প্রিয়_প্রাণ #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ২৬

0
459

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৬

হাত চুয়ে চুয়ে র*ক্ত গড়িয়ে পরছে তোঁষা’র। সুন্দর মুখটাতে সাজ লেপ্টে একাকার। আরহামে’র পা জোড়া রুমে এসেই থমকে গেলো। তোঁষা’র বা হাতে সিরিঞ্জের নিডলটা ঢুকে আছে সেখান থেকেই র*ক্ত পড়ছে। শাড়ীটা না কত সুন্দর করে পরলো অথচ এখন আঁচলটা ও জায়গা মতো নেই। কেন নেই? কি হয়েছে তা বুঝে না আরহাম। শুধু ধপ করে বসে পরে ফ্লোরে। তোঁষা’র চোখের পাপড়িগুলো নড়ছে অল্পসল্প। পাতলা লাল রঙে রঙ্গিন ঠোঁট’টা কাঁপছে অনবরত। মনে হচ্ছে কিছু বলছে। হাঁটুতে ভর দিয়েই এগিয়ে এলো আরহাম। তাকালো ওর তুঁষে’র পানে। একহাত রাখলো তোঁষা’র গালে। তোঁষা এলিয়ে দিলো নিজের মুখটা। সম্পূর্ণ ভর এখন আরহামে’র হাতের তালুতে। এক হাতে খুবই ধীরে তোঁষা’র হাতে গাঁথা সুই’টা টেনে নিলো। এখনও কিছুটা লিকুয়িড বাকি এটাতে। টান দিয়ে বের করতেই র’ক্ত গড়ালো আবারও। আরহাম খুব অল্প স্বরে ডাকলো,

— তুঁষ?

— হুউ।

মৃদু শব্দে উত্তর করে তোঁষা। বুক ফুলিয়ে শ্বাস টানলো আরহাম। ক্লান্ত অবশান্ত চোখ দুটো দেখেই যাচ্ছে তোঁষা’কে। বারবার আরহামে’র ভেতরটা চিৎকার করে বলছে, “কেন এইসব?”

তোঁষা’কে বুকে টেনে নিলো আরহাম। সামনে তিনটা এম্পুল খালি দেখে যা বুঝার বুঝলো। ভয়ে এবার তোঁষা’কে বুকে জড়িয়ে শক্ত করে ধরে কেঁদে ফেললো আরহাম। তোঁষা ম’রার মতো পরে রইলো আরহামে’র বুকে। আরহাম গুমড়ে কাঁদতে কাঁদতেই অভিযোগ জানায়,

— তুই না সাজলি? তুই না কেক বানালি? কোথায় সব? এই তুঁষ, কথা বল! এসব কি করলি তুই প্রাণ? তুই এটা কি করলি? এভাবে…..

কথা বের হলো না আরহামে’র গলা দিয়ে। শব্দ করে কেঁদে যাচ্ছে ও। খেয়াল রইলো না তোঁষা’র দিকে। তোঁষা’র নেতানো শরীরটা নিজের বুকে নিয়ে বহু কষ্টে আরহাম উঠে। বিছানায় যত্ন করে রাখে। ড্রয়ার খুলে তুলা দিয়ে তোঁষা’র হাতটা পরিষ্কার করে। একটু ঢোক গিলে তোঁষা’র আঁচলটা বুকে টেনে দিলো। দুই হাতে তোঁষা’র মুখটা ধরে কপালে দীর্ঘ সময় নিয়ে ঠোঁট ছোঁয়ালো আরহাম৷ ধীরে ধীরে নামলো নাকে অতঃপর ঠোঁটে। আলতো আদর দিতে দিতে বুকে নামলো আরহাম। মাথা রাখলো তোঁষা’র বক্ষে। ছোট্ট শিশুর ন্যায় জায়গা করে নিলো তোঁষা’র বুকে।
আরহামে’র কম্পিত শরীরটা মিশে গেলো ওর তোঁষা’র সাথে। ঠিক অবুঝের ন্যায় সে কাঁদলো তার তোঁষা’র বুকে।
অবহেলায় ফ্রিজে পরে রইলো অপরিপক্ক হাতে বানানো চকলেট কেকটা।
__________________

এত রাতে বেজায় মেজাজ খারাপ হলো তুষা’রের। ওর হাতে তথ্য’র রিজাইন লেটার। যদিও এটা সরাসরি দায়িত্বরত অফিসারের নিকট পাঠানো হয় তবে তথ্য’র এই লেটার পাওয়া মাত্র পাঠানো হয়েছে তুষা’রের কাছে। তুষারের দায়িত্ব না এসব হ্যান্ডেল করা। তবুও না চাইতে ডাক পাঠালো তথ্য’কে। এদিকে ঘন্টা পার হয়ে গেলেও তথ্য’র আসার নাম নেই। বিরক্তিতে দুই আঙুল কপালে ঘঁষলো তুষার। এমনিতেই তোঁষা নিয়ে চিন্তায় আছে ও। বাসা খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে না। আদনানে’র সাথে কথা হলো কিছুক্ষণ আগে। মায়ের শরীর খারাপ যাচ্ছে। বাবা বৃদ্ধ বয়সে এসে অতি আদরের মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায় অবস্থা। এদিকে তুষা’র ডিউটি করে বোনের খবর যোগাতে ব্যাস্ত অথচ নতুন করে নাটক শুরু করেছে তথ্য। আজ একে উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে তুষার৷ এই মেয়ের সাহসের তারিফ করতে হয়।

