#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_২১
Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী
কিছু আগেই খাওয়াদাওয়ার পর্ব পুরোপুরি চুকে গিয়েছে। দেশী গরুর মাংস দিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি, নলার ঝোল ভালোই জমেছে। রাত এগারোটা ঘরে। কেক কাটার পর্ব শুরু হবে। সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিখিলের জেঠাতো বোনের মেয়ে আর আরও কয়েকটা বাচ্চা মেয়েকে শাড়ি পড়তে দেখে মুখ গোমড়া করে বসেছিল অনা। কান্নাকাটিও সেড়ে ফেলেছে অভিকের কাছে। পরবর্তীতে বাড়িতে ফোন করলে ড্রাইভার এসে তার জন্য ওই বার্থডের দিন পড়া শাড়িটা দিয়ে গেল। শাড়িটা পেয়ে সে ভীষণ খুশি এবং সুজানের হাতে শাড়ি ও সাজতে পেরে আরও খুশি। সালমা বেগম কড়া অর্ডার দিয়ে গেছে। উনার নাতনিকে যেন সুজানার মতো করেই সাজায়। নিজের এমন পরোক্ষ প্রশংসায় মনে মনে খুশি হলো সুজানা। তবে তা বেশিক্ষণ রইলো অনার আদেশ পালন করতে গিয়ে। তার আদেশ সুজানির মোতো করি সাজবে। শান্তা আর মেহুলও তাকে সাজাতে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। দুজনেই বলল
এটা স্যারের মা হয় কি করে? এত বজ্জাত!
অনা আঙুল দেখিয়ে বলল
চোপ চোপ আমি অভির আম্মুচান।
শান্তা ভেঙচি দিয়ে বলল
কচুজান।
অভি তুমাকে গাল ছিঁড়ি দিবে।
শান্তা গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। সুজানা হেসে বলল
ওকে আহির পেয়েছিস?
মেহুল ফিক করে হেসে উঠে বলল
সুজানা তুই এই দুটোকে পড়াস কি করে? কি পন্ডিত!
অনা দুঠোঁট একে অপরের সাথে লাগিয়ে নিজেকে আয়নায় দেখে এপাশওপাশ দুলতে দুলতে বলল
সুজানির মোতো লাচচে। ওআও।
তারা তিনজন একসাথে হেসে উঠলো।
——–
স্টেজের বিপরীত পাশেই আরও একটি বড়সড় স্টেজ বানানো হয়েছে। তবে ওটাতে সাজানো হয়নি। আপাতত বন্ধুমহল আর কাজিনদের আড্ডা বসেছে। তাদের মাঝখানে অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে আবিদও আছে। সায়েমের সাথে মজা করছে, হাসাহাসি করছে। অল্পসময়ের মধ্যেই বেশ ভাব জমে গেছে সায়েমের সাথে। সায়েমকে এখন চায়িম ভিইয়া বলে ডাকা শুরু করেছে। সায়েম ইনজয় করছে সম্বোধনটা। বাচ্চাটাও ভীষণ আদুরে। আপা এত কিউট বাচ্চা গুলোকে পড়ায় কি করে। সে হলে সারাক্ষণ গাল চটকাতো।
বর আর বরের বন্ধুমহলকে দেখে আড্ডামহলে খানিকটা নীরবতা তারপরপরই হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠলো সবাই। জায়গা খালি করে উঠে দাঁড়ালো নিখিল আহির আর জায়িন। শ্রদ্ধাভাজন স্যারের দিকে চেয়ার ঠেলে দিতেই অভিক চেয়ারে টেনে বসে বলল
তোমরা বসতে পারো। গান শোনার রাইট আমাদেরও তো আছে।
আহির হেসে বলল
কাকের গলায় আর কি গান।
নিখিল চোখ লাল করে তাকালো। নাহিদ আর বাকি বন্ধুরা চেয়ারে বসলো। নাহিদ গা এলিয়ে দিয়ে বলল
তোরা ভাই কেক কাটবি কখন? নাকি আমি কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়বো?
