#এক_ফালি_সুখ🌼 |২৩|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
আগন্তুক কে নিয়ে দু সেকেন্ড ভাবার ও প্রয়োজন মনে করলোনা মৌরিন। এমনিতেও আজ তার অনেক কাজ। বাচ্চা দুজনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো পাঁচজন। প্রত্যেকের ই বয়স সাত এর নিচে। তাদের সবাইকে একে একে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার কাজটা মৌরিন এর কাঁধে এসেই পরলো। সে চাইলে এড়িয়েও যেতে পারতো,তবে যায়নি। সেটের সবাই মৌরিন কে এখন অনেকটা পছন্দ করছে, রুবেল তো অনেক ক্ষেত্রেই তাকে আলাদাভাবে নিজের কাজে সাহায্য ও করতে বলছে। মৌরিন সন্তুষ্ট এতে, তাই সেও খুশিমনে কাজ করছে।
প্রায় ত্রিশ মিনিট পর একটু বিরতি পেলো মৌরিন। এবার ঘটলো অন্য এক ঘটনা। ঐ বাচ্চাগুলোর মধ্যে একটা বাচ্চা ছুটে এসে মৌরিন এর হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে আবারো শুটিং এর দিকে চলে গেলো। কিছুক্ষন ভ্রুকুঞ্চিত করে তাকিয়ে থেকে কাগজটা খুললো সে। ভিন্ন বিষয় কেবল একটাই। আজকের লেখাটা কালো কালিতে, বেশ স্পষ্ট অক্ষরে। আগেরটার সঙ্গে হাতের লেখা পুরোপুরি মিলছে না। আজ এই কাগজটাতে কেবল একটাও লাইন লিখা,
“মৌরিন,তুমি এমন কেন? অন্যরকম কেন নও?”
এবার কয়েক সেকেন্ড লেখাটার দিকে তাকিয়ে রইলো মৌরিন। এই প্রথমবার লেখাটা পড়ে কিঞ্চিত হাসি পেলো তার, কারণও আছে বটে। এই কথাটা সে প্রথমবার শুনছে না, এর আগেও ফ্রেন্ড সার্কেলের থেকে এই প্রশ্নটা শুনতে হয়েছে তাকে।
তবে হাসলো না মৌরিন, ভাজ করলো চিরকুট টা। দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো একবার শুটিং চলতে থাকা স্থান এর দিকে। আগন্তুক এর পরিচয় জানার জন্য নয়, কোন বাচ্চাটা এটা দিয়ে গেলো তাকে দেখার জন্য।
আগন্তুক এর পরিচয় জানার ইচ্ছে হলোনা মৌরিনের। যে নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখতে চাইছে তার পরিচয় না জানাটাই ভালো।
আজ দুটো নয় বরং তৃতীয়বারের মতো আরো একটি চিরকুট এলো। এবারো নিয়ে এলো একটি বাচ্চা, সে বেশ ভালো করেই তা এগিয়ে দিলো মৌরিন এর দিকে। মৌরিন কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,
_”কে দিয়েছে সেটা জানাতে হবেনা। তবে এরপর থেকে কেউ কিছু দিলে সেটা নিয়ে আসবেনা। ঠিক আছে?”
বাচ্চাটা মাথা নাড়ালো। তবে ফিরে যাওয়ার আগে চিরকুটটা মৌরিন এর হাতে গুঁজে ছুটে পালালো। বাচ্চাটার কাজে স্মিত হাসলো মৌরিন। চিরকুট খুলে দেখার ইচ্ছে হলোনা,তবুও খুললো।
“আসল মৌরিফুল কিন্তু দেখতে বেশ সুন্দর,তবে অনেকটাই অবহেলিত। তুমি তো দেখতে মোটেই সুন্দর নও, তোমার তো আরো বেশি অবহেলিত হওয়া উচিৎ। তবুও ইনডিরেক্টলি আমার দ্বারা তুমি প্রশংসিত হয়ে যাচ্ছ বারংবার। এটা ঠিক হচ্ছেনা মৌরিফুল, মোটেই ঠিক হচ্ছেনা..”
