#বর্ষণের_সেই_রাতে পর্ব- ২+৩

0
681

#বর্ষণের_সেই_রাতে পর্ব- ২+৩
#লেখিকা: অনিমা

.
আমি একটা বড়সর ঢোক গিললাম। উনি একটু একটু করে এগিয়ে আসছেন আমার দিকে, আর আমি নিজের অজান্তেই পিছিয়ে যাচ্ছি। পেছাতে পেছাতে দেয়ালে লেগে গেলাম। মনে মনে প্রচুর ভয় হচ্ছে। শুনেছি এইসব সেলিব্রিটিদের ক্যারেকটার একেবারেই খারাপ হয়। যদি সত্যিই উল্টোপাল্টা কিছু করে? কেউ তো আমার কথা বিশ্বাস ও করবেনা যে দ্যা রকস্টার এডি আমার বাড়িতে এসে আমার সাথে এসব করেছেন। এমন কী কারণ থাকতে পারে ওনার এখানে আসার? এসব ভাবতে ভাবতে উনি একদম আমার কাছে এসে দেয়ালে হাত রাখল। ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার। উনি একটু ঝুকতেই আমি খিচে চোখ বন্ধ করে নিলাম। লোকটার নিশ্বাস আমার মুখে পড়তেই আমি নিজেকে আরো গুটিয়ে নিলাম। হৃদস্পন্দন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। হঠাৎ করেই ফিক করে হেসে দেবার শব্দ পেলাম। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি হাসছেন উনি। উনি হাসতে হাসতে খাটে গিয়ে বসলেন। আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে। উনি হাসি থামিয়ে বলল
— সরি! সরি! আই ওয়াজ জাস্ট কিডিং। বাট আপনিতো ভয়ে পুরো জমে গেছেন।
বলেই আবারো হেসে দিলেন। আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। এরকম মজার কোনো মানে হয়? আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি থামিয়ে বললেন
— আচ্ছা সরি বললাম তো! মজা টা একটু বেশি হয়ে গেছে বুঝতে পারছি।
আমি এবার হাত দুটো ভাজ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে বললাম
— রকস্টার এডির এখানে এসে টপকানোর কারণটা কী?
এটা শুনে আদ্রিয়ান এক ভ্রু উচু করে তাকালো আমার দিকে। তারপর বাকা হেসে বলল
— আরেহ বাহ। ভয়েজ টোনে এতো পরিবর্তন? একটু আগে তো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারছিলেন না। কেনো বলতে গিয়ে ক তেই আটকে যাচ্ছিলেন। কী এমন হলো যে ভয়েজে এতো জোর?
— ভোকাল কর্ডের চার্জ শেষ হয়ে গেছিলো রিচার্জ করে নিয়েছি, এখানে কেনো এসছেন সেটা আগে বলুন।
আদ্রিয়ান একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল
— খিদে পেয়েছে।
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে। ইয়ারকি পেয়েছে নাকি? মানে কী এসবের? বিরক্তিকর কন্ঠে বললাম
— আপনি আমার ফ্লাটে খেতে এসছেন?
— হ্যা বাড়িতে আজ খাবার ছিলোনা তাই আরকি।
বলেই মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল। আমি কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে খাটে গিয়ে বসে ওনার দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ওনার সব ইন্টারভিউ তে দেখেছি যে উনি ভীষণ মজার মানুষ। রিপোর্টারদের সাথেও বেশ মজা করে। পাবলিক ইনফরমেশন অনুযায়ী উনি যতটা ফানি, মাঝে মাঝে ততোটাই এগ্রেসিভ। বেশ কয়েকটা ইন্টারভিউতে ক্যামেরার সামনেই রিপোর্টারের ওপর রেগে যেতে দেখা গেছে তাকে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করার জন্যে। বাট পার্সোনালিও যে উনি ঠিক একইরকম সেটা বেশ বুঝতে পারছি। কিন্তু এই মুহূর্তে এতো কৌতুহল আর উত্তেজনার মধ্যে ওনার এই রসিকতা আমার বেশ বিরক্ত লাগছে। আমার এই হতাশ দৃষ্টি দেখে উনি হাসি মুখেই বললেন
— ওকে ফাইন। বলছি সব। বাট তার আগে আপনার সেল ফোনটা দিন তো একটু আমাকে।
— কেনো আমারটা দিয়ে কী কাজ? আপনার টা নেই নাকি?
উনি এবার রাগান্বিত কন্ঠে বললেন
— আপনার কী মনে হয়? আমার ফোন আমার সাথে থাকলে আমি এখানে অন্ধকারে বসে বসে মশা মারতাম এতোক্ষণ?
আমি এবার বিরক্তির চরম পর্যায়ে গিয়ে বললাম।
— আপনার কী মনে হয়? আমার সেলফোনে চার্জ থাকলে আমি একটা অপরিচিত লোককে রুমে দেখে ফোন করে লোক জরো না করে ওখানে ঠ্যাটার মতো দাড়িয়ে থাকতাম? চার্জ নেই ফোনে।
উনি বেডের ওপর একটা ঘুষি মেরে বললেন
— সিট! এখনতো কারেন্ট ও নেই।
— আমার ফোনে না হয় চার্জ নেই। আপনার ফোনটা কী হাওয়া খেতে গেছে?
