স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2 #ফাতেমা_তুজ #part_37

0
217

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_37

গাড়ির জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ফারাবি।
বাতাসের গতি কম হলে ও গাড়ির গতিতে বাতাসের বেগ বেশি মনে হচ্ছে।
ফারহান এতোক্ষন কিছু না বললে ও এখন ফারাবি কে একটা ধমক দিয়ে দিলো।
ফারাবি কাচু মাচু হয়ে সোজা হয়ে বসে রইলো। ফারহান গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলো।
রিফাত রা আগের গাড়িতে চলে গেছে।
ফারাবি কে নিয়ে আসতে একটু লেট হয়েছে ফারহানের।

জামানের বর যাত্রী হিসেবে গাড়ি থেকে বাইরে পা রাখতেই দুটো মেয়ে রিফাত কে এসে ঘিরে ধরলো।
মেয়ে দুটো ফাজলামি করার জন্য ও এসেছিলো কিন্তু মনিকা কে দেখে এক গাল হেসে চলে গেল।
আচমকা এমন ঘটনাতে রিফাত বেশ অবাক হলো।
ফারাবির নাম্বারে কল দিয়ে কথা বলে নিলো।
ফারাবি জানালো প্রায় এসে গেছে। মনিকা দোপাট্টা ঠিক করতে করতে বলল
_ রিফাত দুটো ছবি তুলে দাও প্লিজ।

রিফাত বিরক্ত হলে ও কিছু বলল না। মনিকা মুখ বাঁকা করে পোজ নিয়ে যাচ্ছে।
তা দেখে রিফাতের প্রচন্ড রাগ হলো। কিন্তু মনিকার সাথে ঝগড়া তে পেরে উঠবে না তাই আর কথা বাড়ালো না।
বাসার মেইন ফটকের কাছে সাদা রঙের গাড়িটা থামলো।
রিফাত এগিয়ে গিয়ে ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর ফারাবি কে জড়িয়ে ধরে বলল
_ পুরো খাপে খাপ লাগছে। ইসস কারো নজর না লেগে যায়।

ফারাবি লজ্জা হাসলো। মনিকার দিকে তাকিয়ে বলল
_ মনিকা আপু ঐ খানে দাড়িয়ে আছো কেন ?

_ তোদের সাথে ভীষন রাগ করেছি এতো টা লেট করে দিলি।

ফারাবি এগিয়ে গিয়ে মনিকা কে তোষামোদে করতে লাগলো।
রিফাত ভেঙ্চি কেঁটে বলল
_ অনেক হয়েছে রঙ ঢং। প্লিজ মনিকা এবার অফ যাও।

মনিকা কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হতেই ফারহান থামিয়ে দিয়ে বলল
_ থাম তোরা আর একটা ও কথা না।

দুজনেই থেমে গেল। ফারহান রিফাত কে নিয়ে হাঁটতে লাগলো।
পেছন ফিরে মনিকার দিকে তাকিয়ে বলল
_ মনিকা ওকে দেখে রাখিস। আমরা জামানের সাথে দেখা করে আসি।

মনিকা মিষ্টি হেসে সম্মতি জানালো।

ফারহান আর রিফাত বাসার এক কোনে দাঁড়িয়ে রিকের বিষয়ে কিছু আলোচনা করে নিলো।
তারপর রানা এসে একটা সিডি দিয়ে গেল।
রানা প্রচন্ড বিজি তাই বেশি ক্ষন থাকবে না বলে লাঞ্চ করতে চলে গেল।
রিফাত আর ফারহান সিডি টা প্লে করে দেখলো রিকের বিরুদ্ধে একটা প্রুফ আছে।
এটা সোসাল মিডিয়ার এক জন কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে রিকের বিরুদ্ধে আগে থেকেই প্রট্রেকশন নিয়ে নিবে।
যাতে বাই এনি চান্স রিক মেয়ে গুলোর ভিডিও ভাইরাল করতে না পারে।

রিফাত কে একটু আনমনা দেখাচ্ছে।
ফারহান আগা গোড়া পরখ করে নিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে বলল
_ আমার কাছে কিন্তু একটা জিনিস আছে তোদের জন্য।

রিফাত ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কি ? আর কাদের জন্য ?

_ আরে তোর আর মনিকার জন্য। তুই যেই রকমের আনরোমান্টিক মনিকা কি করে যে তোর সাথে আছে।

_ দেখ ফারহান আমি মোটে ও

_ আচ্ছা ছাড় না। এখন শোন আসল কথা টা।

_ হুমম বল।

_ আমি আজ তদের জন্য একটা ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের ব্যবস্থা করেছি।
তুই যে মনিকার জন্য রিং টা কিনেছিস সেটা দিয়ে আজ আবার প্রপোজ করবি।

_ তুই জানলি কি করে আমি রিং কিনেছি ?

