#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ৩৩
(প্রাপ্ত মনস্কমানদের জন্য শুধু।)
মাহানুরের রাগ মিশ্রিত কণ্ঠস্বর শুনে আরহাম ঠোঁট টিপে হাসলো। অপরপাশ থেকে মাহানুরের ফোঁস ফোঁস নিঃশাস ত্যাগ করার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আরহাম খানিকটা মজার ছলে বলে,
-সরি আপু আমি আমার ওয়াইফকে কল দিয়েছিলাম হয়তো ভুল করে আপনার কাছে চলে গিয়েছে। ক্ষমা করবেন।
-আপনি অনেক খারাপ লোক।
-হুম জানি।
-অনেক বদমাইশ লোকও।
-আর কিছু?
-না।
-কেমন আছো? বাসার সবাই ভালো আছে?
-হুম সবাই ভালো আছে। আপনি ভালো আছেন?
-কোনোরকম।
-কোনোরকম কেনো? কিছু কী হয়েছে?
-নতুন নতুন বিয়ের পর ওয়াইফকে ছাড়া কী আর ভালো লাগে!
মাহানুর মুখ বাঁকালো আরহামের কথা শুনে।বিরক্তকর স্বরে বলল,
-তাহলে গেলেন কেনো? কে বলেছিলো আপনাকে নতুন বউ রেখে চলে যেতে? শুধু শুধু আমাকে একা করে চলে গেলেন। স্বার্থপর মানুষ।
মুখ ফসকে একনাগাড়ে সবটা বলে নিজেই যেনো ফেঁসে গেলো মাহানুর। হাত দিয়ে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো। চোখ জোড়া বন্ধ করে নিজের মাথায় কয়েকটা চাপড় মারলো। ঐপাশের আরহাম শব্দ করে হাসছে। মাহানুরের হাবভাব অনুভব করতে পারছে সে। রসিকতার স্বরে বলে,
-উহুম উহুম। আমি কী ভুল শুনলাম কিছু? আমার কানে বোধহয় সমস্যা হয়েছে!
মাহানুর মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। আরহাম আর মাহানুরকে লজ্জায় ফেলতে চাইলো না। যেহেতু সে এখন লজ্জামাখা মুখ দেখতেই পাবে না সেহেতু লজ্জা দিয়েই বা কী হবে। কথা ঘুরিয়ে বলল,
-বাবার বাসায় গিয়েছিলে? শশুরআব্বার রাগ ভাঙছে?
-হ্যাঁ। সায়রিন ভাবির বাবু হবে।
-ওউ। গুডনিউস।
-হুম আর আমি অফিস জয়েন করেছি।
-শুনলাম শিবুর কাছ থেকে। সুনহেরা কেমন আছে? আজ থেকে তো তার এক্সাম শুরু হয়েছে।
-হ্যাঁ। গতকাল মেসেজে কথা হয়েছিলো। আপনাকে ভীষণ মিস করে ও সময় পেলে কল দিয়েন।
-হুম। তারপর, আমার রুমে একা একা অনেক শান্তিতে ঘুম হচ্ছে নিশ্চই?
-হচ্ছে। আজ বৃষ্টি শুরু হয়েছে আমাদের এখানে।
-এখানে তো যেদিন আমি আসলাম সেদিন থেকেই বৃষ্টি। কত কাজ আটকে আছে বৃষ্টির জন্য।
-ওওও।
আর কোনো কথা খুঁজে পেলো না মাহানুর। আরহাম কিছুটা সময় নিয়ে বলল,
-অফিসে জয়েন হওয়ার অনুমতি দিয়েছি শুধুই তোমার স্বপ্ন পূরণ করবে এর জন্য কারো সাথে শত্রুতা বা প্রতিশোধ নেওয়া জন্য কিন্তু নয় নুর।
-মানে?
-তুমি সেখানে কী করছো,কোথায় যাচ্ছ সব খবরই আমার কাছে এসে পরে। তোমার মনে যে প্রতিশোধের নেশা ঢুকেছে সেটা আমি স্পষ্ট অনুভব করতে পারছি।
মাহানুরের টনক নড়ে গেলো আরহামের কথা শুনে। শান্ত কণ্ঠে বলল,
-আসলে আমি,,,
-আমি তোমাকে কিছু বলি মনোযোগ দিয়ে শোনো নুর।
-জি বলেন?
