#অসম্ভবেও আমার তুমি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–০৮
আপনি আমার বাবাকে দিয়ে টাকা পাঠিয়েছিলেন,,সেটা ফেরত দিতে এসছি।
চিকন মেয়েলী গলার আওয়াজে পেছন ফিরে তাকায় আবরার,,,দরজার ওপাশের ব্যাক্তিকে দেখতেই কিছু মুহুর্তের জন্যে সময় ওখানেই থমকে আসে তার।
কাধের দু পাশে দুটো বেনুনী ঝুলিয়ে পড়নে সুতির থ্রিপিসে হালকা পাতলা গড়নে দাড়িয়ে আছে একটি মেয়ে।মেয়েটিকে অতি পরিচিত মনে হয় আবরারের।
মনে পড়ে,, কদিন আগেই গাড়ির জানলার কাঁচ নামিয়ে মুগ্ধ চোখে দেখা সেই মেয়ের কথা।
“”হ্যা এইতো সেই মেয়ে,,দুদিন আগে যাকে আমি দেখেছি,এক ধ্যানে দেখেছি,,,অভিবূত হয়েছি যার রুপে,,,আটকে গিয়েছি কয়েক ক্ষনের জন্যে,,,এটাই তো সেই পরি।
আবরারের চাহনী দেখে মেয়েটি অস্বস্তি বোধ করে,,,গলা খাকাড়ি দিয়ে কেশে ওঠে। টনক নড়ে আবরারের।
এবার ধীর কদম ফেলে মেয়েটির দিকে এগিয়ে আসে আবরার। মুখোমুখি দাড়ায় মেয়েটির,শীতল চাহনীতে প্রশ্ন করে,
— তুমি…??
মেয়েটি চোখ নামিয়ে নিয়ে মৃদূ গলায় উত্তর দেয়,
— আমি স্নিগ্ধা। আপনাদের মালি মজিদ হোসাইনের মেয়ে,,,
কথাটা শুনতেই ভ্রু গুলো কুঁচকে নেয় আবরার। মজিদের মতো মালির ঘরে এত সুন্দরী মেয়ে?? অনেক টা পানা পুকুরে পদ্ম ফোটার মতো।
স্নিগ্ধা আবরারের দিকে তাকায়,,,
কোনও রকম সাহস সঞ্চয় করে হাত বাড়িয়ে হাতের মুঠোটা মেলে ধরে আবরারের সামনে,,, স্নিগ্ধার মুখ থেকে চোখ সরিয়ে আবরার সেদিকে তাকায়।স্নিগ্ধা মৃদূ গলায় বলে
— টাকা টা রাখুন।
আবরার স্বাভাবিক গলায় বললো,
— কেন?
স্নিগ্ধা ইতস্তত করে বলে ওঠে,
— বাবার কাছে শুনেছিলাম আপনি এই গ্রামে প্রথম বার এসছেন,,তাই আপনার স্বাগত জানাতে খুব যত্ন করে একটা মালা বানিয়ে দিয়েছিলাম আমি,,,তার বিনিময়ে টাকা কেন নেবো? এটা আপনিই রেখে দিন,আমি কাজের পুরষ্কার চাইনা।
আবরার একিভাবে তাকিয়ে থাকে,,,আবরারের দিক থেকে কোনও রুপ সাড়া না পেয়ে স্নিগ্ধা আবারও নিজে থেকেই বলে ওঠে,,
— আপনি কিছু মনে করবেন না,,আসলে আমি,,আমি আসলে,,
আবরার ঠান্ডাস্বরে জিজ্ঞেস করে,
— তোমার বাবা জানেন তুমি আমাকে টাকা ফেরত দিতে এসছো?
স্নিগ্ধা সামান্য মাথা দোলায়,,যার অর্থ হ্যা”
আবরার কপাল কুঁচকে নিয়ে বললো,
— উনি পাঠিয়েছেন তোমায়?
