দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা) #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৯৬

0
707

#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৯৬

.
🍂
সন্ধ্যা সাতটা ছুঁই ছুঁই, খান বাড়িতে বেশ তুমুল আয়োজনে সাথে সবাই উপস্থিত ড্রয়িংরুমে, শুধু উপস্থিত বললে ভুল হবে পরিবারের সবাই রয়েছে এখানে মুলত মায়াও রিদের বিয়ে জন্য,, আজ সবাইকে সুইজারল্যান্ড যেতে হবে কারণ বিয়ের আর চার দিন বাকি আছে আর কাল থেকে যেহেতু সব ফ্যাংশন শুরু হবে তাই আজ রাতেই সবাইকে সুইজারল্যান্ডে উপস্থিত থাকতে হবে রিদের আদেশ অনুযায়ী, সাথে মায়াও অন্যদের কারও শপিং জন্য এতটা অস্থির না হতে বলা হয়েছে রিদ কারণ রিদ নিজেই ডিজাইনার দিয়ে সব ব্যবস্হা করে রেখেছে আগের থেকে এখন যার যেমনটা ভালো লাগবে সে সেই ভাবেই সব কিছু পাবে ইচ্ছা মতো, রিদের এমন কথায় কারও আপাতত বিয়ে শপিং নিয়ে কোনো রকম মাথা ব্যাথা নেই, তাই আজ সবাই সকাল দিকেই খান বাড়িতে উপস্থিত হয়েছে।

.

নিহা ও তার শশুর বাড়ির লোক উপস্থিত, ফিহা, আরিফ ও মায়ার মা, বাবা , বোন দুলাভাই সহ পরিবার উপস্থিত, খান বাড়ির সবাই সাথে সাথে কাজের লোক গুলোকেও রিদের বিয়ে জন্য নেওয়া হচ্ছে মজা করার জন্য,, সবাই রিদের পারসোনাল প্লেনে করেই যাবে বাংলাদেশ থেকে, আর সবাইকে গ্লাইড করার জন্য আশিক সহ ত্রিশ জন বডিগার্ড দেওয়া হয়েছে পরিবারের সবার সাথে, আর রিদের সাথে যাবে হেনা খাঁন, আরাফ খান, ও মায়া আর ওদের গ্লাইড করার জন্য থাকবে আসিফ ও বাকি দশজন বডিগার্ড, এই মূহুর্তে সবাই উপস্থিত থাকলেও রিদ সবার মাঝে নেই, রিদ কোথায় আছে সেটা আসিফ নিজেও বলতে পারছে না কারণ রিদ কাউকে কিছু বলে কোনো কিছু করে না, তবে আসিফ রিদের আদেশ অনুযায়ী পরিবারের সকল সদস্যকে চল্লিশ জন্য বডিগার্ড দিয়ে রিদের বাংলোতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যেখান থেকে সবাইকে রিদের পারসোনাল প্লেনে করে সুইজারল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হবে, হেনা খাঁন মায়াকে একহাতে শক্ত করে ধরে রেখে যারা খান বাড়িতে থাকবে বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য তাদের সবাইকে সবাটা বুঝিয়ে দিচ্ছে ভালো করে কোনটা কিভাবে করবে, এতে করে মায়া চুপ চাপ দাদীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকে সবটা পযবেক্ষন করতে থাকে নীরবে, মায়ার এমন দেখাদেখির মধ্যেই হঠাৎ করে চোখ যায় এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা আয়নে দিকে, আয়ন নিশ্চুপে মায়ার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কাতর চোখে, আয়নের কষ্ট জারজরিত হওয়া বুকাটা হঠাৎ করেই হা হা করে উঠে মায়ার বাঁকা চোখের চাহনি সাথে সাথে ঠোঁট মিষ্টি হাসির রেখা দেখে যাহ আয়নের দিকে নিক্ষেপ করে রেখেছে মায়া,

.

