অসম্ভবেও আমার তুমি নুসরাত সুলতানা সেজুথি পর্ব–০৬

0
449

#অসম্ভবেও আমার তুমি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–০৬

ধীর গতিতে নরম পায়ে হেটে সামনের টিন বেষ্টিত চালা ঘরটির দিকে এগোয় স্নিগ্ধা। এটাই তার বাড়ি,,,ঠিক অনেকটা কুড়ে ঘরের মতো।কোথাও টিনে জং ধরেছে, কোথাও বা গাছের শুকনো পাতা,, মুরমুরে ডালপালা খসে পরে ছিদ্র করেছে কালচে রংয়ের টিন গুলোকে।

স্নিগ্ধার চোখের পাতা গুলো মৃদূ কাঁপছে। বিকল লাগছে মস্তিষ্ক।
এতক্ষনের এত আনন্দ এত উচ্ছ্বাস কোনও টাই আর নিজের মাঝে হাতড়ে পাচ্ছেনা।
সব দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে ,, আবরারের ওই একটা কথায়। অন্তত নিজের ভালো থাকার জন্যে, নিজের খুশি থাকার জন্যে কাছের মানুষ গুলোকে বিপদে ফেলার মত স্বার্থপর মেয়ে সে নয়,,,বরং ভালোবাসার মানুষদের ভালো রাখতে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনে ঝাঁপ দিতেও দুবার ভাববেনা,,,আর আবরার তো সেখানে কিছুই নয়।
আচ্ছা এই আবরার মানুষ টা এমন কেন..??এতোটা স্বার্থপর, সুবিধাবাদি,,আজকের পর থেকে আবরারের প্রতি ঘৃনার মাত্রা টা আরো বাড়লো স্নিগ্ধার। দুজন নারীকে এক সাথে জীবনে বর্তমান রাখছে আবরার নামের ধুরন্ধর লোকটা। কাউকেই মুক্তি দিচ্ছেনা। কাউকেই নাহ। নাহ তাকে আর না তার প্রথম স্ত্রী তনয়াকে,,, মুক্তি নিতে চাইলেও আরো জাপটে ধরছে,, আরো আরো।
__________________________________

মজিদ মাত্রই গলায় গামছা ঝুলিয়ে বেরিয়েছেন ঘর থেকে ,সামনের দিকে চোখ যেতেই খুশিতে আলোকিত হয়ে এলো তার মুখমণ্ডল। অতি আদরের কলিজার টুকরো এগিয়ে আসছে তার।মজিদ দ্রুত পায়ে এগোলেন মেয়ের দিকে,,, মেয়ের কাছে আসতেই চোখ ছলছল করে উঠলো তার,,,
ভাঙা গলায় ডেকে ওঠেন,,
— মা রে তুই এসছিস??

বাবার ডাকে ভাবনার সুতোয় টান পরে স্নিগ্ধার,,স্বাভাবিক হুশ ফিরে পায়। তড়িৎ গতিতে ঘাড় বাকিয়ে সেদিকে তাকায়। বাবাকে দেখতেই কোটর ভর্তি পানিতে মুখে হাসি ফোটে স্নিগ্ধার,,চাপা ঠোঁটে কেঁদে ঝাপিয়ে পরে বাবার বুকে।
মেয়েকে পরম মমতায় বুকে আগলে নেন মজিদ,,,কান্নায় ভেঙে পরেন তিনিও,,কোঁচকানো চামড়া যুক্ত হাতে মেয়ের মাথায় হাত বোলান।
ধরে আসা গলায় বলেন,,
— মনে হচ্ছে কত্ত গুলো দিন পর দেখলাম তোকে,,,,

স্নিগ্ধা হাউমাউ করে কাঁদে,,,চোখে ভাসে বিয়ের আগে বাবার বাড়িতে হইহই করে কাটানো মুহুর্ত গুলো,,,বিকেলে উঠোনে বোনের সাথে কানামাছি খেলা,,মায়ের সাথে কাজে ফাকি দেয়া,রাতের বেলা বাবার হাতে খাওয়া নিয়ে দুবোনের ঝগডা করা,, সব কিছু এখন বিয়ের সাথে সাথে তিমিরে তলিয়েছে,,,

“”” আচ্ছা মেয়েদের জীবন এমন কেন?? মরার আগ পর্যন্ত কেন বাবার বুকে থাকতে পারেনা? কই ছেলেদের তো যেতে হয়না? তাদের ঘর ছেড়ে সম্পূর্ন নতুন জায়গায় গিয়ে নতুন করে বাড়ি সাজাতে হয়না,,,সব কষ্ট কেন মেয়েদের বেলায়,,কেন এত ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয় তাদের।কেন??

