প্রেমাসক্তি #ফাতেমা_তুজ #part – 28

0
240

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#part – 28

ইথু প্লিজ কথা টা শোন আমার।
ট্রাস্ট মি আমি তোকে কষ্ট দিতে চাই নি।
আমি যদি জানতাম তুই এতো টাহ কষ্ট পাবি আমি কখনোই এমন টা বলতাম না।
আমি তো তোকে হাসি খুশি রাখতে চাই।
রিয়াদ ইথিনার পিছু দৌড়াচ্ছে আর কথা গুলো বলছে।
কিন্তু ইথিনা রিয়াদের কোনো কথাই কানে নিচ্ছে নাহহহহ।

একটু আগের ঘটনা তন্ময়ের অতীত সম্পর্কে রিয়াদ যখন ই জেনেছে ।
তার পরের দিন থেকেই বি ডি তে আসার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে।
ইথিনা কে রিয়াদ অনেক আগে থেকেই পছন্দ করে।
ইথিনা আর রিয়াদ বেস্ট ফ্রেন্ড।
যদি ফ্রেন্সশিপ নষ্ট হয়ে যায় তাই আজ পর্যন্ত মনের কথা টা বলে উঠে নি রিয়াদ।
আজ দুপুরেই তন্ময়ের বিয়েতে হাজির হয়ে গেছে সে।
ছাঁদে গিয়ে যখন ইথিনা কে নিজের কথা জানালো।
ইথিনা চট করে থাপ্পর লাগিয়ে দেয়।
রিয়াদ ইথিনার পিছু নিতে থাকে।
রাগে ইথিনার চোখ থেকে পানি ঝরছে।
রিয়াদ ইথিনার হাত ধরে বলল
– প্লিজ ইথু আম সরি।
আর হবে না এমন , রাগ করে থাকিস না প্লিজ।

– আমার হাত টা ছাড় রিয়াদ।

– প্লিজ ইথু রাগ করিস না প্লিজ।
এবারের মতো মাফ করে দে নাহহহ।

– আমার হাত টা ছাড় রিয়াদ।

– ইথু প্লিজ আমার

রিয়াদ কে কিছু বলতে না দিয়ে ইথিনা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রিয়াদ কে আবার থাপ্পর মেরে দেয়।
ইথিনার শরীর কাঁপছে, মাথা টা প্রচন্ড রকমের গরম হয়ে আছে।

রিয়াদ ইথিনার দিকে শান্ত দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।
এটা দেখে ইথিনার আর ও রাগ হলো।
ইথিনা মেঝে তে থু থু ফেলে রিয়াদ কে ব্যঙ্গ করে বলল
– ভাবতে ও আমার লজ্জা করে তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
তোর মতো কুলাঙ্গার বেস্ট ফ্রেন্ড থাকার থেকে না থাকা ভালো।
সুযোগ নিচ্ছিস আমার ?
যেই দেখলি দূর্বলতা খুঁজে পেয়েছিস ওমনি চলে আসলি সুযোগ নিতে।
কেন রে রাস্তায় কি মেয়ের অভাব ?
হাজার টাকা ছড়ালেই তো মেয়ে পাওয়া যায়।
তোর তো টাকার অভাব নেই।
নাকি আমাকে কিনতে এসেছিস ?
আরে যা না পতিতালয়ে , আমার কাছে কেন এসেছিস ?
সুযোগ নিচ্ছিস আমার ?
এর আগে আর কার কার সুযোগ নিয়েছিস ?
কখনো আমার উপর ও নিয়েছিলি নাকি ?
আমাকে দেখে কি তোর পতিতা মনে হয় ?
আমি কি পতিতা হয়ে গেছি ?

