প্রিয়_প্রাণ #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ৩৪

0
394

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৪

চিঠি। এই জিনিসটা পুণরায় এলো তথ্য’র কাছে। তথ্য এখন কুমিল্লায় আছে। বেশি দিন নয়। এই তো সপ্তাহ তিন চার হবে। গুনে গুনে বললে তিন সপ্তাহ চার দিন। চিঠি এসেছে এখানকার ঠিকানায়। ক্লান্ত তথ্য রুমে ঢুকা মাত্র রিক্তা নামের মেয়েটা দিয়ে গেলো। চৌদ্দ বছর বয়সী এক মেয়ে। এখানকার ই কেয়ার টেকার এর মেয়ে। এই কয়েকদিনেই তথ্য’র ভালো লাগলো মেয়েটাকে। সারাক্ষণ “আপা ম্যাডাম” ডাকে। তথ্য কতবার বললো, এটা কেমন ডাক। না রিক্তা শুনবেই না। ও এই নামেই ডাকবে। ওর নাকি তথ্য’কে আপা আপা লাগে। কিন্তু শুধু আপা ডাকতে নাকি মন টানে না তাই এই অদ্ভুত ডাকের আবিষ্কার করলো ও।
তথ্য চিঠিটা খুলতেই সবার আগে অবাক হলো। অফিশিয়াল কিছু ডকুমেন্টস এর কপি পাঠানো এখানে। বি*স্ফোরিত নয়নে তথ্য তাকিয়েই রইলো। এগুলো তুষারের কাগজ। তুষার ই এই কপি পাঠিয়েছে। কাঁপা কাঁপা হাতে তথ্য চিঠিটা খুলতেই গোটা গোটা অক্ষরগুলো চোখে ভেসে উঠলো,

আমার প্রাণ,
কষ্ট পেলে? এই তুষার তোমাকে সারাটা জীবন কষ্ট ই দিয়ে গেলো। জানতাম তুমি বিশ্বাস করবে না তাই অফিশিয়াল কাগজের কপি পাঠিয়ে দিলাম। শিঘ্রই সামনাসামনি দেখা হবে। আমি আসব। অপেক্ষা করবে নাকি এই শূন্য তুষারকে আর কাছে টানবে না?

ব্যাস এতটুকু ই। এতটুকু লেখা পড়ে বসে রইলো তথ্য। ঠিক কতক্ষণ যে বসে রইলো খেয়াল নেই। রিক্তা’র ডাকে হুশে ফিরলো ও। রিক্ত জহুরি চোখে তাকিয়ে বললো,

— আপা ম্যাডাম কি হইলো? কথা কও না ক্যান?

— হ..হু। ওহ না। কিছু না। কিছু বলবি?

— কি বলুম? খাওন আইনা দাঁড়ায়া আছি। খায়া নাও। ঠান্ডা হইয়া গেলো তো।

রিক্তা চলে গেল। খাবারটা ঠিকই ঠান্ডা হয়ে গেলো কিন্তু তথ্য তা মুখে তুলতে পারলো না৷ এই অগোছালো সব কি আদৌ কোনদিন গোছালো হবে?

_________________

তোঁষা ইদানীং মানুষ সহ্য করতে পারে না। সেদিনের পর থেকে তুষার অনেকবার ই এলো এখানে। তোঁষা ভাইকে চিনতে পারে নি। আরহাম চেয়েও তখন নিজে অসুস্থ থাকার কারণে তোঁষার কোন ট্রিটমেন্ট শুরু করতে পারে নি৷ আজও তুষার ড্রয়িং রুমে বসা। আরহামে’র পা ঠিক হয়েছে অনেকটাই। ক্রেচ ছাড়াই খুড়িয়ে হাটতে পারছে। তোঁষা এখনও রুমের বাইরে আসে না। হাজার দরজা খোলা থাকলেও না। সে বেরুবে না। আরহাম ছাড়া কাউকে দেখলেই হাতের কাছে যা পাচ্ছে ছুঁড়ে মা’রছে। তুষার শুধু বোনকে দেখে যাচ্ছে। কিছু বলা বা করার মতো তার হাতে আছে বলে মনে হচ্ছে না। তবুও আজ একপ্রকার বুকে পাথর রেখে আরহামকে বললো,

— ওকে আস্যাইলেমে পাঠা আরু।

— কি বলো? মাথা ঠিক আছে!

