#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৭০
🍂
কনফারেন্স রুমে গম্ভীর মুখে বসে আছে রিদ, চারপাশে তাঁর ইন্টারন্যাশনাল ক্লায়েন্ট রয়েছে মূলত তাদের সাথেই জরুরী ভিত্তিতে বসে আর্জেন্ট মিটিং করছে রিদ, এই মূহুর্তে এখানে শারীরিক ভাবে বসে থাকলেও নিজেকে মানসিক ভাবে অনেকটাই আহত হচ্ছে সে, রাগে সারা শরীর রি রি করছে চোখ মুখ শক্ত লাল বর্ণ ধারণ করছে মূহুর্তেই শরীরটা যেন বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছে রাগে ইচ্ছা করছে সবকিছু গুলিয়ে ধংশ করে দিতে যেখানে মনটাই জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে সেখানে শূন্য দেহটা উপস্থিত থেকে কি হবে কাজ করে, মনটাই বউয়ের জন্য চটপট করছে সেখানে কি আর কাজে মন বসানো যায়, তাই রিদের রাগে ইচ্ছা করছে নিজের সাথে করে ভাসিয়ে দিতে তাঁর নিজের বউকে, পিষে ফেলতে একান্ত ভাবে নিজের সাথে , কেন বউ তাঁর কষ্ট গুলো বুঝতে পারছে না, কেন রিদের কাছে ধরা দিতে পারছে না একান্ত ভাবে, রিদ না হয় রাগ করে বউ থেকে দূরে থাকছে তাই বলে তাঁর বউকেও তাঁর থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে, কেন তার রিত তার রাগটা ভাঙতে পারছে না, কেন রিদকে কাছে টেনে নিতে পারছে না কিসের এতোটা দ্বিধা তার বউয়ের,,
.
আজ কিছু দিন যাবত ঠিক করে বউয়ের ফেসটাই দেখতে পারছে না রিদ, তাঁর বউ তাঁর কাছেই আসতে চাইছে না অজানা কারণে, কেন তাঁর রিত এমনটা করছে কিছুই জানে না রিদ আর তাঁর রেশ ধরেই সবকিছু ধংশ করে দিতে ইচ্ছে করছে এই মূহুর্তে, রিদ লাল লাল চোখে সবাইকে একপলক দেখে নিয়ে হঠাৎ করেই কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে ওঠে দাঁড়ায়, রিদকে হঠাৎ করেই ওঠে দাঁড়াতে দেখে সবাই শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় তাঁর দিকে, কি হয়েছে জানতে চাওয়ার জন্য রিদের দিকে ভালো করে তাকাতেই মূহুর্তেই সবার চোখে পড়ল রিদের লাল লাল চোখ জোড়া যাহ দেখে সবাই চমকে উঠে চুপ করে যায়, আসিফ দ্রুত এগিয়ে এসে রিদকে কিছু জিজ্ঞেসা করতে যাবে তার আগেই কেউ একজন পাগল পাগল হয়ে কনফারেন্স রুমে দরজা দিয়ে প্রবেশ করে,,
.
আকস্মিক ঘটনায় সবাই চমকে উঠে দরজার দিকে তাকায় কেউ দরজাই দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে চিনতে না পারলেও রিদ মানুষটিকে দেখে খানিকটা চমকে উঠে আস্তে করে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে…..
.
—” রিত…..
.
মায়া পাগল পাগল হয়ে কনফারেন্স রুমের ঢুকে অস্থির চোখে চারপাশে চোখ বুলিয়ে রিদকে খুঁজে চলছে চোখে সামনে রিদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুই বুঝতে ওঠতে না পেরে হিতাহিত জ্ঞান হারায়ে রিদের দিকে প্রাণপূণ দৌড় দিতে নিবে তার আগেই পিছন থেকে সিকিউরিটি গার্ড মায়ার একটা হাত আঁকড়ে ধরে রিদের কাছে যাতে যেতে না পারে, মায়া সিকিউরিটি গার্ড থেকে দ্রুত নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাই রিদের কাছে যেতে চাই বলে, রিদ সবটা দেখে রেগে জোরে হাঁক ছেড়ে চিৎকার করে সিকিউরিটি গার্ডকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে……..
.
—” অইইই,, ওর হাতটা ছাড় হারামির বাচ্চা জানে বাঁচতে চাইলে,,,
.
