স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2 #ফাতেমা_তুজ #part_10

0
184

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_10

ভোরের তীক্ষ্ম আলো হাজার মাইল পারি দিয়ে পৃথিবীতে মোহ ছড়াচ্ছে।
থেকে থেকে পাখির গুঞ্জন ও শোনা যাচ্ছে।
ফারাবির সে দিকে কোনো ধ্যান ই নেই। ফারাবি মত্ত ফারহান নামের ঝলকানির দিকে।
কি মিষ্টি দেখাচ্ছে ছেলেটাকে , ঠোঁটের কোনে অসাধারন এক মোহনীয় হাসি।
ফারাবি কখন থেকে ছেলেটা কে দেখে যাচ্ছে , কিন্তু এক ফোঁটা ক্লান্তি নেই তাতে ।
অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে।
ফারাবি লাজুক হাসলো , কে জানতো এই ছেলেটার হাজার শাসনে লুকিয়ে আছে খাঁটি ভালোবাসা।

ফারাবি ভেবে পায় না ছেলেটা কেন এতো ভালোবাসে ওকে।
এতো এতো কেয়ার কেন করে ?
যে চোখ তুলে তাকায় তাকেই উপরে ফেলে।

ফারাবির ধ্যান ভাঙ্গলো ঘড়ির টিট টিট আওয়াজে।
মুহুর্তেই মুখ টা ছোট হয়ে গেল।
সময় কেন এতো তাড়াতাড়ি চলে যায় ?
মুখ গোমড়া করে ঘড়ির দিকে তাকাতেই ভরকে গেল ফারাবি।
5 টা বেজে গেছে, ইসস পুরো 30 মিনিট লেট হয়ে গেল।
ফারহানের দিকে তাকাতেই ফারাবির মুখে আড়ষ্টতা ভর করলো।
ছেলেটার ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করছে না ওর।
কিন্তু উপায় নেই যে , ফারাবি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
বুক ভরা শ্বাস নিয়ে ফারহানের মাথায় হাত বুলালো।
প্রশান্তি তে চমকে উঠলো ওর সবাঙ্গ। শ্বাস বেড়ে গেল সহস্র গতিতে ।
ধীর কন্ঠে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
_ ফারহান ভাইয়া উঠুন। অনেক দেরি হয়ে গেছে, সবাই জেগে যাবে।

বার কয়েক ডাকার পর ও ফারহান উঠলো নাহহ।
ফারাবি রুদ্ধশ্বাস ফেলল।ধীরে ধীরে ধাক্কা দিতে দিতে বলল
_ উঠুন অনেক লেট হয়ে গেছে।
আরে উঠুন নাহহহ।

ফারহান চোখ পিট পিট করে তাকালো।
ফারাবি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারাবির কোলে মাথা রেখেই কোমর আরো শক্ত করে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবির পেটে সুরসুরি লেগে গেল।
ফারাবি তেতে বলল
_ উঠুন। কি ধরনের অসভ্যতামু এটা ?

ফারহান ঘুমো ঘুমো কন্ঠে বলল
_ এমন করছিস কেন ? আমি আর ও ঘুমাবো, একটু কষ্ট কর জান।

ফারাবি মুখ বাকালো , একা একাই বির বির করলো
_ এমন করছিস কেন জান। যত্তসব ফালতু লোক, আমার কোল কে সরকারি বালিশ পেয়েছে।
কোলে মাথা রেখে হয় না আবার কোমর জড়িয়ে আছে।
এতো এতো ঢং আর সহ্য হয় নাহহ।

ফারহান চোখ বোজা অবস্থাতেই ফারাবির পেটে চুমু খেল।
ফারাবি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থেকে ফারহান কে জোরে ধাক্কালো।
এই সব ফালতু লোকের জন্য মায়া করতে নেই।
একে প্রথমেই যদি টেনে উঠাতাম তাহলে ঠিক ছিলো।

ফারাবির ধাক্কা ধাক্কি তে ফারহান উঠে বসলো। বিরক্তিতে ভরে গেছে সম্পূর্ণ মুখ। ফারাবি রুদ্রমুর্তি ধারন করে আছে।পা রছে না শুধু ফারহানের গলা টা টিপে ধরতে।
ফারহান বিরক্তি নিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল
_ একটু ঘুমিয়েই তো ছিলাম ,দিলি ঘুম টা নষ্ট করে।

ফারাবি ভেঙ্চি কেঁটে বলল
_ বাজে কয়টা ?

