#শখের_সাদা_শাড়ি
১১.
বান্দরবান থেকে ফিরে আসার পর এক টা সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। উর্মি চোখ বন্ধ করলেই কিছু স্মৃতি ভাসে। সমীরের থেকে পাওয়া লাল শাড়ি, সেই সন্ধ্যা, সেই লাজুক হাসি। সব কিছু মিলিয়ে যে সুখ অনুভব হয় তা আগে কখনোই হয় নি। মৃদু হাসে উর্মি। বিছানা গুছিয়ে মেঘনার নিকটবর্তী হয়। উঁচু পেট টা তে চুম্বন করে। মেঘনা শুষ্ক হাসে। সত্যি বলতে উর্মির দেওয়া এই সকাল বিকাল নিয়ম করে চুমু টা অন্য কারো দেওয়ার কথা ছিলো। আজ ও অপেক্ষায় আছে মেঘনা। যদি একবার ফোন করে নয়ন। তবে সে আশা ফুরিয়ে যায় তবু কল আসে না। হয়তো আর আসবে ও না। তবে মেঘনা অপেক্ষায় থাকবে। হয়তো চিরদিন, চিরকাল। তবে অপেক্ষা করবেই। উর্মি ব্যস্ততা দেখায়–
” চট জলদি খেতে দে আপা। ছোট ভাবি জীবনে ও দিবে না। ”
” তুই বোস আমি ভাত নিয়ে আসি। ”
” সাবধানে আপা। ”
চেয়ার টেনে বসে উর্মি। কোথা থেকে উদয় হয় অন্তু। ছেলেটার জন্য অনেক কিছু এনেছে উর্মি। আর ও অনেক কিছু নিয়ে আসার ইচ্ছে ছিলো। তবে সৌমেন স্যার এর যে কি হলো। সাত দিনের প্ল্যান পাঁচ দিনেই ইস্তেফা। এতে অবশ্য ভালো টাই হয়েছে। উর্মি যাওয়া তে মেঘনার যত্ন যে হয় না সে খুব ভালোই জানে। বড় ভাবি কে ফোন করলেই বড় ভাবি বলেছে খুব ক্লান্ত হয়ে পরেছি রে। মেঘনার যত্ন তো হয় ঠিক ঠাক। জিজ্ঞাসা কর বিশ্বাস না হলে। ভুলে ও মেঘনা কে প্রশ্ন করে নি উর্মি। সে জানে মুখের উপর মিথ্যে বলবে ওকে। হতাশার পাঠ চুকিয়ে খাবারে মনোযোগ দিলো। অন্তু কে খুশি দেখাচ্ছে!
” কি হয়েছে রে। এতো খুশি লাগছে কেন। মনে হচ্ছে নেচে কুদে এসেছিস। ”
” ছোট ফুপি। নাচতে তো হবেই। ”
” কোন খুশি তে রে? আমার তো বিয়ে লাগে নি এখনো। তাহলে বিষয় কি। ”
” উফ ফুপি। ”
” আচ্ছা বাবা, বল কেন এতো খুশি। ”
উর্মি এবার সিরিয়াস। অন্তুর গাল দুটো লাল। লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আবার সেই ভুল করে বসলো না তো! চিন্তিত হয়ে পরে উর্মি। অন্তু কতো গুলো পেপার বের করে আনে।
” এক্সাম কপি?”
