#একটি_সাঁঝরঙা_গল্প
#তানিয়া_মাহি
#পর্ব_২৩
“তোমার বাবা কিছু জানতে চেয়েছে, আবির। জানাও তাকে, কাকে পছন্দ করো তুমি?”
আবির তোয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করেই বলে উঠল,“আপনার মেয়েকে। আমি তোয়াকে পছন্দ করি।”
জাফর সাহেব এবং জাভেদ সাহেব দুজনে একসাথে দুজনের দিকে তাকালেন আর তারপর দুইজনের দুই জোড়া চোখ আবিরের দিকে চাইলো। আবির দাঁতে দাঁত চেপে মাটির দিকে তাকিয়ে রইল। ওদিকে ফালাক আর নিশো এসে দাঁড়িয়েছে তোয়াদের কাছেই। আবিরের কথা তোয়ার কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই মায়ের দিকে তাকালো। রূম্পা বেগম অলরেডি আবিরের দিকে আর তোয়ার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন। তোয়া মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
“আম্মা, পায়ের জুতা পায়েই রাখেন পিলিজ। ও নিশ্চিত বিয়ে করবে না বলে আমাকে ফাঁসায় দিচ্ছে। ও মিথ্যা বলতেছে, আম্মা।”
এই অবস্থায় মেয়ের এমন কথাবার্তায় রূম্পা বেগম কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলেন। মেয়েকে কী বলবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।
ওদিকে সবাই সিনেমার চুম্বুকাংশ দেখার অপেক্ষায় আছে। কী ঘটবে এরপর? সবাই কীভাবে নেবে বিষয়টা?
জাভেদ সাহেব ছেলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইলেন। গম্ভীর গলায় বললেন,
“তোয়াকে পছন্দ করো মানে?”
“পছন্দ না, ভালোবাসি।” আবিরের অকপটে বলে যাওয়া কথায় চরম ধাক্কা খেল তোয়া। আবিরের কথাটা প্রথমে মজার ছলে নিয়েছিল। ভেবেছিল আবির এই মেয়েকে বিয়ে করবে তাই হয়তো মিথ্যে বলছে কিন্তু দ্বিতীয়বার আবিরের বলার ধরণটা মোটেও মজার মনে হচ্ছে না তার।
ওদিকে ইভা মায়ের পাশে থেকে উঠে দৌঁড়ে নিজের বাড়ির দিকে চলে গেল। তার মা-ও আর বসে রইল না। আরেকজনকে সাথে করে মেয়ের পিছন পিছন রওয়ানা দিলেন। আবির একবার ঘাড় ঘুরিয়ে ইভার যাওয়া দেখল।
জাফর সাহেব কিছু বলছেন না। তিনি বিষয়টা একদমই বুঝতে পারছেন না। আবির সত্যি বলছে কি না সেটাও বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি।
জাভেদ সাহেব পুনরায় ছেলেকে প্রশ্ন করলেন,“সত্য বলছ?”
“হ্যাঁ বাবা।”
“এ কথা এভাবে বলতে পারলে?”
“না বললে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিলেন।”
ইভার বাবা লিয়াকত সাহেব এতক্ষণে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ঠোঁটে হাসি লেপ্টে বললেন,
“ভাই, ছেলেকে আর কিছু বলবেন না। ছেলে বড় হয়েছে তাদের পছন্দ থাকতেই পারে৷ তবে আমার আরেকটা প্রস্তাব আছে। ”
হাফ ছেড়ে বাঁচলো আবির। একটা বিপদ কেটে গেল। তার বিপদ অন্তত কেটে গেল। কষ্ট আর খুশি মিশ্রিত চোখে তোয়ার দিকে তাকালো। তোয়া তখনো আবিরের দিকেই তাকিয়ে আছে। আবির কিছু একটা ভেবে চোখ নামিয়ে নিল।
জাভেদ সাহেব লিয়াকত সাহেবের দিকে দৃষ্টি রেখে বললেন,“দুঃখিত বেয়াই। আমার আসলে আগে ছেলের বিষয়টা জানতে হতো৷ আমার নিজেরই ভুল হয়েছে। তাছাড়া ওরা তো বড় হয়েছে। ওদের পছন্দ, অপছন্দ, ভালো লাগা বা না লাগার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। ইভা মা ভালো থাকুক। দোয়া করি তার জীবন সুন্দর হোক।”
লিয়াকত সাহেব চেয়ার টেনে জাভেদ সাহেবের দিকে এগিয়ে এসে বসলেন। জাভেদ সাহেবের হাত ধরে বললেন,
“এভাবে বলতে হবে না, ভাই। আমি বুঝি৷ এটা এমন কোন অসম্ভব ব্যাপার হয়ে যায়নি।”
আবির পাশে থেকে উচ্চস্বরে বলে উঠল,“থ্যাংক ইয়্যু আঙ্কেল।”
আবির স্থান পরিত্যাগ করবে তার আগে জাফর সাহেবের দিকে ফিরে বলল,
“চাচা, আপনার কোন আপত্তি নেই তো!”
