#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_6
দ্রুত রেডি হয়ে নেয় অনিন্দিতা। নির্ভীক সময়ের অপচয় একদম ই পছন্দ করে না। পরীক্ষার পিপারেশন বেশ ভালো। ভালোয় ভালোয় চান্স টা পেয়ে গেলেই হয়। দোয়া পড়ে বেরিয়ে যায় মেয়েটা। নির্ভীক দের বাসার কলিং বেল চাপার আগেই দরজা খুলে যায়। শুভ্র সাদা শার্ট এ নির্ভীক কে আইসক্রিমের মতোই লাগছে। ছেলেটার গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি তে হাত বুলাতে ইচ্ছে হলো। অনিন্দিতা তাঁর ইচ্ছে দমাতে পারলো না। ফট করে নির্ভীকের গাল ছুইয়ে দিলো। প্রচন্ড পরিমানে ঝটকা খেল নির্ভীক। পরীক্ষার দিন হওয়াতে তেমন কিছু ই বলল না। অনিন্দিতা বেশ অবাক হলো । নির্ভীক তাকে ফেলে হাঁটতে লাগলো। অনিন্দিতা ভাবলো ছেলেটা তাঁর প্রতি একটু মায়ায় পরেছে।
_ একটা কথা বলবো ?
_ আপনার সাহস আলোর থেকে ও অধিক হারে বেড়ে গেছে অনিন্দিতা। নিজেকে সংযত করবেন। ভারসিটি তে কোনো ভেজাল চাই না আমি।
_ নির্ভীক ভাইয়া !
_ পড়া শোনা নিয়ে কিছু বলার থাকলে বলুন। অযথা কথা বলা আমার পছন্দ নয়।
অনিন্দিতা দমে গেল। কেউ যেন বুকে তীর ছুড়ে দিয়েছে। প্রতি নিয়ত সেই স্থান থেকে রক্ত ক্ষরন ঘটে। আর সন্তপর্নে পাষানের মতো নির্ভীক তা উপেক্ষা করে। নেত্র পল্লবে পানি জমেছে। বা হাতে তা মুছে নিলো।
গাড়ি তে উঠে বসেছে নির্ভীক । অনিন্দিতা সে দিকে খেয়াল করে নি। বার বার হর্ন বাজাতে বাজাতে বিরক্ত হলো। পরিশেষে ধমকে সুরে বলল
_ অনিন্দিতা।
নির্ভীকের কঠিন কন্ঠে ভরকে গেল মেয়েটা । সহসা নির্ভীক এমন ধমক দেয় না। কঠিন কথা বললে ও কন্ঠ শান্ত রাখে।
অকস্মাৎ নির্ভীক বেরিয়ে আসে। অনিন্দিতা মুখো মুখি হয়ে দাঁড়ায়। দু চারটে কড়া কথা শোনাবে তখনি ফোন বেজে উঠে।
প্রচন্ড রকমের বিরক্ত হয়। তবে স্ক্রিনে থাকা নাম টা দেখে হেসে ফেলে। অকস্মাৎ এমন পরিবর্তনে হতবাক হয়ে যায় অনিন্দিতা।
কথা শোনার চেষ্টা চালালে ও শুনতে পায় না।
তবে ফোনের অপর পাশের ব্যক্তি টি যে নির্ভীকের খুব প্রিয় তা মুখের ভঙ্গিমা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
অনিন্দিতা আশাহত হলো। হঠাৎ করে মাথায় চরাও করে উঠলো সেই মেয়েটার কথা। যাকে আলিঙ্গন করেছিলো নির্ভীক।
ফোনে কথা বলা শেষ হলে নির্ভীক এগিয়ে আসে। শান্ত স্বরে বলে
_ চলুন।
অনিন্দিতা উত্তর দেয় না। ডোর খুলে গাড়ি তে উঠে বসে।
এন এস ইউ ভারসিটির পরীক্ষার হলের কাছে এসে গাড়ি পার্ক করে। উপদেশ দেওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই। তবু ও দিতে হবে। আজমাল বার বার বলে দিয়েছি সাহস দিতে। নির্ভীক সে দিকে পাত্তা দিলো না। শুধু বলল
_ যেকোনো সমস্যা হলে গার্ড কে প্রশ্ন করবেন।
যেহেতু আপনি শপথ নিয়েই ফেলেছেন তাই ভালো করে পরীক্ষা দিন। আশা করি এবার চান্স না পেলে পাগলামি করবেন না।
অনিন্দিতা ফিচেল হাসে। নির্ভীকের কথার পৃষ্ঠে বলে
_ কিছু সময় পাগলামি করতেই হয়। যাকে ছ্যছরামি ওহ বলা চলে।
ঘন্টা বেজে উঠে। ছুটে যায় অনিন্দিতা। নির্ভীক তাজ্জব বনে গেছে। সে বুঝতে পারে না এই টুকু মেয়ের এতো তেজ কি করে ?