” হুম। ”
উর্মি চেইক করতে থাকে। অন্তু গর্বের সাথে বলে–
” নব্বই শতাংশ নাম্বার পেয়েছি। ”
” আমি খুব খুশি রে অন্তু। বল কি চাই তোর। ”
” কিছু চাই না ফুপি। ”
” কেন রে? ”
ঠিক তখনি ঘাম মুছে ছুটে আসে জোৎস্না। চোখে মুখে উৎকন্ঠা। অন্তুর কান টা মুলে দেয়।
” ফুপি কিছু দিতে চাইলেই না না করিস। বেয়াদব হয়েছে একটা। আচ্ছা শোন রে উর্মি। ”
” বলো ভাবি। ”
” ওর কথায় কান দিবি না। তুই যখন গিফ্ট দিতে চাস তাহলে একটা ফোন কিনে দে ওকে। ”
” একদম না ভাবি। ”
উর্মির তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ। বড় ভাবি ঠোঁট বাকায়। উর্মি বলল–
” এই বাচ্চা বয়সে ফোনের থেকে দূরে থাকাই ভালো। আমি বরং ওকে ভালো দেখে একটা স্যুট কিনে দিবো। গত বছর খুব শখ করেছিল ছেলেটা। ”
ইয়ে বলে লাফিয়ে উঠে অন্তু। গতবার ঈদে খুব বড় শপিং মলে গিয়েছিল। যদি ও দাম শুনে খালি হাতেই ফিরে আসতে হয়েছিল। তবে একটা স্যুট দেখে খুব চোখে লেগে যায় অন্তুর। দাম ছয় হাজার টাকা। এতে করে অমর রিজেক্ট করে দেয়। কারণ বাজেট ছিলো তিন হাজার। সেই সময় টা তে অমরের কাজ কর্ম আরও খারাপ যাচ্ছিলো। উর্মি সেদিন ভেবেই নিয়েছিল টাকা হলে অন্তু কে গিফ্ট করবে। মাঝে এতো ঝামেলা এলো গেল যে খেয়াল ই ছিল না। অন্তুর গালে চুমু খায় উর্মি। কেন যেন ভাতিজা টা কে একটু বেশিই ভালোবাসে। হয়তো বা তার প্রতি অন্তুর আলাদা মায়া থেকেই মায়া জন্মেছে।
ঘেমে নেয়ে অস্থির সৌমেন। পর পর গ্লাস শেষ করলো। মাইশা দ্রুত ছুটে এলো। ইনহেলার এগিয়ে দিলো। সেটা নিয়ে প্রাণ এলো সৌমেন এর। মাইশার দিকে তাকিয়ে কাঠ গলায় বলল সৌমেন–
” কাজে মনোযোগ নেই কেন মাইশা! দিন কে দিন ভুল করেই চলেছো। ”
” স্যরি স্যার। আসলে — ”
” নো মোর এক্সকিউজ। ”
” স্যরি। ”
” গো। ”
মাথা নুইয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলো ঠিক তখনি সৌমেন বলল–
” উর্মি কে পাঠিয়ে দিও। ”
” কেন? ”
” আমায় প্রশ্ন করছো? ”
” স্যরি। ”
পা চালিয়ে বের হয়ে যায় মাইশা। আজ বার বার সৌমেন স্যারের নিকট বকা খেতে হলো তাকে। সব দোষ কল্লোল এর। এই ছেলের জন্য কাজে গড়মিল করে ফেলেছে। উর্মির কেবিনে গেল মাইশা। উর্মি কম্পিউটারে সিডিউল তৈরি করছে। কাজ টা কে যতো টা সহজ মনে হয় সত্যি বলতে এই কাজ ততো টা সহজ নয়। খুব ই কঠিন।
” উর্মি শুনেন। ”
” ইয়েস ম্যাম। ”
” স্যার আপনাকে ডাকছে। ”
” এখন? ”
” হুম। ”
” কিন্তু আমি যে সিডিউল তৈরি করছিলাম। ”
” ইটস ওকে আমি করে দেই। আপনি গিয়ে দেখা করে আসেন। ”
” থ্যাংকস ম্যাম। ”
মাইশা মুচকি হাসে। একটু পরেই কল্লোল আসে। মুখ টা ফ্যাকাশে। মাইশা চোখ পাকায়। কল্লোল উদাসীন ভাবে তাকিয়ে থাকে।
