তবে_ভালোবাসো_কী ২ #Mehek_Enayya(লেখিকা) পর্ব ২৯

0
304

#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ২৯

অন্যমনস্ক হয়ে রুমের এক কোণে বসে আছে সুনহেরা। মাথায় এক পাহাড় সমান টেনশন তার। কোনো ভাবেই আয়াস তাকে অবিশ্বাস করলে কোথায় যাবে সে! বিয়ের পর একজন মেয়ের জন্য তার স্বামীই যে সবকিছু। বড় বড় পা ফেলে ভিতরে প্রবেশ করে আয়াস। হাতে কিছু খাবারের প্যাকেট। সুনহেরার মলিন মুখ দেখে আয়াস ভাবলো হয়তো সকালের জন্য সুনহেরা এখনও নারাজ। আয়াস নত মুখে এগিয়ে গিয়ে সুনহেরার পাশে বসে পরলো। অনুতপ্ত কণ্ঠে বলল,
-আই এম সরি। বিশ্বাস করুন ঐ মেয়েটা আমার কোনো জিএফ বা ফ্রেন্ড না। আমরা এক ক্লাসেই পড়ছি আর ও একটু গায়ে পরা স্বভাবের।
সুনহেরা মাথা বাকিয়ে আয়াসের দিকে চাইলো। আয়াস সুনহেরার ফুলে উঠা মুখশ্রী দেখে বিচলিত হয়ে বলে,
-আপনি কান্না করেছেন?
-না।
আয়াসের বিশ্বাস হলো না সুনহেরার কথা। সুনহেরা আয়াসের হাতের দিকে তাকিয়ে চোখ নাড়িয়ে জিগ্যেস করলো,
-কী এনেছেন?
-আইসক্রিম আর চিপস।
-তাহলে না দিয়ে নিয়ে কেনো বসে আছেন মিয়া?
-ভুলেই গিয়েছিলাম।
আয়াস দ্রুত ব্যাগটা সুনহেরার কোলে দিয়ে দিলো। সুনহেরা চিপস এর প্যাকেট ছিড়তে ছিড়তে বলল,
-ফিহা ফায়াজকে ডেকে নিয়ে আসেন না।
-ওদের জন্য ওদের রুমে দিয়ে এসেছি।
-ওহ! ভালো করেছেন।
কথার ফাঁকে ফাঁকে একটি করে চিপস মুখে পুরছে সুনহেরা। আয়াস মনোযোগ দিয়ে সুনহেরার খাওয়া দেখছে। একদম ছোট বাচ্চাদের মতোই হাবভাব তার। আয়াসকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকে দেখে সুনহেরা কঠিন কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
-কী দেখছেন এভাবে?
-তেমন কিছুই না। রাগ ভেঙেছে?
-উহুম ভাঙেনি।
আয়াস স্মিত হাসলো। আরেকটু সুনহেরার পাশাপাশি বসলো। সুনহেরা আড়চোখে আয়াসের কান্ড দেখছে। শান্ত স্বরেই আয়াস বলল,
-আমি ফ্রেশ হয়ে আসি আপনি তৈরি হন। দেখি মেডামের রাগ কিভাবে ভাঙানো যায়।
-মানে মানে? কোথায়ও নিয়ে যাবেন?
-চলুন একটা লং ড্রাইভ এন্ড ডিনার ডেটে যাওয়া যাক। যাবেন আমার সাথে?
সুনহেরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে জড়িয়ে ধরলো আয়াসকে। আয়াস হতবাক। কিছু বলারও সুযোগ পেলো না সে। সুনহেরা আয়াসের বুক থেকে মাথা তুলে উঠে দাঁড়ায়। আলমিরার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
-আমি এখনই তৈরি হচ্ছি। একদম বেস্ট ভাবে সাজবো আমি। আপনি যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসতে হাসতে ওয়াশরুম চলে যায় আয়াস। সুনহেরা তার সব টেনশন ভুলে যায়। পছন্দের মানুষের সাথে প্রথম ঘুরতে যাবে। কী পরবে? কী পরলে একদম সুন্দর দেখাবে ভেবে পাচ্ছে না সে। তিনটা ড্রেস বিছানায় রেখে কপালে হাত দিয়ে ভাবছে সে কোনটা পরবে। আয়াস শাওয়ার নিয়ে বের হলো। চুল মুছতে মুছতে এগিয়ে গেলো সুনহেরার কাছে। সুনহেরার চিন্তিত মুখ দেখে বলল,
-এখনও রেডি হননি?
-কী পরবো বুঝতে পারছি না!
আয়াস ড্রেসগুলোতে চোখ বুলিয়ে কিছু একটা ভেবে জিগ্যেস করলো,
-শাড়ী আছে?
-হুম। আছে তো।
-পরতে পারবেন?
-শাড়ী! হুম হুম পারবো। কী কালার পরলে আমাকে সুন্দর লাগবে?
আয়াস সোফায় গা এলিয়ে দিলো। ফোন হাতে নিতে নিতে বলে,
-আপনি আমার দেখা অন্যতম সুন্দরী নারী। আপনি যে শাড়ীই পরবেন সেটাই আমার নজরে আপনাকে বেস্ট লাগবে।
লাজে রাঙা হয়ে উঠলো সুনহেরার গাল। একটু একটু করে পুরো লাল টমেটো হয়ে গেলো। আয়াস ভুল করেও সেই মুহূর্ত মিস করলো না। নিস্পলক তাকিয়ে সুনহেরার লাজ দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলো। সুনহেরা লাল রঙের একটি জর্জেট শাড়ী নিয়ে বড় বড় পা ফেলে ওয়াশরুম চলে গেলো।

