দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_০৫

0
343

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_০৫
__________________

” আপনার কি শরীর খারাপ? মাথা টিপে দেবো? ”

কথাটা মিনমিনে কন্ঠে বলে স্বামীর শিয়রে বসলেন তৃষা বেগম। মেহেরাব মজুমদার বিছানার উপর লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। ডান বাহু চোখের উপর রাখা। মুনতাসিম কে অত্যাধিক ভালেবাসার জন্যে সবসময় ওর সাইড টানলেও স্বামী কে যথেষ্ট ভয় পান তৃষা বেগম । ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে আরেকবার শব্দ টা কন্ঠ ভেদ করলো।

” শুনছেন? ”

মেহেরাব মজুমদার নড়েচড়ে উঠলেও কোন কথা বলে নি। বেজায় চটে আছে লোকটা। তৃষা বেগম জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কাপাঁ হাতের চিকন আঙুল ধারা স্বামীর মাথা স্পর্শ করলো,

” মাথা টিপে দিবো? ”

” না ”

সামান্য এক শব্দের বাক্য খানা এমন ভাবে বলল মেহেরাব মজুমদার তৃষা বেগমের আত্না, রুহু গুটিয়ে এলো একসাথে। স্বামীর মন মেজাজে ভাটা পড়লে এমন কন্ঠের স্বাক্ষী হন তিনি প্রতিবারই আর সাথে ভয়ে আড়ষ্ট হন শঙ্কায়। ভেতরে ভেতরে খানিক টা সাহস জুগিয়ে টেবিলের উপর থেকে মলম টা এনে মাথায় ডলতে ডলতে বললেন,

” এমন করছেন কেন? বাচ্চা মানুষ বুঝে না, সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে ”

” হ্যা হ্যা ঠিক হয়ে যাবে যাবে বলতে বলতে আজ ছেলের পঁচিশ পেরোলো। তন্ময় তো নিজের ইচ্ছে মতো ডাক্তারী পড়তে গেলো আমি কি কিছু বলেছি? তোমার আদরের দুলাল কে পই পই করে বলছি অফিসে বসতে বসে সে? কানে ঢুকে আমার কথা! ”

স্বামীর কথার পরিপ্রেক্ষিতে কথা খুঁজে পেলেন না তৃষা বেগম। ছেলেটা সত্যি ই কারো কথা শুনে না! এমন গা ছাড়া ভাব মেহেরাব মজুমদারের কশ্মিন কালেও পছন্দ না। তৃষা বেগম জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আমতাআমতা করে বলল,

” একটা কথা বলব?”

” বলো ”

স্বামীর গম্ভীর কন্ঠে খানিকটা নড়েচড়ে উঠলেন তিনি,

” অনেক বছর তো হলো মাহাবুব ভাইয়ের কোন খবর নেয়। শুনেছিলাম একটা মেয়ে আর একটা ছেলে হয়েছিলো, পরে আর কিছু জানি না। ছেলে মেয়েরাও তো মনে হয় এতো দিনে মাশা আল্লাহ বড়ো হয়ে গেছে। একটা বার খোঁজ নিয়ে দেখবেন? নাহিদার খবর ও তো পাই না, ওদের ও তো অধিকার আছে বাবার বাড়ি তে থাকার ”

” তোমাকে বলেছি এসব নিয়ে আমার সাথে কিছু ই বলবে না তুমি! বাংলা ভাষা বোঝো না? ”

