প্রেমাসক্তি #ফাতেমা_তুজ #part-2

0
354

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#part-2

সকাল বেলা সূর্যের মৃদু রশ্মি নীলিমার চোখে পরতেই নীলিমা জেগে উঠে।
নীলিমা যতো রাতেই ঘুমোয় না কেন সকালের এই রশ্মি চোখে পড়তেই নীলিমা জেগে যায়।
কথায় আছে না মানুষ অভ্যাস এর দাশ, ঠিক তেমনি সূর্যের কোমল রশ্মি নীলিমার অভ্যাস।
নীলিমা বেড থেকে উঠে বসে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো।
মাথাটা হালকা জিম মেরে আছে।
রোজ এতো পরিমান বিয়ার খেলে শরীর অসুস্থ হওয়া , মাথা ব্যথা করা এগুলো সব স্বাভাবিক ই।
অবশ্য শরীর অসুস্থ হোক কিংবা সুস্থ হোক এই সব নিয়ে নীলিমার কোনো মাথা ব্যথা নেই।
আছে তো শুধু এই রক্ত মাংসের শরীর, অনুভূতি গুলো আদৌ আছে কি না মরে গেছে কে জানে।
এই সাধারন ঘটিত বিষয় গুলো সব ই অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয় ।
উল্টো নীলিমার নেশা না হওয়াটাই হলো অস্বাভাবিক।
নীলিমা ক্লান্ত শরীর ঠেলে উঠে দাঁড়ালো।
শরীর কে কয়েকটা ঘরোয়া ব্যায়াম এর মাধ্যমে প্রশান্তি দিলো।
তারপর ধীরে ধীরে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো।
সূর্য এখনো পুরোপুরি উঠে নি, এখনো সূর্য সম্পূর্ণ উঠার বেশ কিছুক্ষণ বাকি।
নীলিমা সূর্যের দিকে এক দৃষ্টি তে চেয়ে রইলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর প্রকৃতি আর পাখির কিচিরমিচির এর আওয়াজ জানান দিলো সূর্য তার উঠা সম্পূর্ণ করেছে।
নীলিমা সূর্যের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাৎছিল্যর হাসি হাসলো।
সূর্য কে নীলিমা বড্ড হিংসে করে , সূর্য কেন সম্পূর্ণ ?
সূর্য কি পারতো না নীলিমার মতো অসম্পূর্ণ থাকতে।
তাহলে তো নীলিমা সূর্যের সাথে নিজের কষ্টের কথা গুলো বলে হালকা হতে পারতো।
তার ও যে যন্ত্রণা হয় , বড্ড বেশি কষ্ট হয় যে তার।
যত ই বলুক সে অনুভূতি শূন্য , আদৌ কি তা সত্য ?
জীবনের মোর এভাবে পালটে না গেলে ও পারতো।
জীবন কেন এতো স্বার্থপর, সমস্ত সুখ দেখিয়ে কেন সব কেড়ে নেয়?

নীলিমার কষ্টের ভাগ কেউ নিতে পারবে না।
নীলিমা আবার তাৎছিল্যর হাসি হাসল।
কিছুক্ষণ পর তার চোখ থেকে বেয়ে নেমে গেল এক ফোটা অশ্রুজল।
নীলিমা চোখের কোন থেকে পানি মুছে রুমে
চলে আসলো।
টেবিলের লক করা ড্রয়ার এ রাখা ছোট্ট নোট পেড টা বের করে কয়েকটা লাইন লিখল।
কয়েকটা লাইন লিখার পর চুমু খেলো নোট পেড টাতে।
আর মাত্র কয়েকটা পেজ বাকি আছে।
দীর্ঘ চারটি বছর ধরেই তো এই নোট পেড টাতে রোজ দুটি লাইন লিখে রাখে।
এই গল্পের শেষ পাতা তে কি হবে কোনো মিরাঙ্কেল?
হয়তো হবে না, গল্প তো কবেই শেষ হয়ে গেছে।
বেশ কিছুক্ষণ নোট পেড টা বুকে জড়িয়ে ধরে রাখল।
ঘড়ির কাঁটার টংটং আওয়াজে নীলিমা নোট পেড টা ড্রয়ার এ রেখে লক করে দিলো।
ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখল যে 7 টা বেজে গেছে।
নীলিমা ঠোঁটের কোণে তাৎছিল্যর হাসি লাগিয়ে বলল
– আমার এই টুকু ক্ষীন সুখ ও তোর সহ্য হচ্ছিল না।
দিলি সময় টা পেরিয়ে, আমার সাথে ই কেন সবাই এমন করিস।

এই সব বুলি আওরাতে আওরাতে নীলিমা উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো।
যেই হাসি তে কোনো সুখ নেই, আছে শুধু যন্ত্রণা আর তাৎছিল্য।
আক্ষেপ তার জীবন কে নিয়ে, জীবন তাকে বড্ড বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে।
এই সব ভাবতে ভাবতেই তো তার জীবন চারটি বছর পেরিয়ে ফেলেছে।
নীলিমা কিছুক্ষণ পর বাথরুমে চলে গেল ফ্রেস হতে।
ফ্রেস হয়ে এসে বেডে বসল, বেডে বসে মেঝের দিকে দৃষ্টি রেখে কিছু ভাবতে থাকলো।
তার ভাবনা সম্পর্কে কেউ জানে না।
ঘড়ির কাঁটার 8 টার ঢং ঢং আওয়াজে নীলিমা বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো।
কাবাড থেকে একটা নীল কোর্ট নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল।

