শখের_সাদা_শাড়ি_২ ১০.

0
328

#শখের_সাদা_শাড়ি_২
১০.
এক হাত ঘোমটা দিয়ে পাত্র পক্ষের নিকট উপস্থিত হলো মেঘনা। বুকের ভেতর ধক করে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে! উর্মির হাত টা খিচে রইলো। উর্মি আরেকটু শক্ত করে ধরে রাখে। কিছু টা সাহস পায় মেঘনা। আলিদ ছেলে ভদ্র। বিয়ে টা লুকিয়ে নয় বরং সকলের সম্মুখে করতে চায়। আর সে আয়োজনে বিন্দু মাত্র ক্রুটি থাকা যাবে না। মেঘনার হাত ঘামছে!এমন পরিস্থিতি জীবনে আসবে কখনো কল্পনা ও হয় নি। আলিদ এর বাবা আতাউর হোসেন প্রথম দিকে বিরোধ করেছেন। বেশ দ্বিমত ছিল ওনার। কিন্তু ছেলের চাওয়ার কাছে হার মেনে যান। একটাই ছেলে ওনার। একটু আধটু তো সংশয় থাকবেই। তবু ও তিনি মেনে নিতে বাধ্য। বহু পূর্বেই ওনার সাথে মেঘনার বাবার বিরোধ ছিল। সেই বিরোধ টা কে কেন্দ্র করেই না এতো কিছু। না হয় মেঘনা কে অপছন্দ করার কিছু নেই। ছোট থেকেই চিনেন তিনি। ভারী মিষ্টি স্বভাব। মাঝে সাঝে ওনার সাথে কথা ও হতো। তখন মেঘনা খুব ই ছোট। দেখলেই লম্বা করে সালাম দিতো। কখনো রাস্তা ঘাটে লাফালাফি করতে দেখে নি। সর্বদা একটা নরম স্বভাব বিরাজমান। সেই জন্যেই হয়তো ওর জীবন টা কুল হারিয়েছে। তীরে এসেছে ঠেকে তরী। মেয়েদের নরম হতে নেই। এই পৃথিবী তে নরম হলে বাঁচা যায় না। মেয়ে মানেই আগুন হতে হয়। স্রোতের মতো ধারালো হতে হয়। নতুবা জীবনে ঠকে যাওয়া টাই হয় ধর্ম।আতাউর হোসেন কষ্ট অনুভব করলেন। হয়তো বা জীবন গুলো আর ও সুন্দর হতো। অস্বস্তি বোধ হয় ওনার। আলিদ বাবা পাশাপাশি বসে।
বাড়ির বড় সদস্য অমর। বোন কে দ্বিতীয় বারের মতো বিয়ে দেওয়া অস্বস্তির বিষয়। মোটামুটি সবার মাঝেই একটা দ্বিধা কাজ করছে। আলিদ লক্ষ্য করেছে সেসব। তাই সে নিজ থেকেই বলল ” ভাইয়া আপনার মা বাবা নেই। যদি থাকতেন তাহলে হয়তো মেঘনার হাত টা তাদের থেকে চেয়ে নিতাম। কিন্তু সেটা এখন হচ্ছে না। বাড়ির বড় সদস্য আপনি। আপনার থেকে মেঘনার হাত চাইছি আমি। বিশ্বাস আর ভরসায় কখনো ঠকবেন না। কথা দিলাম। আমি আমার সন্তানের মা কে কখনো কষ্ট পেতে দিবো না। ”

ঘোমটার আড়ালে মেঘনার চোখ ছলছল করলো। অমর যেন কথা পেল। ” বড় ভাই আমি। তবে ভাই বোন দের প্রতি কখনোই দায়িত্ব পালন করে উঠতে পারি নি। নানা বাধা আর মানসিকতার কারনেই এমন টা হয়েছে। বড় সদস্য যেহেতু সেহেতু অনেক দায়িত্ব নিতে হবে।অবহেলা করা টা মানায় না। ভুল হয়েছে অনেক। স্বার্থের রাজ্যে বাস করে পরিবার নামক শব্দ টি বুঝতে পারি নি। তুমি নিশ্চয়ই ভালো পাত্র। ভরসা আছে দেখেই কিছু টা নিশ্চিন্তে বসে আছি। আমার বোনের কপাল তো জানোই। ”