উনি রেগে তাকালো আমার দিকে। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। তাই হালকা গলা ঝেড়ে ওনার থেকে একটু দূরে সরে বসলাম। দুজনেই কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করার পর আমিই বললাম
— বললেন না তো কী এমন হলো যে এতোবড় একজন সেলিব্রিটি, যার সাথে একটা সেলফি তোলার জন্যে ফ্যানসরা হুমরি খেয়ে পরে সে একটা সাধারণ মেয়ের ফ্লাটে চোরের মতো ঢুকলো?
আদ্রিয়ান অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
— হোয়াট আমি চোর?
আমিও অবাক হওয়ার ভান করে বললাম
— সেটা কখন বললাম?
— দেন হোয়াট ডু ইউ মিন বাই চোরের মতো ঢুকলেন?
— নাহ মানে আপনি যেভাবে ঢুকেছেন পুরো চোরের মতোই লাগছিলো আরকি।
বলেই মিটমিটিয়ে হাসছি। উনি এবার চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— তাই না?
আমি হাসি থামিয়ে সিরিয়াস মুখ করে বললাম
— হুম তাই তো!
উনি রাগান্বিত হয়ে আমার দিকে একটু ঝুকতেই আমি মাথাটা একটু পিছিয়ে নিলাম, উনি শান্ত কন্ঠে বললেন
— কী যেনো বলছিলেন? কীসের মতো লেগেছে আমাকে?
আমিও একটা ঢোক গিলে বললাম
— অব্ আমিতো মজা করছিলাম, আপনি এতো সিরিয়াসি কেনো নিচ্ছেন? আপনাকে একটুও চোরের লাগছিলো না বিশ্বাস করুন আপনাকে ড্ ডা হ্যা ডাকাতের মতো লাগছিলো।
— হোয়াট?
নিজেই চমকে গেলাম। কী সব বলছি? দিলামতো আগুনে ঘি ঢেলে। আমার এই এক সমস্যা ভয় পেয়ে গেলে কি বলি না বলি নিজেই বুঝতে পারিনা। উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, সেটা দেখে আমি একটু মেকি হেসে বললাম
— ন্ না মানে আপনাকে আপনাকেতো হ্যা মনে পড়েছে, আপনাকে পুরো..
কিন্তু কথাটা শেষ করার আগেই উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন
— থাক। আপনাকে আর কিছু মনে করতে হবেনা। চোর ডাকাত অবধি হজম করে নিয়েছি, এরপর কিছু হজম করতে গেলে বদহজম হয়ে যাবে ম্যাডাম।
এটুকু বলেই সোজা হয়ে বসলেন। আর সাথে আমি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে নিজেকে ঠিকঠাক করে নিলাম। উনি এবার ভ্রু কুচকে নিজের ঘরির দিকে তাকালো। সেটা দেখে আমিও টেবিল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি 11.30 বাজে। আমি একটু ইতোস্তত করে বললাম
— আপনি কিন্তু এখোনো বললেন না এখানে কেনো এসছেন?
উনি হালকা হেসে বললেন
— আরেহ বলছি বলছি এতো অধৈর্য কেনো আপনি?
আমি একবস্তা বিরক্তি নিয়ে তাকালাম লোকটার দিকে। আমার এখন প্রচুর রাগ লাগছে এরকম সাসপেন্স ক্রিয়েট করার কোনো মানে হয়? উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে দিলেন। আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে। উনি হাসি থামিয়ে বললেন
– আচ্ছা বলছি, রেগে যাচ্ছেন কেনো? আসলে দুপুরে একটা কাজ ছিলো সেটা সারতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়, কাজটা সারার পর লংড্রাইভ এ যেতে ইচ্ছে করছিলো। এটা আমার অভ্যাস, স্ট্রেস দূর করতে মাঝে মাঝেই লং ড্রাইভে বেড়িয়ে যাই। আর সেটাও কমপ্লিটলি একা এবং নিড়িবিলি। তাই ড্রাইভার গার্ডস সবাইকে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেই ড্রাইভ করছিলাম। প্রায় ঘন্টা তিন ড্রাইভ করার পর এখানকার একটা রোডে এসে পৌছাই। কারণ এলাকাটা নিড়িবিলি ভালো লেগেছে আমার। আর তখনি খেয়াল করি যে কিছু লোক ফলো করছে আমাকে, কারণ অনেকক্ষণ ধরেই তাদের আমার পেছনে আসতে দেখছিলাম।
আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল ব্যাপারটা তাই গালে হাত দিয়ে বললাম
— তারপর?
