#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_০৬
__________________
প্রতি রাত পেরিয়ে সূর্য যখন পৃথিবীর বুকে লালাভা ছড়িয়ে দিনের বার্তা ছড়ায়, পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখোরিতো হয় আকাশ বাতাস সেই সাথে শুরু হয় অরিত্রার ব্যস্ততম আরেকটা দিন। শুক্রবার দিনটা ছুটির দিন হলেও অন্য সকল দিন থেকে এটাই তুলনামূলক ব্যস্ত তম দিন বলে অনায়াসে গন্য করা যাবে।
সকালে সকলের ঘুম থেকে উঠার আগেই নাস্তা রেডি করে টেবিলে সাজাতেই উঠে পড়ে শেহজাদ। ছোট্ট একটা ভাড়া বাড়িতে ড্রয়িং, ডাইনিং আহামরি বড় না হলেও চারজনের চলনসই একটা সুন্দর সংসার।
” রান্না শেষ আপু? ”
অরিত্রা চুলায় চায়ের পানি বসাতে বসাতে এক পলক শেহজাদের দিকে তাকালো। সবসময়য়ের মতো গোছানো পরিপাটি হয়ে থাকতে দেখে বিস্তর হাসলো অরিত্রা। ছোট বেলা থেকে ই ছেলেটা বেশ গোছালো।
” খিদে লাগলো বুঝি? ”
শেহজাদ চুলোর পাশে পরিষ্কার জায়গা দেখে পা ঝুলিয়ে বসতে বসতে বলল,
” না তা না। কিছু করতে হলে বলো আমি করে দিচ্ছি একা একা সব কিছু না করে আমাকেও তো ডাকতে পারো তাহলে তো এতো কাজ একা করতে হয় না ”
অরিত্রা চুলোর আচ কমিয়ে ভাইয়ের মুখ টা আজলে তুলে কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল,
” এতো পাকামো করতে হবে না তোকে আমি একাই পারবো। আরো বড়ো হো তারপর করবি এখন যা শেহরান কে ডেকে নিয়ায়, টেবিলে নাস্তা রেডি আছে আর আম্মুর রুমে গিয়ে দেখিস আম্মুর কোরআন পড়া শেষ হলো নাকি ”
শেহজাদ নেমে দাঁড়ালো, নাক মুখ কুচকে বলল,
” তোমার ওই অলস ভাইকে তুমিই ডাকো গিয়ে, ডাকলে খালি উমম উমম করে আর সকাল সকাল আমার মেজাজ খারাপ করতে চাই না। আমি আম্মুর রুমে গেলাম ”
অরিত্রা হাসলো, চায়ের পানিতে চা পাতা দিয়ে আচ টা কমিয়ে দিলো, রান্না ঘরের সব কিছু গুছিয়ে চায়ের পাতিল নিআে নামিয়ে গেলো শেহজাদের ঘরের দিকে। দু ভাইয়ের ঘর একটা হলেও বিছানা আলাদা। শেহরানের ঘুমের অবস্থা ভালো না চার হাত পা চার দেশে দিয়ে ঘুমায়। শেহজাদ যেমন চটপটে আর বুঝদার। শেহরান ঠিক উল্টো, অলসতার জন্য যদি নোবেল দেওয়া যেতো নিঃসন্দেহে সেটা শেহরান ই পেতো।
” এই শেহু উঠ না ভাই, অনেক বেলা হলো তো ”
শেহরানের শরীর থেকে কাথা টা টানতে টানতে এক নাগাড়ে ডেকে চলেছে অরিত্রা কিন্তু যাকে ডাকছে তারই কোন খবর নায়। নড়েচড়ে আবার ঘুম। এতো ঘুম যে কোথ থেকে আসে সেটাই বুঝে পায় না অরিত্রা।
” এই শেহরান উঠবি তুই? নাকি বালতি দিয়ে পানি আনবো? ”
” ওফফ আপু ঘুমাতে দাও না! ”
ঘুমু ঘুমু কন্ঠে কথাটা বলেই কোল বালিশ আঁকড়ে ধরে আবার ঘুম। এবার অরিত্রার মেজাজ খারাপ হলো, সকাল বাজে আটটা আর এই ছেলে এখনো ঘুমে। বাথরুম থেকে পানি এনে হাত ভিজিয়ে ঝাড়া দিতেই হুরমুর করে উঠে বসলো শেহরান। অরিত্রা ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে হাতে দিয়ে দরজা দিয়ে বের হতে হতে বলল,
” যাস্ট দশ মিনিট! দশ মিনিটের মধ্যে তোকে খাবার টেবিলে দেখতে চাই শেহু। কাম ফাস্ট ”
এদিকে বেচারা শেহরান ঠোঁট উল্টে বসে বসে ভাবছে তার৷ মাথায় পানি এলো কোথ থেকে?
