প্রেমের_প্রদীপ_জ্বলে [৪]
প্রভা আফরিন
কিছু কিছু মানুষ হয় ওয়ান ট্র্যাক মাইন্ডের। একজন মানুষ কিংবা তার সম্পর্ককে ঘিরে তারা শুরুতেই যে ধারণা করে বসে, এরপর শত যুক্তি বা সত্যি দিয়েও সেই ধারণা তাদের মন থেকে সরানো যায় না। শাওনের সম্পর্কটা যারা জানত তাদের অনেকেই এই ধরনের ব্যক্তি। সে যখন ব্রেকাপের ছয় মাস পর আরেকজনের গলায় বরমালা দিতে চাইল, তা বাঁকা চোখে দেখল কেউ কেউ। পূর্বে প্রেম ছিল এরূপ রমনী যেন খাদযুক্ত। সে কেন এত ভালো একজন পুরুষকে স্বামী হিসেবে পাবে? খাদযুক্ত একটা পুরুষই তার প্রাপ্য। এরূপ ইঙ্গিতপূর্ণ চাহনি দেখেই শাওনের মাঝে হীনমন্যতা জন্মেছিল সে জাওয়াদের যোগ্য সঙ্গিনী হতে পারবে না। বিয়ের কথা এগোচ্ছিল পারিবারিকভাবে। পাকা কথা যখন স্থির হতে চলেছে শাওন হুট করে একদিন জাওয়াদকে ফোন করে বলল,
“আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না, জাওয়াদ ভাই।”
একটি তরঙ্গহীন, শান্তস্বর ভেসে এসেছিল,
“কারণ?”
“ইউ ডিজার্ভ সামওয়ান বেটার দ্যান মি।”
“বাট নট লাইক ইউ। তোর ডুপ্লিকেট পাওয়া গেলে ভালো হতো। খুঁজে দিতে পারবি?”
শাওনের চোখে জল চলে এসেছিল। এভাবেও কেউ তাকে চাইতে পারে! সেও তো একজনকে চাইতো, কিন্তু বিপরীতে এমন আকুল আবেদন তো মেলেনি। উলটে অন্তর পুড়িয়ে ফেলেছে। শাওনের নিরবতাকে দীর্ঘায়িত না করে জাওয়াদ শান্ত স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়েছিল,
“তোর কী আমাকে অপছন্দ? হতেই পারে। সরাসরি বললে আমি মেনে নেব। এভাবে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে নিজেকে কেন ছোটো করছিস, শাওন?”
শাওন রুদ্ধস্বরে বলল, “তুমি সব জানো।”
“আমি কী সেসব নিয়ে তোকে প্রশ্ন করেছি?”
“সন্দেহ করবে না তার কী নিশ্চয়তা?”
“তুই কী আমিনের কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে রাখিস মনে মনে? তবে বল, ওকে ধরেবেঁধে রিহ্যাবে পাঠাই। সুস্থ হয়ে ফিরলে সংসার বাঁধবি।”
শাওন ঘৃণায় মুখ কুচকায়, “অসম্ভব। আমি যেমন মন দিয়ে ভালোবাসতে জানি তেমনই মন থেকে একবার কেউ উঠে গেলে তার দিকে ফিরেও তাকাই না। যখন ভালোবাসার দরকার ছিল আমিনকে আমি ত্রুটিহীন ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা সব দিয়েছি। ও খারাপ পথে পা বাড়িয়েছে বলেই হাত ছেড়ে দেইনি। শোধরাতে চেয়েছি। এখন আর ওর জন্য ভালোবাসা নেই। ঘৃণাটাও আমি মন দিয়েই করতে জানি।”
জাওয়াদ বোধহয় একটু হেসেছিল। ওর কথা থামতেই প্রশ্ন করল,
“কিন্তু এরপর?”
“মানে?” বুঝল না শাওন।
জাওয়াদ পুনরায় বলল,
“এরপর কী বৈরাগ্য গ্রহণ করে সংসারত্যাগী হবি? বিয়ে থা করা লাগবে না?”
