#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩১
জাহিন শ্বশুরবাড়ি এসেছে। সে একাই এসেছে সাথে কাউকে আনে নি এমন কি অয়ন্তিকেও না। বলতে গেলে কেউ জানে না জাহিন যে সন্ধ্যাপুরে এসেছে। জাহিন উঠোনের এক কোণে গাড়ি পার্ক করে। গাড়ির আওয়াজ শুনে ফাতেমা আক্তার ঘর থেকে বেরিয়ে মেয়ের জামাইকে দেখে বড্ড অবাক হয়। এই অবেলায় মেয়ের জামাই এখানে এসেছে কেন? মেয়ে আবার কিছু করে নি তো। জাহিন দুই কার্টুন মিষ্টির প্যাকেট আর ফলের প্যাকেট নিয়ে গাড়ি থেকে নামে। ফাতেমা আক্তার এগিয়ে এসে চিন্তিত গলায় বলেন।
“জাহিন বাবা তুমি হঠাৎ কিছু হয়েছে কি? অয়ন্তি কিছু করেছ কি?”
জাহিন মুচকি হেসে বলে, “না না অয়ন্তি কিছু করে নি। আপনি ভেতরে চলুন আমি বলছি।”
“আর এসব ফল মিষ্টি আনার কি দরকার ছিল।”
“দরকার ছিল।”
“ঠিক আছে এগুলা আমাকে দাও।”
“না না আমি নিতে পারব আপনি যান।”
জাহিন ভেতরে এসে বসে। ফাতেমা আক্তার বলেন, “তুমি বসো আমি একটু আসছি।”
জাহিন ফাতেমা আক্তারের মানোভাব বুঝতে পেরে বলে, “না না আমার জন্য কিছু করতে হবে না।”
“কি বলছো খালি মুখে যাবে তুমি।”
“আপনি এখানে বসুন আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
ফাতেমা আক্তার বসতে বসতে সন্দিহান গলায় বলেন, “কি কথা বাবা?”
“আঙ্গেল বাড়িতে নেই।”
“না ওনি তো স্কুলে গেছেন।”
“ফাইজও বাড়িতে নেই।”
“না স্কুলে গেছে।”
“ওও।”
“কি বলবে তুমি বলো?”
“আসলে কথাটা অয়ন্তিকে নিয়ে।”
“অয়ন্তিকে নিয়ে কি করেছে ও?”
“আসলে রাতের বেলা অয়ন্তির হঠাৎ করেই….।”
সবটা খুলে বলল জাহিন। ফাতেমা আক্তার ভর্য়াত গলায় বলেন, “আসলে এটা ওর ছোট থেকেই হয়। মাঝে মধ্যেই এমনটা হতো। তবে গত এক বছর যবত এমনটা আর হয় না। ভেবেছিলাম হয়ত ওর এই অসুখটা সেরে গেছে কিন্তু আবার হঠাৎ করে এমনটা কেন শুরু হল বুঝতে পারছি না।”
“ডাক্তার কি বলেছে এটার জন্য?”
“আসলে ডাক্তার বলেছে মানসিক ভাবে চাপ পড়লে এমনটা হয়। আর ওর মনের উপরে চাপ পড়ার কারণ তো একটাই নিজের মা আর দাদুকে হারানো।”
জাহিন আস্তে করে বলে, “ওও।”
“তুমি ওকে একটু ভালো রাখার চেষ্টা করো বাবা। ছোট থেকেই মেয়েটা আমার চুপচাপ স্বভাবের মুখ ফুটে কিচ্ছু চাইবে না তোমার কাছে ও তাই তোমাকেই একটু মানিয়ে নিতে হবে।”
জাহিন অশ্বাস দিয়ে বলে, “চেষ্টা করব ওনাকে সবসময় আগলে রাখার জন্য চিন্তা করবেন না আপনি।”
“জানি বাবা তুমি ওকে সবসময় আগলে রাখবে এই বিশ্বাসটা তোমার উপরে আছে আমাদের। কিন্তু সমাজের কিছু মানুষ আছে যারা অকথ্য কথা বলে যায়।”
“সমাজে থাকা মানুষজন কে কি বলল তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমি নিজে যেটা ভাল বুঝব সেটাই করব। আগে নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া একজন মানুষরে মূল কর্তব্য পরে না হয় সামাজের মানুষজনকে নিয়ে ভাবব।”
ফাতেমা আক্তার স্মিত হেসে বলেন, “ঠিক আছে তুমি বসো আমি আসছি।”
“আরেকটা কথা আমি যে এখানে এসেছি অয়ন্তিকে জানানোর দরকার নেই।”
“আচ্ছা।”
জাহিন শরীর হেলিয়ে দেয় সোফায়। অয়ন্তির কাঁপুনির দৃশ্যটা মনে পড়লেই বুকের বা পাশটায় একটা অসহনীয় ব্যথা অনুভব করে। জাহিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। মেয়েটার মায়ায় খুব বাজে ভাবে জড়িয়ে পড়ছে সে খুব বাজে ভাবে। হৃদয় এটাও জানান দিচ্ছে ধীরে ধীরে মেয়টার প্রেমে সে পড়ে যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত মেয়েটার দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে সে, হয়ত বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনের কারণেই এমনটা হচ্ছে তার সাথে। কিন্তু মেয়েটার হৃদয় কি বলে তার জন্য? মেয়েটা কি তার প্রেম পড়েছে নাকি এখনও পড়ে নি?