অরিত্রা টেবিলে যেতেই দেখলো নাহিদা বেগম চেয়ারে বসে বুকের মাঝ বরাবর ডলছে বারবার। অরিত্রা ভ্রু কুঁচকে মায়ের কাছে গেলো,
” আম্মু! ”
নাহিদা বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো। বুক থেকে তৎক্ষনাৎ হাত সরিয়ে টেবিলে রাখলো।
মেয়েটাকে দেখলে নিজের স্বামীর কথা মনে পড়ে তার। অরিত্রার বাবা ছিলেন একদম ফর্সা আর চুল গুলো ছিলো কোঁকড়া। অরিত্রা তার বাবার মতো অতো ফর্সা না হলেও তার গায়ের রং কে ফর্সা বললেই চলে, চুল গুলো কোঁকড়ানো আর চেহারা অনেকাংশেই মিলে যায়। অরিত্রার বাবাকে যারা চেনে যে কেউ দেখলে অনায়াসে অরিত্রার পরিচয় বলে দিতে পারবে। মুখের আদল বাবার পেলে নাকি মেয়েরা ভাগ্যবতী হয় কিন্তু অরিত্রার ভাগ্যেই কেন এতো স্ট্রাগল! বুঝতে পারেন না নাহিদা বেগম।
” কিরে মা কিছু বলবি? ”
অরিত্রা তার মায়ের কাছ ঘেঁষে দাড়ালো,
” তোমার কি বুকে ব্যথা করছে? ”
নাহিদা বেগম চমকে মেয়ের দিকে তাকালো, এই মেয়ে সব কিছু বুঝে ফেলে, মিথ্যা বললেও অনায়াসে ধরে ফেলে, অরিত্রার বাবার ও ঠিক একই গুন ছিলো, মুখ ফুটে কখনো কিছু বলতে হয় নি, অনায়াসে বুঝে ফেলতো সব না বলা কথা হঠাৎ করেই মানুষ টা চলে যাওয়া মেনে নিতে পারে নি নাহিদা বেগম কিন্তু ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করে উঠে দাড়ালেন তিনি।
” ওই আর কি একটু একটু ”
অরিত্রা তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মায়ের দিকে, সামান্য ব্যথা যে করছে না সেটা অরিত্রা বুঝতে পেরেছে,
” মিথ্যা বলে লাভ নেই কেন অযথা পাপ করতে যাও বুঝি না, নাস্তা করো এরপর মেডিকেল কলেজ হসপিটালে যাবে আমার সাথে ”
নাহিদা বেগম তৎক্ষনাৎ নাকচ করে বলে উঠলো,
” না না মেডিকেল যেতে হবে না, গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা ঔষধ খেলেই সেরে যাবে ”
” তোমার কোন মাতব্বরি কথা আমার সাথে বলবে না। বাবাকে হারিয়েছি, শোক কেটে উঠেছি কিন্তু তোমাকে হারানোর ক্ষমতা এই অরিত্রার নেই। তোমার ক্ষেত্রে কোন রিস্ক আমি নিতে রাজি নই, আর একটা কথাও না চুপচাপ খেয়ে রেডি হও ”
অরিত্রার গম্ভীর কন্ঠ শুনে নাহিদা বেগম টু শব্দ করার সাহস হলো না। এতোক্ষন মা বোনের কথা চুপচাপ দেখছিলো শেহজাদ। অরিত্রা শেহরানের খাবার বেড়ে নিজেও বসে পরলো খাবারের টেবিলে,