স্নিগ্ধা এবার দুদিকে মাথা নাড়ায়,যার অর্থ না”
পরক্ষনে স্নিগ্ধা মৃদূ গলায় বলে ওঠে,
— আসলে বাবা আপনার সামনে এসে টাকা দিতে ইতস্তত করছিলেন তাই আমিই…
আবরার মুচকি হেসে স্নিগ্ধার মেলে ধরা হাতে হাত ছোয়ায় নিজের। স্নিগ্ধার নরম হাতের আঙুল গুলোকে মুঠো করে দেয়,,,ব্যাপারটা তে চোখে মুখে এক রাশ জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকায় স্নিগ্ধা।
আবরার শান্ত গলায় বলে,
— এটা আমি তোমার কাজের বিনিময়ে দিলেও এখন তোমাকে উপহার দিচ্ছি,ঠিক যেভাবে তুমি বেলী ফুলের মালা দিয়েছিলে আমায়,সেরকম।
আশা করি এবার নিতে অসুবিধে হবেনা তোমার..?
স্নিগ্ধা নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে খানিক্ষন ভাবে,,আবারো আবরারের দিকে তাকায়। আবরার ভ্রু নাঁচিয়ে বলে ওঠে,
— এত কি ভাবছো?? কারো উপহার নিতে এতটা ভাবতে হয় নাকি..?
স্নিগ্ধা অধীর গলায় বলে,
— কিন্তু..??
— কারো মুখের ওপর উপহার ফিরিয়ে দিতে নেই কিন্তু,
আবরারে কথায় এবার ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে স্নিগ্ধা। মুহুর্তেই ধুক করে আঘাত হানে আবরারের বুকের বাম দিকটায়। কয়েক দফার জন্যে হারিয়ে ফেলে নিজেকে।মন মস্তিষ্ক জুড়ে স্রোত বইতে থাকে একটা কথার,,
ইশ!কি সুন্দর হাসি….!!
স্নিগ্ধা এবার ধীর গলায় বললো
— ঠিক আছে,উপহার নিতে আমার অসুবিধে নেই,,টাকা টা আমি রাখছি।
আবরার ঠোঁট বাকা করে বলে,
— বাহ! ভেরী গুড গার্ল!
— এবার আমি আসি তাহলে,,
স্নিগ্ধা উল্টো ঘুরে সামনের দিকে পা বাড়ায়। এগিয়ে যাবে এর আগেই পেছন থেকে ডেকে ওঠে আবরার।
— শোনো..??
স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা নিয়ে পিছু ফিরে তাকায়।
— বলুন।
আবরার ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় জ্বিভ দিয়ে,,,বলে ওঠে,
— আমিতো গ্রামে প্রথম বার এসছি। তুমি কি তোমাদের গ্রাম টা আমাকে একটু ঘুরিয়ে দেখাবে?
স্নিগ্ধার প্রথম দফায় অবাক লাগে,,পরক্ষনে মুচকি হেসে জবাব দিলো,
— আপনি এই গ্রামের জমিদারের ছেলে,,,আমি আপনাকে গ্রাম
ঘুরিয়ে দেখাবো?? এটা সম্ভব?
আবরার পকেটে দু হাত গুজে দাড়ায়,, উদ্বেগ হীন গলায় বললো,
— জমিদারের ছেলেকে যে টাকা ফেরত দিতে আসতে পারে,সে এটাও পারবে।
স্নিগ্ধা নিচের দিকে তাকিয়ে নিশব্দে হাসে,,,আবরার চোখ ভরে দেখে নেয় সেই হাসি।
পরক্ষণেই স্নিগ্ধা ব্যাস্ত গলায় বলে ওঠে,
— আজ পারবোনা৷ আজ আমার অনেক কাজ বাড়িতে,,,
আবিরার ভ্রু কুঁচকে বললো,
— কি কাজ?
