অসম্ভবেও আমার তুমি নুসরাত সুলতানা সেজুথি পর্ব–১৮

0
352

#অসম্ভবেও আমার তুমি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–১৮

আবরারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর মুখের বাকা হাসিতে ঘাম ছুটে আসার মত অবস্থা তোফায়েল আর আমিনুলের।

“”” বাঘের মুখে হাত ঢুকিয়ে তার সামনে থেকে কি বেঁচে ফেরা যায়? যাকে মারতে চাইলো তার কাছেই সব বলে দিলো? এত্ত বড় গাধা!

কথাটা ভেবে তোফায়েলের দিকে ক্ষিপ্ত নজরে চোখ বোলালো আমিনুল।পরক্ষনেই আবরারের দিকে তাকালো,,
এখন কি হবে? এই মার্ডার প্ল্যানের সাথে সেও তো যুক্ত, আর এই কথা লিক হলে তার এত সাধের চাকরী তো যাবেই সাথে ক বছরের জন্যে জেলে ঢুকতে হয় ওপর ওয়ালা জানেন।
কথাটায় ফাকা ঢোক গিললো আমিনুল। নাক মুখ কুঁচকে ভাবলো,

সব এই বুড়ো ভাম টার জন্যে,,,নিজের রাগের ওপর একটু কন্ট্রোল নেই? মেয়ে আহত হয়েছে,,,মরেতো যায়নি।আরে এত কিছুর পরেও যে তোর মেয়েকে হাসপাতাল অব্দি আনলো,,সেটাইতো তোর বাপের ভাগ্য রে! চুপ করে থাকনা।তা না করে উল্টে গলগল করে পেটের সব কথা উগড়ে দিলো।গর্দভ কোথাকার!

আবরার ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
— তাহলে মিস্টার তোফায়েল? শেষ অব্দি এটাই বাকি ছিলো? আমাকে মারতে চাওয়া?

আমিনুল ভাবনা চিন্তা ঝেড়ে ফেলে উৎসুক চোখে তাকায়,, এরকম একটা গা হীম করা কথাতেও ছেলেটা হাসছে? তাও কি এটিটিউড নিয়ে,,,,

তোফায়েল তুঁতলে আওড়ে উঠলো

— দে…. খো,আ….মি ব…ল..তে চাইছিলাম যে..

হাত উঁচু করে থামিয়ে দিলো আবরার,বলল,
— আপনার বলতে চাওয়া কথা আমি শুনে নিয়েছি।এবার আমি যা বলছি আপনি শুনুন।

আবরার একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিলো ফোস করে,,তোফায়েলের দিকে তাকিয়ে প্রগাঢ় গলায় বলতে লাগলো,,


জানোয়ার চেনেন? ওয়ান টাইপ অফ এনিম্যালস? আপনি হচ্ছেন তাই। মানুষ রুপি জন্তু,,,কি ভেবেছিলেন আমাকে মারা খুব সহজ? আর চাইলেই যে কাউকে মেরে ফেলা গেলো? এতই সস্তা মানুষের জীবন?

আমার তো ভাবতেও আশ্চর্যের লাগছে যে আপনি আমাকে মারার কথা ভাবছিলেন,,,, ভেবেছিলাম মনুষ্যত্ব একটু হলেও আপনার মধ্যে রয়েছে,,,,,তাই হাত গুটিয়ে বসে ছিলাম এতদিন,,,বলতে পারেন শোধরাতে দিচ্ছিলাম আপনাদের।কিন্তু আপনি তো আমার চিন্তার থেকেও এক কাঠি ওপরে,,, ভদ্র বেশি মুখোশ পরে মানুষ খুন করার কথা ভেবে নিলেন।

একটু থামুন মিস্টার পাঠান,নিজের দিকে তাকান।বয়স তো কম হলোনা,,,এক পা তো কবরে চলেই গেলো,এবার তো পাল্টান নিজেকে। অবশ্য এসব আপনাকে বলে লাভ নেই,,,আপনি আর রাস্তার কুকুরের লেজ একিরকম,,দুটোই ঘি দিয়ে টানলেও সোজা আর হবেনা।