আওয়াজ পেয়ে ঘর ছেড়ে বের হয় স্নিগ্ধার বারো বছর বয়সী বোন নিতু,
বাবার বুকে স্নিগ্ধাকে দেখা মাত্রই মুখে হাসির রেখা জ্বলজ্বল করে ওঠে তার। আনন্দ ধ্বনি নিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগে,
— বুবু এসছে,,ওমা বের হও বুবু এসছে মা,

পুরোনো সুতির কাপড় মাথায় টেনে বের হন মিনা। ততক্ষনে বাবা বোনের দিকে ছুট লাগায় নিতু।
মিনা ও এগিয়ে আসেন দ্রুত পায়ে।
মা– বোন কে দেখে মাথা তোলে স্নিগ্ধা। কান্নাভেজা চোখে মায়ের দিকে তাকায়,,,মেয়ের মুখ দুহাতের আজোলে নেন মিনা। চোখ ভরে দেখতে লাগে।
স্নিগ্ধা অস্পষ্ট গলায় ডাকে,
— মা….!
ডুকরে কেঁদে উঠে মেয়েকে একিভাবে বুকের সাথে মিশিয়ে নেন মিনা। মজিদ চোখ মোছেন গলায় ঝোলানো গামছার প্রান্ত উঠিয়ে,,,মায়ের বুকে থেকেই
বোনের দিকে এক হাত বাড়ায় স্নিগ্ধা। নিতু এগোলেই তিনজন একিসাথে জড়িয়ে কাঁদে,,, হাউমাউ করে কাঁদে।
মজিদের মুখে হাসি ফোটে,, এগিয়ে এসে বলে,
— হয়েছে হয়েছে,আর কত কাঁদবে মিনু,মেয়েটাকে ছাড়ো এবার।
চোখ মুছে হাত ঢিলে করেন মিনু। স্নিগ্ধা মাথা তোলে,,,
বাবা মা,বোনের দিকে তাকিয়ে অধীর গলায় প্রশ্ন করে,,
— তোমরা কেমন আছো আমাকে ছাড়া?? খুব ভালো তাইনা?? আমি একটুও ভালো নেই মা,,,তোমাদের কথা খুব মনে পরে আমার,, খুব।

স্নিগ্ধার কথায় মৃদূ হাসেন মজিদ,,মিনা। আপাদমস্তক মেয়েকে দেখেন,গায়ের দামি শাড়ি,,গা ভর্তি স্বর্ন,,,পরিপাটি স্বাজসজ্জায় মেয়েকে একদম রাজরানীর মত মনে হয় তাদের। দুজনের চোখই জুড়িয়ে আসে,,,মেয়ে তাদের সুখেই আছে এটাইতো ওপর ওয়ালার অশেষ রহমত।
মায়ের হাসি দেখে মুখ ফোলায় স্নিগ্ধা। প্রশ্ন করে,
— আমি কি তোমাদের বাড়িতে অনেক বেশি খাবার খাচ্ছিলাম?? আমাকে এতো তাড়াতাড়ি বিদেয় করলে যে,,,
মজিদ পাশে দাড়িয়ে মেয়ের চুলে হাত বুলিয়ে বলেন,
— বোকা মেয়ের কথা শোনো,,,মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছিস সারাজীবন কি আর বাবার বাড়ি থাকা যায় রে মা? তাছাড়া,,,
এত ভালো জামাই কি আর আমরা পেতাম রে ?? সেজন্যেইতো,,
এটুকু বলে থামে মজিদ,,রাস্তার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে আবার মেয়ের দিকে তাকায় ,,অসহ গলায় প্রশ্ন করে,,
— জামাই আসেনিরে মা..?? তুই কি একাই এলি,,
মিনাও একই প্রশ্নের উত্তর নিতে কৌতুহলী হয়ে তাকায়,,
স্নিগ্ধা মুখটা গম্ভীর করে জবাব দেয়,
— না আসেনি,,আমাকে নামিয়ে দিয়ে গেছে,,
মজিদের মুখ টা ছোট হয়ে আসে,,,পাশ থেকে মিনা ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বলে ওঠে,
— উনি হলেন গিয়ে আমাদের মালিক,,,মেয়ের জামাই সেতো কপালের জোরে হয়েছে,,,মালিক হয়ে কি আর বাগানের মালির ঘরে পা দেবে গো..? তুমিও কিসব প্রশ্ন করো না।
মজিদ আর কথা তোলেনা এ নিয়ে,,মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে,,,
তাও মেয়েটাকে দিয়ে গেছে এই ঢেড়।
স্নিগ্ধা মায়ের কথায় ভ্রু বাকায়,,,ব্যস্ত গলায় বলে,
— না,এরকম নয়,উনি রাতে আসবেন বলেছেন।
অবাক হয়ে তাকায় মিনা মজিদ দুজনেই,,,,
তবে কিছু বলার আগেই চট করে নিতু বলে ওঠে,
— তোমরা কি বুবু কে বাইরেই দাড় করিয়ে রাখবে নাকি?? ভেতরে নিয়ে আসবেনা?
টনক নড়ে সবার,,
মিনা তাড়াহুড়ো করে বলে ওঠে,
— ওহ হ্যা হ্যা,,আয় মা,,আয় ভেতরে আয়।