— বাবা ঘরের চাল পাল্টাবে,,,সব চাল ছিদ্র হয়ে বৃষ্টির পানি পরছে,, তাই বাবাকে সাহায্য করতে হবে আমাকে আর মাকে,,, মা বলে দিয়েছে আপনাকে টাকা টা দিয়েই বাড়িতে ফিরতে,
কাচুমাচু মুখ নিয়ে জবাব দিলো স্নিগ্ধা।
আবরার চোখ সরু করে কিছু একটা ভাবে। খানিকক্ষণ বাদে বলে ওঠে,,
— বেশ,,আমি তবে দুজন লোক পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমার বাবাকে সাহায্য করতে,,তুমি আমার সাথে চলো।
স্নিগ্ধা অসহ গলায় বললো,
— কিন্তু মা যদি আমায় কিছু বলে?
আবরার মুচকি হেসে বললো,
— আমি ওনাকে বলে দেবো না হয়,,এবার চলবে তো?
কিছু একটা ভেবে হ্যা বোধক মাথা কাত করে স্নিগ্ধা।
আবরার উদ্বেজিত ধ্বনি নিয়ে বলে,,
— তাহলে যাওয়া যাক….!!
পেছন থেকে স্নিগ্ধার গলা খাকাড়ি কাশির শব্দে ভাবনার ফিনফিনে সুতো ছিড়ে যায় আবরারের। পুরোনো স্মৃতি চারন থেকে বেরিয়ে ঘুরে তাকায় আবরার।
আবরারের নির্জীব দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধা মৃদূ গলায় বললো,
— এভাবে দাড়িয়ে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে,,ভেতরে আসুন।
আবরার কথাটা কানে তোলেনা। উল্টে নিজেই প্রশ্ন করে বসে,
— এতক্ষন আমি কি ভাবছিলাম বলোতো??
স্নিগ্ধা কপাল কুঁচকে বললো,
— আমি কি করে জানবো?
আবরার মুচকি হেসে ডান হাত বাড়িয়ে স্নিগ্ধাকে নিজের কাছে টেনে আনে,,স্নিগ্ধাকে উল্টো ঘুরিয়ে নিজের বুকের সাথে পিঠ মিশিয়ে নেয়। স্নিগ্ধার কাধে শীতল থুতনি ঠেকাতেই হীম স্পর্শে ঈষৎ কেঁপে ওঠে স্নিগ্ধা।
আবরার ফিসফিস গলায় বলে ওঠে,
— ভাবছিলাম আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার কথা। তুমি আমাকে সারা গ্রাম ঘুরিয়েছিলে,,সেই দিন টা কিন্তু বেস্ট ছিলো আমার কাছে।
এ পর্যায়ে স্নিগ্ধা আবরারের দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়। উচ্ছ্বসিত গুলায় বলে ওঠে,
— হ্যা আপনি গোবরে পা দিয়ে কেমন নাক সিটকে ইয়াক ইয়াক করছিলেন,,
কথাটা বলেই শব্দ করে হাসতে শুরু করে স্নিগ্ধা।
প্রথম দফায় আবরার ভ্রু কুচকে তাকালেও আস্তে আস্তে মুগ্ধ চোখে মোড় নেয় তার দৃষ্টি।
আচমকা আবরার স্নিগ্ধাকে আরো শক্ত করে চেপে মিশিয়ে নেয় নিজের সাথে৷ স্নিগ্ধার কালো চুলে নাক ঘষতে থাকে,,
হকচকিয়ে হাসি থামিয়ে ফেলে স্নিগ্ধা৷ ব্যাস্ত গলায় বলে ওঠে,
— এভাবে চেপে ধরেছেন কেন,,নিঃশ্বাস নিতে পারছিনাতো।
বিরক্ত হয় আবরার৷ স্নিগ্ধার থুতনি ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
— তুমি কি সব সময় রোমান্সে বাধা দিতে তৈরি হয়ে থাকো?আমি এখন রোমান্সের মুডে আছি।বিরক্ত করছো কেন?