এটুকু বলে আমিনুলের দিকে তাকালো আবরার।আবরার কে তাকাতে দেখেই নড়েচড়ে ওঠে আমিনুল,,,চিন্তিত মুখ সিরিয়াস করে নেয়,,আবরার ভ্রু নাঁচিয়ে কৌতুক মাখানো স্বরে বলে,

— তা গৃহপালিত পুলিশ অফিসার,,,আজকে হ্যান্ডকাফ আনেননি? সেদিন তো দুটো বিয়ে করার অপরাধে একেবারে হাকডাক দিয়ে গ্রেফতার করতে গিয়েছিলেন আমায়,,আজ এখানে মানুষ মারার প্ল্যান চলছে শুনেও আপনি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন? আরে বাহ!
অবশ্য আপনাকে তো ডিউটির কথা বলে দিতে হয়,,,পুলিশ তো আপনি নামেই,কাজের কাজ কিছুই করেন না। আর যেখানে মিস্টার তোফায়েল আপনার সোনার ডিম পারা হাঁস,সেখানে ওনাকে গ্রেফতার করলে আপনার মানিব্যাগই তো পাতলা হয়ে যাবে তাইনা? লস প্রজেক্ট!

অপমানিত বোধ করলেও কথা বাড়ালোনা আমিনুল,,,কখনও কখনও শান্ত থাকলে ক্ষতির কিছু নেই,নাহলে দেখা গেলো মাথা গরম করে নিজেও এই তোফায়েলের মত কিছু একটা উনিশ বিশ বলে ফেলবে,,শেষে নিজের লেজে নিজে বেধে হুমড়ি খেয়ে পরে থোবড়া ফাটাবে।

কপালে জমে আসা ঘামের ফোটা নিয়ে তোফায়েল আমিনুলের দিকে তাকাচ্ছে তো আমিনুল তোফায়েলের দিকে। দুজনেই কাচুমাচু করছে,,উশখুশ করার পরিমান বেড়ে গিয়েছে তাদের। আবরার এবার শক্ত গলায় বলল,

— আমার খুব ইচ্ছে করছে আপনাদের দুজনকে বনের হিংস্র জানোয়ারদের কাছে ছেড়ে আসতে,,অন্তত ওরা আপনাদের ভেতর টা ছিড়ে ফুরে দেখুক,আপনারা ওদের থেকেও কতোটা নিকৃষ্টতর।
আর মিস্টার তোফায়েল, একটা প্রবাদ আছেনা? “” অপরের জন্যে খুড়িয়া গর্ত নিজেই পরি সেথায়,,
আপনার অবস্থা এখন ঠিক তাই, আমাকে মারতে চেয়েছিলেন,অথচ দেখুন আমার জায়গায় আপনার আদরের কন্যা রয়েছে।একেই বলে টিট ফর ট্যাট,,

একদমে কথাগুলো শেষ করে স্নিগ্ধার হাত আকড়ে ধরলো আবরার,,তোফায়েল আর আমিনুলের দিকে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— চলো পরি।

স্নিগ্ধার সাথে সাথে আমিনুল তোফায়েল দুজনেই চমকে তাকালো,,,কারোরই হজম হলোনা আবরারের কথাটা।বিদ্যুৎ বেগি শব্দের মত ঝটকা অনুভুত হলো।

কোনও কিছু তোয়াক্কা না করে স্নিগ্ধাকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো আবরার।স্নিগ্ধা মুখ হা করে জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকাচ্ছে ওর দিকে।সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে তোফায়েল আমিনুলের দিকে তাকালো,,, অধৈর্য গলায় বলল,

— শুধু কথা শোনালো? ও আমাদের আর কিছু করলোনা কেন?