-আমি জানি তুমি প্রিয় মানুষদের প্রতি অনেক বেশি প্রসেসিভ বাট আমার মনে হয় রিদ আর অহনার গেঞ্জামের মধ্যে তোমার না ঢোকাই শ্রেয়। রিদের বাবা যেটা করেছে সেটার জন্য শুধু তুমি নও আমারও ভীষণ ক্ষোপ তার ওপর। আজ তার জন্যই রিদ আর অহনা এক হতে পারলো না। কিন্তু ভেবে দেখো ওরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসে। বেশিদিন দূরত্ব বাড়িয়ে থাকতে পারবে না একদিন না একদিন এক হয়েই যাবে। রিদও যেহেতু পরিবার ত্যাগ করেছে তাই তোমার আর ওর বাবার সাথে কোনোপ্রকার গেঞ্জামের প্রয়োজন নেই তারা এমনেই শিক্ষা পেয়ে যাবে। বুঝতে পেরেছো নুর?
-হুম।
-আমার মতে এখন তোমাদের উচিত অহনাকে মানিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসা। ওদের এক হতে সাহায্য করা। আর রইলো রিদের বাবা! সে এখন আর কিছুই করতে পারবে না। ছেলে যে তার হাতের বাহিরে। আর জানো তো নুর যাদের চিন্তাধারা হাঁটুর নিচে তাঁদের কোনোভাবেই ভালো বানানো যায় না।
-সবই বুঝলাম আমি।
-গুড। এখন তুমি এইসবে মাথা না ঘামিয়ে সামনে এক্সাম আসছে সেটায় মন দেও। পড়াশোনার উর্ধে আর কিছুই নয়।
-ঠিক আছে। আমি রিদের বাবার সাথে কোনো গেঞ্জাম বাজাতে যাবো না। তার কাজের ফল সে এমনে এমনেই পেয়ে যাবেন।
-বাহ্! ঝদার নুর। বেশ রাত হলো তো এখন তাহলে ঘুমিয়ে পরো?
-জি।
-রাখছি। নিজের খেয়াল রেখো।
-আপনিও।
ফোন বিছানার পাশে রেখে বসে পরলো মাহানুর। আরহাম আজ খারাপ কিছু বলেনি। এখন যদিও বেশি বাড়াবাড়ি দেখিয়ে মাহানুর রিদের বাবার সাথে লাগতে যায় দেখা যাবে অহনাকে পরবর্তীতে সে জ্বালাবে। না মাহানুর কোনোভাবেই অহনাকে কষ্ট দিতে চায় না। এখন পিছিয়ে যাওয়াই বেস্ট। বসে বসে শান্ত মনে অনেক কিছু ভাবতে থাকলো মাহানুর। অতঃপর সঠিক সিদ্ধান্ত মাথায় আসতেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো তার।
____________________
নির্জন রজনীতে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বাড়ির ভিতরে পা রাখলো আয়াস। সন্ধ্যার পর বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলো। ছোটকালের এক বন্ধু আজ বিদেশ থেকে এসেছে। অনেক বছর পর সবাই একসাথে হওয়ায় ছোটোখাটো একটা পার্টির আয়োজন করা হয়েছিলো। আয়াস পার্টির কথা জানতো না। সে তো আপন মনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়েছিলো কিন্তু সেখানে পৌঁছে সে অবাক। ছোটকালের বন্ধুদের সাথে অন্যরকমই একটা সম্পর্ক থাকে। এতগুলো বছর পর সকলে একসাথে হয়েছে! কত কথা! কত হাসাহাসি! বাড়ির সবাই যে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পরেছে সেটা ভালোভাবেই বুঝতে পারলো আয়াস। অন্ধকারে সাবধানে পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকলো। একহাতে পরিহিত শার্ট এর বোতাম খোলা শুরু করলো। সুনহেরাও হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে। বিকালে যখন বাসায় ছিল সবটা সময় বই নিয়ে বসেছিল। আগামীকালও তার এক্সাম আছে। আয়াস ধীরেধীরে রুমের দরজা খুললো। ভিতরে ঢুকে বাতি জ্বালিয়ে ভ্রু কুঁচকে গেলো তার। বিছানা খালি। রুমের কোথায়ও সুনহেরা নেই। আয়াস বড় বড় পা ফেলে বেলকনি আর ওয়াশরুমে চেক করলো। কোথায়ও সুনহেরাকে না পেয়ে মনে অজানা ভয় ঢুকে গেলো তার। তার সাথে রাগ করে আবার বাবার বাসায় চলে গেলো না তো মেয়েটা!
