স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2 #ফাতেমা_তুজ #part_18

0
167

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_18

রিক এসেছে শুনে ফারহানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। সাথে সাথে ফারাবিদের বাসায় এসে হাজির।
ফারাবি আর রিমি ফারাবির রুমে বসে আছে। রিক আলতো পায়ে ফারাবির ঘরে প্রবেশ করলো। রিমি আর ফারাবি হাসছিলো , রিক কে দেখেই ফারাবির বুক কেঁপে উঠলো।
রিক আলতো হেসে বলল
_ কেমন আছো ফারাবি ?

ফারাবি শুকনো গলাতে বলল
_ ভালো।

রিক হাসলো , ফারাবির দিকে বাজে ভাবে তাকাতে লাগলো।
ফারাবি নিজেকে বার বার ঠিক করে যাচ্ছে ।
রিক চোখ নামিয়ে বলল
_ কেমন আছো রিমি ?
_ ভালো ভাইয়া আপনি ?
_ এই তো ভালো। রিমি কিছু মনে না করলে আমি ফারাবির সাথে একটু কথা বলতে চাই।
ফারাবি বড় বড় চোখ করে তাকালো।
রিমির হাত খামচে ধরলো। রিমি ভদ্রতার খাতিরে আলতো হেসে বলল
_ ঠিক আছে।
ফারাবি অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইলো। রিমি দম ফেলে বের হয়ে গেল। ও এখানে কিই বা করতে পারে ?

রিমি চলে যেতেই রিক উজ্জ্বল হাসলো। যেই হাসিতে ঝরিয়ে আছে বিদঘুটে মোহ। ফারাবির ভীষন কান্না পাচ্ছে ।

রিক ধীর পায়ে এগিয়ে ফারাবির পাশে বসলো। ফারাবি ছিটকে দূরে সরে গেল।
শরীরে ব্যথা না থাকলে দৌড়ে পালাতো ওহ। কিন্তু এখন উঠতে গেলেই পরে যাবে।

রিক বাঁকা হাসলো। ফারাবির মাথা থেকে পা অব্দি অবলোকন করতে লাগলো। কি বিদঘুটে সে চাহনি, ফারাবির গা গুলিয়ে আসলো।

রিক খানিক টা কাছে আসতেই ফারাবি দেয়ালের সাথে সেঁটে গেল। রিক বিদঘুটে হাসলো, ফারাবির চোখ দুটো ছলছল করছে।
বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে ফারহানকে ডাকতে ইচ্ছে হচ্ছে।
রিক তার কালো হাত দিয়ে ফারাবি কে টাচ করতে যেতেই একটা শক্ত হাত ওকে টেনে উঠিয়ে নিলো।
ফারহানের চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। রিক কে মাটিতে পুঁতে ফেলতে পারলে ওর শান্তি হতো।
কিন্তু এই মুহূর্তে এই কাজ ও করবে না ওহ।
ফারাবির চোখ দুটো যেন প্রান ফিরে পেল। ছুটে গিয়ে ফারহান কে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর।
যার বুকে মাথা রাখলে ওহ সব থেকে নিরাপদ।
ফারহান কে দেখে ভরকে গেল রিক।ফারহান সম্পর্ক ও যতো টুকু জানে তাতে ওর কলিজায় কুলোলো না ফারহান কে আঘাত করার।
তাছাড়া এখন ঝামেলা করতে চায় না ওহ।
গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। ঠিক যেন চুর চুরি করতে এসে ধরা পরে গেছে।
ফারহানের চোখ দুটো দাবনলে ফেটে যাচ্ছে। ফারাবি নীরবে চোখের পানি ফেলছে।
পেছন ঘুরে ফারাবির দিকে তাকাতেই ফারহানের বুকে যন্ত্রণা করতে লাগলো।
দরজা লক করে দিয়ে ফারাবির কাছে বসলো।
কাঁপা স্বরে উচ্চারণ করলো
_ ফারাবি