— তারপর আমি গাড়িটা সাইডে রেখে আমার ম্যানেজারকে কল দিতে যাবো তার আগেই আমার গাড়ির কাচ ভেদ করে একটা গুলি আসে। আমি ঝুকে গেছিলাম তাই গুলিটা একটুর জন্যে আমার মাথায় লাগেনি। আমার হাত থেকে ফোনটা পরে যায়, আর তারপর চার্জ শেষ হয়েছে না কী হয়েছে জানিনা ফোনটাও আর অন হয়নি।
— এরপরে কী করলেন?
— যেহেতু ফোনটা অন হচ্ছিলো না। আর আমি কম্প্লিটলি একাই বেড়িয়েছি তাই আমি গাড়ি স্টার্ট করে বিভিন্ন ভাবে গাড়ি চালিয়ে ওদেরকে ডিসট্রাক করি, তার
ওপর এই বৃষ্টি। আমি ওদের কে একটু পিছে ফেলে ওদের আড়াল হয়ে গাড়ি থেকেই নেমে যাই কারণ ওদের কাছে গান ছিলো, আর গাড়ির সংখ্যা দেখে বুঝলাম লোক ও অনেক ছিলো, তাই আমি একা নিজেকে সেভ করতে পারতাম না। তাই ওখানে গাড়িটা রেখেই ওখান থেকে বেশ অনেকটা দূরে চলে যাই। এসবের মধ্যে ফোনটা আনতেই ভুলে গেছি, ফোনটা বন্ধ ছিলো তাই এনেও আহামরি কোনো লাভ লাভ হতোনা। কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না আর না কাউকে ডাকতে, সো এইরকম বৃষ্টি তারপর ওরা যেকোনো সময় এসে যাবে, রাস্তায় থাকা রিস্কি হয়ে যেতো। তাই কারো বাড়িতে আশ্রয় নিতেই হতো।
— বাট আপনি ঢুকলেন কীকরে ভেতরে?
— ব্যালকনি দিয়ে।
— হোয়াট?
— হুম। বাইরের আলোতে যেটুকু দেখেছি তাতে এই ফ্লাটেরই ব্যালকনির দরজা খোলা ছিলো। তাই এই ফ্লাটেই উঠলাম।
— আমি ব্যালকনির দরজা খোলা রেখে গেছিলাম?
— আমিও সেটাই ভাবছিলাম। যখন ভেতরে ঢুকে বাড়িটা ফাকা পেলাম। যে এতোটা ইরেস্পন্সিবল কেউ কীকরে হয়। এখন আপনাকে দেখে বুঝতে পারছি কীকরে হয়। বুঝতে পারছি কীকরে হয়।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে একটু মুখ ভেংচি দিলাম। উনি হেসে দিলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি বললাম
— কিন্তু আপনাকে কারা মারতে চায়? আর কেনো?
— মারতে তো অনেকেই চায়, আর কারণেরও অভাব নেই। কিন্তু এট্যাক টা কারা করেছে সেটা কালকের মধ্যেই জানতে পারবো, একবার বেরোই। এগুলো খুব ক্রিটিকাল ব্যাপার তুমি এসব বুঝবেনা।
ওনার শেষ কথাটায় হালকা হাসলাম তবে সেটা ওনার দৃষ্টির আড়ালে।
— সো এইজন্যেই আজ এখানে থাকতে হবে আমাকে। আর আপনি আমাকে চোর ডাকাত কী সব বানিয়ে দিলেন।
বলেই উনি হেসে দিলেন আর আমিও হেসে দিলাম। উনি হাসি মুখেই বললেন
— আপনি আমার বেশ ছোট দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আর এমনিও আমি বেশিক্ষণ কাউকে আপনি বলতে পারিনা। সো অামি তোমাকে তুমি করেই বলছি। ওকেহ?
— আপনি পারমিশন চাইলেন নাকি জানিয়ে দিলেন?
— যেটা মনে করো।
আমি মুচকি হাসলাম।
— কারেন্ট কখন আসবে?
আমি শব্দ করে হেসে দিয়ে বললাম
— আজ কারেন্টের কথা ভূলে যান। সকালের আগে আসবেনা।
— ড্যাম!