আতকে উঠলো আয়াসে হৃদয়। অস্থির হয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। ছাদে এসেও নিরাশ হলো সে। তাহলে কী সত্যি সুনহেরা চলে গিয়েছে! নিজের ওপরই ভীষণ রাগ অনুভব করলো আয়াস। সুনহেরার অনুপস্থিত তাকে পীড়া দিচ্ছে। দৌড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করলো তার কাছে। রুমে এসে অশান্ত মনে সোফায় বসে পরলো। চুল মুঠি করে চেপে ধরলো দুই হাত দিয়ে। অনেক বেশি পিপাসিত সে। ঠান্ডা পানির অত্যান্ত প্রয়োজন মনে করে উঠে দাঁড়ালো। এক পা দুই পা করে আগে বাড়তে থাকলো। কিচেনে এসে বাতি অন করে ফ্রিজ খুলে পানির বোতল নিয়ে ফ্রিজ লাগিয়ে দেয়। বোতল দিয়ে পানি খাওয়ার সময় আশেপাশে নজর বুলায় সে। আচমকা ডায়নিং টেবিলের দিকে চোখে যেতেই চিত্ত ধক করে উঠলো তার। বোতল পাশে রেখে একপ্রকার ছুটে যায় সে। টেবিলে মাথা এলিয়ে ঘুমে বিভোর সুনহেরা। চুল দিয়ে মুখ সম্পর্ক ঢাকা। আয়াস পাশের চেয়ারে বসে পরলো। টেবিলে হাত ঠেকিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে দেখতে থাকলো স্ত্রীকে। খাবারে সাজানো টেবিল। আয়াসের কষ্ট হলো। তার জন্যই হয়তো সুনহেরা অপেক্ষা করছিলো।
নরম হাতে সুনহেরার স্মুখীন চুলগুলো সরিয়ে দিলো আয়াস। দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে পাঁজাকোলে তুলে নিলো ঘুমন্ত সুনহেরাকে। আঁধারে এগিয়ে যেতে লাগলো রুমের উদ্দেশ্যে।
সত্যি বলতে সেদিন ঐ ছবিগুলো দেখে আয়াস একটুও সন্দেহ করেনি সুনহেরাকে। বর্তমান যুগে এইরকম ছবি এডিট করা কোনো বড় কিছু না। নিজের স্ত্রীর ওপর তার বিশ্বাস আছে। কিন্ত সুনহেরার কোনো অতীত ছিল সেটা সে কেনো আয়াসকে বলেনি এই কারণেই আয়াসের মন ব্যথিত। বিশ্বাস, ভরসা একটা সম্পর্কের অন্যতম অংশ। যে সম্পর্কে বিশ্বাস নেই সেই সম্পর্কে শান্তিও নেই। রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয় সুনহেরাকে। কিছুক্ষন ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো সে। শাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হলো আয়াস। সহসা স্মুখীন তাকাতেই আবারও বিছানা খালি দেখতে পেলো সে। তোয়ালে রেখে আয়নার সামনে যেতেই রুমে ঢুকলো সুনহেরা। আয়নায় সবটা পর্যবেক্ষণ করতে থাকলো আয়াস। সুনহেরার হাতে খাবারের প্লেট। একে একে নিঃশব্দে সবকিছু ট্রি টেবিলে সাজাতে থাকলো। কাজ করতে করতেই উৎকণ্ঠা হয়ে বলল,
-সরি। আসলে আমার চোখ লেগে এসেছিলো।
-এতো রাত পর্যন্ত না জেগে থাকলেও পারতেন! আগামীকাল আপনার এক্সাম আছে খেয়েদেয়ে শুইয়ে পরুন দ্রুত।
আয়াসের কথায় ততো একটা রিএক্ট করলো না সুনহেরা। সোফায় বসে দুই প্লেটে বিরিয়ানি বাড়তে বাড়তে বলল,
