#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৫৫
🍂
কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয় আমার বেলায়ও ঠিক তাই হচ্ছে, উনার থেকে যতই পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি ঘুরে ফিরে উনার সামনে পরতে হচ্ছে আমাকে, তারপরও লুকোচুরি পর্ব টা জারি রয়েছে আমাদের মধ্যে, কারণ যত বারই উনার সামনে পরেছি আমি ততবারই আমি উনার থেকে লুকানোর জন্য কিছু না কিছু করে পালিয়ে বেড়িয়েছি আমি, আজ সকালে অনেক কষ্ট উনার থেকে পালিয়ে বাঁচলাম, উনার যে কি হয়েছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না আমি, উনি আমার সাথে কি অদ্ভুত সব আচরণ করছে যেটা আগে কখনোই করেনি আমার সাথে, উনি এমন কেন করছেন, কি হয়েছে উনার, কিছুই বলছেন না আমাকে, আর উনার আমার সাথে করা অদ্ভুত সব কাজ গুলোর থেকে বাঁচার জন্য সকাল থেকে দাদী পিছন পিছন ঘুরে বেড়াচ্ছি আমি, দাদী কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলে আম্মু পিছন ঘুরে বেড়াচ্ছি, দুজনের পিছনে ঘুরাঘুরি পর্বটা জারি রেখেছি আজ উনার থেকে বাঁচতে,,,
.
কিন্তুু তারপরও বেশ কয়েক বার উনার সামনে পরতে হয়েছে আমাকে, উনি (রিদ) দেখার আগেই আমি লুকিয়ে পরেছে, উনি কতক্ষণ অস্হির দৃষ্টিতে চারপাশে তাকিয়ে চলে যেতেন, আমি জানি উনি এতটা অস্থির হয়ে আমাকে খুঁজতেন কিন্তুু আমি উনার সামনে পরতে চাই না, কাল রাত থেকে উনার কি হয়েছে কি জানি যতবার সামনে পরেছি ততবারই উনি আমাকে নিজের সাথে অদ্ভুত ভাবে চেপে ধরেছেন, তাই উনার থেকে বাঁচতে এই পথে অবলম্বন করা আরকি,,,
.
নিহা আপুর কাল হলুদ সন্ধ্যা পর্বটা গেলেও আজ মেহেদী ছুঁয়া, তাই খান বাড়ির মধ্যে মেহমান আমেজে পাল্লাটা ভরপুর সবাই সবার মতো করে গল্পের, কাজে, আড্ডা মেতে উঠছে,, সবার সাথে আমার সক্ষতা থাকলেও অজানা এক কারণে ডলি আপুর পরিবার সাথে সেই সক্ষতা হয়ে ওঠেনি আমার, ডলি আপুর মা-বাবা অকারণেই আমার সাথে এক রকম বাজে ব্যবহার করে থাকে, কি কারণে এমনটি করে থাকে তা বুঝে উঠে পারেনি আমি, তাই ওনাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখি চলছি বরাবরই মতোই,,
.
দাদীর পাশে দাড়িয়ে আছি আমি, এক হাতে দাদী আমাকে ধরে রেখেছে আর অন্য হাতের আমার চকলেট ধরে রাখা, নিজের মতো করে চকলেট খাচ্ছি আর সবাইকে গোল গোল চোখে পযবেক্ষন করছি, আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে পাশ থেকে ডলি আপুর মা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,
.
—” এই মেয়ে আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো যাও,,
.
উনার হঠাৎ কথায় চমকে উঠে আমি আর দাদী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় উনার দিকে, চোখের সামনে অতি সুন্দরী রমণীকে দেখতে পেয়ে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে বলে উঠি,,,,
.
—” আন্টি আপনি আমাকে বলছেন,
.
—” হ্যাঁ তোমাকেই বলছি, আর আমাকে আন্টি কেন বলছো কোন অ্যাঙ্গেল থেকে আন্টি মনে হচ্ছে তোমার,, (রাগে গিজগিজ করতে করতে)
.