আর মায়ার এমন মিষ্টিবাসি হাসি দেখে মূহুর্তে আয়নকে শতবার ঘায়েল করে ক্ষণে ক্ষণে, মায়ার আয়নকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে খুশিতে চকচক করতে করতে ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে উঠে, আয়ন বিঘত কয়েক দিন যাবত ঠিক করে মায়ার সামনে আসে না, কথা বলে না, মায়াকে এড়িয়ে চলে আর আজ হঠাৎ করে আয়নকে মায়ার দিকে তাকাতে দেখে মায়ার খুশি হওয়া ধাপটা যেন আরও একটু বেশি হয়ে যায়। আর সেই হাসিটা ঠোঁটের ওপর ঝুলিয়ে আয়নের দিকে তাকাতেই আয়ন মূহুর্তেই নিজের চোখ সরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকায়, এতে করে মায়ার মন ক্ষন্ন হয়, গাল ফুলিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আয়নের পিছন থেকে, আয়নের হঠাৎ করে চুপ হয়ে যাওয়াটা মায়ার মোটেও ভালো লাগছে না, কেন যেন মেনে নিতে পারছে না, মায়ার এমন গাল ফুলিয়ে রাখার মাঝেই পরিবারের সদস্যরা একে একে সবাই ড্রয়িংরুমের মেইন দরজা ধরে বাহিরের বের হচ্ছে গাড়িতে ওঠার জন্য, একে একে সবাই বের হতেই হেনা খাঁন মায়ার হাত চেপে ধরে মেইন দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় মায়া দরজা বাহিরের মায়ার পা রাখতেই খুচট খেয়ে উল্টিয়ে উপুড় হয়ে পরে যায় দরজার বাহিরের, মায়ার পরার সাথে সাথে হেনা খাঁন উত্তেজনার সাথে চিল্লিয়ে উঠে সাথে সাথে মায়াকে আঁকড়ে ধরে নিজের সাথে, পাশে থেকে আয়নও দ্রততার সঙ্গে মায়ার হাত চেপে ধরে উঠে বসায়, বাকিরা সবাই গাড়িতে উঠে যাওয়ার কারণে হেনা খাঁনের চিৎকার তেমন কেউ শুনতে পাইনি পিছনে মানুষ গুলো ছাড়া, আরাফ খান, আয়ন ও আসিফ, হেনার খানের সাথেই ছিল বলে শুনতে পাই ও এগিয়ে ও আসে, আর মায়াকে নিয়ে শুভ কাজে যাওয়ার সময় হুট করে দরজা সামনে এই ভাবে মায়ার পড়ে যাওয়াটা মোটেও স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না হেনা খাঁনে তিনি বেশ উত্তেজনা সাথে মায়াকে নিজের বুকে আঁকলি রাখে চোখ টলমলে অবস্থায় কেন যেন এটা মেনে নিতে পারছে না, বের হতে দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে হেনা খাঁনের কথায় আরাফ খান তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে হেনা খাঁনকে শান্তনা দিয়ে বলে মায়ার তেমন কিছু হয়নি সব ঠিক আছে চিন্তা না করতে, এটা বলে হেনা খাঁন ও মায়াকে নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই চোখে পড়ল মায়ার কপালে পাশটা হালকা কাটা জায়গায়টা, হেনা খাঁন মায়াকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে গন্তব্যে উদ্দেশ্য কিন্তু হেনা খাঁনের মনটা অস্থিরতায় ভুগছে মায়াকে নিয়ে কিছুতেই স্থির করতে পারছে না এই ভাবে পড়ে যাওয়াটা নিয়ে।

.

রিদের বাংলোতে এসে পৌছায় সবাই, টানা ত্রিশ মিনিট জার্নি করার পর এখন সবাই রেস্ট নিচ্ছে একেক জন্য একেক রুমে বসে, রিদ আগের থেকেই এখানে উপস্থিত ছিল বলে কারও কোনো সমস্যা হয়নি, আর কেউ মায়ার অস্বাভাবিক ভাবে পড়ে যাওয়াটা রিদকে কিছু বলেনি আর বললেই বা কি হবে সেটা ভেবে নিয়ে, মায়া চঞ্চলতা সাথে এদিক থেকে ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে আজ যেন মায়ার আনন্দ আকাশ ছুইছে বারবার, নিজের বিয়ে এতো দিন পর সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে হতে চলছে মায়ার জীবনে, নিজের স্বপ্নটা পূরণ হতে চলছে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে, নিজের মানুষটাকে নিজের করে পেতে চলছে সেই আনন্দ মায়া আজ নতুন করে মেতে উঠেছে, মায়ার এমন আনন্দ রিদ সরল চোখে দেখে নিয়ে কিছু না বললেও আয়ন দূর থেকে মায়াকে বার বার দেখছে এক দৃষ্টিতে ।

.