-সমস্যা নেই আমার। আপনি এখন খেতে আসুন। এমনেই আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম বলে দেরি হয়ে গেলো।
আয়াস সুনহেরার সামনে এসে দাঁড়ালো। টেবিলে দৃষ্টি বুলিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
-আমি খেয়ে এসেছি আপনি খেয়ে ঘুমিয়ে পরুন।
সুনহেরা গোলগোল চোখ করে আয়াসের দিকে তাকালো। এইরকম উত্তর সে আশা করেনি এমনই তার মুখ ভঙ্গি। স্মিত হেসে বলে,
-এখন তো রাগটা কিনারে রাখুন জনাব! আমি অনেক কষ্ট করে আপনার জন্য রেঁধেছি জলদি আসুন।
-সত্যি আমি খেয়ে এসেছি। আপনি খেয়ে নিন।
-আচ্ছা।
মুখে যথাসম্ভব হাসি থাকলে ভিতর ভিতর কষ্টে ফেটে যাচ্ছে সুনহেরার। যেভাবে সবকিছু এনেছিল সেভাবেই ধুরুমধুরুম পা ফেলে রেখে আসলো। ভুল করে আয়াসের দিকে তাকালো না একবারও। বিছানায় এসে চুপচাপ শুইয়ে পরলো। ভুতের মতো দাঁড়িয়ে রইলো আয়াস। সবকিছুই যেনো তার মাথার ওপর দিয়ে গেলো। সুনহেরা উঁচু স্বরে বলে,
-বাতিটা বন্ধ করে দিন ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে।
-না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন কেনো?
-আপনার সুন্দর মুখ দেখে আমার পেট একদম ফুল হয়ে গিয়েছে। এখন প্লিজ ঘুমাতে দিন।
আয়াস বুঝলো সুনহেরার তার ওপর অভিমান করেছে। শরীরের সকল বিরক্তি ঝারা দিয়ে ফেলে সুনহেরার মাথার কাছে যেয়ে দাঁড়ালো। রুক্ষ স্বরে বলল,
-উঠুন। আমার খিদে পেয়েছে।
-তোহ! আমাকে খাবেন আপনি?
রাগের মাথায় কী বলে ফেলল সুনহেরা। আয়াস খানিকটা ঠোঁট প্রসারিত করলো। সুনহেরাকে ভীষণ ভাবে লজ্জায় ফেলতে মন চাইলো তার। সুনহেরাকে জব্দ করে বলল,
-আমি মানুষ খাই না। তবে বউ যদি সুস্বাদু হয় তাহলে তাকে খাওয়া যায়।
সুনহেরা কিছুই বলল না। আয়াস এবার জোর করেই সুনহেরার ওপর থেকে টান দিয়ে কাঁথা সরিয়ে দিলো। সুনহেরা তখনও চোখ বন্ধ করে আছে। আয়াস তপ্ত নিঃশাস ছেড়ে বলল,
-আমি আপনাকে ছুঁতে চাইনি। ওকে?
বলেই সুনহেরার দুইবাহু ধরে উঁচু করলো তাকে। ভয় পেয়ে সুনহেরা চিৎকার দিয়ে উঠে।
-আরে আরে কী করছেন আপনি?
আয়াস সুনহেরাকে কোলে তুলে নিলো। সুনহেরা আয়াসের টি-শার্ট খামচে ধরলো। আয়াস সূক্ষ্ম ভাবে খেয়াল করলো সুনহেরার চোখের কোণে পানি জমে আছে। নিজেকে অপরাধী মনে হলো আয়াসের। অনুতপ্ত কণ্ঠে বলল,
-আপনি নিজের হাতে আমার জন্য বিরিয়ানি রান্না করেছিলেন?
-আপনি এখন জেনে কী করবেন? পেট তো আপনার ভরাই।
-বিরিয়ানির কথা সুন্দর খিদে পেয়েছে। প্লিজ নিয়ে আসুন।
সুনহেরা মুখ ফুলিয়ে অন্যপাশ ঘুরে গেলো। আরেকটা হলেই সে কেঁদে ফেলবে এমন দশা। আয়াস পুনরায় বলল,
-আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি সুনহেরা। প্লিজ আমার ওপর রাগ করবেন না।
-নামান আমাকে।
-বিরিয়ানি আনবেন?
