প্রেমের_প্রদীপ_জ্বলে [৩০]
প্রভা আফরিন
নিশান্ত-মেহযাবীনের আকস্মিক বিয়েতে যে বাধা আসবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। পরিবারের মাঝে তর্ক-বিবাদ হবে তাও নিশ্চিত ছিল। শেষে দেখা গেল সবাই মানলেও বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ তিন নারীই এর বিপক্ষে। নিশান্তের মা নিজের প্রতিক্রিয়া গোপন করেননি। কনে তো স্বয়ং অরাজি। তৃতীয়জন হলেন কনের মা। যিনি বিয়ের পক্ষে তো ননই আবার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত বলে সরাসরি কিছু বলতেও পারছেন না। সুমা বুদ্ধিমতি ও চৌকস একজন ব্যবসায়ী নারী। নিজের অসন্তোষ তিনি প্রকাশ করেছেন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গেই। বিয়ে নয়, তিনি ছেলের রিসেপশন পার্টিতে মেয়ের বাগদান সম্পন্ন করতে চান। বিয়ের আয়োজন পরবর্তীতে হবে। নিশান্ত সে প্রস্তাব শুরুতেই নাকচ করেছে। সে সরাসরি বিয়ে করে মেহযাবীনকে নিজের বাড়িতে তুলবে। এটিই তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তার সিদ্ধান্তকে যথার্থ বলে সম্মান জানিয়েছে দুই বাড়ির পুরুষ সদস্যরা। সুমা তাতে নাখোশ হলেও প্রতিবাদ করতে পারেননি। তবে পুরোপুরি স্বামী-ছেলের ওপর সবটা ছেড়েও দেননি। বিপদের ভয়ে বাকিসব ভাবনার দ্বারে খিল দেওয়া যাবে না। সোসাইটি, রিলেটিভস সবার দিক থেকেই আকস্মিক বিয়েটা প্রশ্নবিদ্ধ হতো। ছেলের বিয়ের আমেজেই মেয়ের বিয়ে হলে এ নিয়ে কানাঘুষা নিশ্চয়ই হবে। সুমা ক্লিন ইমেজের একজন মানুষ। শেখ বাড়ির সম্মানেও কোনোরূপ দাগ নেই। মেয়ের বিয়ে দিয়েও কোনো কন্ট্রোভার্সির জন্ম হতে দেবেন না। সুগার কিউবটা ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে ছেড়ে দিয়ে চামচ নাড়তে নাড়তে বললেন,
“তোমার সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিলাম। তবে আমারও একটা শর্ত তোমাকে মানতে হবে।”
নিশান্ত শিরদাঁড়া টানটান করে বসে আছে সুমার মুখোমুখি। সকালের শরীরচর্চা ফেলে হবু শাশুড়ির ডাকে তাকে ছুটে আসতে হয়েছে। তাদের অবস্থান এখন শেখ বাড়ির বাগানের পার্শ্ববর্তী ঘেসো মাঠে। সামনেই জলের ফোয়ারা থেকে অবিরত ঝরনাধারা নামছে। কলকল শব্দ কানে আরাম দেয়। শরীর জুড়ায় স্নিগ্ধ বাতাসে। তবুও খোলা আকাশের নিচে চায়ের আলাপটা যেন বড্ড গুমোট। নিশান্তের গম্ভীর চেহারার মাঝে স্থাপিত তীক্ষ্ণ চোখজোড়া বেশ বুঝতে পারছে সুমার মনে ভিন্ন কিছু চলছে। অবিচল কণ্ঠে জানতে চাইল,
“কীসের শর্ত, আন্টি?”
জাওয়াদ মৌন হয়ে দুজনের কথা শুনে চলেছে। সুমা চায়ের কাপটা নিশান্তের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“বিয়ে যেহেতু হবেই তাই আমি চাইছি না আপাতত তোমাদের বিয়ের খবর কোথাও ডিসক্লোজ হোক। রিসেপশন পার্টিতে বাগদানের ঘোষণা দেওয়া হবে। সকলে তাই জানবে। বিয়ের খবর দুই পরিবারের ভেতর সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।”
“সেটা কতদিন?”
