প্রেমাসক্তি #ফাতেমা_তুজ #part – 25

0
246

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#part – 25

নীলিমা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে।
আরিয়ানের বিন্দু মাত্র ইচ্ছে হলো না মেয়েটা কে জাগাতে।
কতো দিন পর একটু ঘুমোলে কে জানে ।
আরিয়ান নীলিমার কপালে গভীর ভাবে চুমু খেয়ে গাড়ি থেকে বের হলো।
নীলিমা কে পাঁজা কোলে করে নিয়ে বাসার ভেতরে যেতে লাগলো।
নীলিমা কতোটা শুকিয়ে গেছে তাহহহ কোলে নিয়েই বুঝে গেছে আরিয়ান।
এবার খাইয়ে দাইয়ে মোটা করে দিবে।
আরিয়ান খুব সাবধানে বাসার মেইন ডোর দিয়ে ঢুকলো।
ড্রয়িং রুমে সবাই কে ভাবলেশহীন ভাবে বসে থাকতে দেখে সামান্য ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
কিন্তু নাহহহ এই মুহূর্তে এদের কারো দিকে মনোযোগ নেই আরিয়ানের।
আরিয়ান কারো পরোয়া না করে নীলিমা কে নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে আসলো।
আরিয়ান কে দেখে সবাই উঠে দাঁড়ালো কিন্তু আরিয়ানের কোলে একটা মেয়ে কে দেখেই সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল।
সবাই জিজ্ঞাসা দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে , আর আরিয়ান ব্যস্ত নিখুঁত ভাবে নীলিমা কে উপরে নিয়ে যেতে।
ইথিনা ঠোঁটের কোনে মলিন হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।
তার ইচ্ছে হচ্ছে নাহহহ কিছু বলার।
আরিয়ান সিঁড়ি বেয়ে যেতে নিলেই তরিকুল আবরার গলা উঁচিয়ে বললেন
– এই সব কিহহ তন্ময়?
এটা কি ধরনের,,,

এই টুকু বলতে না বলতে তন্ময় থামিয়ে দিয়ে বলল
– আস্তে কথা বলো , ওহ ঘুমুচ্ছে জেগে যাবে।
ওকে রুমে শুইয়ে দিয়ে তারপর আসছি।

তন্ময়ের কথা শুনে সবাই হা হয়ে গেল।
তন্ময়ের ভয় পাওয়ার কথা কিন্তু তন্ময়ের কন্ঠস্বর স্থির।
আশ্চর্য হলে ও সত্য তন্ময়ের ঠান্ডা স্বরের ঘর কাঁপানো কথা দুটো শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল।
তন্ময় নীলিমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে করিডোর দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে আসলো।
বেডের মাঝ বরাবর শুইয়ে দিয়ে কপালের চুল গুলো গুছিয়ে দিয়ে গালে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে বলল
– আমি আছি তো নীলি , একদম ভয় পাবা নাহহ।
তুমি আমার এক পৃথিবী , সবাই এক দিকে আর তুমি এক দিকে।
আর আমি জানি ইথিনা ও বুঝবে বিষয় টা ।
ওওহহ খুব ভালো মেয়ে , কষ্ট হলে ও বুঝে নিবে।

এই টুকু বলেই তন্ময় জ্বিভ এ কামড় দিলো।
দু কানে হাত দিয়ে বলল
– সরি নীলি, ইথিনা ভালো কিন্তু তুমি তার থেকে ও অনেক অনেক ভালো।
প্লিজ রাগ করো নাহহহ

এই টুকু বলেই তন্ময় হাসলো।
মেয়ে টা ঘুমে বিভোর আর ওহ কি সব বলে যাচ্ছে।
তন্ময় কাবাড থেকে চাদর বের করে নীলিমার গায়ে জরিয়ে দিলো।

ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে ট্রাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে নিলো।
চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে , আরিয়ান সামান্য ভ্রু কুঁচকালো।
চুল গুলো সত্যি ই খুব অগোছালো হয়ে গেছে।
নীলিমা তন্ময়ের চুল মুঠি করে বলত তোমার চুল গুলো বড্ড অগোছালো।
আরিয়ান হাসতে হাসতে নীলিমার কোলে মাথা রেখে বলতো তুমি আছো তো গুছিয়ে দেওয়ার জন্য ।
নীলিমা খিল খিল করে হেসে তন্ময়ের নাক টিপে দিতো।

পুরোনো স্মৃতি মনে পরতেই তন্ময় আনমনে হেসে উঠলো।
রুমের সাইট বরাবর লম্বা ঘড়ি টা ঢং ঢং করে বেজে উঠলো।
তন্ময় দীর্ঘশ্বাস টেনে নিলো সে ভুলেই গিয়েছিলো সবাই তার জন্য নিচে অপেক্ষা করছে।
এখন রাত 3 টে বেজে গেছে , শীত লাগছে খানিক টা , তন্ময় টি শার্ট এর সাথে পাতলা জেকেট পরে নিয়ে নীলিমা কে এক পলক দেখে নিচে চলে আসলো।

*

সবাই তন্ময়ের জন্য অপেক্ষা করছে।
সবার মাথায় নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
রবিনের মুখে টক টকে হাসি, তার প্রান টা যে আজ একটু হলে ও সুখের মুখে ।
দীর্ঘ চার বছর কি যন্ত্রণা টাই না ভোগ করেছে মেয়ে টা ।
এখন ভালো ই ভালো ই সব ঠিক হয়ে গেলেই শান্তি।

মহুয়া আর সিনথি রবিনের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।
যেখানে নিজের বোনের সর্বনাশ নিয়ে আসলো আরিয়ান কোলে করে সেখানে রবিনের হাসি মাখা মুখ দেখে দুজনেই তেলে বেগুনে জ্বলছে।
রবিন এই অন্যায়ের সাথে কি করে থাকতে পারে ?
ভাবতেই বিতৃষ্ণায় মুখ ভরে উঠছে সিনথি আর মহুয়ার।

বড় রা সবাই সোফায় গম্ভীর ভাবে বসে আসেন।
সবাই বেশ বিরক্ত হচ্ছেন , তন্ময়েয মতো নম্র ভদ্র ছেলে এমন অন্যায় কি করে করতে পারে।
যেখানে তন্ময় নিজে ইউ এস এ তে কতো ছেলে কে সোজা করেছে ,, যারা নিজের স্ত্রী থাকতে ও অন্য মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করতো।
আর আজ নিজেই একটা মেয়ের সাথে অন্যায় করছে , যেখানে ইথিনা ওর প্রান বাঁচিয়েছিলো।
নতুন জীবন দিয়েছে ,,

মিসেস আবরার চোখের পানি ফেলছেন।
তার ছেলের এই অচেনা রুপ কেন ?
মিসেস রহমান পারছে না শুধু চিৎকার করে কাঁদতে নিজের মেয়ের এমন দুরবস্থা কেই বা মেনে নিতে পারে ?
রবিন ইশারা করে মিসেস মাহমুদ কে বলল মিসেস রহমান কাঁদছে ওনাকে সান্ত্বনা দিতে।

মিসেস মাহমুদ দীর্ঘশ্বাস টেনে মিসেস রহমানের পাশে বসলেন।
তিনি নিজের ছেলের আর তন্ময়ের ভাবনা বুঝতে পারছেন নাহহহ।
কিন্তু এর মাঝে যে বড় রকমের রহস্য লুকিয়ে আছে তা বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন।

তন্ময় সিঁড়ি বেয়ে ধীর পায়ে নামছে, চোখে মুখে ভয়ের কোনো ছাপ নেই ।
যেন কিছুই হয় নি , রবিন দীর্ঘশ্বাস টেনে তন্ময়ের দিকে ছুটে গেল।
মৃদু স্বরে বলল
– নীহু ঠিক আছে তন্ময়?