” সেসব কথা বাদ দেন ভাইয়া। পুরনো কথা না মনে করাই শ্রেয়। ”

অমর কে নিশ্চুপ দেখালো। আতাউর কথা বলার প্রয়োজন বোধ করলেন। উর্মি আজ একটা কথা ও বলে নি। সৌজন্য পাশেই দাঁড়ানো। জোৎস্না নাস্তা দিচ্ছেন। মেঘনা কাঁদছে। ” তোমার বাবার সাথে আমার এক সুক্ষ্ম ঝামেলা ছিল। সে ঝামেলার জল এতো দূর গড়াবে জানলে সেদিন ই মিটমাট করে নিতাম সব। যা হবার তা হয়েছে। আমি আলিদ এর বাবা আজ এখানে উপস্থিত। দ্বিধান্বিত ছিলাম। তবু ছেলের কথা ভাবতে হয়। তাছাড়া মেঘনা কে নিয়ে প্রশংসা করে ও শেষ হবে না। শুধু কিছু ভুল…”

” থাক না বাবা। ”

” হুম। পুরনো কথা বলে ঘটনা কে কঠিন করে লাভ নেই। আমি মেঘনার হাত চাইছি আমার ছেলের জন্য। সাথে ছোট ফুটফুটে প্রাণ টা কে চাই আমার নাতনি হিসেবে। ”

মেঘনা আর আলিদের বিয়ে ঠিক হলো। অনুষ্ঠান নিয়ে মেঘনার বেশ আপত্তি। সে জন্য আলিদ অতো ঘাটালো না। শুধু মাত্র বিয়ের অনুষ্ঠান টা ধুমধাম করে করবে বলেই স্থির হলো। মিষ্টি নিয়ে এসেছে সৌজন্য। কয়েক রকমের সুস্বাদু মিষ্টি। প্রথমে মেঘনার মুখে দিয়ে তারপর আলিদ কে খাওয়ালো। আলিদ কে জড়িয়ে ধরে বলল
” দেখে রেখো আমার শান্ত বোন টা কে। বড় চাপা স্বভাবের। ”

” রাখবো ভাইয়া। জীবনের সব টুকু দিয়ে আগলে রাখবো। ”

রাতের খাবার না খাইয়ে ছাড়লো না উর্মি। রাত এখন দশটার কাছাকাছি। তড়িঘড়ি করে বের হতে নেয় উর্মি। তখনি মেঘনা বলে ” আজ থেকে যা প্লিজ। ”

” থাকা যাবে না আপা। ”

” কেন? ”

” সৌমেন স্যার কে নিয়ে ভয় হয়। জানোই তো লায়লার কান্ড। ”

” একটা কথা বলবো? ”

” হুম। ”

” আমি লায়লার কথা ফেলে দিতে পারছি না। কেন যেন মনে হচ্ছে বিষয় টা যতো সহজ দেখায় আসলে ততো সহজ না। ”

” প্রথম দিকে আমার ও তাই মনে হয়েছে। কিন্তু আপা এটা সত্য নয়। তুই জানিস সেদিন সৌমেন স্যার কতো টা ছটফট করেছে। লায়লার থেকে সেসব কথা শুনে ওনি প্রায় পাগল। অনেক কষ্ট বুঝ দিয়ে তবু সারা রাত ঘুমালো না। নির্ঘুম রাত্রি তে বার বার বলছিল আমার সাথে থাকতে তোমার কষ্ট হয় মাইশা? আমি মানুষ টাই ভুল তাই না। তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি। কেন এলে আমার জীবনে। তাহলে তো সব ঠিক হতো। আমিই বরং দোষী। সে সময় টা তোমাকে নিয়ে এতো ভয় সংকোচ ছিল যে পাগল হয়ে গেলাম। পাগলামি শুরু হলো। আর সে জন্যেই হুট করে হলো বিয়ে টা। তোমাকে সময় দেওয়া দরকার ছিল। ”

কথার মাঝে থামে উর্মি। অন্যমনস্ক হয়ে বলে ” জানিস আপা। আজকাল না আমি বড় দ্বিধায় আছি। বড্ড দ্বিধা আমার এ মনে। সব টা যেন এলোমেলো। ”