রিদের এমন চিৎকার করে হাঁক ছেড়ে কথায় উপস্থিত সবাই কেঁপে ওঠে ভয়ানক ভাবেই থমথমে পরিবেশ সবাই চুপ করে যায় আর সিকিউরিটি গার্ডটি ভয়ে সিটিয়ে যায় মূহুর্তেই কি করেছে কিছুই বুঝতে না পেরে আস্তে করে মায়া হাতটা ছেড়ে দেয় ভয়ে ভয়ে, ছাড়া পেয়ে সাথে সাথে মায়ার হিতাহিত জ্ঞান হারায়ে পাগল পাগল হয়ে প্রাণপণ দৌড়ে মূহুর্তেই রিদের ওপর ঝাপিয়ে পরে রিদের গলায় দু’হাতে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ঝুলে থেকে সাথে নিজের দুই-পা দুই ফুট উচ্চতায় রেখে রিদের গলায় নিজের মুখ লুকায় অবুঝ মতো,,
.
মায়ার হঠাৎ এমন ঝাপিয়ে পরার কারণে রিদ দাঁড়িয়ে থাকার থেকে দুই কদম পিছিয়ে যায় সাথে সাথে কিন্তু তারপরও আস্তে করে নিজের এক হাত দিয়ে মায়ার কমড়টা শক্ত করে চেপে ধরে নিজের সাথে, আর অন্য হাতটা নিজের পিছনের টেবিলের ওপর রাখে ভর পাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকার, রিদের অস্থির মনের মধ্যে যেন মূহুর্তেই শান্তির বাতাস ভয়তে থাকে সর্বোচ্ছ দিয়ে মায়াকে নিজের এতটা কাছে পেয়ে,,
.
রিদ মায়াকে জরিয়ে ধরায় অবস্থায় আস্তে করে চারপাশে তাকায় সবাইকে নিজের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে হালকা চোখের ইশারা করে আসিফকে, রিদের ইশারা পেয়ে আসিফ দ্রুত কনফারেন্স রুম খালি করে দেয় ওদের জন্য,, কনফারেন্স রুম খালি করার সাথে সাথে রিদ পিছনের টেবিলের সাথে ভর দিয়ে নিজের পিছনে থাকা হাতটা সরিয়ে আস্তে করে মায়ার মাথায় রেখে আদুরের একহাত বুলিয়ে দিতে দিতে মিষ্টি স্বরে আস্তে করে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……..
.
—” কি হয়েছে রিত এমন করছো কেন….
.
রিদের এমন কথায় মায়ার কোনো রকম ভাবান্তর হলো না উল্টো আগের নেয় রিদকে জরিয়ে ধরে আছে ঘাপটি মেরে, রিদ মায়ার কোনো রকম হেলদোল না দেখে মায়াকে নিয়ে হালকা নাড়তেই বিরক্তি সুরে রিদকে উদ্দেশ্য করে মায়া বলে ওঠে……..
.
—” উঁহুম, ভালো লাগছে না আমার নড়বেন না আপনি, এই ভাবেই থাকুন….
.
মায়ার এমন কথায় খানিকটা অবাক হয় রিদ পরে মায়ার বিরক্তি কারণটা বুঝতে পেরে রিদ থেমে যায় মূহুর্তেই, কিন্তু মায়া হঠাৎ করেই কেন এমন করছে সেটা বুঝতে না পেরে আবারও আস্তে করে বলে ওঠে…….
.
—” কি হয়েছে বউ,,,,
.
মায়াকে পর পর প্রশ্ন করার পরও কোনো রকম উত্তর না পেয়ে রিদ একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে মায়াকে ঐ অবস্থায় কোলে তুলে নিয়ে পাশে থাকা চেয়ারটা ওপর বসে পরে আস্তে করে, রিদ চেয়ারে বসে মায়াকে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে একহাতে মাথায় ও অন্য হাতে মায়ার কমড়ে রেখে নিজের সাথে অনেকটাই চেপে ধরে শক্ত করে. আর মায়া তখনো দু’হাতে রিদের গলা জরিয়ে ধরে রেখে অবুঝের মতো রিদের বুকের মধ্যে নিজের মুখ লুকিয়ে থাকে চোখ বন্ধ করে, রিদ মায়াকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বসে থাকা চেয়ারটার মধ্যে নিজের গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ মন্ত হয়ে বসে থাকে মায়াকে নিয়ে…..
