মুগ্ধতার_এক_বিকেল (১৩)

0
237

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (১৩)

সায়রা পালিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময়েই অনুভব এসে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল।

“কী হয়েছে? সামনে এসে দাঁড়ালে কেন?”

“আগে তো বলো নি বয়ফ্রেন্ড ও এসেছে। সন্দেহ তো ঠিক ই করেছিলাম।”

“কী!”

“বুঝো নি? এত ঢং কেন ধরো।”

“অনুভব পথ ছাড়ো। আমার ভালো লাগছে না।”

“হুম ভালো তো লাগবেই না।”

“সরো।”

অনুভব কে ঠেলে ভেতরে চলে গেল সায়রা। এসে কিছু সময় কান্না করল। সেই দিনটি তার জন্য বড়ো পরীক্ষার দিন ছিল। হয়তো ভুল ছিল অনেক কিছু। তবে ভালোবাসার কাছে কোনো ভুল ই তো ভুল নয়। কিন্তু ভাগ্য সে তো নিজের মতই পথ এগোলো।

সাঈদ সেদিন নিজের সব কিছু ফেলে সায়রার কাছে এসেছিল। সায়রা শুরুতে নাকোচ করে দিলেও পরে গিয়েছিল সাঈদের কাছে। তবে বাইরে ছিল না সাঈদ। তারপর কত কল করা হলো, রিসিভ হলো না। দুদিন পরে সায়রা জানতে পারল সাঈদ তার হলুদের অনুষ্ঠান ফেলে তার কাছে এসেছিল। এ কথা শোনার পর সায়রা ছিল ভীষণ লজ্জিত। যদি ওরা সেদিন পালিয়ে যেত, তবে আরেকটি মেয়ের ক্ষতি হয়ে যেত। মেয়েটি বিয়ে ভা ঙা র শোকে গ লা য় দড়ি দিত নিশ্চয়ই। কত কিছুই তো ঘটতে পারত। পরিস্থিতি এমন এক সংকট তৈরি করে যার ফলে কোন টা ঠিক আর কোন টা বেঠিক তা বোঝা যায় না। তবু যদি সায়রা আর সাঈদের একটি সংসার হতো, তবে খুব ক্ষতি হতো? হয়তো হ্যাঁ। নতুবা এই পৃথিবী কেন এমন এক সংকট তৈরি করল?

সকালটা সুন্দর। আহনাফের জন্মদিন। সবাই উইশ করেছিল রাতেই। তবে সায়রার শরীরটা খারাপ লাগছিল বিধায় সে বের হতে পারে নি। ও ঠিক করেছে একে বারে উপহার নিয়েই উইশ করবে। তাই ব্যাগ পত্র নামিয়ে বসেছে। আমিরা হাত মুখ ধুয়ে এসে বসল ওর পাশে।

“মিমি বাইরে যাবে?”

“যাব। আহনাফের উপহারটা নিয়ে যাই।”

সায়রা ব্যাগ নামিয়ে খুঁজতে লাগল। তবে যেখানে রেখেছিল সেখানে পাচ্ছে না। তাই অন্য অংশে খুঁজতে শুরু করেছে। এক পর্যায়ে পুরো ব্যাগ খুঁজে ফেলল তবে উপহার পেল না। ওর গলাটা শুকিয়ে এল।

“কী হয়েছে?”

“উপহারটা পাচ্ছি না।”

“বাসায় রেখে এসেছো?”

“না রে। আমি সাথেই নিয়ে এসেছিলাম।”

“তাহলে।”

“জানি না। কোথাও পড়ে গেল কী না।”

সায়রা চিন্তিত, ব্যথিত। এখন উপায় কী? সায়রা তার জমানো টাকা থেকে প্রায় ৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি দামি ঘড়ি এনেছিল। এত বড়ো অনুষ্ঠান হচ্ছে, তাই সায়রা চায় নি সে ছোট হোক। তাই অত খরচ করে আনা। কিন্তু এখন কী উপায়? সায়রার নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। কষ্ট দেখা যাচ্ছে মুখশ্রী জুড়ে।

“মিমি।”

“তুই একটু বোস। আমি একটু বাইরে থেকে আসি।”

আমিরাকে রেখে দ্রুত বেরিয়ে পড়ল সায়রা। কল করল ভাইয়ার নাম্বারে। তবে নেটওয়ার্কে সমস্যা দেখা যাচ্ছে। যেই না একটু ঠিক হলো সায়রা শুধু বলল,”ভাইয়া আমায় দ্রুত হাজার দুয়েক টাকা পাঠাও।”

তবে ওপাশ থেকে কেউ কিছুই শুনতে পেল না। নেটওয়ার্কের অবস্থা খুবই খারাপ। সায়রার মাথা কাজ করছে না। ওর কাছে হাজার দুয়েক টাকা আছে। তবে একেবারে খালি করে তো কিছু কেনা যায় না। ও আবার ডায়াল করল। তবে কাজ হলো না।

এপাশেই ছিল সাঈদ। সায়রাকে সে দেখেছে। শুনেছে কথা। ও ওঠে এসে টাকা বের করে বলল,”এটা নাও।”

সায়রা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল সাঈদ দাঁড়িয়ে। ও চোখ নামিয়ে বলল,”থ্যাংকস। বাট লাগবে না।”

এ কথা বলেই এগিয়ে গেল সায়রা। ও চায় না সাঈদের প্রতি তার অনুভূতি গুলো খুলে আসুক। ও এখন চায় সব অনুভূতি হারিয়ে যাক। মিশে যাক মাটির সাথে।