“তা কেন? করতে হবেই একসময়।”
“কেমন পাত্র খুঁজবি তখন?”
“এতদিনে ভালোমতো বুঝে গেছি আমি মানুষ চিনতে পারি না। খুব সহজেই কাউকে বিশ্বাস করে ফেলি। ফলে অন্যরা আমাকে সহজেই বোকা বানাতে পারে। সুতরাং নতুন করে মনের মানুষ খোঁজার রিস্ক আর নেব না। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করে ফেলব। বিয়ের আগে অতীত খোলাসা করে জানিয়ে দেব। এরপর যা আছে ভাগ্যে।”
“আমাদের সম্পর্কটাও কী অ্যারেঞ্জ হচ্ছে না? আমি তোর অতীত জেনেই কী এগোইনি? সুতরাং চোখ বুজে শ্বাস নে। বল আল্লাহ ভরসা, যা আছে ভাগ্যে।”
শাওন সেদিন ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল। আজ কবুল বলার পরও কাঁদছে। পরবর্তী যতগুলো দিন ওই কথাগুলো মনে পড়বে ও কাঁদবে। আমিন জানত না, নারীর হাত ধরতে হয় ভালোবেসে। সেই হাতটা যদি দড়ি হয়ে চেপে বসে তবে নারী তো হাঁসফাঁস করবেই। অন্যদিকে, জাওয়াদ জানে ছোটো ছোটো স্পর্শের দ্বারা কীভাবে হৃদয় ছুঁতে হয়, ভরসা দিতে হয়, সর্বোপরি পাশে থাকতে হয়।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার শেষ মুহূর্তে আসে বিদায়। যখন একটি পরিবারের বিয়োগকৃত সদস্যটি অন্য আরেকটি পরিবারের সংযোজিত হয়। নিশান্ত ও অনন্তের পর দ্বীপশিখা বাড়ির প্রথম কন্যা সন্তান শাওন। তার প্রতি সকলের উপচে পড়া স্নেহ রয়েছে। সেই মেয়েটির বিদায় সকলকেই ভারাক্রান্ত করে তুলল। শিরীন কেঁদেকুটে শাশুড়ির ওপর পড়ে যাচ্ছেন। চাঁদনি বেগম নিজেও কিছুটা আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু ছোটো বউয়ের আচরণে বিরক্ত গলায় বললেন,
“তুমি কাঁদছো নাকি আমাকে অত্যাচার করছো, ছোটোবউ?”
“আম্মা, আজকের দিনে শাসন করবেন না। আমার বড়ো মেয়েটা চলে যাচ্ছে।”
“আমার নাতনিও যাচ্ছে। দয়া করে দূরে গিয়ে কাঁদো। আমাকে জ্বালিয়ো না।”
বিয়ের পর থেকেই শিরীনের ধারণা শাশুড়ি উনাকে অপছন্দ করেন। শাওনের বাবার সঙ্গে উনার প্রেমের বিয়ে। চাঁদনি বেগমের মত ছিল না বিয়েতে। তাই শুরু থেকেই একটা মন্দভাব আছে দুজনের মধ্যে। কেউ কারো কথা ছেড়ে দিতো না। এখনো দেয় না। স্থান, কাল, পরিবেশ ভুলে লেগে যায় একে অন্যকে খোঁচা দিতে। অতএব, কন্যা বিদায় মুহূর্তে শাশুড়ি-বউয়ে আবারো তর্ক বাঁধতে যাচ্ছিল। নিশান্তের মা আফিয়া এগিয়ে এসে শিরীনকে সরিয়ে নিলেন।
অনন্ত ও শাওন পিঠোপিঠি ভাই-বোন, ভালো বন্ধুও। বিদায় মুহূর্তে দেখা গেল দুজনে গলা জড়াজড়ি করে কেঁদে ফেলেছে। শোভা এসে কাঁপা গলায় বলল,
“তোমাদের মাঝে আমাকেও একটু জায়গা দাও না, আপু। খুব কান্না পাচ্ছে।”
