#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৫১
🍂
আরিফ এর বুকে ল্যাপটে আছে মায়া, নিজের ভাইকে এতটাই দিন বাদে দেখতে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেছে সে,, তাই আরিফকে জরিয়ে ধরে আছে সেই কখন থেকে,,, আরিফ হেসে মায়ার মাথায় আদুরে একহাত বলিয়ে দিচ্ছে বারবার,,, ভাই বোনের সখ্যতা যেন বেড়েই চলে হনে হনে,,,
.
আরিফ মায়ার মনে অবস্থাতা সবটাই বুঝতে পারছে,,, বিগত দশ মাস ধরে মায়া আরিফকে দেখতে পাইনি,, তাই হঠাৎ করে সামনে চলে আসায় অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠে মায়া,,,
.
মায়ার এক্সিডেন্ট সময় যদিও আরিফ মায়ার পাশে ছিল, কিন্তুু মায়ার জ্ঞান ফিরা পর পরই নিজের বিজনেস সমস্যার কারণে চট্টগ্রামে ফিরতে হয়েছে আরিফকে,,, তাই মায়া নিজের চোখ খুলে সবাইকে পেলেও আরিফকে দেখতে পাইনি কোথাও,,,,
.
রিদের অশান্ত চোখ শীত হয়ে আসে আরিফকে দেখে,,, নিজের হিংস্র ভাবটা মূহুর্তেই শান্ত হয়ে আসে,,, মায়াকে আরিফের বুকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রিদ,, দমটা যেন আটকে ছিল মায়াকে কারও বুকে দেখে,,,
.
আরিফ আর মায়াকে দেখে হাসি মুখে এগিয়ে আসে হেনা খাঁন ও মায়ার মা,,, আরিফকে কিছু বলার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় ফিহা,,, হেনা খাঁন ফিহাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো করে আরিফের সাথে কথা বলে সামনে এগিয়ে যায় তিনি মায়াকে নিয়ে,,, আরিফও হাসি মুখে তাদের পিছন পিছন আগ্রসর হতে গেলে থামতে হয় তাঁকে,,,, ফিহা পিছন থেকে আরিফ উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,
.
—” ধন্যবাদ না দিয়ে চলে যাচ্ছেন,,, আজব পাবলিক তো আপনি,,,
.
ফিহার কথা পিছনে ফিরে তাকায় আরিফ, ফিহাকে এক পলক পা থেকে মাথা পযন্ত দেখে নিয়ে দ্রত চোখ সরিয়ে সামনে তাকায় সে,,, পরে চলে যেতে যেতে ফিহাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,,
.
—” যেটা সামলাতে পারবেন না সেটা পরেন কেন,,, পেট দেখানো যদি খুব জরুরি না হয়ে থাকে তো চেইঞ্জ করে আসুন,,,
.
আরিফের এমন কথায় হতভম্ব হয়ে যায় ফিহা,,, কি বলেছে বুঝার জন্য নিজের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারে,, ফিহা বিদেশি কালচারের বড় হওয়ায় পেট বেড় হওয়া তেমন একটা ব্যাপার না, ওরা সবসময় এই ধরণের ড্রসআপ পরে থাকে,,, কিন্তুু আরিফের কাছে বিষয়টি মোটও পছন্দ না বুঝতে পেরে ফিহা নিজেকে দ্রততা সঙ্গে গছিয়ে নেয়,,,, পরে কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে উল্টো পথে নিচে পা বাড়ায়,,,,
.
,
🍁
হাতে হলুদ বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়ন,, নিজের মনের মানুষটাকে একান্ত ভাবে হলুদ ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য তার এই প্রচেষ্টা,,, কিন্তুু অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটি সামনে পেয়েও হলুদ ছুঁয়াতে পারছে না সে,, মায়া তার মায়াবাসিকে নিয়ে মন্ত হয়ে আছে,,, মায়ার আশেপাশে পরিবারের সকল সদস্যই রয়েছে,, তাই সে বাধ্য হয়ে মায়ার পাশেও ঘষতে পারছে না,,, দূর থেকে হলুদ বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অসহায় দৃষ্টিতে করে,,,,
.
আয়ন এর এমন দৃষ্টি অপেক্ষা করে কেউ একজন গিয়ে সবার সামনে দিয়েই মায়ার গালে গলায় নিজের দু’হাতে হলুদ ল্যাপটে দেয়,,, আকস্মিক ঘটনায় সবাই চমকে তাকাতেই আবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে ব্যাক্তিটি দিকে,,, কারণ ব্যাক্তিটি জীবনের কখনো কারও হলুদের ফাংশনে যাওয়া তো দূর দূরে বিষয়, আর সেই জায়গায় হলুদ নিয়ে মাখামাখি করছে, তাও আবার নিজের বউকে সবার সামনে লাগিয়ে দিচ্ছে, কথাটা ভাবতেই সবার চোখ কৌটা থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম,,,
.
রিদ সবার এমন দৃষ্টি অনুসরণ করেও কিছু না বলে চুপচাপ নিজের মতো করে মায়ার গালে গলায় হলুদ ল্যাপটে দেয়,,, রিদের হঠাৎ এমন কাজে মায়া প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পরে চুপ হয়ে যায় ভয়ে,,,, আর তাকিয়ে থাকে অসহায় দৃষ্টিতে,,,, আর রিদকে এমন ভাবে হলুদ লাগাতে দেখে হেনা খাঁন আবাক হয়ে বলে উঠে,,,,
.