চেনা পরিচিত বলতে রনু আপুর ফ্যামেলি। তাদের কাছে তো টাকা চাওয়া যায় না। আর উপহার আজকে না দিতে পারলেও লজ্জায় পড়তে হবে। সায়রা পড়েছে ভীষণ সমস্যায়। সে সময়েই অনুভব কে দেখা গেল। তবে ছেলেটার কাছে টাকা চাওয়ার মতন সম্পর্ক কী আছে? উহু নেই। সায়রা চুপ করে বসে রইল। তারপর ভাবল ধার ই তো নিবে। ও একটা নিশ্বাস ফেলে অনুভবের কাছে এল। অনুভবের হাতে একটি বল। সেটা ছুঁড়ে দিল অনুভব। তবে ধরতে পারল না সায়রা। অনুভব একটু ছুটে গিয়ে বলটা কুড়িয়ে আনল।

“সামান্য বল ও ধরতে পারলে না!”

সায়রা এ কথার জবাব দিল না। ওর লজ্জা লাগছে। ও চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিল। তারপর বলল,”একটা ফেবর করতে পারবে?”

অনুভব ভ্রু কুঞ্চিত করে চাইল। সায়রা নামের দুষ্টু নারী তার কাছে ফেবর চাইছে?

“ফেবর?”

“হ্যাঁ। একটু সমস্যায় পড়েছি।”

“বলো শুনছি।”

“আসলে আহনাফের জন্য আমি একটা সুন্দর ঘড়ি কিনেছিলাম। তবে সেটা ব্যাগে পাচ্ছি না। নেটওয়ার্কের জন্য বাসায় যোগাযোগ ও করা যাচ্ছে না। আজকে উপহার না দিতে পারলে আমি লজ্জায় পড়ব। তুমি আমাকে কিছু টাকা ধার দিবে? আই প্রমিস বাসায় ফিরেই দিয়ে দিব।”

অনুভব এক মুহূর্ত থমকে রইল। জবাব দিল না। সায়রার যে কি লজ্জা লাগছে। ও চোখ বন্ধ করে রইল। অনুভব বলল,”ঠিক আছে। এত হেজিটেট করার কিছু নেই।”

“থ্যাংক ইউ। আমি ফিরেই,দিয়ে দিব।”

অনুভব ওর কথায় হাসল। সায়রার যেন দম ফিরে এসেছে। সত্যিই সে বড়ো লজ্জার হাত থেকে বেঁচে গেল।

অনুভব অনেক সময় ধরেই ছেলেটাকে লক্ষ্য করছে। গতরাতে সায়রার সাথে কথা বলতে দেখেছে। তার মানে পূর্বপরিচিত। বয়ফ্রেন্ড ও হতে পারে। বল নিয়ে খেলতে খেলতে সাঈদের কাছাকাছি এল ও। সাঈদ তখন খোলা দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে। উদাসীন ভরা তার মস্তিষ্ক। ভুলে ভরা জীবন তার। অপ্রাপ্তির বেড়াজালে ভীষণ ভাবে আটকে আছে সে। অনুভব ওর সঙ্গ পেতে বল খেলার অফার করল।

“ব্রো, খেলা যাক?”

সাঈদ মৃদু সুরে বলল,”থ্যাংকস। এখন ইচ্ছা করছে না।”

অনুভব মনে মনে বলল,”শালা ইচ্ছা কেন করবে। শুধু মেয়েদের সাথে ইচ্ছা করে।”

ভেতরে এ কথা বললেও মুখে হাসি টানিয়ে রাখল। পাশের সিটে বসল। তারপর কিছু সময় নীরবতা।

“কোন শহর?”

“ঢাকা।”

“ওয়াও, আমিও।”

অনুভবের উচ্ছ্বসিত ভাবের বিন্দু পরিমাণ দেখা গেল না সাঈদের মাঝে। অনুভব মনে মনে ভাবল লোকটা রোবট।

একটা সময় পর অনুভব আবার বলল,”সায়রা কে চিনেন?”

সায়রার নাম শুনে নড়েচড়ে ওঠল সাঈদ। অনুভব ঠোঁট কামড়ে ভাবল মেয়েবাজ ছেলে কোথাকার। এত সময় তো পাথর ছিল। যেই না মেয়ের নাম শুনেছে ওমনি নড়েচড়ে ওঠেছে।

“জি। কিন্তু আপনি…..”

অনুভব কিছু বলতেই নিচ্ছিল সে সময়েই নম্রতা এসে দাঁড়াল। তার চোখ মুখ ফুলে গেছে। সাঈদের কোনো ধ্যান নেই।
“আম্মু কল করেছে।”

সাঈদ হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিল। কানের কাছে নিতেই ওপাশ থেকে মা বলল,”সাঈদ, আজই চলে এসো বাবা। কেন এখনো ঐ মেয়েটার কথা স্মরণ করছো বলো তো। আর মেয়েটাই বা কেমন। এখন তোমার বিয়ে হয়ে গেছে তারপর ও পিছু ছাড়ছে না। আমি আগেই বলেছি ও মেয়ে সুবিধার না। পারিবারিক শিক্ষা নেই। দেখলে তো।”

| আমি বইমেলা নিয়ে ব্যস্ত। আমার বই “প্রেমানল” প্রকাশ হয়েছে। পাবেন ঢাকার বইমেলায় স্টল নং :৭৯-৮০ তে। আগামীকাল আমিও যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ।|

চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here