চকিত হয়ে তাকালো আমিনুল,বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
— আপনি কি চান উনি কোনও কিছু করুক? এভাবে শান্ত ভাবে চলে গেলো ভালো লাগলোনা?ভাগ্যিশ কিছু বললোনা,,

তোফায়েল চিন্তিত মুখে মাথা নেড়ে বলল,

— না না আমি যত দূর আবরার কে চিনি ওতো এরকম হাত গুটিয়ে নেয়ার ছেলে নয়,,সব কিছু জেনেও ও আমাদের বিরুদ্ধে কোনও এ্যাকশন নিলোনা? ও চাইলে তুড়ি মেরে আমাদের জেলে দিতে পারতো।

আমিনুল কয়েক মুহুর্তে কিছু ভেবে নিয়ে বলল,

— জানিনা।ছেলে যে চালাক,,,মুখ দেখে মনের কোনও কিছুই বোঝা যায়না । ভেতরে ভেতরে আবার কিসের নাড়ু পাকাচ্ছে কে জানে?

তোফায়েল কপালে আঙুল ঘষে বলল,
— যাক গে। যা পাকাচ্ছে পাকাক,,পরে দেখে নেবো। আগে আমার মেয়েকে দেখে নেই।ইশ মেয়েটা কত ব্যাথাই না পেয়েছে যখন ওই রাক্ষুসে ঝাড় ওর মাথায় পরেছে,ওই টুকুমেয়ে আমার,,

দুঃখি মুখ করে কথাটা বলে উদগ্রীব হয়ে তোফায়েল এগিয়ে এসে ওটির সামনে দাড়ালো,পেছনে আমিনুল তীব্র বিরক্তিতে নাক চোখ কুঁচকে নিলো,,,

মনে মনে বলল,
— শুরু থেকে এটা ভাবলে আবরারের কাছে ধরাও পরতে হতোনা,,আর জেলে যাওয়ার ভয়টাও থাকতোনা।এখন সব খিচুড়ি পাকিয়ে মেয়ের জন্যে দরদ দেখাচ্ছে,আদিক্ষেতা!

____________________________________________

,,
,,

হাসপাতালের সদর দরজার কাছাকাছি আসতেই আবরারের হাতের মুঠো থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো স্নিগ্ধা। ভ্রু কুচকে পেছনে তাকালো আবরার।

— কি হয়েছে? দাঁড়িয়ে পরলে যে?

স্নিগ্ধা ঠোঁট উল্টে ধৈর্য হীন হয়ে বলল,
— আপনি ওনাদের কিছু বললেন না কেন?

আবরার ভ্রু কুঞ্চন গাঢ় করে বলল,
— কাকে?

— তনয়া আপুর বাবা আর ওই পুলিশ টাকে?

আবরার বুঝতে না পেরে বলল,
— ওদের কি বলবো?

স্নিগ্ধা বিরক্ত হয়, উদ্বিগ্ন হয়ে বলে
— কি বলবেন মানে? ওনারা আপনাকে খুন করতে চেয়েছিলো,,বুঝতে পারছেন আপনি? খুন? আর সব জেনেও আপনি ওখান থেকে চলে এলেন?

এতক্ষনে সব টা বোধগম্য হতে মুখ স্বাভাবিক করে নিলো আবরার। ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,

— তো কি করবো? মারামারি করবো ওদের সাথে?

স্নিগ্ধা কপাল কুঁচকে উত্তেজিত হয়ে বলল,

—কি করবেন মানে? আপনি কি পাগল হয়ে গিয়েছেন? মারামারি করবেন মানে কি? আপনি ওনাদের পুলিশে ধরিয়ে দেবেন,,তারপর,,

আবরার মাঝপথে কথা কেড়ে নিয়ে বলল,
— যা বোঝোনা তা নিয়ে কথা বলোনা।
পুলিশে ধরিয়ে দেবো? কিসের ভিত্তিতে? প্রমান আছে আমার কাছে যে ওরাই আমাকে মারতে চাইছিলো?

স্নিগ্ধা চুপ করে যায়,,,ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভেবে বলে,

— তাহলে?