” আপু তুমি আম্মু কে নিয়ে মেডিকেল যাও আর টুকটাক কাজ যা আছে আমাকে বলে যাও আমি করে রাখবো নে, তোমার ও হেল্প হবে কাজ ও আগাবে ”
শেহজাদের কথা শুনে অরিত্রা প্রসন্ন হাসলো মাথা হেলিয়ে সায় জানালো যে সে বলে যাবে।
খাবার শেষ করে অরিত্রা নাহিদা বেগম কে সাথে করে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো, শুক্রবার বলে হয়তো কার্ডিওলজিস্ট থাকার সম্ভাবনা আছে। তার ওপর এমন আহামরি কিছু না কার্ডিওলজিস্ট না থাকলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ তো থাকবেই।
_______________
” আব্বু কি করো? ”
সকাল সকাল ছেলের এমন আজাইরা প্রশ্ন শুনে কপাল কুঁচকালেন মাহমুদ মজুমদার। খবরের কাগজে মুখ গুঁজে রেখেই বিরক্তিকর কন্ঠে বললেন,
” হা-ডু-ডু খেলি ”
ভড়কালো সায়র। মিনমিনে কন্ঠে বলল,
” এহহ তুমি তো খবরের কাগজ পড়ছো”
” দেখছিস ই যখন অযথা প্রশ্ন করছিস কেন? কাজ নেই তোর? ”
সায়র ঠোঁট ফুলিয়ে নড়েচড়ে বসলো,
” আব্বু একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে আসলাম ”
মাহমুদ মজুমদার খবরের কাগজে মুখ গুঁজেই উত্তর দিলো,
” বল ”
সায়র খবরের কাগজ টানতে টানতে বলল,
” তুমি আগে কাগজ রাখো তারপর বলবো ”
মাহমুদ মজুমদার ছেলের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে খবরের কাগজ ভাজ করতে করতে বলল,
” বল কি বলবি ”
” আব্বু আমি বিয়ে করবো! ”
” তো কর আমি কি ধরে রাখছি? ”
মাহমুদ মজুমদারের স্বাভাবিক কন্ঠ। সায়র লাফ দিয়ে উঠে বলল,
” তার মানে অনুমতি দিচ্ছো? ”
” হ্যা দিলাম কিন্তু মনে রাখিস তোকে খাওয়াচ্ছি বলে এই নয় যে দুটোরে খাওয়াবো, আমি টাকার গাছ লাগাইনি , নিজের বউকে নিজে খাওয়াবি ”
সায়র হতাশ কন্ঠে বলল,
, আমি তো কিছু করি না, কি খাওয়াবো? ”
” আগে প্রতিষ্ঠিতো হো তারপর বিয়ে করিস ”
“প্রতিষ্ঠিত হয়েই যদি বিয়ে করতে হয় একটা কেন ৩ – ৪ টা বিয়ে করবো ”
মাহমুদ মজুমদার কপাল চাপড়ালেন। বড়টারে তো বিয়ের কথা বললেই সাপের মতো ফনা তুলে ফোস ফোস করে আর আরেকটা একটার জায়গায় চারটা বিয়েট পরিকল্পনা করা শেষ। এটাই দেখার বাকি ছিলো!
চলবে.,,
[ নেক্সট আর নাইস লিখলে একদম বাইন্দা রাখমু, সবাই সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করো ]