রুম থেকে বেরিয়ে নীলিমা ডাইনিং এ চলে আসলো।
ডাইনিং এ আসতেই নীলিমার মায়ের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
নীলিমা চেয়ার টেনে বসল, হাতে ফোন নিয়ে সে ফোন স্কল করতে ব্যস্ত।
নীলিমার মা নীলিমা কে খাবার সার্ভ করতে করতে বলল
– হ্যা রে মা শরীর কেমন আছে?
তুই ঠিক আছিস তো ?

নীলিমা খেতে খেতে বলল
– হুমম।

নীলিমার মায়ের চোখ থেকে বেয়ে নেমে গেল কয়েক ফোঁটা অশ্রুজল।

নীলিমার বাবা করিডরের সোফাতে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন।
নীলিমা কে ডাইনিং এ আসতে দেখে খবরের কাগজ রেখে ডাইনিং এ চলে আসলেন।
ডাইনিং এ এসে চেয়ার ঠেলে বসতেই মিসেস চৌধুরী খাবার সার্ভ করে দিলেন।
নীলিমা নিজের মনে খাচ্ছে, আশে পাশে কি হলো এতে তার আর কিছু যায় আসে না।
তার জীবন তো শূন্য,তার জীবনের দুঃখ কষ্ট, ভালোবাসা আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
নীলিমার বাবা খাবার মুখে দিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন।
তার উপস্থিতি নীলিমার কাছে যেন কিছুই না।

নীলিমা কে কিছু বলতে গিয়ে ও বলতে পারছেন না মিস্টার চৌধুরী ।
সে কি বলবে, তার বলার মতো যে কোনো ভাষা ই আর অবশিষ্ট নেই।
নীলিমার অর্ধেক খাওয়া শেষ হলে মিস্টার চৌধুরী সংকোচ কাটিয়ে বলল
– নীলিমা মামুনি একটা কথা বলব।

নীলিমা কিছু ই বলল না।
কারন সে তার বাবার সাথে কথা বলতে আগ্রহী নয়।
মিস্টার চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ছেরে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
নীলিমা খাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেল।
নীলিমার মা নীলিমার বাবার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলেন।
চারটে বছর ধরেই সে এই ছলছল চোখের পানি দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।
মিস্টার চৌধুরী আর খেতে পারলেন না ।
চুপচাপ খাবার টেবিলেই বসে রইলেন ।
বড্ড আক্ষেপ হচ্ছে তার, নিজের প্রতি প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।
নীলিমার মা এতোক্ষন মুখ গুঁজে কান্না করলে ও এখন আর কান্না চেপে রাখতে পারলেন না।
কান্না করতে করতে সে দৌড়ে উপরে উঠে গেলেন।
নীলিমার বাবা স্তব্ধ হয়ে বসে ই রইলেন।
এটা তেমন আহামরি কিছু না।
রোজ এই ঘটনার হাইলাইটস হয়।
এই বাড়ির সবাই এই সকল বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
বিশাল মাপের বাড়িটা আজ শ্মশান মনে হচ্ছে।
এতো কিছু থেকে ই বা কি যদি না থাকে মনে শান্তি।
মিস্টার চৌধুরী একের পর এক দীর্ঘশ্বাস ঝেরে ফেলেন শুধু।
সে যে আড্ডা নিরুপায়, তার হাতে যে কিছু নেই।একটি মাত্র ভুল , আর জেদ যে তার পরিবার কে শ্বশ্মান করে তুলবে সে বিষয়ে যদি ওনি বিন্দু মাত্র জানতেন তাহলে কোনো কিছুর বিনিময়েই তিনি সেই ভুল টা করতেন না।
আত্মগ্লানি আর অনুশোচনায় রোজ একটু একটু করে শেষ হচ্ছেন মিস্টার চৌধুরী।
জীবনের অর্ধেক বয়স পেরিয়ে এই যন্ত্রণা তিনি আর সহ্য করতে পারছেন না ।
চোখের সামনে নিজের একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যত একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আর ওনি বাবা হয়ে তা নীরব দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছেন।
মেয়েটার হাসি খুশি জীবন টাকে ওনি নিজ হাতে শেষ করে দিলেন।
প্রকৃতি রিভেঞ্জ দিচ্ছে সমস্ত দুঃখ টুকু, সুখ টুকু কি ফিরিয়ে দেওয়া যায় না।
তার হাসি খুশি পরিবার টা শেষ হয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র ওনার জন্য।
মিস্টার চৌধুরী অর্ধেক খাওয়া প্লেটেই পানি ঢেলে উঠে চলে আসলেন।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

পরবর্তী পর্ব পেতে পেজ এ ফলো দিয়ে রাখুন
https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/

🛑 সবার মতামত আশা করছি ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here