তার চেয়ে বেশি ম্যান্ডেটরি হলো কে কেমন অ্যাকটিং করলো,মাইন্ড ইট।”
আবরাজ স্ক্রিপ্ট এর থেকে চোখ সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
_”এই এই, তুই আমার অ্যাকটিং নিয়ে কথা বলার সাহস পাশ কোত্থেকে রে? দুদিন এসেই ভাব দেখাস না এতো।”
তূর্যও আবরাজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুঁজে বলে,
_”দুদিন হোক আর দশদিন, দর্শক কাকে এক্সেপ্ট করে সেটা তো পরিষ্কার দেখাই যাচ্ছে।”
আবরাজ দাঁত কিড়মিড় করে তাকায় তূর্যের দিকে। তূর্য কিছুটা ভাব নিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসে। পায়ের উপর পা তুলে বসে রুবেল কে উদ্দেশ্য করে বলে,
_”খেয়াল রাখবেন রুবেল ভাই, নাটকে হিরোর বদলে আবার ভিলেইন কে যেনো দর্শক পছন্দ করে না বসে।”
অপমানিত বোধ করে চেয়ারে একটা লাথি মেরে অন্যদিকে চলে যায় আবরাজ। রুবেল কিছু না বলে কেবলই ছোট করে নিঃশ্বাস ছাড়লো, এদের এসব কেচ্ছা এর আগেও দেখেছে সে। মৌরিন ও সবটাই লক্ষ্য করলো, খুব একটা পাত্তা দিলোনা। সে নিজের কাজেই দৃষ্টি রাখছে, অন্যরা কি করলো না করলো তা নিয়ে ভাবা তার পছন্দ নয়।
সেই বাড়িতেই একটা রুমে তৈরি হচ্ছিল সবাই। কেউকেউ মেকআপ এ ব্যস্ত, কেউ আবার স্ক্রিপ্ট দেখছে। আপাতত ঘরে তূর্য,আবরাজ আর অন্য দুজন লোক রয়েছে। মৌরিন সেখানে এলো হাতে এক কাপ কফি নিয়ে, আবরাজ চেয়েছে এটা। মৌরিন সেটা আবরাজ এর সামনের টেবিলে রাখতেই আবরাজ মুচকি হেসে কফিতে চুমুক দিয়ে বেশ উৎসাহিত হয়ে বলে,
_”দারুণ হয়েছে তো মৌ, তুমি বানালে বুঝি?”
মৌরিন স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয়,
_”আমি কেন বানাতে যাবো? আমিতো শুধু দিয়ে গেলাম।”
_”ওহ আচ্ছা।”
আবরাজের এমন ‘মৌ’ সম্মোধন এ ভ্রু কুঁচকায় তূর্য। এরা আবার এমন সখ্যতা গড়লো কখন? তূর্য সেদিকে না তাকিয়েই মৌরিন কে ডাক দেয়। মৌরিন ও তার পাশে এসে বলে,
_”জি স্যার বলুন।”
_”চুলটা সেট করে দিয়ে যাওতো।”
কোনোরূপ বিস্মিত হলোনা মৌরিন। বরং শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিলো,
_”সরি স্যার,এটা আমার কাজ নয়। আমি মেকআপ আর্টিস্ট কে বলে দিচ্ছি।”
থতমত খেয়ে গেলো তূর্য। আবরাজ এর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ঠোঁট চেপে হাসছে।
তূর্যকে থতমত খেতে দেখে বেশ মজাই পেলো আবরাজ, সে হাসিমুখে মৌরিনকে ডেকে পাশে থাকা ড্রেসগুলো দেখিয়ে বললো,
_”দেখো তো মৌ, কোনটা তে মানাবে?”
মৌরিন এবার আগের ন্যায় স্মিত হেসে উত্তর দেয়,
_”এটাও আমার কাজ নয় ভাইয়া। কসটিউম সিলেক্ট করার জন্য অন্য লোক আছে। আমি ডেকে দিচ্ছি।”
মৌরিন স্বাভাবিক,তবে মুখভঙ্গি অস্বাভাবিক হলো আবরাজ আর তূর্যের। মৌরিন যে একই সঙ্গে দুজনকেই হুইল পাউডার দিয়ে ধুয়ে দিলো তাতে দুজনের ই মুখ বন্ধ হয়ে গেলো। মৌরিন চলে গেলো সেখান থেকে, আবরাজ আর তূর্য একে অপরের দিকে একনজর তাকিয়ে নিজেদের কাজে মনোনিবেষ করলো। ঘরে থাকা বাকি দুজনের মিটিমিটি হাসি কারোর ই চক্ষুগোচর হলো না। কি একটা অবস্থা, শেষ পর্যন্ত কিনা দুজনকে একসঙ্গে লজ্জায় পরতে হলো!
