আমার একটাই যে তুই❤️ #সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি #পর্ব-৭

0
309

#আমার একটাই যে তুই❤️
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব-৭

তখনি তিথি বলল,,

–” কি উদ্ভট ধাঁধাঁ!

আয়ান জিজু বললেন,,

–” সিম্পল বিষয়! তার ঘর তার করা জাল! সে কেন আটকাবে?

আমি মাথা নাড়ালাম অর্থাৎ “না”!

তখনি নুশরা বলল,,

–” আপি ও তার ঘর চেনে। তাই আটকায় না!”

আমি আবারো না করলাম।

তখন মিশুপি বলল,

–“তুইই বলে দে!”

তখনি ইউসুফ ভাই বললেন,

–” আমি জানি!তোর ধাঁধার দুটি উত্তর আমি দিব।

উত্তর১: মাকড়সার জাল তৈরি হয় আঠালো তন্তু দিয়ে। মাকড়সার শরীর থেকে আঠালো রস সরু সুচের মতো নল দিয়ে বেরিয়ে বাতাসে মিশলেই তা শুকিয়ে হালকা সুতোর মতো আকার নেয়। ছয়-সাতটি চাকার মতো বৃত্তাকার তন্তুকে পরস্পরের সাথে আটকে রাখে কেন্দ্র থেকে নানা দিকে ছড়িয়ে যাওয়া ব্যাসার্ধ বরাবর তন্তুগুলো। অনেকটা সাইকেলের স্পোকের মতো। ব্যাসার্ধ বরাবর এসব তন্তু আঠা থেকে প্রায় মুক্ত। কোনো পোকামাকড় জালের কোনো একটি চাকার অংশে আটকে গেলে মাকড়সা স্পোকের মতো দেখতে ব্যাসার্ধ বরাবর তন্তুগুলোর ওপর গিয়ে শিকার ধরে। এসব তন্তু তেমন আঠালো নয় বলে ওখানে মাকড়সার পা আটকে যায় না। তা ছাড়া মাকড়সার পা থেকে এক ধরনের তৈলাক্ত জিনিস বের হয়, যা মাকড়সাকে জালের আঠা থেকে পা ছাড়িয়ে নিতে সাহায্য করে। দেখা গেছে, ক্লোরোফর্ম-জাতীয় জিনিসে মাকড়সার পা ডুবিয়ে রাখলে তৈলাক্ত জিনিসটা ধুয়ে বেরিয়ে যায়। তখন মাকড়সা নিজেই জড়িয়ে যায় নিজের জালে।

উত্তর ২ : মাকড়শা তার নিজের আকারের চেয়ে ছোট প্রাণী শিকার করার জন্য জাল বোনে। তাই সহজতই নিজের পায়ে জাল জড়ানো বা এর বুননে কখনোই আটকে যায় না।আর ওই পরিস্থিতির সাথে মাকড়শা অভিযোজিত।

সাথে সাথে সকলে হাততালী দিতে লাগলো।ইউসুফ ভাইয়া তখন নিজের কর্লার টেনে ভাব নিয়ে বলল,,

–” আমি সব জানি বুঝলি! এসব কোনো ধাঁধাঁ হলো? হুহ!”

সবাই তখন খিল খিল করে হেসে দিল।

পরের দিন মিশুপি আর আয়ান জিজু চলে গেলেন। বাসা হয়ে উঠলো আবার শূন্য। সবার মন খারাপ। আবার কান্নার রোল!মেহমানরাও সব এক এক করে চলে যাচ্ছে! পুরো বাড়ি হয়ে উঠছে জনমানব শূন্য।তখন ইউসুফ ভাইয়া বাসার পরিবেশ ঠিক করতে চলে গেলেন রান্না ঘরে। পড়ে নিলেন এপ্রোন আর চুলোতে বসিয়ে দিলেন কড়াই। তার পাশেই আমরা দাঁড়িয়ে ড্যাবড্যাব করে দেখছি তাকে। এতে উনি বুঝি অস্থি ফিল করলেন। সাথে ধমক দিয়ে উঠলেন তিনি..!

–” এখানে কি? বের হো সব কঁটা?”

