#হিয়ার_মাঝে ৫১.
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️
লোকে লোকারন্য হলের ভেতরকার পরিবেশ। কিঞ্চিৎ ফাঁকফোকর নেই হাত মেলে রাখার। দমবন্ধ হবার উপক্রম প্রায়। অথচ নুবাহ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি এখনো শূন্য। হলুদের সাজে বউ রূপে মাত্রই যাকে দেখল আদৌ সেটা স্বপ্ন না সত্যি ছিল! সে এখনো দ্বিধান্বিত? লিমার চোখেমুখেও অদ্ভুত চাউনি। একবার তার দিকে আরেকবার সদ্য নববধূবেশে আসা বউয়ের দিকে। নববধূর অবশ্য হুঁশ নেই। আশেপাশে চোখ মেলে তাকানোর সুযোগ নেই তার কাছে। ক্যামেরার লাইট-লেন্স তার দিকেই তাক করা। দ্রুত কদমে ফুলেল আসনে পৌঁছাল সে। তার মধ্যিখানে হাস্যোজ্জ্বল মুখে চুপটি হয়ে বসে আছে। তবে নুবাহর ভাবনার ব্যবচ্ছেদ ঘটলো সহসাই ভেসে আসা কারো বিস্ময়কর মোলায়েম সুরে।
‘নিশাত, তুমি এখানে।’
তড়িৎ চকিতে তাকালো নুবাহ। সামনে সুঠাম গড়নের এক সুদর্শন পুরুষ। যুবকের চোখেমুখে হারানো জিনিস খুঁজে পাওয়ার মতই উচ্ছ্বাস। তাই তো গলার স্বরও বেশ উচ্ছ্বসিত শোনা গেল। গাঢ় নীলরঙা পাঞ্জাবী পরিহিত সেই যুবক। দু’চোখে তার কালো সানগ্লাস মোড়ানো। তবুও নুবাহর কিঞ্চিৎ সময়ক্ষেপণ হয়নি তাকে চিনে নিতে। ঈষৎ কাঁপাসুরে বলে উঠল,
‘তমাল ভাইয়া, আপনি।’
নিজের পায়ের কদম বাড়িয়ে নুবাহর আরও নিকটবর্তী হল তমাল। ডানহাত বাড়িয়ে নুবাহর মাথায় আলতো করে ছুঁতে গিয়ে তৎক্ষণাৎ বাঁধার সম্মুখীন হল। নুবাহ নিজের মাথা বাঁকালো দ্রুতই। নিজের ডানহাত উঠিয়ে বাঁধ সাধল হুট করে।
‘ভাইয়া, আমি বড়ো হয়ে গেছি এখন। মাথায় হাত দিবেন না আর।’
তমাল ফের বিস্মিত হল। এ কোন নিশাতকে দেখছে। ছোট্ট নিশাত সত্যিই বড়ো হয়ে গেছে। অথচ এই ছোট্ট নিশাতকে একদিন মনপ্রাণ দিয়ে নিজের করতে চেয়েছিল। তার জল্লাদ বাপ তার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে অজস্র বিষবাক্যে ছুঁড়ে। কি অপরাধ ছিল তার? মেয়েটাকে ভালোবাসতো বলে। সে’তো চেয়েছে মেয়েটার সারাজীবনের সঙ্গী হতে। নিজের সুশীতল ছায়ায় তাকে আশ্রয় দিতে। বদ নজরের কালো ছায়া থেকে বাঁচাতেও ছিল বদ্ধপরিকর। কিন্তু কি হল! অজস্র অপবাদে জর্জরিত করে মেয়েটাকে নিয়ে উধাও হয়ে গেল রাতের আঁধারেই। কত শতবার সে খুঁজে বেড়িয়েছে এই ছোট্ট নিশাতকে। নিজের নিংড়ানো অনুভূতিও প্রকাশ করা হয়নি তার কাছে, না পেরেছে কখনো ভালোবাসি বলতে। তার আগেই মেয়ে’টা হারিয়ে গেল অজানা এক শহরে। নীরবে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল তার বুক ছিঁড়ে। ভালোবেসেও ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। এ কেমন সর্বনাশা মর্মদহন! ছোট্ট এক বাক্যে আওড়ালো সে।
‘কেমন আছো নিশি? ঠিক কতদিন পর, কোথায় ছিলে এতদিন?’