ফারাবি নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলো না আর।
ঝাঁপিয়ে পরলো ফারহানের বুকে। ফারাবির চোখের অতল নোনা জ্বলে ভেসে যাচ্ছে ফারহানের শার্ট।
ফারহান এক হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফারাবির মাথায় চুমু খেল।
মেয়েটা এতো টা ভয় পেয়ে গেছে যে কথা বলতে পারছে না।
ফারহান দু হাতে জড়িয়ে ধরলো, একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
ফারাবি হিচকি তুলতে তুলতে বলল
_ আমি এতো দূর্বল কেন ? আমি যদি আপনার অধিকার রক্ষা করতে না পারি?

ফারহানের চোখ ছলছল করে উঠলো। ফারাবি কে বুক থেকে উঠিয়ে এক দৃষ্টি তে দেখতে লাগলো।
ফারাবির দিকে এগিয়ে গেল ফারহান। ফারাবির গালে পরা চোখের পানি টুকু ঠোঁট দিয়ে শুষে নিলো।
ফারাবি চমকালো , ফারাবির কপালে লম্বা সময় নিয়ে চুমু খেলো ফারহান।
ফারাবির হিচকি থেমে গেছে, ফারহানের কান্ডে এখন খুব লজ্জা লাগছে ওর।
ফারহান ঝরা হাসলো এক হাতে ফারাবির কোমর জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবির শরীরে অদ্ভুত শিরশিরানি হলো।
ফারহান তার উষ্ণ ঠোঁট জোড়া ফারাবির চোখের পাতা তে ছোঁয়ালে।
ফারাবি দু হাতে খামচে ধরলো ফারহানের শার্ট।
এই মানুষ টার ভালোবাসায় কি এমন আছে ?
যার কারনে ওহ হারিয়ে যায় বারংবার ?

ফারাবির ভীষন লজ্জা লাগছে। ফারাবি মাথা টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো।
ফারহান রহস্য হেসে ফারাবির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
_ আমি যে ছুইয়েছি খারাপ লাগছে না ?

ফারাবি লজ্জায় পরে গেল। ফারহান তপ্ত হেসে বলল
_ তিন টে বছর এমনি এমনিই কাটিয়ে দিলাম। ইসস কি ভুল টাই না করেছি।

ফারাবি লজ্জা হাসলো। ফারহান ঝটকা মেরে ফারাবি কে কাছে টেনে নিলো।
ফারাবির হাত দুটো ফারহানের বুকে নিবদ্ধ। ফারহান আলতো হেসে ফারাবির কানের নিচে চুমু খেলো।
ফারাবি শিউরে উঠলো , ফারহান রহস্য হেসে বলল
_ পাগল হচ্ছিস ? মনে হচ্ছে কিছু ? অনুভূতি গুলো কি কিছু বলতে চাচ্ছে ?

ততক্ষণে ফারাবি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। ফারহান আবার একি প্রশ্ন করলো। ফারাবি মাথা ঝাঁকালো, ফারহান ঝরা হাসলো।
মেয়েটাকে আরো লজ্জা দিতে ধীর কন্ঠে বলল
_ ভালোবাসিস আমায় ?

ফারাবি চমকে উঠলো , চোখ গুলো যেন কপালে চরে গেছে ।
ফারহান মোহনীয় হেসে বলল
_ ইন্টারেস্ট সহ সব ফেরত নিবো তৈরি হ জান।

ফারাবির ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে। একটু আগে এমন এক বাজে পরিস্থিতি ঘটে গেল। আর ফারহান এখন কি সব বলে যাচ্ছে।

*

রিমি মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার ই সামনে দাড়িয়ে আছে ফারহান। ফারাবির মুখ টা একটুখানি হয়ে আছে। ফারাবির চোখে মুখে চিন্তার গভীর ছাঁপ।
ফারহান নিদারুণ শান্ত কিন্তু কথায় স্পষ্ট রাগ ফুটিয়ে বলল
_ কি বলেছিলাম তোকে ?

