স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2 #ফাতেমা_তুজ #part_16

0
191

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_16

ব্যলকনির দরজা খুলে পা টিপে টিপে ঘরের ভেতরে ঢুকলো ফারহান। চোর আর ওর মাঝে আপাতত তেমন কোনো ফারাক নেই। চোর জিনিস পত্র চুরি করতে আসে আর ও ওর প্রেয়সী কে। তবু ও অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে। কিছু কিছু সময় চোরের মতো করে আসা ও ভালো লাগার কারন হয়ে যায়।
ব্যলকনির দরজা টা খুব যত্ন করে লাগিয়ে দিলো। যাতে ফারাবি টের না পায়।
ফারাবি নরম বালিশে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে আছে । ড্রিম লাইটের আলো তে ফারাবির মুখ টা জ্বল জ্বল করছে। কেমন শুকিয়ে গেছে মেয়েটা। ফারহানের চোখ টা ছলছল করে উঠলো।
ফারাবির দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো। পা যেন কাঁপছে, মেয়েটার রুগ্ন চেহারা ওকে কাবু করে ফেলেছে।
বেডের সাইটে হাঁটু গেড়ে বসে ফারাবির দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।
ফারাবির শ্বাস গাঢ়, ফারহান এক ধ্যানে তাকিয়ে প্রতি টা শ্বাস গুনতে লাগলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর কাঁপা কাঁপা হাতে ফারাবির দু হাতে হাত ছোঁয়ালো।
জ্বরে পুরে যাচ্ছে গা, ফারহানের শরীর কেঁপে উঠলো।
মেয়েটার কতোটা কষ্ট হচ্ছে এখন ?
খুব রাগ হচ্ছে কেন এমন করলো ওহহ ?

ফারাবির ঠোঁট দুটো থরথর করে কাঁপছে। যেন সমস্ত শীত ওর ঠোঁটে ভর করেছে। কেমন গুটিয়ে যাচ্ছে, ফারহান তার উষ্ণ ঠোঁটে ফারাবির কপালে ডিপ লি স্পর্শ করলো।
ফারাবির গায়ের গরম হাওয়া ওর ঠোঁটে লাগছে তাতে ও ওর প্রশান্তি হচ্ছে ।
বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে চুমু খেলে ও টপ করে চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি ফারাবির কপালে পরে গেল।
ফারাবি নড়ে চড়ে উঠলো , ফারহান ছিটকে দূরে সরে গেল।
এই গরমে ও জ্বরের কারনে ফারাবি জড়সড়ো হয়ে যাচ্ছে। ফারহান আলতো হাতে চাদর টেনে দিতেই ফারাবির উন্মুক্ত পায়ে ওর হাতের স্পর্শ লাগলো।
ফারাবি ধুরমুরিয়ে উঠে গেল। আচকা উঠে যাওয়াতে ফারহান ঐ ভাবেই বসে রইলো।
ফারাবির শ্বাস গাঢ় হয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে।
ফারহান দ্রুত পানি ঢেলে নিয়ে ফারাবি কে এগিয়ে দিলো।
ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো ওহহ।
ফারহানের চোখ দুটো কাঁপছে, ফারাবি লম্বা করে শ্বাস নিয়ে আনমনেই বলল
_ ওহহ আপনি ।

ফারহান কিছু বলল না। ফারাবি মাথা টা হালকা চেপে ধরতেই মস্তিষ্ক ধরা দিলো তার সামনে ফারহান দাঁড়িয়ে ।
ব্যগ্র হয়ে তাকালো ওহহ , ফারহানের অবয়ব দেখতে পেয়েই শিউরে উঠলো ওহহ।
চোখ দুঠো নোনা জলে ভরে উঠলো। হু হু করে উঠলো ওর মন। কাল থেকে এই মানুষটির দেখা পায় নি ওহহ।
একটি বার দেখতে ওহহ আসে নি।
ফারাবির চোখের পানি দেখে ফারহানের বুক কেঁপে উঠলো।
ব্যস্ত হয়ে ফারাবির কাছে হাঁটু গেড়ে বসে বলল
_ তুই কাঁদছিস কেন জান ?
আমি এসেছি তাই ? আমি চলে যাবো প্রমিস , প্লিজ কাদিস না তুই।

ফারাবির হিঁচকি উঠে গেল। ফারাবির কান্না থামাতে ব্যর্থ হয়ে ফারহান দূরে সরে যেতে চাইলো।
ফারাবি আলতো হাতে ফারহানের হাত ধরে ফেলল।
ফারহান ছলছল নয়নে পেছন ঘুরে তাকিয়ে ঝাঁপিয়ে বুকে টেনে নিলো ফারাবি কে।
ফারাবির চোখ দুটো থেকে এখনো পানি ঝরছে।
ফারাবি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফারহান বলল
_ কেন জান? নিজেকে কেন কষ্ট দিলি তুই ?
আমাকে মেরে ফেল তবু ও তুই নিজেকে কষ্ট দিবি না।
আমি সহ্য করতে পারি না।

ফারহানের কথাতে ফারাবির বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো।
ফারহানের কাঁধে মাথা রেখেই দু হাতে ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবির স্পর্শ পেতেই ফারহান কেপে উঠলো।
সাথে অধর কোনে দারুন হাসি ফুটলো।
ফারাবি কে ছাড়িয়ে ওর দু গালে হাত রেখে ফারহান বলল
_ আমাকে চাস তুই ? অথচ বলতে এতো কষ্ট কেন হয় ?
অভিমান করে আছিস ?