রিয়াদ কে এতো গুলো বাজে কথা বলাতে রিয়াদের একটু ও গায়ে লাগলো নাহহহ।
কিন্তু শেষের কথা টা রিয়াদের সর্ব শরীর কাঁপিয়ে দিলো।
বার বার কথা টা হুংকার দিয়ে কানে বেজে চলেছে।
আমাকে কি পতিতা মনে হয় ।

রিয়াদের চোখ দুটো রক্তবর্ন ধারন করেছে।
হাত দুটো শক্ত হয়ে যাচ্ছে , ঠোঁট দুটো যেন ভূমিকম্পের সাথে লড়ে যাচ্ছে।

ইথিনা রিয়াদের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই রিয়াদ শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে থাপ্পর মেরে দিলো।
ইথিনা ছিটকে গিয়ে পরলো দরজার কোনায়। ছিটকিনিতে লাগায় ঠোঁটের কোন টা খানিকটা কেঁটে গেছে।
ইথিনা মুখ তুলে তাকালো , চোখ থেকে অঝোরে পানি ঝরছে।
রিয়াদের যেন তাতে কিছুই যায় আসে নাহহ।
রিয়াদ ইথিনা কে টেনে পাশের রুমে নিয়ে গেল তারপর দরজা লক করে দিলো।
ইথিনা একটা টু শব্দ ও করলো না শুধু ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো।
রিয়াদ ইথিনা কে ঝটকা মেরে বেডে ফেলে দিলো।
বেডে ইথিনার দু হাত চেপে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।
ইথিনা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ও নিজেকে ছাড়াতে পারছে নাহহহ।
ইথিনা চিৎকার ও করতে পারছে নাহহহ।
চিৎকার করলে ও কেউ শুনবে না কারন সাউন্ড প্রুফ রুম।
তাছাড়া রিয়াদের নামে বদনাম হয়ে যাবে , সব মিলিয়ে সে অসহায় ।
কি আশ্চর্য এখনো সে এই বেস্ট ফ্রেন্ড নামক অমানুষটার কথা ভেবে যাচ্ছে ।
রিয়াদের শক্তির কাছে তার শক্তি তুচ্ছ । নিজের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে সে কিন্তু পারছে নাহহ।

রিয়াদ যেন নিজের মাঝেই নেই , ইথিনার গলায় , ঘাড়ে চুমুর সাথে দাঁত ও চালাচ্ছে।
ইথিনা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠছে কিন্তু রিয়াদ ছাড়ছে নাহহ।
ইথিনার দু হাত ছেড়ে মাথা চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো রিয়াদ।
হাত ছাড়া পেয়ে ইথিনা রিয়াদ কে খামচে যাচ্ছে।
বড় বড় নখের আঁচড়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হচ্ছে রিয়াদের শরীর কিন্তু রিয়াদের কোনো ধ্যান নেই তাতে।
ইথিনার ঠোঁটে রিয়াদ এমন ভাবে কামড়াচ্ছে মনে হচ্ছে ইথিনার ঠোঁট কেটেই গেছে।
নিজের সমস্ত রাগ ইথিনার ঠোঁটের উপর ঝাড়ছে সে।
ইথিনার চোখ থেকে অবিরত পানি ঝরছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর রিয়াদ ইথিনার ঠোঁটে দাঁতের আক্রমণ বন্ধ করে খুব সফট লি চুমু দিতে লাগলো।
এই প্রথম ইথিনার মনে হচ্ছে রিয়াদ তাকে ভালোবাসে।
এতো ক্ষনের ভয়ঙ্কর আক্রমন এ ইথিনার মনে হয়েছে রিয়াদ কোনো মানুষ নয় পশু।
হঠাৎ করেই ইথিনা ছুটোছুটি বন্ধ করে দিলো।
রিয়াদ গভীর ভাবে ইথিনার ঠোঁটে চুমু খাচ্ছে।
ইথিনা নিজের গালে গরম পানির আভাস পেতেই ইথিনার চিত্ত কেঁপে উঠলো।
রিয়াদ কাঁদছে?
কিন্তু কেন ?
ছোট থেকে এক সাথে বড় হয়েছে দুজন , কখনো রিয়াদ কে কাঁদতে দেখে নি ইথিনা।

