প্রিয়_রুদ্র_ভাই #পর্ব-১৯ (ঈদ স্পেশাল-২) #তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

0
454

#প্রিয়_রুদ্র_ভাই
#পর্ব-১৯ (ঈদ স্পেশাল-২)
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

ঈদের আনন্দ চারিদিকে। রাস্তায় মানুষজনের ভীড় হৈ-হুল্লোড় যেনো ঈদ ঈদ আমেজ বাড়িয়ে দিয়েছে। তটিনী ও রুপান্তর রাস্তার পাশ দিয়ে হাটতে লাগলো। রুপান্তর তটিণী-র কানে ফিসফিস করে বলল, ‘সাইট দিয়ে কি সুন্দরী ছেলেরা যাচ্ছে মাইরি, চল কারো সাথে লাইন মা*রি।’

তটিনী চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলল, অসম্ভব।’

রুপান্তর ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘যেভাবে অসম্ভব বলছিস মনে হচ্ছে তুই কখনো ছেলেদের দিকে তাকাস না।’

তটিনী ভাব নিয়ে বলল, ‘তাকাই-ই না তো।’

রুপান্তর ভ্রু নাচিয়ে বলল, ‘রুদ্র ভাই কি তবে মেয়ে?’

তটিনী রুপান্তরের বাহুতে ঘুষি মা র লো। বলল, ‘বাদ দে। আমরা তো ঘুরাঘুরি করবো এসব ছেলেদের প্যারা কেন নিতে যাবি হুদাই? তাছাড়া তোর তো জামাই আছে, দরকার হলে তারে ফোন দে।’

রুপান্তর ফুসফুস করে বলল, ‘কিসের জামাই, কেডা জামাই? আমার কোনো জামাই নাই। একদম ওই বিড়ালের কথা তুলবি না। বেটা এক নম্বরের খবিশ।

‘কেন কি করেছে তোকে সে?’

‘কি করেনি? আজ পর্যন্ত কোনো ছেলেকে দেখেছিস বিয়ে করে বউ হীনা থাকতে? এই বেটারে দেখে কেউ বলবে বিয়ে করছে? পুরুষ মানুষ বউকে জোর করবে, ভালো টালো বাসবে তা না!

তটিনী হেসে বলল, ‘সব পুরুষ আর আমাদের মজনু তো এক না। সে নিরীহ পুরুষ। ভীষণ সহজ-সরল। তুই অনুমতি না দিলে কখনো একটা শব্দও বলবে না।

রুপান্তর কোনো কথা বললো না। তটিনীর মাথায় চট করে আইডিয়া এলো। বলল, ‘এক কাজ কর না, মজনুকে কল কর। কথা বলে ঈদের শুভেচ্ছা জানা। বেচারা গ্রামের বাড়িতে কেমন ঈদ পালন করচে জিজ্ঞেস তো করতে পারিস।’

রুপান্তর মুঠোফোন বের করলো। মজনুর নাম্বারে ডায়াল করলো। রিসিভ হলো তৎক্ষনাৎ। রুপান্তর গলার স্বর যথাসম্ভব নরম করলো। বলল, ‘কেমন আছিস?’

ওপাশ থেকে মজনু সালাম দিলো। বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?’

রুপান্তর দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল, ‘তুমি কি রে? তোর বউ লাগি? তুই তরে বলবি।’

মজনু ভড়কে গেলো। বলল, ‘তুই কেমন আছিস?’

‘আমিও ভালো আছি। ঈদ মোবারক।

মজনু বলল, ‘ঈদ মোবারক।’

রুপান্তর তটিণী-র দিকে তাকালো। ইতিমধ্যে তটিনী হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরেছে। রুপান্তর ভ্রু কুঁচকে নিলো। তটিনী কানে কানে বলল, ‘আরও কিছু জিজ্ঞেস কর।’

রুপান্তর জিজ্ঞেস করল, ‘ঈদ কেমন কাটছে? বাড়ির সবাই কেমন আছে?’

ওপাশ থেকে মজনুর হাসির শব্দ শোনা গেলো। বলল, ‘সবাই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। ঈদ আলহামদুলিল্লাহ ভালো কাটছে। তোদের কেমন কাটছে?’

‘তোদের মানে?