______
শুটিং চলছে এখনো,তবে মৌরিন এর কোনো কাজ নেই। সে একপাশে বসে আছে,ফোনটা হাতেই ছিলো। একটা আননোন নম্বরে কল আসতেই মৌরিন কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো নম্বরটার দিকে,তবে এই নম্বর আগে দেখেছে বলে মনে পরলো না। ফলে ফোনটা রিসিভ করে বললো,
_”আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?”
_”তাসনিম?”
জিজ্ঞাসু কণ্ঠে প্রশ্ন করলো অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি। তাকে চিনতে পারলো মৌরিন, এই ভালো নামে তাকে কিছু নির্দিষ্ট মানুষই ডাকে।
স্তম্ভিত হলোনা মৌরিন, স্বাভাবিক থাকাটা যেন তার রন্ধ্রে মিশে আছে। অবশ্য সে আগে থেকেই আন্দাজ করেছিল। এই লোকের কল আসবে তার কাছে, আন্দাজ না করলেও অবশ্য কিছুই হতোনা তার।
_”বলছি।”
অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি উৎকন্ঠা কন্ঠে বললো,
_”তুমি ফোন নম্বর চেঞ্জ করেছো? জানো, কত বেগ পেতে হয়েছে তোমার নম্বর জোগাড় করতে?”
_”কোনো কথা থাকলে বলো, নাহলে কেটে দিচ্ছি কলটা।”
_”না না তাসনিম,প্লিজ। আমার কথাটা একটু শোনো।”
_”শুনছি তো, বলো কি বলবে।”
_”তাসনিম আমি দেশে ফিরেছি, আমার সঙ্গে একবার দেখা করবে প্লিজ? আই ওয়ান্ট টু টেল ইউ সামথিং।”
_”বাব্বাহ! আমার সঙ্গে তোমার কথা আছে মিস্টার নাহিদ শেখ? বাট আনফরচুনেটলি তোমার অনুরোধ রাখতে পারছি না।”
_”আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না তাসনিম।”
_”কিন্তু আমি সম্পূর্নভাবে নিজের মধ্যে ছিলাম, আর এখনো নিজের মধ্যেই আছি।.. কলটা রাখলে খুশি হবো।”
_”তাসনিম..”
নাহিদ আর কিছু বলার আগেই মৌরিন বলে ওঠে,
_”আমার মায়ের ফোনে কল করে বিরক্ত না করার অনুরোধ রইলো।”
মৌরিন নিজেই কেটে দিলো কলটা। তার মন মেজাজ ঠিক ই আছে। পানির পিপাসা পেয়েছে খুব। তাই উঠে গিয়ে পাশে টেবিলে থাকা নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে সে। পরবর্তীতে বোতলটা রাখতে গিয়েই তার চোখ যায় ব্যাগে থাকা একটা সাদা রঙের ছোট্ট কাগজের দিকে। ভ্রু কুঁচকে কাগজটা বের করে মৌরিন। দুটো ভাজ খুলতেই কমলা রঙে লেখা কিছু লাইন দৃশ্যমান হয়। কমলা রঙ দিয়ে কে কি লিখলো? লেখাটুকু এমন ছিলো,
মৌরিফুল,
মানুষের চেহারা অনেক ধরণের হয়। অনেকের গায়ের রঙ সুন্দর হয়, আবার অনেকের চেহারার গঠন সুন্দর হয়। অনেক ক্ষেত্রে বলা হয়, গায়ের রঙ চাপা হলেও মুখে মায়াবী ভাব। আনফরচুনেটলি তোমার মধ্যে এর একটাও নেই। তবুও কপালের মাঝে সেই কালো রঙের ছোট্ট টিপটা তোমার ক্ষেত্রে এতটা মানানসই কি করে হলো?
ইতি
আগন্তুক
চোখেমুখে ইষৎ বিরক্তি ফুটে ওঠে মৌরিন এর। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে চিরকুট টা নিয়ে যায় রুবেল এর নিকট। শুটিং ততক্ষণে শেষ হয়েছে। রুবেল মৌরিন কে এভাবে আসতে দেখে বলে,
_”কি হয়েছে মৌরিন? কিছু বলবে?”
