প্রেমাসক্তি #ফাতেমা_তুজ #part – 9

0
283

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#part – 9

সকাল দশটা নীলিমা ক্যাম্পাসে এসে বসে আছে কিন্তু একটা বান্ধবীর আসার নাম ও নেই।
নীলিমা ফোন হাতে মিহি কে কল দিতে যাবে ওমনি পেছন থেকে মিহি নীলিমা কে জড়িয়ে ধরলো।

নীলিমা ফোন ব্যাগে পুরে নিয়ে রাগী কন্ঠে বলল
– এতো লেইট কেন ?

– আরে দোস্ত আর বলিস নাহহহ।
রুমির জন্য ই দেরি হলো ।

– কেন ? আর রুমি ই বা কোথায় ?
কনা তো না হয় মামা বাড়ি গেছে রুমি আবার কার বাড়ি গেল ?

– শশুর বাড়ি।

মিহির কথা শুনে নীলিমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।
নীলিমা ব্যগ্র হয়ে বলল
– মানে? শশুর বাড়ি কেমনে,,,,, সম্ভব এটা ?

মিহি কপালে হাত দিয়ে অভিমানী সুরে বলল
– আরে দোস্ত,,,, রাস্তার মাঝ খানে রুমির বিএফ এসে হাজির।
সেখানে দুজোনের সো কলড ঝগড়া শুরু।
আর কি আধ ঘন্টা পর মান অভিমান শেষ হয়েছে।
আর দুজন রেস্টুরেন্ট এ চলে গেল।
মাঝে আমার হলো দেরি ,,,,,,

মিহির কথা শুনে নীলিমা হো হো করে হেসে উঠলো।
তারপর মিহির হাত ধরে দ্রত পায়ে ক্লাসে ঢুকে পড়লো।

মিহি নীলিমা কে উদ্বিগ্ন হয়ে বলল
– দোস্ত আজকে ক্লাস বাঙ্ক করি প্লিজ।
নীলিমা রাগি চোখে তাকাতেই মিহি মেকি হাসি দিয়ে বলল
– আচ্ছা থাক ,,,,,
__________________

ক্লাস শেষে বের হতেই নীলিমার মনে পড়লো লাইব্রেরি থেকে কিছু বই নিতে হবে।
মিহিকে বিদায় জানিয়ে নীলিমা দ্রুত পায়ে ভারসিটির লাইব্রেরি তে যেতে লাগলো।
বিশাল লাইব্রেরির মাঝে নীলিমা বই গুলো খুঁজে পাচ্ছিলো না।
বেশ অনেকক্ষণ কাঠ খড় পুড়িয়ে নীলিমা বই গুলো বের করলো।
কিন্তু লাস্ট বই টা ছিল বুক রেক এর বেশ উপরে।
নীলিমা বারংবার চেষ্টা করে ও বই টা নামাতে পারছিলো না।
আর এখানকার চেয়ার গুলো এমন ভাবে সেট করা যে অন্য জায়গাতে আনা ও যাবে না।
কিন্তু বই টা খুব প্রয়োজন নীলিমার।
নীলিমা আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো চেনা পরিচিত কেউ আছে কি না।
কিন্তু কাউকেই চেনা ঠেকলো না।
নীলিমা মুখ গোমড়া করে বই না নিয়েই চলে যাচ্ছিলো।
লাইব্রেরি গেটের কাছে আসতেই আরিয়ান কে চোখে পড়লো নীলিমার।
নীলিমার মুখে মুগ্ধ করা হাসি চলে আসলো।
আরিয়ান লাইব্রেরি তেই আসছিলো।
নীলিমা কে পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই নীলিমা পেছন থেকে ডাক দিলো।
আরিয়ান পেছন ঘুরে তাকিয়ে বলল
– জিহহহ আমাকে ডাকছেন ?

– হ্যাঁ।

– জিহহহ বলুন।

– একটা সাহায্য করবেন প্লিজ ?

– কি সাহায্য?