অতঃপর কান্না জুড়ে দিল তিন ভাই-বোন। সেই দৃশ্য দেখে বড়োরা আরো বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। যাবীন ওদের দেখে আর ঠোঁট বাঁকায়। একটু আগে দুই ভাই-বোন উল্লাস করে একজনকে আধমরা করে ফেলে এসেছে। অথচ এখন ভাবখানা এই যে তাদের মতো সরল মানুষ দুনিয়াতে দুটি নেই। নিশান্ত ওদের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সে বরাবর কঠিন মনের মানুষ। দুঃখটাও প্রকাশ করে গম্ভীরমুখে। তার এই মুখ দেখলেই যাবীনের স্কুলের অংক স্যারের কথা মনে পড়ে যায়। এক চিমটি গোফওয়ালা, পেটমোটা স্যারও সারাক্ষণ গুরুতর মুখ করে থাকত। যা দেখলেই ছাত্র-ছাত্রীদের হাসি উড়ে যেত। স্কুলের অংক আর ইংলিশ সাবজেক্টের স্যারগুলো কেন যে এমন নিরস হতো আজও বুঝে পায় না ও। বুঝে পায় না এমন মিষ্টি একটি পরিবারে জন্মেও মিলিটারি মহাশয় কেন নিমতিতা৷ ভাবনার সময় যাবীন তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে ছিল নিশান্তের দিকে। আজকের দিনে ওকে দুইবার থাপ্পড়ের ভয় দেখিয়েছে লোকটা। একটা চোরা রাগের স্রোত বয়ে যায় যাবীনের শরীরে। হুমকি, ধামকিতে ওস্তাদ আছেন তিনি। ঠিক তখনই চোখ ফেরালো নিশান্ত। আচমকাই চোখাচোখি হয়ে গেল। অন্তরভেদী দৃষ্টির প্রখরতায় টিকতে না পেরে যাবীন চোখ সরিয়ে নেয়।
বিয়ের কাজ সম্পন্ন হতে হতে এমনিতেই রাত অনেকটা গড়িয়েছে। বরযাত্রী ধীরে ধীরে গাড়িতে চড়ে বসছিল। দুটো বাড়ির মধ্যে মাত্র দশ মিনিটের দূরত্ব বলেই বিশেষ তাড়া ওদের ছিল না। এদিকে ভাইবোনদের গলাগলি করে কান্নার আসর থামছেই না। তারওপর দুই পরিবারের সখ্যতা এমনই মায়াময় যে ছেলের বিয়ে দিতে এসে পুত্রবধূর বিদায়ে সুমা বেগমেরও চোখে জল চলে এসেছে। যাবীন বিপন্নবোধ করে বলল,
“তুমি কাঁদছো কেন, মা?”
সুমা বেগম শাড়ির কোণে চোখ মুছে নিজেকে সামলে নিলেন। আপ্লুত স্বরে বলেন,
“তোমাকেও একদিন বিদায় দিতে হবে। এমন দিন আমাদের জীবনেও আসবে। তাই ভেবে একটু ইমোশনাল হয়ে গেছি।”
যাবীন নিচের ঠোঁট ঈষৎ উলটে মাকে জড়িয়ে ধরে। এদিকে কান্নারত সকলেই জাওয়াদের বড়ো আদরের, স্নেহের। তাই সেও মমতা নিয়ে চেয়ে আছে। নিশান্ত অবাক চোখে চেয়ে আছে। এসব হচ্ছেটা কী! এটা বিয়ের আসর নাকি কান্নার! সে এসে কান্নার আসর ভণ্ডুল করল। বোনকে গাড়িতে তুলে দিয়ে গাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে রইল। যাবীন বর-বউয়ের গাড়িতেই ড্রাইভারের পাশের সিটে বসবে। সে মন্থর গতিতে এগিয়ে এসে নিশান্তের সামনে দাঁড়ায়। নিশান্ত ভ্রুকুটি করে বলে,
“কী?”