রিমি মাথা নিচু করেই রইল। ফারহান চোয়াল শক্ত করে বলল
_ মুখ দিয়ে কথা ফুটছে না কেন ?

_ রিমির

_ চুপপ তোকে কিছু জিঙেস করেছি ? না হতো , না হলে একদম চুপ থাক।

ফারাবি চুপসে গেল। এখানে রিমির কি দোষ হতে পারে?
ফারহানের চোখ থেকে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে। রিমির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
_ বলেছিলাম ওর পাশে থাকতে , খেয়াল রাখতে ? তুই কি করেছিস ?

_ ফারহান ভাইয়া আমার

_ স্টপ , আর একটা কথা ও না।
ফারাবি আবার চুপসে গেল। ফারহান রিমি কে ধমক লাগাতেই রিমি ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো।
কান্না চেপে রেখেছিলো এতোক্ষন । এখন কান্না গুলো সব বের হয়ে আসছে। কান্না মিশ্রতি কন্ঠে বলল
_ আমি কি করতাম ? আমাকে চলে যেতে বলেছিলো তাই তো আমি

_ চুপ আর একটা কথা ও না।

রিমি চুপ হয়ে গেল। তবে কান্না থামছেই না। ফারহানের রাগ হচ্ছে, নিজের প্রতিই রাগ হচ্ছে।
মাথার চুল চেপে ধরে বলল
_ দুটো এক সাথে থাকবি। কাউকে যেন আলাদা না হতে দেখি।
নেক্সট টাইম এই ভুল করলে কি হবে ভাবতে ও পারবি না।

ফারহান আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো। দুজন কে এক পলক দেখে রুম থেকে গটগট পায়ে ঝড়ের গতি তে বের হয়ে গেল।

রিমি কাঁদতে কাঁদতে ফারাবির কাছে এসে বসলো। ফারাবির ভীষন খারাপ লাগছে, মেয়েটা ওর জন্য বকা খেলো।
ফারাবির দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রিমি বলল
_ ভাইয়া শুধু শুধু আমাকে বকে গেল। কি এমন দোষ করেছি আমি ?
কথা বলবো না আর ওর সাথে। আমি কি করবো যদি রিক ভাইয়া আমাকে চলে যেতে বলে।
আর এতে সমস্যা টাই বা কি?

ফারাবি ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো।মেয়েটা কে শুধু শুধু বকে গেল ফারহান।

*

ফারাবির বাবা ফাইল হাতে কাজ করছিলেন। তার ই পাশে বসে বসে কাঁথা সেলাই করছেন ফারাবির মা। কাঁথা সেলাই করা টা ওনার খুব পছন্দ।

_ আসবো ?

রিকের মায়ের ডাকে ধ্যান ভাঙ্গলো মিসেস রহমানের ।
মিসেস রহমান লম্বা হেসে বললেন
_ আরে ভাবি আসো।

রিকের মা ভেতরে আসলেন।ফারাবির বাবা লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বললেন
_ কিছু বলবেন ভাবি?

_ হ্যাঁ ভাইজান। জানেন ই তো রিক ফারাবির জন্য কতোটা পাগল। তো বলছিলাম কি ফারাবির তো ফাস্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হয়েছে বহু দিন।
যদি সামনের মাসেই বিয়ে টা সেরে ফেলা যায়। আসলে আবার ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসলে সমস্যা হবে ।

মিস্টার রহমান ফাইল সাইট করে রেখে একটু ভাবলেন। তারপর খানিকটা চিন্তিত মিশ্রিত কন্ঠে বললেন
_ ভাবি সে তো ঠিক আছে। তবে ফারাবির সাথে ও তো কথা বলতে হবে।
মেয়েটা তো অমত করছে না তবে মুখ ফুটে কিছু বলে ও নি।