-আনছি।
আয়াস হাসি দিয়ে সুনহেরাকে নামিয়ে দিলো। সুনহেরা খুশি মনে খাবার নিয়ে আসলো। দুইজন একসাথে ভর পেট খেয়ে তৃপ্তির ঢেক তুললো। আয়াস পানি খেতে খেতে বলল,
-আপনি রান্না ভালো পারেন!
-হাহাহাহা! আমার শাশুড়িআম্মা আমাকে শিখিয়েছেন। মজা কী হবে না!
-বাবাহ!
খাওয়া শেষে সুনহেরা আপন মনে গুছিয়ে বিছানায় উঠে বসলো। মন চাইলো একবার আয়াসকে জিগ্যেস করতে সে কী তার ওপর নারাজ বা কোনোকিছু নিয়ে তাকে সন্দেহ করছে। কিন্ত মুখ ফুটে কিছু বলতেও লজ্জা করছে তার। আয়াস ফোন নিয়ে বসে সোফায়। সুনহেরা উস্কোখুস্ক করতে লাগলো। আয়াস ফোনে দৃষ্টি রেখেই সুনহেরাকে বলল,
-ঘুমাচ্ছেন না কেনো সুনহেরা?
-আআ আমি আসলে আমি।
-কিছু প্রয়োজন?
-আমি আমার অধিকার চাই।
আয়াস কিছুই বুঝলো না সুনহেরার কথা মানে। ভোঁতা মুখে জিগ্যেস করলো,
-কিসের অধিকার?
-আপনি বাচ্চা মানুষ নন যে এইসব বুঝেন না! আমি আমার স্ত্রীও অধিকার চাচ্চি।
-হঠাৎ মস্তিকে শ’য়তা’ন চেপে বসার কারণ?
সুনহেরা মাথা নত করে শুধুই বসে রইলো। আয়াস ফোন সোফায় রেখেই উঠে দাঁড়ালো। দরজা লাগিয়ে বাতি বন্ধ করে দিলো। অন্ধকারে নড়েচড়ে বসলো সুনহেরা। বিছানায় আরো একজনের অস্তিত্ব অনুভব করতেই শরীর ঘেমে গেলো তার। আয়াস বিছানার পাশের সুইচ টিপে ডিমলাইট অন করে দিলো। মিটমিট আলোতে আয়াসকে নিজের একদম নিকটে দেখতে পেলো সুনহেরা। আয়াস সুনহেরার হাত চেপে ধরলো। নরম কণ্ঠে বলল,
-যান আজ আপনার কথা ফেলবো না।
কথা শেষ হতে দেরি আয়াসের হাত চালাতে দেরি হলো না। সুনহেরা ভাবেনি আয়াস এতো জলদি রাজি হয়ে যাবে। বরফের মতো জমে গেলো তার শরীর। আয়াস দুইহাত দিয়ে সুনহেরার কোমর আঁকড়ে ধরে তাকে সামনে নিয়ে আসলো। কিছুক্ষন সুনহেরার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে তার কপালে গভীর ভাবে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো। সুনহেরার দুই গালে চুমু দিয়ে মুখোমুখি তাকালো। চোখ বন্ধ করে আছে সুনহেরা। আয়াসসের নিঃশাস সুনহেরার মুখে উপচে পরছে। আয়াস এবার সুনহেরার ঠোঁটে মত্ত হলো। সুনহেরা কোনোরূপ রেসপন্স করছে না। আয়াসের ফীল হচ্ছে সে হলো পুতুলের সাথে রোমান্স করছে। আয়াস কিস করতে করতেই সুনহেরার গলার ওড়না সরিয়ে ফেলে। বাধা দিতে চাইলেও সুনহেরা মূর্তির মতোই বসে রইলো। ওষ্ঠ থেকে মুখ নামিয়ে গলায় আসতেই শরীর ঝাঁকিয়ে কেঁপে উঠলো সুনহেরা। নিজেকে কেমন অনুভবহীন মনে হচ্ছে তার। আয়াস নিজ থেকেই সুনহেরার হাত তুলে নিজের পিঠের ওপর রাখলো। সবকিছু শান্ত স্বাভাবিক থাকলেও যখন আয়াস সুনহেরার পিছনে হাত দিয়ে জামার চেইন খুলতে যাবে তখন হুড়মুড়িয়ে সুনহেরা আয়াসের বক্ষে নিজের মাথা ঠেকিয়ে কেঁদে ফেলল। আয়াস বাঁকা হেসে সুনহেরার পিঠে হাত রাখলো। স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
-আপনি কাঁদছেন কেনো আমি তো আপনার কথা মতোই কাজ করছিলাম!