,,
,,

জোঁনাকি পোকার পাখাগুলো ক্ষীন আলো ছড়াচ্ছে,,,দূরের ধান ক্ষেত থেকে ভেসে আসছে শিয়াল ডাকার ভূতূড়ে শব্দ,,,ঝিঁঝি পোকার কিচিমিচির ডাক কেমন অদ্ভূত অদ্ভুত শোনাচ্ছে এখন,,
নিস্তব্ধ এমন কোলাহলের মধ্যে আবরারের গাড়ি ব্রেক কষার শব্দ টা একটু বেশিই উৎকট শোনালো,,হন্তদন্ত হয়ে চার্জারের আলো জ্বেলে বেরিয়ে এলো মজিদ। এই গ্রামে গাড়ি একমাত্র আবরার ছাড়া কারই বা হবে,,,এমন ভাবনা নিয়েই ঘর ছেড়ে এগিয়ে আসেন তিনি।
দরজা খুলে আবরার কে বের হতে দেখে হাসি ফোটে মজিদের মুখে,,মেরুন রংয়ের শার্ট আটশাট হয়ে আছে আবরারের পড়নে,,,বেশ লাগছে দেখতে। তার মত গরিবের ঘরে স্নিগ্ধা যেমন চাঁদের কনা, আবরার মেয়ের জামাই হিসেবে একেবারে আস্তো একটা চাঁদ।

স্বাভাবিক মুখে মজিদের দিকে এগিয়ে আসে আবরার। মজিদ বিনম্র ব্যাস্ত গলায় বলে,,
— সাহেব আপনি আমার বাড়িতে আসবেন,আমিতো বুঝতেই পারিনি।আসুন সাহেব ভেতরে আসুন,,
পকেটে হাত গোজে আবিরার। সহজ গলায় উত্তর দেয়,
— আসতেতো হতোই মজিদ,,তোমার কাছে আমার দামি জিনিস রয়ে গেছে যে,
,,সাহবের কোন দামী জিনিস আমার কাছে?? কথার মানে বোধগম্য হয়না মজিদের । ফ্যাল ফ্যাল করে কিছুক্ষন আবরারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে মজিদ।
আবরার এবার গাড়ির দিকে চোখ ইশারা করে বললো,
— গাড়ির ডিকিতে কিছু জিনিস
আছে,কাউকে ডাকো,, নামাতে হবে।

,
,
,

সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে গেলে কাঠের ফ্রেমের সাথে মাথায় বাড়ি খায় আবরার।
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধা ফিক করে হেসে ওঠে তাতে,,,বিদ্রুপ করে বলে,
— এটা আপনার বাড়ির দরজা নয়,,যে আকাশের দিকে চোখ রেখেও ঢোকা যাবে,এখানে চোখ টা মাটির দিকে রেখে ঢুকতে হয়,তা নাহলে এভাবেই শাস্তি পেতে হয়।
আবরার গুম ধরে থাকলেও মজিদ জ্বিভ কাটেন মেয়ের কথা শুনে,,মিনা ভয়ে ভয়ে তাকান স্বামীর দিকে, কোনও উওর না দিয়ে এবার মাথাটা কে হাল্কা নিচু করেই ভেতরে ঢোকে আবরার।