দীর্ঘশ্বাসে ভরে উঠে চারপাশ। শান্তির জন্য হলে ও রোজ কে কল করা দরকার।
*
পরীক্ষা টা খুব ভালো হয়েছে অনিন্দতার। ফুল মার্ক না পেলে ও 90% নাম্বার থাকবেই। 80% মার্ক হলেই চান্স পাওয়া যাবে। কোনো আড়ষ্ঠতা ছাড়াই পরীক্ষা দিয়েছে সে। যদি ও দুটো মেয়ে তাকে গ্যাপ দেওয়া নিয়ে উত্যক্ত করেছে। সে দিকে পাত্তা দেয় নি। নির্ভীক তাঁর কাছে সব থেকে বড়ো ট্রফি। যা পাওয়ার জন্য এক বছর গ্যাপ নিতান্তই তুচ্ছ।
ভারসিটির সুন্দরী ম্যাডাম মেহেরিমার সাথে কথা বলছে নির্ভীক। দুজনের বয়সের পার্থক্য তেমন নেই। মেহেরিমা এন এস ইউ তেই পড়াশোনা করেছে। ভাগ্য ক্রমে লেকচারার ও হয়ে গেছে। সব থেকে মজার বিষয় ভারসিটির বাচ্চা ছেলে রা ওহ তাকে প্রেম পত্র পাঠায়। কেউ বা শখের বসে কেউ বা সিরিয়াস মুডে। প্রতি টা প্রেম পত্র ই তীক্ষ্ম বুদ্ধি দিয়ে প্রত্যাখান করে সে।
_ নির্ভীক তুমি কিন্তু ভারী মজার মানুষ।
_ তেমন কিছু না। তবে হাসতে ভালোবাসি। জীবন তো হেসে খেলেই যায় তাই না ?
_ হ্যাঁ সেটাই। আমাকে দেখো বয়স 25 পেরোলে ও বিয়ের ইচ্ছে হয় নি। হাসি মজা তেই বেশ ভালো আছি।
নির্ভীক হাসে। মেহেরিমা কলিগ হিসেবে খুব ই ভালো। বয়সের পার্থক্য খুব অল্প হওয়াতে তুমি করেই সমোন্ধন করে। যদি ও ভারসিটির অনেকের কাছে সেটা দৃষ্টি কটু মনে হতে পারে। তাতে কোনো সমস্যা নেই ওদের। মেহেরিমার সাথে আজকের পরীক্ষা নিয়ে কিছু কথা বলে নিলো। পরীক্ষা প্রচন্ড হার্ড হয়েছে এবার।নির্ভীক সামান্য খুশি হলো। পরক্ষনেই ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেল। অনিন্দিতা এবারো কি পাগলামি করবে ?