“যতদিন আমার সকল সংশয় দূর না হচ্ছে। মিহা নিজেকে সামলে নিতে না পারছে। আর যতদিন না সমস্ত বিপদ কাটছে।”
জাওয়াদ ও নিশান্ত মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। দুজনের মাঝে কীসের ইশারা বিনিময় হলো সুমা ধরতে পারলেন না। সকালে চা খাওয়ার অভ্যাস নেই নিশান্তের। কসরতের পর ক্লান্ত শরীরের এনার্জি বুস্ট করতে প্রোটিন শেক বানায় নিজের হাতে। তাই সে নম্র ভঙ্গিতে চায়ের কাপ ফিরিয়ে দিলো। পালটা জবাবে বলল,
“সেক্ষেত্রে আমার প্রস্তাব থাকবে বিয়েটা আজই হয়ে যাক।”
সুমা বিস্মিত হলেন, “আজই কেন?”
“কারণ আগামীকাল থেকে অনুষ্ঠান শুরু। দুই বাড়ি ভরতি মানুষ থাকবে। এর মাঝে গোপনে আরেকটা বিয়ে সম্ভব হবে না। কারো না কারো মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে যাবে। রিসেপশনের পরেও সম্ভব নয়। আমি ব্যস্ত হয়ে যাব, জাওয়াদও চলে যাবে। আশাকরি বুঝতে পারছেন?”
সুমা বুঝলেন। মনে মনে ছেলেটির বুদ্ধির তারিফ করলেন। তবুও শঙ্কিত কণ্ঠে বললেন, “তোমার মায়ের মত নেই শুনলাম।”
“চিন্তা করবেন না, আন্টি। আমার মা এবং আপনার মেয়ে, দুজনেই সরল মনের মানুষ। একইসঙ্গে ভীষণ জেদি। একটু সময় প্রয়োজন। আশাকরি দুজনকেই সামলে নিতে পারব।”
আত্মবিশ্বাসের স্মিত হাসির সঙ্গে কথাগুলো বলে নিশান্ত উঠে দাঁড়াল। হবু শাশুড়িকে সালাম দিয়ে সে বেরিয়ে গেল। জাওয়াদ ওর পেছনে এসে পিঠে চাপড় দিয়ে বলল,
“বুক ফুলিয়ে বললি যে, আমাদের প্ল্যানের কী হবে? তারচেয়ে মাকে আমাকেই হ্যান্ডেল করতে দিতি।”
“বিয়ের প্ল্যানটা গতকাল রাতেই করে ফেলেছি। হাতে সময় কম। আজ থেকে এক্সিকিউট করতেই হতো। তোর মা আমার কাজ কমিয়ে দিলো।”
“একদিনের মাঝে আমার বোন আর তোর মা মেনে নেবে? এই দুজনকে কীভাবে সামলাব?”
নিশান্ত গাড়ির দরজা খুলে কালো রোদ চশমাটি চোখে এঁটে নিল। পিছু ফিরে এক পলক দোতলার বিস্তৃত বারান্দায় চোখ বুলিয়ে জবাব দিলো,
“দুই ঘাড়ত্যাড়াকে সামলানোর জন্য পুরো জীবন পড়ে আছে।”
মেহযাবীন যতক্ষণে নিশান্তের আগমনের সংবাদ পেয়েছে ততক্ষণে নিশান্তের গাড়িটা ড্রাইভওয়ে পেরিয়ে সড়কে উঠে গেছে। সে ক্ষুব্ধ হয়ে ম্যাসেজ করল,
“আপনি আমার সঙ্গে দেখা করলেন না কেন?”
“যেন তুমি আমার মাথা গরম না করাও।” স্টিয়ারিংয়ে একহাত রেখে অপরহাতে ত্যারচা জবাবের ম্যাসেজটা টাইপ করেও মুছে ফেলল সে। আজ সুনামি হয়ে গেলেও তার মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। মেহযাবীন যে এমনি এমনিই সেধে দেখা করতে চাইছে না তা সে ভালোই জানে। নিশ্চয়ই মনের মাঝে বিয়ে ভাঙার একশ একটা উপায় কিলবিল করছে। তাতে নিশান্তের মেজাজ নষ্ট হওয়া ছাড়া আর কিছুই হতো না। দ্বিতীয় ম্যাসেজটা এলো সঙ্গে সঙ্গে, “আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন?”