______
শারাফের আজ অফ ডে। থানা থেকে আজ ছুটি নিয়েছে শারাফ। সবসময় এই কাজের প্রেসারে থেকে নিজেকে সময় দিতে পারছে না তাই এই ছুটি নেওয়ার কারণ। যে ছেলে সকাল সাতটার দিকে ঘুম থেকে উঠত সে আজকে উঠেছে বরোটার দিকে। শীতের সকাল লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে ভালোই লাগে। শারাফ গোসল সেরে খালি গায়ে এসে বেলকনিতে দাঁড়াল গলায় ঝুলছে টাওয়াল। পিঠে এখনও বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে, নাভির নিচ থেকে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়া। হঠাৎ করেই শারাফের নজর পড়ল পাশের ফ্ল্যাটের অসভ্য মেয়েটার দিকে যে মেয়েটা হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শারাফ মেয়েটার দিকে তাকাতেই মেয়েটা নির্লজ্জের মতো বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসি দিল। এই হাসি দেখে শারাফের গা জ্বলে গেল। এতো অসভ্য মেয়ে তার এই হোল লাইফে দেখে নি। এতো এতো কথা শুনায় মেয়েটাকে কিন্তু তারপরও যেন সুপার গ্লুর মতো তার পিছনে লেগে আছে। এমনকি এই মেয়ের বাবা মাকেও বিচার দেওয়া হয়েছে কিন্তু লাভের লাভ কিচ্ছু হলো না। শারাফ বিতৃষ্ণা নিয়ে প্রশ্ন করল।
“কি হয়েছে?”
মেয়েটি হাসতে হাসতে বেশরমের মতো বলল, “সুন্দর লাগছে আপনাকে।”
“জানি।”
“আরো সুন্দর লাগবে যদি প্যান্ট ছাড়া থাকেন।”
শেষের কথাটা মেয়েটা বিড়বিড় করে বলে। শারাফ ভ্রু কুঁচকে বলে, “কি ছাড়া সুন্দর লাগবে?”
মেয়েটা তড়িঘড়ি বলে, “কিছু না আজকে থানায় যান নি?”
