#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_48(হানিমুন স্পেশাল)
#ইয়াসমিন_খন্দকার
সিলেটের ব্ল্যাক মুন রিসোর্টের বাগানের দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে দুজন যুগল। এক অতীব সুন্দরী রমণী তার প্রিয় পুরুষের কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। তারা আর কেউ না, শান্ত-লারা। বিয়ের পর প্রথম হানিমুনে এসেছে। লারা শান্তকে বলে,”আমি ভাবতেই পারিনি শান্ত তুমি আমায় এত ভালোবাসবে। জানো, সেই ছোটবেলা থেকে আমি তোমাকে ভালোবাসি। সবসময় তোমাকে নিয়ে কল্পনা করেছি সংসার সাজানোর। কিন্তু মাঝখানে ঐ প্রণালীর প্রতি তোমার এত আগ্রহ দেখে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তোমায় বুঝি কোনদিনও আমি পাবো না। কিন্তু দেখো আজ আল্লাহ আমাদের দুজনকে মিলিয়ে দিয়েছে।”
শান্ত অন্যমনস্ক হয়ে বলে,”আল্লাহ যা চেয়েছিলেন তাই হয়েছে। প্রণালী শুধু আমার প্রতিশোধ ছিল, আমার ভাগ্য তো তুমি।”
~~~~~~~~~~
প্রণালী ও সমুদ্রও পৌঁছে গেছে হযরত শাহজালালের পবিত্র মাটি সিলেটে। ভাগ্যক্রমে তারাও এসেছে ব্ল্যাকমুন রিসোর্টে। প্রণালী দীর্ঘ যাত্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিল। সমুদ্র বারকয়েক তার নাম ধরে ডেকেও ঘুম ভাঙাতে ব্যর্থ হলে তার মুখে পানির ছিটা দেয়। প্রণালী বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে বলে,”কি হয়েছে?”
“কিছু হয়নি। আমরা সিলেটে পৌঁছে গেছি।”
প্রণালীও বিরক্তি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। বিড়বিড় করে বলে,”যেখানে বিয়েটাই মানি না, সেখানে হানিমুন নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কিভাবে মানব।”
সমুদ্র প্রণালীর এই কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। বলল,”আমারও ইচ্ছা ছিল না এখানে তোমার সাথে হানিমুনে আসার ইচ্ছা ছিল না। নেহাৎ ডেড অসুস্থ তাই..”
প্রণালী আর কিছু বলে না। দুজনে মিলে ব্ল্যাক মুন রিসোর্টে প্রবেশ করে। রিশেপসনিস্ট তাদের দেখেই বলে,”ওয়েলকাম টু আওয়ার রিসোর্ট। আপনারা অনেক লাকি জানেন?”
সমুদ্র বলে,”লাকি কেন?”
“আমাদের রেস্টুরেন্টে আজ একটা বিশেষ সিক্রেট উদ্বেগ নেওয়া হয়েছিল আজ আমাদের প্রথম গেস্টদের জন্য ড্রিম হানিমুন অফার ছিল। আর আপনারাই সেই কাপল।”
প্রণালী কোন আগ্রহ না দেখিয়ে বলে,”এসবের দরকার নেই। আপনারা আমাদের জন্য রুম বুক করুন দুটো।”
রিশেপসনিস্ট বলে,”দুটো কেন? আপনারা কি কাপল নন?”
প্রণালী কিছু বলার ওঠার পূর্বেই সমুদ্র বলে,”হ্যাঁ, আমরা কাপল। আর আমি আপনাদের অফার এক্সসেপ্ট করলাম।”
প্রণালী বিস্ফোরিত নয়নে তাকায়। সমুদ্র প্রণালীকে চোখ মারে। সে তো প্রণালীকে জ্বালানোর জন্যই রাজি হয়েছে। মেয়েটাকে জ্বালানোর কোন সুযোগ সে হাতছাড়া করতে চায় না৷ সে তো প্রথমে রিজেক্ট করতেই যাচ্ছিল কিন্তু যখন দেখল প্রণালী রিজেক্ট করছে তখন তাকে শায়েস্তা করার জন্যই একপ্রকার রাজি হয়েছে।
প্রণালী ও সমুদ্র তাদের জন্য বুক করা রুমে যায়। সেখানে গিয়েই প্রণালী বলতে শুরু করে,”আপনি ওনাদের ওফার এক্সসেপ্ট করলেন কেন? আর একটা রুম নেওয়ার মানে কি? বাড়িতে তো নিজের মায়ের আঁচলের তলায় ঘুরতেন। আর এখানে এসে রোমিওগিরি করছেন।”
সমুদ্র বলে,”এই শোনো, আমি মোটেই রোমিওগিরি করছি না। তোমার সাথে রোমিওগিরি করব কেন? তুমি কি নিজেকে জুলিয়েট ভাবছ? তুমি তো হলে লেডি দেবদাস!”
প্রণালী কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। সমুদ্র বিছানায় গিয়ে শুয়ে বলে,”তুমি আজ থেকে মেঝেতে থাকতে পারো।”
“আমি কেন মেঝেতে থাকব?”
“তাহলে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ো 🥵”
“আপনার কি মাথা খারাপ? আমি আপনার সাথে বেড শেয়ার করবো। কখনো না। আপনার মম তো তাহলে আমায় জ্যান্ত রাখবে না।”
“আমার মাকে কি তুমি এত ভয় পাও?”