সুনহেরা কিছুই বলল না শুধু ফোঁপাতে লাগলো। আয়াস নিজেকে কন্ট্রোল করে বুকে চেপে ধরলো সুনহেরার মাথা। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
-কেনো নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিজের শরীর বিলিয়ে দিতে এতো উতলা হয়ে পরছেন আপনি? আমি তো আমাদের ভলোবাসার সমাপ্তি চেয়েছিলাম এটা এইরকম ভাবে নয়!
-আমি নষ্টা মেয়ে নই আয়াস। বিশ্বাস করুন আমি চরিত্রহীন না।
-এইসব কথা কেনো উঠছে এখন? আমি একবারও বলেছি আপনাকে?
-আমি সেদিন আপ,,,,,,
-আমার ফোনে সেই ছবিগুলো দেখেছিলেন আর ভাবছেন আমি আপনার সাথে রাগ কারণ আমি ভাবছি আপনি চরিত্রেহীন?
সুনহেরা আরো জোরে ফুঁপিয়ে উঠলো। আয়াস সুনহেরাকে সেভাবে বুকে নিয়েই শুইয়ে পরলো। শক্ত করে বক্ষের মধ্যখানে জড়িয়ে ধরলো সুনহেরাকে। আয়াস নিজেই বলল,
-সেদিন রাতে যখন আপনি আমার সেবা করলেন তখন আমি জেগে ছিলাম সুনহেরা। তাছাড়াও আমার নিজের ওয়াইফের ওপর বিশ্বাস ছিল।
-ঐটা আমার এক্স বিএফের কাজ ছিল আয়াস। অন্য একজন মেয়ের ছবিতে হয়তো আমার মুখ বসিয়ে দিয়েছে।
-যার মন চায় সে পাঠাক ঐরকম ছবি আমার কোনোরকম আহে যায় না। তবে আপনি আমাকে বিয়ের আগে বা বিয়ের পরেও একবার হলেও এই কথা বলতে পারতেন।
-আমি বলতাম। কিন্তু এতো তাড়াহুড়ো করে বিয়ে হয়েছে বলতে ভুলে গিয়েছি।
-যাক এখন প্লিজ কান্না বন্ধ করুন। আপনার ভাই কী ভাববে আমার বিষয় তার বোনকে আমি শুধুই কাঁদাই!
-আমি আর কখন আপনার থেকে কিছু লুকাবো না।
-ঠিক আছে। এই কথা আজ এখানেই মাটি দেন। আপনার এক্স যদি আপনাকে বিরক্ত করে আমাকে বলবেন অবশ্যই। আপাদত সংসার নয় নিজের স্বপ্নের প্রতি মনোযোগ হন। আর এখন ঘুমিয়ে পরুন বেশ রাত হলো।
-ঘুমিয়ে পরবো?
-তাহলে রোমান্স চান?
-না থাক বাবা। ঘুমিয়ে পরি।
সুনহেরা লজ্জা পেয়ে অন্যপাশ ফিরে শুইয়ে পরে। আয়াস নিজেও শব্দ করে হেসে ফেলল। সুনহেরা কাঁথার ভিতরে মুখ লুকিয়ে বলল,
-আমি আপনাকে ভালো ছেলে ভেবেছিলাম!