রিয়াদ ইথিনার ঠোঁট ছেড়ে উঠে বসলো।
ইথিনার জামা ভেদ করে ফর্সা পেট টা দেখা যাচ্ছে।
রিয়াদ এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।
ইথিনার এতো ক্ষনের রাগ , অভিমান সমস্ত কিছু কৌতুহলে পরিনত হলো।
ছেলেটার চোখের পানি দেখে সে ভুলেই গেছে এই ছেলেটা এতোক্ষন তার সাথে কি করেছে।

ইথিনা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।
রিয়াদ ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলল
– এটাকে বলে সুযোগ নেওয়া, বুঝেছিস।
পতিতা কাকে বলে জানিস তুই ?
সেটা নাই বা দেখালাম।
কতো সহজে নিজে কে পতিতার সঙ্গে তুলনা করে দিলি।
আমাকে এতো কিছু বলেছিস কিছু বলেছি?
নিজেকে কেন এই বাজে শব্দের সঙ্গে তুলনা করলি ?
থাপ্পর মেরেছিস ইচ্ছে হলে আর ও মারতি।
কেন নিজেকে ঐ বাজে , যাই হোক বলেছিস নাহহহ, সুযোগ নেই আমি।
সুযোগ নেওয়া কাকে বলে বুঝেছিস তো এটা কে বলে সুযোগ।
ইথিনার চোখের কোনে পানি গুলো শুকনো হয়ে গেছে।
এখন এক ফোটা পানি ও মুখে নেই।
সব নোনা পানি শুকিয়ে গালে আবরন সৃষ্টি করেছে।
রিয়াদ ইথিনার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে দেখলো রক্ত বের হচ্ছে।
সমস্ত রাগ চালিয়ে ছে কি না।
রিয়াদ ইথিনার ঠোঁট থেকে রক্ত টুকু মুছে দিয়ে।
হালকা করে চুমু খেয়ে দিলো , ইথিনা কিছুই বলল নাহহ।
রিয়াদ উঠে গিয়ে বলল
– আম সরি।
আমি চাইনি এমন টা করতে , আমাকে বাধ্য করালি তুই।

ইথিনার কোনো ভাবান্তর হলো নাহহ।
রিয়াদ ইথিনার দু বাহু চেপে ধরে বলল
– তোর মুখে পতিতা নামক বিশ্রি শব্দ টা যেন না শুনি।
একদম মেরে দিবো , আর হ্যাঁ আঙ্কেল কে বলছি আমি তোকে আজকেই বিয়ে করবো।

ইথিনা নাক মুখ কুঁচকালো।
রিয়াদ মৃদু হাসতেই , ইথিনা হুংকার দিয়ে এসে রিয়াদের কলার চেপে বলল
– আমি তোকে বিয়ে করবো নাহহ।
– তোর চাওয়ার কথা বলেছি আমি ?
– তুই কি ভেবেছিস আমার সাথে অসভ্যতামু করবি আর আমি তোকে বিয়ে করে নিবো।
কিছুতেই নাহহ , তুই আমাকে রেপ করলে ও আমি তোকে বিয়ে করবো না।

রিয়াদ ইথিনার দু হাত পেছনে ঘুরিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল
– তুই যেটা বললি, আমাকে বাধ্য করিস না সেটা করতে।

ইথিনা অবাক হয়ে বলল
– আমাকে থ্রেট দিচ্ছিস?

– নাহহ , শুধু বলছি।

– আমি এখনি নিচে গিয়ে সবাই কে বলে দিবো।

– বারন করেছে কে ?
তুই নিজে ও জানিস তুই আমাকে নিয়ে কিছুই বলতি পারবি নাহহ।
তুই মানিস আর মানিস আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম, আছি আর থাকবো ও।
তুই নিজের জেদ এ থাকলে ও আমাকে অপমান হতে দিবি নাহ।

ইথিনা ব্যঙ্গ করে বলল
– এতো কনফিডেন্স?