“আমি কেন ভয় পাবো? আমি তো আপনার কথা ভেবেই বলছি। আপনার মম যদি এসব জানতে পারে তাহলে..”
সমুদ্র হঠাৎ করে উঠে বসে। তারপর বলে,”আমি একটু আসছি।”
এই বলে বাইরে এসে ভাবে কি করবে এখন। ড্যাডকে তো কথা দিয়েছিল যে, মমের সাথে যোগাযোগ করবে না। আবার মম যদি রেগে যায়। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই ফ্যাসাদে পড়ে গেল বেচারা সমুদ্র।
~~~~~~~~
প্রণালী সকালের ব্রেকফাস্ট করার জন্য ব্ল্যাক মুন রিসোর্টের সংলগ্ন একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে। এসে বসে চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করছিল। এমন সময় সে এমন জিনিস লক্ষ্য করে যা তার চোখে জল এনে দেয়। শান্ত-লারাকে দেখতে পায় সে। তার থেকে কিছুটা দূরে বসে ওরা ব্রেকফাস্ট করছে। তাদেরকে একসাথে কতো হ্যাপি লাগছে। প্রণালীর সহ্য হলো না এই দৃশ্য। তাকে ঠকিয়ে শান্ত যে এত শান্তিতে আছে এটা অকল্পনীয়। প্রণালী বিড়বিড় করে বলল,”এই ২ বছরে তোমার মনে কি আমার জন্য বিন্দুমাত্র ফিলিংস জন্মায় নি? তুমি কি আমাকে একটুও ভালোবাসো নি শান্ত?”
এরমধ্যে লারার নজর যায় প্রণালীর দিকে। সে শান্তকে বলে,”শান্ত লুক, ওটা প্রণালী না?”
শান্ত প্রণালীর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,”আরে তাই তো।”
লারা বলে,”ঠিক আমাদের পিছু করতে করতে এখান অব্দি চলে এসেছে। দাঁড়াও আমি ওর ক্লাস লাগাচ্ছি।”
বলেই সে চলতে লাগে। শান্ত বলে,”লারা দাঁড়াও”
কিন্তু লারা প্রণালীর সামনে গিয়ে বলে,”এই মেয়ে তুমি এখানে কি করছ?”
প্রণালী আচমকা এমন ঘটনায় হচকচিয়ে যায়। লারা প্রণালীকে নানা রকম বাজে কথা বলতে থাকে। প্রণালীও কম যায় কিসে। সেও লারার সাথে তর্ক করতে থাকে। এর মাঝে শান্ত এসে তার গালে ঠাস করে চড় মা*রে। প্রণালী একদম পাথরের মতো জমে যায়। এমন কিছু সে একদম আশা করে নি। শান্ত যে এমন করবে তা প্রণালীর ভাবনার বাইরে। যে শান্তকে সে এতো ভালোবাসত আজ সে তার গায়ে হাত তুলল। প্রণালীর চোখ দিয়ে ছলছল করে জল পড়তে থাকে। এরমধ্যে কোথা থেকে সমুদ্র এসে পড়ে। সে এসেই শান্তকে বলে,”কে আপনি? আর আপনার এত বড় সাহস কোথা থেকে এলো, এত অডাসিটি আপনার যে আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন। আপনাকে তো আমি।”
বলেই সমুদ্র শান্তর সাথে ফাইট শুরু করে। প্রণালী অবাক হয়ে সবটা দেখতে থাকে। এ সমুদ্রর কোন রূপ দেখছে সে? যেই সমুদ্র তাকে দেখতেই পারে না সেই আজ তার জন্য ফাইট করছে৷ এটা প্রণালীর কল্পনাও নেই।
সে শুধু অবাক হয়ে দেখছে। একটা সময় পর সমুদ্রকে আটকাতে গেলে সমুদ্র প্রণালীকে বলে,”এর এত সাহস কি করে হয় আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার এর হাত আমি ভেঙে দেব ছাড়ো আমায়।”
প্রণালী সমুদ্রর এমন বদলে যাওয়া রূপ দেখে বলে,”এটা কিভাবে সম্ভব? এতো বদল? মম কি চামচার এই রূপ!”
সমুদ্র শান্তকে মা*রতে মা-রতে মে**রেই ফেলবে এমন অবস্থা। কয়েকজন লোক এসে তাকে ছাড়িয়ে নেয়।
প্রণালী সমুদ্রর কাটা স্থানে ব্যাণ্ডেজ করতে করতে বলে,”আমার জন্য এতো লড়াই?”
“তোমার জন্য না আমার স্ত্রীর জন্য।”
“আপনার স্ত্রী কে?”
সমুদ্র হচকচিয়ে গেলেও বলে,”আমি কাপুরুষ নই সেটা প্রমাণের জন্যই।”
তখনই রেডিওতে বেজে ওঠে,”যদি অভিযোগ কেড়ে নেয় সব অধিকার
তবে অভিনয় হয় সবগুলো অভিসার
যদি ঝিলমিল নীল আলোকে ঢেকে দেয় আঁধার
তবে কী থাকে তোমার, বলো কী থাকে আমার?
যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাদাঁয়…”
to be continue…..