ফারহান রহস্য হেসে বলল
_ এটা সিক্রেট মামা।

_ বল কি করে জানলি ?

_ আরে ভাই তেড়ে আসছিস কেন ?
বলছি তো।

রিফাত ভ্রু বাঁকিয়ে কোমরে হাত গুঁজে বলল
_ বল।

_ তুই যেই শপ থেকে রিং কিনতে গিয়েছিলি আমি ও গিয়েছিলাম একটা পেনডেন্ট কিনতে তখনি দেখলাম তোকে।
তবে কিছু বলি নি আমি , সারপ্রাইজ করবো তাই।

_ হয়েছে হয়েছে। আর যাই হোক না কেন। আমি মনিকার সাথে ডিনারে যাবো না।

_ রিফাত মার খাবি কিন্তু।

_ আমি সবার সাথে বাসর জাগবো আজ।

_ কোনো দরকার নেই। আমরা আজ কেউ ই থাকছি না।
আজ তুই মনিকার সাথে ডিনারে যাচ্ছিস আর আমি ফারাবি কে নিয়ে বাড়িতে ব্যাস।

_ ফারহান শোন আমার কথা। আমি যাবো না।

ফারহান কোনো কথাই শুনলো না। রিফাত কে রেখে চলে গেল।
রিফাত মুখ গোমড়া করে রইলো। মনিকা কে দেখলেই ওর ঝগড়া ঝগড়া ভাব এসে পরে।

এখন কি করবে ওহ ?

*

ফারাবি আর ফারহান এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে। জামানের বিয়ে পড়ানো হচ্ছে। ফারহান মুচকি হেসে ফারাবির দিকে বার বার তাকাচ্ছে।
ফারাবি ও মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে। যখনি চোখাচোখি হচ্ছে তখনি ফারাবি মাথা নিচু করে নিচ্ছে।
ফারহান ধীর হাতে ফারাবি কে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবি চমকে তাকালো। ফারহান অধর কোনে হাসি ফুটিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো।
ফারাবি মাথা নিচু করে নিলো। এই ছেলেটা পাগল করে দিবে ওকে। ফারাবি নিজেকে ছাড়াতে হাঁসফাঁস করতে লাগলো।
ফারহান ছাড়ার বদলে আরো কাছে টেনে নিলো।
ফারাবি আশে পাশে বার বার তাকাচ্ছে। ফারহান একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল
_ এতো নড়ছিস কেন ? একটু তো টাচ ই করেছি বেশি কিছু তো নয় ?

_ ছাড়ুন প্লিজ। সবাই এখানে আছে , দেখে নিলে কি ভাববে।

_ উহহুহ কেউ দেখবে না। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত আছে। কারো সময় নেই তাকানোর।

_ প্লিজ।

_ আজব তো , আমার বউ আমি ধরবো তাতে কার কি ?

_ আপনি।

_ হুসসসস।

ফারাবি চুপ করেই রইলো। জামানের বিয়ে টা হয়ে গেল। সবাই হৈ হুল্লর করতে লাগলো।
মিষ্টি হাতে মিষ্টি খেতে লাগলো। ফারহানের সামনে মিষ্টি নিতেই ফারহান বারন করে দিলো।
ফারাবি সরু চোখে তাকিয়ে রইলো। ফারহান এক গাল হেসে বলল
_ আমার স্পেশাল মিষ্টি থাকতে এই ভেজাল মিষ্টি কেন খাবো ?

_ আপনি একটা

_ হুসসস। তোর বর কতোটা অসভ্য তা তোর ধারনা ই নেই।

ফারাবি ভেঙ্চি কেঁটে নিলো। ফারহান রহস্য হেসে ফারাবি কে হেচকা টান মেরে আড়ালে নিয়ে গেল।
ফারাবি ফিস ফিস গলাতে বলল
_ আপনি ঠিক আছেন ? এভাবে টেনে নিয়ে আসছেন কেন ? জ্বর টর হলো নাকি?

_ উহহুহহ। জ্বর তো এবার বাঁধাবো।

_ মানে ?