জুনিয়ররা থাকায় রাহাত ফিসফিসিয়ে বলল
যাহ কাল রাইতে ঘুমাইতে পারবি না। আইজ গিয়া ঘুমা। কেক আমরা কাটি।
নাহিদ ঠোঁট কামড়ে তাকাতেই অভিক হেসে উঠলো। বলল
এখানে সবাই স্টুডেন্ট। সামলে।
যথাস্তু। কিন্তু তার বউ কেক কেটে অলরেডি ছবি এদিকে পাচার করে দিছে আর সে এখনো মশা তাড়াই। ভাইরে ভাই কেকটেক কাট। আমরা যাই।
নিখিল এসে বলল
আরেহ রাহাত ভাই এত তাড়া কিসের? এখনো তো সবে শুরু। মেয়েরা রেডি হচ্ছে। তাই বসে থাকতে হচ্ছে।
সাফিন বলল
আচ্ছা তোর গিটারটার অবস্থা তো কাহিল। সমস্যা কি? ফকিরের ছদ্মবেশ ধরছোস কেন? তোর ইঞ্জিনিয়ার ভাইয়ের কিপ্টামি গিরি নাকি এখনো বহাল আছে?
নিখিলের মন খারাপ হয়ে এল। নাহিদ বলল
ধুরর বাবার উপর রাগ করে আর কিনছেনা। আমি কিনেছি ওটা নিচ্ছে না। কি আর করার?
অভিক বলল
ওটা নিয়ে আয়। নিখিলের নেওয়া দরকার।
নিখিল মাথা নাড়ালো।
নাহিদ কালো চকচকে কালো রঙের গিটারটি এনে অভিকের হাতে দিল। অভিক সেটি নেড়েচেড়ে দেখলো। নিখিল বলল
স্যার আপনি পারেন?
অভিক গিটারটি বামপাশে করে নিয়ে বলল
পারি। বাট প্র্যাকটিসে নেই। ব্রো মনে আছে মিললে পেট্রোজার সাথে ছবি তুলে দিয়েছিলাম তোদের। ওয়ান অফ দ্য বেস্ট গিটারিস্ট। এন্ড দারুণ পার্সোনালিটি। মাই ফেইভরিট পার্সন।
আহির ফোন বের করে ততক্ষণে ছবিটা খুঁজে বের করে নিল। বলল
স্যার এইটা? আমি ইন্সটাগ্রাম থেকে নিয়েছি। ভিডিওটাও অনেক দেখেছি।
অভিক ঠোঁট বাঁকিয়ে সাবাশ উপাধি দিয়ে বলল
হ্যা এটাই মিল পেট্রোজা। আমি ওদের সাথে অনেকগুলো পার্টিতে এটেন্ড করেছি।
নাহিদ বলল
হ্যা হ্যা আমিও দেখেছি। ভিডিওটাও দেখেছি। ওখানে সুন্দুরী লাল চুলওয়ালা মহিলাটা কে যেন?
অভিক থামিয়ে দিয়ে বলল
স্টুপিড, তোর মুখে সবসময় বাজে কথা ওটা পেট্রোজার ওয়াইফ।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। নাহিদ বলল
হ্যা আলাভিউ এভি কাকে বলেছিল যেন। কি সুন্দর করে ডাকলো মাইরি! এভি ফার্দেন।
সিরিয়াসলি! ওখানে ওটা নর্মাল। তুই অফ যাহ। আমি গিটার বাজাবো। নিখিল এসিস্ট মি।
ওকে স্যার।
আবিদ লাফ মেরে এসে অভিকের কোলে এসে বসলো। গিটারের তারে আঙুল ঘষা মেরে বলল
অভি অভি আমিও বাছাবো।
অভিক তার গালে আদর দিয়ে বলল
আপনিও বাছাবেন? বনু কোথায়?
