#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্ব_৯২
🍂
রিদের বুকে এলোমেলো হয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় শুয়ে আছে মায়ার,, ঘুড়ি কাটা নয়টা ছুঁই ছুঁই হলেও ঘুমের রেশ কাটাতে পারছে না মায়া,, রিদ সারারাত ভর মায়াকে নিজের বুকে আঁকলিয়ে রেখে জাগ্রত অবস্থায় কাটিয়েছে,, মায়াকে আপন করে নিলেও স্বপ্নের ভয়ের রেশটা এখনো কাটাতে পারিনি রিদ,, রিদের কাছে সবকিছু সন্দেহ জনক মনে হলেও হাতে যথেষ্ট তার প্রমাণ না থাকায় আপাতত বউকে কোনো ভাবেই নিজের কাছ থেকে দূরে রাখতে চাচ্ছে না,, অজানা শত্রুটি রিদের কিছু করতে না পারলেও তার বউয়ের ক্ষতি করতে বিন্দু মাত্র পিছো পা হবে না বরং আরও সুযোগ সন্ধানী হয়ে ঘুরে বেড়াবে কবে রিদ মায়াকে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখবে আর কখন সেই সুযোগটা কাজে লাগাবে, রিদ মায়াকে নিজের দু’হাতে জরিয়ে ধরে এই সকল চিন্তা ভাবনায় করতে থাকে, সাথে এটাও ভাবতে থাকে বউ তার এখন ঘুম থেকে উঠেই সবার আগে পাগলামো করা শুরু করবে কাল রাতের জন্য। রিদের এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে মায়া আড়মোড়ি ভেঙে উঠে রিদের বুকের মধ্যে, ঘুম থেকে আস্তে আস্তে পিটপিট করে খুলে তাকায় সামনের দিকে,, মায়া চোখ খুলে সামনে দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল রিদের দুষ্টু হাসি মাখা মুখ, যাহ মায়ার দিকে নিক্ষেপ করা, কাল রাতে কি হয়েছে সেটা ভুলে গিয়ে মায়া রিদের দিকে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে থেকে দুহাত উঁচু করে হামি দিতে দিতে আস্তে করে উঠে বসে গায়ে চাদরটা ফেলে দিয়ে,, পরে বসা অবস্থায় ঘুম ঘুম চোখে কিছুক্ষণ মন্ত হয়ে বসে থেকে একহাতে নিজের মাথা চুলকাতে চুলকাতে চারপাশে তাকিয়ে থেকে রুমটা পযবেক্ষন করতে লাগে,, চারপাশটা দেখতে দেখতে পরিচিত রুম মনে হওয়ায় তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো করে আস্তে করে নিজের দিকে তাকাতেই সাথে সাথে চমকে উঠে দুই চোখ বড় বড় নিজের দিকে তাকিয়ে থাকে আর সাথে মনে হতে লাগে কাল রাতে কি হয়েছে রিদের সাথে সেটা মনে করতেই ঠোঁট উলটিয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে উচ্চ স্বরে কান্না জোরে বসে,,,
.
রিদ মায়ার এমন কর্মকান্ডে উচ্চ স্বরে খিলখিল করে হেসে উঠে বসে নিজের গায়ের চাদরটা দিয়ে মায়াকেও জরিয়ে নেই নিজের সাথে,, মায়ার মায়া কান্নায় হিচকি তুলতে দেখে রিদ আরও বেশি হেঁসে উঠে, মায়াকে জরিয়ে ধরা অবস্থায় বলে উঠে………..
.
—” আমার বউই প্রথম যে স্বামীর ভালোবাসা পেয়ে বলে মরার কান্না জোরে বসেছে,,, আচ্ছা বউ কি আমার ভালোবাসা পেয়েছে বলে কান্না করছে,, নাকি কাল রাতে ভালোবাসাটা কম হয়েছে বলে সেটার জন্য কান্না করছে কোনটা……
.
রিদের এমন খাপছাড়া মজা করে বলা কথায় মূহুর্তে মায়া কিছুটা কান্না থামিয়ে দিয়ে বলে……..