যাবীন হাতের ইশারায় বলে, “সাইড দিন।”
নিশান্ত নিরবে সরে দাঁড়ায়। যাবীন টিপটিপ পায়ে পাশ কাটিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। বাইরে থেকে ওকে শান্ত দেখালেও ভেতরে একটা তাড়াহুড়া ছিল। ফলে উঠে বসতে গিয়ে সতর্ক হয়নি। আঁচলটা দরজায় আটকে বেরিয়ে রইল অনেকটা। হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিলে নিশান্ত হাতের ইশারায় থামিয়ে দেয়। এগিয়ে এসে আচমকা দরজা খুললে যাবীন হতচকিত হয়। নিশান্ত কিঞ্চিৎ ঝুঁকে ওর আঁচলটা কুড়িয়ে কোলের ওপর দেয়। হিমস্পর্শী স্বরে বলে,
“সামান্য অসতর্কতা ভয়ানক বিপদ ঘটাতে পারে। নিজেরও, অন্যেরও। তোর বোনটাকে একটু চোখ-কান খোলা রেখে চলতে শেখা।”
শেষ কথাটা পেছনে বসা বরের জন্য ছিল। কিন্তু সামনে বসা রমনীর গায়েই বিঁধল।
________________
শেখ বাড়িটা আয়তনে বড়ো হলেও পরিবার ছোটো। মাত্র চারজন সদস্য এবং দুজন কাজের লোক। দুই ছেলে-মেয়ে স্বভাবে একদমই শান্তশিষ্ট হওয়ায় এ বাড়িতে কোলাহল বিশেষ হয় না। শাওন যতবারই এ বাড়িতে আসত শান্তি অনুভব করত। বলত,
“ইশ এমন একটা নিরিবিলি বাড়ি যদি আমার হতো?”
মুখের কথা মিলে গেছে। বাড়িটা এখন তারও। সে বাড়ির বউ। একজন সদস্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়িটাও যেন আজ মহা খুশি। শাওনও খুশি এই জন্য যে এ বাড়িতে আত্মীয়ের খুব একটা ঘনঘটা হয়নি। আকদ অনুষ্ঠান বিধায় লোক সমাগম কম। পরবর্তীতে রিসেপশনে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। ঘড়ির কাটায় একটা বাজে। দরজার সামনে বিচ্ছুর দল ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। একদিকে ভাই, আরেকদিকে দুলাভাই হওয়া জাওয়াদকে জেঁকে ধরেছে টাকার জন্য। ঘরের ভেতরে তখন নববধূটি ক্লান্তিতে ন্যুব্জ। কাঁচা ফুলের ঘ্রাণে বেশিক্ষণ থাকলে মাতাল মাতাল বোধ হয়। শাওনের এখন তাই অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে লম্বা করে পা মেলে শুয়ে পড়ে। কিন্তু আজকের রাতটি বিশেষ। জাওয়াদকে ও নিরাশ করতে পারবে না। এখন থেকে ওর সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে স্বামীকে ভালো রাখার৷
জাওয়াদ দর কষাকষি করে খুব বেশি কালক্ষেপণ করেনি। তার পদধ্বনি চৌকাঠ পেরোতেই শাওন সতর্ক হয়।
জাওয়াদ কথা শুরু করার নিমিত্তেই জিজ্ঞেস করে,
“এ ঘরে তোমার অসুবিধা হচ্ছে না তো?”