মুখ জুড়ে নুবাহর অস্বস্তি। তার জন্যই তমাল ভাইয়ের কত বদনাম রটল। অথচো লোকটার কোনো দোষ ছিল না। সে না পারলো নিজেকে বাঁচাতে আর না পারলো তমাল ভাইকে বাঁচাতে। দিনশেষে দু’জনই কলঙ্কিত হল। তমালের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারল না। অবনত মস্তকে মিনমিন করল সে। জবাব দিল কিঞ্চিৎ অস্পষ্টসুরে।
‘ভালো, আপনি ভালো আছেন ভাইয়া।’
‘যেমন’টা তোমার বাবা রেখে গেছে। ততটাই ভালো আছি।’
এই উত্তরটার মানে সে বুঝল না। ফের বলে উঠল, ‘মানে, বুঝলাম না ভাইয়া।’
‘কি হবে আর বুঝে! সেদিন কি আর ফিরে আসবে আমার?’
‘ওহহ।’ ছোট্ট বাক্য বলেই চুপ হয়ে গেল নুবাহ।
সে বুঝতে পারল তার বাবা সেদিন মানুষের কটুবাক্য শুনে তমাকে বেশ অপমান করেছে। হয়তো সেই রেশ ধরে তমালও এর সম্মুখীন হয়েছে। তাকেও অপমানিত করেছে চরম ভাবে। তার বাবার করা কীর্তিকলাপের জন্য আজ সে কতটা লজ্জিত। তার বাল্যকালের বন্ধুত্বও ভেঙ্গে গিয়েছে। শত আফসোস করলেও সেই দাগের ক্ষত সে মোছাতে পারবে না। তাই তো আজও গুমরে মরছে। নীরবতার আচ্ছন্ন নুবাহ। তার এহেন নীরবতায় তমাল ফের অবাক হল।
‘কি ব্যাপার নিশি! কথা বল না কেন?’
‘হুমম।’
‘কোথায় ছিলে এতদিন?
‘চট্রগ্রাম।’
‘চট্রগ্রাম! তাহলে এখানে কিভাবে এলে?’
নুবাহর নিজের সম্পর্কের কথা আসতেই আমতা আমতা করল, ‘আসলে তার বন্ধু, কাজিনের বিয়ে,,।’
‘কার বন্ধু কাজিন?’
‘আমার স্বামীর।’
বজ্রপাত পতিত হল তমালের মস্তিষ্কে। মুহুর্তে হতাশার করুণ ছাপ ফুটে উঠল চোখেমুখে। কিন্তু দৃষ্টি তার স্বাভাবিক রেখে নুবাহতে নিবদ্ধ হল তখন। অতীতের কথা মনে করে মলিন মুখে বলল,
‘জানো নিশি, ডাক্তার হয়েছি আজ দু’বছর। অথচ তোমাকে তিনবছর আগেই নিজের করে চেয়েছিলাম। শুধু সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। তোমার বাবাকে প্রস্তাবও দিয়েছিলাম সেদিন। তোমায় নিয়ে দুর্নাম রটানো আমার পছন্দ হয়নি। কিন্তু তোমার বাবা তো উল্টো আমাকেই কলঙ্কিত করল। আমার চরিত্রে সমস্যা আছে বলল একবাক্যেই। কোনো বাছ-বিচারহীনভাবে আমাকে প্রত্যাখ্যান করল। কিন্তু কেন? আমি কি সত্যিই খারাপ ছিলাম, বলো?’
সহসাই নুবাহ দৃষ্টি ঘুরালো তমালের দিকে। নিজের শরীর মন দু’টো যেনো অসাড়তায় ডুবে যাচ্ছে। নিজের কানকেও বিশ্বাস করাতে পাচ্ছে না। তমালকে সে নিজের ভাইয়ের নজরে দেখত। আর সে ভাই তাকে অন্যরূপে ভাবত। ঘৃণায় রি রি করছে পুরো শরীর। ছিঃ! কি জঘন্য লাগছে এই বাক্যে। ফোঁস করে জবাব দিল,
‘কিন্তু আমি আপনাকে সবসময় ভাই ভাবতাম। তমার বড় ভাই আছে অথচ আমার বড় ভাই নেই। এটা আমাকে বেশ পোড়াতো। মাঝেমধ্যে ওকে আমি হিংসা করতাম এর জন্য। কিন্তু কখনো ভাবিনি আপনার মনে আমার জন্য অন্যকিছু ছিল। নিজের প্রতি ভীষণ ঘৃণা হচ্ছে এখন।’
তমাল ভাবলেশহীন। জবাবে বলল, ‘বিয়ে হয়েছে কতদিন?
‘কার?’