তন্ময় মুচকি হেসে রবিনের কাঁধে হাত রাখলো।
রবিন প্রশস্ত হাসলো , সবাই দুজোনের ফিসফিসানি দেখছে।
কারোই বোধগম্য হচ্ছে নাহহহ মেয়াটা কে আর কেন ই বা এতো রাতে এখানে নিয়ে এসেছে।
তন্ময়ের এমন কি হলো তার জন্য মেয়ে টা কে এভাবে নিয়ে আসলো।

তন্ময় ড্রয়িং রুমের পাশ কাটিয়ে কিচেন এ চলে গেল।
ফ্রিজ থেকে ফলের জুস বের করে ঢক ঢক করে গিলে নিলো।
সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে, রবিন মুচকি হাসছে।

ফলের জুস শেষ করে তন্ময় সিঙ্গেল সোফাতাতে বসে দু হাতে পাজেল মেলাতে লাগলো।

তরিকুল আবরার সহ সবাই বের বিরক্ত হলেন।
সেলিম রহমান গলা ঝেরে বললেন
– তন্ময় তোকে কিছু বলতে চাই আমরা।

তন্ময় পাজেল মিলাতে মিলাতে বলল
– বলো কি বলবে , আমি শুনছি।

মিসেস আবরার ছেলে কে দেখে চরম অবাক হচ্ছেন । কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন
– তন্ময় এটা কিহহহ ?
সবাই কিছু বলতে চাচ্ছে আর তুই কি না পাজেল নিয়ে খেলছিস।

তন্ময় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ঠান্ডা স্বরে বলল
– শুনছি তো আম্মু, তোমরা ই তো বলছো নাহহহ।
আমার কাছে বেশি সময় নেই , ওহহহ রুমে একা আছে।
ঘুম ভেঙে গেলে সমস্যা হবে,

আলতাফ মাহমুদ তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে তন্ময় কে দেখে বললেন
– দেখ তন্ময় তোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তুই কোনো ফাজলামি করছিস নাহহহ।
কিন্তু এই সব এর মানে কিহহহ ?

– কোন সব কাকু ?

তরিকুল আবরার রাগে কটমট করছেন।
এই মুহুর্তে ছেলের বেয়াদবি দেখে ইচ্ছে হচ্ছে ঠাস ঠাস চড় বসিয়ে দিতে।
যথেষ্ট রগ চটা মানুষ ওনি, ছেলেকে খুব ভালোবাসেন।
কিন্তু অন্যায় করলে ছেলে মেয়ে পরিবার কাউ কেই ছাড় দেন না ওনি।
নিজেকে যথেষ্ট ঠান্ডা রেখে বললেন
– মেয়েটার সাথে তোমার কি এমন সম্পর্ক যে ভদ্রতা জ্ঞান ভুলে রাত 2টা 3 টার সময় কোলে করে বাড়ি নিয়ে এসেছো ?
তুমি কি করে ভুলে যাচ্ছে ইথি তোমার হবু স্ত্রী।

স্ত্রী কথাটা শুনেই ইথিনা মাথা উঁচু করে তাকালো।
তার খুব কান্না পাচ্ছে ,তন্ময় কে নিয়ে সুখে ঘর বাঁধা হবে কি তার ?
নীলিমা কে ভুলে কি তাকে একটু আপন করা যায় নাহ?
তন্ময়ের পা ধরে বসে থেকে ও যদি তন্ময় কে পাওয়া যেতো ইথিনা তাই করতো।

তন্ময় কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পাজেল মেলাতে লাগলো।
পাজেল মেলানো শেষ হলেই টেবিলের উপর রেখে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
– নীলি আমার স্ত্রী।

তন্ময়ের একটি কথা বোম ফাটার মতো হুংকার দিয়ে উঠলো।
সবাই অবাক হয়ে বলল
– হোয়াট

তন্ময় মৃদু হেসে বলল
– প্রথমেই আমি সরি ইথিনা।
কিন্তু আমার দোষ ছিলো না এতে।
তুমি হয়তো কিছু টা জেনে ছো আজ, কিন্তু পুরোপুরি ক্লিয়ার হওয়ার ও দরকার আছে।