.
—” বেশি হয়েছে বলেই তো কান্না করছি আমি,, কি ছিল ঐ গুলা, আমার খারাপ লাগছে সবকিছু…….
.
বলেই মায়া আবারও কান্না জোড়ে বসে, রিদ নিজের দু’হাতে মায়ার দুগাল আঁকড়ে ধরে শান্তনা সুরে বলে উঠে………
.
—-” শিইই, শিইই, কান্না করে না বউ,, কাল যা হয়েছে সেটা দুদিন পরে হইতো কিন্তু তোমার সুভাগ্য বশত সেটা দুদিন আগে হয়েছে এতে কান্না করার কি আছে,, স্বামীকে ভালোবাসতে পারবা আর তার আদুর নিতে পারবা না এটা তো মানা যায় না বলো,,,,
.
রিদের এমন লাগামহীন কথায় মূহুর্তে মায়া কান্না অফ করে রিদের দিকে তাকিয়ে থেকে টলমলে চোখে বলে উঠে………..
.
—” আপনি মোটেও আমাকে আদর করছিলেন না আমায়,, উল্টো কিসব বাজে কাজ এ্যাঁ……….
.
কথা গুলো বলতে বলতে আবারও কান্না করতে করতে লাগে মায়ার,, মায়ার এমন কান্নায় রিদ ভ্রুঁ কুচকে বলে উঠে………
.
—” এটা আদুর ছিল না, তো কি ছিল…….
.
মায়া রিদের কথা গুলো শুনে মূহুর্তে রিদের দিকে অশ্রু সিক্ত চোখে তাকায়,, কিভাবে নিজের মনের কথা গুলো রিদকে বুঝাবে সেটা বুঝতে না পেরে দু’হাতে নিজের মুখ ডেকে ডুকরে কেঁদে উঠে কষ্টে,, রিদ মায়াকে ডুকরে কেঁদে উঠতে দেখে দ্রুততা সঙ্গে মায়াকে নিজের বুকে আঁকলিয়ে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে,, রিদ বুঝতে পারছে মায়া রিদের হঠাৎ এমন আচারণে কষ্ট পেয়েছে ভিষণ ভাবে,, মায়া এসব কিছু মেনে নিতে পারছে না ওকে আরও একটু সময় দেওয়া দরকার ছিল,, কিন্তু রিদ নিজেও নিরুপায় ছিল তাই বাধ্য হয়ে এমনটা করতে হয়েছে মায়ার সাথে,,, রিদ সম্পূর্ণ কথা গুলো মায়াকে নিজের বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে ভেবে নিয়ে মায়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শান্ত সুরে বলে উঠে………..
.
—” রিত আমি জানি তুমি কষ্ট পাচ্ছো আমার আচরণে, কিন্তু তোমাকে ধরে রাখার জন্য এর চেয়ে বেস্ট অপশন আমার কাছে অন্য কিছু মনে হয়নি,, তোমাকে নিয়ে অনেকটা ভয়ে ছিলাম আমি তাই এমনটা করা,, আর তাছাড়া তোমরা যতটা সহজে নিজের মনে কথা গুলো অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারো,, তা কিন্তু আমি কখনোই সেটা করতে পারি না, আমার মনে হাজারো লুকায়িত কথা গুলো আমি কাউকে বলতে পারি না সেটা বলার মতো মানুষ নেই আমার,, দাদা-দাদি বা তুমি আমার লাইফে একমাত্র দুর্বলতার কারণ তাই তোমাদের সবসময় সেইফ রাখার চেষ্টা করি,, আমার ওপর বিশ্বাস রাখো রিত তোমার কিছু আমি হতে দিব না,, তুমিটা আমার চাই,,,
.