” কি হলো আবার? ”

” সমীর এর থেকে দূরে চলে এসেছি। বহু দূরে। হয়তো সমীর আমাকে আর ভালোবাসে না। সব টাই…”

” তোর ভুল ধারণা। দেখ উর্মি জীবন টা কে কঠিন করে ফেলেছিস তুই। আমাদের সাগরিকার কিছু হতো না সেদিন। আল্লাহ ছিলেন তো পাশে। ”

দীর্ঘশ্বাস ফেললো উর্মি। ঠিক ভুল বিচার করতে পারলো না। হয়তো সেদিন সাগরিকার কিছু হতো না কিন্তু যদি কিছু হয়ে যেতো?

পিনপতন নীরবতা চলছে। লায়লা এক গ্লাস ওয়াইন ঢেলে নিয়ে বলল ” কাহিনী ঘুরে গেছে। ”

” ঘুরে গেলে চলবে না। তোমাকে সহজ করতে হবে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে হবে সব টা। ”

” তুমি বললেই তো সেসব হচ্ছে না। পুরো বিষয় টাই এতো জট পাকানো যে….। ”

” নেহাত ই জট পাকাচ্ছো তুমি। এতো দিনে ও পারলে না কিছু প্রমান করতে। ”

” আমাকে দোষ দিবে না সমীর। তুমি নিজে ও বা কি করেছো? ”

রেগে গেল সমীর। ” আমি এক পা আগালে ও আমাকে টেনে ধরা হবে। বুঝেছো তুমি,এটা কেবল খেলা। না হয় আমার থেকে উর্মি কে আলাদা করা হতো না। আমি চাইলেই সব টা প্রমান করতে পারি না। ”

” হুম। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। মাস খানেক এর মধ্যেই আমাকে চলে যেতে হবে। এভাবে আমার দিন যাচ্ছে না। স্বামী সংসার ফেলে আমি আর পারছি না এভাবে থাকতে। ”

” বুঝি লায়লা। তবে আমরা খুব ধীর আগাচ্ছি। তুমি আমি এক সাথে কাজ না করলে লাভের লাভ কিছু হবে না। ”

” সেটাই…। ”

ফ্রন্ট গেট দিয়ে একটা গাড়ি ঢুকলো। লায়লা বুঝতে পারলো উর্মি এসেছে। হতাশ গলায় বলল ” উর্মি এসে গেছে। আজকাল তো সৌমেন এর ঘরেই থাকে। সারাক্ষণ নজর বন্দী। বিষয় টা কে আর ও দৃঢ় করে দিলো উর্মি। ”

” বাদ দাও সেসব। যা করার দ্রুত করতে হবে। সামনেই আমি একটা প্ল্যান করেছি। আশা রাখ…। ”

” আমাকে যেতে হবে। রাখছি এখন। উর্মি এদিক টা তেই আসছে। ”

লায়লা মেকি হাসি দিলো, অনেক টা ঘাবড়ে গিয়েছিল। তবে মুহুর্তেই নিজেকে ঠিক করে বলল ” কি খবর তোমার? ”

” ভালো। এতো রাতে আপনি এখানে? ”

” কেন আসতে পারি না? ”

” পারবেন না কেন। অবশ্যই পারেন। তবে আপনাকে কেন যেন বিশ্বাস হয় না আমার। ”

” অন্ধ জগতে বাস করছো তুমি। তাই সব কিছু তেই রহস্য খুঁজো। অথচ চোখের সামনের…। ”

” এসব কথা বহু বার শুনেছি আমি। আর আপনার প্ররোচনায় ভুল ও করেছি। বেশ অন্যায় করেছি সৌমেন স্যার এর সাথে। সেসবের জন্য তিনি আর ও অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন। আপনার কথা আর শুনবো না আমি। খুব দ্রুত আপনার মুখোশ উন্মোচন করবো। ”

তাচ্ছিল্য হাসলো লায়লা। ” একদিন তুমি আপসোস করবে। ”

” সেসব আপনার ভাবা লাগবে না। শুধু বলবো মাথায় থাকা উদ্ভট চিন্তা গুলো বাদ দিন। ভালো থাকুন আর ভালো থাকতে দিন। ”

চলবে…..
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here