#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৪
তোঁষা’র মাথাটা কোলে তুলে আরহাম শান্ত হয়ে বসে আছে। বাইরে থেকে ঝাপ্টা একটা বাতাসে শীতলতা অনুভব করলো আরহাম। ঝাপ্সা চোখে তাকালো তোঁষা’র পানে। একটু আগের করা তোঁষা’র ছটফটানি এখনও ওর চোখে ভেসে বেড়াচ্ছে। আরহাম জানে তোঁষা’কে দেয়া মেডিসিনগুলো রিএক্ট করবে। সাইড ইফেক্ট আছে তাই বলে এমন কোন কিছু যে আজ হবে তা আরহামে’র জানার বাইরে। ব্রেইন কন্ট্রোল করা আরহাম জানে। পটুত্ব যতটা দরকার তার অনেকটাই আরহামে’র আয়ত্ত্বে। দেশের বাইরে চিকিৎসা শিক্ষা উন্নত বেশ। সেখানে যদি প্রশ্ন আসে সাইকোলজি নিয়ে তাহলে উন্নয়নের শীর্ষে রয়েছে কিছু রাষ্ট্র। আরহাম যথেষ্ট মেধাসম্পন্ন ছেলে। যেমন ভাবে তার একদিক দিয়ে মানুষিক কিছু সমস্যা রয়েছে ঠিক তেমন ভাবেই তার মেধা তুখোড় এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ইন্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে হুট করে মেডিক্যাল সেক্টরে যাওয়াটা কারো জন্যই সহজ বিষয় নয় কিন্তু সেখানেও নিজের মেধার পরিচয় দিয়ে নিজেকে বিস্তর ভাবে প্রামাণ করেছে আরহাম। বাবা’র নজরে সে তোঁষা’র জন্য নিজেকে পারফেক্ট করতে চেয়েছিলো। করেছেও। তারা যদি একটা বার মেনে নিতো তাহলে হয়তো আজ আরহামে’র এতটা কঠোর হতে হতো না। তোঁষা’কে এতটা কষ্টদায়ক ভাবে ট্রিট করতে হতো না।
তখন যখন আরহাম ফিরে তাকালো তখন বিছানা থেকে নিচে পড়েছে তোঁষা। ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে নিজের মাথা নিজেই দেয়ালে বারি মে’রেছে। আরহাম’কে ধরার বা কিছু করার সুযোগ সে দেয়নি। মুহুর্তটা ভুলতে পারছে না আরহাম। বহু কষ্টে ইনজেক্ট করেছে তোঁষা’কে। এরপর এইতো মাত্র ঘুমালো। কপালটা ফুলে আছে। ডান সাইডে খুবই আলতো হাত বুলালো আরহাম। সাইড থেকে মলমটা নিয়ে খুবই যত্ন করে লাগিয়ে দিলো কপালে। কিছুটা চুল তোঁষা’র মুখে চোখে আসছে দেখে আরহাম চুলগুলো একত্রে করার চেষ্টা করছে। বেশ হিমশিম খেতে হলো আরহাম’কে। এত বড় চুলগুলো কিছুতেই আয়ত্ত্বে রাখা যায় না। তুঁষ’টা নিজেও ঝামেলায় পরে যায় চুল নিয়ে।
দৃষ্টি নিবদ্ধ তোঁষা’র মুখে। ফুলা ফুলা গাল দুটো আরহামে’র অনেক প্রিয়। যখন তুঁষ’টা জেদ ধরে বা রাগ করে তখন লাল একটা আভা ছড়ায় এখানে। লজ্জা তেমন একটা পায় না ওর তুঁষ। তাই আরহাম বুঝতে পারলো না তার তোঁষা’র মুখটা লজ্জায় রাঙা হয়? জানা নেই।
মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আরহাম ভাবনায় পরলো। ডোজটা সে নিজেই বাড়িয়েছে তোঁষা’র। আরেকটু স্টাডি করা দরকার এটা নিয়ে। তোঁষা’র এতটা মাথা ব্যাথা কেন উঠলো? চিন্তায় আরহামে’র কপালে ভাজ পড়লো। এমন হওয়াটা আজ স্বাভাবিক ঠেকল না ওর নিকট।
_________________
রাফি’কে ডেকে পাঠালো তুষা’র। রাফি শুকনো ঢোক গিলে দরজায় নক করলো। তুষা’র গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— কাম।
— স্যার!
— কাম হেয়ার রাফি।
— সরি স্যার।
— আই সেইড ইউ টু কাম।
তুষা’রের কথা শুনা মাত্র রাফি’র ঘাম ছুটে গেলো। স্যার তাকে কেন ডেকেছে তা জানা নেই রাফি’র। ভয়ে ভয়ে আগেই সরি বলে কেটে পরতে চাইলো কিন্তু তুষারের মুখভঙ্গি দেখে কিছুই ঠাওর করতে পারলো না। তুষার বেশ স্বাভাবিকভাবেই বললো,
— বসো।
সামনের চেয়ারটা ইশারায় দেখাতেই রাফি জড়সড় হয়ে সেখানে বসলো। তুষা’র আরাম করে বসে আছে। বেশ ঠান্ডা গলায় সে বলে উঠলো,
— এখানে কেন এসেছো?
ডেকে এনে জিজ্ঞেস করছে কেন এসেছো? রাফি শুকনো গলায় বললো,
— আপনি ডেকেছেন তাই।
— আই আস্কড হোয়াই ডিড ইউ জয়েন্ড বাংলাদেশ আর্মি?