সবাই বেশ মনোযোগ দিলো।
তন্ময় পেছন দিকে ঘুরে বলল
– দেড় মাস আগে আমার কার এক্সিডেন হয়,আই হোপ মনে আছে সবার ?
ব্রেন হেমারেজ হয় আমার, কিন্তু ম্যাজিকেলি আমার আঘাত টা আগের আঘাতের সাথেই লাগে যার ফলে আমার অতীত ফিরে আসে।

তোমরা হয়তো ভেবেছো নীলি আমার গালফেন্ড আর সেটা ও এই গত চার বছরের মধ্যে ই হয়েছে। কিন্তু এমন টা নয় , নীলি আমার বিবাহিতা স্ত্রী।

সবাই স্থির হয়ে আছে ,তন্ময় চোখের কোন থেকে পানি মুছে মৃদু হেসে বলা শুরু করলো সেই সমস্ত রঙিন সুখের সাথে মিশ্রিত কালো ধোঁয়া।
প্রথম থেকে শেষ অব্দি সমস্ত টা বলা শুরু করলো।
বলা হলে ই তন্ময় উপরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি আটকালো।
পেছন ঘুরে তাকাতেই দেখলো সবার চোখে পানি চিক চিক করছে , তন্ময় মলিন হেসে বলল
– তোমাদের সবার কাছে আমি তন্ময় হলে ও একটা পৃথিবীর কাছে আমি আরিয়ান।
যেই মেয়েটা আমাকে ভালোবেসে শেষ হয়ে গেল তাকে আমি ঠকাবো কি করে?
আদৌ কি সম্ভব, আর যেখানে নীলি আমার স্ত্রী।

তন্ময় ধীর পায়ে ইথিনার দিকে এগিয়ে গেল।
ইথিনা নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে , কি ভয়ঙ্কর ওদের অতীত।
দুজন দুজন কে কতোটা ভালোবাসে।

তন্ময় ইথিনার দু হাত ধরে বলল
– ইথিনা তুমি আমায় বাঁচিয়েছো, তুমি যদি নীলির কাছে আমায় দাবি করো আমাকে বাঁচানোর জন্য, ওহহ যেন সরে যায়।
তাহলে বিনা বাক্য ও চলে যাবে।

কিন্তু মেয়েটাকে বড্ড বেশি ভালো বাসি আমি।
আমি জানি তোমার পরিনতি টা অত্যন্ত দুঃখজনক।
কিন্তু নীলির সাথে যা হয়েছে তা আর ও বেশি বেদনাদায়ক।
আমায় ক্ষমা করো তুমি,
ইথিনা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে উপরে উঠে গেল।
কেউ বারন করলো নাহহ , কারন নিজে কে বের করার জন্য ওর সময়ের প্রয়োজন।
ইনফেক্ট সবার ই সময়ের প্রয়োজন।

রবিন হাফ ছেড়ে বাঁচল কারন কেউ নীলিমার ফ্যামিলি মেম্বার দের নাম জানতে চায় নি।
তন্ময় সবার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি আড়াল করে বলল
– আমি ঘরে যাই , নীলি একা।
সবাই কিছু বলল না , সবার মনের ভেতর একেক রকম যন্ত্রণা হচ্ছে।

তন্ময় রুমে এসে দরজা লক করে দিলো।
সময় রাত সাড়ে চার টে , শীত কাল হওয়ার কারনে ভোরের আলো ফুটতে ও সাড়ে ছয়টা বেজে যাবে।
তন্ময় নীলিমার পাশে গিয়ে আধ সোয়া হয়ে বসলো।
নীলিমা কি নিশ্চিন্তেই না ঘুমোচ্ছে।
আরিয়ান নীলিমার ঠান্ডা হয়ে যাওয়া গাল টা তে উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে দিলো।
মেয়েটাকে এতো ভালোবাসে ওহহ , মনে হয় এক মূহুর্ত ওকে ছাড়া নিশ্বাস নেওয়া যাবে নাহহ।
তন্ময় চাদরের ভেতরে গিয়ে নীলিমা কে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে নিলো।
দুজন দুজনার উষ্ণতা পেয়ে আর ও বেশি জড়োসড়ো হয়ে শুইয়ে পরলো।