একটা জিনিস ভালো লাগলো মৌরিন এর। আগন্তুক সরাসরি বলে দিচ্ছে তুমি সুন্দর নও। মাথা দুদিকে সামান্য নাড়িয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো তার ব্যাগের নিচে আরো একটা কাগজ। অদ্ভুত, এটা কখন এলো?
ব্যাগটা উঁচু করে কাগজটা হাতে নিলো মৌরিন। একটা বিষয় খেয়াল করলো, আজকে শেষের দুটি চিরকুট এবং বর্তমান টাও আগের গুলোর থেকে ভিন্ন। এই তিনটে চিরকুট লেখা হয়েছে কালো রঙের কালি দিয়ে,তবে তাড়াহুড়ো করে লেখা হয়েছে তা কিছুটা বোঝা যাচ্ছে। শেষ চিরকুট এ লেখা,
“তুমি তবুও হাসলে না, বিরক্ত ও হলেনা। বলা হয় নিরবতা সম্মতির লক্ষন, তোমার শান্ত রূপটাকে সম্মতি হিসেবে নিয়ে চাইলে আরো অনেক কিছু লিখতে পারতাম। তবে সেটা নিচ্ছি না। কারণ, তুমি মানুষটাই ভিন্ন। সাধারণ কোনো কথা তোমার সঙ্গে যায়না। আর এটাই আমার সহ্য হচ্ছেনা, তোমার মাঝে এতটুকু পরিবর্তন এলে এই চিরকুট টা দিতাম না। তুমি দিতে বাধ্য করছো, সব কথাগুলো তোমার নিকট পৌঁছে দিতে ব্যাকুল হয়ে উঠছি মৌরিফুল। ভালো লক্ষন নয় এগুলো, ইঙ্গিত করে অন্যকোনো অনুভূতির। বোকা নই আমি, যে নিজের অনুভূতি বুঝতে পারবো না। তবে তোমায় বলি, সাধারণ হতে শেখো মেয়ে। অসুন্দর মেয়েদের এমন অসাধারন হতে নেই।”
এর মাঝেই অন্য এক কাগজে আরো কিছু লিখা,
“দেখেছো, কাব্যিক হয়ে যাচ্ছি মৌরিফুল। তুমি চলে যাও তো,থেকোনা এখানে। আর কোনো কাজ নেই? এখানে কেন কাজ করতে হবে? আচ্ছা, আমার পরিচয় জানার কি একটুও ইচ্ছে নেই তোমার মধ্যে? লেখাগুলো পড়ে আন্দাজ করা যায়? আমি কিন্তু নিজের মতো করেই লিখেছি সবকিছু, লুকোতে চাইনি নিজেকে। বুঝে গেলে ভালো, না বুঝলে বলা যায়না। কোনদিন নিজে থেকেই পরিচয় দিয়ে বসি..”
ডাক পড়লো শুটিং এর জায়গায়। চিরকুটগুলো ভাজ করে সেদিকে পা বাড়ালো মৌরিন। আন্দাজ করতে পারলো কি এই চিরকুটদাতা কে? নাহ, চাইলোই না তাকে খুজে বের করতে। জানতে ইচ্ছে হলোনা তার পরিচয়।
সাধারণ শব্দটা মৌরিন এর সঙ্গে যায়না, এদিক থেকে আগন্তুক খুব একটা ভুল কথা বলেনি।
_______
সন্ধ্যাবেলা স্টুডেন্ট এর বাসায় এসেছে মৌরিন। তবে সেই স্টুডেন্ট নাকি তার আন্টির বাসায় গিয়েছে, আসবে দশমিনিট বাদে। তাই চেয়ারে বসে তার জন্যই অপেক্ষা করছে মৌরিন। ফোনটা হাতে, দৃষ্টিও ফোনের দিকেই আবদ্ধ। ঠিক সেই সময়ই ফেইসবুক এ একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এলো। আইডির নাম “Abraz Shah”, ফেইক আইডি কিনা সিওর হতে আইডির ভিতরে প্রবেশ করলো মৌরিন। নাহ,ফেইক আইডি নয়। শতভাগ আসল আইডি আবরাজ এর। কিছুক্ষন চিন্তা করে রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করলো মৌরিন। যেহেতু পরিচিত, তাই রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট না করলে বিষয়টা খারাপ দেখায়।
মৌরিন এর আইডিতে অনেক প্রায় অনেকদিন আগের একটা স্ট্যাটাস দেওয়া ছিলো।
“সম্পর্ক যদি ভাবনার সাথে মিশে যায়,
তবে তা ভাঙা মু’শকিল!