“না যাই নি দেখতেই তো পারছো।”
মেয়েটা আহ্লাদী গলায় ঘাড় বাঁকিয়ে বলল, “আপনি এভাবে কথা বলেন কেন? একটু সুন্দর করে কথা বলা যায় না বুঝি আমার সাথে।”
শারাফ বিরস গলায় বলল, “না যায় না কারণ আমার জন্মের সময় আমার মা আমার মুখে তিতা দিয়েছিল মধু দেয় নি।”
কথাটা বলেই শারাফ হনহনিয়ে বেলকনি থেকে চলে আসে। বেলকনিতে যাওয়াটা তার ভুল হয়েছে মুডটাই তার খারাপ করে দিল অসভ্য মেয়েটা। বয়স কতটুকু হবে এই মেয়ের? সবে ষোল সতেরো হবে হয়ত, কিন্তু এই বয়সেই এই মেয়ের এত অধঃপতন। বাবা মা’ই বা কেমন মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারে না। আগের বাবা মায়েরা সন্তানরা কিছু উল্টাপাল্টা করলেই চ্যালা কাঠ দিয়ে পিটাতো আর এখন তো সন্তানরা বাবা মাকে কথার মারপ্যাঁচে পিটায়। এই জেনারেশনটা এখন একটা অসুস্থ জেনারেশনে পরিণত হচ্ছে দিনকে দিন।
শারাফ হুডি আর জিন্স পড়েছে। বন্ধুদের সাথে আজকে এক সাথে লাঞ্চ করার প্ল্যান করেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ঘড়িটা হাতে পড়ার সময় হঠাৎ মনে পড়ে গেল লিজার কথা। আচ্ছা মেয়েটাকে একটা কল করলে কেমন হয়? যেই ভাবনা সেই কাজ শারাফ ফোন হাতে নিয়ে লিজার নাম্বারে কল করল। কিন্তু গত বারের মতো এবারও লিজা কল ধরল না। শারাফ বিরস গলায় বলে উঠল।
“আশ্চর্য এই মেয়ে কোন দুনিয়াতে থাকে কল করলে পাওয়া যায় না। কল যখন ধরবি না তাহলে ফোন ইউজ করার কি দরকার। অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার।”
শারাফ আবারো কল করল কিন্তু সেই একই ঘটনা রিং হয়ে কল কেটে গেল। শারাফ ধ্যাত বলে ফোনটা কান থেকে নামিয়ে পকেটে রেখে দিল। শারাফ পরিপাটি হয়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হতেই পাশের ফ্ল্যাটের মেয়েটার সাথে পুনরায় দেখা হয়। মেয়েটার সাথে তার মাও আছে। শারাফের খুব ইচ্ছে করছে আচ্ছা করে মেয়েটার মাকে কিছু বলে দিতে কিন্তু এখন কোনো রকম বেজালে জড়াতে চায় না তাই আর কিছু বলল না। শারাফ আবার ফ্ল্যাটের ভেতরে ঢুকে পড়ে না হলে দেখা যাবে লিফটে এই মেয়েটার সাথে তাকে নিচে নামাতে হবে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর শারাফ নিচে নামে।
শারাফ বাইকে করে রেস্টুরেন্টে আসে। পার্কিং লটে বাইক পার্ক করে রেস্টুরেন্টের ছাদে গেল। সেখানে টেবিল বুক করা হয়েছে। শারাফকে আসতে বন্ধুরা চিৎকার করে বলে উঠে।
“এই তো আমাদের পুলিশ অফিসার চলে এসেছে।”
“কি মামা ভালা আছো নি?”
শারাফ নুহাশের পাশে বসতে বসতে ফুয়াদের কথার উত্তর দেয়, “হুম।”
তারপর নুহাশের কাঁধে হাত রেখে নুহাশের মলিন মুখটা দেখে বলে, “তোর আবার কি হল? মুখটা এমন বাংলার প্যাচের মতো করে রেখছিস কেন?”
নুহাশ কফি খেতে খেতে বলে, “কিছু হয় নি।”
“মামা ওরে দেখে মনে হচ্ছে না ও বিশাল বড়ো এক ছ্যাকা খেয়েছে।”
শারাফ কথা শুনে নুহাশের হাত ধরে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে, “তোরা বস আমি আর নুহাশ একটু আসছি।”
“এই যে আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেছে দুজনের চিপায় যাওয়া। এই তোরা কি কোনো ভাবে…।”
শারাফ জীবনকে কথা বলতে না দিয়ে জীবনের পায়ে লাথি মেরে বলে, “শালা তোর মনে যে এসব চিন্তা ঘুরে জানা ছিল না। এই নুহাশ চল তুই আমার সাথে।”
শারাফ আর নুহাশ ছাদের এক কোণে গিয়ে দাঁড়ায়। শারাফ চিন্তিত গলায় বলে, “কি হয়েছে তোর?”
