#দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_২৬

0
206

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২৬
__________________

” কোথায় যাচ্ছিস প্রলয়? আজ তোর বাহিরে যাওয়া হবে না ”

পুরো দস্তুর রেডি হয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতেই কথাটা কানে গেলো প্রলয় পাশার। হাতে ডায়ালের ঘড়ি পড়তে পড়তে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” শুনতে ইচ্ছে করছে না, সরি! ”

আনোয়ার পাশা সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছিলেন। ছেলের এমন গা ছাড়া ভাব দেখে দাঁতে দাঁত চাপলো। ছেলেটা এতো বেয়াদব হয়েছে কোন কথায় শুনে না, ইনফেক্ট তার কান দিয়ে ও কোন কথা ঢুকে না।

প্রলয় ততক্ষণে সদর দরজা পেরুতে গেলে বিরক্তি ভাবটা ছেলেকে বুঝতে না দিয়ে আনোয়ার পাশা বলে উঠলো ,

” তোর ফুপিমা আসবে আজ। ”

কথাটা কর্নোগোচর হতেই পা দুটো থেমে গেলো প্রলয়ের। আনোয়ার পাশা ছেলের থেমে যা-ওয়া দেখে খবরের কাগজের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। প্রলয় তৎক্ষনাৎ ভ্রু কুঁচকে পিছনে তাকালো। যেনো সে ভুল শুনেছে।

” কি বললে? ”

আনোয়ার পাশা পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বলল,

“বলতে ইচ্ছে করছে না, সরি ”

প্রলয় দাতেঁ দাঁত চেপে এগিয়ে গেলো সোফার দিকে,

” বলতে বলেছি আমি! ”

আনোয়ার পাশা ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আমার ইচ্ছে করছে না, শুনতে পাস নি? ”

আনেয়ার পাশা কপাল কুঁচকে তাকালো ছেলের দিকে। ছেলেটা একদম মায়ের মতো হয়েছে যেমন ফর্সা তেমন মায়াবী চেহারা। এই ছেলের চেহারার দিকে তাকালে একটু বকতেও ইচ্ছে করে না তার। শক্ত কথাও বলতে পারে না। ছেলেটা তার ভালো ই ছিলো মা মারা যাওয়ার পর ই কেমন যেন উগ্র আর বদমেজাজি হয়ে গেছে। আনোয়ার পাশার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাকে বলেছে ছেলেকে একটা বিয়ে করিয়ে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু এই ছেলেকে বিয়ের কথা বলবে কে? যা রাগ নিয়ে চলে! তবে কায়দা করে আর্যি টা হয়তো পেশ করা যাবে।

” বাবা! তুমি কি ফুপিমার কথা বলেছো? ”

আনোয়ার পাশা গলা পরিষ্কার করে বলল,

” তুই বস এখানে। তোর সাথে জরুরি কথা আছে আমার কথা শুনলে, যা বলব তা শুনলে তোকে ও কথাটা বলব আবার, বল রাজি? ”

প্রলয় কিছু একটা চিন্তা করে সোফায় বসলো,

” বলো ”

” দেখ প্রলয়। আমার বয়স হয়েছে, তোর ও বয়স থেমে নেই, উনত্রিশ চলছে। আমি বলছিলাম কি, আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু তোর জন্য একটা মেয়ের খোঁজ দিয়েছে, মেয়েটা ল’ এর স্টুডেন্ট। পড়াশোনা শেষ, এখন প্রেকটিস করছে। ”

প্রলয় বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে বলল, ” তো?”

” বলছিলাম কি মেয়ে দেখতে যাবি?”

” এটা তোমার ইম্পর্টেন্ট কথা? ”

” কাল মেয়ে দেখতে যাবো, তুই ও যাবি বল ”

” না ”

” তাহলে তোর ফুপিকেও মানা করে দেবো বলে দিলাম আসতে, আর তুই যদি বলিস তোর ফুপিও আমাদের সাথে যাবে ”

” ফুপিকে পেয়েছো বাবা? ”

” আগে কথা দে যাবি তাহলে বলব ”

বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে গেলো প্রলয়ের। বাবার কথাটা ঠিক পছন্দ হলো না তার। এমন নয় যে তার কোন পছন্দ আছে তাও নেই তবুও বিয়ে ঠা থেকে সে সবসময় ই দুরে থাকে। মত না থাকা সত্ত্বেও প্রলয় উঠতে উঠতে বলল, ” যা ইচ্ছে করো তবে ফুপি মা কে আমি বাসায় দেখতে চাই ”

বলেই উঠে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। মায়ের পরে প্রলয় এই ফুপিমা কেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। কত বছর পর ফুপিমা কে দেখবে সে! আজ তে বাসা থেকে এক পা ও নড়তে রাজি নয় সে।

____________

” এই যে মিস্টার ডাক্তার! শরীর কেমন এখন? ”

আরহাব চমকে বারান্দা দিয়ে তাকালো অপর বারান্দায়। সরাসরি মিনু দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়েছে। আরহাব মাত্র গোসল শেষ করে বের হয়েছে পরনে তার মাত্র একটা তোয়ালে।

মিনু আরহাবের দিকে তাকিয়ে চমকে নিচের দিকে তাকিয়ে গেলো তৎক্ষনাৎ। সেও অতটা খেয়াল করে নি আরহাবের কাপড়ের দিকে। যখন খেয়াল হলো ততক্ষণে দুজনই লজ্জায় পড়ে গিয়েছে। মিনু আর এক মিনিট ও না দাঁড়িয়ে তৎক্ষনাৎ রুমে চলে গেলো।