আয়াস হাসতে হাসতে নিজে তৈরি হয়ে নিলো। সাদা পেন্ট আর কালো শার্ট পরেছে সে। চুলগুলো সেট করে নিলো। চোখে সবসময়ের মতো চশমা তো আছে। উজ্জ্বল বর্ণের গায়ে কালো শার্টটা একটু বেশিই মানাচ্ছে। সুনহেরা একপ্রকার যুদ্ধ করে শাড়ীটা পরে বেরিয়ে আসে। চোখ মুখে বিরক্তি উপচে পরছে তার। আয়াস শুধুই তাকিয়ে থাকলো। সুনহেরা আয়নার স্মুখীন দাঁড়িয়ে অর্নামেন্টস পরতে পরতে আয়াসকে বলল,
-ফিহা আর ফায়াজকেও নিয়ে চলি?
-আমাদের আসতে আসতে অনেক রাত হবে তাই তাঁদের নিয়ে অন্য একদিন যাবো।
-আচ্ছা।
সুনহেরা সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে আয়াসের দিকে তাকায়। ছোটোখাটো একটা হার্টএট্রাক্ট করলো সে। কালো শার্টয়ে ছেলেদের এতো সুদর্শন কেনো দেখায়! এতো সেজেগুঁজে গেলে তো অন্য মেয়েরা তার হাসব্যান্ডের দিকে নজর দেবে। সুনহেরা সেটা কোনোভাবেই হতে দেবে না।
-আপনার মাক্স আছে?
-আছে তো।
-তাহলে সেটা পরে নিন।
-রাতে মাক্স কেনো?
-আরেহ আরেহ রাতেও ধুলোবালি হয়। আমি যেটা বলছি সেটা করুন তো।
-ওকে।
বউয়ের কথা মতো আয়াস মাক্স পরে নিলো। দুইজন রুম থেকে বের হয়ে হাজেরাকে বলে বিদায় নিলো। আজ আর ড্রাইভার সাথে নিলো না তারা। আয়াস নিজেই ড্রাইভ করতে লাগলো। তাঁদের মুহূর্তকে আরো রোমাঞ্চকর করতে প্রকৃতিও যেনো উঠে পরে লেগেছে। কিছুক্ষন পরপর মৃদু বাতাস। জানালা দিয়ে সুনহেরার খোলা চুল উড়িয়ে দিচ্ছে। আয়াস বেহায়ার মতো বারবার সুনহেরার দিকে তাকাচ্ছে। আজ নজর ফেরানো বড্ড কঠিন হয়ে পরেছে তার জন্য।
____________________
ডায়নিং টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে মাহানুর আর রাবেয়া মিলে। জয়া বেগম ছেলেকে আর রিদকে ডেকে নিয়ে আসলো। বাহিরে অনেক বাতাস বইছে। যেকোনো সময়ই ঝুম করে নেমে পরবে। মাহানুর হাতের কাজ করতে করতে রুমকিকে বলল,
-রুমকি জানালা গুলো বন্ধ করে দেও। যেকোনো সময় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে।
রিদ চেয়ারে বসতে বসতে বাঁকা চোখে আরহামের দিকে তাকালো। আরহাম রিদের চাহনি বুঝে দ্রুত নজর সরিয়ে ফেললো। রিদ মাহানুরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-ভাবি আগামীকাল ভোরে তো তোমার জামাই চলে যাবে। জানো তো?
-আপনি না বললে জানতাম না রিদ ভাই।
রিদের চোখ মুখে দুষ্ট হাসির ছড়াছড়ি। জয়া বেগম খেতে খেতে মাহানুরকে জিগ্যেস করলেন,
-তা মাহানুর তোমার ঐ ফ্রেন্ড অহনার কোনো খবর পেয়েছো?
-হ্যাঁ মা। ও ওর বাবার সাথে দেশে গিয়েছে। কয়েকদিন থাকুক তারপরে ভেবেছি আমরা গিয়ে নিয়ে আসবো।
-ওহ আচ্ছা।
সবাই নিজেদের মতো করে খেতে লাগলো। মাহানুর আড়চোখে রাবেয়ার দিকে তাকাচ্ছে বারে বারে। রাবেয়া যে আরহামকে পছন্দ করে এতক্ষণে তার বোঝা হয়ে গিয়েছে। এখনও কেমন খাওয়া রেখে বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে। মাহানুর নজর সরিয়ে ফেললো। অনেকক্ষণ পরও যখন সে দেখলো রাবেয়ার দৃষ্টি সরছে না তখন বিরক্ত আর রাগ আকাশ চুম্বি মাহানুরের। শক্ত কণ্ঠে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-রাবেয়া পানির জগটা একটু এদিকে দেও তো।