*

সকালের তীক্ষ্ম রশ্মি চোখে পড়তেই তন্ময় জেগে উঠলো।
ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠার দারুন একটি অভ্যাস আছে তার।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে লিকুইড জাতীয় কিছু খেয়েই এক্সারসাইজ করা তার অভ্যাস।
কিন্তু আজ আর উঠলো নাহহহ , নীলিমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
মেয়েটা একদম বুকের সাথে মিশে শুইয়ে আছে।
যেন বুক চিরে ভেতরে ঢুকে যাবে।
তন্ময় নিজের এলোমেলো চুল গুলো গুছিয়ে নিয়ে নীলিমার কপালে বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে চুমু খেয়ে নিলো।

নীলিমা আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল
– আরিয়ান তুমি যেয়ো না প্লিজ, তোমাকে হারাতে পারবো না আমি।

নীলিমার ঘুমের ঘোরে বলা কথা টা তন্ময় কে মারাত্মক ভাবে টানছে।
মেয়েটা শুধু শুধু ওকে কন্ট্রোললেস বানিয়ে দেয়।

নীলিমা তন্ময় এর গলা জড়িয়ে ধরতেই তন্ময়ের বুক ধুকপুকানি শুরু হয়ে যায়।
সারা শরীরে শিহরন বয়ে যায় , তন্ময় নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ও নীলিমা আঁকড়ে ধরে।

তন্ময় নীলিমা কে বুকে টেনে নিয়ে ঘারে চুমু খেয়ে নেয়।
নীলিমা কে বুকে রেখে তন্ময় ও আবার শুইয়ে পরে।

সাড়ে নয় টা বেজে গেছে এখন ও নীলিমার ঘুম ভাঙে নিহহহ।
নীলিমা তন্ময়ের বুকেই শান্তি তে ঘুমুচ্ছে।
তন্ময় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে , সবাই হয়তো উঠে গেছে।
আর দেরি করা যাবে নাহহ , বিষয় টা বাজে দেখাবে।
তন্ময় নীলিমা কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসলো।
ট্রাওয়ার দিয়ে মুখ মুছে জানালার পর্দা গুলো মেলে দিলো।
সঙ্গে সঙ্গে পুরো ঘর প্রকৃতির ঠান্ডা হাওয়া আর সূর্যের তীক্ষ্ম রশ্মি তে ছেয়ে গেল।
নীলিমার চোখে আলো পরতেই নীলিমা ঘুমের ঘোরে ই বিরক্তি তে চোখ কুঁচকে নিলো।
তন্ময় মৃদু হেসে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে আসলো।

ড্রয়িং রুমে সবাই কে দেখতে পেলো তন্ময় ।
সবাই কে বেশ স্বাভাবিক ই লাগছে , কে জানে এই স্বাভাবিক ভাব কোনো ঝর কি নাহহ।
তন্ময় সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে গেলেই রবিন এসে তন্ময়ের পাশে দাঁড়ায়।

রবিন দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– সকালে খবর পেয়েছি মেঝো মামা নীহুর খুঁজে ফ্ল্যাট এ গিয়েছিলো।
নীহু কে না পেয়ে , পুরো শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজছে এখন।

তন্ময় মৃদু হেসে বলল
– খুঁজতে থাকুক, নীলি কে আর পাবেন নাহহ ওনে।
কিছুতেই ওনার বাসায় নীলি ফিরবে নাহহ।
ওনার করা ভুলের জন্য সবাই কে সাফার করতে হচ্ছে।

রবিন মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
– I think you’re right.
আচ্ছা চল , নিচে যাওয়া যাক।

তন্ময় আর রবিন নিচে চলে আসলো।
মিসেস আবরার সবাই কে উদ্দেশ্যে করে বললেন ডাইনিং এ চলে আসতে।
সবাই একে একে টেবিলে গিয়ে বসলো।

মিসেস মাহমুদ দু কাপ ব্ল্যাক কফি এনে তন্ময় আর রবিন কে দিলেন।

তন্ময় ব্ল্যাক কফি হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল।

রবিন সোফা তে বসে এক হাতে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে লাগলো।

মিসেস রহমান ইথিনার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– নাস্তা টা করে নে ইথি , এখনো মন খারাপ করে আছিস ?