– একটা বই নামাতে পারছি না।
সেটা নামিয়ে দিবেন ,,,,

আরিয়ান সম্মতি জানাতেই নীলিমা বই দেখিয়ে দিলো।
নীলিমা বই হাতে নিয়ে বলল
– ঠ্যাংস।

আরিয়ান প্রতিউত্তরে মিষ্টি হেসে স্থান ত্যাগ করলো।

আরিয়ান চলে যেতেই কি মনে করে নীলিমা খানিক টা ছুটেই আরিয়ানের দিকে গেল।
নীলিমা এই টুকু ছুটেই হাঁপিয়ে গেল।
নীলিমা বার কয়েক শ্বাস নিয়ে বলল
– আরিয়ান

নীলিমার কন্ঠে আরিয়ান ঘুরে তাকালো।
সামান্য ভ্রু কুঁচকে বলল
– কিছু হয়েছে ? হাপাচ্ছেন কেন ?

নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– নাহহহহ তেমন কিছুই না ,,এক্সচেলি যদি বসে এক কাপ কফি খেতেন।

আরিয়ান হালকা হেসে ঘড়িতে টাইম দেখে বলল
– অন্য একদিন।

অকারনেই নীলিমার মন টা খারাপ হয়ে গেল।
নীলিমা ওকে বলে চলে আসলো।

আর আরিয়ান দ্রুত কিছু বই নিয়ে অফিসের দিকে ছুটলো ।
দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে তার ডিউটি আছে।

__________________

রাতে পড়াশোনা কমপ্লিট করে নীলিমা ফোন এ গান প্লে করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
হঠাৎ করেই নীলিমার চোখের সামনে আরিয়ান এর মৃদু হাসি হাসি চেহারা টা ভেসে উঠলো।
নীলিমা কেঁপে উঠলো ,,,, নীলিমা দ্রুত গতিতে সাইট টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢক ঢক করে গিলে নিলো।
বার কয়েক শ্বাস নিয়ে ভাবতে লাগলো হঠাৎ কেন আরিয়ান কে দেখতে পেল সে।
বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পর ও কোনো উত্তর খুঁজে পেল না।
নীলিমা বেড থেকে উঠে রুমময় পায়চারি শুরু করে দিলো।
কেমন জানি মনের ভেতর উৎখুস লাগছে।
কিছুতেই শান্তি লাগছে না ,,,,,
নীলিমা ওয়াসরুমে ঢুকে মুখে পানির ছিটে দিয়ে আসলো।
কাবাড থেকে ট্রাওয়াল বের করে মুখ মুছতে মুছতে চোখ পড়লো ফোনের দিকে।
ফোনের দিকে তাকিয়ে নীলিমার ঠোঁটের কোনো হাসি ফুটে উঠলো।
ট্রাওয়াল টা রেখে নীলিমা বেডের উপর, ওপর হয়ে শুয়ে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো।
ফেসবুক লগ ইন করে আরিফুল আরিয়ান দিয়ে সার্চ করে নিলো।
বেশ কয়েকটা প্রোফাইল ভেসে উঠলো।
নীলিমা ভ্রু কুঁচকে প্রোফাইল পিক দেখতে লাগলো।
দশ বারো টার মতো চেইক করতেই আরিয়ানের প্রোফাইল পেয়ে গেল।
নীলিমার ঠোঁটের কোনে মুগ্ধ করা হাসি ফুটে উঠলো।
ফেসবুক নামক সোসাল মিডিয়া থেকে এই প্রথম কিছু পেয়ে নীলিমার মুখে মুগ্ধ করা হাসি ফুটেছে।
নীলিমা বেশ মনোযোগ সহকারে প্রোফাইল দেখতে লাগলো।
প্রোফাইল দেখেই বোঝা যাচ্ছে ফেসবুকে আরিয়ান তেমন একটিভ নয়।
প্রোফাইল দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা ছবিতে নীলিমা আটকে গেল।
সাদা শার্ট এর সাথে কালো জিন্স , অফ হোয়াইট জেকেটে কি সুন্দর লাগছে আরিয়ান কে।
লম্বা হওয়ার কারনে মনে হচ্ছে তালগাছ দাড়িয়ে আছে।
ছবিটা দু বছর আগের ,,,,, তখন একটু বেশি ই চিকন ছিলো আরিয়ান।
আর এখন পারফেক্ট বডি,,,,, কিন্তু আরিয়ান এর হাফ ভাব দেখে কোনো কিছুই আন্দাজ করা যায় না।
আদৌ কি আরিয়ান চঞ্চল নাকি ঠান্ডা স্বভাবের।
পুরোই ভিন্ন,,,,,,, নীলিমা আরিয়ান কে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলো।
সাথে একটা টেক্সট ও ,,,,,,,,