বুনু সুজানের কাছে লিপিচটিক দিচচে।
সবাই আরেকদফা হেসে উঠলো। নাহিদ আবিদকে কোলে নিয়ে বলল
পুরো বাপকা বেটা। অভি এইটা তোর কার্বনকপি হবে দেখিস।
অভিক গর্বে হাসলো।
নিখিল বলল
ভাই এখন চুপ যাও। স্যার আপনি গিটার বাজান।
অভিক একটা দুটো আঙুল নেড়েচেড়ে টুংটাং এলোমেলো সুর তুললো। নিখিলের দিকে তাকিয়ে ইশারায় জানতে চাইলো হচ্ছে কিনা।
নিখিল বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সমর্থন জানাতেই অভিক চমৎকার হেসে বলল
আমার খুব প্রিয় একটা টিউন আছে। ওটা ট্রাই করছি, হচ্ছেনা।
নাহিদ বলল
হাহ তুই বরং মাস্টারি বাদ দে। তোর বাপের বিজনেস সামলা আর গিটার বাজা। এটাই ভালো হবে।
বাবার বিজনেসের টেক কেয়ার অলরেডি করছি। বিয়ে করলে মানুষ পাগল হয়ে যায় সেটা তোকে দেখে বুঝে গেছি আমি।
তুই আমার চাইতেও বেশি হবি।
সবকিছুর স্বাদ নেয়া দরকার। জীবন তো একটাই।
সবাই সমর্থন করলো।
ইয়েস ইয়েস জীবন একটাই।
অভিক বলল
বাট….
তুই হাটট। গিটার বাজা।
ইয়াহ সিউর।
তরঙ্গ হতে সৃষ্ট শব্দসুর উঠলো ধীরেধীরে সবার কৌতূহলকে চাপিয়ে। সেই টুংটাং সুরের সাথে খোলা গলায় গান ধরলো সবাই
ভেঙে চুড়ে যায় আমাদের ঘরবাড়ি
জং ধরে যায় আমাদের তরবারি
যত ভাবি আলগোছে জল খেতে পাবো
জামা ভিজে যায় আর কত দূর যাবো
যত দূরে যায় আমাদের হাতছানি
তারও দূরে দেখি নাবিকের মস্তানি
দিক ভুল হয়ে যায় খুঁজে পাওয়া যায় না
আমাদের বাড়ি
আহির তার ক্যামরায় টুকটাক ক্লিক নিয়ে নিল সেই ফাঁকে।
গান শেষ হওয়ার আগেই অভিক ভুল আঙুল চালানোতে গিটার থেমে গেল। সবাই রুষ্ট চোখে তাকালো। অভিক আঙুল ঝাড়তে ঝাড়তে দাঁড়িয়ে পড়লো। গালে আঙুল রেখে বলল
লেগেছে। আমি আসছি।
নিখিল বলল
স্যার কিভাবে হলো এটা? বেশি কেটেছে?
আঙুল ঝেড়ে অভিককে আসতে দেখে সুজানা একপাশে সেটে গেল। অভিক সেদিকে যেতেই সুজানা অন্যপাশে গেল, অভিক সেদিকে যেতেই সুজানা থেমে গেল। অভিককে যেতে দিল।
অভিক আঙুল কামড়ে বলল
আমার আঙুল কেটে গেল।
কেন?
আপনার জন্য।
সুজানা চোখ বড় করে তাকিয়ে বলল
আমি কি করেছি?
আপনি ভুল সময়ে এসেছেন।
অনা তাড়া দিচ্ছিল। তাই এসেছি।
আমি এত কৈফিয়ত চেয়েছি?
না।
তাহলে দিচ্ছেন কেন?
আপনি বললেন ভুল সময়ে এসেছি তাই বললাম।
অভি চলেই যাচ্ছিল। সুজানা ডেকে বলল
স্যার, একটা কথা।
বলুন।
অনা আপনাকে খুঁজতে ওদিকে গিয়েছে।
অভি সেদিকে তাকিয়ে বলল
সাফিন সামলাবে।
সুজানা মাথা নেড়ে বলল
আচ্ছা।
অভিক যেতে গিয়ে আবার পিছু হেঁটে সুজানার সামনে এল।
আরেকটা কথা।
কি?