মৌরিন চিরকুট টা রুবেল এর সামনে ধরে বলে,
_”কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত এটা আমার ব্যাগে ছিলোনা। তারমানে এখানকার কেউই নিশ্চই এটা লিখে আমার ব্যাগে রেখে গেছে। কে লিখেছে জানিনা, তবে শুটিং সেটে এভাবে ব্যাগে চিরকুট রেখে দেওয়াটা আমি পছন্দ করছিনা ভাইয়া। অনুগ্রহ করে সবার উদ্দেশ্যে বলবেন, সেটে কারোর সঙ্গেই এমনটা না করতে।”
#চলবে?
[অনেকক্ষণ ধরে লিখেছি। হাচি দিতে দিতে অবস্থা খারাপ আমার,দোয়া করবেন আমার জন্য।
২০ পর্ব পর্যন্ত যারা প্রতিটি পর্ব পড়ছেন, তারা কিছু বলে যাবেন গল্প সম্পর্কে।
হ্যাপি রিডিং।]
বৃষ্টির কারণে শুটিং বন্ধ ছিলো দুদিন। অবশেষে আজ আবারো শুটিং সেটে হাজির হয়েছে সকলে। দিয়া নেই আজ, আছে আবরাজ,তূর্য আর বাকি সহকর্মীরা। আজকের শুটিং এ তূর্যকে কিছুটা ভিলেইন টাইপ লুক দেওয়া হবে, আবরাজ থাকবে স্বাভাবিক। তূর্য এমন চরিত্রে খুব একটা অভিনয় করেনা, তবে এটা অনেকটা বড় বাজেটের নাটক। রুবেল ও জোর করছিলো বলে রাজি হয়েছে তূর্য। পরবর্তীতে ভাগ্যক্রমে আবরাজও যুক্ত হয়েছে এই কাজে।
মৌরিন বরাবরেই সময়ের ব্যাপারে সচেতন,তাই সে আগেভাগেই এসে সবার স্ক্রিপ্ট গুছিয়ে নিচ্ছে। এমনকি সে এখন রুবেল কেও কিছুকিছু বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
তূর্য আজ দেড়ি করে আসছে, তবে আবরাজ আগেই এসেছে। মৌরিন তার কাছে স্ক্রিপ্ট নিয়ে গিয়ে বলে,
_”স্যার এটা আপনার আজকের স্ক্রিপ্ট, একটু দেখে নেবেন।”
আবরাজ স্ক্রিপ্টটা নিতেই মৌরিন চলে আসতে নেয়। তবে তাকে আটকে দেয় আবরাজ। সে উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলে,
_”আরে আমাকে স্যার ডাকছো কেন? ভাইয়া ডাকলেই পারো।”
মৌরিন সৌজন্যমূলক হেসে মাথা নাড়ায়। আবরাজ আবারো তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
_”তুমি মৌরিন?”
_”জি ভাইয়া।”
_”নাইস নেইম। কিন্তু আমি খুব অলস, মৌ বলেই ডাকি?”
_”আপনার যা ইচ্ছে।”
আর অপেক্ষা করেনা মৌরিন। অন্যান্য আর্টিস্ট দের স্ক্রিপ্ট দিয়ে দেয়। তূর্যও চলে এসেছে খানিকক্ষণ আগেই। মূলত তার ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হয়ে গেছে। সেটে এসে চেয়ারে বসতেই আবরাজ তাকায় তার দিকে। পায়ের উপর পা তুলে স্ক্রিপ্ট দেখতে দেখতে বলে,
_”ভালো অ্যাকটর হতে গেলে টাইম মেইনটেইন করা উচিৎ। তা না করেই কিছু মানুষ আবার নিজেকে বেস্ট অ্যাকটর দাবি করে,হাহ..”