আমি হেসে দিলাম। বাইরে এখোনো অবিরাম ধারায় বৃষ্টি পরে চলেছে। সেইসাথে চারপাশটা আরো সিগ্ধ লাগছে। বাতাসে কেপে কেপে ওঠা মোমের হলদে আলোয় আড় চোখে দেখছি ওনাকে। উনি খাটে দুইহাটু গুটিয়ে হাটুর ওপর দুই হাত রেখে বসে আছে। কিন্তু উনি অাড়চোখে না সরাসরিই তাকিয়ে আছে আমার দিকে একদৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষণ ধরে। সেটা দেখে আমি ভ্রু নাচালাম। এতে ওনার ধ্যান ভাঙলো বোধ হয়। উনি মুচকি হেসে মাথা নাড়লেন। তারপর সামনে তাকিয়ে বললেন
— ভয় ছিলাম এখানে ঢোকার সময় কার না কার বাড়িতে গিয়ে পরি আমাদের তিল কে তাল বানিয়ে প্রচার করতে তো মিডিয়া দুবার ভাবেনা। এই জার্নালিস্টরাও না, এদের খালি মাসলাদার খবর তৈরী করতে হবে যাতে বেশি ইনকাম হয়। কিন্তু ওনাদের এসব ভূলভাল খবরের জন্যে যে আমরা যে বিপদে পরি সেটা তাদের দেখার বিষয় না।
— সব জার্নালিস্ট কিন্তু এক না? আই মিন সবাই টাকার জন্যে এসব করে না, কেউ কেউ প্যাশন হিসেবেও নেয় পেশাটাকে।
— হয়তো। কিন্তু আমি এখোনো এমন কাউকে পাইনি। ইমোশন বোঝেনা যা খুশি প্রশ্ন করে দেয়। আরে ভাই আমরাও তো মানুষ নাকি? যতোগুলো জার্নালিস্ট দেখেছি আমার ক্যারিয়ারে সেই মোতাবেক আই জাস্ট হেইট দেম।
আমি এবারেও মুচকি হাসলাম। হঠাৎ উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
– খিদে পেয়েছে। খাওয়ার কিছু আছে নাকি? আসলে দুপুরে বেরিয়েছি এখোনো পেটে কিছু পরেনি, বাড়ি ফিরবো তার আগেই এই ঘটনা।
আমি বেশ অবাক হলাম, আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের আমার ফ্লাটে এসে আমার কাছে ডিনার করতে চাইছে? সিরিয়াসলি? এই দিনটাও দেখার ছিলো আমার? কিন্তু ওনাকে কীকরে বলবো যে আমিতো ম্যাক্সিমাম রাত কফি আর বিস্কুট খেয়েই কাটিয়ে দেই। এতো রাত করে ফিরে রান্না করার এনার্জি থাকে না। ব্রেকফাস্ট ও নুডুলস বা পাস্তা করে খেয়ে নি। লান্চটা সবসময় বাইরেই করি। তাই ঘরে রান্না করার মতো নডুলস, পাস্তা ছাড়া কিছুই নেই। কিন্তু ওনাকে এসব কীকরে দেবো? তাই একটু ইতোস্তত করে তাকালাম ওনার দিকে। উনি আমার তাকানো দেখে কী বুঝলেন জানিনা শুধু মুচকি হেসে বললেন
— খেতে চেয়েছি বলে পোলাও বিরিয়ানী আনতে হবে তার কোনো মানে নেই। জাস্ট খেয়ে পানি খাওয়ার মতো কিছু দিলেই হবে।
আমি মুখ ছোট করে ওনার দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে কচলাতে বললাম
— লডুলস, পাস্তা আর বিস্কুট ছাড়া কিছুই নেই।
উনি এবারেও হেসে দিয়ে বললেন
— আর কী চাই? নুডুলস রান্না করে নিয়ে এসো তাতেই হবে।
— ওকেহ
বলে উঠতে নিলেই উনি বললেন
— কফি আছে তো?
আমি হেসে দিয়ে বললাম
— হ্যা সেটা আছে ওটাও করছি ওয়েট।
উত্তরে উনি শুধু মুচকি হাসলেন। আমি গুটিগুটি পায়ে কিচেনে ঢুকে গিয়ে দাড়ালাম। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে আমি মুচকি হেসে পেছন ঝুকে উকি দিয়ে দেখলাম উনি আসছে নাকি। কিন্তু যখন দেখলাম আসছে না তখনি খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। এতোক্ষণ বহু কষ্টে নিজের ইমোশনটা চেপে রেখেছিলাম
— ইইইইই। আই কান্ট বিলিভ। আমার আদ্রিয়ান আমার ফ্লাটে এসছে? আমার সাথে আজ রাত থাকবে? আমার ক্রাশ? আমার জান? যাকে নিয়ে শুধু কল্পনাই করতাম। সে আজ এই বর্ষণের রাতে আমার কাছে আছে? ওর সাথে কথা বলেছি আমি? ওর জন্যে ডিনার বানাচ্ছি? ওয়াও! আমি জাস্ট ভাবতে পারছিনা।
এসব বলেই এলোপাথাড়ি নাচতে শুরু করলাম। পাগলের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছি। যেনো হাতে চাদ পেয়েছি। আশেপাশে কোনোকিছুর খেয়াল নেই আমার, নাচতে নাচতে পেছন ঘুরে আমি পুরো চমকে গেলাম, নাচ অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেলো আমার।

#পর্ব- ৩
.
এসব বলেই এলোপাথাড়ি নাচতে শুরু করলাম। পাগলের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছি। যেনো হাতে চাদ পেয়েছি। আশেপাশে কোনোকিছুর খেয়াল নেই আমার, নাচতে নাচতে পেছন ঘুরে আমি পুরো চমকে গেলাম, নাচ অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেলো আমার। কারণ আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। শুনে ফেলল না তো কিছু? যদি শুনে থাকে যে উনি আমার ক্রাশ, আর ওনাকে আমি এতো পছন্দ করি, তাহলেতো ভাব একশগুন বেড়ে যাবে। বহুত কষ্টে নিজের ইমোশনকে চেপে রেখে একটা ইমেজ ক্রিয়েট করেছি সেটা নষ্ট হয়ে যাবে?