ইথিনা মলিন হেসে মাথা ঝাকালো।
মিসেস আবরার ইথিনার প্লেট এ স্যান্ডুইচ দিতে দিতে বললেন
– মন খারাপ করিস না ইথি , বিশ্বাস কর নীলি যদি গত চার বছরের মধ্যে হওয়া তন্ময়ের গালফেন্ড হতো।
কোনো কথা ছাড়াই তোর সাথে বিয়ে দিয়ে দিতাম তন্ময় কে।
কিন্তু আমরা কি করে ওর অতীত কে আলাদা করবো।
এটা তো অন্যায় না শুধু মহা পাপ হবে।
মেয়েটা আমার ছেলে টাকে কতো টা ভালোবাসে , কি করে এমন টা করবো বল তো।

ইথিনা জুস মুখ দিয়ে মৃদু হেসে বলল
– তোমরা চিন্তা করো না আন্টি , আমি অবুঝ নই।
তন্ময় কে ভালোবাসি তাই খুব কষ্ট হয় , কিন্তু আমার থেকে ও হাজার গুন বেশি একটা মেয়ে তন্ময় কে ভালোবাসে।
আমি চাইলে ও পারবো না অতো টা ভালোবাসতে।

মিসেস মাহমুদ মলিন হেসে বললেন
– আচ্ছা সব হয়েছে এবার সবাই খেতে বসো।
আর নীলিমা ই বা কোথায়?

মেয়েটা ও তো খাবে, রাতে এক পলক দেখেছি আর দেখা ও তো হলো নাহহ।

মিসেস আবরার চোখের পানি মুছে বললেন
– ঘুমুচ্ছে, ঘুম ভাঙলে নাস্তা পাঠিয়ে দিবো, কিংবা এখানেই খাবে।

তন্ময় খালি কফি কাপ টা নিয়ে এসে কিচেনে রেখে দিলো।
তরিকুল আবরার সহ রবিনের বাবা আর ইথিনার বাবা বাসায় নেই।
সকাল সকাল ই কোথাও একটা গিয়েছেন।

তন্ময় কিচেন থেকে বের হতেই দেখলো নীলিমা মাথা চেপে ধরে আশে পাশে দেখছে ।
তন্ময় দ্রুত পায়ে উপরে উঠে গেল।
নীলিমা তন্ময় কে দেখেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো।
তন্ময় মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
– কি হয়েছি নীলি ?

নীলিমা নাক টেনে বলল
– আরিয়ান আমি কোথায়, এখানে এলাম কি করে ?

তন্ময় মৃদু হেসে নীলিমার গালে দু হাত দিয়ে বলল
– নীলি আমি তোমায় নিয়ে এসেছি, তুমি আমার সাথেই ছিলে।

নীলিমা ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদতে লাগলো।
তন্ময় মৃদু হেসে বলল
– আরে বোকা মেয়ে কাঁদে নাহ , আমি তো আছি , তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারি বলো ?
আফটার অল কাল তুমি যা যা বলেছো সেগুলো fulfill করতে হবে তো।

নীলিমা চোখ মুছে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিচে চোখ পড়লো।
কতো গুলো চোখ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
নীলিমা শুকনো ঢোক গিলে তন্ময়ের দিকে তাকাতেই তন্ময় নিচে তাকালো।
সবাই চোখ ফিরিয়ে নিতেই তন্ময় মৃদু হেসে নীলিমা কে রুমে নিয়ে ফ্রেস হতে বলল।
নীলিমার ফ্রেস হয়ে আসতেই তন্ময় অতি যত্ন সহকারে নিজ হাতে নীলিমার মুখ মুছে দিলো।
নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– তখন কি ফুলফিল করার কথা বললে তুমি ?