নুহাশ ধীর গলায় বলে, “নিজেকে ধরে রাখা খুব শক্ত হয়ে যাচ্ছে দিন দিন আমার জন্য। মেয়েটা প্রতিনিয়ত ওর দিকে আমাকে চুম্বকের মতো টানে। পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি আমি মেয়েটার কাছ থেকে।”
শারাফ শান্ত গলায় বলল, “বলে দে জারাকে তোর মনের কথা।”
নুহাশের নিঃশব্দে হেসে বলে, “যে বাড়ির নুন খেয়ে বড় হয়েছি সেই বাড়ির মেয়ের দিকে নজর দিতে পারব না।”
“শালা নুন খেয়েছিস তো কি হয়েছে এবার বাকি জীবন মিষ্টি খাবি।”
নুহাশ তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসি দিয়ে বলে, “এই মিষ্টি খেতে চাইলে শেখ বাড়ির উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে যাবে যেটা আমি চাই না হোক।”
“প্রেম ভালোবাসায় ঝড় আসবে এটাই স্বাভাবিক নুহাশ। সেই ঝড়টাকে মোকাবেলা করতে হবে শুধু।”
“এতোটাও সাহস নেই আমার এই ঝড় মোকাবেলা করার।”
শারাফ এবার রাগ দেখিয়ে বলে, “তাহলে তুই এই প্রণয়ের দহনে প্রতিনিয়ত পুড়ে পুড়ে মর। যখন দেখবি জারা অন্য জনের হয়ে যাচ্ছে তখন বুঝবি ঠেলা।”
কথাটা বলেই শারাফ চলে যায়। নুহাশ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে সামনের দিকে তাকায়। সত্যি তো জারাকে যখন অন্য জনের হতে দেখবে তখন কেমন অনুভূতি হবে বুকের ভেতরে। কথাটা ভাবতেই নুহাশের বুকের বা পাশটার চিনচিন ব্যথা অনুভব করতে শুরু করল। নিজের ডান হাতটা দিয়ে নুহাশ বুকের বা পাশটা চেপে ধরল।
_________
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অয়ন্তি পড়ার টেবিলে বসে আছে কিন্তু তার মনযোগ সম্পূর্ণ অন্য দিকে। পড়ার মন নেই মন পড়ে আছে জাহিনের কাছে। সকালের সুন্দর মুহূর্ত গুলা বার বার মনে দাগ কেটে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই অয়ন্তি গুনগুন করে খেয়ে উঠল।
“এক পায়ে নূপুর আমার অন্য পা খালি
এক পাশে সাগর এক পাশে বালি
তোমার ছোট তরী বলো, নেবে কি?”
জাহিন সবে মাত্র রুমে পা দিতে নিবে তখনই অয়ন্তিকে খালি গলায় গান গাইতে শুনে থমকে যায়। জাহিন দাঁড়িয়ে রইল আরো কিছুক্ষণ অয়ন্তির গান শুনার জন্য কিন্তু না মেয়েটা তিন লাইন গেয়ে থেমে গেল। চাইলে কি আর সব কিছু পাওয়া যায়। না পাওয়া যায় না এই যে জাহিন বউয়ের গান শুনতে চাইল কিন্তু বউ তার বোবা হয়ে বসে রইল। জাহিন নিরাশ হয়ে শব্দ করে রুমের ভেতরে ঢুকলো। অয়ন্তি পেছন ফিরে জাহিনকে এত জলদি আসতে দেখে বড্ড চমকালো। জাহিন অয়ন্তিকে আরো চমকে দিয়ে বলল।
“অয়ন্তি আমাকে একটা টি-শার্ট আর একটা ট্রাউজার দিন তো।”
অয়ন্তি কয়েক পল জাহিনের দিকে তাকিয়ে চট করে উঠে ওয়ারড্রোব খুলে জাহিনের টি-শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে জাহিনের কাছে আসল। কিন্তু জাহিনের নিকট এসে যা দেখল তাতে অয়ন্তি স্তব্দ, বিমূঢ়। নিজের চোখ দুটোকে যেন বিশ্বাস করতে চাইছে না অয়ন্তি। বুকের ভেতরটায় যেন চৈত্রর মাসের ঝড় বইতে শুরু করেছে। জাহিনের গলার কাছটায় এই লাল দাগটা কিসের কোথা থেকে আসল? দেখে তো মনে হচ্ছে নখের খামচি। তাও আবার যে সেই নখের খামচি নয় খুব গভীর ভাবে খামচি দিয়েছে, নিজের সর্বশক্তি দিয়ে খামচি দিয়েছে মানুষটা। জাহিন শার্টটা খুলে ফেলেছে, গায়ে শুধু এখন সাদা গেঞ্জি। জাহিন অয়ন্তির কাছ থেকে কাপড় গুলা নেওয়ার জন্য অয়ন্তির দিকে ফিরতে অয়ন্তির এমন হতবিহ্বল চাওনি দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে।
“কি হয়েছে?”