অনেকটাই রেগে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আরহাম। তুষার ও দমলো না। ওর পুতুল ওকে চিনে না এই শোক কোথায় রাখবে তুষার? এতটা অসহায় শেষ কবে লেগেছিলো নিজেকে? জানা নেই। তোঁষার এই অবস্থা কোন ভাবেই মানতে পারছে না ও। তুষার দারাজ গলায় বললো,

— আমার মাথা বিগড়াস না আরহাম৷ মাইর একটা ও নিচে…..

— আমার প্রাণ থাকতে ওকে ছাড়ব না।

— ছাড়তে বলি নি তোকে। ওকে ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। আমার পুতুলকে মে-রে ফেলবি তুই।

হঠাৎ আরহামে’র কিছু হলো। উঠে টেবিল থেকে ফল কাটার ছুড়িটা নিয়ে তুষারের হাতে দিয়ে বললো,

— এটা দিয়ে আমাকে মা’রো এরপর তোঁষাকে নিয়ে চলে যাও।

তুষার আরহামে’র বুকে ধাক্কা মা’রতেই হঠাৎ একটা ফ্লাওয়ার বাস ওর বাহুতে লাগলো। ভালোই ব্যাথা লাগলো। দরজার ফাঁক দিয়ে ফোঁস ফোঁস করা তোঁষার লাল মুখটা দেখা যাচ্ছে। আরহাম তুষারের বাহু ধরে বিচলিত হলো। তোঁষা ভেতর থেকেই আরহামকে ডাকতে লাগালো। বারবার বলছে,

— প্রাণ চলে এসো। ওটা খারাপ লোক। তোমাকে মে’রেছে। ওকে আমি মে’রে দিব। চলে এসো।

তুষার হয়তো আজকের মতো অবাক কোনকালে হয় নি। আরহাম থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে শক্তপোক্ত মানুষটা চলে গেল। আরহাম হাজার পিছু ডাকলেও শুনলো না। দাঁড়ালো না একপল।
.
রাত গভীর নয়। এই তো বারোটা। তোঁষার গা কাঁপানো জ্বর। আরহামের বুকে মুখ দিয়ে গুনগুন শব্দে কাঁদছে সে। এদিকে অস্থির আরহাম। তোঁষাকে অনেক জোর করে উঠালো।

— প্রাণ উঠ একটাবার। একটু পানি ঢালব।

— শীত লাগে তো।

— কথা শুনবি না? একটু উঠ।

অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ওকে নিয়ে ওয়াশরুম ঢুকে আরহাম। বহু কষ্টে গোসল করাতেই তোঁষার কাপুনি বেড়ে গেলো। রুমে এনে জ্বরের মেডিসিন দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঘুমালো তোঁষা।
আরহামে’র মাত্র ই বুঝি চোখটা লাগবে লাগবে ভাব। এমন সময় পেট মোচড়ে কান্না জুড়ে দিলো তোঁষা। শুধু ই বুঝি কান্না? ওর কান্নায় আরহামে’র ঘুম তো ছুটলোই সাথে লাইট জ্বালিয়ে তোঁষার দিকে তাকিয়ে নিজেই ঘেমে উঠলো। তোঁষা ফ্রক পরে থাকায় ওর ফর্সা পায়ে লাল তরল যেন রক্তজবার ন্যায় দেখালো। আরহামে’র গা গুলিয়ে উঠলো হঠাৎ করে। মনে হচ্ছে নিজেই বমি করে দিবে।

#চলবে…..

[তুষার কেন আরহাম হসপিটাল থাকাকালীন তোঁষার খোঁজ নিলো না? এই প্রশ্নটা অহেতুক। গল্প ভালো করে পড়ুন। লিখা আছে তুষারের কাছে কল গিয়েছে একদিন পর। হসপিটালে আসার পর পরই তো আরহামে’র জ্ঞান ফিরলো।]

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here