রিয়াদ ইথিনার নাকে নাক ঘষে বলল
– ওভার কনফিডেন্স।

ইথিনা কিছু বলল না , এই মূহুর্তে ইচ্ছ হচ্ছে বেস্ট ফ্রেন্ড নামক এই পশু টাকে বেহায়ার মতো জড়িয়ে ধরে বলতে আমি শান্তি চাই।
কিন্তু বড্ড অভিমান হচ্ছে, তাই আর ধরলো নাহহ।

রিয়াদ ইথিনার কপালে ভালোবাসার পরস দিয়ে বলল
– আমি জানি তন্ময় কে তুই ভুলতে চাস।
তন্ময় যদি তোকে চাইতো , আমি কখনোই বলতাম না আমি তোকে ভালোবাসি।
কিন্তু আজ যখন তন্ময় আর তোর সম্পর্ক সম্ভব নয়।
তাহলে আমি কেন তোকে আগলে রাখবো না ?
তুই নিজে ও জানিস তন্ময়ে থেকে ও অনেক গুন বেশি আমাকে তুই ভালোবাসিস।
তন্ময়ের প্রতি অনুভূতি গুলো সহজ ছিলো আর আমার প্রতি জটিল।
কিন্তু তুই আমাকেই প্রথম ভালোবাসিস।
তুই চাস পা নাস তুই আমার।

ইথিনা রিয়াদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।
রিয়াদের প্রতি টা কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য।
কিন্তু ফ্রেন্ড শিপ নামক মায়াজাল কখনো ভালোবাসতেই দেয় নি।

রিয়াদ মৃদু স্বরে বলল
– আমি আঙ্কেল কে গিয়ে বলছি।

– আমি তো তোকে বিয়ে করতে চাই নাহহ।

– প্রয়োজন নেই।

– ভালোবাসি না তোকে ।

– আমাদের জন্য আমার একার ভলোবাসা ই যথেষ্ট।

ইথিনা কিছু বলল না , সে এই বিয়ে তে বারন করবে নাহহহ।
আজ বুঝতে পারছে জীবনের প্রথম অনুভূতি রিয়াদ ই ছিলো , কিন্তু কখনো ভাবাই হয় নি।
তন্ময় কে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলো ঠিক ই কিন্তু তা সম্ভব নয়।
তবে কেন সে রিয়াদ কে দূরে ঠেলে দিবে।
না হয় অভিমান ই করে থাকবে কিন্তু ভালো তো ঠিক ই বাসে।
অন্য কাউ কে ভালোবাসা সম্ভব নয় , যেখানে রিয়াদ তার অনুভূতি তে মিশে ছিলো।
মন টা কে শক্ত করে নিলো সে , রিয়াদ কে জ্বালিয়ে দিবে।
বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি ?

না চাইতে ও ইথিনার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো।
এই প্রথম সে অনুভব করছে রিয়াদের প্রতি সব থেকে বেশি দূর্বল সে।
হয়তো যা হয় ভালোর জন্য ই হয়।
তন্ময় তার স্বপ্ন ছিলো , আর রিয়াদ তার অস্তিত্ব।

*

কিছুক্ষণ আগেই তন্ময় নীলিমা আর রিয়াদ ইথিনার বিয়ে সম্পূর্ন হয়েছে।
রিয়াদের একবার বলাতেই সবাই রাজি হয়ে গেছেন।

বাড়ির দু প্রান্তে দু টো বাসর সাজানো হয়েছে ।

রায়না গালে হাত দিয়ে করিডোরের সোফাতে বসে আছে।
রবিন কিছুক্ষণ ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বলল
– ঐ তোর কি হইছে?