জাভেদ সাহেব বিরক্তিতে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,“গেলে তুমি!”
আবির মুচকি হেসে নিশোর দিকে এগুতে থাকে। নিশো আবিরকে আসতে দেখে নিজেও এগিয়ে এলো। সামনে এসে দাঁড়িয়ে আবিরের পেটে আস্তে করে আঘা*ত করেই বলে উঠল,
“তুই শা* লা ঠিক হলি না। বড়দের সাথে এভাবে কথা বলতে পারলি কীভাবে! আশ্চর্য হচ্ছি আমি।”
“বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল, ভাই। তোর বোনের কী হতো ভাব?”
“তোর চেয়ে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিতাম।”
“পেলে তো দিবি।”
“অহরহ।”
“প্রয়োজনে তোর বোনকে দ্বিতীয় বউ বানাইতাম তাও অন্যকোথাও বিয়ে হইতে দিতাম না, ব্রো।”
“তোকে আমি বিয়েও করাইতাম।”
“থাক ওয়াশরুম থেকে আসি, অনেকক্ষণ ভয়ে চাপ সহ্য করে দাঁড়িয়ে ছিলাম।”
“শা লা।”
নিশো এসে ফালাকের পাশে দাঁড়ালো। ফালাক সাগ্রহে শুধালো,
“কী কথা হলো দুজনের?”
“কী আর হবে? তোমার ভাই দিন দিন উচ্ছন্নে যাচ্ছে।”
“মাঝেমাঝে যেতে হয়।”
“আমাকেও যেতে বলছো?”
“প্রয়োজন হলে যাবেন না?”
“প্রয়োজন হবে কেন? বাসায় ফিরতে দাও। ওদের বিষয় আগাক, আমিও বলে দিব।”
“কাকে বলবেন? কী বলবেন?”
” তোমার বাবাকে আর আমার বাবাকে।”
“কী বলবেন?”
ফালাকের প্রশ্নের নিশো ঘাড় বাঁকিয়ে তার দিকে তাকালো। ফালাক নিজেও নিশোর দিকে তাকালো। দুজনের চোখাচোখি হতেই ফালাক চোখ নামিয়ে নেবে তখনই নিশো বলে উঠল,
“ভালোবাসি।”
বুকটা ধক করে উঠল ফালাকের। চোখটা এক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। হঠাৎ মুখে প্রফুল্লতা স্থান পেল৷ বলে উঠল,
“এভাবে বললেন কেন?”
নিশো মুচকি হেসে বলল,“তোমাকে বলিনি তো।”
ফালাক ভ্রু কুঁচকে শুধালো, “তাহলে কাকে?”
“তুমি জানতে চাইলে আমাদের বাবাদের কী বলব, তাই তো তোমাকে বলে রাখলাম যে ওটা বলব।”
ফালাক দমে গেল। নিস্তেজ গলায় বলল,
“ওহ আচ্ছা।”
“ওহ আচ্ছা?”
“তো?”
“ভালোবাসি বলব? শুনবে?”
“না, না। দরকার নেই। ওটা বলতে হবে না।”
ফালাকের কথায় খিলখিল করে হেসে উঠল নিশো। চোখ দুটো ছোট হলো। ফালাক এক পলকে চেয়ে রইল। কী সুন্দর হাসি!