ঘরের ভেতর যাওয়া মাত্রই ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পরে স্নিগ্ধার বাবা মা। জামাই কে পালঙ্কে বসাবে নাকি মাথায় বসাবে জায়গা খুজে পাচ্ছেন না তারা। স্নিগ্ধা বাবা মায়ের এমন আদিক্ষেতা দেখে মুখ ভ্যাঙচায়,বিরক্ত হয়।

শুকনো পরিষ্কার টুকরো কাপড় দিয়ে পুরোনো কাঠের চেয়ার টা মুছে দেয় নিতু,,আবরার কোনও রকম বসতেই ক্যাত করে শব্দ হয় তাতে। আচমকা ব্যাপারটায় লাফিয়ে উঠে দাড়ায় আবরার। এবার নিতু স্নিগ্ধা দুজনেই শব্দ করে হেসে ফেলে।
আবরার স্নিগ্ধার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়। মিনা পেছন থেকে মেয়েদের মুখে আঙুল দিয়ে ইশারা করেন চুপ থাকতে।
কিন্তু মাথা নিচু করে নিয়ে মুখ চেপে হাসতে থাকে স্নিগ্ধা।আবরারের কাচুমাচু মুখ ভারি মজা দিচ্ছে তাকে।

বেশ বেগ নিয়ে চেয়ারে বসেছে আবরার।
তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে মজিদ,মিনা,, তার থেকে একটু দূরে স্নিগ্ধা আর স্নিগ্ধার পাশেই নিতু।
টেবিলের ওপর একের পর জিনিস পত্র রেখে যাচ্ছেন দুজন লোক। মজিদের প্রতিবেশী দুজন। অনেক গুলো শপিং ব্যাগ,,,, তার সাথে চারটে বড় ব্যাগ ভর্তি বড় বড় মাছ,গরুর মাংস,,আর কাঁচা বাজার দিয়ে।
এসব দেখে নিতুর কিশোরী মনে ভারী আনন্দ হচ্ছে। অনেক দিন পর ভালো মন্দ খাওয়া হবে কিনা।

মুখ গোমড়া করে আছে স্নিগ্ধা,,আবরারের এত আয়োজন কে তার বাবার গরিবত্বকে অপমান করা বৈ কিছুই বোধ হচ্ছেনা।
আবরারের মুখের ওপর কথা বলেনা মজিদ,,,মিনাও দাড়িয়ে থাকে চুপচাপ,, তবে ভারী লজ্জ্বাবোধ হতে লাগে।
সব গুলো জিনিস পত্র রাখা শেষ হলে লোক দুজন কে মানিব্যাগ থেকে দুটো হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দেয় আবরার। নতজানু হয়ে বেরিয়ে যান তারা। দরজায় খিল দেয় নিতু,,দৌড়ে আসে আবরারের দিকে, উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,
— ছোট সাহেব এগুলো সব কি আমাদের?
আবরার মুচকি হেসে নিতুর দিকে তাকায়,,,জবাব দেয়,
— তোমাার আমাকে সাহেব বলে ডাকার দরকার নেই নিতু,,,তুমি আমাকে ভাইয়া বলতে পারো,,তুমি যেমন আমার একমাত্র শালী,, আমিও তোমার একমাত্র দুলাভাই তাইনা..??
আবরারের জবাবে নিতু আনন্দ ধ্বনি নিয়ে বলে,
— ভাইয়া আপনি খুব ভালো,,,অনেক ভালো।
জবাবে আবরার বাকা ঠোঁটে হাসে। আর কাপড় রাখা শপিং ব্যাগ গুলো নেড়েচেড়ে দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পরে নিতু।

মজিদ এগিয়ে আসে আবরারের দিকে,,আস্তে করে বলে,
— সাহেব এগুলোর কি দরকার ছিলো,,,,আমি আমার সাধ্য মত চেষ্টা করতাম,,,আপনাকে….
আবরার ভ্রু কুঁচকে তাকায়,,
— এগুলো আমি আমার জন্যে এনেছি কে বললো,এগুলো তোমাদের জন্যে,,
মজিদ ইতস্তত ভাবে জবাব দেয়,
—- কিন্তু..??
মাঝপথে থামিয়ে দেয় আবরার,
— এতো কিন্তু কিন্তু করোনা মজিদ,,,মেয়ের জামাই হিসেবে এনেছি এগুলো,তোমাদের মালিক হিসেবে নয়।
এরপর আর কথা বাড়ায়না মজিদ।
বাজার ভর্তি ব্যাগ গুলো দেখিয়ে মিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
— এগুলো নিয়ে যাও,,সাহেবের জন্যে কয়েক পদ রান্না করো এখান থেকে,
এরপর নিতুর দিকে তাকায় মজিদ,,,
মৃদূ ধমকে বলে,
— এই নিতু,পরে দেখিস এগুলো, মায়ের সাথে যা সাহায্য কর গিয়ে,
নিতু মাথা নেড়ে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে এগোতে নিলে আবরারের দৃঢ় আওয়াজে কদম থামায়।
— আমি তো বললাম,আমি এসব আমার জন্যে নয়,তোমাদের জন্যে এনেছি। আর আমি এখন কিছুই খাবোনা,,,রাত অনেক হয়ে এসছে আমাকে বের হতে হবে স্নিগ্ধাকে নিয়ে,,

