দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা) #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৬৭ 🍂

0
664

#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৬৭
🍂
মায়ার এমন কথায় এবার রিদ ভিষণ বাজে ভাবে ফেঁসে গেছে এই মূহুর্তে, এখানে না পারছে বসে থাকতে আর না পারছে ওঠে যেতে, জীবনের প্রথম এমন পরিস্থিতি শিকার হয়েছে রিদ তাও তার বউয়ের জন্য,, সাথে কাশিটা যেন আগে থেকে আরও দুগুণ বেড়ে গেলো মায়ার সাথে পাল্লা দিয়ে….

.
মায়া চোখ মুখ খুশিতে চকচক করছে, সে রিদকে কথা গুলো বলেই খুশিতে গদগদ হয়ে নিজের হাতের আংগুল গুলো গননা করে রিদের সামনে নিজের দুহাতের দশটা আংগুল দেখিয়ে আপন গতিতে বলে উঠে……

.
—” আমার দশ বাচ্চা লাগবে আপনি আমাকে দশ দশটা বাচ্চা দিতে হবে,,,,

.
রিদ মায়াকে এই ভাবে হাতের আংগুল দেখিয়ে বাচ্চা চাইতে দেখে কাশতে কাশতে একহাতে পানির গ্লাস নিয়ে সেই পানিটা ঢকঢক করে সম্পূর্ণটা শেষ করার আগেই মায়া আবারও রিদের দিকে তাকিয়ে চিন্তা সুরে বলে উঠে……

.
—” কিন্তু আপনাদের বাড়িটাতো অনেক বড় তাই আমাকে অনেক গুলা বাচ্চা নিতে হবে আপনার থেকে,, আপনাদের এতো বড় বাড়িতে মাত্র দশটা বাচ্চা থাকবে এটা কেমন দেখায় না, মানুষের কি বলবে যে এতো বড় বাড়ি হয়েও মাত্র দশটা বাচ্চা, ছেহহহ বিষয়টা সাংঘাতিক খারাপ দেখাবে, আর দাদা-দাদির তো কত ইচ্ছে আছে আমাদের শত শত বাচ্চা থাকবে এই বাড়িতে,, বাড়ির সব জায়গায় শুধু আমাদের শত বাচ্চা থাকবে আনাচে-কানাচেতে,,,

.
মায়ার মুখে শত শত বাচ্চা কথাটা শুনতেই রিদের মুখের থেকে সাথে সাথে সবটা পানি ছিটকে ডাইনিং পরে যায়, আগের থেকে এখন ননস্টপ কাশতে কাশতে মায়ার দিকে করুণ চোখে তাকায়, মায়া রিদের এমন চাহনির দিকে কোনো খেয়ালই নেই এই মূহুর্তে তার চোখ দুটো বড় বড় করে হা হয়ে রিদের সামনে কল্পনা করতে থাকে তার শত শত বাচ্চা গুলো খান বাড়ি সব জায়গায় ভরপুর হয়ে আছে,,

.

কল্পনা করেই মায়া গোল গোল চোখে রিদের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় নিজের করা প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আশায়, আর রিদ কাশিটা সাথে সাথে এদিক ওদিকে তাকিয়ে সবাইকে এক পলক দেখে সাথে নিজের দাদীকে নিজের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিদ খাবার শেষ না করেই দ্রুত উঠে দাঁড়ায় চেয়ার থেকে পরে আবারও মায়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য দ্রুত পা চালায়, এখানে আর এক মূহুর্তেও থাকলে তার বউ তার সাথে বাকি না করা কাজ গুলোও সবার সামনেই ননস্টপ বকবক করে বলে দিবে,, কপাল করে বউ পেয়েছে একটা, কোটিতেও এমন বউ খুঁজে পাওয়া যাবে না, উহুম কোটিতে কেন এই পৃথিবীতে এমন একটা পিচ নেই,, যে বউকে সে নিজে সবসময় ভয় দেখিয়ে চলতো আজ সেই কিনা তার বউ থেকে বাঁচার জন্য এক প্রকার পালিয়ে যাচ্ছে,, সেইই রিদ কথা গুলো যেতে যেতে ভাবতে থাকে….