রায়না কিছু বলল না। ছেলেটা হঠাৎ করেই এতো পরিবর্তন হয়ে গেছে যে রায়না সামলাতে হিম সীম খাচ্ছে।
রবিনের ভাষ্য মতে রবিন হলো রায়নার অনেক অনেক বড় গুরুজন।
তাই সে রায়না কে তুই করে বলবে যদি ও সেটা একান্ত সময়ে।
আর রায়না কে নাকি অলয়েজ আপনি আপনি করে রবিনের পিছনে ঘুরতে হবে।
কি জ্বালাতন, আগে জানলে এই বুড়ো লোক টা কে ভালোই বাসতো নাহহ।

রবিন রায়নার চুল টেনে বলল
– কি হইছে বাচ্চা টার ?

রায়না গাল ফুলিয়ে বসে রইলো।
রবিন পাশে বসে আলতো হাতে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো।
রায়না রাগি চোখে তাকাতেই খিল খিল করে হেসে উঠলো রবিন।
রায়না চোখ দুটো স্থির করে তাকিয়ে রইলো।
এই ছেলেটা হঠাৎ করেই বাচ্চা হয়ে গেছে।
ডাক্তার বাবু নাম টা স্বার্থক , সত্যি ই রবিন বাবু দের মতো বিহেভ করে।
যদি ও সবার সামনে শটান ব্যবহার।
এই কয়েক ঘন্টা আগেই তো গম্ভীর গলায় বলতো এই মেয়ে আপনি আমাকে বিরক্ত করছেন কেন।
আর এখন , কি ভয়ানক।

রবিন এবার বেশ গুরুত্ব দিয়ে বসে বলল
– কি হয়েছে আয়না ?
এভাবে মন খারাপ করে আছো কেন?

– আয়না কে ?

– কেন তুমি। এই যে এ মনের আয়না।

রায়না ঝটকা মেরে বলল
– দূর ছাড়ুন তো , ভাল্লাগেনা আর।

– আচ্ছা বলো তো কি হয়েছে ?

রায়না কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বলল
– সবাই বিয়ে করে নিলো , আমরা কবে করবো ?

রবিন ভ্রু কুঁচকে বলল
– ওরে দুষ্ট মেয়ে এতো সখ?

রায়না মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
রবিন রায়না কে সামনের দিকে ঘুরিয়ে বলল
– দেখ নীহুর বয়স তেইশ পেরিয়ে চব্বিশ এ যাবে আর ইথির সাতাশ চলছে।দুজনেই সেটেল যাকে বলে, তুমি পড়াশুনা কমপ্লিট করো তারপর আমরা ও বিয়ে করবো।

রায়না বাজ খাই গলা তে বলল
– এই এই ছাড়ো তো, তুমি কি ভাবছো তুমি পয়ত্রিশ বছরের বুড়ো হবে আর আমি তখন তোমাকে বিয়ে করবো।
নো ওয়ে ,

রবিন সোফাতে হাত মেলে দিয়ে বলল
– তাহলে করো না।

রায়না রবিন কে কিল ঘুসি মেরে বলল
– একদম মেরে দিবো বেয়াদব, তোকে তো টাইট দিয়েই ছাড়বো।

রবিন চোখ বড় বড় করে তাকালো ।
একটু আগে তো আপনি থেকে তুমি তে এসেছিলো এখন তো একে বারে তুই তে এসে পরেছে।

রবিন রায়না কে ছাড়িয়ে বলল
– ওকে ওকে ,, ম্যাডাম আমি আপনার কথা সবাই কে বলে দিয়েছি।
সবাই বলেছে আপনার ফ্যামিলিতে প্রস্তাব পাঠাবে।

রায়না হা হয়ে তাকিয়ে বলল
– সত্যি?