‘তোমার?’
‘১ মাস ১০ দিন।’
‘তাহলে খুব বেশি দেরি হয়নি। তোমার স্বামীকে ছেড়ে চলে এসো আমার কাছে। আমি তোমাকে আবার বিয়ে করব। আমরা দু’জনে নতুন করে সংসার সাজাবো।’
নুবাহর চোয়াল শক্ত হল মুহুর্তে। গলার ভেতর অজস্র গালি জমাট হয়ে আছে। তবে পঁচা শামুকে পা কাঁটতে চাইলো না। রক্তিম চোখে তাকিয়ে মুখে বিদ্রুপের সুর তুলল,
‘আগে একজন বিবাহিত নারীর সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাই শিখে আসুন। পারলে নিজেকে পাগলের ডাঃ দেখান। তারপর কথা বলতে আসবেন, আসছি ভাইজান।’
পাশে দাঁড়ানো লিমা ফের একবার ঈর্ষান্বিত হল। বিয়ে হয়েও এখনো সাবেক প্রেমিকের সাথে ভাব বজায় রেখেছে। অথচ তাকে বলে সে নাকি বেহায়া, চরিত্রহীন। কিন্তু নিজের চরিত্রের দিকে তার খেয়ালই নেই। তার বেশ জানতে ইচ্ছে হল নুবাহর স্বামী সম্পর্কে। কিভাবে এই বউ নিয়ে সংসার করছে।
____
সন্ধ্যো আটটার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করা হল। নুবাহ দোতলায় টেবিলের এককোণে বসে আছে। তমালের বলা প্রতিটি বাক্যেই বিষের মত লাগছে তার কাছে। কি যে বিশ্রী এক অনুভূতি হচ্ছে। সেই সন্ধ্যোর পূর্বে হলে প্রবেশ করেছে অথচো একটা বার নিজের স্বামীকে দেখল না। জিতুকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তার। একটা বার জড়িয়ে ধরতে মন চাইছে। কিন্তু কোথায় সেই? এখনো খুঁজে পেল না। তিতকুটে মন নিয়ে নিচে নামল। কিন্তু এখনো সে তমার মুখোমুখি হয়নি। শুধু দূর থেকে দেখে যাচ্ছে তাকে। কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। সে আগের চেয়েও সুন্দরী হয়ে গেছে। জিমানের সাথেও বেশ মানিয়েছে। দু’জন বসে একে অপরের সাথে কত সহজভাবে কথা বলছে। তা দেখেই বড্ড আফসোস জাগলো তার। ইশশ! তার আর জিতুর এমন দিন কেনো আসেনি? বিয়েতে তারাও যদি এমন সহজ হয়ে বসত। একে অপরের সাথে মত বিনিময় করত, তবেই না বিয়ে’টা হত স্মরণীয় স্মৃতির একটা। কিন্তু সে এখনো জিতুর সাথে সহজ হতে পারেনি। না পেরেছে এখনো ঠিকভাবে কথা বলতে। অবশ্য তারই কি দোষ? জিতুই তো সে সুযোগ তাকে দেয়নি। দূরত্ব রেখেছিল হাজার ক্রোশের।
নিচতলায় টেবিলের এককোণে বসল সে। হুট করে ঝলমলে আলো ভরা হল মুহুর্তে ঘন আঁধারে তলিয়ে গেল। সে কিঞ্চিৎ ভয় পেল। কিন্তু কয়েক মুহুর্ত বাদেই আলো জ্বলে উঠল বর-বউয়ের পাশে রাখা মঞ্চের মাঝে। ক্ষীন আলোয় কিছু নর-নারীর ছায়া স্পষ্টই ফুটে উঠল। হলুদ সবুজের মিশেলে লেহেঙ্গা পরিহিত হৃদি। তার পাশে দাঁড়ানো সোনালী রঙা পাঞ্জাবী পরিহিত চিন্ময়। অবাকের চরম পর্যায়ে সে। হৃদি আর চিন্ময় মঞ্চে কি করছে। তাদের সাথে কিছু মেয়ে আর ছেলেও আছে। আচমকাই মিউজিক বাজানো হল।
‘আসসালামু আলাইকুম বেয়ানসাব’
গানের সাথে সুর মিলিয়ে চিন্ময় মুখের সামনে কিঞ্চিৎ হাত রেখে সালামের ভঙ্গিতে গেয়ে উঠল।
পরের লাইনে বলা হল
‘ওয়াইলাকুম আসসালাম বেয়াইসাব।’ তার সাথে হৃদি সুর মিলিয়ে সেও মুখের সামনে কিঞ্চি হাত রেখে সালামের ভঙ্গিতে জবাব দিল। এভাবে পুরো গানে তাদের পারফর্ম চলল।
‘কেমন আছেন বেয়ানসাব’।
হৃদি জবাব দিল, ‘বুকে বড় জ্বালা।’
ফের চিন্ময় গেয়ে উঠলো, কিসের জ্বালা বেয়ানসাব?’