মায়ার স্বপ্ন সাজাতে গিয়ে নিজের স্বপ্নটা শেষ করতে হয়েছে আয়নকে, আর সেই কষ্টে আয়নের চোখের জল পরছে অঝোর ধারায়, কাকে দেখাবেই আয়নের এই বুক ভরা ব্যাথ্যা, কাকে শুনাবে আয়নের না বলার হাজারো ব্যাথ্যা, নিজের এমন চোখ জলের সাথে নিজেকে আড়ালে করে ফেলে সবার অগোচরে কেউ দেখার আগে, সবার কাছ থেকে আয়ন নিজেকে লুকাতে পারলেও রিদের চোখে ঠিকই ধরা পরে যায় সবকিছু, কিন্তু তারপরও রিদ চুপ করে সবটা দেখে যায়, এই মূহুর্তে আয়নকে কিছু বলার থেকে না বলাটাই বেস্ট মনে হচ্ছে রিদের কাছে, কারণ যার কষ্ট তাঁকেই একা বয়ে নেওয়া উত্তম ।

.
রিদের এমন চিন্তা ভাবনায় মাঝে হঠাৎ করে মায়া রিদের সামনে এসে দাঁড়ায়, মায়াকে রিদের সামনে দাঁড়াতে দেখে রিদ চোখ তুলে তাকাতেই মায়া স্বাভাবিক বগিতে বলে উঠে…….

.

—” আমি আইসক্রিম খাবো । আমাকে কেউ ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম খেতে দিচ্ছে না কেন….

.

মায়ার অসময়ে অস্বাভাবিক ভাবে আইসক্রিম খাওয়াটা মোটেও পছন্দ হয়নি রিদের তাই মায়াকে স্পষ্ট ভাষায় রিদ নিষিদ্ধ সুরে বলে উঠে…..

.

—” আমি না করেছি তাই, এই ঠান্ডায় কোনো আইসক্রিম খাওয়া চলবে না তোমার, কথা না বাড়িয়ে রেস্ট নাও রুমে গিয়ে তিন ঘন্টা প্লেনে উঠতে হবে তোমার যাও……..

.

রিদের এমন ধমক সুরে কথা শুনে মূহুর্তে মায়া মন খারাপ করে রিদকে একটা ভ্যাংচি কেটে চলে যায় রিদের সামনে থেকে, মায়া যেতেই রিদ নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে, আর মায়া ঘুরতে ঘুরতে নিজের রুমে যাওয়ার সময় একটা কাজে মেয়ে মায়ার সামনে এসে দাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে থেকে আস্তে করে বলে উঠে……

.

—” ম্যাম সার আপনাকে আইসক্রিম খেতে দিয়েছে না বলে কি হয়েছে আমি আপনাকে আইসক্রিম খেতে দিব, কিন্তু সেটা খাওয়ার জন্য আমার সাথে আপনার বাহিরের যেতে হবে, সেখানে গেলে আপনি চুপিচুপি অনেক গুলা আইসক্রিম খেতে আবার চলেও আসতে পারবেন কেউ দেখবে না। কিহ ম্যাম যাবেন আমার সাথে….?

.