নিশান্ত লিখল,
“সম্পূর্ণ রাত পড়ে আছে। শুনব কত কথা বলতে চাও। তখন তুমি পালিয়ে বেড়িয়ো না।”
ম্যাসেজ দেখে যাবীন তাজ্জব বনে গেল। পুরো রাত মানে! কথাটার অর্থ সে বুঝল নাশতার টেবিলে বসে। বাবা, ভাই তাকে মাঝে বসিয়ে ছোটোবেলার সব খুনসুটি, আবেগঘন মুহূর্ত স্মরণ করিয়ে যাবীনের মনটাকে আবেগে টইটম্বুর করে এরপর জানাল আজই তার বিয়ে হবে। যাবীন বজ্রাহতের মতো মায়ের দিকে চাইল। সুমা তখন অত্যন্ত শান্ত ভঙ্গিতে টোস্ট করা ব্রেডে বাটার মাখাচ্ছিলেন। বাটারের ওপর অল্প করে টুটি-ফ্রুটি ছড়িয়ে দিয়ে মেয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“শান্ত হও, ভরসা রাখো। তোমার কাছে আর কোনো উপায় নেই।”
_______________
আফিয়া শান্ত হতে পারছেন না। বড়ো ছেলের আকস্মিক বিয়ের সংবাদ হজম করার আগেই যখন জানলেন আজই বিয়ে সম্পন্ন হবে তখন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। ছেলে যেহেতু সব সিদ্ধান্ত একাই নিচ্ছে, তার মতামতের কোনো দামই নেই তাহলে তিনি কেন শুনবেন ওদের কথা? নিজঘরে ঢুকে দরজা দিয়েছেন আফিয়া। সকালে রান্নাঘরেও ঢোকেননি। বাবুর্চিদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল আগেই। তারাই রান্নার দিকটা দেখছে। বাকিসব দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে উঠেছেন শিরীন। যার সংসার সে না থাকলে চলে! চাঁদনি বেগম বড়ো বউয়ের এই অবহেলা মানতে পারলেন না। ছেলের ওপর রাগ করে তিনি মেয়ের বিয়ের কাজকর্ম পণ্ড করবেন কেন! রেগে গিয়ে চ্যাঁচালেন,
“বাড়ির মেয়ের বিয়ে অথচ বড়ো বউ ঘরে দরজা আটকে বসে আছে। লোকের সামনে কী আমাদের সম্মান রাখবে না? শাওনের মামারা বাড়িতে আছে। তাদের দেখাবে জায়ের মেয়ের বিয়েতে তিনি হাত গুটিয়ে ঘরে দোর দিয়ে আছেন! এতই যদি অনীহা তাহলে আর বাড়িতে থাকা কেন? বিয়ের কটা দিন নাহয় বাপের বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসুক।”
কথাগুলো সুচের মতো বিঁধল গায়ে। আফিয়া দরজা খুলে সরাসরি নিচে নেমে গেলেন। শিরীনের হাতের কাজগুলো কেড়ে নিয়ে বললেন, “কোনো কাজ করতে হবে না তোদের। দাসীদেরও ছুটি আছে। আমি দাসীদেরও অধম তাই মরার আগেও কাজ করে যাব।”
শিরীন অসহায় বোধ করেন। নিশান্ত বাড়ি ফেরার পথে পারিবারিক ডাক্তারকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। সে খেয়াল করেছে গতকাল রাত থেকেই প্রেশার ওঠা-নামা করছে। মাকে প্রায় টেনে নিয়ে সোফায় বসাল সে। বলল,
“উৎসবপূর্ণ বাড়িতে কর্ত্রী অসুস্থ হওয়া মানে সকলের ভোগান্তি। আগে সুস্থ হও। পরে কাজ করবে।”
“হ্যাঁ, কাজই তো করে যাব জীবনভর। এ বাড়িতে আমি কাজ ছাড়া কেউ না। তোরা ভাবিস না। সব দায়িত্ব পালন করব।”
চাঁদনি বেগম বড়ো বউয়ের ত্যারচা কথা হজম করতে পারলেন না। বললেন, “নিশান্ত, তোর মাকে বলে দে সে যদি মেয়ে ভেবে শাওনের বিয়ের তদারকি করতে না পারে তাহলে তাকে দাসী হিসেবেও দয়া দেখাতে হবে না। আমার নাতনির জন্য কাজের লোকের অভাব হবে না।”
নিশান্ত ডাক্তারের সামনে কিছুই বলল না। প্রেসক্রিপশন বুঝে নিয়ে ডাক্তারকে বিদায় দিয়ে মাকে ঘরে নিয়ে গেল। খাটে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসল পাশে। ধীর সুরে বলল, “আমার রাগ সবার ওপর কেন ঝারছো তুমি?”