তার ধমকে দৌড়ে পালালো সবাই। দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। তাকেই যে দেখচ্ছি! সাদা এপ্রোনে সন্দেশ লাগছে তাকে।মনে হচ্ছে এখনি খেয়ে ফেলি তাকে! ইসসস! কি কিউট মুখ খানা তার। রান্না ঘরের তাপে মুখ খানা আরো লাল টমেটো হয়ে গেছে তার।আমি দাঁড়িয়ে তাকে দেখতে ব্যস্ত। তখনি তিনি আমার মুখের সামনে তুরি বাজালেন। ভাবনার জাল উল্টে গেল। তার দিকে তাকাতেই, সে ভ্রু কুচকে বলে উঠে,,

–” তোকে কি আলাদা ইনভিটেশন দিতে হবে? নাকি ভাজা কাঠির ছ্যাকা? ”

আমি তার কথায় থতমত খেয়ে বললাম,,

–” না না যাচ্ছি!”

বলে দৌঁড়ে বাহিরে চলে আসি! কিন্তু দরজার আড়াল থেকে তাকে ঠিকি দেখেছি।রান্নার সময় করা তার ভাব ভঙ্গী গুলো পুড়োটাই জোশ! সব আমার ফোনে ভিডিও করে নিলাম।আচ্ছা উনি কি জানো? উনি কতো জোস? কত সুন্দর? কখনো তাকে লাগে তেতুলের মত টক! কত রসমালাই। আবার কখনো বা বিরিয়ানি??

ড্রইংরুমে সবাই উপস্থিত। ইউসুফ ভাই সবার হাতে হাতে তার রান্না করা ডিস দিতে ব্যস্ত। তিনি বিদেশী কিছু আয়টেম করেছেন!নাম জানি না। কিন্তু খেতে বহুত টেষ্ট! অনেক মজার রান্না পারেন তিনি! আচ্ছা? উনার হাতে কি তিল আছে? হাতে তিল থাকলে নাকি তার রান্না সুস্বাদু হয়। আবার যার পায়ে তিল থাকে সে বিদেশে যায়! আবার যার নাকি ঠোঁটে তিল থাকে, তারা নাকি পালিয়ে বিয়ে করে! সব কিছু শুনা কথা! তাউ মিলাতে ইচ্ছে করছে! ইউসুফ ভাইয়া হাতে তিল আছে? বা পায়ে? তাই কি তার রান্না মজা সাথে বিদেশ গেছিলেন তিনি!দেখতে হবে!

ইউসুফ ভাইয়ার খাবারের তারিফ করতে নানু মা বললেন,,

–” দাদু ভাই! এত ভাল রান্না আমি আমার জম্মে খাই নি। খুব মজা হয়েছে। অনেক মজা! ;মাশাল্লাহ! ”

তারপর নানুমা ইশরায় কাছে ডাকলে ইউসুফ ভাইয়াকে! কপালে চুমু এঁকে দিলেন সাথে সাথে আর হাতে একটি আংটি পড়িয়ে দিয়ে বললেন,,

–“দাদু ভাই এটা তোমার উপহার। তোমার দাদার আংটি! তিনি তার নাতি নাতনিদের জন্য বানিয়ে রেখেছিল। সবারটা দেয়া হয়েছে এখন তোমারটা বাকি!”

আংটি পড়িয়ে দিলেন নানুমা।ইউসুফ ভাইয়াও খুব খুশি! হবে না কেন তার দাদা ভাইয়ের আংটি। তিনি তার দাদা ভাইয়ের সব থেকে প্রিয় আর আদরের নাতি বলে কথা!কিন্তু আমার কঁপাল? আমার তো পরিবারই নেই!সব থেকে অভাগা আমি।এসব দেখে বুকের মাঝে চিন চিন ব্যথা হতে লাগলো। তাউ ামার ঠোঁটে আছে হাসি। ঝুলন্ত হাসি।

এখন বিকেল। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা। কারন আকশে কালো মেঘগুলো বাতাসের তালে তালে জড় হচ্ছে এক সাথে। আর করে দিচ্ছে স্নিগ্ধময় বিকেলটা আন্ধকারচ্ছন্ন। সাথে ভেসে আসচ্ছে বাজ পড়ার ডাক।সব কিছু ভালই লাগচ্ছে মন্দ না।

–” কি করছিস? মন খারাপ?”

এতক্ষণ বাগানের সাইডে দোলনায় বসে এসব ভাবছিলাম।তখনি তিথির কথায় ভাবনা থেকে বের হলাম আমি।

–” নাহ্! পরিবেশটা উপভোগ করে চেষ্টা করছি..!”

–“সত্যি বলছিস?আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুই মিথ্যা বলছিস?” সন্দিহান দৃষ্টিতে বলল তিথি।

–” মিথ্যা কেন বলব? আজব! আমি ভাল আছি! আর ফুর্তিতে আছি!”

তখনি তিথি আমার চোখের কোনে জমে থাকা জল মুছে দিয়ে বলল,,

–“হে তা তো দেখতেই পাচ্ছি!”