মায়ার রিদ কথা গুলো নির্ভর স্রোতার মতো শ্রবণ করে পরে কান্না থামিয়ে দিয়ে নিজের মাথাটা হালকা একটু রিদের বুকে ঘঁষে দিয়ে রিদকে নিজের দুহাত জরিয়ে ধরে আস্তে করে,, রিদ মায়াকে জরিয়ে ধরতে দেখে মূহুর্তে রিদের ঠোঁটের কোনে একচিত্তে হাসি ফোটে উঠে,, রিদ বুঝতে পারে মায়া যে রিদের কথা গুলো বুঝতে পেরেছে এবং সুমতিও জানাচ্ছে সেটা,,, মায়া রিদের বুকে মাথা রেখে নাক টেনে টেনে আস্তে করে রিদকে বলে উঠে………
.
—” এই ভাবে আদুর করে না কেউ………
.
—” তোমার বড় আদুরে নলেজ আছে,, তো কিভাবে করতে হবে আদুর তোমার কথা অনুযায়ী………
.
রিদের এমন কথায় মায়া নিজের মাথা রিদের বুক থেকে তুলে নিজের দুহাত দিয়ে রিদের দুগাল আঁকড়ে ধরে হালকা হালকা করে রিদের গালে হাত বুলিয়ে আদুর করতে করতে আহাধুর সুরে বলে উঠে………
.
—” আদর আদর আদর,, বলেই তো আদর করতে হয়, ঐ পঁচা কাজ গুলো না করে…..
.
মায়ার এমন কথায় রিদ কটমট করে বলে উঠে……
.
—” সেই………
.
.
🍁
আজ ফিহার বিয়ে, বর যাত্রী সবাই খান বাড়িতে উপস্থিত হয়েছে বেশ সময় আগেই,, এখন আপাতত বিয়ে কার্য শুরু না হলেও চারপাশে বিয়ে হৈ হুল্লোড় চলছে,, এমনত পরিবেশ মায়া সারা বাড়ি ঘুরঘুর করছে এদিক থেকে ওদিকে,, মায়া যে একা একা ঘুরছে মোটেও কিন্তু তা নয়,, রিদ মায়ার চারপাশেই আছে, মায়ার ওপর নজর রাখছে,, যাতে মায়ার কিছু না হয়,, রিদ সন্দেহ বশত সিকিউরিটি আরও বাড়িয়ে দেয় আগের চেয়ে তবু ফ্যামিলি সেইফ চাই,,, মায়া নিজের মতো করে পরিবারের সবার সাথে মজা করছে আরিফের বিয়ে,, মায়া এমন মন মাতানো পাগলামোতে কেউ একজন কাতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে পযবেক্ষন করে চলছে,, রিদের জন্য মায়ার চারপাশেও ঘেঁষতে পারছে না আর না পারছে মায়াকে রশিদের সাথে দেখতে,, এই সবকিছু দেখে দূর থেকে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে রাগে গজগজ করতে করতে,,,,
.
রিদ বাড়ির একপাশে দাঁড়িয়ে থেকে আসিফের গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়ে কিছু কথা বলছে, আর খনে খনে মায়ার দিকে তাকাচ্ছে মায়া কোথায় আছে সেটা দেখার জন্য,, রিদের এমন দেখা দেখি পূর্ব মধ্যে দিয়েই একটা তিন বছরের বাচ্চা ছেলে রিদের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে রিদের আংগুল ধরে টেনে নিচের দিকে ইশারা করে,,, হঠাৎ করে রিদের আংগুলে কারও স্পর্শ পেয়ে রিদ মূহুর্তে চমকে উঠে দ্রুত নিচের দিকে তাকায়,, পরে চোখের সামনে একটা তিন বছরের বাচ্চা ছেলেকে দেখতে পেয়ে ভ্রুঁ কুচকে তাকায় ওর দিকে,, রিদকে ভ্রুঁ কুচকে তাকাতে লই আসিফও সাথে সাথে নিচে বাচ্চাটির দিকে তাকায়,, পরে রিদ আসিফকে ইশারা করতেই আসিফ দ্রুততার সঙ্গে বাচ্চাটি সামনে হাটু গেড়ে বসে পরে বাচ্চাটি মাথায় নিজের আদুরে একহাত বলিয়ে দিয়ে আদুরে সহিত বলে উঠে…….