রাবেয়ার ঘোর ভাঙলো। শুকনো ঢোক গিলে জগটা এগিয়ে দিলো মাহানুরের দিকে। মাহানুরের তখনও ভীষণ রাগ রাবেয়ার ওপর। কোনোরকম সবাই একসাথে খাওয়া শেষ করলো। ছেলেকে দিয়ে দেওয়ার জন্য যা যা খাবার বানিয়েছেন সবটা মাহানুরকে বুঝিয়ে জয়া বেগম চলে গেলেন তার রুমে ঘুমোতে। রিদ আর আরহাম ড্রইংরুমে বসলেন। শিবু আজ বাসায় নেই। তার এক আত্মীয়র বাসায় গিয়েছেন। মাহানুর টেবিল গুছিয়ে তাঁদের সাথে এসে বসলো। রিদ ফোন টিপতে টিপতে বলল,
-আগামীকাল থেকে নাকি অফিসে যাচ্ছ ভাবি?
-হ্যাঁ ভাইয়া।
-আমি বুঝি না দুইজন মিলে কাজ করলে এতো টাকা তোমরা কোথায় রাখবে!
-টাকা ডাসনট ম্যাটার ভাইয়া। বাট আমার স্বপ্ন ছিল আমি জব করবো। কোনো এরাগেড়া আমার স্বপ্নে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
শেষের কথাটা মাহানুর আরহামকে মিন করেই বলল। রিদ দুষ্ট হেসে আরহামের দিকে তাকায়। কপালে আঙুল ঠেকিয়ে বসে আছে আরহাম। রিদ দুইজনের খাপছাড়া ব্যবহার দেখে বলল,
-আজ আরহাম চলে যাবে কোথায় তোমরা ঘুরতে যাবে, ডিনার ডেটে যাবে তা না করে গোমড়া মুখে বাড়িতেই বসে আছো!
-এইরকম জংলী মেয়ের সাথে আর কখন ঘুরতে যাবো না আমি।
-হইছে! আপনার মতো জিরাফের সাথেও আমি আর ঘুরতে যাবো না। তাছাড়াও আমার ঘুরতে যাওয়ার মানুষের অভাব আছে নাকি!
অনেকটা ভাব নিয়েই বলে মাহানুর। আরহাম হাত মুঠি করে চুপচাপ বসে রইলো। রিদ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। মাহানুর আরো কিছুক্ষন রিদের সাথে কথা বলে রুমে চলে আসলো। বাহিরে বাতাসের তান্ডব শুরু হয়েছে। মাহানুর রুমের জানালা বন্ধ করে দৌড়ে বেলকনিতে চলে গেলো। দূরদুরন্তের বিশাল বড় বড় গাছগুলো নড়ছে। মাহানুর মাথা থেকে ওড়না সরিয়ে ফেললো। দুইহাত উঁচু করে ঘুরতে লাগলো।

-এখনও বসে আছিস কেনো? রুমে যা।
-রুমে যেয়েই বা কী হবে! ভোর সকালে তার হাসব্যান্ড চলে যাবে অথচ সে বিন্দাস আছে! কোনো দুঃখ কষ্ট নেই!
আপসোস স্বরে বলল আরহাম। রিদ দুইপাশে মাথা নাড়ালো। বিরক্তিকর কণ্ঠে বলল,
-তোর মতো আনরোমান্টিক ভুতের জন্য ওর কিসের দুঃখ কষ্ট! শা’লা আমার বন্ধু হয়ে এতো নির্বোধ কেন রে তুই!
-আমি রোমান্টিক হলে ও স্টোক করবে।
-করুক। তুই কি জানিস না মেয়েরা রোমান্টিক জামাই চায় তোর মতো নো’লা না।
-কিন্ত আমি একটু মাহানুরের হাত ধরলেই ও ঝাঁন্টা মারে! এমন্ত অবস্থায় আমার আরো গভীরে যাওয়া উচিত?
রিদ নিজের জায়গা থেকে উঠে আরহামের পাশে বসলো। আরহামের কাঁধে হাত রেখে জ্ঞান দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
-আরেহ বেটা বুঝিস না! মাইয়ারা প্রথমে এমন সাজে তারা তোরে পছন্দও করে না। কিন্ত মনে মনে হেগো মাথায় খালি ঐসব ঘুরে!
-সত্যি নাকি?
-আরেহ হো। তোরে কি আমি মিথ্যা কমু শা’লা!
-মাহানুর ও মনে মনে আমাকে চায়? আমার ছোঁয়া পেতে চায়?
-হো। তুই আরো ওর থেকে দূরে দূরে থাকিস বলে দেখ গা ও তোকে গে* না মনে করে!
-হোপ বেয়াদব!
চোখ বড় বড় করে রিদের পানে তাকালো আরহাম। রিদ যেনো বেশ মজাই পেলো। আরহাম শরীর ঝাঁকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। পরিহিত শার্টটা টেনেটুনে ঠিক করে নিলো।
-ঘুমাতে যা আ*বাল। আজাইরা বসে থাকিস আর উল্টোপাল্টা চিন্তা করিস।
-হো আমি তো আ*বালই তুমি আমার বা*লটা না? দৌড়া জলদি।
আরহাম রিদকে চোখ রাঙিয়ে সিঁড়ি ধরে হাঁটা ধরলো। আরহাম চলে যেতে রিদও উঠে দাঁড়ালো। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে যেতে যেতে লাইটার বের করে একটা সি’গা’রেট জ্বালালো। ধুঁয়া উড়াতে উড়াতে বারান্দা পেরিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। দরজা লাগিয়ে ধপ করে বিছানায় চিৎ হয়ে শুইয়ে পরলো। ফোন বের করে স্মুখীন ধরলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠলো উজ্জ্বল বর্ণের একটি মেয়ের হাস্যজ্জ্বল ছবি। রিদ নিজেই অহনার এই ছবিটা নিজের ফোন দিয়ে তুলেছিলো। ফোনটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো সে। বিড়বিড় করে বলল,
-অহনাগহনা প্লিজ চলে এসো। তোমাকে ছাড়া এক একটা মুহূর্ত আমার জন্য বেশ বেদনাদায়ক হয়ে যাচ্ছে। তোমাকে ছাড়া তোমার মুলা কিছুই না। একদম মূল্যহীন! প্লিজ যেখানেই আছো জলদি চলে এসো। আমাদের ভালোবাসা বিচ্ছেদ চায় না পূর্ণতা চায়।