তেতে ওঠে তূর্য। আবরাজ এর দিকে ঘুরে বলে,
_”অন্যের দিকে নজর না দিয়ে নিজের চরকায় তেল দেওয়া উচিৎ। কে কখন আসলো তার চেয়ে বেশি ম্যান্ডেটরি হলো কে কেমন অ্যাকটিং করলো,মাইন্ড ইট।”
আবরাজ স্ক্রিপ্ট এর থেকে চোখ সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
_”এই এই, তুই আমার অ্যাকটিং নিয়ে কথা বলার সাহস পাশ কোত্থেকে রে? দুদিন এসেই ভাব দেখাস না এতো।”
তূর্যও আবরাজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুঁজে বলে,
_”দুদিন হোক আর দশদিন, দর্শক কাকে এক্সেপ্ট করে সেটা তো পরিষ্কার দেখাই যাচ্ছে।”
আবরাজ দাঁত কিড়মিড় করে তাকায় তূর্যের দিকে। তূর্য কিছুটা ভাব নিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসে। পায়ের উপর পা তুলে বসে রুবেল কে উদ্দেশ্য করে বলে,
_”খেয়াল রাখবেন রুবেল ভাই, নাটকে হিরোর বদলে আবার ভিলেইন কে যেনো দর্শক পছন্দ করে না বসে।”
অপমানিত বোধ করে চেয়ারে একটা লাথি মেরে অন্যদিকে চলে যায় আবরাজ। রুবেল কিছু না বলে কেবলই ছোট করে নিঃশ্বাস ছাড়লো, এদের এসব কেচ্ছা এর আগেও দেখেছে সে। মৌরিন ও সবটাই লক্ষ্য করলো, খুব একটা পাত্তা দিলোনা। সে নিজের কাজেই দৃষ্টি রাখছে, অন্যরা কি করলো না করলো তা নিয়ে ভাবা তার পছন্দ নয়।
সেই বাড়িতেই একটা রুমে তৈরি হচ্ছিল সবাই। কেউকেউ মেকআপ এ ব্যস্ত, কেউ আবার স্ক্রিপ্ট দেখছে। আপাতত ঘরে তূর্য,আবরাজ আর অন্য দুজন লোক রয়েছে। মৌরিন সেখানে এলো হাতে এক কাপ কফি নিয়ে, আবরাজ চেয়েছে এটা। মৌরিন সেটা আবরাজ এর সামনের টেবিলে রাখতেই আবরাজ মুচকি হেসে কফিতে চুমুক দিয়ে বেশ উৎসাহিত হয়ে বলে,
_”দারুণ হয়েছে তো মৌ, তুমি বানালে বুঝি?”
মৌরিন স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয়,
_”আমি কেন বানাতে যাবো? আমিতো শুধু দিয়ে গেলাম।”
_”ওহ আচ্ছা।”
আবরাজের এমন ‘মৌ’ সম্মোধন এ ভ্রু কুঁচকায় তূর্য। এরা আবার এমন সখ্যতা গড়লো কখন? তূর্য সেদিকে না তাকিয়েই মৌরিন কে ডাক দেয়। মৌরিন ও তার পাশে এসে বলে,
_”জি স্যার বলুন।”
_”চুলটা সেট করে দিয়ে যাওতো।”
কোনোরূপ বিস্মিত হলোনা মৌরিন। বরং শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিলো,
_”সরি স্যার,এটা আমার কাজ নয়। আমি মেকআপ আর্টিস্ট কে বলে দিচ্ছি।”
থতমত খেয়ে গেলো তূর্য। আবরাজ এর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ঠোঁট চেপে হাসছে।
তূর্যকে থতমত খেতে দেখে বেশ মজাই পেলো আবরাজ, সে হাসিমুখে মৌরিনকে ডেকে পাশে থাকা ড্রেসগুলো দেখিয়ে বললো,
_”দেখো তো মৌ, কোনটা তে মানাবে?”
মৌরিন এবার আগের ন্যায় স্মিত হেসে উত্তর দেয়,
_”এটাও আমার কাজ নয় ভাইয়া। কসটিউম সিলেক্ট করার জন্য অন্য লোক আছে। আমি ডেকে দিচ্ছি।”
মৌরিন স্বাভাবিক,তবে মুখভঙ্গি অস্বাভাবিক হলো আবরাজ আর তূর্যের। মৌরিন যে একই সঙ্গে দুজনকেই হুইল পাউডার দিয়ে ধুয়ে দিলো তাতে দুজনের ই মুখ বন্ধ হয়ে গেলো। মৌরিন চলে গেলো সেখান থেকে, আবরাজ আর তূর্য একে অপরের দিকে একনজর তাকিয়ে নিজেদের কাজে মনোনিবেষ করলো। ঘরে থাকা বাকি দুজনের মিটিমিটি হাসি কারোর ই চক্ষুগোচর হলো না। কি একটা অবস্থা, শেষ পর্যন্ত কিনা দুজনকে একসঙ্গে লজ্জায় পরতে হলো!
______
শুটিং চলছে এখনো,তবে মৌরিন এর কোনো কাজ নেই। সে একপাশে বসে আছে,ফোনটা হাতেই ছিলো। একটা আননোন নম্বরে কল আসতেই মৌরিন কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো নম্বরটার দিকে,তবে এই নম্বর আগে দেখেছে বলে মনে পরলো না। ফলে ফোনটা রিসিভ করে বললো,
_”আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?”
_”তাসনিম?”