এবারে আর তৃষা বেগম ধমে না গিয়ে কাঠকাঠ কন্ঠে বলল,

” আজ বিশ বাইশ বছর হয়ে এলো মাহাবুব ভাই আমাদের সাথে থাকে না তার কোন খোঁজ খবর ও নেন নি আপনারা। এতো নির্দয় কি করে হতে পারেন। সে তো আপনাদের নিজের মায়ের পেটের ভাই। আপনাদের যতটুকু অধিকার আছে এই বাড়ির প্রতি তার ও কিন্তু সমান অধিকার। আপনাদের তো অঢেল সম্পত্তি। তিনি তো পারতো এই সম্পত্তির ভাগ চাইতে কিন্তু তিনি আসে নি। কেন আসে নি জানেন? হয়তো জানেন হয়তো না। আপনাদের তো আবার ইগো বেশি। তিনি আসেন নি কারণ তার ধীর বিশ্বাস ছিল আপনারা তাকে একবার হলেও কাছে ডাকবেন কিন্তু আপনারা? আপনারা আপনাদের তথাকথিত আত্মসম্মান নিয়ে বসে ছিলেন এবং আছেন। মাহাবুব ভাই কিন্তু তার পরিবারের কথা চিন্তা করে নি যদি করতো তাহলে আজ তারা আমাদের সাথে ই থাকতো। মেধা, মিনুর মতো মাহাবুব ভাইয়ের মেয়েও সমান অধিকার পেতো। মানলাম সে প্রেমের বিয়ে করে ভুল করেছে কিন্তু মেয়েটা? শুনেছিলাম ধনাঢ্য পরিবারের একমাত্র মেয়ে ছিলো অথচ সে তার স্বামীর হাত ধরে এক কাপড়ে বেরিয়েছিলো। আজ তারা কেমন আছে? কোথায় আছে জানেন? জানেন না। আদৌও তারা বেঁচে আছে কি না তাও জানেন না। বড় ভাই হিসেবে দায়িত্ব টা কি আপনার না? ”

তৃষা বেগম থামলো। বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডটা ধরাস ধরাস করছে। এতো সাহস আজ হলো কিভাবে সেটাই ভাবছেন তিনি।

প্রতিবারের মতো এবারেও স্বামীর বাজখাঁই ধমকের জন্য ও নিজেকে প্রস্তুত করলো তৃষা বেগম। যতবার ই মাহাবুব মজুমদার কিংবা তার পরিবার সম্পর্কে কথা উঠে ততবার ই স্বামীর বাজখাঁই ধমকের স্বীকার হন তিনি। তৃষা বেগম কে অবাক করে দিয়ে মেহেরাব মজুমদার কিছু ই বললেন না। ছোট করে দুটো শব্দ আউরালেন,

” দেখব আমি ”

তৃষা বেগম ও মুখে কুলুপ এঁটে মেহেরাব মজুমদারের মাথা ডলে দুরুত্ব বজাই রেখে পাশে শুয়ে পড়লেন।

_____

“চুমকি চলেছে একা পথে,
সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে
রাগ করো না সুন্দরী গো
রাগলে তোমাই লাগে আরোও ভালো”

রুমের মাঝে ই দরজা চাপিয়ে ধুম ধারাক্কা নেচে চলছে সায়র আর ইফতেখার। সায়রের মাথায় লুঙ্গি দিয়ে ঘোমটা দেওয়া, লুঙ্গি টাও নিজের না বাপের রুম থেকে চুরি করে আনা সাধের লুঙ্গি। কোমড় হেলে দুলে নাচতে নাচতে কাকের চেয়েও বেসুরা গলায় গান গেয়ে চলেছে সায়র। সাথে সঙ্গ দেওয়ার জন্য আছে ইফতেখার। দুই পাগলের মধ্যে ইফতেখার ছেলের রুল প্লে করছে আর সায়র মেয়ে। খাটের উপর নাচতে নাচতে সায়র ঘুরে এসে ইফতেখারের উপর পড়তেই ইফতেখার সায়রের কোমড় জরিয়ে ধরে রোমান্টিক স্টাইলে ঠিক সেই সময়েই ইফতেখারের চোখ যায় দরজার দিকে। মুনতাসিম দরজার সাথে হেলান দিয়ে দু হাত ভাজ করে বুকের উপর রেখে ভ্রু কুচকে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। ইফতেখার হন্তদন্ত হয়ে সায়রের কোমড় ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। হঠাৎ এমন হওয়ায় খাট ছেড়ে সোজা মেঝে তে ঠাস করে পড়ে গেলো সায়র। বেচারা যেই রোমান্টিক মুডে ছিলো তার হলো দফারফা। নাক মুখ কুঁচকে ইফতেখারের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,

