শখের_সাদা_শাড়ি ৯.

0
129

#শখের_সাদা_শাড়ি
৯.
মেঘনার প্রেগন্যান্সির সাত মাস পেরোলে। মাঝে চলে গেছে তিন টে মাস। উর্মি ভেবে পায় না সময় এতো দ্রুত কেন যায়! নিজ কর্ম কে আরও জোড়ালো করতে হবে না হলে সময় চলে যাবে অথচ কাজের কাজ কিছুই হবে না। চার দিক সামলাতে প্রথম প্রথম বেগ পেতে হলে ও এখন স্বাভাবিক লাগে। সৌমেন কে দেখে বিশেষ শক্তি পায় উর্মি। মানুষ টার কাজের গতি দেখলে হিংসে ও হয়। কোম্পানির কাজে বান্দরবান যাবে সকলে। এক সপ্তাহের কাজ। আগে শেষ হলে ঘুরাঘুরিও হবে। ব্যাগ প্যাক করছে মেঘনা। উর্মি উদাস ভঙ্গিতে চেয়ে আছে। বড্ড চিন্তা হয় মেঘনার জন্য। তবে মেঘনা শক্তিশালী। ইদানিং তাকে দেখলে মনেই হয় না রোজ রাতে স্বামীর জন্য লুকিয়ে চোখের জল ফেলে। হাসে উর্মি। বোন কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
” বাচ্চামো শুরু হয়ে গেল? ”

” মাত্র ই তো শুরু করলাম রে আপা। এই যে পেটের ভেতর পুচকে পাখি টা ঘুমিয়ে আছে এটা বের হোক তখন দেখবি দুজন মিলে কি বাদরামো করি। অন্তু কে ও সাথে নিবো। ”

” হয়েছে, এবার সরেন ম্যাডাম। কাপড় গুলো গুছিয়ে দেই। ”

” তুই সর আমি করে নিচ্ছি। ”

মেঘনা সরেই যাচ্ছিলো ওমনি করে ফোন টা বেজে উঠলো। সমীর কল করেছে এই অসময়ে। মেঘনা তীঘ্ন দৃষ্টি তে দেখে। একটু পর ই হেসে দেয়।
” লজ্জা পাওয়ার দরকার নেই,কথা বল। ”

” না রে আপা। তেমন কিছু না। ”

” আমি কি বলেছি তেমন কিছু? ”

ধরা পরে যায় উর্মি। নিজেকে বাঁচানোর বৃথা চেষ্টা করে না আর। মেঘনা হেসে বলে–
” ফিরে আয় তারপর সব টা শুনবো কিন্তু। ”

লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসে উর্মি। মনে মনে বলে কি বলবো তোকে, গাঁধা টা তিন মাসে ও পারলো না ভালোবাসি বলতে। কল কেঁটে যাওয়া তে কল ব্যাক করলো উর্মি।
” উর্মি কখন আসবে? ”

” এই তো হয়েই গেছে। ”

” সেই কখন থেকে আমি অপেক্ষা করছি। এবার কিন্তু সত্যিই লেট হচ্ছে। ”

” আসছি বাবা। ”

” হুম আসো। আর সাবধানে এসো। ”

” আচ্ছা রাখছি এখন। ”

কল কেঁটে মুঠোফোন বুকে চেপে রাখে উর্মি। এই তিন মাসে বহু কাজ এক সাথে করা হয়েছে। সেই জন্য বন্ধুত্ব গড়েছে। তবে ভালোবাসা টা অব্যক্ত। উর্মি মনে মনে স্থির করে এই ছেলে ভালোবাসার কথা জানান না দিলে ও উর্মি জানিয়ে দিবে স্বীয় মনের অনুভূতির কথা।

উঁচু পেট টায় হাত বুলায় উর্মি। মেঘনার চোখ হাসে। এই ছোট বোন টা আছে বলেই কি না আজ বেঁচে আছে। না হলেই সেই কবেই শিয়াল কুকুরে টেনে হিচড়ে নিতো। অন্তু পেছন পেছন আসে। উর্মি একটু ঝুঁকে ছেলেটার কপালে চুমু আঁকে। অন্তু ও একি কাজ করে।
” আমার সোনা বাবা। বড় ফুপি কে দেখে রাখবি কেমন? ”

” ঠিক আছে ফুপি। তুমি কিন্তু সাবধানে যাবে। ”

” যাবো বাবা। আর তোর জন্য গিফট ও নিয়ে আসবো এবার। ”

