#শখের_সাদা_শাড়ি
১০.
প্রায় চার ঘন্টা মরার মতো ঘুমিয়ে ঘুম ভাঙলো উর্মির। এই দীর্ঘ সময়ে কেউ তাকে জ্বালাতন করে নি। ফ্রেস হয়ে নামতেই চোখ পরে সমীরের ওপর। ধূসর রঙের গেঞ্জি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক। হাতে ড্রয়িং পেপার। পেন্সিলের কোন দিয়ে একটু একটু করে আঁকি বুকি করে। পেছনে থেকে ভাউ করে উঠে উর্মি। ভয় পায় না ছেলেটা।
” কি হলো? ভয় পেলে না কেন? ”
” পুরুষ মানুষ ভয় পায় না এসবে। ”
” আহারে, তাহলে নারী রা বুঝি ভীতু? ”
” সেটা ও না। ”
” তাহলে? ”
” বাদ দাও। এখন দেখো ডিজাইন টা। ”
আঁচলের এক অংশ দেখেই উর্মি হা হয়ে যায়। চোখ দুটো উজ্জ্বল।
” খুব সুন্দর হয়েছে। ”
” সত্যি বলছো? ”
” হ্যাঁ। তুমি একটা সুযোগ পেলে খুব নাম করবে। ধরো তোমার এই ডিজাইন এক দিন ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে ও চলে যেতে পারে। আর ন্যাশনালে তো যাবেই। ”
শুকনো হাসলো সমীর। মনে মনে বললো ন্যাশনালে তো গিয়েছিলোই উর্মি। তবে সেসব এখন ভাবতে ও চাই না। বাইরের পরিবেশ টা উপভোগ করার মতো। টুকটাক কথা বলে ভেতরে এলো। রিসোর্ট এর একটা সাইট বুক করেছে সৌমেন। ওদের দুজন কে দেখে মাইশা এগিয়ে আসে।
” সমীর ভাইয়া আপনি আমার সাথে আসেন। আমি ডিজাইন গুলো সেট করে দিচ্ছি। ”
” চলেন। সৌমেন ভাই আসবে না? ”
” স্যার একটু বিজি। আর উর্মি আপনি দেখেন সবাই এসেছে কি না। ”
” ঠিক আছে ম্যাম। ”
উর্মি চলে যায়। মাইশার সাথে আলোচনায় বসে সমীর। মাঝ পথে আসে সৌমেন।
” সব রেডি মাইশা? ”
” জী স্যার। সমীর ভাইয়ার কাজ গুলো এবার আরও দারুণ হয়েছে। ”
” হতে তো হবেই। আফটার অল এই প্রজেক্ট এর মূল মাথা সে। ”
” কি যে বলো ভাই। ”
” সত্যিই বলছি সমীর। তোমার কাজের প্রশংসা না করলে পাপ হবে। ”
একটু হাসে সমীর। পাশেই ছিল উর্মি। বুক ভরে শান্তির শ্বাস নেয়। সৌমেন আর মাইশা কি যেন কথা বলে আর তার পর পর ই ডাকা হয় উর্মি কে। উর্মি সাধারণ ভাবেই বলে–
” জী স্যার। ”
” তোমাকে অভিনন্দন উর্মি। ”
” জী? ”
” তোমার জব কনফার্ম। এর সাথে বাইশ থেকে বেতন হলো ত্রিশ। ”
খুশি তে চোখে জল চলে আসে উর্মির। এতো টা শান্তি লাগে যে বলার বাহিরে। সমীর মেয়েটির কাছে এসে দাঁড়ায়। হালকা করে মাথা স্পর্শ করে বলে–
” ব্রেফ গার্ল। মাস্টার্স কমপ্লিট করো দেখবে অনেক ভালো পজিশন পাবে। ”
” আমি কিছু বলতে পারছি না সমীর। তুমি জানো এই জব টা কতো টা দরকার ছিল আমার। আমি– ”
” কাঁদে না বোকা। ”
” এক সেকেন্ড আপা কে জানিয়ে আসি। ”
নিরবে সম্মতি জানায় সমীর। উর্মি চটপট কল করে মেঘনা কে। ওপাশ থেকে মেঘনা কেঁদে নাক চোখ লাল করে ফেলে। ধমকে উঠে উর্মি।