আফিয়া রেগেই জবাব দিলেন,
“আমি কারো ওপর রেগে নেই।”
“তাহলে এমন অদ্ভুত আচরণ কেন করছো? তুমি তো অবুঝের মতো আচরণ করো না। ছোটো চাচি করলে মানা যেত।”
“তোরা অদ্ভুত কাজ করলে সেটা গ্রহণযোগ্য। আমি করলেই মানা যায় না? সবকিছুতে তোদের ইচ্ছে, তোদের সুবিধা। আমার না আছে ইচ্ছে আর না মনমর্জি।”
আফিয়া উত্তেজিত ভঙ্গিতে শ্বাস নিচ্ছেন। নিশান্ত আলতো করে মায়ের মাথাটা বুকে চেপে ধরল। বলল,
“ঠিক আছে। তোমার মনমর্জিকেই প্রাধান্য দিলাম। বিয়ে করব না। শেখ বাড়িতে ফোন করে মানা করে দেব। বলব আমার মায়ের কনে পছন্দ হয়নি। এবার শান্ত হও। ভুলে যাও সব।”
চাঁদনি বেগম দুজনের কথোপকথন শুনতেই এসেছিলেন। নিশান্তের কথার লেজুর ধরে সঙ্গে যুক্ত করলেন,
“ভুলে গেলে চলবে না শেখ বাড়ির বউটা আমাদের বাড়িরই মেয়ে। আমরা ওদের সঙ্গে যেরূপ আচরণ করব ওরাও আমাদের মেয়ের সঙ্গে তেমন আচরণই করবে। আশরাফ কিন্তু সুলতানকে কথা দিয়ে এসেছে। এখন তোমরা মা-ছেলে যাই সিদ্ধান্ত নেবে না কেন সেটা পরোক্ষভাবে আমাদের মেয়ের ওপরই প্রভাব ফেলবে। বুদ্ধি, বিবেচনার চেয়ে মনমর্জিই যদি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয় তোমার কাছে তাহলে শোভার আচরণের সঙ্গে তোমার কোনো ফারাক দেখি না। সেক্ষেত্রে শোভাকে যেভাবে লাঠির ওপরে রাখি আজ থেকে তোমাকেও তাই রাখব।”
আফিয়া স্তম্ভিত হয়ে শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে রইলেন।
________________
যৌবনা দিবস ক্রমেই তারুণ্য হারিয়ে ম্লান হচ্ছে। বৃদ্ধার কুচকানো চামড়ার মতো বলিরেখা পড়েছে প্রকৃতিতে। ক্ষীণ দৃষ্টির মতোই ক্রমশ অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে চারপাশ। জমকালো শেখ বাড়িতে তখন নতুন এক সম্পর্কের সূচনা ঘটতে চলেছে। লিভিংরুমের সিলিংয়ে ঝুলে থাকা মস্ত ঝাড়বাতির নিচে আজ দুই পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের আনাগোনা।
সোফায় বসে থাকা স্বল্প সজ্জিত রমনীকে ঘিরে আছে সকলে। কাউকেই বিশেষ আনন্দিত মনে হচ্ছে না। একটি আড়ম্বরহীন, আমেজবিহীন বিয়ের সাক্ষী হতে সকলে উদগ্রীব। কিন্তু আসরে পাত্রের দেখা নেই। পাত্র ও তার মায়ের অনুপস্থিতি সকলের চিন্তার মূল কারণ হলেও বধূ বেশী কন্যাটি নির্লিপ্ত। ক্ষণে ক্ষণে তার চোখের কোলে জল উঁকি দিলেও প্রাণপনে সে নিজেকে সামলে নিচ্ছে। যেন বর্ষার প্রবল স্রোতের ধাক্কায় বেড়িবাঁধ বিপর্যস্ত হয়েও বন্যা রোধ করতে পেরেছে। কতক্ষণ পারবে জানা নেই। তার অঙ্গে একটি পেয়াজ রঙের শাড়ি। জমিনে রুপালি জরি সুতোর ফুলের ছাপ। শাড়িটা সে ভাইয়ের বিয়েতে পরার উপলক্ষেই কিনেছিল। নিজের বিয়েতে পরতে হবে কে জানত! অলংকার বলতে মায়ের দেওয়া একজোড়া হীরের কানের দুল ও লকেট। আশ্চর্যজনকভাবে তার সাদামাটা, স্নিগ্ধ সজ্জার সঙ্গে তা সুন্দর মিলে গেছে। হাতের দুগাছি চুড়ি ধরেবেধে পরানো গেছে চাঁদনি বেগমের নির্দেশে। কাজি এসে বসে আছেন বিয়ে পরাতে।
অনন্ত ও শোভাও এসেছে ভাইয়ের বিয়ের সাক্ষী হতে। পুরো আয়োজনে ওরা দুজনই হাসি-মজা করছে। শোভা হঠাৎ মাথায় হাত দিয়ে বলল, “ভাইয়া, তুমি আর আমি যে বঞ্চিত হলাম তা কী খেয়াল করেছো?”
অনন্ত আকাশ থেকে পড়ল, “বঞ্চিত! আর আমি! কে আমাকে অধিকার বঞ্চিত করল এক্ষুনি বল। মানবাধিকার আইনে মামলা দেব।”
শোভা দুঃখী কণ্ঠে বলল, “বড়ো ভাইয়া বউ পেল শেখ বাড়ি থেকে, আপুও বর পেল শেখ বাড়ি থেকে। তোমার আর আমার জন্য শেখ বাড়িতে কেউ অবশিষ্ট রইল না। এ আমাদের সঙ্গে অন্যায় হলো কিনা?”
অনন্ত বিজ্ঞের মতো ঘাড় হেলিয়ে বলল, “অবশ্যই। আংকেল আন্টি আর দুটো ছেলে-মেয়ে বেশি নিতে পারলেন না? তাহলেই তো কষ্ট করে আর আমাদের দুটোর জন্য বর-কনে খোঁজা লাগত না। আংকেল, আন্টিকে পরিবার পরিকল্পনা কে নিতে বলেছিন শুনি? ইশ! শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে গেল।”
যাবীন কটমট করে চাইল। অনন্তের তাতে বিকার হলো না। বলে চলল, “ব্যাপার নাহ! তোর জন্য দেবর যৌতুক প্রথা চালু করা হলো। শ্বশুর বাড়িতে সুখে থাকতে হলে তোর বাবাকে বলবি আমাকে একটা লেটেস্ট মডেলের বাইক, দুটো রোলেক্সের ঘড়ি আর নিউ ভার্সনের আইফোন দিতে। বেশি না, অল্পই চাইলাম। আমি আবার লোভ করি না। বাই দ্য ওয়ে, আমি তোকে ভাবি-টাবি ডাকতে পারব না। আমার শরম লাগে।”
মেহযাবীন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে চলেই যেতে চাইছিল। এমন সময় নিশান্তের বিএমডব্লিউ এসে থাকল ড্রাইভওয়েতে। দেখা গেল নিশান্ত ও আফিয়া একসঙ্গেই এসেছেন। সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত নিশান্ত সদর দরজায় পা দিতেই মেহযাবীনের বুকের ভেতরটা ধড়াস করে উঠল। কে যেন কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“শেষ, সব শেষ! ওই মিলিটারির কবলে আজ থেকে তোর সকল সুখের দি এন্ড হতে চলেছে রে!”
চলবে…