আরহাম রুমের ভিতরে এসে কোথায়ও মাহানুরকে না দেখে বুঝলো সে বেলকনিতে আছে। দরজা লাগিয়ে আলগোছে সেও বেলকনিতে চলে গেলো। দোলনায় বসে আছে মাহানুর। আঁখিজোড়া বন্ধ রেখেই দুলছে সে। আরহাম কিছুক্ষন সেদিকে তাকিয়ে থেকে পা চালালো। মাহানুরের পাশে যেয়ে বসলো। নিজের পাশেই কাউকে অনুভব করতে মাহানুর আঁখিজোড়া খুলে ফেলে। আরহামকে দেখে কিছুটা রাগ দেখিয়ে উঠে যেতে নিলে আরহাম তার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কোলেই বসিয়ে দেয়। মাহানুর হকচকিয়ে গেলো। আরহামের বাহু চেপে ধরলো। রিনরিনে কণ্ঠে বলল,
-কী হয়েছে? ভুতে ধরেছে আপনাকে?
-হুম। তোমাকে সবসময় যে ভুতে ধরে সেটাই ধরেছে আমাকে।
-আমার ঘুম আসছে।
-আমি তোমার ঘুমকে ধরে রাখিনি। আমার কোলেই ঘুমিয়ে পরো।
-একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে না?
-এই বাড়াবাড়িটা আরো আগে করা উচিত ছিল।
-আপনি ছাড়েন তো ভাই।
আরহাম মাহানুরের কথায় পাত্তা দিলো না। মাহানুরের মুখ থেকে চুল সরিয়ে তার গালে নিজের নাক ঘষতে লাগলো। মাহানুর কিছুটা কেঁপে উঠলো। আরহামের এহেন আচরণ দেখে ভরকেও গেলো সে। কিছু বলতে উদ্যত হলে আরহাম নিজ আঙুল ধারা মাহানুরকে চুপ করিয়ে দিলো। মাহানুর ডাগর ডাগর নজরে শুধুই তাকিয়ে রইলো। আরহাম মাহানুরের ললাটে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো। মাহানুর চোখ বন্ধ করে খুললো। কিছু না ভেবেই আরহামের গলায় জোরে একটা কামড় দিলো সে। আরহামের হাত আলগা হতেই মাহানুর সুযোগ পেয়ে উঠে দাঁড়ায়। কিছুটা দূরে যেয়ে কোমরে হাত দিয়ে বিজয়ী কণ্ঠে বলে,
-মাহানুর কো পাকারনা মুশকিল হি নেহি নামুমকিন হে।

আরহাম নিজের কপাল চাপড়ালো। মাহানুরের এইরকম কান্ড দেখে তার এখন হাসা উচিত নাকি কাদা বুঝলো না সে। দুইপাশে মাথা নাড়িয়ে বিড়বিড় করে বলল,
-আর যাই করো এইরকম কার্টুন লাভার মেয়েকে বিয়ে করিও না। রোমান্স এর সময়ও কার্টুন এর ডায়লগ বলে তোমার মুডের বারোটা বাজিয়ে দেবে!
আরহামও বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। মাহানুর ওড়না সামলে দৌড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো আরহাম ঠিক সেইসময়ই মাহানুরকে ধরার জন্য ছুটে যায়। উঁচু স্বরে বলে,
-আমার শরীরে আবারো দাগ বসিয়ে দিলে নুর! এর প্রতিশোধও আমি নিয়ে ছাড়বো।
-আগে ধরে তো দেখান আমাকে।

আরহামকে তেড়ে আসতে দেখে মাহানুর চিৎকার দিয়ে উঠেপুটে পালায়। মাহানুর পুরো বেলকনিতে দৌড়াচ্ছে আর আরহামও তাকে ধরার জন্য ছুটে চলেছে। কিছুক্ষন পর পর গিলগিলে হেসে উঠছে মাহানুর। আরহামের পা জোড়া থেমে গেলো। এতো বিমোহিত একটি দৃশ্য ক্যাপচার না করলেই নয়! ত্বরিত পেন্টের পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে ফটাফট মাহানুরের কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। মাহানুর ভড়কে গিয়ে তেড়ে আসতে আসতে বলল,
-অ্যাই অ্যাই ছবি তুললেন কেনো?
-মন চাইলো তাই তুললাম।
-এতকিছু কেনো মন চাইবে! যতসব।
-আমার মন তো আরো অনেক কিছু চায় মাহানুর খান চৌধুরী।
আরহাম ধপ করে মাহানুরকে ধরে ফেললো। মাহানুর এবার আর ছোটাছুটি করলো না। আরহাম দুইহাত দিয়ে মাহানুরের কোমর আঁকড়ে ধরলো আর মাহানুরের হাত নিজের গলায় রাখলো। নিস্পলক একজন আরেকজনের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। একজনও ভুল করেও পলক ফেললো না। আরহাম একহাতের সাহায্যে মাহানুরের কেশ উন্মুক্ত করে দিলো। শান্ত স্বরে বলল,
-খোলা চুলে নারী আকর্ষণীয়।

মাহানুর দৃষ্টি নত করে ফেললো। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বজ্রপাত পরছে। আরহাম একবার আশেপাশে নজর বুলিয়ে সোজা কোলে তুলে নিলো মাহানুরকে। মাহানুর নিজের জামা শক্ত করে ধরলো। মাথা তুলে আরহামের দিকে তাকালো না একবারও। আরহাম রুমের ভিতরে এসে বেলকনির দরজা লাগিয়ে দিলো। মাহানুর মনে মনে প্রচন্ড ভীত। হাজারো উল্টাপাল্টা চিন্তা মস্তিকে বাসা বেঁধেছে তার। আরহাম মাহানুরকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মাহানুর চুপচাপ শুধু আরহামের কাজ দেখছে। রুমের লাইট বন্ধ করে শুধু ডিম লাইট অন করে বিছানায় আসে আরহাম। মাহানুর কিছুটা দূরে সরে গেলো। আরহাম স্মিত হেসে মাহানুরের পাশেই শুইয়ে পরলো। মাহানুরের একহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চেপে ধরলো। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-আমি জানি তুমি এখনো আমার সাথে রেগে আছো নুর। তোমার রাগ করাটাও স্বাভাবিকই।

মাহানুর নির্বাক। গোলগোল চোখে শুধুই আরহামকে দেখছে। অনুভব করতে চাচ্ছে আরহামের ভিতরের সত্ত্বাকে। আরহাম মাহানুরের দিকে তাকালো। মাহানুরের গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
-তুমি জব করো বা যা মন চায় তাই করো এতে আমার কোনোরূপ অসুবিধা নেই। কিন্ত তোমার মাথায় রাখতে হবে তুমি কোনো সাধারণ মানুষের ওয়াইফ নও। অনেক সময় শত্রুকে দুর্বল করতে তার ফ্যামিলির ওপর এট্রাক্ট করা হয় তুমি এটা জানো নুর। আমি চাই না এইরকম কোনো সিচুয়েশনে পরতে।
আরহাম নিঃশাস নিলো। মাহানুরের মুখভঙ্গি দেখে ফের বলতে শুরু করলো,
-তুমি জব করবে ঠিক আছে তবে অতি সাবধানে। আর পরিবারের প্রতিও তোমার দায়িত্ব আছে। যেমন মা। অসুস্থ মানুষ তিনি তাকে একটু দেখেশুনে রেখো। এটা অবশ্যই আমার বলার দরকার ছিল না! এইকয়দিনে যা দেখলাম আমার মা আমার থেকে বেশি তোমার আপন হয়ে গিয়েছে!
-মা কে নিয়ে আপনার কোনো টেনশনের প্রয়োজন নেই। আমি আছি তার জন্য।
-সেটা আমিও জানি কিন্ত তোমার জন্য কে আছে?
-আমি একাই একশো।
-হ্যাঁ আমি জানি নুর একাই একশো তারপরও একটু নিজের প্রতি খেয়াল রেখো। আর বেশি বেশি করে খেয়ে মোটা হবে। এইরকম কাঠির মতো শরীর জড়িয়ে ধরলে মনে হয় কোনো বাঁশের টুকরো ধরে আছি!
-আমার ইন্সাল্ট করছেন কিন্ত!
-ওকে ওকে সরি মেডাম।
আরহামের মাহানুরকে ভালোভাবে পরোক্ষ করতে থাকতো। প্রথমে মাহানুরের চোখ, নাক, কপাল, গাল। যখন মাহানুরের পাতলা গোলাপি ওষ্ঠের দিকে নজর ঠেকলো অস্থিরতা ছেয়ে গেলো আরহামের হৃদপিন্ডে। উত্তেজিত মন ভিতরের পুরুষত্ত্বাকে জাগিয়ে তুললো। মাহানুর বুঝলো আরহামের চাহনি। নিজের ভয়াত মনকে শক্ত করে নিজেকে নিজেই সুধালো আজ আর সে তেড়ামি বা বাড়াবাড়ি করবে না। যদি আরহাম তাকে কাছে টেনে নেয় সে আর বাধা দিবে না। নিজের স্বার্থের জন্য অন্য একজনকে এতো অপেক্ষা করানোর কোনো মানেই হয় না। আরহাম নেশাক্ত নয়নে মাহানুরের গাল ছুঁইয়ে হাত ধীরে ধীরে নিচে নামিয়ে আনলো। নিজেকে আর দমিয়ে না রেখে মাহানুরের গলা থেকে ওড়না সরিয়ে সেখানে মুখ ডুবালো। ব্যাস মাহানুর শেষ। বাহিরে প্রকৃতির বাতাস ভিতরে এসির বাতাস তারপরও মাহানুর ঘেমেনেয়ে একাকার। আরহাম উত্তেজনার চূড়ান্ত পর্যায় পৌঁছাবে এমন সময় তীব্র আওয়াজ করে তার ফোন বেজে উঠলো। আরহাম সেদিকে ধেন দিলো না। মাহানুরের গলা থেকে মুখ তুলে যেই দুই ওষ্ঠজোড়া এক করতে যাবে এমনি আবারও তার ফোন বেজে উঠলো। আরহাম রাগে বিচ্ছিরি কয়েকটা গা’লি দিলো ফোনকে। মাহানুরের পাশ থেকে সরে ফোন হাতে নেয়। প্রায় পাঁচ মিনিটের মতো কথা বলে কল কেটে দেয় সে। পিছনে ফিরে দেখে মাহানুর আগের ভঙ্গিতেই শুইয়ে আছে। আরহাম পুনরায় মাহানুরের দিকে ঝুঁকলো। যেই মাহানুরের ওষ্ঠের দিকে এগিয়ে যেতে নিবে সে অনুভব করলো মহানুর কাঁপছে। ভয়ংকর কাঁপছে। আরহাম মুখ তুলে ফেললো। মাথা উঁচু করে মাহানুরের মুখের দিকে তাকালো। চোখ বদ্ধ অবস্থায় নিজের জামা খামচে ধরে অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে মাহানুর।
আরহাম নিজের কাঙ্ক্ষিত বাসনাকে দামাচাপা দিয়ে পাশেই টানটান হয়ে শুইয়ে পরলো। এভাবে অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরও নিজের মাঝে বা ওপরে কারো অস্তিত্ব না পেয়ে আঁখিজোড়া খুলে ফেললো মাহানুর। নিজের দিকে তাকালো ওড়না এখনো সম্পূর্ণ সরেনি। পাশে ফিরে তাকাতেই দেখলো আরহাম কপালে একহাত ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে। মাহানুর কম্পিত কণ্ঠস্বরে বলল,
-সরে গেলেন কেনো?