_ মানে টা হলো

ফারহান আর বলতে পারলো না। তার আগেই রিফাত আশ পাশ থেকে ফারহান কে ডাকতে লাগলো।
রাগে ফারহান গজগজ করতে করতে চলে গেল।
ফারাবি ফিক করে হেসে উঠলো।

বউ বিদায় দেওয়ার সময় বরাবরের মতোই সবার মন খারাপ।
ফারাবি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে ফারহানের দিকে তাকালো।
ফারহান এক দৃষ্টি তে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফারাবি নিঃশব্দে হাসলো। পিনপতন নিরবতা চলছে।

_ শুনছেন ?

_ হুমমম বল।

_ আমি যদি আপনাকে না ভালোবাসতাম তাহলে কি করতেন ?

ফারাবির হঠাৎ এমন কথাতে ফারহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তারপর মোহনীয় হেসে বলল
_ নাহহ ছাড়তে পারতাম, আর না তোকে ধরে রাখতে পারতাম।
দুটোই চরম যন্ত্রনা দায়ক হয়ে যেত। কারন আমি বিশ্বাস করতাম , তুই আমাকে ভালোবাসবি। যদি এমন টা নাই হতো তাহলে আমি তোকে ছেড়ে দিতাম।

ফারহান একটু থামলো। তারপর বুকের বা পাশে হাত রেখে বলল
_ এই খান থেকে তোকে মুক্ত করে দিতাম। সাথে সাথে ফারহান নাম টা কে মুক্ত করে দিতাম।
পারতাম না আমি তোকে অন্য কারো সাথে মেনে নিতে।

ভালোবাসা বড্ড যন্ত্রণা দায়ক। আমি মানি জোড় করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না।
হ্যাঁ আমি তোর উপর জোড় খাটিয়েছিলাম শুধু মাত্র ইনসিকিউর ফিল করেছি তাই।
তবে এটা ও সত্যি তুই আমাকে মেনে না নিলে আমি কখনোই তোর কাছা কাছি যেতাম না।

ফারাবি লম্বা করে শ্বাস নিলো। আজ ওর চোখ থেকে পানি ঝরলো না। পরম শান্তি তে শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে গেল।
ফারহান চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল
_ চাঁদ টা ও আমার ভালোবাসার কাছে ম্লান। আমি হেরে যাই নি।
আমার স্বপ্নের সেই প্রেয়সী টার মুখ আজ দৃশ্যমান।
যার প্রতি টা শিরায় শিরায় এখন আমার ডি এন বইছে।

ফারাবি চোখ বন্ধ করে নিলো। ফারহান মোহনীয় হেসে ফারাবির নাকে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।

সা সা করে গাড়ি চলছে। রাতে বাতাসের বেগ বরাবর ই বেশি থাকে। আজ ও তার ব্যতিক্রম নয়।
রাতের পৃথিবী টা একটু বেশি ই সুন্দর নাকি দিনের পৃথিবীটা বেশি সুন্দর ?
ফারাবির উত্তর মিললো না। আসলে প্রিয় মানুষ টার ভালোবাসা থাকলে সব সময় ই সুন্দর।
ফারহান এক লেকের ধারে গাড়ি থামিয়ে দিলো।
ফারাবির দিকে তাকিয়ে বলল
_ ফারাবি লেকের ধারে বসে চাঁদ দেখবি ?

ফারাবি ঝরা হাসলো। ফারহান সম্মতি পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল। ফারাবি গাড়ি থেকে নামতেই ফারহান ওকে কোলে তোলে নিলো। ফারাবি এক গাল হেসে ফারহানের গালে চুমু খেয়ে নিলো।
বিস্ময়ে ফারহান হতবাক হয়ে গেল। ফারাবি মোহনীয় হেসে ফারহানের ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।

** একটু পর একজন খুব বেশি প্রিয় থেকে খুব বেশি অপ্রিয় হয়ে যাওয়া মানুষের জন্মদিন।
অপ্রিয় হলে ও জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইলো। আই হোপ ব্লা ব্লা ব্লা 😊
এখানেই না হয় থেমে গেলাম। প্রার্থনা গুলো সৃষ্টিকর্তার কাছে করলাম। তিনি সহায় হবেন ইনশআল্লাহ ।
” অগ্রিম শুভ জন্মাদিন ”
উইস টা শুভ দিয়ে শুরু হলে ও দিনটা শুভ বানানোর সম্পূর্ন ভার তার নিজের। ডিয়ার ***** 😏21 বছর পূর্ন করার শুভেচ্ছা রইলো অপ্রিয় ব্যক্তি।

তিন হাজার ফলোয়ার আমার দরজায় এসে কড়া নাড়ছে। সবার প্রতি ভালোবাসা রইলো। আমার চার মাস 9 দিনের পথ চলাতে এতো ভালোবাসা দেওয়া জন্য।
♥️Alhmdulilah ♥️

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here