আরহাব দ্রত বিছানা থেকে কাপড় নিয়ে পরতে পরতে একবার মিনুর বারান্দার দিকে তাকালো মিনুর টিকিটাও দেখা যাচ্ছে না। ভালোই লজ্জা পেয়েছে মেয়েটা।

আরহাব নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, মেয়েটাকে তার ভালো লাগে। মেয়েটা পাশে থাকলে তার শান্তি লাগে যাকে বলে মানসিক শান্তি। মেয়েটার কথা ভালো লাগে, কন্ঠ শুনতে ও ভালো লাগে। রাগ করলেও ভালো লাগে হাসলেও ভালো লাগে। এক কথায় সব কিছু ই ভালো লাগে। আচ্ছা সে কি ভালোবেসে ফেলল এই বদরাগী মেয়েটাকে? যদি নাই বা বাসে তাহলে মেয়েটা আশেপাশে না থাকলে চারপাশ এতো শূন্য শূন্য লাগে কেনো? তাহলে কি এই ভালো লাগা, শূন্যতা অনুভব হওয়াকেই ভালোবাসা বলে?

________________

” এই মেয়ে কোথায় যাচ্ছিস তুই আমাকে নিয়ে? বাসায় চল বাসায় যাবো ”

প্রাপ্তি স্কুটির স্পিড বাড়িয়ে বেসুরা গলায় গান গেয়ে উঠলো , ” চলনা সুজন মিলে দুজন নিলয় আকাশে ভাসি, দেখুক লোকে অবাক চোখে তোর ওই দু চোখের হাসি ”

” এই চুপ থাক, আজাইরা গান, গানের সুর আর লিরিক্স রে গলা টিপপা মাইরা লাইলি ”

” অপমান করছিস অরি? ”

অরিত্রা ভ্র জোড়া কুঁচকে বলল, ” তোর কি মনে হয় আমি তোকে অপমান করছি? ”

” না”

” আরে গাধা আমি তোকে অপমান ই করছি ”

প্রাপ্তি গাল ফুলিয়ে স্কুটি চালাতে লাগলো। ” তুই সবসময় ই আমাকে অপমান করিস, বেদ্দপ বেডি! ”

প্রাপ্তি স্কুটি থামালো একটা নদীর পাড়ে। স্কুটি লক করে নদীর পানি তে পা ভিজিয়ে বসলো, পাশে বসলো অরিত্রা। জায়গাটা দুজনেরই ভীষণ প্রিয়।

প্রাপ্তি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে একটা নাম্বারে কল করে লাউড স্পিকারে দিলো, অরিত্রা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই প্রাপ্তি দাঁত কেলিয়ে হেসে ইশারা করলো শুনতে, অপর পাশ থেকে পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে অরিত্রা নড়েচড়ে বসলো,

” হ্যালো সায়র মাহমুদ স্পিকিং। কে বলছেন! ”

প্রাপ্তি বিড়বিড় করে বলল, ” হায়রে ব্রিটিশ! কথায় কথায় ইংরেজি ঝাড়ে! মন ডা চায় পানির লগে ইন্দুরের বিষ গুলাইয়া খাওয়াই দেই ”

” হ্যালো কে বলছেন? ”

প্রাপ্তি গলা পরিষ্কার করে বলল, ” ছি ছি ছি, জামাই! বউয়ের নাম্বার টা সেভ করা নাই! হতাশ! আমি খুব ই হতাশ! এই দুঃখে তো আপনার এক কেজি লবন খাওয়া উচিত ”

সায়র বিরক্তি ভাব প্রকাশ করে বলল,

” এই মেয়ে আমার নাম্বার পেলে কোথায়?”

প্রাপ্তি হেসে বলল, ” পাবলিক টয়লেটে”

” পাবলিক টয়লেটে। ওহ.. কিইইহহহ পাবলিক টয়লেটে? মজা করছো আমার সাথে? ”

” ছিই নাউজুবিল্লাহ! জামাই এর সাথে কেউ মজা করে? তওবা তওবা! ”

” এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? ফোন দিয়েছো কেন? ”

” আপনি ই তো আমার সকল সমস্যার কারণ। আপনার জন্য খাইতে পারি না আমি ঠিক মতো, দেখেন না কেমন শুকিয়ে শুটকি হয়ে যাচ্ছি ”

” তোমার কম খাওয়া ই উচিত। দিনে দিনে মুটকি হচ্ছো সেদিকে খেয়াল আছে? আমার দিকে অমন রাক্ষসীর মতো তাকিয়ে না থেকে নিজের দিকে তাকাও। কয়েকদিন পর তো দরজা দিয়ে ঢুকতে পারবা না, দরজা কাটতে হবে! ”

কথা গুলো বলেই ঠাস করে ফোন টা কেটে দিলো সায়র। এক সাথে এত অপমানে ঘোরের মধ্যে চলে গেলো প্রাপ্তি। কারো খিলখিল করা হাসির শব্দে ঘোর কাটে তার। পাশে তাকিয়ে দেখে অরিত্রা মুখ চেপে হাসছে। বোঝাই যাচ্ছে খুব কষ্ট করে এতোক্ষণ হাসি চেপে রেখেছিলো সে।

প্রাপ্তি রাগে ফোস ফোস করে বলল, ” ওই মাথা মোটা হাঁদারাম কে যদি আমি শিক্ষা না দিসি তবে আমার নাম প্রাপ্তি না। আমাকে এতো বড়ো অপমান! শা*লা কানা। চোখ আছে বেডার? আমার মতো এক চিকনি চামেলি কে বেটার মোটা লাগে? গর্ধব!

চলবে…

[ আজকের পর্বটা কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here