উঠে দাঁড়িয়ে গটগট পায়ে বাইরে এলো তুষার৷ হাটা দিলো তথ্য’র রুমের দিকে। এই প্রথম নক না করেই তুষার ঢুকে পরলো। ঢুকতেই কিছুটা অবাক হয়ে গেল। রুম জুড়ে কাপড় ছড়িয়ে তা লাগেজ ভরছে তথ্য সেই সাথে সমান তালে কেঁদে যাচ্ছে। এই প্রথম বুঝি এই মেয়েকে কাঁদতে দেখলো ও। সবসময় যথেষ্ট সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছে তথ্য। যথেষ্ট স্ট্রং একজন অফিসার অথচ এই মেয়ে এখন ছেঁকা খেয়ে ব্যাকা টাইপ কান্না করছে। তুষার গলা খেঁকানি দিতেই তথ্য তাকালো। তুষারকে দেখে চমকালো না বরং লাগেজের চেইন লাগানো। হাতে ফোন তুলে সোজা বাবা’কে কল লাগিয়ে একদমে বলে উঠলো,

— ঐ পাইলট’কে বিয়ে করব৷ সকালেই বাসায় পৌঁছে যাব বাবা।

তথ্য’র হাত থেকে ফোনটা টেনে নিয়ে কল কাটলো তুষার। ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বললো,

— এসব কি?

বলেই লেটারটা ছুঁড়ে মারলো তথ্য’র সামনে। তথ্য সেটা উঠিয়ে শান্ত স্বরে বললো,

— রিজাইন লেটার।

— ফর হোয়াট?

— আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু কন্টিনিউ।

— তার জন্য যথেষ্ট কারণ সহ রিজাইন লেটার দরকার। এই ফালতু লেটার কোন সাহসে পাঠাও? মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে?

— প্রাথমিক ভাবে পাঠিয়েছি স্যার। এন্ড খুব শিঘ্রই বিয়ের জন্য ছুটি নিব অতঃপর পারমানেন্ট বিরতি।

— তথ্য।

— বলুন।

চোখে চোখ রেখে বললো তথ্য। কিছুটা অবাক হয় তুষার। এই পর্যায়ে কিছুটা কাতর শুনালো তুষা’রের গলা,

— সময় দাও কিছুটা।

— পাইলট এন্ড আর্মি ভালো মানাবে। এটাই তো বলেছিলেন স্যার।

— সময় দেয়া যাবে না?

— আর কত?

— আর কিছুটা।

— বিয়ে করবেন আমাকে?

……………

— বিয়ের নাম শুনতেই শেষ? এখন নিন সময়? আপনি কোনদিন কাউকে ভালোবাসতে পারবেন না তুষার। কোনদিন আমাকে বিয়ে ও করতে পারবেন না। জাস্ট এমনিই এতদিন আমাকে ঘুরালেন আপনার পিছনে। ওহ সরি আপনি ঘুরান নি বরং আমি ঘুরেছি। আপনাকে বিরক্ত করার জন্য আমি দুঃখীত স্যার। আপনাকে আর জ্বালাবে না তথ্য। থাকবেই না এখানে। আপনি বিয়ে করুন কার্নেল তাহেরের মেয়েকে। এই জন্যই আমাকে পাত্তা দেন না? আগে বললেই হতো……

তথ্য’কে কথা সম্পূর্ণ করতে দেয়া হলো না। তুষার তাকে আটকে দিলো। তথ্য’র দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হলো। শ্বাস আটকে এলো। হাত পা ছুড়লেও লাভ হলো না। দুই হাত পিছন দিকে মুচড়ে ধরা তুষার নিজের বা হাত দিয়ে। ডান হাতটা তথ্য’র চুলের ভাজে। শক্ত করে তথ্য’র চুল খামচে ধরা তুষার। এই প্রথম নিজের এতটা সন্নিকটে কোন পুরুষের অস্তিত্ব কাঁপিয়ে তুললো তথ্য’কে। হাল ছেড়ে দিলো সে। তথ্য’র মনে হচ্ছে ওর শরীরটা ভাসছে বাতাসে। কখন যে তুষার ওকে উঁচু করলো টের ই পেলো না ও।
দীর্ঘ পাঁচ মিনিট পর ছাড়া পেলো তথ্য। সাথে সাথেই জোরে শ্বাস টানতে চাইলো। লাভ হলো না এতে তুষার পুণরায় একই কাজে মত্ত হলো।

দুই মিনিট যেতেই ছাড়লো তুষার। তথ্য’র অবস্থা যেন বেগতিক। তুষার তথ্য’র কাঁধের দিকে নিজের মুখ ঘঁষে ঠোঁট মুছে নিলো। তথ্য’র মুখের সামনে মুখ নিয়ে বললো,

— পাঁচ মিনিট টিকতে পারো না সারাজীবন কিভাবে টিকবে?

তথ্য শ্বাস টানার কারণে কথা বলতে পারলো না। তুষার পুণরায় বললো,

— দশ মিনিট পানির নিচে কিভাবে ছিলে ট্রেনিং এর সময়? এখন তো দুই মিনিট ও ঠিকঠাক ভাবে পারলে না কিছু।

তথ্য হঠাৎ কেঁদে উঠলো। দুই হাতে তুষা’রের গলা জড়িয়ে ধরে ধরতেই তুষার আলগা হাতে তথ্য’কে জড়িয়ে ধরলো। কানে চুমু খেয়ে বললো,

— এখন করবে বিয়ে?

— করব।

#চলবে…..
[কিছুটা অসুস্থ তাই লিখা যাচ্ছে না। দুঃখীত।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here