_ হ্যাঁ তুমি ভালো কথা মনে করেছো।

রিকের মা প্রশস্ত হেসে বললেন
_ আরে ভাই জান এতো ভাবছেন কেন। আমাদের ফারাবি নিশ্চয় রাজি। আজকাল কার মেয়েরা রাজি না থাকলে সবার আগে বলে দেয়।
ফারাবির অমত থাকলে তো নিশ্চয়ই বলে দিতো।
তাছাড়া রাজি না হওয়ার তো কোনো কারন নাই আমার রিক তো কতো ভালোবাসে ওরে।
দেখতে শুনতেই বা কম কিসের ?

রিকের মায়ের শেষ কথা টা ভালো লাগলো না কারোর। রাজি না হওয়ার অনেক কারন থাকতেই পারে।
তবে ফারাবি রাজি না হলে তখনি মানা করে দিতো এটা ও ঠিক।
সব চিন্তা বাদ দিয়ে ফারাবির বাবা বললেন
_ সামনেই তো ফারাবির জন্মদিন। জন্মদিন টা শেষ হলেই না হয় বিয়ের কথা বলবো।

রিকের মা অদ্ভুত হাসলেন। ছেলেটা তার পাগল করে দিচ্ছে, অবশ্য ফারাবি পাগল করে দেওয়ার মতোই মেয়ে।
ওনার খুশির আরেক টা কারন পাড়ার অন্য মহিলাদের ছেলের বউ দের থেকে ওনার ছেলের হবু বউ বেশি রূপবতী।
সবাই কে তাক লাগিয়ে দিবে , ভাবতেই ওনার চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে গেল।

*

রিফাত কে নিয়ে বের হয়েছে ফারহান। এই রাত দশটা বাজে বের হওয়ার বিশেষ কারন টা বুঝলো না রিফাত।
একটা রেসটুরেন্ট এ গিয়ে পিজ্জা , কোল্ড ড্রিঙ্কস, কালা ভোনা আর বাটার নান কিনে নিলো।
তারপর একটা চকলেটের সপ থেকে দু বক্স চকলেট কিনে নিলো।
রিফাত সন্তর্পণে সব দেখছে। ফারহান লম্বা করে হেসে বলল
_ যাহ বলার বলে ফেল।

_ এতো সব কিসের জন্য ?

_ খাবো তাই।

_ আমরা চকলেট খাবো ?

_মোটে ও না , তবে দুটো বাচ্চা খাবে।

রিফাত ভ্রু কুঁচকে নিলো। ফারহান ঝরা হেসে বলল
_ রিমি কে অকারনেই খুব বকেছি , তার জন্য ই চকলেট দিয়ে মান ভাঙানোর চেষ্টা করবো।
আর এক সাথে খাবার খেতে খেতে আড্ডা দিবো।

রিফাত বাঁকা হেসে বলল
_ তোর কাজের একটা হলো অকারনেই বকা দেওয়া।

_ ভুল। আমি অহেতুক বকি না , তবে রাগ টা বেশি করি এই যা। তাছাড়া আমার মাঝে আর কোনো ডিফেক্ট নেই।

রিফাত আফসোসের সুরে বলল
_ ডিফেক্ট থাকলে তো বেশ ভালোই হতো। কলেজের সুন্দরী মেয়ে গুলো আমাদের দিকেও ফিরে তাকাতো। আর এই মনিকা প্যারার সাথে প্রেম ও হতো না।

বলতে না বলতেই রিফাতের ফোন বেজে উঠলো। রিফাত ফোনের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো।
ফারহান ভ্রু নাচিয়ে বলল
_ আহ গ্যায়া তেরা দুলহান।

রিফাত তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ আজ আমি শেষ।

ফারহান লম্বা করে হাসলো। আর রিফাত মুখ টা ছোট করে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো।

** ঝটকা টা বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে ।😪
ফারহান কে কি করবো তাই ভাবছি।😐

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here