এক সপ্তাহ পর আজ আবার সমীর এর সাথে দেখা। বিষয় টা যদি ও অফিসিয়ালি, প্রজেক্ট নিয়েই তবু ও মনে আলাদা এক শীতল সমীরণ যায়। সমীরের হেংলা পাতলা দেহ টা খুব করে টানছে উর্মি কে। যতো দিন যাচ্ছে ততোই পাগল হয়ে যাচ্ছে দুজনা। তবে মাঝে ভালোবাসি কথা টা বলা হচ্ছে না কেন যেন। উর্মি ছটফট করে।
” উর্মি তুমি অসুস্থ? ”
” নো স্যার। আম টোটালি ফাইন। ”
” ওয়েল এদিকে আসো। আমার ল্যাপটপ নিয়ে বসো আমি একটু আসি। ”
” ঠিক আছে স্যার। ”
সৌমেন চলে যায়। উর্মি মাত্র ই কিবোর্ডে হাত লাগিয়েছে ওমনি করে উপস্থিত হয় সমীর।
” হে উর্মি। ”
” তুমি। এখন এলে? ”
” লেট করে ফেলেছি। বাট আই ক্যান ম্যানেজ। সৌমেন ভাই আর আমি ভাই ভাই হা হা। ”
” হয়েছে, বসো পাশে। ”
” বাহ পাশে বসতে বলছো। কি ব্যপার হু। ”
রহস্য হাসে সমীর। ভেঙ্চি কাঁটার মতো করে উর্মি বলে–
” ভাবলাম আমায় আবার ভুলে টুলে যাও নি তো। খোঁজ খবর নেই। ”
” হু, হু, ভালো কথা বলেছো। আমি তিন দিন পর ইন্ডিয়া যাচ্ছি। ”
” ইন্ডিয়া! ”
ল্যাপটপ নিয়ে বসলে ও এখন মুখ টা ঘুরালো সমীর এর নিকট। দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো সৌমেন। সমীর গিয়ে হাত মিলিয়ে বসলো। উর্মি ভ্যাবলার মতো দেখছে সেসব। দুজন কি যেন কথা বলে। সেসব উর্মির কানে আসে না। উর্মি ভীষণ চিন্তিত! অথচ চিন্তার কারণ নেই।
বিকেলে হঠাৎ ই ফোন করলো মেঘনা। এ সময়ে ফোন করার কথা না। উর্মি কাজের মাঝেই বলল
” আমি একটু বের হচ্ছি। ”
” উর্মি একটু পর যাও। ”
” আর্জেন্ট। ”
” ওকে দ্যান ইউ ক্যান গো। ”
” থ্যাংকস। ”
সমীর তাকিয়ে থাকে। উর্মি দ্রুত প্রস্থান করে। মেঘনার কন্ঠ কাঁপা। চাপা ভয়ে মেয়েটার অন্তর অব্দি কুকরে উঠে।
” আপা। ”
” বোন। ”
দুজনেই চুপ। উর্মি ভয়ে শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট টা ভিজিয়ে নেয়।এবার মেঘনার ক্রন্দনের শব্দ আসে। উর্মির বুক কেঁপে যায়।
” আপা কি হয়েছে। ”
” বোন নয়ন। ”
” দুলাভাই কি? ”
” নয়ন। ”
” হ্যাঁ আপা দুলাভাই কি। বল আপা, কথা বলোস না ক্যান। এই আপা। ”
” নয়ন ফোন করেছিল। ”
উর্মি এক সেকেন্ড থমকায়। তারপর ই আবার ভয় জাগ্রত হয়। মেঘনা কাঁদছে।
” কি বলেছেন তিনি। ”
শক্ত গলা উর্মির। ওপাশ থেকে কথা আসে না। মেঘনা কেঁদে প্রতিযোগিতা করছে যেন। উর্মির হাত পা ঠান্ডা হবার মতো। এবার মেঘনা থামে। আর উর্মি মনোযোগ দেয়। নিজেকে দৃঢ় করে কঠিন কিছু শোনার জন্য। যা হয়তো কখনোই কল্পনা করে নি।
চলবে….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
পর্ব ১২
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=155414230352813&id=100076527090739