ফারাবি কিছু বলল না। ফারহান চলে যেতে নিলেই ফারাবি ফারহানের শার্টের হাতা টা আলতো করে টেনে ধরলো।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কিহহ ?

ফারাবি মাথা নিচু করেই বলল
_ আমার পায়ে হাত দিয়েছিলেন কেন ? আমি না বলেছি পা ছুবেন না।

ফারহান মৃদু হাসলো , মেয়েটা কি বোঝে না ঐ পায়ে বারং বারং চুমু খেতে পারে ওহ।
আর শুধু তো পায়ে স্পর্শ করেছে ।

ফারহানের উত্তর না পেয়ে ফারাবি শান্ত কন্ঠে বলল
_কেন এসেছিলেন ?

ফারহান লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ রিকের থেকে বাঁচাতে।

ফারাবি চমকে তাকালো।
ফারহান ধীর কন্ঠে বলল
_ তোর দিকে বাজে নজর ওর। আর আজ ও এসেছে সেটা জেনে ওহ আমি কি করে তোকে একা রাখি ?

ফারাবি তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ রিক ভাইয়া আসে নি। আর কিছু দিন পর তো ওনার সাথেই আমার বিয়ে হয়ে যাবে।

ফারাহানের রাগ উঠে গেলে। চোখ দুটো লালচে আভা তে ছেয়ে গেল। চোয়াল বার বার উঠা নামা করছে। ফারহানের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেল ফারাবি।
বেডের সাথে হেলান দিয়ে জড়োসড়ো করে বসলো।
ফারহান চোখ বুজে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করলো। আজ অসুস্থ না থাকলে ফারাবি কে ঠাস ঠাস চড় বসিয়ে দিতো।

ফারহান ধীর পায়ে ফারাবির দিকে এগিয়ে গেল । ফারাবি ফাঁকা ঢোক গিলে নিলো। ফারহান ফারাবি কে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।
ফারাবি কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বলল
_ কিছু করতে বাধ্য করিস না। আমি কিন্তু খুব খারাপ , যখন তখন যা তা করে ফেলতে পারি ।

ফারাবির চিত্ত কেঁপে উঠলো। ফারহানের উষ্ণ নিশ্বাস ঘাড়ে এসে আঁচড়ে পরছে।
তার কারনে পুরো শরীরে আবেশ বয়ে চলছে। ফারাবির কপালে বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে চুমু খেলো।
ফারহানের স্পর্শে বার বার শিউরে উঠছে ফারাবি । ফারহান মোহনীয় হেসে ফারাবির এলো মেলো চুল গুলো গুছিয়ে দিতে দিতে বলল
_ অসুস্থ না থাকলে আই সয়ার আজ কিছু একটা করে ফেলতাম আমি।

ফারাবি ছোট ছোট করে তাকাতেই ফারহান ঝরা হাসলো।
ফারাবির দিকে হালকা ঝুঁকে বলল
_ তাতে কি কিছু তো করাই যায় ?

ফারাবি ভরকে গেল, ফারহান বাঁকা হেসে টান মেরে ফারাবি কে বেডে শুইয়ে দিলো।
ফারাবি ভয়ে চুপসে গেছে , অসুস্থতার কথা যেন ভুলেই গেছে।
ফারহান ধীর গতিতে ওর দিকে আগাতেই চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।
ফারহান ঝরা হাসলো, এই ভয়ার্ত চাহনীতেই ঘায়েল হয়েছে ওহহ। ফারাবির দু বাহু তে হাত রেখে নাকে নাক ঘষতে ঘষতে লাগলো।
ফারাবির হার্ট বিট গুলো যেন মার্বেলের মতো আওয়াজ তুলছে। ফারহান সরস গলায় বলল
_ এই মেয়ে তুই কি করে আমাকে জ্বালিয়ে দিলি বল তো। আমি যে প্রতি মুহুর্ত তোকে ভাবি। বার বার তোর স্মৃতি তে ডুবে যাই।
এতো বিচিত্ররতা নিয়ে আমি কি করে এতো দূরে আছি বল তো।

ফারাবি চমকে তাকালো। ফারহান আলতো হেসে ফারাবির গালে নাক ঘষতে লাগলো।
ফারাবি অস্বস্তি তে নুইয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফারহানের সে দিকে খেয়াল ই নেই। লজ্জাতে মুখ টা লাল হয়ে গেছে। ফারহান আলতো হেসে ফারাবির গলাতে চুমু দিয়ে বলল
_ আর জ্বালাবো না , আপাতত তোকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখবো।