— বাহ। ডান্সটাতো খুব ভালো করো তুমি।
ওনার কন্ঠস্বর শুনে আমার ধ্যান ভাঙলো। তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান ডানহাত থুতনিতে রেখে মুচকি মুচকি হাসছে। ও কতোটা শুনেছেন বা কতোটা দেখেছেন সেটাইতো জানিনা। তাই ইতোস্তত করে বললাম
— না মানে আমি আসলে..
আদ্রিয়ান ওনার জিন্সের পকেটে হাত ঢুকিয়ে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললেন
— নাচছিলে ভালো কথা। কিন্তু কিচেনে ঢুকে এমন কী হলো যে ঘর কাপিয়ে নাচতে শুরু করলে?
আমি মনে মনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম যাক কিছু শুনতে পায় নি। নিজেকে সামলে কপালের সামনের চুলগুলো কানে গুজতে গুজতে বললাম
— না মানে…
— না, মানে, আসলে এইগুলো শুনে নিয়েছি। এরপরতো কিছু বলো?
আমি কিছু একটা ভেবে, নিজেকে সামলে ওনার দিকে বিরক্তিকর চাহনী দিয়ে বললাম
— আমার ফ্লাট, আমার কিচেন আমি যা খুশি তাই করবো। নাচবো,লাফাবো,গাইবো, আপনাকে তার কৈফিয়ত কেনো দেবো?
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে মাথা দুলিয়ে বলল
— কারেক্ট আছে। তুমি নাচতে নাচতে ফ্লোর ভেঙ্গে ফেলো ইস মে মেরা কুছ নেহি যাতা। যেটা বলতে এসছিলাম। নুডুলসে ঝালটা একটু বেশি করে দিও।
এটুকু বলে যেতে নিয়েও আবার পেছনে ফিরে মুচকি হেসে বললেন
— আর হ্যা নাচার জন্যে সারারাত পরে আছে। আপাদত আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে তাই খাবারটা আগে আনলে ধন্য হতাম আরকি।
এটা বলে উনি সিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলেন। আর আমি অাহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছি ওনার যাওয়ার দিকে। এমন বিহেভ করছে যেনো আমি ওনার খুব পরিচিত কেউ। একটা অপরিচিত মেয়ের ফ্লাটে এসেছে, তাও এভাবে হুট করে সঙ্কোচ তো অনেক দূরের কথা এ তো এমন বিহেভ করছে যাতে ও আমার ফ্যামেলি মেমবার হুহ। বাট যাই হোক আজ রাতটা ও এখানে থাকবে এটাই আমার কাছে অনেক। এসব ভেবে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে নুডুলস রান্না শুরু করলাম। রান্নার ফাকে ফাকে উকি দিয়ে ওনাকে দেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। নুডুলস রান্না কম্প্লিট করে দুটো প্লেটে সার্ভ করে নিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি সাহেব খাটের এক কোণে আসাম করে বসে চারপাশ দেখছে। আমাকে দেখেই উনি একটা হাসি দিলেন, উত্তরে আমিও একটা হাসি দিলাম। আমি প্লেটটা ওনার দিকে বাড়িয়ে দিতেই উনি প্লেটটা হতে নিয়ে বললেন?
— ওয়াও? স্মেলটাই এতো ভালো আসছে। খেতে না জানি কতো ভালো হবে।
আমি হেসে দিয়ে বললাম
— টেষ্ট করে দেখুন।
উনি হেসে খানিকটা খেয়ে বললেন
— হুমমম। টু গুড।
— খারাপ হলেও কী বলবেন নাকি?
— নাহ সত্যি ভালো হয়েছে, তুমি টেস্ট করে দেখো।
ওনায় কথায় হেসে দিয়ে নিজের প্লেট থেকে খেতে শুরু করলাম। আমার কাছে বিশেষ কোনো টেষ্ট লাগেনি কারণ রোজকার স্বাদ এটা। উনি খেতে খেতেই বললেন
— তুমি এই ফ্লাটে একাই থাকো?
— হুমম। আমি শুনেছি আপনিও নাকি আলাদা থাকেন?
— হ্যা।
— কারণ?
উনি একটু অন্যরকমভাবে তাকালেন আমার দিকে। তারপর প্লেটটা নামিয়ে রেখে বলল
— বাহবাহ এতো ইন্টারেস্ট?
আমি হকচকিয়ে গিয়ে বললাম
— নাহ মানে আমি এমনিই জিজ্ঞেস করলাম পারসোনাল ইসু হলে বলতে হবে না।
উনি হেসে দিয়ে বললেন
— ওতোটাও পার্সোনাল না যে তোমাকে বলা যাবেনা।
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম উনি মুখে হাসি রেখেই বললেন
— আই মিন একটা রাত তোমার হেল্প নিয়েছি। সো এটুকু বলতেই পারি তোমাকে।
— ওহ।
— তবে আগে খেয়ে নি? তারপর কফি খেতে খেতে বলবো ওকে?