আবরার স্নিগ্ধার কাছে এগিয়ে আসে।দৃঢ় গলায় জবাব দেয়,,

— আমি ওদের হচ্ছে করেই কিছু বলিনি,,কারণ ওদের বিরুদ্ধে কোনও প্রুফ আমার হাতে নেই,,কিন্তু ওরা চাইলেই আমাদের বিরুদ্ধে অনেক কিছু করতে পারবে,,,

স্নিগ্ধা কৌতুহল নিয়ে তাকালো,,দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে আবরার নিজে থেকেই বলে উঠলো,

— তনয়ার রক্তাক্ত অবস্থায় আমাদের ড্রয়িং রুমে পরেছিলো,,,শুধুমাত্র এটাকে ইস্যু করেই ওরা চাইলে আমাদের ফাসাতে পারে,,,বিশেষ করে তোমাকে ফাসানো তো আরো সহজ হবে,কারন তখন তুমিই ছিলে বাড়িতে।
আর ইনভেস্টিগেশন করলে প্রমান একটাও তো আমাদের পক্ষে আসবেইনা পরি,উল্টে হিতে বিপরীত হবে। কারন চাক্ষুশ প্রমান তনয়া অপারেশন থিয়েটারে এখন। এটাই যথেষ্ট, সব মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে,,বুঝতে পেরেছো? সব দিক ভেবেই আমি চুপ করে গেছি।

স্নিগ্ধা মাথা নাড়লো,,পরক্ষনেই ভীত হয়ে তাড়াহুড়ো করে বলল,
— কিন্তু ওরা যদি এরপর আবার আপনাকে মারতে চায়?

আবরার বাকা হেসে বলল,
— সেটা আর ওরা করবেনা,,একই বোকামি করার মত বোকা ওরা নয়,,আর যেহেতু আমি সব জেনে গিয়েছি আর সেটা ওরাও জানে,,তাই এরপর ওদের বিরুদ্ধে আমি কি করবো, বা আমার পদক্ষেপ কি হবে? সেসব নিয়ে চিন্তা করতে করতেই ওরা নিজেদের চাল দিতে ভুলে যাবে। প্রতিটা মুহুর্তে ভয়ে থাকবে, ভাববে এই বুঝি আবরার কিছু করলো,,ওদের জন্যে এটুকুই কি যথেষ্ট নয়?

স্নিগ্ধা মুখ কাচুমাচু করে বলল,
— কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন আপনি ওদের ওপর নজর রাখছেন,,,ওরা এক পাও আগে দিতে পারবেনা।তাহলে এসব কেন হলো?

উত্তরে আবরার উদ্বেগ হীন গলায় বলে,

— সেটা বাইরে। ভেবেছিলাম হয়তোবা তোমাকে লক্ষ্য বানাবে,,,তাই তোমাকে ঘর থেকে খুব একটা বের করতেও চাইতাম না। কিন্তু আমি এটা ভাবিনি যে ওরা আমার বাড়িতেই আক্রমণ করার চিন্তা করবে,,,আর তাও আমাকে।
কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যায়,,,তোফায়েল পাঠান এসব করলো কাকে দিয়ে? তুমি কি কাউকে দেখেছিলে? মনে পড়ছে এরকম কিছু?

স্নিগ্ধা ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়লো,,, মৃদূস্বরে বলল,

— না। আমি কাউকে দেখিনি। আপনি যাওয়ার পর সময় কাটছিলোনা দেখে ঘুমিয়েছিলাম,তারপর ঘুমের মধ্যেই খুব জোর একটা আওয়াজ এলো কানে। তারপর যখন রুম থেকে বেরিয়ে এলাম,দেখলাম সারা ফ্লোরে কাঁচের টুকরো,, তার একটু পর তনয়া আপুকে ওরকম রক্তে মাখামাখি অবস্থায় দেখলাম,,

এটুকু বলে স্নিগ্ধা চেহারা ভীত করে বলল,
— আর আমার রক্ত খুব ভয় লাগে,রক্ত দেখলে মাথা ঘোরে,,ওই সময় রক্ত দেখায় তাই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি,,,তারপর আর কিছুই মনে নেই।এরপর যখন জ্ঞান ফিরলো দেখলাম আপনি চলে এসছেন।

আবরার নিচের ঠোঁট জ্বিভ দিয়ে ভিজিয়ে বলল,
— হ্যা আমিও তোমাদের ওভাবেই পেয়েছি,,সেজন্যেই তো বলছি বাসায় তুমি ছিলে আর মকবুল,তাহলে…,,