তন্ময় ব্যলকনিতে ট্রাওয়াল মেলে দিতে দিতে বলল
– আমি বলি নি তুমি বলেছো , আর আমি সেগুলো ফুলফিল করবো।

নীলিমা ভ্রু কুঁচকে বলল
– আমি কি বলেছি ?

তন্ময় ব্যলকনি থেকে এসে নীলিমা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ঘারে চুমু দিয়ে ফিসফিস করে বলল
– কাল রাতে তুমি বলেছো , আরিয়ান আমাকে একটা বেবি এনে দেও।

নীলিমার চোখ দুটো রসগোল্লা হয়ে গেছে।
নীলিমা এই সব বলেছে ভাবতেই ওর ইচ্ছে হচ্ছে মাটির সাথে মিশে যেতে।

তন্ময় বাঁকা হেসে নীলিমা আর ও শক্ত করে জড়িয়ে বলল
– তুমি জানো কাল রাতে আমি সেটার জন্য চেষ্টা ও করেছি ।
কিন্তু তুমি ছটফট করো অনেক , তবে রাত টা অনেক ভালো কেটেছে ।
নীলিমা তন্ময় কে ছাড়িয়ে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল
– কিহহহ , তুমি এমনটা করলে কি করে ?
তুমি এতো টা খারাপ আরিয়ান ,

তন্ময় নীলিমার মুখের দিকে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থেকে বলল
– তুমি ই প্রথম যে মেয়ে কি নাহহ নিজের হাসবেন্ড কে এমন কথা বলছে।
হাসবেন্ড টাচ করেছে তাই তাকে খারাপ বলছো।

নীলিমা মুখ ভেঙ্চি কেটে বলল
– তাই বলে তুমি এমন করে , সবার কতো স্বপ্ন থাকে আর তুমি কি নাহ।

তন্ময় খিল খিল করে হেসে বলল
– আমি কিছু করি নি এখনো, তুমি কুমারী মিসেস ই রয়েছো।

নীলিমা তন্ময়ের পিঠে কিল ঘুসি মারতে মারতে বলল
– অসভ্য, ফাজিল , সব সময় ফাজলামি না করলে ভালো লাগে নাহহ।
লজ্জা সরম বলতে কিচ্ছু নেই , ফাজিল পোলা।

তন্ময় হাসতে হাসতে নীলিমাকে হেচকা টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।
নীলিমা ভয়ার্ত চোখে তাকাতেই তন্ময় বাঁকা হাসলো , নীলিমা থতমত খেয়ে বলল
– উল্টা পাল্টা কিছু করবে না কিন্তু।

তন্ময় ঘোর লাগানো কন্ঠে বলল
– খুব তাড়াতাড়ি উল্টো পাল্টা কিছু করে দিবো।
বয়স যেন কতো তোমার , তেইশ পেরিয়ে চব্বিশ এ পা দিবে।
আর কতো দীর্ঘ চার বছর বিয়ে করে ও কুমারী রয়েছো।
আর সয় নাহহ , এখন আর সময় দিবো নাহহ।
সোজা ছোট ছোট হাত পা আনার ব্যবস্থা করবো।

নীলিমা চোখ গরম করে তাকাতেই তন্ময় নীলিমা কে ছেড়ে খিল খিল করে হেসে উঠলো।

নীলিমা অভিমান করে পেছন ঘুরতেই তন্ময় টেনে নিচে নামিয়ে নিলো।

সবাই মাত্র ই খাওয়া শেষ করেছে।
নীলিমা কে দেখে মৃদু হাসলো সবাই , নীলিমার কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।
তন্ময় চোখ দিয়ে ইশারা করে স্বাভাবিক থাকতে বলল।
নীলিমা কাছে গিয়ে সালাম দিলো।
মিসেস আবরার চেয়ার টেনে নীলিমা কে বসিয়ে দিলেন।
মিসেস রহমান নীলিমার মাথায় চুমু দিয়ে বললেন
– তুমি অনেক ভাগ্যবতী হলে ও তন্ময় আর ও বেশি ভাগ্যবান।
তোমার মতো প্রেমি আমি সত্যি দেখি নি।
তোমার ভালোবাসা কে সম্মান জানাই আমি।