.
নিস্তব্ধ পরিবেশে মায়া চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায় রিদকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে……
.
—” আমি আপনার সাথে থাকতে চাই,,
.
মায়া এমন হঠাৎ কথায় রিদ চমকে উঠে চোখ খুলে ঐ অবস্থায় বলে উঠে……
.
—” কেন, হঠাৎ তোমার এমনটা কেন মনে হচ্ছে…..
.
—” আমার আপনাকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগেনা, কেন জানি সবকিছু অসহ্য অসহ্য লাগে আমার কাছে, আপনাকে এক পলক না দেখলে নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে, তখন মনে হয় কেন নেই আপনি আমার কাছে আর এটাই আমি সহ্য করতে পারছিলাম না এতোদিন যাবত, তাই তো আজকে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি আপনার থেকে দূরে থাকতে তাই আমি আশিক ভাইয়াকে জোর করে এখানে নিয়ে এসেছি পাগল পাগল হয়ে, এখানে আসার পর আপনার সিকিউরিটি গার্ড গুলো ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছিল না আমাকে বলছে আপনি নাকি ইমপোর্টেন্স মিটিং করছেন আমাকে চলে যেতে এখান থেকে কিন্তু আমি তো আপনাকে ছাড়া থাকতে পারছিলাম না, তাই আপনার গার্ডকে ধাক্কা মেরে চলে এসেছি এখানে আপনার কাছে, আপনার সাথে থাকতে চাই বলে, প্লিজ আমাকে রেখে দিন না আপনার সাথে… (আহত সুরে)
.
মায়া এমন আহত সুরের কথায় রিদের মনে মূহুর্তেই প্রশান্তির হাওয়া বয়তে থাকে, মায়া এমন কেন করছে সবটাই বুঝতে পারে সে, তার বউ তার প্রেমে পরেছে গভীর ভাবে আর সেটা বুঝতে না পেরেই এমন সব পাগলামো করছে সাথে থাকার জন্য, রিদ এক মনে কথা গুলো ভেবেই হালকা হেসে দুষ্টমী করে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……..
.
—” ম্যাডাম বুঝিয়েন কিন্তু আমি আপনাকে যেকোনো সময় মেরে দিতে পারি যেকোনো ভাবেই, তারপরও কি আপনি আমার সাথে থাকতে চাইবেন হুমমমম…
.
—” আপনি মারতে পারলে আমি মরতেও পারবো আপনার হাতে শতবার, তবুও আমি আপনাতে থাকতে চাই, আমাকে বসবাস করতে দিন আপনিতে নয়তো আমি মরে যাবো খনেখনে……. (শক্ত গলায়)
.
মায়ার মরে যাওয়া কথাটা রিদ স্বাভাবিক ভাবে নিতে না পেরে একহাতে মায়ার চুলের মুঠো ধরে টেনে নিজের মুখ বরাবর করে রাগে কটমট করে চাপা সুরে বলে উঠে…..
.
—” মরতে চাইলে তুই আমাতে মর, আর এবার আমার মারার ধাপটা হবে খুবিই ভয়ানক কিছু…..
.
—” তাহলে তাই হোক মেরে দিন আমাকে আমি সব ভাবেই মরতে প্রস্তুত আপনার হাতে,,
.
মায়ার এমন শক্ত গলায় কথা শুনে রিদ মায়াকে সাথে সাথে উল্টিয়ে সামনে থাকা টেবিলের ওপর শুয়ে দিয়ে নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে টেবিলের সাথে মায়াকে চেপে ধরে পরে দৃষ্টি তার মায়ার চোখে মুখে রেখে বলে ওঠে…….
.
—” তাই, তাহলে তোমার এই প্রস্ততিটা আমার কাজে দিবে রোজ রোজ, আর সাথে দিবে তোমাকে অসহ্যনীয় যন্ত্রনা যাকে বলে প্রেমময় যন্ত্রনা,,,
.
রিদের কথায় মায়া নিজের চোখ বন্ধ করে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে ওঠে……
.
—” আপনি জড়িত সবকিছুই আমার মঞ্জর গভীর ভাবে….
.
মায়ার এমন কথায় রিদ উৎফুল্লতা হয়ে তেজি সুরে হাসি মুখে বলে ওঠে……
.
—” আহহ ম্যাডাম আপনি এবার শেষ……
চলবে