আমাকে যেখানে সেখানে স্যার ডাকবেন না। ওটা আপনার মুখে মানায় না।
সুজানা ভীতসন্ত্রস্ত চোখে তাকালো।
আমি তো কিছু করিনি।
অভিক যেতে যেতে উঁচু গলায় বলল
আপনি যেখানে যান সেখানেই সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এটাই আপনার দোষ।
সুজানা বিড়বিড়িয়ে বলল
এ্যাহ কচু।
_________________
কেক কাটা পর্ব শেষ হলো। অনেক হৈহুল্লোড় মজামাস্তি শেষে সবাই যার যার বাড়ি ফিরে এল ভোররাতে। পরদিন সন্ধ্যায় আবারও সবার যাত্রা ব্লুমিং পার্ক ক্লাবে। ক্লাবে সবাই পরিবারের সাথে। শান্তা তার বাবা আর দাদু, মেহুল তার মা বাবা, সুজানা তার মা ভাই আর রোজা, আহিরের বাড়ি থেকে শুধু মা বাবা আর ছোট বোন আর চার বছরের ছয় বছর বয়সী ভাইটা, জায়িনের পরিবার থেকে নিহাত আর বাবা। সবার একসাথে দেখা সাক্ষাতে সবাই আনন্দিত। নিহাতকে দেখে প্রথমে বেশ চমকেছে নিখিল। তবে পাত্তা দিল না বেশ । নিহাতের ভাবসাব দেখেও মনে হলো না সে তার পরম বন্ধুভাবাপন্ন শত্রুর ভাইয়ের বিয়েতে এসেছে। যেন তার কোনো ঘনিষ্ঠ আত্মীয়র বিয়েতে এসেছে এবং খুবই পরিচিত সবার সাথে।
নবকুঠির থেকে সালমা বেগমের সাথে আনজুমা বেগম, আনিকা আর অভিক এসেছে। বাড়িতে মমতাজ বেগম একা বিধায় আজাদ সাহেব আর আহনাফ খেয়েদেয়ে চলে গিয়েছেন। অনা আর আবিদ ক্লাবে পৌঁছেই সুজানাকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। অভিক তাদের এত খোঁজাখুঁজি করতে দেখে বলল
আপনাদের টিচারকে এখনো খুঁজে পাননি?
অভি সুজান কুথাও নাই।
নো নো সুজান আছে। আমি খুঁজে নিয়ে আসছি। ওয়েট।
অভিক সুজানাকে খুঁজতে বেরুলো। কিছুদূর এগোতেই সায়েমকে দেখলো। সায়েমের চোখ অভিকের দিকে পড়তেই সে চুইংগাম চিবোনো বন্ধ করে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো। চাহনি খানিকটা ভীতিকর। অভিক কাছাকাছি এসেই ভুরু নাচিয়ে জানতে চাইলো
আপু কোথায়?
সায়েম সিঁড়ির দিকে দেখিয়ে দিয়ে বলল
নীচে গিয়েছে।
অভিক যাওয়ার সময় তার সামনের চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল
গুড বয়।
অভিক চলে যেতেই সায়েম পেছনের চেয়ারে বসা সাজিয়া বেগমের দিকে তাকালো। উনি অভিকের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছেন।
কে ছেলেটা?
উনি আপাদের ডিপার্টমেন্টেরই স্যার। অনা আবিদের চাচ্চু।
ওহহ।
উনি চোখ সরালেন না যতদূর অভিককে দেখা গেল।
__________
আনিকার সাথে গল্পে মত্ত ছিল সুজানা। দুজনেই কথা বলে সিঁড়িপথ পেরোচ্ছিল। অভিককে দেখে দুজনের কথা থেমে গেল।
আমি আপনাকে খুঁজছিলাম সুজানা।
আনিকা ভুরু কুঁচকালো।
কেন রে?