পরিচিত সার্বেন্ড হওয়ায় মায়া আর অত শত না ভেবে খুশি হয়ে রাজি হয়ে যায় কাজের মেয়েটার সাথে যেতে, আর কাজের মেয়েটা ও বিঘত দুইবছর ধরে রিদের বাসায় বিশ্বস্ততা সাথে কাজ করায় মায়াও যেতে আর আপত্তি করেনি, তাই কাজের মেয়েটির সাথে চুপিচুপি বাংলো বাড়ির পিছনে দরজার ধরে বাহিরের চলে যায় একা একা রিদ ও বাকি সবার চোখে পাঁকি দিয়ে, রিদ ব্যস্ততা সহিত কাজ করার মায়ার খবর নিতে পারিনি কোথায় আছে মায়া সেটা দেখার,, আর রিদের সেই ব্যস্ততার সুযোগটা কাজে লাগিয়ে মায়া আইসক্রিম খেতে চলে যায় কাজের মেয়ের সাথে, অন্ধকারাচন্ন জনশূন্যহীন রাস্তা ধরে বেশ সময় ধরে মায়া ও কাজের মেয়েটি হাটতে হাটতে আইসক্রিমের জন্য, হাটতে হাটতে মধ্যে রাস্তার মাঝে এসেই হঠাৎ করে কাজের মেয়েটি মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……..

.

—” ম্যাম আপনি আর হাটতে পারবেন না মনে হচ্ছে৷ ক্লান্ত হয়ে পরেছেন আপনি,, আচ্ছা একটা কাজ করুণ আপনি এখানেই একটু স্লাইড করে দাড়ান আমি এই একটু খানিকটা সামনে এগিয়ে আপনার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আচ্ছি কেমন….

.

কাজের মেয়েটি এমন কথায় মায়া চারপাশে এক পলক তাকিয়ে থেকে মূহুর্তেই ভয়ে চুপসে যায় এতক্ষণ মেয়েটি সাথে থাকায় ভয়টা না লাগলেও এখন যেন চারপাশে তাকিয়ে হঠাৎ করেই ভয়টা জেঁকে বসে নিজের মধ্যে, গাঁ শিউরে ওঠার মতো পরিবেশ দেখে মূহুর্তে মায়ার কাজের মেয়েটি হাত শক্ত করে চেপে ধরে চারপাশে তাকাতে তাকাতে ভিতু কণ্ঠে বলে উঠে…….

.

—” আমি কোনো আইসক্রিম খাবো না রহিমা খালা (কাজের মেয়েটি নাম) আপনি আমাকে বাসায় নিয়ে চলুন আমার কেন যেন খুব ভয় করছে……

.

মায়াকে এমন করতে দেখে কাজের মেয়েটি দ্রততা সঙ্গে নিজের হাতটা মায়ার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে জোর পূবক হাসির চেষ্টা করে মায়াকে ভুলবাল বুঝিয়ে বলে উঠে……..

.

—” ম্যাম কিছু হবে না আপনি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছেন আমি আছি তো, আপনি এই একটু দাড়ান আমি এক্ষণি আইসক্রিম নিয়ে আসচ্ছি….

.

কথাটা বলেই রহিমা মায়াকে কিছু বলতে না দিয়ে উল্টো ঘুরে দৌড় লাগায় সামনে রাস্তা ধরে মায়া কিছু বলতে বলতে অন্ধকার হারিয়ে যায় কাজের মেয়েটি,, থতমত পরিবেশে কোনো মানুষ জন না দেখে কান্নারত অবস্থায় চারপাশে তাকাতে তাকাতে পিছন ঘুরে বাসায় যেতে নিবে তার আগেই আবারও চমকে উঠে চারপাশে ভালো করে তাকাতেই কারণ মায়া চার রাস্তা মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে, কোন রাস্তা ধরে এখানে এসেছে সেটাও জানা নেই মায়ার এমন বাজে পরিবেশে কিছু বুঝতে না পেরে রহিমাকে ডাকতে ডাকতে কান্ত হয়ে জায়গায় বসে হাটু গেড়ে, মায়ার সারা শরীর কেঁপে উঠছে ঠান্ডায় আর ভয়ে, এমনতর অবস্থা মায়া হাটু গেড়ে রাস্তয় বসে পড়ে নিজের দুহাত নিজের মুখ ডেকে নিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে,, আজ যেন মায়ার কান্নাটাও মায়ার কথা শুনতে নারাজ, ভয়ে শব্দ করে কান্নাও আসছে না গলা দিয়ে……..

.

(রিদ কিহ পারবে তার বউকে বাঁচাতে নাকি অন্ধকার তলিয়ে যাবে রিদের ভালোবাসার রিত)

.

.

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here