অয়ন্তি কাঁপাকাঁপা হাতে জাহিনের গলার কাছটা দেখিয়ে বলে, “এখানে কি হয়েছে?”
জাহিন নিজের গলার কাছটায় তাকাল লাল হয়ে আছে জায়গাটা। জাহিন পুনরায় স্ত্রীর দিকে তাকাল। অয়ন্তির চেহারায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আচ্ছা অয়ন্তিকে একটু বাজিয়ে দেখলে কেমন হয় দেখা যাক বাজানোর পর কেমন প্রতিক্রিয়া করে সে? এই প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝতে পারবে অয়ন্তির মনে তার জন্য ঠিক কি আছে? জাহিন অয়ন্তির কাছ থেকে কাপড় গুলা নিয়ে গলা খাকারি দিয়ে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলে।
“কিচ্ছু না।”
অয়ন্তির শ্বাস প্রশ্বাস অধিক মাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে। কিচ্ছু না মানে কি? স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে গলায় চার আঙ্গুলের নখের খামচি আর জাহিন বলছে কিচ্ছু না। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে এভাবে খামচি দিতে শুধু একজন মেয়েই পারে। কিন্তু কোন মেয়ে খামচি দিয়েছে জাহিনকে? অয়ন্তি এসব ভেবে শুকনো ঢোক গিলে ক্ষীণ স্বরে বলে, “আপনি আমার কাছ থেকে কিছু লুকিয়ে থাকলে বলে দিন।”
জাহিন অয়ন্তির দিকে ফিরে গলার স্বর কঠিন রেখে বলে, “আজব আমি কেন আপনার কাছ থেকে কিছু লুকাতে যাব। আর এখানে লুকানোর কি আছে?”
অয়ন্তির চোখ টলমল করছে। চোখের পলক ফেললেই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে অশ্রু কণা। অয়ন্তি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। নাকের পাটা ক্ষণে ক্ষণে ফুলে উঠছে। মানুষ ঠিকই বলেছে নেতাদের চরিত্র খারাপ হয় তারা ঘরে বউ রেখে বাইরে অন্য মেয়েদের সাথে অবৈধ ভাবে সম্পর্কে জড়িত থাকে। তাদের একজনকে দিয়ে চলে না তাদের অনেক জনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু জাহিনকে এ কদিন দেখে অয়ন্তি ভেবেছিল জাহিন হয়ত অন্য রকম অন্যদের মতো নয়। কিন্তু আজ সেই সকল মানুষদের কথাই সত্যি হল যারা বলে বেড়ায় নেতাদের চরিত্র খুব খারাপ। জাহিনও সবার মতো। যাকে কিনা নিজের মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে শুরু করেছিল সে মানুষটা তাকে এভাবে ঠকিয়ে দিল। সে সত্যি অভাগা তার কপালে সুখ নেই। সকাল বেলা নিজেকে ভাগ্যবতী ভাবাটা বড্ড অন্যায় হয়ে গেছে তার। তার ভাবা উচিত ছিল তার এই পোড়াকপালে এতো সুখ নেই। অয়ন্তি আর এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে দৌঁড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। জাহিন হাত বাড়িয়ে অয়ন্তিকে ধরার আগেই অয়ন্তি বেরিয়ে যায়। জাহিন তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা চেপে ধরল কপালের মধ্যভাগ। ডোজটা মনে হয় একটু বেশিই হয়ে গেছে। এবার কি করে অয়ন্তিকে মানাবে সে? মেয়েটা কি ভাবলো তার সম্পর্কে? তবে জাহিন এটা বুঝতে পারছে অয়ন্তি যে তাকে নিয়ে কোনো নারীঘটিত চিন্তা করছে এটা স্পষ্ট। মেয়েরা আর যাই হোক স্বামীর পাশে অন্য নারী সহ্য করতে পারে না আর তার উপরে জাহিনের গলায় এমন নখের খামচি দেখেছে। কিন্তু এই নখের খামচি অয়ন্তির দেওয়া সেটা তো আর অয়ন্তি জানে না। কথায় আছে যারা চুপচাপ স্বভাবের হয় সেই মেয়েদের রাগ, অভিমান দুটাই নাকি গাঢ় হয়। অয়ন্তি কোনটা করছে তার উপরে রাগ নাকি অভিমান। এবার কি করে জাহিন নিজের স্ত্রীর অভিমান আর রাগ ভাঙ্গায় সেটাই দেখার পালা?
#চলবে