বিষয়টা খুব লজ্জা জনক। কোনো ভাবে অনিন্দিতার বিষয় টা সকলে জেনে গেলে তখন জটলা বাঁধবে। ফ্যামিলি ই বা কি ভাববে ? সব কিছু মিলিয়ে নির্ভীক চাইলো অনিন্দিতা যেন পাস করে যায়।
মেহেরিমার সাথে কথা বলতে দেখে অনিন্দিতার মন বিষিয়ে গেল। খুব সুন্দরী মেহেরিমা। গত বার ও দেখেছিলো ।কখনো তাঁর সাথে কথা হয়ে উঠে নি। তবে শুনেছে বেশ রসিকতা জানে মেয়েটা।
অনিন্দিতা রসিকতার দোহাই দিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করলো। এক চিলতে হেসে নির্ভীকের দিকে আগালো। মাত্র ই মেহেরিমা কে বিদায় জানিয়েছে। ঠিক তখনি অনিন্দিতার আগমন যেন চোখের বিষ হয়ে উঠলো।
অধরের হাসি টা মিলিয়ে গেল মুহুর্তেই । মুখে কাঠিন্যর ভাব। প্রচন্ড মন কষ্ট নিয়েও অনিন্দিতা হাসলো। নির্ভীক নিজেকে শান্ত করে বলল
_ পার্কিং এ যান আমি আসছি।
*
ঘর্মাক্ত মুখে এদিক ওদিক চোখ বুলাচ্ছে আসিম। একটুর জন্য মিস করেছে সে।তবে দমে থাকার পাত্র যে সে নয়। প্রায় দশ মিনিট খুঁজে পার্কিং এর দিকে চলে আসলো।
গলায় কার্ড ঝুলিয়ে হাতেস হার্ড বোর্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনিন্দিতা। প্রায় মিনিট দশেক হয়ে গেল। অথচ নির্ভীকের আসার নাম নেই।
নির্ভীক কি কোনো কাজে আটকে গেল ? নাকি ইচ্ছে করেই এমন করলো। নিজের কথার মর্ম করলো না সে। নির্ভীক কেই গুরুত্ব দিলো।
হাসি খুশি মনে নির্ভীকের অপেক্ষায় থাকা মেয়েটাকে হঠাৎ ভো বলে চমকে দিলো কেউ।
ছিটকে দু হাত পিছালো। পেটে হাত দিয়ে হাসছে আসিম। অকস্মাৎ ঘটনায় অবাক হলো। আসিম কে চেনা চেনা ঠেকছে। মনে করার চেষ্টা চালালো। মনে পরতেই ভ্রু বেঁকে গেল।
হাসতে হাসতে আসিম তাঁর কাছে চলে এসেছে। সামান্য দুরুত্বে চলে গেল অনিন্দিতা।
আসিম বলল
_ তোমাকেই খুঁজছিলাম। কতো টা দৌড় করালে জানো ?
_ আমি ?
_ হ্যাঁ , তুমি।
আসিমের কথা গুলো প্রচন্ড রকমের হেয়ালি লাগছে । বিরক্তি প্রকাশ করতে বিবেকে বাঁধছে । কথা পাল্টে নিলে ও আসিম থামলো না। অনিন্দিতার থেকে সামান্য দুরুত্ব রেখে বলল
_ হল থেকে বের হতে দেখেলাম তোমায়। কিন্তু বন্ধুর ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে দিক ভ্রান্ত হলো।
_ তুমি এখানে ?
প্রচন্ড অবাকের সহিত কথা টা বললো অনিন্দিতা । আসিম ফিচেল হেসে বলল
_ তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।
_ হোয়াট।
_ বিশ্বাস হচ্ছে না ?
অনিন্দিতা ভ্রু কুঁচকালো। আসিম আরেক দফা পেট চেপে হাসলো। এক হাতে মাথার চুল গুলো ঠিক করে নিলো। শার্টের হাতা ফোল্ড করে বলল
_ আমি এন এস ইউ তেই পড়ি। তোমার বোকামির জন্য তুমি আমার জুনিয়র হয়ে গেলে।
কথা টা পছন্দ হলো না অনিন্দিতার। সে কোনো বোকামি করে নি। নির্ভীক তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো। যে স্বপ্ন পুরনে হাজারো বিসর্জন দিতে রাজি। আসিম যেন কিছু বুঝতে পারলো। অনিন্দিতার বাহু তে ধাক্কা মেরে বলল
_ রাগ করলে তুমি ?