রবিন মাথা ঝাঁকাতেই রায়না রবিন কে জড়িয়ে গালে চুমু খেল।
রবিন রায়না কে ছাড়িয়ে গাল মুছতে মুছতে বলল
– ছিহহ আয়না তুমি ঝোল মাখিয়ে চুমু খাও।

রায়না হাসতে হাসতে বলল
– আমি বাচ্চা কি নাহহ , তাই বাচ্চা দের মতো হামি খেলাম।
আরেকটা খাবা নাকি ?
আসো আসো ?

– আচ্ছা এতো সখ , আজকে আয়নার সখ মিটিয়ে দিবো।

রবিন বাঁকা হেসে রায়না কে ধরতে গেলেই রায়না পালিয়ে যায়।
রবিন ও রায়নার পিছু পিছু ছুট লাগায়।

নীলিমা নব বধুর সাজে কাঁচা ফুলের বাসরে বসে আছে।
অপেক্ষা কাঙ্ক্ষিত মানুষটির জন্য। চারদিকে ফুলের সুভাসে ম ম করছে।
যেন সদ্য ফোঁটা এক ফুলের বাগান।
নব বধু রূপে তন্ময় যখন তাকে দেখবে সে তো লজ্জায় মরেই যাবে।
ইসসসস

দরজা লাগানোর শব্দে নীলিমা জড়োসড়ো হয়ে বসলো।
এই একি বাড়ি , একি রুম , একি বিছানায় আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছে দুজনে।
কিন্তু আজ হঠাৎ ই দুজনের মনে উথাল পাথাল করা জোয়ার নেমে যাচ্ছে।
দুজনের মাঝেই কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।
এ অনুভূতি তে না শান্তি মিলছে আর না কষ্ট হচ্ছে ।
এ এক সর্বনাশা অনুভূতি, যা আমৃত্যু স্বাধ দিয়ে যাচ্ছে।

তন্ময় বেডের কাছে আসতে নীলিমা তন্ময় কে সালাম করে নিলো।
তন্ময় নীলিমার নাক অব্দি দেওয়া ঘোমটা টা তুলে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।
নীলিমার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে, বাসর নামক জায়গা টা বুঝি খুব ই মারাত্মক?

তন্ময় মৃদু হেসে নীলিমার ওষ্ঠে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে দিলো।
নীলিমা স্থির হয়ে সে অনুভূতি গ্রহন করলো।

তন্ময় ধীর কন্ঠে বলল
– ফ্রেস হয়ে আসো নীলি ,
নীলি গেল না।
তন্ময় ধীর কন্ঠে বলল
– কি হলো ?
নীলিমা মাথা নিচু করে বলল
– আমার আরিয়ানের একটা ইচ্ছে ছিলো।
সে বলেছিলো বাসর রাতেই বলবে সেটা।
আমি তা জানতে চাই ,

তন্ময় মৃদু হাসলো , মেয়েটা এখনো মনে রেখেছে।
তন্ময় ধীর কন্ঠে বলল
– তন্ময় আবরার থেকে আজ আমি আবার আরিফুল আরিয়ান হয়ে গেলাম।
যার অনুভূতি গ্রহন করতে তোমার সমস্যা হবে না ।

নীলিমা কিঞ্চিত হাসলো।
আরিয়ান কাবাড থেকে একটা ব্যাগ বের করে দিয়ে একটা চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিলো ।
নীলিমা ভ্রু কুঁচকাতেই আরিয়ান বলল
– ফ্রেস হয়ে আসো।

নীলিমা বাথরুমে চলে গেল।
প্রায় চল্লিশ মিনিট পর বের হয়ে আসলো।
শরীর কাঁপছে তার , শাড়িতে অভ্যস্ত সে কিন্তু আরিয়ানের বলা চিরকুটের উক্তি গুলো পাগল করে দিচ্ছে তাকে।
তাই এতো সময় পর বের হলো।
চিরকুটে এমন ভাবে শাড়ি পরতে বলেছে আরিয়ান যার ফলে নিজের কাছেই অস্বস্তি লাগছে তার।
তার সাথে আরিয়ানের সেই অনুভূতি মাখা চিরকুট।
নীলিমা কে আপন করে নেওয়ার বাসনা সব মিলিয়ে নীলিমার অবস্থা খারাপ।