— ইটস মাই লাভ ফর মাই কান্ট্রি স্যার।
— ভুল। কোথায় দেশ প্রেম? আমি তো রাজশাহী শহর জুড়ে তোমার নারী প্রেম দেখছি।
তুষার প্রচুর চতুর মানুষ। মুখের ভাষায় মা’রতে হয় কিভাবে তা জানা আছে তার। যা বুঝার তা সে বুঝে গেলো ততক্ষণে। বেশ তারাহুরোয় বলে উঠলো,
— স্যার আই কেন এক্সপ্লেইন।
— প্রয়োজন নেই তার। ইউ মে গো।
রাফি মাথা নিচু করে চলে গেল। যাওয়ার আগে আরেকবার সরি বলতেও ভুললো না সে।
রাফি যেতেই তুষারের ফোনটা বেজে উঠে। তারাতাড়ি ফোন তুললো তুষার। ব্যাস্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— কোন ইনফরমেশন?
অপর পাশ থেকে কিছু বললো যা শুনে ভ্রু কুঁচকায় তুষা’র। কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রাখলো বা পাশের টেবিলে। তোঁষা’টাকে খুঁজতে খুঁজতে এই মাস খানিক সময়ে হাঁপিয়ে উঠছে তুষার। অতি গোপনে আরহামে’র খোঁজ চালাচ্ছে সে। আপাতত এতটুকু শিওর আরহাম ঢাকাতেই আছে। এই পর্যন্ত দুই বার তাকে দেখা গিয়েছে তবে কেউ ই নিশ্চিত না যেহেতু আরহামে’র মুখ ঢাকা থাকে। মাক্সের দরুন চেহারা বুঝা না গেলেও কিছুটা টের পাওয়া যায়। ম্যাসেজে পাঠানো ছবিটা দেখে থমকে গেলো তুষার। হ্যাঁ এটাই আরহাম। এরমানে আরহাম তোঁষা’কেও ঢাকাতেই রেখেছে। মাথা কাজ করছে না তুষা’রের। আরহাম নিজেকে হাজার কন্ট্রোলে রাখুক না কেন দিন শেষে সে বদ্ধ পাগল হয়ে যায়। তখন কাউকে পরোয়া করে না। কতবার এর সাক্ষী স্বয়ং তুষার ছিলো। যে নিজেকে আঘাত করতে দ্বিতীয়বার ভাবে না সে তোঁষা’কে হাজার ভালোবাসা দিক দিনশেষে সেই ভালোবাসাটা ও তো উন্মাদনায় ভরপুর থাকবে। সেই প্রণয়ের ফুলকিতে ঝলসে না যায় তুষা’রের নরম বোনটা। ছোট সেই প্রাণটা।
__________________
— ক্ষুধা লেগেছে।
— হু? হ্যাঁ। খাবি তো প্রাণ। ইনসুলিন টা আগে দিয়ে নেই।
— সাথে ওটা ও দিও নাহলে আমার মাথা ভালো লাগে না।
ঢোক গিললো আরহাম। শুষ্ক গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— ওটা মানে?
— জানি না। কিছু একটা। তুমি দাও তো। সেটাই। ওটা না দিলে আমার মাথা ভার ভার লাগে। দেয়ার পর ভালোলাগে।
— আমি কিছু দেই না তুঁষ। শুধু তোর ভালোর জন্য..
— উম। খাব এখন।
— হ্..হ্যাঁ প্রাণ যাচ্ছি এখনই।
সবে মাত্র ঘুম ভেঙেছে তোঁষার। রাত এখন আড়াইটা। আরহাম ইনসুলিন পুশ করে বিশ মিনিট পরই খাবার হাতে ঢুকলো। তোঁষা’র আচরণ স্বাভাবিক। তবে খেতে খেতে জানালো তার মাথা ব্যাথা করছে। আরহাম ব্যাস্ত হতেই তোঁষা পুণরায় বললো,
— কপালে করছে ব্যাথা।
— চলে যাবে প্রাণ। হা কর।
বড় করে মুখ খুললো তোঁষা। আজকের তোঁষা’র খাওয়াটা স্বাভাবিক ঠেকলো না আরহামে’র নিকট। এমন করে ও ওর তুঁষ খায় না। খেতে খেতে কয়েকবার গালে জমিয়ে রেখেছে। আরহাম ওকে পানি খায়িয়ে যেই না নিজে খাবে ওমনিই দেখলো খাবারে আজ লবন হয় নি। হয়নি বলতে হয়তো দেয়া ই হয় নি। তাহলে তোঁষা কেন বুঝলো না?
স্বাদকুড়িতে তো সমস্যা হওয়ার কথা না। তাহলে?
খাওয়া শেষ করে আরহাম তোঁষা’র কাছে এসে ওর কপালে হাত রাখলো। অল্প গরম শরীরটা। আজ তোঁষা’র সপ্তাহিক ইনজেকশন দেয়ার কথা। তবে দিবে কি না আরহাম বুঝতে পারছে না। ওটা দিলেই তো হাতপা ছুঁড়ে কাঁদে তোঁষা। ব্যাথা জনক ইনজেকশনটা। আকাশগুড়ুম ভাবতে ভাবতে তোঁষাই বলে উঠলো,
— আজ রাতে সুই দিবে না?
চমকালো আরহাম। বেশি তো না। এই তো টানা তিন সপ্তাহ ধরে দিচ্ছে তাহলে তোঁষা কিভাবে বুঝলো? আরহাম কিছু বলার আগেই বিছানার মাঝখানে বসে গলগল করে বমি করে দিলো তোঁষা।
#চলবে……
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/