” ওকে আমি এখন যাই। ”

অন্তু চলে যায়। তুলি আঁচল মুরিয়ে বের হয়। সচরাচর শাড়ি পরে না সে। তাই একটু অবাক হয় উর্মি।
” কোথাও যাবে ছোট ভাবি? ”

” হুম ঘুরতে যাচ্ছি। ”

” ছোট ভাইয়া ও যাচ্ছে? ”

” অবশ্যই। সে না গেলে আমি একা যাবো নাকি? ”

” না এমনিই বললাম। ”

ইদানিং তুলির ব্যবহার ভালো ঠেকছে না। উর্মির সাথে ও কেমন যেন ব্যবহার করে। উর্মি চুপচাপ বের হয়। বড় ভাবি, তুলির যাওয়ার পর থেকেই বকবক শুরু করে দিয়েছেন। দুজনে একে অপরের পুরনো শত্রু। কেউ কাউ কে এক চুল ও ছাড়বে না। অথচ দিন শেষে এরা একি সংসারে। তুলি যে সংসার ভাগের চিন্তায় বুদ হয়ে গেছে তা আরও দু মাস আগেই বুঝেছে উর্মি। না হলে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কেউ ঝগড়া করে?

বুকের মাঝ খানে সানগ্লাস রেখে বেশ এক ভাব ধরেছে সমীর। উর্মি পাশে এসে বসলো। সমীর লুকিং গ্লাস টা ঘুরিয়ে দিয়ে বলে–
” বড্ড লেট করে ফেললে। ”

” সব সামাল দিতে হয়। ”

” তা ও ঠিক। চলো তাহলে যাত্রা শুরু করি। ”

” সৌমেন স্যার ফোন করেছিল? ”

” হুম। তুমি আরেকবার কথা বলে দেখো। ”

” আচ্ছা। ”

সৌমেন কে কল করে কথা বলে উর্মি। আর তারপর কল করে মেঘনা কে। সে জানিয়ে দেয় গাড়ি তে উঠে গেছে। নিশ্চিত হয় মেঘনা। বোন টা তার খুব বড় নয়। সবে তেইশ এ পা রেখেছে। এর ই মাঝে অনেক পরিশ্রম করলো। শেষ টা যেনো ভালো হয় সেটাই চায় মেঘনা।

গাড়ি চলছে। উর্মি বললো গ্লাস খুলে দিতে। সমীর তাই করলো। কোমর সমান চুল গুলো খুলে দিলো উর্মি। ভালো লাগে এভাবে। সমীর অবশ্য হাসলো।সে ভেবেছে কোনো ভাবে উর্মি জেনে গেছে মেয়েটির খোলা চুলে সমীরের এক রাশ দূর্বলতা। গাড়ির স্ট্রেয়ারিং এ হাত রেখে আড়চোখে তাকায়। তৎক্ষণাৎ উর্মি ঘুরে যায় যার ফলে চোখাচোখি হয়। দুজনেই বেশ লজ্জা পায়। সমীর এর দম বন্ধ হয়ে আসে। পুরুষ মানুষ হয়ে ও কেমন যেন লজ্জা পাচ্ছে! প্রেমের অনুভূতি এমন হয় বুঝি? এর আগে ও দুটো প্রেম করেছে সমীর। একটা কলেজ লাইফ এ আর একটা ভারসিটির শেষ বর্ষে এসে। তখন তো এমন লাগে নি। তাহলে সেগুলো কি ছিলো? শুধুই কি সময় কাটানোর চেষ্টা। ঘেমে উঠলো সমীর। অসুস্থ লাগছে। উর্মি তাকায় নি এ দিকে। ঝটপট গাড়ি থামায়। উর্মি বলল
” কি হলো? ”

” একটু চোখ মুখে পানি দিয়ে আসি। ঘুমে চোখ টা জড়িয়ে আসছে। ”

” আচ্ছা। ”

বোতল ভর্তি পানি। সেটা মুহুর্তেই খালি করে ফেললো। এবার সব টা ঠিক লাগছে। হালকা গলা ভিজিয়ে নেয়। মেয়েটির নজরে ধরা পরা যাবে না। এতে করে আড়ালে হাসতে পারে উর্মি। নিজের পছন্দের মানুষের কাছে সব পুরুষ ই বীর থাকতে চায়। কখনোই এদের কে নিজের দূর্বলতা দেখানো যাবে না।