আর যদি তা স্বার্থের সাথে মিশে যায়,
তবে তা টেকানো মু’শকিল!” _রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মিনিট দুয়েক এর মাথায় আবরাজ সেই স্ট্যাটাস টা মৌরিন এর ইনবক্স এ শেয়ার করে বলে,
_”ওয়াও, দারুণ লেখো তো তুমি মৌ।”
মৌরিন স্বাভাবিকভাবে রিপ্লাই দেয়,
_”এটা আমার নয়, রবী ঠাকুর এর লেখা। উল্লেখ করা ছিলো তো,ভাইয়া বোধ হয় খেয়াল করেন নি।”
সঙ্গে সঙ্গেই অপর পাশ থেকে সঙ্গে সঙ্গেই রিপ্লাই এলো,
_”ওহ। কিন্তু তুমিও যথেষ্ট ট্যালেন্টেড,চাইলে নিজেও লিখতে পারো।”
রিপ্লাই করেনা মৌরিন, স্টুডেন্ট ও চলে এসেছে ততক্ষণ। তাই ফোনটা ব্যাগে রেখে পড়ানোতে মনোযোগ দেয় মৌরিন।
_____
তূর্যের হাতে তার ফোন,সেখানে দৃশ্যমান মৌরিন এর আইডি। ফ্রেন্ড লিস্ট পাবলিক করা,তার একদম শুরুতেই আবরাজ এর আইডি। মৌরিন নিশ্চিত ওকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেয়নি, আবরাজই দিয়েছে। আর ও এক্সেপ্ট ও করেছে? রাগ হলোনা তূর্যের, তবে অবাক হলো। আবরাজ কেন মৌরিন এর সঙ্গে এত ভালো ভালো কথা বলছে সেটা বুঝতে পারলো না তূর্য, এত ভদ্রলোক নয় আবরাজ। কারোর সঙ্গে এমনি এমনিই অত্যাধিক মিশুক তো সে হতে যায়না। সেখানে মৌরিন কে শুটিং সেট এ মৌ মৌ বলে ডাকছে,আবার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিচ্ছে নিজে থেকে! কারণটা উপলব্ধি করতে ব্যার্থ হলো তূর্য।
#চলবে?
[আমার গ্রামের বাড়ি নেটওয়ার্ক একদম ই পাওয়া যায়না, বাহিরে এলে একটু আকটু পাওয়া যায়,তবে তাতে গল্প পোস্ট করা সম্ভব হবে কিনা জানিনা। তাই আগে থেকেই বলে রাখছি, সম্ভব হলেতো আমি অবশ্যই পোস্ট করবো। তবে তা না হলে ঈদের দুই তিনদিন পর পর্যন্ত হয়তো গল্প নাও পেতে পারেন। আর যদিও গল্প দেই, সেখানে কমেন্ট এর রিপ্লাই হয়তো খুব বেশি করতে পারবো না। যদি গল্প আসে,তবে তা আসবে সন্ধ্যার আগেই। আর নাহলে আসবে না। এক বালতি সমবেদনা আমি সহ সকল পাঠককে। আবারো বলছি, আমি এখনো সিওর না গল্প দিতে পারবো কিনা। আগে থেকেই বলে রাখলাম, রাগ করবেন না। আমি নিরুপায়।
হ্যাপি রিডিং।]