_ কেন তোর রুমে ঘড়ি নেই ?

ফারহানের কথায় ফারাবির ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অব্দি রেগে উঠলো।
কিন্তু সেটা মুখ দিয়ে বের হওয়ার আগেই বাতাস হয়ে উবে গেল।
ফারাবি দীর্ঘশ্বাস ফেলল । ইসস যদি ফারহান কে দু চার টে গালি মারা যেত।
তাহলে বজ্জাত টা বুঝতো মজা।

ফারহান লম্বা করে হাত মেলে দিয়ে আড়মোড়া ভাঙলো।
এক হাত গিয়ে লাগলো ফারাবির মাথায়।
ফারাবি আহহ করে উঠতেই ফারহান এক গাল হাসলো।
ফারাবি চোখ বাঁকিয়ে নিলো।
এই সব ফালতু লোকের একশ হাতের মাঝে থাকাই ভয়ঙ্কর।
আর ও তো আছে কয়েক ইঞ্চি দূরে।

ফারহান চোখ ডলে নিয়ে ফোন অন করলো।ফোনে টাইম দেখে লাফিয়ে উঠলো। ফারাবি তাচ্ছিল্য হাসলো, ফারহান ব্যস্ত কন্ঠে বলল
_ এতো লেট হয়ে গেছে।
4’30 টার সময় ডাকতে বলেছিলাম তুই কি না 5’24 এ ডেকে তুললি।
কোনো ম্যানার্স ই নেই দেখছি।

ফারাবি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। নিজে লেট করে এখন ওকে দোষ দিচ্ছে এখন। ফারাবি বিরক্তি ঝেরে ধীর কন্ঠে বলল
_ শুনুন আমি আপনাকে আগেই ডেকে তুলতাম।
ভাবলাম একটু আগে ঘুমিয়েছেন তাই 5 টার সময় ডেকেছি।
আর তারপর ও আপনি এতো লেট করেছেন।

ফারহান সন্দিহান চোখে তাকালো। কয়েক সেকেন্ড পর প্রাণোচ্ছল হাসলো। ফারাবির বাহু তে বাহু দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলল
_ সামথিং সামথিং ?

ফারাবি না বোঝার চোখে তাকিয়ে বলল
_ কিহহ ?

ফারহান বাঁকা হাসলো। ফারাবি মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
ফারহান ফারাবির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
_ কাল অনেক ভালো ঘুম হয়েছে আমার ।
আর খুব সুন্দর ছিলো সময় টা। স্পেশালি ঐ চুমু টাহহ , আমি কখনো ই ভুলবো না সেটা।
বেস্ট ফিলিং অফ মাই লাইফ।

ফারাবি চমকে তাকালো। ভয়ে চোখ মুখ ঘোলা হয়ে গেছে ওর।
ফারহান বাঁকা হাসতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
ফারহান বিগলিত হেসে বলল
_ আমার লজ্জাবতী, লজ্জা তে আপনাকে আবেদনময়ী লাগে।
আমি কন্ট্রোল লেস হয়ে যাই , কিছু করে ফেললে, পরে আমাকে দোষ দিতে পারবি নাহহ।

ফারহানের কথায় ফারাবির চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
এই লোকটা ওকে লজ্জা আর অস্বস্তি দিতে দিতেই মেরে ফেলবে।

ফারাবির চুল নাক ডুবিয়ে ফারহান ঘোর লাগানো কন্ঠে বলল
_ তুই ভেবেছিস আমি ঘুমিয়েছি কিন্তু আমি তখন ও ঘুমোই নি।
আমি চোখ বন্ধ করে তোর শরীরে মিষ্টি ঘ্রাণ টা অনুভব করছিলাম।
তোর হাতের মিষ্টি ছোঁয়া গুলো তে আমি হাড়িয়ে যাচ্ছিলাম।
আর ঠিক তখনি তুই আমার ঠোঁটে উপহার স্বরূপ চুমু খেলি।
আই সয়ার আমি কেঁপে উঠেছিলাম , আমার সত্তা থমকে গিয়েছিলো।
আমি ভাবতে পারি নি তখনো , তুই আমাকে কিস করেছিস।