— হুমম।
উনি একমনে খাচ্ছেন আর আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে আর খাচ্ছি। সত্যিই আমরা মনে করি মিডিয়া জগতের এসব লোকেদের লাইফস্টাইল কতোইনা ভিন্ন। তবে তাদের ওই চাকচিক্যপূর্ণ জীবণযাপনের মধ্যেও কিছু ছোট ছোট সাধারণ বৈশিষ্ঠ্য থাকে যেটা ক্যামেরায় ধরা পরেনা। ওনাদের এই অসাধরণ সত্তার মধ্যেই কোথাও না কোথাও একটা অতি সাধারণ সত্তাও লুকিয়ে থাকে যেটা শুধুমাত্র ওনার সংস্পর্শে আসা মানুষগুলোই বুঝতে পারে। সেটা আজ ওনাকে দেখে বেশ বুঝতে পারছি। হঠাৎ উনি খাওয়া ছেড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— হ্যালো মিস? ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আগে ওটা খাও। তারপর আমায় নিয়ে গবেষণা করো।
ওনার কথায় ধ্যান ভাঙলো আমার। আমি তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে খাওয়ায় মন দিলাম ভেতরে ভেতরে লজ্জা পেলেও সেটা বাইরে প্রকাশ করিনি। উনিও হালকা হেসে খাওয়ায় মন দিলেন। নুডুলস খাওয়ার পর বললেন
— ক্যান্ডেলটা শেষ হয়ে যাচ্ছে আরেকটা জ্বালাবো?
আমি ভ্রু কুচকে মুচকি হেসে বললাম
— যে ফ্লাটে ঢোকার আগে পারমিশন নেয়নি সে মোম জ্বালাতে পারমিশন চাইছে?
— পিঞ্চ মারছো?
— যেটা মনে করেন।
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বললেন
— বাহ আমার ডায়লগ আমাকেই শোনাচ্ছো?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
— ডায়লগের ওপর কী নাম লেখা ছিলো?
— নাহ তা ছিলোনা।
— দেন?
— ওকে ফাইন.. ইউ ওউন আই লুজ। এবার কী ক্যান্ডেল জ্বালাতে পারি ম্যাডাম ?
— আমিই জ্বালাচ্ছি আপনি বসুন।
— না তুমি বরং কফিটা করে আনো আমি ক্যান্ডেল জ্বালাচ্ছি।
আমি মুচকি হেসে টেবিল লাইট নিয়ে চলে গেলাম কিচেনে কফি করতে। কফি করে নিয়ে গিয়ে দেখি উনি রুমে নেই। বুঝলাম ব্যালকনিতে আছে। বৃষ্টি এখন আর তেমন নেই, হালকা ছিটে ছিটে ফোটা পরছে। তবে আকাশটা পরিষ্কার না। খানিক পরে আবারো ঝরঝর করে বৃষ্টি পরবে বোঝাই যাচ্ছে। চারপাশে একরকম নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। তবে তার মধ্যে তাই ব্যালকনিতে গিয়ে দেখি উনি নিচে বসে আছেন। আমি অবাক হয়ে বললাম
— নিচে বসে আছেন কেনো?
উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন
— নিচেই ভালোলাগছে। এই ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ হালকা বৃষ্টির ছিটে।
আমি কিছু না বলে কফি মগটা ওনার দিকে এগিয়ে দিলাম। উনি মুখে সেই কিউট হাসিটা রেখেই মগটা হাতে নিয়ে আরেক হাতে ওনার পাশে ইশারা করে বললেন
— বসো।
আমি বেশ অবাক হলাম ওনার কথায় ইতোস্তত করে বললাম
— আমি বসবো? আপনার পাশে?
উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— সমস্যা হবে তোমার ?
— নাহ তা না কিন্তু…
উনি আমার হাত ধরে বসিয়ে দিলেন ওনার ঠিক পাশে। আমি বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি মুচকি হেসে বললেন
— তুমি বাস জার্নি করেছো?
আমি হেসে দিয়ে বললাম
— আমাদের মতো মানুষদের কাছে একটু দূরের জার্নি মানেই বাস জার্নি।
— তার মানে অনেকের পাশে বসে জার্নি করেছো?
— হ্যা তাতো করেছি।
আদ্রিয়ান এবার আমার দিকে হালকা ঘুরে বলল
— তাহলে আমি কী দোষ করলাম ম্যাডাম?
— ওটা আলাদা ব্যাপার। বাসে যাদের পাশে বসি তাড়াতো আমাদেরই ক্লাসের মানুষ। আর আপনিতো…
আদ্রিয়ান এবার শব্দ করেই হেসে দিলো। ওর হাসি দেখে আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলাম। এমন মনে হচ্ছে যেনো মিরাক্কেলে অপূর্ব রয় জোক বলছে। আজব? আমি কিছু বলবো তার আগেই আদ্রিয়ান হাসি থামিয়ে বললেন
— মানুষের আবার ক্লাস? আচ্ছা সেটা কোথায় লেখা আছে?
