#প্রানেশা
#পর্ব_৭
#জান্নাত_সুলতানা
-“রাশি প্লিজ তুই কিছু একটা কর।
আমি এই বিয়ে করতে চাই না।প্লিজ, প্লিজ মাকে বোঝা না একবার।”
কণ্ঠে আকুল আবেদন। রাশির বুকের ভেতর ধক ধক শব্দ করে হৃদপিণ্ড।
হয়তো পাশে বসা মানুষ টাও সেটা টের পেলো তাই তো রাশি হাত থেকে ফোন টা কেঁড়ে নিয়ে কানে তুলেই গম্ভীর কণ্ঠে জানান দিলো
-“আমি তোমার সমুদ্র ভাই বলছি।
কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো।”
নরম স্বরে জানতে চাইলো সমুদ্র।
মিরা এতোক্ষণ কান্না করছিল।তবে সমুদ্র এমন আশ্বাস দেওয়া কণ্ঠের বাক্য মিরা যেনো ভরসা পেলো।
চোখের পানি মুছে কয়েকবার শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে জানালো
-“ময়নাল ভাই আমার আম্মার কাছে এসছিল ওনার বাবা সহ।আর আম্মা একটু আগে আমাকে বলেছে কাল ময়নাল ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে।”
কথা টা বলেই হুহু করে আবার কান্না করে দেয় মিরা।
সমুদ্র বাকরুদ্ধ এই জানোয়ার শেষমেশ এই বাবা হারা এতিম মেয়েটাকেও ছাড়লো না।
-“আমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলব।
তুমি চিন্তা করো না।”
সমুদ্র কল টা কেটে ফোন টা আবার রাশির হাতে ফিরিয়ে দিলো।
রাশি তখনো থম মে’রে বসে আছে।
আজ বিকেলে রাশিদের বাড়িতে এসছে ওরা।
নাস্তা খেয়ে সমুদ্র বিশ্রাম নিচ্ছিল আর রাশি পড়ার টেবিলে বসে ছিল আর তক্ষুনি রাশির মা রাহনুমা বেগম নিজের ছোট বাটন ফোন টা রাশির কাছে দিয়ে বলেছিল মিরা কল দিয়েছে।আর রাশি ফোন টা কানে নেওয়া মাত্রই মিরা কথা গুলো জানালো।
রাশি যেনো কিছু বুঝতে পারছে না এখনো।কি বলল মিরা?সত্যি যদি এমন কিছু হয় তাহলে তাঁর মন ভাঙ্গা ভাইটার কি হবে?একমাত্র রাশি নিজেই জানে মিরা রিহান ভাই কে কত টা ভালোবাসে।
-“আমার জানা মতে ওর গ্রামের কোনো ছেলের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।
তুই জানিস কিছু?”
সমুদ্র’র কথায় রাশি ধ্যান ভাঙ্গে।
অদ্ভুত নয়নে সমুদ্র’র দিকে তাকিয়ে বলল
-“আমার ভাইয়া কে ভালেবাসে ও।”
-“তোর ভাই জানে?”
সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো।
রাশি মলিন স্বরে বলল
-“না।
জানার কথাও নয়। আপনি খুব ভালো করে জানেন ভাই এসব জানলেও কিচ্ছু আসে যায় না।”
-“যাবে না।
আসবে এবার আসবে।”
সমুদ্র গায়ে শার্ট টা জড়াতে জড়াতে বলল।
অতঃপর রাশির রুম হতে বেড়িয়ে বসার ঘর পেড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রিহানের রুমের দিকে এক পলক তাকিয়ে রাশির দিকে তাকালো।
রাশি তক্ষুনি প্রশ্নবোধক চাহনি দিন তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে।সমুদ্র সে-সব উপেক্ষা করেই রাশি কে কিছু ইশারা করে রিহানের ঘরের উদ্দেশ্য চলে গেলো। রাশি নিজেও বাড়ি হতে বেড়িয়ে গেলো।
——–
-“বাপ ছেলে যথেষ্ট বুদ্ধিমান দেখছি!”
ময়নাল চুপ করে চায়ের কাপে চুমুক বসায়।লতিফ মেম্বার চওড়া হাসে।
-“সব ঠিকঠাক করে এসছি।
কাল বিয়ে।”
-“ভালো কাজ করেছো।”
লতিফ মেম্বার এর কথার বিপরীতে আজগর শিকদার সায় দিয়ে জানায়।
——
ঠাশ করে গালে চড় পড়তেই মিরা ভ্যাঁভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো।
অথচ রিহান অতটা জোরে থাপ্পড় মারে নি যতটা জোরে মিরা কান্না করছে।
সমুদ্র বিরক্ত হলো।রাশির দিকে বিরক্তিকর চাহনি দিতেই রাশি হাসি থামিয়ে মিরাকে শান্ত হতে বলে বলল
-“প্লিজ চুপ করে।
কেউ শুনলে কেলেঙ্কারির শেষ থাকবে না।”
-“তোর ভাই আমাকে মারল কেন?”
বলে আবার নাক টানে।
রিহান এবার বেজায় চটে গেল।
বিরক্ত হয়ে দুই হাত কোমড়ে রেখে দিলো এক ধমক। মিরা অমনি কেঁপে উঠল।
রাশির পেছনে দাঁড়াল চুপটি করে তবে নাক টানার শব্দ তখনো হচ্ছে।
সমুদ্র এবার রিহানের দিকে তাকিয়ে বলল
-“শুনেছো নিশ্চয়ই সব তুমি?”
-“হ্যাঁ।
কিন্তু এসব কি সম্ভব?”