বলতে বলতে ফারহানের চোখ ছলছল করে উঠলো।
চোখ মুখে তৃপ্তি, ঠোঁটে লেগে থাকা স্নিগ্ধ হাসি।
ফারাবি নুইয়ে গেল , ফারহানের বলার ধরন ওকে লজ্জা দিচ্ছে সাথে এক আকাশ সমান অনুভূতি।
ফারাবি নিজ থেকে চুমু খেয়েছে দেখে এতো টা খুশি ওহহ।
হাউ ?

ফারহান আলতো হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবি কিছু বললো নাহহ। ফারাবির চুল গুলো এক সাইট করে দিয়ে ওর কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে প্রাপ্তির স্বরে বলল
_ thanks for Frist kiss.
আমাদের প্রথম কিস টা তোর থেকে হবে আমি কল্পনা ও করি নি।

ফারহানের কথায় ফারাবি নড়েচড়ে উঠলো। কাল কি হয়েছিল ওর ? ইসসস কি কাজ টাই না করে ফেলল।আবার ধরা ও খেয়ে গেল।

ফারাবি কে ছেড়ে দিয়ে ফারহান বলল
_ আমি তোকে সম্পূর্ণ অনুভব করতে চাই জান।
দেখ সূর্য টা ও হাসছে , প্রকৃতি টা ও চায় তোর হাত আমার হাতের মাঝে থাকুক।
ইনফেক্ট তুই নিজে ও আমাকে ভালোবাসিস । কিন্তু সেটা অনুভব করছিস নাহহ আর মেনে ও নিতে চাইছিস না।
ট্রাস্ট মি জান আমি তোকে খুব ভা ফারহান দমে গেল, প্রসঙ্গ বদলে বলল
_ আই মিন মিস করি জান।
বুঝিস না কেন আমাকে ? আমি কিন্তু সব কিছু টলারেট করলে ও তোকে অন্য কারো সাথে টলারেট করবো নাহহ।
তোর ঐ সো কলড কাজিন রিক কে বলে দিছ যেন তোর থেকে শ হাত দূরে থাকে।
না হলে এবার হাত না শুধু , সাথে ঠ্যাঙ্গ ও ভেঙে দিবো।

ফারাবি নাক কুঁচকে বলল
_ মানে।

ফারহান রহস্য হাসলো। যার বিন্দু মাত্র ফারাবি বুঝলো না। থমথমে কন্ঠে ফারহান বলল
_ আই নো তুই ওকে ভালোবাসিস নাহহ।
সব টা পরিবারের সম্মান রাখতেই করছিস।
কিন্তু জান এটা তো অনুচিত । সব কিছু সব সময় সম্ভব না, এটা তো ভাবতে হবে।

ফারাবি কিছু বলল নাহ। ভেতর থেকে এক ফালি দীর্ঘশ্বাস বের হলো। ফারহান যে কি করে বসবে কে জানে । তবে ভয়ঙ্কর কিছু হয়ে যাবে।
ফারাবিই বা কি করবে ?
সমস্ত কিছুই যে হাতের বাইরে।
রিক কে বিয়ে করার জন্য রাজি যে ওকে হতেই হতো।
কিন্তু ফারহান কি তা মেনে নিবে ?
ফারাবির নিজে কে খুব বেশি অসহায় মনে হচ্ছে।

ফারহান ব্যলকনি থেকে আবার ফিরে এসে মেকি হাসলো। ফারাবি তার ভাবনায় মত্ত ছিলো।
খানিকটা ঝুঁকে ফারহান বলল
_ বাই দ্যা ওয়ে আমরা কি লুকিয়ে প্রেম করছি ?