আরহাম একই ভঙ্গিতে শুইয়ে পাশে তাকায়। অনেক স্বাভাবিক তিন শব্দের একটি বাক্য হলেও আরহামের উত্তেজিত চিত্তকে শান্ত করে দিলো। এই মেয়ে কেনো সবসময় অন্যের ফিলিংস এর মূল্য দিয়ে নিজের ফিলিংস এর বারোটা বাজায়! এই একটা জিনিস জাস্ট অসহ্য লাগে আরহামের। একহাত বাড়িয়ে মাহানুরের ক্ষীণ শরীরকে নিজের বুকের ওপর টেনে ফেললো। মাহানুর চমকে গেলো। আরহাম মাহানুরের ওড়না সরিয়ে পাশে রাখলো। মাহানুরকে বুকের সাথে চেপে ধরলো একদম শক্ত করে। যেনো ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে তার নুর।
-কিছু শুনতে পাচ্ছ নুর?
-হো। আপনার বুকের ভিতরে কেউ ঢোল পিটাচ্ছে। ওহ তেরি! আই থিঙ্ক পেটের ইঁদুরগুলো আপনার বুকে এসে পার্টি করতেছে।
আরহামের চোখ, মুখ শক্ত হয়ে গেলো। বিরক্তে ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো। মাহানুর নবজাতুক হয়ে মাথা তুলে পিটপিট করে আরহামের ভঙ্গিমা পরোক্ষ করলো। অবুঝ স্বরে বলল,
-আমি কী ভুল কিছু বলেছি?
-না না। তুমি কী ভুল কিছু বলতে পারো! আমার ব্রেন্ট ড্রেনে ফেলে এসেছিলাম তাইতো তোমার কাছ থেকে রোমান্টিক কিছু আশা করেছি!
মাহানুর মুখ ফুলিয়ে আরহামের বুকে মাথা দিয়ে রাখলো। আবারও শোনার প্রয়াস করলো। কেমন ধুক ধুক আওয়াজ তুলছে আরহামের বক্ষ। আরহাম টাইট করে মাহানুরকে ধরে আঁখিজোড়া বন্ধ করে ফেললো।
-জানো আজ আমি রুমে এসেছিলাম তোমাকে সম্পূর্ণ নিজের করে ফেলবো এটা শপথ করে।
-তাহলে কী সমস্যা হলো?
-জোর ঘাঁটিয়ে স্ত্রীকে নিজের করার মধ্যে কোনো স্বার্থ নেই, কিন্ত ভালোবেসে নিজের করার মধ্যে আছে দুনিয়ার সকল সুখ।