রিহান আসহায় কণ্ঠে জিগ্যেস করলো।
সমুদ্র রাশির দিকে একবার তাকালো। রাশি নিজেও সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।
সমুদ্র সে দিক হতে চোখ ফিরিয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে বলল
-“আমরা নিজেরা যাকে ভালোবাসি তাদের পেছনে না দৌড়ে যারা আমাদের ভালোবাসে তাকে আগলে নেওয়া বেটার।
আর যে ছেড়ে চলে যায় তার সৃতি আঁকড়ে না ধরে রেখে নতুন করে স্বপ্ন দেখে তা বাস্তবায়ন করা উচিৎ।”
-“উপায় নেই তো।”
রিহান ক্লান্তভরা কণ্ঠে জানালো।
সমুদ্র আশ্বাস দিয়ে বলল
-“আছে।
তুমি কাল ঠিক টাইমে উপস্থিত হবে তো?”
রিহান মিরা দিকে তাকালো। মিরার দৃষ্টি কেমন অনুভূতিহীন।রিহানের বুকের ভেতর যা ক্ষীণ পরিমাণ চিনচিন ব্যাথায় রুপান্তরিত হলো।
মেয়েটা তাকে নিঃসন্দেহে প্রচুর পরিমাণ ভালোবাসে।তাহলে সেই ভালোবাসা সে কেন নিজে পায়ে ঠেলে দিবে?না ঠেলে দিবে না।
-“ওকে বাড়ি দিয়ে আয় রাশি।”
রাশি মাথা নেড়ে মিরা কে নিয়ে চলে গেলো।
রিহান মিরা আর রাশি যতক্ষণ না দৃষ্টির আড়াল হয় ততক্ষণে সে দিকে তাকিয়ে থাকে এখনো সন্ধ্যা তাই বাইরে আবছা অন্ধকার।
ওরা দুজন দৃষ্টিগোচর হতেই রিহান সমুদ্র’র দিকে তাকিয়ে বলল
-“তুমি ম্যানেজ করবে কি করে?
মনে হয় না আজগর শিকদার এবার সম্ভব হতে দিবে!”
-“দাদা হয় আমার একটু তো সম্মান করো।”
রিহানের কথার বিপরীতে কথা টা বলেই সমুদ্র হো হা করে হেঁসে ফেলে।
রিহান নিজেও হাল্কা হাসলো।
-“মনে হয় না আর কোনো দিন করতে পারব।”
-“তুমি ভুলে যাচ্ছো আমার বোন তোমায় ভালোবাসত ন।”
-“উঁহু। ভুল তোমরা।
তোমার দাদা ওর অনুভূতি গুলো বুঝার আগেই আমার কাছ থেকে ওঁকে দূরে করে দিলো।”
-“ওর ছেলে বাবু হবে।
তোমার মেয়ে হলে মেয়ে কে দিয়ে প্রতিশোধ নিও।”
সমুদ্র কথা টা বলতে বলতে হেঁসে দিলো।রিহান হাসলো খুব জোরে হাসলো।যেনো সে সত্যি এটা বাস্তব করবে।সমুদ্র হাসতে হাসতে রিহানের রুম হতে বেড়িয়ে
নিজেও বউয়ের পেছনে পেছনে চলে গেলো। রিহান নিজের গায়ের লাল আর কালো রঙের চেক শার্ট টা খুলে ফেলে।
রুমে থাকা আলনা থেকে একটা গামছা নিয়ে এই রাতবিরেত ছুটলে চাপ কলে গোসল দিতে।
রাহনুমা বেগম ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিজের চোখের কোঠরায় জমে থাকা চোখের পানি টুকু মুছে নিলো।আজ কত বছর পর ছেলে কে হাসতে দেখলো।মনটা ওনার সমুদ্রের প্রতি মমতায় ভরে গেলো ছেলেটাকে যতটা খারাপ হবে ভেবে ছিল আসলে তেমনটা নয়।রাহনুমা বেগম কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রান্না ঘরে চলে গেলো।
——–
রাতে সমুদ্র কে বেশ যত্ন করেই জামাই আদর করা হলো।
রিয়াজ মাহমুদ রাহনুমা বেগম কেউ কোনো ত্রুটি রাখল না।
সমুদ্র খাবার খেয়ে বহু কষ্টে নিজের লম্বাটে দেহটা খানা দিয়ে ভরপুর পেট সহ টেনে নিয়ে রুমে আসতে বেশ বেগ পেতে হলো।
রুমে এসেই সমুদ্র বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়লো। রাশি মায়ের হাতে হাতে সব কিছু গুছিয়ে রুমে এলো প্রায় আধঘণ্টা পর।
এসেই সমুদ্র কে চোখের উপর হাত রেখে শুয়ে থাকতে দেখে দরজা বন্ধ করে এগিয়ে এসে সমুদ্র মাথার কাছে বসে আলগোছে নিজের হাত টা সমুদ্রের মাথার উপর রাখে।
সমুদ্র চোখ খুলে রাশির দিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
রাশি নিজের হাত টা সমুদ্রের মাথার উপর রেখেই চুল গুলো নড়াচড়া করতে করতে জিগ্যেস করলো
-“একটু লেবু পানি নিয়ে আসি?”
-“না।
তোর বর অতো টাও দুর্বল নয় যে শ্বশুর বাড়ি এসে সামন্য জামাই আদর তাকে কাবু করতে পারবে।”
-“সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি।”
কথা টা বলেই রাশি মুখ টিপে হাসতে লাগলো। আর অমনি সমুদ্র ধপ করে চোখ খুলে রাশি কে টেনে এনে নিজের বুকের উপর ফেলে শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো
-“তাই!এক্ষুনি প্রমাণ করে দিচ্ছি।
সমুদ্র শিকদার এই অল্পতেই মূর্ছা যাওয়ার পাত্র নয়।”
#চলবে…..
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/