আরিয়ান বেশ অনেক ক্ষন ধরেই বেডে বসে আসে।
নীলিমা কে দেখেই আরিয়ানের চোখ থমকে গেল।
ক্রিম রঙের ঝিলিক দেওয়া শাড়ি টাতে নীলিমা কে হুড়ের মতো লাগছে।
গায়ের রং টা যেন শাড়ির সাথে লেপ্টে আছে , উন্মুক্ত উদর আরিয়ানের চিত্ত কাঁপিয়ে তুলছে।
আরিয়ান বুকের বা পাশে হাত রেখে নিজে কে স্থির করে নিলো।
নীলিমার হাত পা কাঁপছে, আরিয়ান নীলিমা কে কোলে তুলে বেডে শুইয়ে দিলো।
নীলিমা চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।
আরিয়ান নেশাতুর কন্ঠে বলল
– অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাতে আমার সকল আসক্তি।
এ প্রেমের পূর্নতা যেন পরপারে ও আসক্তি রূপে জড়িয়ে থাকে।

নীলিমা আরিয়ান কে খামচে ধরলো।
ভালোবাসার মতো সর্বনাশা আসক্তি কোথাও নেই।
স্বামী স্ত্রী রূপে পরিপূর্ণতা বরন করার জন্য প্রকৃতি যেন হুংকার দিয়ে শীতল আবহাওয়া তে প্রেমাসক্তির বৃষ্টি নামিয়ে দিলো।

*

বাইরে নুপুরের মতো ঝুম ঝুম করে বৃষ্টিরা ছন্দ তুলে যাচ্ছে।
রিয়াদ বাইরের বৃষ্টি কিছু টা শরীরে মেখে নিয়ে রুমে ঢুকলো।
ইথিনা সোফাতে গোমড়া মুখ করে বসে আছে।
পরনে হোয়াইট ট্রি শার্ট আর ট্রাউজার।
ড্রিম লাইটের তীক্ষ্ম আলো তে ইথিনা কে বেশ মোহনীয় দেখাচ্ছে।
ফুটে উঠেছে যৌবনের সকল সৌন্দর্য।
সাতাশ বছরে পা দেওয়া কন্যা কে এতো টা সুন্দর লাগতে পারে রিয়াদের জানা ছিল নাহহ।
ইথিনা কে কখনো ভালো করে পর্যবেক্ষন করা হয় নি তার।
আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটার অবয়ব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে।
কি আছে এই মেয়েটার মাঝে ?

রিয়াদ খানিক টা ভিজে যাওয়াতে ওয়াসরুমে গিয়ে পাঞ্জাবি চেঞ্জ করে নিলো।
শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে সোজা ইথিনা কে সোফা থেকে কোলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিলো।
ইথিনা হুংকার দিতে চাইলেই রিয়াদ বাঁকা হাসলো।
ইথিনা দমে গেল, রিয়াদ ইথিনার কোলে মাথা রেখে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে বলল
– ইচ্ছে হলেই চিৎকার করতে পারিস , সাউন্ড প্রুফ রুম নয় এটা।
তোর চিৎকারে কে কি ভাব্বে বুঝে নে একটু।

ইথিনা রাগে কটমট করতে লাগলো।
রিয়াদ বার কয়েক লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
– রাগ করিস আর যাই করিস শেষ নিঃশ্বাস থাকা অব্দি ছাড়ছি না তোকে।

তুই না চাইলে ও তুই আমার।
ইথিনা কোনো প্রতিক্রিয়া করলো নাহহ।
রিয়াদের সাথে থাকতে তার বিন্দু মাত্র অস্বস্তি হচ্ছে নাহহ।
উল্টো ভেতরে ভেতরে অন্য রকম ভালো লাগা অনুভব হচ্ছে।