আবির ফিরে আসতেই তোয়া উঠে দাঁড়ালো। মাকে বলল,“দাঁড়াও ওকে আমি দেখছি। সাহস কত বড়, আমাকে নিয়ে এসব বলল! এত বড় মিথ্যা বলতে ওর বুক কাঁপলো না! পাক্কা হারামি ওটা।”
রূম্পা বেগম মেয়েকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
“বোস এখানে। তোর এসব নিয়ে ছেলেটার সাথে ঝগড়া করতে হবে না। আমিই আশ্চর্য হচ্ছি আবির এরকম ভুল করল কীভাবে!”
তোয়া অবাক হয়ে বলে উঠল,“ তুমি ওর পক্ষ নিচ্ছ! এই তুমি আমার মা! ওকে তো আমি এখনই দেখে নিব।”
রাবেয়া বেগম পাশে বসে থেকেও এতক্ষণ কিছুই বলেননি। ইভা নামের মেয়েটাকে নিয়ে বিয়ের কথা হয়েছে জাভেদ সাহেবের সাথে সেটাও তিনি জানতেন না। ছেলের সামনাসামনি কথা বলতে পারায় সন্তুষ্ট হয়েছেন। তিনি বেশ বুঝতে পারেন, আবির তোয়াকে পছন্দ করলেও ওদের মধ্যে সেরকম নরম সম্পর্ক এখনো তৈরি হয়নি যেটা থেকে ভালোবাসা খুব সহজে আকার নিবে৷
ছেলের পক্ষ নিয়ে পরিবেশ একটু হালকা করে তোয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
“তোয়া, আবির তোমাকে আসলেই ভালোবাসে৷ ও আমাকে সে কথা জানিয়েছে। তুমি হয়তো সেভাবে ওকে দেখোনি কিন্তু আমার ছেলে কিন্তু খুব একটা খারাপ হবে না তোমার জন্য। যাও দুজন কথা বলে দেখো। ”
তোয়া নিরব হয়ে রাবেয়া বেগমের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর কিছু না বলে সেখান থেকে বেরিয়ে আবিরের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।
“আবির, ভাইয়া।”
ডাক শুনতেই আবির পিছনে ফিরে তাকালো। হাতের ফোনটা তখনই পকেটে রেখে দিল। তোয়ার সামনা-সামনি হতে তার ভয় লাগছিল। এর আগে এমন হয়নি কখনো। এখনো ঠিকঠাকভাবে তোয়ার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না সে৷ নতুন নতুন কিছু ঘটছে তার সাথে।
তোয়া আবার বলে উঠল,
“একটু বাহিরের দিকে আসবি? কথা আছে তোর সাথে।”
এ কথা, ও কথা বলে এবার আসল কথার দিকে অগ্রসর হলেন লিয়াকত সাহেব। হেসে হেসে নিজের ছেলের গুনগান গেয়ে ফালাকের প্রশংসা করতে শুরু করেছিলেন। জাভেদ সাহেবের জন্য এবার ইশারাই যথেষ্ট হলো। তিনি বুঝলেন, লিয়াকত সাহেব যেকোন মূল্যে নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে চাচ্ছেন। মেয়ে দিতে না পেরে সোজা মেয়ে নিতে চাইছেন ছেলের বউ হিসেবে।
লিয়াকত সাহেব বলেই ফেললেন,“একটা যেহেতু হলো না, সম্পর্ক তৈরির আরেকটা উপায় আছে বেয়াই সাহেব। আপনার মেয়েটাকে আমার ছেলের জন্য খুব পছন্দ হয়েছে। দুজনকে দারুণ মানাবে।”
ফালাক আর নিশো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিল। লিয়াকত সাহেবের কথায় আঁতকে উঠল দুজন। নিজেদের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে একসাথে, একইসময়ে বলে উঠল,
“এদিকে একদমই তাকাবেন না। ফালাকের জন্য নিশো আছে।”
#চলবে……
গল্পের পরবর্তী পর্ব পেতে আমাদের গ্ৰুপে জয়েন হয়ে পাশে থাকুন। ধন্যবাদ।
https://www.facebook.com/groups/1129904368415371/?ref=share_group_link