সরি আমি না, বেবিরা।
ওদের আর কোনো কাজ আছে? সারাক্ষণ সুজান আর সুজান।
সুজানা বলল
আচ্ছা যাচ্ছি।
আনিকার সাথে কথা বলতে বলতে চলে গেল সুুজানা। অভিক বলল
ধ্যাত, কথা তো আমারও ছিল।
সে অন্যপথে পা বাড়াবে তার আগেই সালমা বেগম এলেন। বললেন
এই অভি মেয়েটাকে দেখেছিস?
সুজানা?
হ্যা হ্যা।
কেন?
উনি রুক্ষ চোখে তাকালেন ছেলের দিকে।
সব কথা তোকে বলতে হবে কেন? তুই কি সব কথা আমাকে বলিস?
আচ্ছা, উনি মাত্রই ওদিকে গেলেন। আপুর সাথে আছে। যাও।
আচ্ছা।
সালমা বেগম ওদিকে যেতেই অভিক ফুঁস করে শ্বাস ফেললো। সুজানাকে খুঁজে দেওয়া, এবং সুজানার খোঁজ দেওয়া তার প্রধান ও মূখ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবটা আজব!
_________
সাজিয়া বেগমকে দেখে আনিকা এগিয়ে গিয়ে সালাম দিয়ে জড়িয়ে বলল
ভালো আছেন আন্টি? আপনি এসেছেন শুনে আমি আপনার কাছেই আসছিলাম।
ভালো আছি মা। তুমি ভালো আছ? তোমার বাচ্চারা কোথায়?
ওরা আছে মেবি সাফিনের সাথে।
তোমার শ্বাশুড়ির সাথে গল্প করছিলাম এতক্ষণ। তোমার চাচী শ্বাশুড়ির সাথে তো দেখা হলো না।
আনজুমা বেগম বললেন
ও আবার কোথায় গেল কে জানে?
সুজানা বলল
হ্যা আমিও ছোট আন্টিকে দেখিনি।
সালমা বেগম এলেন তখন। চশমার নিচে উনার চোখদুটো বেশ তীক্ষ্ণ । সুজানাকে বলল
কি ব্যাপার মেয়ে? তোমাকে সেই তখন থেকেই খুঁজে যাচ্ছি। এক জায়গায় থাকতে পারোনা। আমার পা ব্যাথা হয়ে এল। বাবারে।
সুজানা একবার মা আরেকবার সালমা বেগমের দিকে তাকালেন। সাজিয়া বেগম কপাল কুঁচকে সালমা বেগমের দিকে চেয়ে আছেন। মা ছেলের এত সুজানাকে কি দরকার?
সুজানাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে গিয়ে আরও একবার পিছু ফিরলো সালমা বেগম। সাজিয়া বেগমকে বলল
ওহ আপনি তার মা?
জ্বি।
দেখেছেন আপনার মেয়ে একবারও বলেছে সেটা? পরিচয় করিয়ে দিয়েছে?
সাজিয়া বেগম মৃদু হেসে ফেললেন।
তো ভালো আছেন তো?
জ্বি। আপনি ভালো আছেন?
আছি কোথায়? আপনার মেয়েই তো আমাকে হয়রান বানিয়ে দিল। চলো তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে আমার। হুটহাট হারিয়ে যাবেনা।
সুজানাকে টেনে নিয়ে গেলেন উনি। সুজানা যেতে যেতে বলল
কোথায় যাচ্ছি আন্টি।
উনি এদিকওদিক তাকিয়ে বললেন
দাঁড়াও দাঁড়াও আশেপাশে অভি আছে কিনা দেখি। ছেলেটা আমাকে নজরে রাখছে।
কেন?
কেন কেন করোনা তো। তোমাকে যেটা বলতে এনেছি সেটা শুনো। তোমাদের ওই কলেজে ধুর না বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন মেয়ের সাথে অভি বেশি কথা বলে সেটা আমাকে বলো।
সুজানা বলল
এ্যাহ? স্যার?
