#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২৫
__________________
” এই মেয়ে পাগল তুমি? এতো স্পিডে কেউ স্কুটি চালায়?”
” হাম পাগাল নেহি হে ছাইয়া, হামারা দিমাগ খারাপ! ”
প্রাপ্তির কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সায়র। মেয়েটা কথার পৃষ্ঠে এতো কথা কিভাবে পায় বুঝে না সে। মেয়েটা উড়া ধুরা স্কুটি চালাচ্ছে, কখন জানি কোনটাকে পিছনে থেকে মেরে দেয় আল্লাহ মালুম!
“বুঝলেন জামাই! মাঝে মাঝে ভাবি বাংলাদেশে মানুষ আছে আপনার মতো রোহিঙ্গা সহ প্রায় আঠারো কোটি আর পৃথিবীতে আছে প্রায় সাড়ে সাতশ কোটি, সবাই যদি আমাকে এক টাকা করে দিতো তাহলে তো আমি ধনী হয়ে যেতাম! ”
” এই মেয়ে এই, ফাস্ট অফ অল আমি তোমার জামাই না, আমি তোমার সিনিয়র আর দ্বিতীয়ত আমাকে কেন এঙ্গেলে তোমার রোহিঙ্গা মনে হয় হে? আর এমন উদ্ভট চিন্তা তোমার মতো পাগলের মাথা থেকে ই আসবে ”
প্রাপ্তি সামনের দিকে তাকিয়ে ই ঠোঁট টিপে হাসলো,
” জামাই নন তো কিচ্ছে, হতে কতক্ষণ! ধরেন আজকের মতো অন্য কোন দিন কাজি অফিসের ভিতরে নিয়ে বিয়ে করে ফেললাম। আর আপনি তো রোহিঙ্গা ই এতো এঙ্গেল থাকার কি দরকার! ”
সায়র ঠোঁট বেকিয়ে বলল, ” হাহ্ মগের মুল্লুক নাকি! নাকি মামা বাড়ির আবদার! ”
” মামা বাড়ির আবদার না এটা কে বলা হয় শ্বশুর বাড়ির আবদার ”
সায়র বিরক্তি তে কপাল কুঁচকে বলল, ” এই মেয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাও, নয়তো আবার আরেক গাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে দিবা, সাবধানে চালাও ”
প্রাপ্তিও কথা না বাড়িয়ে গাড়ি চালানো শুরু করলো।
________________
মুনতাসিম আপাতত দাঁড়িয়ে আছে চিরচেনা লাইব্রেরির ঠিক সেই বুক শেলফের সামনে হাতে তার বেগুনি রঙের মলাটের সেই বইটা। মুনতাসিম পৃষ্ঠা উল্টালো, ভেসে আসলো সাদা রঙের কাগজ ভাজ করে পড়ে আছে বইয়ের ভেতর।
মুনতাসিম কাগজটা হাতে নিলো, মুচকি হেসে ভাজ খুলতে লাগলো
_________________
এই যে শ্যামসুন্দর পুরুষ,
আপনাকে যত বেশি জানতে চেষ্টা করছি, তত বেশি মনে হচ্ছে কোনো এক অসীম গিরিখাত আমাকে টেনে নিচ্ছে সমুদ্রের অতল গভীরে, ভাবছি এইতো বোধহয় তল পেয়ে গেছি, কিন্তু যা অতল তার তল খোঁজা তো শূন্যের ভেতরে পূর্ণতার খোঁজার মতোই বোকামি। আপনাকে বোঝার জন্য সারাজীবনও যথেষ্ট সময় নয়। যত বুঝতে চাইছি, তত জটিল মনে হচ্ছে, বুঝে উঠা কখনোই সম্ভব হচ্ছে না।
ভাবছি সারাজীবন সময় পাওয়া যাবে আপনারে বুঝতে। আপনাকে নিয়ে বিস্তর কল্পনা হয় আমার।
কল্পনা করতে করতে চোখ খুলে যায়।চোখ খুলে দেখি আপনি নেই। তবুও আপনাকে নিয়ে ভাবি।আপনাকে নিয়ে লিখি অনেক কিছু ।আমার এই লেখা আপনি অব্দি কোনোদিন পৌছায় না। মাঝেমধ্যে মনে হয় কবুতরের পায়ে চিরকুট বেঁধে ছেড়ে দেই আপনার পাণে।আমার মাঝেমধ্যে অনেক কিছুই মনে হয়।বলি না।জমাই।কথা জমে পাহাড় হয়।তীব্র শব্দে পাহাড়কে শোনাই।পাহাড় প্রতিধ্বনি করে ফিরিয়ে দেয় আমাকেই।কথা মেঘ অব্দি পৌছে যায়।আকাশ কালো হয়।অঝোরে বৃষ্টি নামে।বৃষ্টি উৎসর্গিত হয় আপনার নামে। ভালো লাগে আমার।
আপনি আমার অসুখের পরিত্রাণের উপায় বলে দিয়েছেন ঠিক ই কিন্তু আমার মন বলছে এই রোগ থেকে আমার নিস্তার নেই। উহুম! একদম ই নেই। জানেন মশাই! আমার মন কখনো ভুল বলে না।আর..