শাওনের শ্রবণদ্বারে তুমি সম্বোধনটি আলোড়ন তুলল। একদিন আগেও জাওয়াদ ওকে তুই বলত। জাওয়াদ বুঝল মেয়েটির বিমূঢ়তার কারণ। স্মিত হেসে পাশে বসে বলল,
“পুরুষের জীবনে মা, বউ দুটোই সম্মানিত নারী। তাদের সম্মান দিয়েই কথা বলা উচিত। তাছাড়া সম্পর্কটা সহজ করতে দুজনকেই তৎপর হতে হবে। আমি তুমি বলে শুরু করলাম। এবার তোমার পালা।”
শাওন নতুন করে মুগ্ধ হলো এই অসম্ভব সুদর্শন মানুষটার ওপর। ঠোঁট কামড়ে একটুক্ষণ ভাবল। এরপর বলল,
“তোমার রুমটা আমার বরাবরই পছন্দ, জাওয়াদ। এবার তো দখল করে নিলাম।”
জাওয়াদের পাতলা ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি ফোটে। আজ জাওয়াদ শব্দটার পেছনে ভাই শব্দটা নেই। সে বলল,
“মানুষটাই তো দখল করে ফেলেছো। ঘর অতি সামান্য বস্তু।”
শাওন লজ্জায় মাথা নোয়ায়। জাওয়াদ প্লাটিনামের ওপর লাভ শেইপের ডায়মন্ড লকেট উপহার দিল স্ত্রীকে। উপহার শাওনও দিল। ঘড়ি, পারফিউম ও বেল্ট। জাওয়াদের পছন্দের ব্র্যাণ্ডের। অল্পকিছু গল্প-আলাপে ঘড়ির কাটা যখন দুটোর ঘরে, জাওয়াদ বউকে নিয়ে বারান্দায় পাতা উলের মাদুরে বসে। জোছনা বিশেষ নেই। আকাশে কাস্তের মতো সরু নতুন চাঁদ উঠেছে। অর্থাৎ আরবি মাসের প্রথম দিন। আজকে সব যেন নতুন করে শুরু করার দিন। স্বামীর পাশে বসে শাওনের মাঝে আবারো দুঃখবোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। স্মিতসুরে বলল,
“তুমি আরো আগে কেন আমার জীবনে এলে না, জাওয়াদ?”
মিষ্টি মুহূর্তে স্ত্রীর আফসোস শুনে জাওয়াদ থমকালো। স্পষ্ট বুঝল কথার মানে। আরেকটু দূরত্ব মেটানোর জন্যই একহাতে জড়িয়ে নিল ওকে। রসিকতার স্বরেই বলল,
“খারাপের সঙ্গে না মিশলে ভালোর মর্ম কেউ বোঝে না। এই যে তুমি আমার মর্ম বুঝলে। এবার তো আমাকে বেশি বেশি ভালোবাসতে হবে।”
“তুমি তো খারাপের সঙ্গে মেশোনি। তবে আমার মর্ম কী করে বুঝবে?” প্রশ্নোক্ত চোখে চায় শাওন।
“তাইতো! মেশা উচিৎ কারো সঙ্গে?” ভ্রু নাচায় জাওয়াদ।
শাওন ঠোঁট উলটে ঘাড় নেড়ে বলল, “তোমার পক্ষে সম্ভব না। নইলে তো আমাকেই পটিয়ে ফেলতে পারতে। কিন্তু পারোনি, জীবনে একটা ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দও বলোনি। এমন সাধু-সন্ন্যাসী সেজে থাকলে বুঝব কী করে? আমি তো আর সাধু ছিলাম না।”
“আমার তো তবে এই মুহূর্তে সাধুতা পরিহার করা উচিত!”
শাওন বিব্রতবোধ করে। চোরা চোখে এদিক-ওদিক চায় যেন কিছুই বোঝেনি। জাওয়াদ ঠোঁট টিপে হাসে। তপ্ত অধরে স্পর্শ করে স্ত্রীর ললাট। ফিসফিসিয়ে বলে,
“সৃষ্টিকর্তা তোমাকে আমার জন্য হালাল করে দিয়েছেন। আমাকে তোমার জন্য। এর কাছে যাবতীয় পুরোনো, বেনামি সম্পর্ক তুচ্ছ। পবিত্রতায় বরকত থাকে। আশাকরি সেই বরকত এবং দুজনের প্রাণঢালা প্রচেষ্টার জোরেই আমাদের পথচলা মসৃণ হবে।”
চলবে…