‘বুকে বড় জ্বালা।
‘কিসের জ্বালা বেয়ানসাব?’
‘নয়া প্রেমের জ্বালা।’
চিন্ময় ফের সুর মিলিয়ে গেয়ে উঠলো, ‘এ জ্বালাতে জ্বলে নাই কোন শালী-শালা।’
দু’জনেই সেই গানে পারফর্ম করল বেশ দারুণভাবে। করতালিতে মুখরিত হল। নুবাহ ভেবেই অবাক হল। এজন্য হৃদিসহ তার ভাই-বোন সকালেই হাজির হয়েছে। কিন্তু তাকে বলেনি। জিতুও তাকে একবারও বললো না। শুধু বললো কাজ আছে। ফের মন খারাপ হল। এরপর যাদের দেখল তাতে অবশ্য হাসি পেল বেশ। হলের আলো নিভে জ্বলে উঠলো। হৃদি-চিন্ময় যেতেই আগমন ঘটল সানি-রকির।
সানির গায়েও সোনালী রঙা পাঞ্জাবী। নিজের কাঁধের অংশ এক হাত দিয়ে চেপে ধরে তা ঝাঁকালো আর মুখে সুর মিলিয়ে গেয়ে উঠল,
‘নারে না না,,,,
আর তো পারি না,,
দিন আমার যাচ্ছে বরই মিষ্টি যন্ত্রণায়
আমি তো ফি-তেই নাজেহাল
এক ললনা করেছে ইন্দ্রজাল_
কে সামলায় আমায় এ অবস্থায়।
এরপরের লাইনে রকি এল। সেও সানির মতই একই ভঙ্গিতে এককাঁধ ঝাঁকিয়ে গানের সাথে সুর মিলালো,
‘পড়েছি ভালোবাসায়
আর কে আমাকে পাই,
আমিও এবার পার্কে বেড়াবো
কখনও বা সিনেমায়।’
সানি রকির পারফর্ম শেষ হতেই আবারও আলো নিভে গেল। করতালিতে মুখরিত হল আবার। দু’জনের পারফর্মও বেশ নজর কাড়ল সবার। ফের আলো জ্বলতেই দেখা গেল মাক্রোফোন হাতে লরিন সিমি দাঁড়ানো। তাদের দু’জনের পরনেও হলুদ রঙা লেহেঙ্গা। পাশে গীটারের স্বল্প মিউজিক। দু’জনেই খালি গলায় গান গেয়ে উঠল।
‘লা,, লা,, লা,, লা,, লা,,,
যদি বারে বারে একই সুরে
প্রেম তোমায় কাঁদায়
তবে প্রেমিকা কোথায় আর
প্রেমই বা কোথায়
যদি দিশেহারা ইশারাতে
প্রেমই ডেকে যায়
তবে ইশারা কোথায় আর আশারা কোথায়।’
তাদের পারফর্ম শেষ হতেই মঞ্চে আগমন ঘটল এক জুটির। সঙ্গে কিছু ছেলে-মেয়েও আছে। হলুদ রঙা লেহেঙ্গা পরিহিত জুঁই। তার সাথে আছে আরও একজন মানুষ। জুঁই তাকে উদ্দেশ্য করে নিজের ভঙ্গিতে গেয়ে উঠল,
‘হাত’টা ধরেন না
ভাব নিয়েন না
কে-নো চোখের ভাষা বুঝেন না
জ্বালা দিয়েন না
দূরে যাইয়েন না
মইরা গেলে আমায় খুঁইজে পা-ইবেন না
ওরে কালাচাঁন
তোমার লাগি মন করে আনচান
ওরে কালাচাঁন
একখান বাটার পান খাইয়া যান।’
হাতে একটা গামছা বেঁধে দু’হাতে ঘুরিয়ে নেচে পরের মিউজিকে মুবিন সুর মিলালো।
‘আগাগোড়া মেকাপ কইরা দেখাও তুমি ডং
তোমার পান তুমি খাও ঠোঁটে লাগাও রঙ
তুমি অনেক ক্রেজি
তোমার নাটক বুঝি
আয় আয় তিতি কইরা ময়না পাখি খুঁজি
মন আমার বোকাসোকা
পোলা বোকা না,
বাবু খাইছেন বলা আমি
সেই বাবু খোকা না।’