.
—” কি ব্যাপার বেবি সোনা কি চাই এখানে,, আম্মু কি হারিয়ে ফেলেছো নাকি হুমমম…..
.
আসিফের এমন কথায় বাচ্চাটি মাথা নাড়িয়ে না করে বলে উঠে………
.
—” না তামি আম্মু তাবো না,, এততা (একটা) আংতেল এতানে এ(খানে) আসতে তয়ছে (কয়ছে)
.
বাচ্চাটির এমন তোনধানো কথায় আর হাত দিয়ে পিছন দিকে ইশারা করতেই মূহুর্তে রিদ ও আসিফ কপাল কুচকে সেদিকে তাকায়,, কিন্তু বাচ্চাটি দেখানো জায়গায় কাউকে দেখতে না পেয়ে আবারও আরিফ আদুরে সহিত বলে উঠে………
.
—” তোমাকে কে পাঠিয়েছে বেবি সোনা, আমরা তো কাউকে দেখতে পারছি না,,,,
.
আসিফের এমন কথায় বাচ্চাটি সাথে সাথে পিছন ফিরে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে আবারও ঘুরে তাকায় আসিফের দিকে করুন দৃষ্টিতে,,,, রিদ কপাল কুচকে বাচ্চাটি দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে নিয়ে দ্রুততা সঙ্গে মায়ার দিকে তাকায় পরে মায়াকে এক পলক দেখে কপাল আসিফকে উদ্দেশ্য করে বলে বাচ্চাটি নাম জিগ্যেস করতে,, আসিফ রিদের কথায় অনুযায়ী বাচ্চাটিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…….
.
—” বেবি সোনা তোমার নাম কি……
.
স্বাভাবিক বগিতে বলে উঠে……
.
—” গোলামের তরের ( ঘরের) গোলাম……
.
বাচ্চাটি এমন কথায় রিদ কপাল কুচকে তাকালেও আসিফ মূহুর্তেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়, কারও নাম কি কখনো ” গোলামের ঘরের গোলাম,, হতে পারে এটা ভেবে আসিফ হতো বাক,,আসিফ এমন আবাক হওয়া মধ্যে দিয়েই পিছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠে…….
.
—” আসলে গোলাম রাব্বানী ওর নাম,, আমার ছেলে আর ওহ বাচ্চা মানুষ ঠিক করে কথা বলতে না পারায় সবাইকে নিজের নামটা এই ভাবেই বলে ফেলে গোলামের ঘরের গোলাম কিছু মনে করবেন না প্লিজ……
.
মহিলাটি কথা গুলো শেষ করেই বাচ্চাটিকে নিয়ে চলে যায় আর পিছন থেকে আসিফ হা হয়ে তাকিয়ে থাকে তাদের যাওয়ার দিকে,, বাচ্চাটি কেন এখানে এসেছিল আর কি বলে গেল কিছুই বুঝতে পারছে না আসিফ সবকিছু যেন আসিফের মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে,, যার কিছুই ধরতে পারিনি আসিফ,,, আসিফ এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে রিদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……
.
—” ভাই বাচ্চা আমাদের কি ইশারা করছিল কিছুই তো বুঝতে পারছি না আম……….
.
আসিফের বাকি কথা গুলো শেষ করার আগেই রিদ বলে উঠে…….
.
—” বাচ্চাটি আমাদের কাছে ছোট একটা মেসেজ ছিল,, আজানা কেউ আমাকে তার উপস্থিত ইশারা করে গেছে……
.
রিদের তীক্ষ্ণ মাইন্ডের কথা গুলো শুনে মূহুর্তে আসিফ চমকে উঠে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে রিদের দিকে,, রিদ যে কতটা মাস্টার মাইন্ডে তা আসিফ হারে হারে বুঝতে পারে,, কিছু করার আগেই রিদের চোখে সবকিছু ধরা পরে যায়,, রিদ আট দশটা স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে একটু ভিন্ন তা এতদিনে আসিফ তা বুঝে গেছে……….
.
চলবে…………