আমি বুঝতে পারলাম উনি কী মিন করতে চাইছেন তাই মুচকি হেসে বললাম
— ব্যাংক ব্যালেন্সে, বড় বড় গাড়িতে, বিশাল বাংলোতে, ফেমে আরো অনেক কিছুতে।
আদ্রিয়ান মুচকি হসে কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন
— হুমমম। কিন্তু সেই ক্লাস সেট কে করেছে?
— আমরা মানে মানুষেরা।
— এক্সাক্টলি। সব তো আমাদের মধ্যেই তাইনা? যদি তুমি নিজেই পারফরমার হও আর নিজেই জজ হও তাহলে জাজমেন্ট কী কেউ মেনে নেবে?
— উমহুম।
—- তাহলে তোমরা কেনো মানো? দেখো ব্যাংক ব্যালেন্স, গাড়ি, বাড়ি, ফেম এগুলো দিয়ে একটা মানুষ কতোটা ধনী বা কতোটা সাকসেসফুল সেটা বলা যায় কিন্তু কোনো মানুষের ক্লাস শুধুমাত্র তার পারসোনালিটি আর ক্যারেক্টার এর ওপর ডিপেন্ট করে। আমি গান করে টাকা ইনকাম করি, আমার গান সকলের ভালোলাগে তাই সবাই আমাকে ভালোবাসে, আর তাই গানের ওফার বেশি আসে আর টাকাও। কিন্তু এতে শুধুমাত্র আমার সফলতা প্রকাশ পাচ্ছে আমি কোন লেভেলের মানুষ সেটা না। মানুষের ক্লাস শুধুমাত্র মানবিকতা দিয়েই বিচার করা যায় টাকা দিয়ে নয়।
আমি এতোক্ষণ ওর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলাম তারপর কফিতে চুমুক দিয়ে বললাম
— কিন্তু সেটা মানে কজন?
— রাজা যদি নিজেই নিজেকে রাজা না মানে তাহলে অন্যকেউ কেনো মানবে?
ওর কথার মানে বুঝতে পারলাম। সত্যিই ঠিকিতো বলেছে। আমরা নিজেরাই যদি নিজেদের মিডেলক্লাস ভাবি তাহলে বাকিদের কী দোষ? তবে আদ্রিয়ানের চিন্তাধারা খুব ভালো লাগলো। পুরো মন ছুয়ে গেছে ওর কথাগুলো। সত্যিই সেলিব্রিটি মানেই যে খারাপ, মুডি, অহংকারী হবে তা নয়। তার প্রমাণ আজ আদ্রিয়ানকে দেখেই পেলাম। যদিও বিভিন্ন ইন্টারভিউ তে দেখেছি ওর পজিটিভিটি কিন্তু সেগুলো শো অফ মনে হয়েছিলো আমার। এসব ভেবেই ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। একটুপর কিছু একটা ভেবে ওকে বললাম
— বললেন না তো ফুল ফ্যামিলি থাকতেও আপনি কেনো একা থাকেন?
উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সামনের দিকে তাকিয়ে কফি মগে চুমুক দিয়ে বললেন
— প্রবলেমটা হলো ড্যাড। উনি কোনোদিনি এসব গান মিডিয়া জগৎ পছন্দ করতেন না। তার ইচ্ছে আমি তার কম্পানির দায়িত্ব নেই। কিন্তু আমি কোনোকালেই এইসব পছন্দ করতাম না। এসব বিজনেস ক্লাইন্ট এগুলো আমার মাথায় ঢুকতোই না। ছোট বেলা থেকেই গানের প্রতি একটা আসক্তি ছিলো আর সময়ের সাথে সেই আসক্তি আরো তীব্রতর হয়েছে। স্কুল কলেজের বিভিন্ন ফাংশনে গান গাইতাম। তবে আমার এই খাপছাড়া ভাবটাই ড্যাডের সহ্য হচ্ছিলো না। কলেজের এক ফাংশনেই এক মিউসিক ডিরেক্টরের আমার গলা ভালো লাগে আর সেখান থেকেই এই জগতে জার্নি শুরু। ড্যাডের যদিও পছন্দ ছিলোনা কিন্তু কিছু বলেনি। কিন্তু পড়াশোনা শেষ হবার পরেও যখন ওনার কম্পানির দায়িত্ব নিতে চাইনি তখন আমার ওপর প্রেশার ক্রিয়েট করা শুরু করলেন। কিন্তু আমি কিছুতেই রাজি হচ্ছিলাম না তখন একপ্রকার জোর করা শুরু করল। মমও ড্যাডের মুখের ওপর কিছু বলতে পারছিলোনা। একদিন এই নিয়ে ড্যাডের সাথে তর্ক হয় আর সেই তর্কাতর্কির মধ্যেই ড্যাড আমার গায়ে হাত তোলে। যেটা আমি মানতে পারছিলাম না তাই সেইদিন সেইমুহূর্তেই চলে এসছিলাম ঐ বাড়ি থেকে।
এতোক্ষণ চুপচাপ শুনছিলাম ওর কথা। ওর কথা শেষ হতেই আমি বললাম
— হ্যা কিন্তু আপনি আপনার বাবার একমাত্র ছেলে। উনিতো এটাই চাইবে যে ওনার কম্পানির দায়িত্ব আপনি নিন?