.
মায়া রিদকে হঠাৎ ডাইনিং টেবিলের চেয়ার থেকে উঠতে দেখে সেও দ্রুত চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়িয়ে রিদের পিছন পিছন ছুটতে ছুটতে অধৈর্য গলায় তাড়া দিয়ে বলে উঠে…….

.

—” আরেহ কোথায় যাচ্ছেন আপনি, আমার বাচ্চাটা তো দিয়ে যান আপনি,, আমার বাচ্চা কবে হবে, আর আপনি আমাকে বাচ্চা কবে দিবেন বলুন….

.

মায়ার কথা গুলো রিদের পিছন ছুটতে ছুটতে বলেই যাচ্ছে ননস্টপ আর রিদ মায়ার কথা গুলো শুনেও না শুনার ভান ধরে দ্রুত নিজের রুমে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এই মূহুর্তে মায়াকে এড়িয়ে যেতে চাইছে রিদ কারণ রিদের যে বাকি কিছু অংশ ইজ্জতটা বেঁচে আছে সেটা আর হারাতে চাই না তাই মায়াকে এই মূহুর্তে কিছু না বলাটাই শ্রেয় মনে হচ্ছে রিদের, মায়া রিদকে তার কথা গুরুত্ব দিতে না দেখে আবারও খানিকটা তেজি সুরে বলে উঠে ……

.

—” আরেহ শুনুন না, আপনি বুঝতে পারছেন না কেন আমার সমস্যাটা সত্যিই বলছি আমার বাচ্চা হচ্ছে নাতো,, আসুন না আমরা একান্ত পারসোনাল কাজ গুলা করে ফেলি তাড়াতাড়ি,, আরেহ শুনুন, (সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে) আপনি বলুন না কবে নিয়ে যাবেন আমাকে হসপিটালের ডক্টর কাছে বাচ্চার জন্য,,,

.

———-
—” ভালোবাসবেন নাতো আমাকে,

.
—” নাহ বললাম তো…..

—” কিন্তুু কেন….

.
—” আমার গ্রার্লফ্রেন্ড আছে তাই, আর তোমাদের মতো অত্তাধুনিক মর্ডান মেয়ে আমার জন্য নাহ, আর তোমার নিজের লেবেলকৃত কেউকে খুঁজো আমার পিছনে না পরে থেকে…

.
—” আপনি মিথ্যা কেন বলছেন আমাকে আমি জানি আপনার কোনো গফ নেই ওকে, আর এখন আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন, আপনার জন্য নিজেকে পরো চেঞ্জ করে নিয়েছি আমি তারপরও কেন আপনি আমাকে এতোটা অপছন্দ করেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না আমি,, আমি সবসময় আপনার মন মতো হওয়া চেষ্টা করি আপনার ছোট বড় সব দিকেই খেয়াল রাখার চেষ্টা করছি তারপর আপনি রোজ রোজ আমাকে কাদির চলেন আপনার কথা দ্বারা সেটা কেন করেন আমার সাথে জানতে চাই আমি….. (চোখ মুখ শক্ত করে)

.
ফিহার এমন কথায় আরিফ ফিহার দিকে ঘুরে তাকায় পরে খানিকটা রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো…..

.
—” বলতে বাধ্য নয় আমি, তোমাকে আমার পছন্দ না ব্যাস আমার থেকে দূরে থাকো তুমি……

.
কথাটা বলেই আরিফ রেগে এখান থেকে চলে যেতে নেই তার আগেই পাশ থেকে ফিহা শক্ত করে আরিফের হাতটা ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে শক্ত করে,, ফিহার এমন করে হাতটা টেনে ধরাই আরিফ রাগটা যেন মাথায় চেপে বসে, সাথে সাথে ঝটকা দিয়ে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে শক্ত হাতে ফিহার গাল চেপে ধরে নিষ্ঠুর ভাবে পরে চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠে…..