মাহানুর কোনো উত্তর দেওয়া প্রয়োজন মনে করলো না। চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে থাকলো তার প্রতি স্বামীর একান্ত অনুভূতি গুলো। আরহাম হাত বাড়িয়ে মাহানুরের চুল হাতিয়ে দিতে দিতে বলল,
-তুমি অনেক বোকা নুর। তুমি এখনো প্রস্তুত না ফিজিক্যাল রিলেশনের জন্য তারপরও আমি যখন তোমাকে টাচ করছিলাম তুমি কোনো প্রকার বাধা দেওনি। এটা আমার একদমই পছন্দ না। মনে রাখবে শুধু এখন না ফিউচারেও যখন তোমার কোনো অসুবিধা থাকবে বা অসুস্থ লাগবে তখন আমাকে বাধা দিবে। নিজের স্ত্রীর প্রবলেমই যদি আমি না বুঝতে পারি তাহলে কেমন স্বামী আমি। বুঝেছো?
-আপনার মনোভাব কেনো প্রতিনিয়ত আমাকে ইমপ্রেস করছে ফৌজি সাহেব? কেনো এতো ভালো সাজছেন আপনি?
-এটা ফানি ছিল! তোমার ভুল ধারণা আমি ভালো সাজছি! আমি মোটেও কোনো ভালো পুরুষ নই। এখন আমাদের সম্পর্কে মাত্র সূচনা তাই তোমাকে সময় দিচ্ছি নিজেকে স্বাভাবিক করার জন্য।

ঝড়োয়া বাতাস জানালার পর্দাগুলো অস্বাভাবিক ভাবে নাড়াচ্ছে। মাহানুর মাথা বাকিয়ে সেদিকে তাকালো। চোখে ঘুম ঘুম ভাব তার। আরহাম পরম আদরে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আরহাম মৃদু হেসে বলে,
-এখন আমার কাছ থেকে বাঁচলেও নেক্সট কিন্ত বাঁচবে না ওয়াইফি। আবার যেদিন আমাদের সামনাসামনি দেখা হবে সেদিন তোমাকে সম্পূর্ণ নিজের করেই ছাড়বো।
-কবে আসবেন আপনি?
-খুব জলদিই আসবো। আমার শরীর সেখানে থাকলেও মন, মস্তিক কিন্ত সর্বক্ষণ আমার এখানে থাকবে। তোমার কাছে।
-কল টল করবেন তো?
-যদি তুমি চাও তো।
-আজব লোক! চাও মানে কী? এখানে স্ত্রী আর মা কে রেখে যাবেন আবার বলছেন যদি চাও তো কল করবেন?
আরহাম শব্দ করে হেসে ফেললো। মাহানুরকে আরেকটু টেনে নিজের মুখোমুখি শুইয়ে দিলো। মাহানুরের ওষ্ঠে হালকা ভাবে নিজের ওষ্ঠ ধারা ছুঁইয়ে দিলো। মাহানুর ঘুমের মধ্যে থাকায় তেমন ভাবে অনুভব করতে পারলো না। আরহাম তাকে বুকে জড়িয়ে বলল,
-প্রতিদিনই কল দেবো আর জলদি আসারও চেষ্টা করবো মেডাম।
____________________

প্রচন্ড বর্ষণের মধ্য দিয়ে একটি মেয়েকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো একজন চশমা পরিহিত যুবক। মৃদু আলোতে নরম পা ফেলে নিদিষ্ট রুমে এসে পা জোড়া থেমে গেলো তার। লাইট অন করে ধীরেসুস্থে কোলের আধভেজা মেয়েটিকে সোফায় শুইয়ে দিলো। ফোঁস করে কয়েকবার নিঃশাস টানলো যুবক। আজই এইরকম বৃষ্টি হবে জানলে কখনই সুনহেরাকে নিয়ে বের হতো না। তারা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। কিছুক্ষন বসলো তার মধ্যেই বর্ষণের তান্ডব শুরু। কাঁচের জানালা দিয়ে বেশ মনমুগ্ধকর একটি মুহূর্ত ছিল তখন। কিন্ত খাওয়া দাওয়ার শেষেও যখন বৃষ্টি থামছিল না তখন টেনশন হতে শুরু করলো আয়াসের। সুনহেরা আবার জেদ করে বসলো বৃষ্টিতে ভিজবে। আয়াস শতবার বারণ করলো কিন্ত এ যে আরহামেরই বোন। তার মতোই ঘাড়তেড়া। আয়াসকে উপেক্ষা করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আসে সে। রাত তখন এগারোটা। রাস্তা একদম ফাঁকা বললেই চলে।
মাঝে এক দুইটা গাড়ি যাচ্ছে কিন্ত কোনো মানুষের আনাগোনা নেই। বাচ্চাদের মতো রাস্তায় লাফালাফি শুরু করেছিল সুনহেরার এক বিন্দুমাত্র তাল নেই তার পরিহিত শাড়ী যে নিজের জায়গায় নেই। অস্থির করে দিচ্ছে একটি বেসামাল চিত্তকে! সে তো আছে নিজের দুনিয়ায়। আয়াস নিজেকে শান্ত করে জোর করেই সুনহেরাকে গাড়ির ভিতরে বসায়। এই বৃষ্টির মধ্যেই গাড়ি স্টার্ট দেয় আয়াস। কিছুক্ষনের মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে গাড়িতে লুটিয়ে পরে সুনহেরা।