ফারাবি ঘুরে মুখ বাঁকিয়ে বলল
_ হোয়াট আমি কি আপনাকে

ফারাবি কে থামিয়ে দিয়ে ফারহান গম্ভীর গলায় বলল
_ আই নো তুই বলবি তুই আমাকে ভালোবাসিস নাহ হ্যান ত্যান।
বাট ইউ নো হোয়াট আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট ইউর ভাব ।
হুহহ

ফারাবি মুখ ঘুরিয়ে নিলো, কে বলছে কেয়ার করতে ?
আজব লোক ,ভাব দেখলে গা পিত্তি জ্বলে যায়।

ফারহান চলে যেতে যেতে বলল
_ আমাকে গালি মারা শেষ হলে একটু ঘুমিয়ে নে।
আর শোন এখন বেশি ঘুমাবি নাহহহ নয়টার মধ্যে উঠে ব্রেকফাস্ট করে নিবি।
আর বিকেলে লম্বা ঘুম দিবি।

ফারাবি কোন প্রতিউত্তর করলো নাহহ।
ফারহান আশে পাশে তাকিয়ে অতি সাবধানে নেমে গেল।
গেটের কাছে এসে দেখলো দারোয়ান তালা খুলছে।
ফারহান দ্রুত একটা মোটা রেনট্রি গাছের পেছনে লুকিয়ে পরলো।
দারোয়ান গেট খুলে চলে যেতেই ভো দৌড়।
নিজের বাসার সামনে এসে দেখলো দারোয়ান রহিম তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
ফারহান বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল
_ কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন ?

রহিম মুখ কুঁচকে বলল
_ এহহ

ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
এই রহিম টা আরেক প্যারা। শুদ্ধ ভাষা প্রায় সময় ই বুঝে নাহহ একটু অশুদ্ধ করে বললেই তার মস্তিষ্কে সে কথা ধরা দেয়।

ফারহান শান্ত কন্ঠে বলল
_ কইলাম যে এমনে তাকাইয়া আছো কিসের লাইগা ?

রহিম এক গাল হেসে বলল
_ আরে ভাইজান কি আর কইতাম আন্নারে।
আন্নে বাইরে গেলেন কেমনে?
হামি তো গেট এহনি খুললাম।

ফারহান সোজা গলায় স্পষ্ট উত্তরে বলল
_ পাঁচিল টপকে।

_ কিতা ?

_ কিছু নাহহহ রহিম ভাই। তুমি আমার মাথা টা আর নষ্ট কইরো নাহহ। এমনি তেই বহুত প্যারা তে আছি ।

বলতে বলতে ফারহান বাসায় ঢুকে পরলো।

রহিম ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাগানে গিয়ে এক্সারসাইজ করতে লাগলো।
সব কিছু ই ঠিক ঠাক আছে , এখন ঐ রিক কে টপকানোর পালা।
হাত ভাঙার পর ও থামে নাই , সেই ফারাবির দিকেই নজর দিচ্ছে।
এর ঠ্যাঙ্গ ভেঙে হাতে ধরাতে হবে।
ফারহান বাঁকা হেসে পুশ আপ করতে লাগলো।
প্রচুর শক্তি অর্জন করতে হবে , যাতে এক ঘুষিতেই কাপুকাত হয়ে পরে।

** আজ রাতে আরেক পার্ট না ও আসতে পারে। সিউর আসবে ই যে তা বলতে পারছি নাহ। আজ সকাল থেকে 3 টা অব্দি অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে স্কুলে ছিলাম। প্রচুর লিখতে হয়েছে। ক্লান্ত হয়ে বাসা তে ফিরেছি । তারপর দু ঘন্টা সময় নিয়ে গল্প লেখা আমার পক্ষে সম্ভব হয় নি । বিকেলে লাঞ্চ কমপ্লিট করেই গল্প লিখতে বসেছি। আশা করি আমার বিষয় টা বুঝবেন। কষ্ট করে গল্প লিখি , ফল যদি এমন হয় সত্যি, সত্যিই খারাপ লাগে। সাইলেন্ট রিডার্স রা একটু একটিভ হোন।
আমার লেখার সমালোচনা করতে জয়েন করুন
Fatema’s story discussion & follow my page
Fatema tuz – ফাতেমা তুজ

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here