” পাগল হলি? বাবু অসুস্থ হয়ে যাবে না। বোকা মেয়ে তোকে সুস্থ থাকতে হবে। যা এখন রেস্ট নিবি। ”
” বোন! ”
” বল। ”
” আই লাভ ইউ। ”
ফোন হাতে কেঁপে উঠে উর্মি। চোখ দুটো জলে টুইটুম্বর। রাখছি বলে কল কাঁটে। ঝমঝমে কেঁদে উঠে। সমীর দ্রুত এগিয়ে আসে। উর্মির মাথা টা আলগোছে বুকে টেনে নিয়ে বলে ” পাগলি মেয়ে। ”
চোখের পলকে কেটে গেল তিন টে দিন। কাজের চার ভাগের তিন ভাগ ই কমপ্লিট। সবাই পরিশ্রম করাতেই সম্ভব হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আসা কিছু গেস্ট ইতোমধ্যেই চলে গেছেন। কাপড়ের ব্যবসা টা খুব ই জাকজমক এখন। একজন ব্যবসায়ী বিদেশে বাঙালি কস্টিউম সেল দিয়ে, বেশ সফল। সে যেন সকলের জন্য সুসংবাদ। সৌমেন এর কোম্পানি এর অংশ হতে পেরে আপ্লুত প্রায়। কাজের মাঝে সতেজতার ও প্রয়োজন। সৌমেন নিজ থেকেই জানালো থানচি ঘোরার কথা। সমীর একটু আপত্তি করতে চেয়েছিল তবে উর্মির খুশি দেখে দমে যায়। মেয়েটার মনে যেন স্বস্তি লেপন হয়েছে। সমীর তাকিয়ে থাকে। মাঝে এক বার ও পলক ফেলে না। যখন বুঝে উর্মি তাকাবে তখনি চোখ সরিয়ে নেয়। তবে উর্মি দেখেছে বিষয় টা। লাল হয়ে উঠে গাল। সমীর এর থেকে দুরত্ব রেখে অন্য কলিগ দের সাথে আলাপে মগ্ন হয়। সমীর একবার শুকনো ঢোক গিলে। ছেলেটা ইশারা করে ডাকে উর্মি কে। উর্মি স্বাভাবিক ভাবেই আসে।
” কি হলো? ”
” থানচি না গেলে হয় না? ”
” কেন? ”
” একটু দরকার ছিলো। ”
” সৌমেন স্যার–”
” তুমি বলবে রেস্ট নিতে চাও। আর আমি কাজের বাহনা দিবো। ”
” ওকে। ”
এক গাল হাসে উর্মি। সমীর মৃদু স্বরে কি যেন আওড়ায়। এতে করে প্রশ্নবিদ্ধ হয় উর্মির মুখ। কোনো মতে সামাল দেয় সেসব। সমীর এর কথা অনুযায়ী রেস্ট এর বাহানা দিয়ে থেকে যায় উর্মি। সবাই বেরিয়ে পরে। সমীর কে কোথাও না পেয়ে কল করে। সমীর জানায় আধ ঘন্টার মাঝেই চলে আসবে। উত্তেজনায় পাগল হয়ে যাচ্ছে উর্মি। রিসোর্ট এর এপাশ টা ঘুরে দেখে একবার। এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে যেন আরও অস্থির হয়ে পরলো। সব কিছু এতো সুন্দর লাগে কেন?
সমীরের লেট হচ্ছে বিধায় রিসোর্ট এর পেছনের দিকে আসে। বাতাসের সাথে ভেসে আসে প্রকৃতির সুঘ্রাণ। ভিজে মাটির গন্ধে উর্মির যেন ঘোর লেগে আসে। হঠাৎ ই পা কেঁপে উঠে। চোখের সামনে কল্লোল আর মাইশা কে অপ্রত্যাশিত দৃশ্য তে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। পিছিয়ে যায় উর্মি। কানের লতি রক্তিম। মুঠো ফোন বেজে উঠে। ধুরমুরিয়ে চলে আসে। মাইশা ম্যাম যে যান নি এটা জানতোই না উর্মি। রাগ হয় নিজের প্রতি। ইস এমন এক দৃশ্য চোখে পরতে হলো!