কথাটা মাঝপথে থামিয়ে দিলো আবরার,,কপাল কুঁচকে এলো,,কিছু একটা ভেবে তাড়াহুড়ো করে বলল,
— এক মিনিট,, এক মিনিট,,, মকবুল কোথায়? বাড়িতে ঢোকার পর থেকে ওকে তো দেখিনি।

স্নিগ্ধা ভাবুক ভঙিতে বলল,
— আমিও নাহ। আর এত কিছু হয়ে গেলো উনি রান্নাঘর ছেড়ে একবার এলেন ও নাহ? অদ্ভুত তো!

আবরার চোখ গুলো সরু করে নিয়ে চিবুকে আঙুল ঠেকালো,,,,একটু ভেবে বলল,
— কোনও ভাবে মকবুল এসবের মধ্যে নেইতো?

স্নিগ্ধা অবাক হয়ে জবাব দেয়,
— কিন্তু উনিতো আপনাদের বাড়িতে অনেক দিন ধরে কাজ করছেন,,উনি এরকম করার কথা ভাববেন? আর ওনাকে দেখে তো মনেও হয়না,,,কত জীর্ন শীর্ন চেহারা।

আবরার বিদ্রুপাত্মক হাসলো,বলল,

— পরি,বাইরের চেহারা দেখেই কাউকে বিচার করা যায়না।এইতো তনয়াকে দেখতে কত্ত শান্ত মেয়ে মনে হয়,অথচ উনি একদিন আমাকে রেপের মত জঘন্য অপরাধে ফাসাতে চেয়েছিলেন,,আর ওনার বাবা? কি ভদ্রলোক, দেখে কি মনে হবে? কাউকে খুন করার কথা ওনার মাথাতেও আসতে পারে?

মকবুল দিন আনা দিন খাওয়া লোক,,,হাজার টাকার নোট ওর চোখের সামনে ধরলেই চকচক করে ওঠে ওর চেহারা,,,হয়তো তোফায়েল ভালো এমাউন্ট দেয়ার কথা বলে ওকে দিয়ে কাজ সারতে চেয়েছিলো,,আর এত গুলো টাকা পেয়ে ও নিজেও রাজি হয়েছে,,হতেই পারে এরকম।

মানুষ টাকা পেলে রক্তের সম্পর্ক কেই অস্বীকার করে,আর সেখানে ওতো বাড়ির কাজের লোক। তবে সত্যিই যদি মকবুল এতে জড়িত থাকে তবে আমার কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।

(একটু থেমে)
যাক,এখন ছাড়ো এসব,,শোনো,আমি হেনাল কে কল করেছি ও একটু পর গাড়ি নিয়ে এসে তোমাকে নিয়ে যাবে,,তারপর বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিও।

আগে পিছে কোনও কথা মাথায় ঢুকলোনা স্নিগ্ধার,জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকিয়ে বলল,
— আমি যাবো ? আর আপনি?

আবরার স্ফীত গলায় বললো,
— আমি তনয়ার কাছে থাকবো।

স্নিগ্ধা প্রশ্নসূচক চাহনিতে তাকিয়ে আছে,চোখে মুখে উপছে পরছে প্রশ্ন আর অপ্রত্যাশিত বাক্যের সমাধানের প্রত্যাশা। বিষয় টা বুঝতে পেরে আবরার স্নিগ্ধার দুহাত মুঠোকরে নিজের হাতে নিয়ে শীতল গলায় বলল,

— পরি,,তনয়ার এই অবস্থা আমার জন্যে,,,আমাকে বাঁচাতে এসেই মরতে বসেছে আজ।তখন মানবিকতার খাতিরে হাসপাতালে নিয়ে এলেও,এখন সব টা জানার পর কিভাবে ওকে মরার জন্যে ছেড়ে যাই বলো? মেয়েটা যেমনই হোক,,,এখানে তো ওর নিজের কোনও স্বার্থ ছিলোনা। আমি ওকে ভালোবাসিনা, তোমাকে ভালোবাসি সব জেনেও ও আমাকে বাঁচিয়েছে,,,তাই এটুকু আমার দায়িত্ব। ওকে এভাবে ফেলে যাবো? এরকম অমানবিক আর অমানুষ আমি নই।