সকাল সাত টায় রওনা হয়েছিল। এখন বাজে দুপুর দেড় টা। বেলা হয়েছে। পেটে ক্ষিদে ও প্রুচর। জ্যাম ছিলো অনেক টা পথ। সকালের নাস্তা সব পানি হয়ে গেছে। পাশ ফিরে দেখলো উর্মি ঘুম। ডাকলো না সমীর। বান্দরবান এখনো নব্বই কিলো। ধরা যায় বিকেলের আগেই পৌছে যাবে। নিজে গিয়ে লাঞ্চ করে এলো।আর উর্মির জন্য প্যাকেটে খাবার নিয়ে এলো। যদি ও উর্মির ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন তবু ও ডাকে না সমীর। মেয়েটির ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছেই করলো না। একটু নিচু হয় সমীর।গোলাপি ঠোঁটে নিজের উষ্ণতা লেপনের ইচ্ছে জাগে। তবে এ যে অন্যায়। নিজের ইচ্ছে কে প্রতিহত করে সমীর। মুখ টা বাংলার পাঁচের ন্যায় বেকিয়ে ড্রাইভ করে আবার।
আধ ঘন্টার মাঝেই ঘুম ভেঙে যায় উর্মির। টুলুটুলু চোখ ডলে নিয়ে বলে–
” স্যরি আসলে কাল রাতে একদম ঘুম হয় নি। ”

” ইটস ওকে। তুমি কি ফ্রেশ হবে? ”

” হুম। লাঞ্চ ও করা দরকার। ”

” সামনে তেমন কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে নেই। আমি খাবার এনে রেখেছি। দেখি ফ্রেশ হওয়ার জন্য আশে পাশে কোথায় দাঁড় করানো যায়। ”

একটা ছোট ওয়েটিং জোনে গাড়ি থামায় সমীর। উর্মি ফ্রেশ হয়ে এলে খাবার দেয়। খাবার খায় উর্মি। এই ফাঁকে বাড়ির লোক দের সাথে কথা বলে সমীর। মা আর এক ভাই ছাড়া এই দুনিয়ায় কেউ নেই। নেই বললে অবশ্য ভুল ই হবে। আছেন বাবা, যিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বছর দশেক আগে। সেই থেকেই মা ভাই নিয়ে ঘর ছেড়েছে সমীর। মায়ের সাথে কথা চলা কালীন ফোনে ভাইব্রেশন হয়। সৌমেন ভাই কল করেছে। রাখছি বলে সৌমেন এর কল রিসিভ করলো।
” উর্মি কে সাথে এনেছো? ”

” হ্যাঁ ভাই। ”

” ভালো করেছো। এমনি তে ও অনেক ইমপ্লয়ি বাসে অসুস্থ হয়ে পরেছেন। ”

” যা গরম,অসুস্থ হওয়া স্বাভাবিক। ”

” আচ্ছা তোমরা লাঞ্চ করে নিও। আবার অসুস্থ হয়ে যেও না। তোমার ভরসা তেই এই আয়োজন। ”

” অসুস্থ হবো না ভাই। রাখছি তবে। ”

” হু। রিসোর্ট এ এসে মনে করে কল করিও। ”

” আচ্ছা। ”

ফোন রেখে গাড়ির কাছে আসে সমীর। বলে–
” খাওয়া শেষ? ”

” হুম। তুমি খেলে না? ”

” আমি আগেই খেয়েছি। তুমি ঘুমে তাই ডাকি নি। ”

” ও। আর কতোদূর? ”

” নব্বই কিলোমিটার এর মতো। ”

” এতোদূর!”

” তা তো একটু হবেই। ”

হতাশ ভঙ্গিতে গা এলিয়ে বসে উর্মি। সমীর পানির বোতল কিনে নিয়ে গাড়ি তে বসলো। প্রায় তিন ঘন্টা পথ পাড়ি দিয়ে রিসোর্ট এর কাছে প‍ৌছায়। পাহাড়ি পথে খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হয়েছে। উর্মি যেন কাহিল হয়ে পরেছে। শরীর টাকে টেনে নিয়ে স্বীয় কক্ষে উপস্থিত হয়। ঘুমে টুলুটুলু দেহ। বেডে শুয়ে আচানাক উঠে বসে। আপা কে একটা কল করতে হবে। পুরো রাস্তা তে এক বার ও খোঁজ নেওয়া হয় নি।

চলবে….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

#পর্ব_১০
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=154440240450212&id=100076527090739

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here