এখন সোফায় অজ্ঞান অবস্থায় শুয়িত সুনহেরা। আয়াস দরজা লাগিয়ে সুনহেরার স্মুখীন এসে দাঁড়ালো। এখন এই ভেজা জামাকাপড় পরিবর্তন না করলে জ্বর বেড়ে যাবে। এতো রাতে কাউকে ডাকতেও লজ্জা করছে আয়াসের আবার নিজে পরিবর্তন করতেও কেমন যেনো বিবেকে বাঁধছে। বড় বড় কয়েকবার শ্বাস ত্যাগ করে নিজের শার্টয়ের বোতাম খুলতে লাগলো আয়াস। মেঝেতে একপ্রকার ছুঁড়ে ফেললো শার্টটা। উধাম শরীরে একটি টি-শার্ট জড়িয়ে নিলো। তারপর কাবাড খুলে নিজের একটা টি-শার্ট আর শর্ট পেন্ট বের করলো। উত্তেজিত মনকে পাথরে চাপা দেওয়ার প্রয়াস চালালো কয়েকবার। রুমের লাইট অফ করে দিয়ে পুরো রুম অন্ধকার করে দিলো। বাহিরে বিজলি চমকাচ্ছে। সেই আলোতে এগিয়ে গেলো সুনহেরার নিকট। হাঁটুগেড়ে বসলো সুনহেরার পাশে। হাত বাড়ালো সুনহেরার বক্ষ থেকে শাড়ী সরানোর জন্য। কী মনে করে আবার পিছিয়ে নিলো নিজের হাত। চোখ বন্ধ করে মনে মনে নিজেকে শাসন করলো,
-ডোন্ট বি সো নারভাস আয়াস শি ইস ইওর ওয়াইফ। ইওর ইলেগাল লেডি। জাস্ট স্টপ থিংকিং এন্ড ডু।

কোনোরকম মনকে বুঝ দিয়ে পুনরায় হাত বাড়ালো আয়াস। মনে মনে ভাবলো আগামীকাল যদি সুনহেরা তাকে খারাপ ভাবে তাহলে ঠাশ করে কানের নিচে দিবে তার। আজ যদি না সে বৃষ্টিতে ভিজতো আর না এইরকম কিছু হতো। অন্ধকারে অতি সাবধানে সুনহেরার ড্রেস চেঞ্জ করে দম নিলো আয়াস। কাঁপাকাঁপি পায়ে এগিয়ে গিয়ে লাইট অন করলো। সুনহেরাকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। ভালোভাবে কাঁথা দিয়ে ঢেকে দিলো। জীবনে প্রথমবার কোনো মেয়ের ড্রেস চেঞ্জ করেছে। তাও আবার এই মেয়ে যেই সেই মেয়ে না তারই ওয়াইফ। নিজের ড্রেস পরিবর্তন করে বিছানায় এসে বসলো আয়াস। টুং করে ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসলো। আয়াস সেদিকে মনোযোগ দিলো না। তার এখন মাথা ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে। একটা ব্যাথার মেডিসিন খেয়ে নিলো। বিছানায় আধশোয়া হয়ে মাথা চেপে ধরলো দুইহাত দিয়ে। চশমাটা খুলে কিনারে রাখলো। আবারও টুং শব্দ করে নোটিফিকেশন আসলো ফোনে। এবার আয়াসের বিরক্তের মাত্রটা বেড়ে গেলো। চোখ মুখ শক্ত করে হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিলো। ঘোলাটে নজরে ফোনের স্ক্রিনে তাকালো। লক খুলে দেখলো হোয়াটস্যাপ থেকে নোটিফিকেশন এসেছে। অচেনা একটি নাম্বার থেকে কেউ একজন ছবি সেন্ট করেছে। আয়াস ভাবলো হয়তো তার বন্ধুরা নতুন নাম্বার দিয়ে মজা করছে। স্বাভাবিক ভাবেই নাম্বারে ক্লিক করলো। অস্পষ্ট ভাবে ছবিগুলো দেখতেই মস্তিক নাড়া দিয়ে উঠলো আয়াসের। বিরক্তি ও অস্বস্থি সবটাই উবড়ে গেলো তার। চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। একটা একটা করে ছবিতে ক্লিক করে জুম্ করে দেখতে লাগলো। এতো জঘন্য ছবিও হয় তার মন মানতে নারাজ। বিস্মিত বিমূঢ় চাহনিতে একবার ছবিগুলো দেখছে আরেকবার ঘুমন্ত নিষ্পাপ সুনহেরার দিকে তাকাচ্ছে সে।

>>>চলবে।
(আসসালামু ওলাইকুম। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের সকলের দোয়ায় ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছি। খুব জলদি প্রতিদিন গল্প দেওয়া শুরু করবো। আপনারা গল্পে বেশি একটা রেসপন্স করছে না কেনো? এটা একটু একটু কষ্ট দেয়। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে বলবেন সবাই। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here