নীলিমার চোখ থেকে টুপ করে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
মিসেস আবরার নীলিমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললেন
– খাবারের প্লেট সামনে রেখে চোখের পানি ফেলতে হয় না মা।
খেয়ে নাও , নীলিমা মাথা ঝাকিয়ে তন্ময়ের দিকে তাকালো।
তন্ময় বুকে হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে।

মিসেস আবরার তন্ময় কে ও খেতে বলল।
তন্ময় নীলিমার পাশের চেয়ার টেনে বসে পরলো।
খাওয়া শেষে রবিন ,নীলিমা , তন্ময় , ইথিনা, মহুয়া আর সিনথি সোফা তে বসে গল্প করতে লাগলো ।
ইথিনা সব সহজ করে নিয়েছে, একজন ডাক্তার হিসেবে তার দায়িত্ব মানুষ কে বাঁচানো।
সেই দাবি তে তন্ময় কে চাওয়া টা অন্যায়।

ইথিনা মুচকি হেসে সব কিছু মেনে নিচ্ছে।
খানিকটা কষ্ট হচ্ছে তবে দিন শেষে তন্ময় ভালো থাকবে এটাই তো পাওয়া।

সবাই বেশ গল্প আমেজে মেতে উঠেছে।
নীলিমা স্থির দৃষ্টিতে সবাই কে দেখে যাচ্ছে।
কি সুন্দর সবাই আপন করে নিয়েছে ওকে।
রবিন মৃদু হেসে নীলিমার পাশে গিয়ে বসলো।
নীলিমা সবার সাথে সহজ হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সবাই বেশ আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে।

কিছুক্ষণ আগেই তরিকুল আবরার আর সেলিম হোসের বাসায় ফিরেছেন।
আলতাফ মাহমুদ আর মিসেস মাহমুদ কোনো একটা কাজে সকালে বাইরে গিয়েছেন।
নীলিমার সাথে দেখা হয় নি ওদের ,রবিনের ফোন আসাতে রবিন একটু দূরে গিয়ে কথা বলতে লাগলো।

কিছুক্ষণ পর ই আলতাফ মাহমুদ আর মিসেস মাহমুদ মেইন ডোর দিয়ে বাসায় ঢুকলেন।
নীলিমা চমকে তাকালো , ফুপি কে দেখে দু চোখ ভরে পানি গড়িয়ে পড়লো।
নীলিমা ধীর পায়ে মিসেস মাহমুদ এর কাছে গেলেন।
তেরো বছরে ফেসের অনেক চেঞ্জ হওয়া তে নীলিমা কে চিনতে পারেন নি ওনি।
যদি ও নীলিমা নাম শুনেছেন, কিন্তু পৃথিবীতে তো এই নামের অনেক এ আছে।
মিসেস মাহমুদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।
নীলিমা মিসেস মাহমুদের কাছে গিয়ে ফুপি বলে ডাকতেই মিসেস মাহমুদের বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো।
কোলে পিঠে করে বড় করেছেন ওনি , নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন নীলিমা।
এই নীলিমা ই যে ওনার নীলিমা ওনি তাহহ কল্পনা ও করতে পারেন নি।
মিসেস মাহমুদ হাত বাড়িয়ে নীলিমা কে ডাকলেন নীলিমা ছুটে গিয়ে মায়ের মতো ফুপি কে জড়িয়ে ধরলো।
দুজন ই একে অপরকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।

সবাই মুগ্ধ নয়নে তাহ দেখতে লাগলো।

👇
অনেক বড় পার্ট দিয়েছি , আরেক পার্ট দেওয়া সম্ভব নাহ। আমার জন্য দোয়া করবেন , এস এস সি পরীক্ষা নিয়ে অনেক টেনশনে আছি।
সবার সুস্থতা কামনা করছি, অগ্রিম ঈদ মোবারক।😍🤗
ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন।😷

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here