.
—” আমাকে যতটা সোজা দেখতে ততটা কিন্তু সোজা নয় আমি, আমাকে ভালো ভাবতে যেওনা না ভুলেও, আর তোমাদের মতো মেয়েদের চরিত্রেই দোষ আছে একটা না একটা ছেলে বরাদ্দ থাকেই তোমাদের জন্য,,, এখন আর খুঁজে খুঁজে ছেলে পাচ্ছো না তাই আমার কাছে চলে এসো তাই না , আমার চরিত্রহীন মেয়েদের প্রতি কোনো রকম ইন্টারেস্ট নেই শুরু থেকেই তুমি হয়তো জানো না তাই এতো দিন ধরে আমার পিছনে পরে আছো, এখন বলে দিয়েছি এখন নিজের লেবেলকৃত কাউকে খুঁজো কেমন,, (দাঁতে দাঁত চেপে)

.
কথা গুলো বলেই এক প্রকার ধাক্কা মেরেই ফিহার হাতটা ছেড়ে দিয়ে হনহনিয়ে এখান থেকে চলে যায় আরিফ, আর ফিহা অশ্রু সিক্ত চোখে আরিফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে দেয়াল ঘেঁষে আস্তে করে বসে হাঁটু ভাজ করে সেখানে নিজের মাথাটা লুকিয়ে শব্দ করে কান্না করে ওঠে,,,,,

.
সে সত্যিই আরিফকে ভালোবাসে, আরিফের জন্য নিজের সাথে নিজের পোশাকও চেঞ্জ করে ফেলেছে,, সে আগে কখনোই প্রেম করেনি বিদেশে থাকলেও কখনোই প্রেমটা করে হয়ে ওঠি ফিহার, তার বিদেশি অনেক ছেলে মেয়ে বন্ধু আছে তাদের সাথেই সে সবসময় চেটিং করতো কিন্তুু তাদের কারও সাথে কখনোই অন্য কোনো সম্পর্ক ছিল না, তাই আজকে আরিফ চরিত্রহীন বলাটা মেনে নিতে পারছে না ফিহা,,

———-
চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে ডলিও তার মা-বাবা আর তাদের সামনে চেয়ারের পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে রিদ,, রিদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে আসিফ সহ দশ বার জন বডিগার্ড, আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ডলির ভাড়া করা গুন্ডা গুলো, পরিবেশটা থমথমে হয়ে আছে কারও মুখে কোনো রকম কথা নেই, সবাই ভিতু চোখে রিদের দিকে তাকিয়ে আছে, রিদ গম্ভীর মুখে বসে আছে চেয়ার ওপর….

.
রিদ কপাল কুচকে ডলিও তার মা-বাবা দিকে তাকিয়ে থেকে লাফ দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে ওদের সামনে টেবিলের ওপর বসে পরে দুই পা ঝুলিয়ে,, পরে নিজের হাতের বন্দুকটা দিয়ে কপাল চুকলাতে চুকলাতে আসিফের দিকে তাকিয়ে থেকে কপাল কুচকে বলে উঠে…..

.

—-” আসিফ তোর ডলি ম্যাডামের জন্য কি খাতির দাড়ি করা যায় বলতো,,, ভালো কিছু বলবি মানে একদমই ইউনিক স্টাইলে আসলে তোর ডলি ম্যাডামের নরমাল কিছুই পছন্দ না ওহ আবার খুবই এক্সপেন্সিভ তো,, তাই তোর ডলি ম্যাডার বিষয়টা মাথায় রেখে কিছু বলতো শুনি…….

চলবে……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here