ফারাবি বড় বড় চোখ করে তাকাতেই ফারহান বলল
_ উষ্ণতা দেওয়ার জন্য জান , আপনি এই ফারহানের উষ্ণতা ছাড়া জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছেন।

ফারাবি লজ্জা পেলো , ফারহান ঝরা হেসে ফারাবি কে জড়িয়ে বলল
_ এই মুহূর্ত টা দীর্ঘ হোক।

ফারাবির ভালো লাগছে খুব বেশিই ভালো লাগছে। চাঁপা অভিমান টা কাজ করছে না , কিছু টা লজ্জা লাগলে ও ফারাবি এক ভয়ঙ্কর কাজ করে বসলো।
ফারহান কে জড়িয়ে ধরে ফারহানের বুকে মাথা রাখলো।
ফারহানের মুখে উপচে পড়া খুশি ,ঝলকানি দিলো। প্রেয়সীর একটু ভালোবাসাতেই কেমন বুক ভরে যায়। ভালোবাসা বুঝি এমনি হয় , এ মেয়েটাকে কেন এতো ভালোবাসে ওহহ ?
এ উত্তর ওর কাছে নেই । ভালোবাসার সঙ্গা বিচিত্র রঙা, কারন গুলো ও বিচিত্র রঙা ।

*

ভোর সাড়ে চার টা, ফারাবি কিংবা ফারহান কেউ ই ঘুমায় নি। ফারহান বেডের সাথে হেলান দিয়ে ফারাবিকে দু হাতে জড়িয়ে আছে।
আর ফারাবি ফারহানের বুকে মাথা রেখে পিঠ জড়িয়ে আছে। ফারহানের প্রতি টা হৃদস্পন্দন গুনছে ফারাবি। এ মানুষ টার সাথে কি ভাবে জড়িয়ে পরেছিলো ভাবতেই কেমন লাগছে। তবে সেটা আজ ভালোলাগার অনুভূতি। ফারাবি আজ লাজ লজ্জা ভুলেই ফারহানের বুকে মুখ গুঁজে আছে। ফারহানের শরীরের মিষ্টি ঘ্রান টা যে কাউ কে পাগল করতে সক্ষম।
এই মানুষ টা কে এতো স্টাইল করতে দেওয়া যাবে না। কোনো অকেশনে গেলেই ফারহান কে গিলে খায় হাজারো মেয়েলি চোখ।
ইসস নজর লেগে গেলে কি হবে তখন ?

ফারহান বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ফারাবির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
_ ঘুমোলি না একটু ও , এসে বোধহয় ঠিক করি নি।

ফারাবি আনমনেই বলে উঠলো
_ উহুহ এভাবেই ভালো লাগছে।

ফারহান রসালো গলায় বলল
_ তাহলে আরো কাছে নিয়ে আছি ?

ফারাবি এবারো ঘোরের মধ্যে উত্তর দিলো
_ হুহহ

ফারহান চমকে বলল
_ সিউর তো ?

_ কিহহ ?

ফারহান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
_ এতোক্ষন কি বলেছিস তুই ?

ফারাবি ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কি বলেছি ?

ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ তোকে বলেছি আরো কাছে নিয়ে আসি আর তুই সম্মতি জানিয়েছিস।

ফারাবি চমকালো , ফারহান মিথ্যা বলার মানুষ নয়। ইসসস কি সব বলেছে ওহহ।

ফারহান সরস হেসে শান্ত কন্ঠে বলল
_ ভোর হয়ে যাচ্ছে, তুই ঘুমো আমি যাচ্ছি।

ফারাবি মাথা ঝাঁকালো, ফারহান ফারাবির গালে চুমু খেয়ে কপালে হাত দিয়ে বলল
_ বাহহ জ্বর টা ছেড়েছে দেখছি।

ফারাবি লজ্জা পেল , এতোক্ষন সময় ফারহান কে জড়িয়ে ধরে ছিলো ওহহ। ইসসস ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে ।

Join Fatema’s story discussion
Follow Fatema tuz – ফাতেমা তুজ

সামনেই চমক আছে, বড় সড় ধাক্কা খাওয়ার জন্য তৈরি হোন।
ফারহান একটা অন্যায় করেছে 🙂 এর জন্য—— বাকি টা জানতে হলে গল্পের জন্য অপেক্ষা করুন। জানি না কি হতে চলেছে 🙂
আমার উপন্যাস ধূসর রঙের প্রজাপতি পড়তে ভুলবেন না। উপন্যাস টা তে আমি সুন্দরবন সহ নানা জায়গার চিত্র তুলে ধরবো।
অবশ্যই উপন্যাস টা রোমান্টিক। উপন্যাসের সূচনা পর্ব
👇
https://www.facebook.com/110123584545542/posts/171656251725608/?app=fbl

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here