জিজ্ঞাসু কণ্ঠে প্রশ্ন করলো অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি। তাকে চিনতে পারলো মৌরিন, এই ভালো নামে তাকে কিছু নির্দিষ্ট মানুষই ডাকে।
স্তম্ভিত হলোনা মৌরিন, স্বাভাবিক থাকাটা যেন তার রন্ধ্রে মিশে আছে। অবশ্য সে আগে থেকেই আন্দাজ করেছিল। এই লোকের কল আসবে তার কাছে, আন্দাজ না করলেও অবশ্য কিছুই হতোনা তার।
_”বলছি।”
অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি উৎকন্ঠা কন্ঠে বললো,
_”তুমি ফোন নম্বর চেঞ্জ করেছো? জানো, কত বেগ পেতে হয়েছে তোমার নম্বর জোগাড় করতে?”
_”কোনো কথা থাকলে বলো, নাহলে কেটে দিচ্ছি কলটা।”
_”না না তাসনিম,প্লিজ। আমার কথাটা একটু শোনো।”
_”শুনছি তো, বলো কি বলবে।”
_”তাসনিম আমি দেশে ফিরেছি, আমার সঙ্গে একবার দেখা করবে প্লিজ? আই ওয়ান্ট টু টেল ইউ সামথিং।”
_”বাব্বাহ! আমার সঙ্গে তোমার কথা আছে মিস্টার নাহিদ শেখ? বাট আনফরচুনেটলি তোমার অনুরোধ রাখতে পারছি না।”
_”আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না তাসনিম।”
_”কিন্তু আমি সম্পূর্নভাবে নিজের মধ্যে ছিলাম, আর এখনো নিজের মধ্যেই আছি।.. কলটা রাখলে খুশি হবো।”
_”তাসনিম..”
নাহিদ আর কিছু বলার আগেই মৌরিন বলে ওঠে,
_”আমার মায়ের ফোনে কল করে বিরক্ত না করার অনুরোধ রইলো।”
মৌরিন নিজেই কেটে দিলো কলটা। তার মন মেজাজ ঠিক ই আছে। পানির পিপাসা পেয়েছে খুব। তাই উঠে গিয়ে পাশে টেবিলে থাকা নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে সে। পরবর্তীতে বোতলটা রাখতে গিয়েই তার চোখ যায় ব্যাগে থাকা একটা সাদা রঙের ছোট্ট কাগজের দিকে। ভ্রু কুঁচকে কাগজটা বের করে মৌরিন। দুটো ভাজ খুলতেই কমলা রঙে লেখা কিছু লাইন দৃশ্যমান হয়। কমলা রঙ দিয়ে কে কি লিখলো? লেখাটুকু এমন ছিলো,
মৌরিফুল,
মানুষের চেহারা অনেক ধরণের হয়। অনেকের গায়ের রঙ সুন্দর হয়, আবার অনেকের চেহারার গঠন সুন্দর হয়। অনেক ক্ষেত্রে বলা হয়, গায়ের রঙ চাপা হলেও মুখে মায়াবী ভাব। আনফরচুনেটলি তোমার মধ্যে এর একটাও নেই। তবুও কপালের মাঝে সেই কালো রঙের ছোট্ট টিপটা তোমার ক্ষেত্রে এতটা মানানসই কি করে হলো?
ইতি
আগন্তুক
চোখেমুখে ইষৎ বিরক্তি ফুটে ওঠে মৌরিন এর। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে চিরকুট টা নিয়ে যায় রুবেল এর নিকট। শুটিং ততক্ষণে শেষ হয়েছে। রুবেল মৌরিন কে এভাবে আসতে দেখে বলে,
_”কি হয়েছে মৌরিন? কিছু বলবে?”
মৌরিন চিরকুট টা রুবেল এর সামনে ধরে বলে,
_”কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত এটা আমার ব্যাগে ছিলোনা। তারমানে এখানকার কেউই নিশ্চই এটা লিখে আমার ব্যাগে রেখে গেছে। কে লিখেছে জানিনা, তবে শুটিং সেটে এভাবে ব্যাগে চিরকুট রেখে দেওয়াটা আমি পছন্দ করছিনা ভাইয়া। অনুগ্রহ করে সবার উদ্দেশ্যে বলবেন, সেটে কারোর সঙ্গেই এমনটা না করতে।”
#চলবে?
[অনেকক্ষণ ধরে লিখেছি। হাচি দিতে দিতে অবস্থা খারাপ আমার,দোয়া করবেন আমার জন্য।
২০ পর্ব পর্যন্ত যারা প্রতিটি পর্ব পড়ছেন, তারা কিছু বলে যাবেন গল্প সম্পর্কে।
হ্যাপি রিডিং।]