এদের পারফর্ম শেষ হতেই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ল সবার মাঝে। নুবাহ অবাক হল ভীষণ। কি দারুণ লাগছিল জুঁই আর মুবিনকে। তার তো ভীষণ ভালো লেগেছে এদের জুটি। এরপরে অবশ্য কে আসবে সেই ভাবনায় অস্থির সে। জিতু আসবে। দৃষ্টি তার অস্থির হয়ে আছে জিতুকে দেখার জন্য। কিন্তু তার সেই অস্থিরতা বাড়িয়ে যা দেখল চক্ষু চড়কগাছ। জিমান তমা মঞ্চে দাঁড়ানো। দু’জনেই দুজনের দিকে তাকানো। একে অপরের হাত ধরে আছে স্বাভাবিক ভাবেই। তমা মিটমিট করে হাসছে। জিমান তমার হাতে হাত রেখে গেয়ে উঠল,
‘ইচ্ছে করে একটা ঘরে
থাকবো দু’জনায়
গড়বো ভিটে খুশির ইটে
সঙ্গী হবি আয়
কলের পাড়ে জলের ধারা
ঘরের মাঝে তুই
চারটে হাতে খেলনা পাতে
একজোড়া চড়ুই।’
বর-বউয়ের পারফর্ম নুবাহর চোখজোড়ায় খুশির মাঝেও তাকে কেমন অসহায় করে তুলল। হঠাৎই নিজেকে শূন্য মনে হল। হলের লাইট অফ। সে জানে এবারও নতুন কেউ আসবে। তাই অত মাথা ঘামালো না। কিন্তু হুট করে তার মুখের উপর লাইটের তীব্র আলোর প্রতিফলন হল। সে ঘাবড়ে উঠল। এপাশ ওপাশ তাকালো। কিন্তু তীব্র আলোয় পাশে কি হচ্ছে বুঝলো না। তখনি মঞ্চ থেকে সুরেলা এক পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে এল। গানের সুর ভেসে আসতেই হুট করে তার উপরে থাকা আলোর প্রতিফলন বন্ধ হয়ে গেল। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় সেও মঞ্চের দিকে হা’ হয়ে আছে। সেখানে আলো জ্বলতেই সোনালী রঙা পাঞ্জাবী পরিহিত সুঠাম গড়নের সুদর্শন পুরুষকে চোখে পড়ল। তার জিতু বসে আছে মাইক্রোফোনের সামনে। হাতের মাঝে গীটার ধরা। ঠিক নবীন বরণ অনুষ্ঠানে যেমনটা দেখেছিল। চোখদুটো বন্ধ করে তার দু’ঠোঁট নাড়িয়ে গেয়ে উঠল,
‘কোন এক পিছুটান
ভেঙ্গে দিল ব্যবধান
দেখা হয়ে গেল তাই আবার।
মিলেছি দুটিতে, এই আমি কিছুতে
হারাতে দেব না, তোকে আর
আমি, হেরে বসে আছি তোর কাছে
তবে, এই হারে সুখ যে আছে।
তোর ঐ হাসি দেখে যায়
ভেঙ্গে একে একে সব
অভিমানের আয়না।
তুই তো এমন কেউ যার
সাথে কখনো রাগ,
করে থাকা যায় না।
ভালোবাসি বলে প্রতিদিনই চলে,
তোর মনে আসা আর যাওয়া।
থাকতে যদি চাই,
সেখানে সবসময়,
হবে কি তা খুব বেশি চাওয়া।’
নুবাহর দৃষ্টি পড়ল জিতুর দিকে। সে এখনো নিচের দিকে তাকানো। গানের সাথে সাথে গীটারের সুরও বন্ধ হল তার। নুবাহ উচ্ছ্বসিত হল। ইচ্ছে করছিল ছুটে যেতে মঞ্চের মাঝে। জিতুর হাতদুটো আঁকড়ে ধরতে। কিন্তু ইচ্ছেগুলো ইচ্ছে হয়েই থাকল। বলা হল না। জিতুর পারফর্ম শেষ হতেই ছোট্ট ইনশিয়াও চাচ্চুর হাত ধরে নাচ করল। সবার শেষে পুরো বন্ধুমহল মিলে একটা হিন্দি গানে পারফর্ম করল।
চলবে,,,,