কি আশ্চর্য দশ মিনিটের মাথায় আরিয়ান রিপলে দিলো।
অথচ আরিয়ানের প্রোফাইল ঘেটে মনে হচ্ছিলো সপ্তাহে একদিন ও একটিভ থাকে না।

নীলিমা অবাক হয়ে বসে রইলো।
বিমর্ষয়ে নীলিমা স্তব্ধ হয়ে গেছে।
ম্যাসেজ এর টুংটাং আওয়াজে নীলিমার ধ্যান কাটলো।
নীলিমা দ্রুত গতিতে আরিয়ানের ম্যাসেজ চেইক করলো।
আরিয়ান লিখেছে আপনি কে ?

এই ম্যাসেজ টা আপনা আপনি ই নীলিমার ভ্রু কুঁচকে দিলো।
নীলিমা রিপলে দিলো

– আমি নীলিমা।

– কোন নীলিমা ?

এমন ম্যাসাজ বোধহয় আশা করে নি নীলিমা ।
কি আশ্চর্য আজকে ও তো দেখা হলো তারপর ও কোন নীলিমা বলছে।
নীলিমা মুখ গোমড়া করে বলল
– আপনার উপর সেক ফেলে দেওয়া নীলিমা।

– ওহহ আপনি।

– জিহহহহ।

তারপর কিছু টুকটাক কথা বলে নীলিমা বলল
– তো কাল কফির সাথে আড্ডার সময় হবে তো ?

– আচ্ছা আচ্ছা,,,, হবে সময়।

নীলিমা খুশি হয়ে গেল।
কিন্তু এই অতিরিক্ত খুশি হওয়ার কারন টা নীলিমা ঠিক ঠাওর করতে পারলো না।নীলিমা দমে গিয়ে রিপলে করল

– তোহহহ সকাল এগারোটায় কাল ব্রেক টাইম পাবো তখন ক্যাম্পাসের বাম দিকে চলে আসবেন।

– আচ্ছা আসবো ,,,,,, অনেক রাত হয়ে গেছে।
ঘুমাবো ,,,,

– আচ্ছা কাল কথা হচ্ছে।

নীলিমা ফোন বেডের উপর রেখে মৃদু হাসলো।
হঠাৎ ই সব কিছু একটু বেশি ই ভালো লাগছে।
সারা রাত ঘুম হলো না নীলিমার।
ভোর পাঁচ টার দিকে ফজরের নামাজ পড়ে নিলো।
ব্যলকনিতে দাড়াতেই সকালের মিষ্টি হাওয়া,,, সাথে নরম আলো এসে নীলিমা কে স্পর্শ করে যাচ্ছে।
নীলিমা চোখ বুজে উপভোগ করতে লাগলো।
এ সকাল প্রায় ই দেখা হয় , কিন্তু কেন যেন আজ একটু বেশি ই রোমাঞ্চকর , বেশি ই স্নিগ্ধ।
নীলিমার আরিয়ানের কথা মনে পড়তেই ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি টা প্রশস্ত হয়ে গেল।
মাথার খোলা চুল গুলো ঝাঁকিয়ে খানিকটা এলোমেলো করে নিলো নীলিমা।
তারপর চোখ বুজে দু হাত মেলে দিয়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে নিলো।
বাহহহহ কি শান্তি এ নিশ্বাসে।
এতো সুন্দর কেন এ পৃথিবী?
হাজার বছর বাঁচলে ও বুঝি আক্ষেপ থেকেই যাবে ?
নীলিমা এমন হাজারো ভাবনাতে ভাবুক হতে লাগলো।
______________________