” এটা কি করলে ইফু ভাই! ব্যথা পাইছি তো। আমাকে ছাড়লে ছাড়লে বৌ রে এভাবে ছাড়লে কপালে ঝাটাপেটা আছে বলে দিলাম! ওফফ কি ব্যথা! ”

বলেই ইফতেখারের দিকে তাকালো। ইফতেখার কে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেও তাকালো সে দিকে। মুনতাসিম কে দরজার সাথে হেলান দেওয়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে তৎক্ষনাৎ উঠে দাড়ালো, ব্যথা ট্যাথা সব ভুলে বসলো এক নিমিষেই। কানের মধ্যে শুধু বাজছে কিছু ক্ষন আগে বলে দেওয়া মুনতাসিমের বার্তা।

“ঘুমিয়ে যাস তাড়াতাড়ি। দুই বাদরে আবার একসাথে বাদরামী করিস না ”

শুকনো ঢুক গিলে হাসার চেষ্টা করে বলল,

” হে হে ভাই, তুমি কখন আসলা? ”

মুনতাসিম চোয়াল শক্ত করে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে হাটতে হাটতে সায়রের সামনে এসে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

” তোরা যখন থার্ড লিঙ্গের মানুষের মতো কোমড় ঝুলাচ্ছিলি”

সায়র ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

” তুমি কি আমাদের হিজরা বললা ভাই? ”

মুমতাসিম ভ্রু জোড়া গুছিয়ে আড়চোখে তাকিয়ে বলল,

” তোর কি তাই মনে হয়? ”

সায়র আমতাআমতা করে বলল,

” না মানে হ্যা। থার্ড লিঙ্গ তো হিজরাদের ই বলে ”

” এতো মানে মানে করার কি আছে। সোজা বাংলায় আমি তোদের হিজরাই বললাম ”

সায়র নাক ফুলালো,

” আবার অপমানসসস”

ইফতেখার ততক্ষণে বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে দাড়িয়েছে। মুনতাসিম ইফতেখারের দিকে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাতেই ইফতেখার বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলল,

” ভাই এভাবে তাকাস না কলিজা ছলাৎ ছলাৎ করে। ”

মুনতাসিম বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইফতেখারের দিকে,
” সায়র হলো একটা গাধা আর তুই হলি তার লিডার, গর্ধব কোথাকার! ”

দু’জনের দিকে তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শব্দ যুক্ত কদমে ঘর ছাড়লো এরপর। পিছনে থেকে মিনমিনে কন্ঠে ইফতেখার বলে উঠলো,

” কিছু বলতে এসেছিলি? ”

” মুড নেই ”

পদশব্দ আর শোনা গেলো না। সায়র ত্রস্ত পায়ে দরজা লাগালো রুমের। বিছানায় এসে চার হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ধপ করে পড়লো বিছানার উপর।

” বড় বাবার সেকেন্ড এডিশন আমার মায়ের পেটের আপন ভাই ”

হঠাৎ মনে পড়ে গেলো তার ব্যথার কথা। তৎক্ষনাৎ নাক মুখ কুঁচকে আর্তনাৎ করে বলল,

” ওমা গো ইফু ভাই! আমার জীবনের হাফ আয়ু তুমি নষ্ট করে ফেলছো, আমার বউয়ের কপাল পুড়ছে গোওও, ও বউ তুমি কই! ”

ইফতেখার ভ্রু কুচকে সায়রের দিকে তাকালো, মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,

” দুইটা কি আসলেই আপন ভাই? ”

চলবে…

[ আজকের পর্ব কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here