আদ্রিয়ান সামনের দিকে তাকিয়েই বলল
— আই নো বাট বাবা হিসেবে ওনার আমার স্বপ্নটাকেও গুরত্ব দেওয়া উচিত ছিলো তাইনা? যদি উনি বলতেন যে আমি গান করে সময় পেলে অফিসে বসতে পারি তাহলে আমি রাজি হয়ে যেতাম। কিন্তু উনিতো আমাকে আমার গানটাই ছাড়তে বলছিলেন।
আমি কিছু না বলে কফির মগে চুমুক দিলাম। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় হঠাৎ করে আলোকিত হওয়া আকাশটা দেখছি আর মেঘের হালকা শব্দে গুরুম গরুম আওয়াজ শুনছি। ভেতরটা ভার ভার লাগছে খুব। বুকের ভেতরে এক অদ্ভুত বিষাদ গ্রাস করছে। খুব মনে পরছে আব্বুর কথা। কী অবাক করা ব্যাপার তাইনা। কারো স্বপ্ন পূরণের জন্যে তার বাবাই বাধা হয়ে দাড়ায়। আর কেউ নিজের বাবার দেখা সপ্নকেই আকড়ে ধরে এখোনো শ্বাস নিচ্ছে। সত্যিই জীবণটা খুব অদ্ভুত। এখানে যেমন আলাদা আলাদা মানুষ আছে, সেই সাথে তাদের আলাদা আলাদা সমস্যা, কষ্ট, যন্ত্রণা আছে। কারো কিছু থাকার যন্ত্রণা কারো কিছু না থাকার যন্ত্রণা। কিছু আছে বলে কেউ কষ্ট পাচ্ছে, আবার কিছু হারিয়ে ফেলেছে বলে অন্যকেউ কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু ব্যাস্ততম এই শহরে আমরা সবাই শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যাস্ত। কারো দুঃখে একটু আক্ষেপ আর দীর্ঘশ্বাস দেওয়ার সময় থাকলেও পাশে থেকে সান্তনা দেবার মতো সময়ের বড্ড অভাব আমাদের। হঠাৎ করে অাদ্রিয়ান আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বললেন
— কী ভাবছো?
ওনার ডাকে ধ্যান ভাঙলো। নিজেকে সামলে বললাম
— অবব্ কিছু না।
— অামার সম্পর্কেতো অনেক কিছু জানো। আর অনেকটা এখন জানলে বাট তোমার সম্পর্কে কিছু জানা হলো না। এতক্ষণ হয়ে গেলো নামটা পর্যন্ত জানা হয়নি।
— অনিমা। অনিমা কোতয়াল।
— ওয়াও কিউট নেইম। বাই দা ওয়ে এতো লেইট করে ফিরলে? দেখে মনে হলো অফিস থেকে এসছো? কী করো তুমি? আই মিন প্রফেশন কী?
এ যদি এখন আমার প্রফেশন জানে, না জানি হার্টএট্যাক করে বসে। বলবো? কিন্তু মিথ্যে বলাটাও তো ঠিক হবেনা। তবে আমার জব জানলে এ সিউর কয়েকশ ভোল্টের ঝটকা খাবে। ভূল ভাববে না তো আমায়? এটা মনে করবেনা তো আমি নিজের স্বার্থে ওকে এখানে থাকতে দিয়েছি? এতো ভালো ব্যবহার করছি শুধুমাত্র নিজেরই ফায়দার জন্যে? চলে যাবেনা তো এখান থেকে? বাট যা খুশিই হোক আমি মিথ্যে বলতে পারবোনা। এসব ভাবতে ভাবতেই উনি আবার আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বললেন
— এই যে ম্যাডাম? কোথায় হারিয়ে যান বলুনতো?
— নাহ মানেহ।
উনি মুচকি হেসে বললেন
— কীসে জব করো তুমি?
আমি চুপ করে আছি। সেটা দেখে উনি ভ্রু কুচকে ফেললেন তারপর বললেন
— হোয়াট হ্যাপেন? বলো?
আমি এবার সাহস জুগিয়ে বলেই ফেললাম
— আমি একজন জার্নালিস্ট।
বেচারা সবে কফিতে চুমুক দিয়েছিলো। এটা শুনে সাথে সাথে বিষম খেয়ে গেলো। কাশতে কাশতেই খারাপ অবস্হা আমি ধরতে গিয়েও থেমে গেলাম। উনি নিজেকে সামলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— সিরিয়াসলি?
আমি হ্যা বোধক মাথা নাড়তেই, উনি ফ্লোরে একটা পাঞ্চ করে হতাশ দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে বললেন
— একেই বলে আকাশ থেকে পরে খেজুর গাছে আটকে যাওয়া।
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here