মজনু এবার জোরে হাসলো। বলল, ‘তটিণী-র হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। দুটো নিশ্চয়ই একসাথে আছিস।’

রুপান্তর তটিণী-র দিকে মুঠোফোন বাড়িয়ে দিলো। তটিনী সেটা কানে চেপে বলল, ‘দোস্ত চিন্তা করিস না আমরা বিন্দাস আছি। ভালো করে আনন্দ কর। ঈদের ছুটির পর আবারও দেখা হবে। ততোদিন পরিবারকে সময় দে।

রুপান্তরের হাতে পুনরায় মুঠোফোন ফিরে এলো। রুপান্তর কানে ধরতেই মজনু বলল, ‘স্টুডেন্ট মানুষ, সামান্যকিছু সালামি পাঠিয়েছি। চেক করে নিতে বলো তটিনীকে।

‘আচ্ছা।’

মজনু মিনমিন করে বলল, ‘বিবাহিত জীবনের প্রথম ঈদের শুভেচ্ছা তোমায়। তোমার হাসবেন্ড এতো বড়োলোক নয় যা দিলাম সেটা ফেলে রেখো না। ইচ্ছে হলে খরচ করো না-হয়। রাখছি। ভালো থেকো রুপ।

মজনু ফোন কে*টে দিলো। রুপান্তর থমকে দাড়িয়ে রইলো। তটিনী ধাক্কা দিয়ে বলল, ‘কি হলো তোর?’

রুপান্তর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘তোকে সালামি পাঠিয়েছে, চেক করে নিতে বলেছে।’

‘তোকে?’

রুপান্তর মলিন হেসে বলল, ‘আমাকেও পাঠিয়েছে। চল চেক করি।’

তটিনী অবাক হয়ে বলল, ‘তোর মন খারাপ হলো কেন?

‘কিছু না, ও-ই এমনি।’

‘কি বলেছে ও যার জন্য তোর মুখ কালো হয়ে গেছে?’

রুপান্তরের চোখে জল টলমল করতে লাগলো। তটিনী দু’হাত জড়িয়ে ধরে বলল, ‘বাবা অনেক ক্লাসি এবং হাই তটিনী। মজনুকে মেনে নিবে না।’

তটিনী কিঞ্চিৎ হেসে বলল, ‘আমাদের মজনু কম কিসের? তুই কতোটুকু জানিস ওর সম্পর্কে? কখনো ওর পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিস? গ্রামের ছেলে বলে সে যে হাই বা ক্লাসি হতে পারে না সেটা কোথায় লেখা আছে? আর পারিবারিক দিক ক্লাসি না হোক, মজনু পড়াশোনা করছে। একদিন নিশ্চয়ই বড়ো কিছু হবে? তখন আঙ্কেল ঠিক মেনে নিবে দেখিস। চিন্তা করিস না এতো।’

রুপান্তর অবাক হয়ে বলল, ‘সত্যিই তো! ওকে কখনো ওর পরিবার নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়নি। ইনফেক্ট ওকে সবসময়ই দেখেছি নিজের খরচ নিজে বহন করছে। ওর পরিবার আছে তো তটিনী?’

তটিনী চোখ রাঙিয়ে বলল, ‘মজনু ভীষণ আত্মনির্ভরশীল ছেলে। নিজের দায়িত্ব নিজে নিয়েছে। এমন ছেলে তোর হাসবেন্ড, সেটাতে তোর খুশি হওয়া উচিত। হ্যাঁ জানি পারিবারিক দিকও ডিফেন্ড করে। সেটা না-হয় মজনুর থেকে জেনে নিবো আমরা?

রুপান্তর মাথা নাড়ালো। তটিনী নিজের ফোন চেক করে বলল, ‘আমাকে এক হাজার সালামি পাঠিয়েছে। তোরটা দেখ।

রুপান্তর নিজের মোবাইল চেক করলো। বিকাশে ঢুকে সালামিসহ মেসেজ দেখে চোখ বড়বড় করে তাকালো। অবাক কন্ঠে শুধালো, ‘একি রে, আমাকে দুহাজার দিলো। সাথে মেসেজ!

তটিনী নিজের হাতে মোবাইল নিলো। মজনুর মেসেজ পড়তে লাগলো।

‘বিবাহিত জীবনের প্রথম ঈদের শুভেচ্ছা নিও বউ। গ্রামে এসে বাবার সাথে কাজে হাত লাগিয়ে নিজে অনেক ইনকাম করেছি। সেগুলো থেকেই তোমাকে প্রথম সালামি দিলাম। তোমার প্রতিটা দিন ভালো কাটুক।

-মিনহাজ চৌধুরী মজনু।’

তটিনী চোখ বড়বড় করে বলল, ‘এই বেটা তো চৌধুরী বংশের বইন। আর তুই এতোদিন কি না পরিবার নিয়ে টেনশনে ছিলি! হায় খুদা।’

রুপান্তর তটিণী-র কাঁধে মাথা রেখে বলল, ‘আমারে পানি দে বইন। এই বেটা তো বোম ফা*টিয়ে দিলো। মজনু মিয়া চৌধুরী হয়ে গেছে, আয়হায়।’

তটিনী হাসতে শুরু করলো। রুপান্তর কটমট করে তাকিয়ে বলল, ‘হাসছিস কেন? আমি কি জানতাম নাকি বাল?’