কথাগুলো বলে স্নিগ্ধার থেকে চোখ নামিয়ে নিলো আবরার,,স্নিগ্ধা খানিকক্ষণ একভাবে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো,,,

চট করে তাকালো আবরার,,স্নিগ্ধা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আবরারের গালে ছোয়ালো,,আস্বস্ত গলায় বলল,

— আমি আপনাকে বিশ্বাস করি আবরার,,,তনয়া আপু পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া অব্দি আপনি নিশ্চয়ই এখানে থাকবেন। তবে আপনি একা নন,আমিও থাকবো আপনার সাথে,,,আমার স্বামীকে বাঁচিয়েছেন উনি,,আমারো তো কিছু দায়িত্ব আছে নাকি?

আবরার প্রশান্তিতে ঠোঁট এলিয়ে হেসে উঠলো,,, স্নিগ্ধাকে টেনে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো,,স্নিগ্ধাও লেপ্টে গেলো আবরারের বুকের সাথে,,,স্নিগ্ধার চুলে চুমু খেলো আবরার,,,মৃদূ আওয়াজে বলল,,

— ভালোবাসি।

স্নিগ্ধা আজও উত্তর দিলোনা,,,মাথাও তুললোনা,,আবরার কে জড়িয়ে রেখে মনে মনে বলল,
— আমিও।

,,
,,
,,

আবরার আর স্নিগ্ধাকে দেখে অবাক হলো তোফায়েল,, আমিনুল দুজনেই,,,আমিনুল মুখ এগিয়ে তোফায়েলের কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

— এরা আবার কেন এসেছে স্যার?

তোফায়েল ভ্রু কুঁচকে নিয়ে বলল,

— জানিনা।সোজা হয়ে দাড়াও,নাহলে সন্দেহ করবে,,বুঝে ফেলবে আমরা ওদের নিয়ে কথা বলছি।

কথাটায় সোজা হয়ে দাড়ালো আমিনুল,আবরার এগিয়ে এসে বেঞ্চি দেখিয়ে স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
— বোসো এখানে,,

স্নিগ্ধা নরম পায়ে এসে বসলো সেখানে,,তোফায়েল ব্যাগ্র গলায় বললো,
— তোমরা আবার ফিরে এলে যে?

কথাটায় আবরারের সাথে সাথে আমিনুলও তাকালো তোফায়েলের দিকে,,,আবারো বিরক্ত লাগলো তার,,

উফ! আবার যেচে কথা বলতে গেলো?? এই স্যারের আর কোনো কাজ নেই নাকি? সিংহ ঘুমিয়ে আছে ঘুমোক নাহ,,,,কি দরকার তাকে গুতিয়ে তার পেটে যাওয়ার। এমনি এমনি ওনাকে গর্দভ বলেছি নাকি।আসলেই উনি একটা মস্ত বড় গর্দভ। মনে মনে এমন এক রাশ গালিতে তোফায়েল কে,,উদ্ধার করে থামলো আমিনুল।
মনোযোগ দিলো আবরারের দিকে,,আবরার বাকা হেসে বলল,

— আসলে দেখতে এসছি,,,নিজের খোড়া গর্তে পরে আপনার অনুভূতি কেমন হচ্ছে,,বলতে পারেন আপনার কাটা ঘায়ে লবন ছিটাতে এসছি।

কথাটায় নাক মুখ কুঁচকে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো তোফায়েল।তোফায়েলের মুখের ভঙিমায় ঠোঁট টিপে হেসে উঠলো স্নিগ্ধা,,,

,,
,,
—— — —

আবরারের কাধে মাথা রেখে বসেছিলো স্নিগ্ধা। তার থেকে অনেক দুরুত্বে দাঁড়িয়ে আছে তোফায়েল আর আমিনুল। টানা তিন ঘন্টা অপেক্ষার পর অপারেশন থিয়েটারের লাইট নিভতে দেখে সবাই উৎসুখ চোখে তাকালো,,,

দশ মিনিটের মাথায় হাতের গ্লাভস খুলতে খুলতে বেরিয়ে এলো দুজন ডাক্তার।একজন তাড়াহুড়ো করে অন্যদিকে চলে গেলেও অন্যজনের কাছে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে দাড়ালো তোফায়েল,,,উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,

— ডাক্তার আমার মেয়ে?