আজ না হয় থাক। বাকি কথা গুলো আরেকদিন বলব ক্ষন।
ইতি,
আপনার কৃষ্ণবতী..
______________________
মুনতাসিম হাসলো চিঠি টা পড়ে। বার দুয়েক পড়ে ভাজ করে বুক পকেটে রেখে দিলো। প্যান্টের পকেট থেকে কালো রঙের কাগজ বের করে রেখে দিলো ঠিক আগের মতোই।
মুনতাসিম ভেবে পায় না এমন মাথা মোটা মেয়ের মাথা থেকে এত সুন্দর শব্দ, এতো সুন্দর কথা বলার ভঙ্গিমা, এতো গোছানো বাক্য ব্যবহার! আসে কি করে?
লাইব্রেরি থেকে বের হতেই কারো সাথে থাক্কা লেগে খানিকটা পিছিয়ে যায় মুনতাসিম। ধাক্কা টা ঠিক দরজা বরাবর ই হয়েছে। অরিত্রা কপাল ঘষতে ঘষতে সামনে তাকালো। সামনে তাকাতেই চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে আসলো তার। মুনতাসিম মাহমুদ এখানে কি করে? তাও আবার স্টুডেন্ট লাইব্রেরি তে!
মুনতাসিম বুকের উপর হাত ভাজ করে এক ভ্রু উচু করে অরিত্রার দিকে তাকালো। খানিক বাদে বলল,
” তোমার যে কানের সমস্যা সেটা আমি জানতাম! বাট চোখের সমস্যা সেটা জানতাম না। দ্রুত ডাক্তার দেখাও হয়তো আমার কবে জানি মাথার সমস্যা দেখা দেয়। যদিও আমি এটা বলব না যে তোমার মাথা পুরোপুরি ঠিক আছে! তোমার মাথা হাফ তার এমনিতেও কাটা আর নষ্ট! ”
অরিত্রা কপাল থেকে হাত সরিয়ে মুনতাসিমের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো, ” আমার মাথার সমস্যা যদি কখনো দেখা দেয় তো শুধু মাত্র আপনার জন্য ই। এমন হুট হাট রাস্তার মাঝখানে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকলে আমার মতো নিরীহ পথ যাত্রী তো ধাক্কা খাবেই আর বাংলা সিনামায় দেখেন নি? এমন হুট হাট মাথায় ধাক্কা খেয়ে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে অন্য দেশে চলে যেতো। আপনার তো শুক্রিয়া আদায় করা উচিত আমি এখনো সুস্থ সবল, নিজ স্মৃতি তেই আছি ”
মুনতাসিম আশেপাশে তাকালো, প্রায় অনেক মানুষ ই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে অথচ এই গর্ধব মেয়ে পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছে। মুনতাসিম কথা না বাড়িয়ে এক সাইড দিয়ে বেরিয়ে গেলো। কোন কবি যেন বলেছিলো, নারীর সঙ্গে তর্কে যেতে নেই, হার সু- নিশ্চিত। মুনতাসিম ও সেই কথায় অনুসরণ করছে।
অরিত্রা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো মুনতাসিমের যাওয়ার দিকে। মনে মনে ভাবলো, ছেলেটা কি আমাকে অপমান করে গেলো? নাকি ইগনোর করলো?