আবরারের কথায় মজিদ মিনা দুজনেই চমকে যান , নিতুর ও মুখ কালো হয়ে আসে বোন চলে যাওয়ার কথা শোনাতে,,,তবে কেউ কিছু বলার আগে স্নিগ্ধা তেঁতে উঠে বললো,

— ও তার মানে এটাই হচ্ছে আসল কথা,,,এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলে এটা বললেই পারেন যে আমরা গরিব বলে আমাদের বাড়িতে বসতেও আপনার রুচিতে বাধছে,খাওয়া দাওয়া তো দূরের ব্যাপার তাইনা,,

মেয়ের এমন ব্যাবহার এ হতভম্ব হয়ে যায় মজিদ,,ক্ষনে ক্ষনে ভয় নিয়ে আবরারের মুখের দিকে তাকায়,,,
মিনা ধমকে ওঠেন স্নিগ্ধাকে,,
— তুই ওনার সাথে এভাবে কেন কথা বলছিস,কি অসভ্যতা এগুলো?? স্বামীর সাথে এভাবে কেউ কথা বলে?
চুপ করে যায় স্নিগ্ধা,,নাক মুখ কুচকে তাকায় আবরারের দিকে, আবরার ঠোঁট বাকিয়ে নিশব্দে হাসছে। এমন হাসিতে জ্বালা ধরে যায় স্নিগ্ধার গায়ে। তবুও বাবা মায়ের সামনে আর কথা তোলেনা সে।
অন্যদিকে মজিদ বিনীত ভাবে বলে,
— সাহেব,ও ছেলে মানুষ, আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।
আবরার একিভাবে হাসে।স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়,
— আমি কিছু মনে করিনি,, বিড়াল পোষ মানাতে গেলে একটু আকটু আচঁড়ের দাগ তো সহ্য করতেই হবে।
শেষের কথা স্নিগ্ধা ব্যাতিত কারোরই মাথায় ঢোকেনা।স্নিগ্ধা আবরারের দিকে তাকিয়ে মুখ ভ্যাঙচায়,,, মনে মনে ভাবে,,
— যখন কামড়ে ছাল তুলে দেবো তখন বুঝবেন বিড়াল কত সাংঘাতিক হতে পারে।

আবরারের কথা নিয়ে খুব বেশি না ভেবে মজিদ পুনরায় বলে,
— বলছিলাম কি সাহেব আজকের রাত টা যদি থেকে যেতেন,না মানে মেয়েটা আজই এলোতো…!!

আবরার মজিদের দিকে তাকায়,শান্ত ভাবে জবাব দেয়,
— আমার রাতে বাঙলো তে কিছু কাজ আছে মজিদ,,যাওয়া টা দরকার,,আর কাল সকালে ওখান থেকেই রওনা দেবো,তাই জন্যেই তোমাদের মেয়েকে নিতে হচ্ছে,, আর কোনও প্রশ্ন??
বিনম্র ভাবে মাথা ঝাকান মজিদ।যার অর্থ ” আর কোনও কথা নেই তার”
কোনও উপায় না পেয়ে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নেয় স্নিগ্ধা।
বাজারের ব্যাগ হাত নিয়েই দাঁড়িয়ে থাকে নিতু।মুখে কালো মেঘ জমেছে তার,,ভেবেছিলো আজ রাতে বোনের সাথে খুনশুটিতে মাতবে,সেসব আর হচ্ছেনা।
নিতু আবরারের দিকে তাকায়,,,উদ্বেজিত গলায় প্রশ্ন ছোড়ে,,
— ভাইয়া বুবু আবার কবে আসবে?
আবরার শিথিল হেসে উত্তর দিলো,
— যখনি তুমি চাইবে। তাছাড়া তুমি চাইলে তোমার মা বাবা কে নিয়ে তোমার বোনের কাছেও যেতে পারবে,,,
আনন্দে মাথা নাড়ে নিতু। মুখে মেঘের ঘনঘটা দূর হয় তার। মনে শান্তি পায় মজিদের সাথে সাথে মিনাও।