-আমি আরো খারাপ। একবছর থাকেন আমার সাথে রোমান্সের ওপরে ফ্রিতে পিইচডি করিয়ে দেবো।
___________________
বাসায় আসলে প্রতিদিনই ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠে অহনা। আজও ভোর সকালে ঘুম ভেঙে যায় তার। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই উজ্জ্বল সূর্যের আলো দেখতে পেয়ে মন খুশি হয়ে যায় । কিছুদিন ধরে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সূর্যের তো দেখাই নেই! রুমের বাহিরে এসে পুকুরপাড় থেকে মুখ ধুইয়ে আসে। বৃষ্টির পর একটা ভেজা মাটির ঘ্রাণ আসে না সেটা অনেক বেশি প্রিয় অহনার। বড় বড় নিঃশাস টানলো সুবাস নিতে। ঘরে না গিয়ে আশেপাশের পোলাপানদের সাথে নিজেদের ক্ষেতে চলে গেলো সে। আজ হঠাৎ করেই তার মন একটু ভালো লাগছে। মন বলছে হয়তো আজ ভালো কিছু হবে। যেদিন থেকে বাসায় এসেছে সেদিন থেকেই কান্না করতে করতে তার রাত হয় আর দিন হয়। আজ একবারও কান্না করেনি। দূর থেকে অহনার বাবারও মন ভরে গেলো মেয়েকে হাসতে দেখে। ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে ক্ষেতে গিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। মন খুলে ঘুরছে।
অহনা ঘাসের ওপর বসে পরলো। কেনো সে রিদকে ভুলতে পারছে? মানুষজন কত জলদি নিজে ভালোবাসার মানুষকে ভুলে জীবনে আগে বারে অথচ তার মনে হয় তার জীবন এখানেই থেমে গিয়েছে! রিদ শুধু তাঁদের সুন্দর সম্পর্ক নয় তার জীবনের সকল আনন্দও সাথে করে নিয়ে গিয়েছে। এখন সে মন খারাপ করে থাকলে মা বাবা যে কষ্ট পায় ভালোভাবেই জানে অহনা। তাইতো মুখে নকলি হাসি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় সবসময়। আর যাই হোক নিজের জন্য অন্যকাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।
আরো কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে বাসায় চলে আসলো অহনা। তাঁদের বাড়িটা একদম গ্রাম সাইটে। এখান থেকে অনেক পথ হাঁটার পর মেইন রোড পাওয়া যায়। নির্জন, নীরব এই এলাকা। আশেপাশের প্রতিবেশীদের সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক তাঁদের। সবার বাড়িতে নিজস্ব পুকুর, ক্ষেত-খামার রয়েছে। অহনা রান্নাঘরে গিয়ে মায়ের পাশে বসলো। গালে হাত দিয়ে বলল,
-মা দেও আমি তোমাকে সাহায্য করি।
-আপনার সাহায্য করতে হবে না। শুধু বসে বসে আমার কাজ দেখুন।
-আচ্ছা। তোমরা চাচার বাসায় যাবে?
-হ্যাঁ তোর বাবা তো তাই বলল।
-তোমরা যেও আমাকে যাওয়ার জন্য জোর করিও না মা।
-একা বাসায় রেখে যাবো নাকি যুবতী মেয়েকে!
অহনা আরো কিছু বলতে নিয়েছিল সহসা বাহির থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতেই চুপ হয়ে গেলো সে। ছোট কাঠের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালে কয়েকজন মানুষজনকে জড়ো হতে দেখতে পেলো। ভ্রু কুঁচকে গেলো তার।
-মা বাহিরে কী যেনো হয়েছে অনেক মানুষজন একসাথে।
-দাঁড়া আমি দেখে আসছি।
-আমিও যাবো।
-আয়।
অহনা মার পিছু পিছু উঠানে আসে। অহনার মা এগিয়ে গেলে অহনা কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলো। মানুষজন সরতেই পরিচিত একটি মুখ দেখে আঁখিজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো অহনার। বিস্ময়বিমূঢ় সে। আকস্মিক কণ্ঠে বলল,
-আপনি!
>>>চলবে
(আসসালামু ওলাইকুম। গল্প গতকাল রাতেই আপলোড দিতাম কিন্ত আমাদের এখানে দুইদিন ধরে একটানা কারেন্ট ছিল না। যার দরুন আমার নেটও ছিল না। একঘন্টা আগেই গো’ড়া’র ডি’মের কারেন্ট আসলো। আরেক পর্বও লিখে রাখছি রাতে বা আগামীকাল সকালে আপলোড করবো। ধন্যবাদ।)