উনার এমন কথায় বোকার মতো তাকিয়ে থেকে বলে উঠি…
.
—” তাহলে কি বলবো আপনাকে,,,?
.
—” ম্যাম বলবে, এবার যাও আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো ঠান্ডা হওয়া চাই আমার যাও,,
.
উনার এমন কথায় আমি মাথা নাড়িয়ে সুমতি জানিয়ে পানি আনার জন্য নড়তেই দাদী আমার হাত শক্ত ভাবে চেপে ধরে ডলি আপুর আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,
.
—” বিনা তোমাকে ওয়েটার পানি এনে দিচ্ছে , আমার সোনামা কোথাও যেতে পারবে না,,,
.
দাদীর এমন কথায় যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে ডলি আপুর মা তিনি খানিকটা রেগে বলে উঠে,,,
.
—” কেন ওয়াটার কেন আমাকে পানি এনে দিবে, এই মেয়ে আনতে সমস্যা কোথায়, আসার পর থেকেই দেখছি এই মেয়ে বাসার কোনো কাজই করে না, এতো বসে বসে না খেয়ে একটু কাজও করতে পারে তাই না, আমাকে এক গ্লাস পানি খাওয়ালে কি এমন হবে শুনি,,,
.
ডলি আপুর কথায় খুন্ন হলাম আমি একরাশ অভিমান যোগ হলো আমার মাঝে, যদিও আমি কষ্ট পাচ্ছি সবার সামনে আমাকে এইভাবে বলার জন্য কিন্তুু ডলি আপুর মা কথা গুলো একদম সত্যি বলছে, আমার এই বাড়ির সব কাজ করার দরকার কিন্তু আমি তা করছি না, আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে পাশ থেকে দাদী রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,,,,
.
—” তুই বেঁচে গেলি বিনা আমার বাড়িতে বিয়ে হওয়ার জন্য নয়তো তোকে আজকে এই কথার গুলো বলার জন্য মূল্য দিতে হতো,,
.
—” মিসেস খান আপনি সামান্য একটা মতে জন্য আমার সাথে এইভাবে কথা বলছেন, আমাকে তুই তুই করছেন (আবাক হয়ে)
.
—” শুধু তুই বলছি, বিষয়টা যদি আমার সোনামা কে নিয়ে হয় তাহলে আমি কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দিব না সেটা সোনামা নিজেই হোক না কেন,,,
.
দাদী এমন কথা চুপ করে যায় ডলি আপুর মা, আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে রেগে কাউকে কিছু না বলে প্রস্হান করেন বাহিরের দিকে, আমি অসহায় ফেস করে দাদী দিকে তাকালাম, দাদী আমাকে কিছু না বলে হালকা হেসে আমার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে আবার একহাতে আমার হাত ধরে সামনে দিকে তাকায়, আমি দাদীর দিকে তাকিয়ে থেকে পাশ ফিরে তাকাতেই চোখে পড়ল আমার আম্মু দিকে,
.
আম্মু টলমল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি আম্মু চোখে পানি দেখে খানিকটা বিচলিত হয়ে দাদীকে বলে আম্মু পাশে দাড়িয়ে পরি, ব্যস্ত হয়ে আম্মুকে কিছু বলার আগেই আম্মু আমাকে টেনে ড্রয়িংরুমে এক স্লাইডে ডাইনিং এর সামনে দাঁড় করিয়ে কাজ করতে বলে, আমি আম্মু এমন করার মানে বুঝতে পারছি তখনে কথা গুলো আম্মু গায়ে লেগেছে, আর লাগবেই বা না কেন একজন মা কখনো তার সন্তান ছোট হতে দেখতে পারে না, আমার ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে, আমি বাঁধ মেয়ের মতো খুশি মনে ডাইনিং পরিস্কার করতে লাগলাম, আমার সাথে সাথে আম্মুও কাজ করছে, আমি কাজ করতে কতটুকু পারি তা বলতে পারছি তবে শত% ভালো করে করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি,, আমার এমন সব কাজে মধ্যে পাশ থেকে মালা খানিকটা চিৎকার করে আমাদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠে….