সকাল এগারোটা পাঁচ বাজে।
প্রায় দশ মিনিট যাবত ক্যাম্পাসের বাম পাশে দাড়িয়ে আছে নীলিমা।
কিন্তু আরিয়ানের আসার নাম ই নেই।
ফোন যে করবে সে উপায় ও নেই।
নীলিমা হাতের ঘড়ি দেখছে আর আশে পাশে চোখ বুলাচ্ছে।
হঠাৎ ই ক্যাম্পাসের শেষ মাথায় আরিয়ান কে চোখে পড়লো।
নীলিমা মুগ্ধ দৃষ্টি তে আরিয়ান কে দেখতে লাগলো।
বেশ অনেকক্ষণ যাবত আরিয়ান কে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো নীলমা।
চুল গুলো মাঝারি সাইজ করা ,,,, উজ্জ্বল গায়ের রঙের সাথে সাদা শার্ট টা একদম গাঁয়ের সাথে মিশে আছে।
এক হাতে দুটো বই ,,,,, মুখে উপচে পড়া মায়া।
নীলিমার চোখ দুটো আরিয়ানের মাঝে গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগলো।
এর ই মাঝে কখন যে আরিয়ান একদম কাছে এসে পড়েছে নীলিমার খেয়াল ই হলো নাহহহ।

হঠাৎ করে যখন বুঝতে পারলো নীলিমা খানিকটা ইতস্তত বোধ করলো।
নীলিমা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
– ক্যান্টিনে যাওয়া যাক।

আরিয়ান মাথা ঝাকিয়ে হাঁটতে লাগলো।
দুজন টেবিলের দু প্রান্তে কফি হাতে বসে আছে।
আরিয়ানের দৃষ্টি আশে পাশে ঘুরছে,, আর নীলিমার দৃষ্টি শুধু আরিয়ানের মাঝে।

আরিয়ান সামনে তাকাতেই দেখলো নীলিমার দৃষ্টি স্থির।
আরিয়ান হাল্কা কাশতেই নীলিমা নড়ে চড়ে বসলো।
নীলিমা কফি কাঁপে চুমুক দিয়ে বলল
– আপনার নাম ছাড়া তো কিছুই জানি না।
কোন ক্লাসে পড়ছেন ?

আরিয়ান কফি কাপ টা সাইট করে রেখে দুহাত টেবিলের উপর ভাঁজ করে বলল
– মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ার।

– ওহহহহ হো আপনাকে দেখে বোঝাই যায় নাহহ।

আরিয়ান মৃদু হেসে বলল
– আপনি কোন ক্লাস,,,, এর আগে তো দেখি নি ভারসিটিতে।

নীলিমা খিল খিল করে হেসে বলল
– দেখবেন কি করে?
এই কিছু দিন আগেই তো কোর্স এ এডমিশন নিলাম।

– আচ্ছা ,,,,, আপনি তো তাহলে আমার বেশ জুনিয়র।

– হুমমম অলমোস্ট 6 ইয়ার।

এভাবেই দুজন কফি খেতে খেতে বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে আড্ডা দিলো।
নীলিমা হাল্কা কেশে বলল
– আপনার সেলফোন নাম্বার টা ?

আরিয়ান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মৃদু হেসে নাম্বার দিয়ে দিলো।

তারপর আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আরিয়ান উঠে দাড়িয়ে বলল
– নীলিমা আজ আসি ?
কফির জন্য ঠ্যাংস,,,,,

নীলিমা উঠে দাঁড়ালো ব্যাগ থেকে একটা ওয়াচ বক্স বের করে আরিয়ানের দিকে বাড়িয়ে বলল
– এটা আপনার জন্য প্লিজ না করবেন না।

আরিয়ান বারন করলো না আর। মৃদু হেসে বক্স টা নিলো।
নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– আচ্ছা আপনার সাথে আপনার কোনো বন্ধু কে দেখতে পাই না কেন।

আরিয়ান যেতে যেতে বলল
– যার যখন দরকার হয় তখন আমি তার বন্ধু হয়ে যাই।
সবাই প্রয়োজনে বন্ধুত্ব রাখে ,,,,, সবার সাথে তো সবাই লং টাইম ফ্রেন্সশিপ রাখে না।

আরিয়ানের এই কথার মানে টা নীলিমার বোধগম্য হলো নাহহ।
নীলিমা মৃদু হেসে আরিয়ান কে বিদায় জানালো।
আরিয়ানের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টি তে চেয়ে রইলো।
বুকের ভেতর কেমন ধিম ধিম করছে ,,,, আরিয়ান কে দেখায় কেমন নেশা ধরে যাচ্ছে।
নীলিমা চোখ বুঝে নিজেকে শান্ত করে নিলো তারপর ভারসিটি থেকে বের হয়ে গেল।

পরবর্তী পার্ট পেতে পেইজ এ ফলো দিয়ে রাখুন
https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here