,,
,,

বাঙলোর পেছন দিকের কামড়া আবরারের জন্যে বরাদ্দ। প্রত্যেক বার আবরার আসার আগে আগে কাজের লোক গুলো পরিপাটি করে রাখে সব, ,আজকেও এর ব্যাতিক্রম কিছু হয়নি। এত বড় বাঙলোর মধ্যে আবরারের এই কামড়াটা বেশি পছন্দের কারনে সে এখানেই থাকে। এর অবশ্য আরেকটি কারন রুমের বারান্দাটা,,,যেখান থেকে গ্রামের ধান ক্ষেত পেরিয়ে নদীটা দেখা যায়।যদিও ক্ষীন আরো অস্পষ্ট।
আর সেদিকেই চোখ রেখে মুখ ভাড় করে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধা। বাড়ি থেকে আসার আগেও বাবা মা আর বোন কে জড়িয়ে খুব কেঁদেছে,,যার রেশ এখনও কাটেনি।
বারান্দার গ্রীল ছুয়ে যাওয়া ঠান্ডা বাতাসে হাল্কা শীত শীত অনুভূত হতে থাকে তার,কিন্তু ভেতরে যেতে ইচ্ছে করেনা। স্তম্ভের মতো ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে তাই।
আচমকা পেছন থেকে স্নিগ্ধার গায়ে চাঁদর জড়িয়ে দিলো আবরার। ঘাবড়ে গিয়ে পিছু ফিরলো স্নিগ্ধা।আবরার কে দেখে সামনে ফিরলো আবারও। গায়ের চাঁদর টাকে টেনে আরেকটু ভালোভাবে পেঁচিয়ে নিলো গায়ের সাথে,, মৃদূ গলায় বললো,
— ধন্যবাদ।
আবরার ঘুরে এসে দাড়ালো।
গ্রিলের সাথে হেলান দিতে দিতে দুষ্ট হেসে বললো,
— ধন্যবাদ না দিয়ে যদি চাঁদর টার মতো আমাকেও জড়িয়ে নিতে তবে বেশি খুশি হতাম।
মেজাজ খারাপ হয় স্নিগ্ধার। একেবারে তেঁতো স্বাদের অনুভূতি হয়। কিন্তু মুখে কিছু না বলে আবরারের মুখের দিকে তাকায়,,মনে মনে প্রশ্ন করে,
— আচ্ছা,বাবা কি জানে.. এই লোকের প্রথম স্ত্রীর কথা,, .??
,,
______________________________

দুপুর বারোটা নাগাদ স্নিগ্ধাকে নিয়ে গন্তব্যে পৌছায় আবরার । কলিং বেল বাজালে দরজা খুলে দেয় সার্ভেন্ট,,সরে দাড়ায় সামনে থেকে।
স্নিগ্ধার হাত আকড়ে ভেতরে আসে আবরার। তনয়া সোফার হাতল ধরে দেয়াল ঘেঁষে দাড়ানো,,
একজন গাট্টাগোট্টা দেহের ব্যাক্তি বসে আছেন সেই সোফাতে, দুজন কোনও এক বিষয়ের আলাপে ভীষণ মনোযোগী।

আবরার আসার শব্দ পেয়ে তনয়ার সাথে সাথে ফিরে তাকায় আগন্তুক। অবাক হয়ে তাকায় আবরার। পায়ের কদম থামিয়ে
স্নিগ্ধার হাত ছেড়ে দাড়ায়,,,
উদ্বেগ নিয়ে প্রশ্ন করে?
— আপনি?
আগুন চোখ নিয়ে উঠে এসে দুহাত দিয়ে আবরারের বুকে ধাক্কা মারে আগন্তুক। কয়েক কদম পিছিয়ে যায় আবরার। হকচকিয়ে যায় তনয়া,,ভয়ে সিটিয়ে পরে স্নিগ্ধা।
আবরার লোকটির দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে কিছু বলতে নিলেও আবরারের কলার চেপে ধরেন তিনি।
ক্রূদ্ধ স্বরে বলেন,
— তোমার এত বড় সাহস তুমি আমার মেয়েকে ঠকিয়েছো??

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here