আবরারের কথার মানে বুঝতেই তড়িঘড়ি করে হাত পা ছোটাছুটি শুরু করে স্নিগ্ধা। আবরারের হাত কোনও রকম ছোটাতে সফল হতেই চট করে দূরে সুরে দাড়ায়।প্রগাঢ় গলায় বলে,
— আ..আপ..নি ভারী বজ্জ্বাত লোক। সব সময় সুবিধে নেয়ার ধান্দায় থাকেন তাইনা?
বাকা ঠোঁটে হেসে সোজা চুল গুলোকে ওপরে ঠেলতে ঠেলতে স্নিগ্ধার দিকে এগিয়ে আসে আবরার। স্নিগ্ধার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দেয় ওকে ছোয়ার উদ্দেশ্যে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দু কদম পিছিয়ে যায় স্নিগ্ধা। আবরার আবারো এগিয়ে আসে,,স্নিগ্ধা এবার পেছাতে গেলেই দেয়াল ঘেঁষে রাখা সোফার সাথে পা বেধে আচমকা ধপ করে বসে পরে সোফার ওপর।
আবরার উচ্চশব্দে হেসে ওঠে তাতে ,,,মুখ কাচুমাচু করে নেয় স্নিগ্ধা। হাতে ভর দিয়ে উঠতে গেলে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে আবরার শুয়ে পরে স্নিগ্ধার কোলের ওপর। আবরারের দুষ্টু বুদ্ধি দেখে হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে থাকে স্নিগ্ধা।
আবরার এবার চোখের পাতা এক করে নেয়,,,ছেলেমানুষী আওয়াজে বলে,
— মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তো,,,
স্নিগ্ধা অবাক হয়ে বলে,
— মানে কি..??
আবরার স্নিগ্ধার কোলে নিজের মাথাটা আরেক টু ঘেঁষে নেয়।সুড়সুড়ি লাগতে শুরু করে স্নিগ্ধার। অধীর গলায় বলে,
— আরে কি করছেন,এত নড়লে আমার সুড়সুড়ি লাগেতো!
আবরার মৃদূ স্বরে জবাব দেয়।
— বেশ নড়বোনা তাহলে মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।
বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে ফেলে স্নিগ্ধা। ঠোঁট উল্টিয়ে অগত্যা কাপা হাত এগিয়ে আবরারের চুলে বিলি কাটতে থাকে।
হঠাৎ স্নিগ্ধা প্রশ্ন তোলে,
— আপনি তখন আমায় মিথ্যে কেন বললেন?
আবরার চোখ বন্ধ করেই উত্তর দেয়,
— কি মিথ্যে বললাম?
স্নিগ্ধা,,ধৈর্য হীন গলায় বললো,
— তখন ওটা তনয়া আপুর নখেড় আচড় ছিলোনা??
আবরার একিভাবে বলে,
— তাহলে কার ছিলো?
স্নিগ্ধা আস্তে করে বললো,,
— আমার।আমি জানি..
আবরার চোখ মেলে তাকায়,,
— তুমি কি করে জানলে,,
— আমি জানি,,যখন আমাকে কোলে নিয়েছিলেন তখন লেগেছে,,
স্নিগ্ধার আলোড়িত গলার স্বরে আবরার মুচকি হেসে আবারো চোখ বন্ধ করে নেয়,,,বলে ওঠে,
— বাহ বেশ বুদ্ধি আছে দেখছি।
স্নিগ্ধা উত্তর দেয়না,,নিশ্চুপ ভাবে আবরারের মাথায় আঙুল বোলাতে থাকে।
নিস্তব্ধতায় সময় পেরিয়ে যায় কিছুক্ষন। আবরারের চুলে আঙুল বোলাতে বোলাতে হুট করে স্নিগ্ধা আবারো প্রশ্ন ছোড়ে,,
— আচ্ছা আপনি আমাকে বললেন না তো,,তনয়া আপুর বাবার সাথে কি কথা হলো আপনার?