তটিনী হাসি থামিয়ে বলল, ‘যাক এবার তোর মনের ভয় কেটেছে?

রুপান্তর মন খারাপ করে বলল, ‘ও যেমন পরিবারেরই হোক। আমার জন্য সেসব মেটার করে না রে। কিন্তু ফ্যামিলি মানাতে অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হয়। একটা চিন্তা দূর হলো। এখন আর আগের মতো আমি পরিবারের কথা চিন্তা করে পিছিয়ে পড়বো না। আমি সবসময়ই চাইবো মজনু যেনো নিজ যোগ্যতায় কিছু করে আমার বাবার কাছে আমাকে চেয়ে নেয়। যাতে আমি গর্ব করে বলতে পারি আমার হাসবেন্ড এটা!

তটিনী রুপান্তরের গলা জড়িয়ে ধরলো। কিছু বলার আগেই সামনে এসে দাড়ালো একটি বাইক। সানগ্লাস খুলে রুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল, ‘রাস্তায় দাড়িয়ে এতো জড়াজড়ি কিসের তোদের? মাইর চিনোস?’

তটিনী লাফিয়ে সরে গেলো। রুপান্তর দাঁত বের করে হেসে বলল, ‘আরে দুলাভাই আপনে? যান নাই?

রুদ্র হেসে বলল, ‘গিয়েছিলাম তো শালিকা। কিন্তু তোমার বান্ধবীর টানে মাঝপথ থেকে ফিরে আসলাম।

‘কেন?’

রুদ্র ভ্রু চুলকিয়ে তটিণী-র দিকে তাকালো। তটিনী মুখ ভার করে বলল, ‘ফিরে আসলেন কেন?’

‘বাইকের পেছনে বসে পড়।’

রুপান্তর আঁতকে উঠে বলল, ‘এসব কি দুলাভাই? আপনি আমার সাথে রীতিমতো অন্যায় করছেন। আমি কি আমার বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে পারবো না?’

রুদ্রের পেছন থেকে নেমে দাড়ালো রুদ্রের এক বন্ধু। বলল, ‘আপনি আমার সাথে আসেন আপু। ওরা একসাথে যাক। আপনি আমার সাথে রিকশায় যাবেন চলেন। আজ না-হয় আমাদের সাথে ঘুরলেন। কি বলেন?’

রুপান্তর রুদ্রের দিকে তাকালো। রুদ্র তটিণী-র দিকে তাকিয়ে আছে। তটিনী ঠোঁট উল্টে রুদ্রের বাইকে চেপে বসতেই রুপান্তর চিল্লিয়ে বলল, ‘ওরে খবিশ মহিলা। এই ছিল তোর মনে? আমারে সিঙ্গেল রাইখা তুই প্রেম করবি!’

তটিনী বাইক থেকে পড়ে যাচ্ছিল, রুদ্র তড়িৎ গতিতে ধরে ফেললো। রুদ্রের বন্ধুটি রীতিমতো জোর করে টেনে নিয়ে গেলো রুপান্তরকে। তটিনী কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল, ‘এটা কি করলেন আপনি? এখন কি হবে?’

রুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল, ‘কি হবে?’

‘রুপান্তর মন খারাপ করলো তো।’

রুদ্র নিজের সানগ্লাস খুলে তটিণী-র চোখে পড়িয়ে দিলো। বলল, ‘তুই বরং ভাব নে এখন। তোর বান্ধবীর মন খারাপ চলে যাবে কিছুক্ষণ পর চাপ নিস না।’

তটিনী চশমার ফাক দিয়ে রুদ্রের পেছন দিক দেখলো। রুদ্র বাইকের আয়নায় চোখ রেখে বলল, ‘এতো দেখিস না। কানা হয়ে যাবি।’

তটিনী নিজের পুরনো ভাবে ফিরে এলো। সানগ্লাস ঠিকঠাক করে বসলো। রুদ্র লুকিং গ্লাসে সেটা দেখে বাঁকা হাসলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here