হ্যা হ্যা তোমাদের স্যার।
আমি তো জানিনা।
তো কি কচু জানো? আমি তো জানি না। এটা কোনো কথা হলো?
সুজানা মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে বিড়বিড় করলো, আল্লাহ আমাকে বাঁচাও।
শোনো মেয়ে, অভি ওখানে কার সাথে বেশি কথা বলে ওটা তুমি লক্ষ রাখবে। ঠিক আছে? যখনি দেখবে কোনো মেয়ের সাথে বেশি কথা বলছে, হাসি তামাশা করছে কিংবা আলাদা কথা বলছে তখনি তুমি আমাকে এসে বলবে।
তখনি?
আরেহ না, যখন বাবুদের পড়াতে আসবা তখন।
আচ্ছা।
মনে থাকবে তো?
আচ্ছা।
এসব কিন্তু আবার অভিকে বলোনা যেন।
আচ্ছা।
পরক্ষণে অভিককে দেখে সালমা বেগন একদম সোজা হয়ে দাঁড়ালেন।
এখানে কি হচ্ছে?
সুজানা সালমা বেগমের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।
সালমা বেগম বললেন
কোথায় কি হচ্ছে? আমি ওর সাথে কথা বলছিলাম।
আচ্ছা। ভালো।
হ্যা। ভালো হবেনা কেন?
কেন’র উত্তর আমার কাছে নেই। তোমার কাছে আছে।
অভি মশকরা করবি না।
সুজানা ঠোঁট টিপে হাসলো। এরা মা ছেলে দুটোই পাগল।
আজীম সাহেব মা ছেলে আর সুজানাকে দেখে এগিয়ে এলেন। বললেন
কি চলছে এখানে?
অভিক পেছনে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বলল
বাবা মা সুজানার সাথে কিছু শলাপরামর্শ করছিল। শুনতে এলাম।
বললেই হলো নাকি?
আজীম সাহেব হাসলেন। বললেন
সুজানা আন্টি তোমাকে প্রচুর জ্বালাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি।
সুজানা মৃদু হেসে বলল
না তেমন কিছু না।
তুমি একদম কথা বলবে না। ছেলেটাকে নিজের মত বানিয়েছ না? আমার থেকে কথা লুকায়।
অভিক চোখের ইশারায় চুপ করতে বললো।
ছেলে কি লুকিয়েছে সালমা?
অনেক কিছু লুকচ্ছে সে ইদানীং। তুমি সব জানো। শুধু আমি জানিনা। শোনো ছেলেকে নিজের মত করেছ সে ভালো কথা, কিন্তু ছেলের বউ একদম আমার মনের মতো হবে। বুঝেছ?
হ্যা হ্যা বুঝেছি। তুমি নিজ হাতে গড়ে নিও। কোনো সমস্যা না। ঠিক আছে?
হ্যা।
উনাদের সাথে সাথে সুজানাও ঠোঁট টিপে হাসলো।সালমা বেগম তার দিকে ফিরে বলল
তুমি হাসছ কেন? তুমি যাও তোমার ইয়ের কাছে।
কার কাছে?
মাগোমা সব বলে দিতে হয় কিছুদিন পর শ্বশুরবাড়ি যাবে। আপাতত তোমার মায়ের কাছে যাও বাছা।
সুজানা মাথা নেড়ে চলে গেল। সালমা বেগমও বাবা ছেলের দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলেন।
উনি চলে যেতেই বাবা ছেলের কানের পাশে গিয়ে বলল
অভিক ফারদিন, তোমার বউয়ের কপালে দুঃখ আছে। আমার মতো ধৈর্যশালী হলে তো ভালোই।
অভিক ঠোঁট উল্টে বলল
কনফিউজড।
কে?
তারা দুজনেই।
বাবা এবার ভুরু কুঁচকে তাকালেন ছেলের দিকে।
কিয়ৎক্ষণ পর হেসে উঠলো দুজনেই।
চলবে………
রিচেক করা হবে