_ না।
_ স্যরি । আমার এভাবে বলা উচিত হয় নি। আসলে আমি এন এস ইউ তে পড়তে চাই নি। আমার আপু আমাকে জোড় করে এডমিশন করিয়েছি। আর দেখো এন এস ইউ তোমার স্বপ্ন।
_ এটা আমার স্বপ্ন নয় , এটা আমার জীবনের অংশ।
_ ওয়াও ! দারুন বললে তো। বাই দ্যা ওয়ে তুমি কি ছোট থেকেই এন এস ইউ তে পড়তে আগ্রহী ছিলে ?
অনিন্দিতা হাসলো। পেছন ঘুরে নিলো। লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ উহহু। এক বছর আগে আমার স্বপ্ন আমার অংশ এ ভারসিটি তে জড়িয়ে পরেছে।
আসিম বুঝতে পারলো না। প্রচন্ড পেঁচানো কথা বলে মেয়েটা। নিজে কে সংযত করলো। অধিক প্রশ্নে বিরক্ত না হয়ে যায়। হাত দিয়ে কপালে স্লাইড করে বলল
_ এবার এক্সাম কেমন হলো ?
_ ভালো।
_ বাই দ্যা ওয়ে আমরা কি বন্ধু হতে পারি ?
কথা টা একদম বাচ্চাদের মতোই বললো। যেন কোনো বাচ্চা ছেলে চকলেটের জন্য অনুরোধ করছে।
অনিন্দিতা প্রশস্ত হাসলো। আসিম কিছু বলবে তাঁর আগেই একটা ঝাঁঝালো কন্ঠ ভেসে আসলো।
_ আসিম !
ঘুরে তাকালো আসিম। নির্ভীক কে দেখে মৃদু হাসলো।
_ জি স্যার ।
_ আজ তো ভারসিটি অফ ছিলো। হঠাৎ কি কারনে আসলে ?
_ এমনি এক্সাম দেখতে এসেছিলাম। গত বছরের তুলনায় এবার অনেক হার্ড হয়েছে।
_ হ্যাঁ। আচ্ছা তোমার কি মনে হয় , এবার এক্সাম দিলে তুমি টিকবে ?
আসিম হাসলো। জোড়ালো কনফিডেন্স নিয়ে বলল
_ অবশ্যই । মনে আছে গত বার না পড়েই এক্সাম দিয়েছিলাম। তবু ও টপ লিস্ট এ ছিলো আমার মার্ক।
_ কনফিডেন্স ভালো তবে ওভার কনফিডেন্স ভালো নয়। না হলে জীবনে পিছিয়ে যেতে হয়।
কথা টা অনিন্দিতার গায়ে এসে লাগলো। কারন নির্ভীকের কথা টা বুঝতে পেরেছে সে। কথাটা তাকেই এট্রাক করে বলা। তবু ও মন খারাপ করলো না। কারন ড্যাম সিউর এবার চান্স হবেই।
নির্ভীকের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা চললো আসিমের। এক মুহূর্তের জন্য অনিন্দিতা ভেবেছিলো নির্ভীক প্রশ্ন করবে আসিমের সাথে তাঁর পরিচয় কি করে। তবে তাঁর কিছু ই হলো না। আসিমের সাথে হেসে কথা বললে ও অনিন্দিতার প্রতি আগ্রহ নেই তাঁর। চোখ দুটো ছলছল করছে। অনিন্দিতার মনে হলো মরন বুঝি খুব ই সোজা। কারো অবহেলা হৃদয় কে এতো টা ব্যথিত করে জানা ছিলো না।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে…..