.
—” আপামনি আন্নে কাজ কেল্লায় করছে,,
.
আমার হাতে থাকা প্লেট টা বেশ মনোযোগ সহকারে পরিস্কার করছিলা আমি, হঠাৎ করেই মালার এমন চিৎকার করায় আমি চমকে উঠি মূহুর্তেই আর চমকে উঠার সাথে সাথে আমার হাতে থাকা প্লেট টা হাত থেকে ফ্লোরে পরে ভেঙে যায়,,, প্লেট নিচে পরে ভাঙ্গার সাথে সাথে সবাই আমার দিকে চোখ তুলে তাকায়, আমি সবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে একটা পলক তাকিয়ে ফ্লোরে দিকে তাকানোর সাথে সাথে ঠাসস করে থাপ্পড় বসায় রাগে আম্মু,, আমি থাপ্পড় খেয়ে কাদু কাদু ফেস করে গালে হাত দিয়ে আম্মু দিকে তাকায়, আমার এমন করে তাকানোতে যেন আম্মু আরও বেশি রেগে যায়, আম্মু নিজের রাগটা চেপে রেখে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে উঠে,,,,
.
—” তোকে দিয়ে কোনো কাজ ঠিক মতো হয়না কেন, তোকে এখানে কাজ করতে এনেছি আর তুই আসতে না আসতেই প্লেট ভেঙে ফেল্লি,
.
আমাকে থাপ্পড় খেতে দেখে দাদী দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে পরে আম্মুকে রেগে বলে উঠে,,,
.
—” তোর সাহস তো কম নয় তুই সামান্য একটা প্লেট এর জন্য আমার সোনামা গায়ে হাত তুললি,,,
.
—” মা আপনি বুঝতে পারছেন না কেন এই ভাবে দিন যায় নাতো, আর ওকে সবকিছু শিখতে হবে, আর কবে শিখবে সবটা, আগে ওকে জিজ্ঞেসা করো ওহ কেন প্লেট টাকা কেন ভাঙলো,
.
আম্মু এমন কথায় দাদী কিছু বলবে তার আগেই আমি দাদীর বুক থেকে মাথা তুলে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠে,,,
.
—” বেশ করেছি ভেঙ্গেছি আরও ভাঙবো আমি,,
.
কথাটা বলেই আমি ডাইনিং ওপর থেকে আরও একটা প্লেট হাত বাড়িয়ে নেওয়ার আগেই আম্মু সামনের থেকে আরও একটা থাপ্পড় বসায় আমার অন্য গালে, আমি থাপ্পড় খেয়ে দুই গালে দুই হাত দিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে চলছি আমি সবার সামনে আম্মু আমাকে এই ভাবে মারলো সামান্য একটা প্লেট এর জন্য ভাবতেই একরাশ কান্না ভর করছে আমার মাঝে,,,
.
থমথমে পরিবেশ সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে তখনি কেউ আমার সামনে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে পরে আমাকে ওপর থেকে নিচ পযন্ত চোখ বলিয়ে নিয়ে সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে আবারও আমার দিকে তাকায়,,,
.
পরে উনি (রিদ) আমার দু গালে হাত সরিয়ে নিজের হাত দিয়ে এপাশ ওপাশের করে ভালো করে আমার গাল দেখেই শান্ত ভাবে আমার দিকে নিজের দৃষ্টি স্থির রেখে বলে উঠে,,,,
.
—” ওকে থাপ্পড় কে মেরেছে,,,,,
.
থমথমে পরিবেশ সবাই চুপ কেউ কোনো কথা বলছে না, আর আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে চলছি, উনি নিজের করা প্রশ্নের উত্তর না পেরে খানিকটা রেগে উচ্চ স্বরে বলে উঠে,,,,,,
.
—” আমার রিতকে মারলো কে জানতে চাইছি আমিমমম,,,,,
চলবে………..