তোফায়েলের দিকে শান্ত চোখে তাকালেন তিনি, আস্বস্ত গলায় বললেন,

—- ভালো আছে,,,অপারেশন সাকসেসফুলি হয়েছে,,তবে আরেকটু দেরি করলে আমাদের হাতে কিছুই থাকতোনা।
এখন আপনারা অপেক্ষা করুন,,,সেন্স ফিরলেই দেখা করতে পারবেন।

স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো সবাই।মনে মনে শতবার ওপর ওয়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করলো আবরার,,
অন্তত আজ তনয়ার ভালো মন্দ কিছু হলে নিজের কাছে নিজেকে বড্ড ছোট লাগতো।

কথাগুলো বলে দিয়ে ডাক্তার চলে যেতেই আমিনুল হাসিমুখে এগিয়ে এসে তোফায়েল এর কাছে দাড়ালো। বলল,
— স্যার,,এবার আপনি একটু বসুন,,এত ভাববেন না ম্যাডাম ভালো আছে শুনলেন তো!

তোফায়েল ধীর গলায় বলল,
— না আগে ওকে একবার দেখে তারপর।

_______________________________________

আবরার উঠে দাড়ালো,, স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
— তনয়ার জ্ঞান ফিরতে বেশি সময় লাগবেনা,,ও ভালো আছে শুনে নিয়েছি, চলো এবার যাই।

স্নিগ্ধা মাথা কাত করে সায় দিলো,,,আবরারের বাহু আকড়ে ধরে হাটতে নিলে পেছন থেকে কারো আওয়াজে কদম থামিয়ে তাকালো দুজনেই।

— পেশেন্টের গার্ডিয়ান কে আছেন?

নার্সের চিকন গলার আওয়াজে তোফায়েল এগিয়ে গিয়ে বলল,
— আমি আমি,,কেন নার্স? কিছু হয়েছে? জ্ঞান ফিরেছে আমার মেয়ের?

— আপনাদের মধ্যে আবরার নামে কেউ আছেন?

কথাটায় অবাক হয়ে তাকালো সবাই,,তোফায়েল আড়চোখে একবার আবরার কে দেখে নিয়ে আমিনুলের সাথে চোখ মেলালো। আবরার বিস্ময়ে একবার স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে আবারো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল,

— আমিই আবরার। কেন?
তোফায়েলের সামনে থেকে মেয়েটি এগিয়ে এসে আবরারের সামনে দাড়ালো,বলল,

— পেশেন্টের সেন্স ফিরেছে,,আর বারবার আপনার নাম ধরে ডাকছেন,,,আপনার একবার যেতে হবে ওনার কাছে।

আবরার উত্তর না দিয়ে ,,,স্নিগ্ধার দিকে তাকালো। পানসে হয়ে এলো স্নিগ্ধার মুখস্রী। নিজের হাত আস্তে করে আবরারের বাহু থেকে সরিয়ে নিলো স্নিগ্ধা। শিথিল হেসে বলল,,

— যান।

চলবে

গত পর্বে ২০০ লাইক চাওয়াতে হুড়মুড় করে লাইক উঠে গেলো।এমনিতেতো ১৮০ এর বেশিই হয়না😏।অথচ ভিউ আসে কত্তো গুলি এই গল্পটার😒সবই দুর্নীতি। ঠিক আছে এখন থেকে প্রত্যেকটা পর্বে ২০০ করে রিয়্যাক্ট হবে তাহলে পরের পর্ব তাড়াতাড়ি আর অনেক বড় করে আপ্লোড করবো😊প্রমিস! কিন্তু নাহলে দেবোনা হুহ😑

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here