সমীরের হাতে ফুল। লাল টকটকে এক শাড়ি ও দেখা যায়। উর্মি অবাক স্বরে বলে–
” শাড়ি? ”
” কিনে নিয়ে এলাম, আসার পথে একটা দোকানে দেখেছিলাম। তুমি কেমন করে যেন তাকিয়ে আছো। ”
লজ্জা পায় উর্মি। সুন্দর শাড়ি টা। শখ হয়েছিল কিনে নিয়ে যাওয়ার। তবে কেন যেন হয়ে উঠে নি। তবে সেটা যে সমীর নিয়ে আসবে তা কল্পনায় ও আসে নি। সমীর শাড়ি টা তুলে দেয় সাথে সাদা এক থোকা ফুল। উর্মির ভালো লাগলো। সমীর কিছু টা কাছে এসে ফু দিলো।
” কি? ”
” অগোছালো চুল! ”
” তো? ”
বুকের বা পাশে হাত রেখে নাক কুচকায় সমীর। উর্মি মুখ টিপে হাসে। কিছু বলতে যাচ্ছিলো তবে গাড়ির হর্ণে থেমে যায়। সমীরের মুখ টা কালচে মেঘের রূপ নেয়। সৌমেন চোখ মুখ শক্ত করে ফিরে এসেছে।
” কি হলো ভাই ফিরে এলে কেন? ”
” ভালো লাগছে না সমীর। তোমাদের মতো আমার ও বোধহয় রেস্ট প্রয়োজন।”
” বাকি রা? ”
” ঘুরতে বলেছি। ”
ক্লান্ত মুখে ভেতরে যায় সৌমেন। উর্মি ছোট চোখ করে তাকিয়ে থাকে। বিষয় টা ভালো লাগে না একদম। পর পর রিসোর্ট এর পেছন থেকে ছুটে আসে মাইশা আর কল্লোল। সমীর ভ্রু কুঞ্চিত করে বলে–
” মাইশা আপনি থানচি যান নি? ”
” একটু পরে যাওয়ার কথা ছিল আমার। স্যার চলে এসেছেন? ”
” হুম। ”
মাইশা লম্বা লম্বা পা ফেলে ভেতরে যায়। কল্লোল ও চিন্তিত। মাইশার পিছু ছুটে। সমীর হতবাক হয়ে যায়। একটু পরে না বোঝার সুরে বলে–
” কি হলো এটা! মাইশার পেছনে এমন করে চিপকে আছে কেন কল্লোল। ”
উর্মি শুকনো গলা টা ভিজিয়ে নেয়। সেই দৃশ্য মনে হতেই শরীর কাপুনি দেয়। অসুস্থ বোধ করে। সমীর তৎক্ষণাৎ ভেতরে নিয়ে আসে। উর্মির হাত পা ঠান্ডা হবার জোগাড়। লাইভে এমন অপ্রত্যাশিত দৃশ্য আশা করে নি।
বিকেল টা এমনি এমনিই পেরিয়ে যায়। মা কে ফোন করে খোঁজ খবর নিলো সমীর। পুরো দিন টাই এক প্রকার মাটি। প্ল্যান টা ভেস্তে গেল। কি হতো সৌমেন ভাই ফিরে না এলে। হতাশ ভঙ্গিতে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। কাজ নেই। তাই মন টা ও ঠিক লাগছে না। ফেসবুকিং করার সময় দেখে সৌমেন এর একটা হার্ট ব্রোকেন পোস্ট। বিষয় টা কেমন লাগে। যদি ও বা সৌমেন আর সমীর অনেক টা ক্লাইন্ট এর মতো তবু ও দুজনার সম্পর্ক অন্যরকম। সে ম্যাসেজ করে ” কি হয়েছে ভাই? ”
রিপলের অপেক্ষা না করে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকায়। পাশের কটেজেই উর্মি। চুল গুলো খুলে রেখে এক মনে চোখ বুঝে আছে। সুন্দর লাগে দেখতে। মৃদু হাসে সমীর। প্রিয়তমার ওমন রূপে হার্ট ব্রেক না ঘটে।
নোটিফিকেশন এর আওয়াজ। সৌমেন রিপলে দিয়েছে–
” কিছু সময় বড্ড অগোছালো মনে হয় সমীর। শখের জিনিস সত্যিই সুখের নয়।”
কেন? কি হয়েছে ভাই। এই কথা টা লিখে ও সেন্ড করে না সমীর। পাছে যদি সৌমেনের পার্সোনাল বিষয়ে নাক গলানো হয়ে যায়। একটা স্যাড ইমুজি দিয়ে ফোন রেখে দেয়। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে উর্মি নেই। উদাস হয় আরও একবার। ঝটপট বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। উর্মি ও বারান্দায় এসেছে। সমীর কে দেখে অল্প হাসে। দুজনেই নিশ্চুপ থাকে।
” তখন কিছু বলতে চেয়েছিলে? ”
” কখন? ”
” ঐ যে শাড়ি দিলে– ‘
আলতো হাসে সমীর। এখন সঠিক সময় না। তার থেকে ভালো ঢাকায় ফিরে নিজ অনুভূতি জানিয়ে দিবে। প্রসঙ্গ বদল করে বলে–
” এখন কেমন লাগছে? ”
” ভালো আছি এখন। সন্ধ্যা হয়ে এলো। পরিবেশ টা সুন্দর লাগে। ”
” ঘুরতে চাও আশ পাশ টা? ”
চলবে…..
কলমে ~ফাতেমা তুজ
পর্ব ১১
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=154938350400401&id=100076527090739