রিয়াদ ঘড়ির কাঁটাতে দেখে নিলো রাত তিন টা বাজে।
ইথিনা কে এক পাশে শুইয়ে দিয়ে চাদর টেনে নিজে ও শুইয়ে পরলো ।
ইথিনা উঠে যেতে চাইলেই রিয়াদ এক হাতে কোমর জড়িয়ে অন্য হাতে ট্রি শার্ট এর ভেতরে পেট জড়িয়ে ধরলো।
ইথিনার শরীর কেঁপে উঠলো , এ স্পর্শ বড্ড অচেনা তার।
এই মানুষ টার সাথে হাতা হাতি গলা জড়িয়ে ধরা কাঁধে মাথা রাখা সমস্ত অনুভূতির সাথেই পরিচিত হলে ও এ অনুভূতি বড্ড অচেনা।
এ স্পর্শ গভীর , রিয়াদ মৃদু হেসে চাদরের ভেতর মাথা দিয়ে ইথিনার গলাতে নাক দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো।

ইথিনার সর্বাঙ্গে শিহরন বয়ে গেল।
ইথিনা কাঁপা স্বরে বলল
– রিয়াদ প্লিজ।

রিয়াদ বাঁকা হেসে ইথিনার পেটে স্লাইড করতে লাগলো।
ইথিনার সহ্য হচ্ছে না আর , মনে হচ্ছে শেষ হয়ে যাবে সে।
যেন কেউ সর্বাঙ্গে বিদুৎ লাগিয়ে দিয়েছে।
উঠতে নিলেই রিয়াদ তাকে বিছানার সাথে আটকিয়ে দেয়।
নেশাক্ত কন্ঠে ইথিনার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে এ অনুভূতি মারাত্মক।
জ্বলছি আমি , গত দশ বছর ধরে জ্বলছি , কি করে নিজেকে বিরত রেখেছি জানি নাহহ।
আজ একটু অনুভূতি গ্রহন করতে দিবি প্লিজ।
বড্ড বেশি ভালোবাসি রে , তোকে ছুঁইয়ে প্রমিস করছি তোর চোখের পানি মাটিতে পরতে দিবো নাহহ।
দিবি একটু ভালোবাসতে , বড্ড জ্বলছি রে।
তোর দিকে নজর দিতে ও পারি নি আর অন্য মেয়েদের দিকে দৃষ্টি রাখতে গিয়ে ও রাখি নি।
আমার অনুভূতি গুলো যে তোকে নিয়ে।
এ সর্বনাশা অনুভূতি তে মরেছি আমি।
একটু দিবি শান্তির অনুভূতি।
প্রমিস করছি একটু ভালোবেসে দেখ আমায় আমি উজার করে ভালোবাসবো।
অনেক বেশি ভালোবাসি রে , দে না একটু অনভূতি।

ইথিনার চোখ থেকে পানি পরছে।
এই ছেলেটার এতো আবেগ কোথা থেকে এলো।
এই ছেলেটা জানে না , কতো টা ভালোবাসে ওহহহ।
কোনো বন্ধু ছিলো নাহহ ওর।
ওকে নিয়েই ছিলো পৃথিবী, কখনো কেন সেই পৃথিবীটা কে রাঙানোর স্বপ্ন দেখলো না সে ?

রিয়াদের স্পর্শ গুলো গভীর থেকে গভীর হতে লাগলো। ইথিনা এক হাতে রিয়াদ কে খামচে ধরলো আর অন্যহাতে বেড শিট।
ইথিনার বাঁধা না পেয়ে রিয়াদ রিয়াদের অনুভূতি গুলো ও উজার করে দিলো।
দুজন ই দুজন কে গভীর ভাবে অনুভব করতে লাগলো।

পরবর্তী পার্ট পেতে পেইজ এ ফলো দিয়ে রাখুন।
https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here