চট করে চোখ মেলে তাকায় আবরার।কপালে ভাঁজ গাঢ় করে বলে ওঠে,
— ওসব জেনে তুমি কি করবে?
হাত থামিয়ে দেয় স্নিগ্ধা। উদ্বীগ্ন গলায় বললো,
— আমি কি করবো মানে?? আমার জানা উচিত নয়? আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি আপনি কিছু একটা লূকোচ্ছেন আমার থেকে,,
আমার সব টা জানার অধিকার আছে,,,আমি আপনার স্ত্রী।
হুশ আসতেই কথা থামিয়ে দেয় স্নিগ্ধা।নিজের কথাতে নিজেই খানিকক্ষনের জন্যে অবাক হয়ে যায়। অন্যদিকে ধড়ফড় গতিতে উঠে বসে আবরার। গোল চোখে স্নিগ্ধার মুখের দিকে তাকায়। আনন্দে উত্তেজিত হয়ে বলে,
— কি বললে? তুমি আমার স্ত্রী?? তুমি মানো এটা.?
স্নিগ্ধা আবরারের দিকে রাগীচোখে তাকায়। ক্ষিপ্ততা নিয়ে বলে ওঠে,
— না মানিনা। ভুল করে মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে।
আবরার মুচকি হাসে কথাটায়,শান্ত গলায় উত্তর দেয়,
— ভুল করে মুখ থেকে সেটাই বেরিয়ে আসে,যেটা আমাদের মনে থাকে।
স্নিগ্ধা চোখ নামিয়ে নেয়,,
আবরার পুনরায় বলে ওঠে,
— তুমি বিয়েটা মেনে নিয়েছো তাইনা পরি?
স্নিগ্ধা স্ফীত হেসে আবরারের দিকে তাকায়। ভাঙা গলায় প্রশ্ন করে,
—আচ্ছা,, যদি আপনি জানতে পারেন কখনও আমার জীবনে আপনি ছাড়াও আগে থেকে অন্য একজন আছে,তাহলে আপনি কি করবেন আবরার ফাহাদ চৌধুরী?
আবরার দুহাতে ভর দিয়ে এগিয়ে আসে,,স্নিগ্ধার চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বরফ গলায় জবাব দেয়,
— যাস্ট মেরে ফেলবো।
স্নিগ্ধা বাকা ঠোঁটে হেসে ওঠে,নিশব্দে,,,বলে,
— শুকরিয়া আদায় করুন যে আপনি এখনও বেঁচে আছেন।
আবরার আবারো উচ্চশব্দে হাসে,,,বিরক্ত লাগে স্নিগ্ধার। দাঁত চিবিয়ে বলে,
— হাসার মত কি বলেছি আমি??
আবরার হাসি থামিয়ে স্নিগ্ধার দিকে তাকায়। মৃদূ স্বরে জবাব দেয়..
— আমার জীবনে আপনি ছাড়া কেউ নেই স্নিগ্ধা। সেটা আপনি খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন।
কথাটা হাস্যকর হলেও আবরারের বলার ভঙিতে ভীষণ অদ্ভূত লাগে স্নিগ্ধার।চুপচাপ শান্ত চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে আবরারের সুশ্রী মুখের দিকে।
,,
,,
,,
সকাল বেলা দরজায় অনবরত টোকা পরার শব্দে ঘুম ভাঙে আবরারের। পাশ ফিরে স্নিগ্ধার দিকে তাকায়। স্নিগ্ধাকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দেখে নিজেই বিছানা ছেড়ে নেমে পরে। তৎপর দরজার করাঘাতে বিরক্ত হয়ে দরজার লক টেনে খোলে আবরার।
ওপাশে দাড়ানো ব্যাক্তিদের দেখতেই মুখের রং পাল্টে আসে তার। ভ্রু দ্বয় কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
— আপনারা??