—” কি করছিস রিদ,,,
.
হেনা খাঁনের কথায় রিদ তার দাদীর দিকে না তাকিয়ে হলুদ লাগাতে লাগাতে মায়ার চোখে নিজের দৃষ্টি স্থির রেখে স্বাভাবিক ভাবেই বলে উঠে,,,,,
.
—” হলুদ লাগাচ্ছি,,,
.
—” তোর কি আমাকে কানা মনে হচ্ছে রিদ,, তুই ওকে এভাবে কেন হলুদ লাগাচ্ছিস,,,
.
—” আমার মন চেয়েছে তাই লাগাচ্ছি,,,
.
রিদের এমন খাপছাড়া কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে হেনা খাঁন,, কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠে,,,,
.
—” তোর মন চাইলে ই কোনো কিছু করতে পরবি না তুই, আমার সোনামার সাথে তো একদমই না,,,
.
হেনা খাঁনের এমন কথায় রিদ মায়ার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দাদীর দিকে তাকায় পরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করে বলে উঠে,,,,
.
—” কেন পারবো না,,,? তোমার সোনামাকে আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার সময় তুমি কি আমার সাথে চুক্তি করেছিলে, যে তোমার সোনামাকে আমি কোনো কিছু লাগাতে পারবো না, কিছু করতে পরবো না,,,, কই আমার তো তেমন কিছু মনে পরছে না,,,
.
কথাটা বলেই আবারও রিদ হেনা খাঁনের দিকে তাকায় পরে খানিকটা থেমে আবারও মায়ার দিকে তাকিয়ে গালে আদুরে হাত দিয়ে ভালো করে হলুদ মাখাতে মাখাতে হেনা খাঁনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,
.
—” দাদী এখন তোমার সোনামাকে মাত্র হলুদ ছুঁয়ে দিলাম,, আমার তো আরও অনেক ছুঁয়াই বাকি পরে আছে তোমার সোনামা সাথে,,,
.
রিদের এমন কথায় কানে আসতেই হেনা খাঁন রেগে ঝাঁজালো কন্ঠে বলে উঠে,,,,
.
—” এই তুই এতটা নির্লজ্জ কবে থেকে হলি রিদ,,,,
.
—” যবে থেকে বউ আমার পালায় পালায় করে,,, (সোজাসাপ্টা উত্তর)
.
রিদের এমন খাপছাড়া কথায় হেনা খাঁন চুপ হয়ে, কারণ তিনি রিদকে আরও কিছু বললে তার উত্তর হিসেবে রিদের এমন লাগাম ছাড়া কথায় শুনতে হবে তাঁকে,,, তাই তিনি চুপ করে রিদের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,,, উপস্থিত সবাই চুপ হয়ে আছে রিদ কথায় সাথে মায়াও,,, রিদ নিজের মতো করে মায়াকে হলুদ লাগিয়ে সবার দৃষ্টি অপেক্ষা করে হনহনিয়ে চলে যায় জায়গায় ছেড়ে,,,,
.
🍁
অন্য কারও রিদের এমন পরিবর্তন টা মোটেও ভালো লাগছে না,,, রাগে তার শরীর রি রি করছে শরীরটা তার,,, আর সেই রাগের রেশ ধরে হাতে থাকা হলুদ বাটিটি প্রচন্ড জোরে আচার মারে ফ্লোরে আয়ন,,, তার ইচ্ছে করছে সবকিছু ধংশ করে দিতে,,, কেন তার সাথে এমনটা হচ্ছে, সেতো এমন কিছুই আশা করেনি তাহলে আজ কেন তাঁকে এতো, কেন, কেন,,? প্রশ্নের সমক্ষীন হতে হচ্ছে,,, কে দিবে তার এতো কেন প্রশ্নের উত্তর,,,,,
.
একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে ঢুলতে ঢুলতে ধীর পায়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে যাচ্ছে মায়া,,, সারা মুখে গলায় তার হলুদের মাখামাখি,,, সেই হলুদ পরিস্কার করার জন্য হেনা খাঁন মায়াকে নিচে পাঠায় গোসল করার জন্য,,, হলুদ অনুষ্ঠানে এখনো চলছে ছাদে সারারাত ব্যাপি সেটা বহাল থাকবে,,, মায়া রাত জাগতে না পারা তাকে নিচে পাঠানো হয়, গোসল ঘুমিয়ে পড়ার জন্য,,,,
.
মায়া ঢুলতে ঢুলতে এগিয়ে আসতেই তাঁকে কেউ পিছন থেকে ঝাপটে ধরে নিজের দুহাত দিয়ে মায়াকে আঁকলিয়ে নিয়ে তাকে নিয়ে অন্ধকার একটা রুমে ঢুকে যায়,,,, আকস্মিক ঘটনায় মায়া স্তব্ধ হয়ে যায়,,, কি করবে কিছু বুঝতে না পেরে নিজের দুহাত পা ছুটাতে ছুটাতে চিৎকার করায় মেতে উঠে,,,, কিন্তুু বাড়িতে মিউজিক শব্দ বিকট হওয়ায় মায়ার চিৎকার কারও কান পযন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছে না,,,,, আর মায়াকে ঝাপটে ধরা ব্যাক্তিটি সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে এই মূহুর্তের,,,,,,
চলবে…………..