আমি চুপ। সে আবার বলল,,

–” কেন কাঁদিস তাদের জন্য? যারা তোকে আপন ভাবে নি?”

আমি মাথা নত করে নিচু সুরে বললাম,,

–” ভাবতে চাই কই! চলে আসে! আর আজকের দিন তো বেশি..!”

ফুঁপিয়ে উঠলাম আমি।তিথি মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,

–” কাঁদিস না। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে!”

–“হবে না! এত সৌভাগ্য আমার না!”

–“বাজে কেন বকিস?”

আমি হাসলাম। আর মনে মনে বললাম,,

–“যার যা নেই সেই বুঝে। তার কত কষ্ট..! তাছাড়া মানুষ যতই বলে আমরা বুঝি তোমার কষ্ট! কিন্তু সত্যি বলতে তারা বুঝে না! যতখন না তারা উপলব্ধি করতে পারবে।

তখনি দৌঁড়ে আসলো নুশরা। হাপাতে হাপাতে বলল,,

–“কুহুপি তুমি এখানে! আর আমি পুরো বাড়ি খুঁজছি।

–“কেন? ভ্রু কুচকে বললাম!”

–“ছোট ভাইয়া খুঁজে!”

নুশরার কথায় বিস্মিত হয়ে বললাম,,

–” আমাকে খুঁজে? কেনো??”

–” আমি জানি না। তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে গেলাম আমি”

ইউসুফ ভাইয়ার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ভিতরে যাবো কি না ভাবচ্ছি! মনে হাজারো প্রশ্ন “এই লোক কেন ডাকে?” তার অবশ্য যথেষ্ট কারন আছে। আজ পর্যন্ত উনি কখনো ডাকে নি মোরে। তবে আজ কেন? সূর্য কোন দিক উঠেছিল আজ??এসব ভাবতে ভাবতেই রুমে নক করলাম। ওপাশ থেকে জবাব এলো,

–“ভেতরে আয়!”

ভেতরে আয় কথাটা শুনে অবাক হলাম সাথে প্রশ্ন জাগলো মনে,,

–“উনি কিভাবে বুঝলেন আমি এসেছি? হাউ? অন্য কেউ হতে পারতো! লিয়া! হে লিয়াও হতে পারতো! তাহলে!

আমার ভাবনার মাঝে আবার ডাক আসলো ভিতর থেকে। আমি হুড়মুড়িয়ে ঢুকলাম। হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমি কাঁপাচ্ছি কিন্তু কেন?

তখনি ইউসুফ ভাইয়া আমার হাত টেনে খাটে বসিয়ে দিলেন। আর নিজে এক হাটু ভাঁজ করে নিচে বসে পড়লেন। আর তেলের বাটি এগিয়ে দিতে দিতে বললেন,,

–“তেল দিয়ে দে!”

তার এহেন কাজে হতভম্ব আমি। মুহূর্তে কি হয়ে গেল বুঝতে পারছিনা। এতোটুকু বুঝতে পারছি আমার শরীর আগের তুলনায় থেকে কাঁপছে অসম্ভবরকম কাঁপছে। তার সাথে অন্যরকম অনুভূতি। পছন্দের মানুষের হুটহাট স্পর্শ করার অনুভতি। আরো বুঝতে পারলাম আমার ঠোঁটে কোনে হাসি ঝুলছে।

ইউসুফ ভাই আবার বলল,,

–” কি হলো! দে তেল দিয়ে! মাথাটা ধরেছে খুব!”

আমি তেল দিতে লাগলাম কিছু না বলে। আজ ইউসুফ ভাইকে থ্যাংক ইউ দিতে ইচ্ছা করছে। তার চুলে হাত বুলানো শখ যে সেই কবের। আজ সে পূরণ করে দিল। সত্যি পছন্দের মানুষের সাথে জুড়ে থাকা প্রতিটি মুহুর্ত গুলো অতুলনীয়। যা বলে বোঝানো যায় না। শুধু অনুভব করা যায়! ঠিক তেমন। একটি খাবার টেষ্ট না করলে যেমন কেউ বুঝবে না তেমনি কেউ পছন্দ মানুষের সাথে সময় না কাটালে বুঝবে না। এই মূহুর্ত গুলো হয় সুন্দর সুমধুর।ভেজালহীন। একদম খাটি!

চলবে,

ফ্যামিলি তে একটু ঝামেলা চলছে যার কারণে আজকের পাটটা ছোট হয়েছে। লিখার সময় পাচ্ছিলাম না। আর ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here