পেছন থেকে এগিয়ে এসে আবরারের সামনে দাড়ায় তোফায়েল। প্রগাঢ় গলায় বলে,
— চিনতে অসুবিধে হচ্ছে?? নাকি পুলিশ দেখে ভয়ে স্মৃতিই হারিয়ে ফেললে,,
আবরার তোফায়েলের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আগে সিনিয়র অফিসার দৃঢ় গলায় বলে ওঠেন,
— মিস্টার চৌধুরী,,, স্যরি এভাবে আপনাকে হ্যারেজ করার জন্যে,তবে আমাদের কাছে আপনার এগেইন্সটে কেস ফাইল করা হয়েছে…তাই আসতে তো হবেই,,
আবরার বিস্মিত হয়,,ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে,
— আমার বিরুদ্ধে মামলা? কে করেছে,?
— আপনার প্রথম স্ত্রী তনয়া,,,
আবরার ফোস করে একটা ছোট্ট দম নেয়,,পুনরায় কিছু বলতে নেয়ার আগেই তোফায়েল ব্যাস্ত গলায় বলে,
— এতো কথা বলার কি আছে অফিসার,,,আসামী আপনার সামনে আছে,,আর প্রমান ঘরের ভেতরে গেলেই পাবেন,,তাহলে দেরি কেন করছেন ওকে এরেস্ট করুন…!
এতো আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে যায় স্নিগ্ধার।
উঠে বসে শোয়া থেকে। আবরারের পাশ কাটিয়ে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা কজন পুলিশের লোক দেখতেই হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন।দ্রুত পায়ে নেমে এসে দাড়ায় আবরারের পাশে।
স্নিগ্ধাকে দেখতেই তোফায়েল ক্রুদ্ধ গলায় বলে,
— এই দেখুন অফিসার,,এই সেই মেয়ে,,আমার মেয়ে জামাই কে বশে নিয়ে নিয়েছে একেবারে। গ্রেফতার করুন একে,এক্ষুনি।
স্নিগ্ধা হতভম্ব হয়ে একবার তোফায়েলের দিকে তাকায় আরেকবার আবরারের দিকে।আবরার চোখ ঘুরিয়ে তাকায় তোফায়েলের দিকে,,
— এটা আবার কোন নাটক আঙ্কেল? তনয়া আমার নামে কেস ফাইল করেছে??
তোফায়েল উত্তরে দাঁত চিবিয়ে বলে,
— হ্যা৷ বলেছিলাম না,,তোমার বেয়াদবি আর আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করার শাস্তি তুমি পাবে।
এবার দেখি,,, দেখি জেলের ভাত খাওয়া থেকে তোমায় কে বাঁচায়?
আবরার ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবে। বলে ওঠে,
— তনয়া কোথায়? আমি ওনার সাথে আলাদা করে কিছু কথা বলতে চাই….!
চলবে,
আপাতত ছোট পার্ট পড়ুন। আমার পরীক্ষা চলছে তাও কোনও মতে লিখে দিচ্ছি।পরীক্ষা শেষ হলে ইনশাআল্লাহ গল্প নিয়মিত আর বড় পাবেন।
আর হ্যা,যারা গল্পের রহস্য জানতে উদগ্রীব তাদের উদ্দেশ্যে বলছি,, একটা গল্পের আসল প্রানই হলো তার রহস্য বা কাহীনি,সেক্ষেত্রে আপনারা এত তাড়াহুড়ো করবেন না। কয়েক পার্ট পড়েই এন্ডিং অব্দি পা বাড়িয়ে ফেলেন অনেকে,এরকম করলে তো গল্প দীর্ঘ বা সুন্দর ভাবে কাহিনি সাজানো দুঃসাধ্য হয়ে পরে,,ধৈর্য নিয়ে পড়তে থাকুন।রহস্য যখন শুরু করেছি শেষ ও আমিই করবো,,