ভাবতে ভাবতে ই পিছনে থেকে কেউ কাঁধে হাত রাখতেই অরিত্রা পিছনে তাকালো, প্রাপ্তি দাঁড়িয়ে আছে। প্রাপ্তিকে দেখতেই অরিত্রার সকালের কথা মনে পড়ে গেলো, এতো কষ্ট করে মেয়েটাকে নিজের ফোনের টাকা খরচা করে ডেকে আনলো আর এই বান্দা করলো টা কি? তার কেরাস নিয়ে হাওয়া হয়ে গেলো!
অরিত্রা কটমট দৃষ্টিতে একবার তাকালো প্রাপ্তির দিকে আরেকবার প্রাপ্তির হাতের দিকে যেটা আপাতত অরিত্রার কাঁধের উপর স্থান দখল করে আছে। অরিত্রার দৃষ্টি লক্ষ্য করে প্রাপ্তি বত্রিশটা দাঁত বের করে জোর পূর্বক একটা হাসি দিয়ে তৎক্ষনাৎ হাতটা নামিয়ে নিলো।
” কিগো ময়নার মা? গাল ফুলাইয়া রাখচো কেলা? গালো কি পুলি পিঠা দিবার লাগচো নি? ”
” তোর ঢাকাইয়া আলাপ তোর কাছেই রাখ ছেমরি। তুই আজকে সকালে কি করছোস আমার সাথে? এরপর ও তোর মনে হয় আমি অরিত্রা তোর লগে কথা কমু? জীব্বনেও না ” বলেই অরিত্রা চলে আসতে নিলেই,
প্রাপ্তি তাড়াতাড়ি অরিত্রার সামনে এসে দাড়ালো, অরিত্রার গাল ধরে বলল,
” আরে আরে করো কি করো কি ময়নার মা! কই যাইবার লাগচো? তুমবি তো আমার লগে আইবা, আইয়ো আইয়ো ”
বলেই অরিত্রার হাত ধরে পার্কিং এরিয়ার দিকে নিয়ে যেতে লাগলো প্রাপ্তি। মেয়েটার মনে কি চলছে আল্লাহ ই জানে।
_________________
” এই যে শুনছেন! ”
মুনারা আক্তারের ডাকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন মাহফুজ মজুমদার। দুপুরে খাবার খেয়ে মাত্র ই রুমে এসে শুয়েছে মাহফুজ মজুমদার। তখনই রুমে ঢুকে মুনারা আক্তার। শিয়রের কাছে বসে ডাকলেন তিনি।
” হুম বলো শুনছি তো ”
মুনারা আক্তার আমতাআমতা করে বলল, ” আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম কি। মিনুর তো বয়স কম হলো না বলেন! উকালতি পাশ করেছে এখন তো একটা বিয়ে ঠা দেওয়া দরকার। পরে তো আর জামাই খুঁজে পাওয়া যাবে না। বলছিলাম কি…”
মুনারা আক্তারের কথা শেষ করতে না দিয়ে ই মাহফুজ মজুমদার বলে উঠলো, ” সম্বন্ধ পেয়েছো সেটা সোজাসুজি বললেই পারো, কথা প্যাচানোর কি দরকার? ”
” আসলে আপনাকে বলেছিলাম না! আমার খালাতো বোনের ননদের দুর সম্পর্কের চাচাতো ভাইয়ের কথা! ছেলে ইন্জিনিয়ার, মাসিক ভালো টাকা ইনকাম। এই দু বছর আগেই পাশ করে বের হয়েছে। দেখতে শুনতে ভালো একেবারে তামিল সিনেমার নায়কের মতো। নাম হলো প্রলয় পাশা। বিরাট বড়লোক! ”
মাহফুজ মজুমদার বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল, ” আগে জিজ্ঞেস করে দেখো মেয়ে বিয়ে করতে রাজি নাকি! তারপর কথা বলো, আমি আসি ”
চলবে….
[ বলেন তো কে হবে এই প্রলয় পাশা, “হিরো নাকি ভিলেন? “]