অতুলনীয়া #পর্বঃ১২ #লেখিকাঃদিশা_মনি

0
190

#অতুলনীয়া
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

সোহেলের শাস্তির খবর পৌঁছে যায় নয়নার কাছে। সে তো পুরো তাজ্জব বনে যায়। কোথায় তাদের হানিমুনে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে কিনা এখন সোহেল জেলে!

নয়না কারাগারের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলো। সোহেলের সাথে দেখা করে তার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইল। সোহেল নয়নাকে বলল,
‘আমি ঠিক নেই নয়না। ফাতেমার জন্য আমার এমন অবস্থা। তুমি ফাতেমাকে উচিৎ শিক্ষা দাও। তাহলেই আমি শান্তি পাবো নাহলে নয়।’

সোহেলের কথা শুনে ভীষণ রেগে যায় নয়না। বলে,
‘তুমি কোন চিন্তা করো না সোহেল। আমি খুব দ্রুত তোমাকে জেল থেকে বের করব। তোমার জামিনের ব্যবস্থা খুব তাড়াতাড়ি হবে। আর আমি ঐ ফাতেমাকে এবার এমন শিক্ষা দেব যে ও একদম পথে বসে যাবে। তুমি শুধু অপেক্ষা করো।’

এই বলেই নয়না বাইরে বেড়িয়ে আসে। না জানি এখন কি চলছে তার মাথায়।

২৩.
প্রত্যুষ চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে তাকে একটি রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে এসেছে ফাতেমা। সাথে শ্রেয়াও রয়েছে। প্রত্যেকেই বেশ আনন্দ পাচ্ছিল সোহেলের শাস্তির জন্য। ফাতেমা সোহেলের করা সব অপকর্মের ব্যাপারে প্রত্যুষ চৌধুরীকে সব জানায়। সব শুনে প্রত্যুষ চৌধুরীর ভীষণ খারাপ লাগে ফাতেমার জন্য। সাথে তিনি এটাও ভেবে খুশি হন যে সোহেল তার অপরাধের শাস্তি পাচ্ছে। প্রত্যুষ চৌধুরী বলেন,
‘আমি শুনেছিলাম, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আজ আমি সেই কথার চাক্ষুষ প্রমাণ পেলাম। সোহেলের মতো একজন অপরাধীর জীবনসঙ্গী হবার থেকে এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাওয়া ভালো। আপনি ভালো কাউকে ডিজার্ভ করেন।’

ফাতেমাও বলে,
‘আমি যদি আগেই সোহেলের এসব কুকীর্তির প্রমাণ পেতাম তাহলে ওকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে হতো না। আমি নিজেই ওকে ডিভোর্স দিয়ে চলে আসতাম। এমন জঘন্য মানুষের সাথে জীবন কাঁটানোর কোন ইচ্ছেই আমার নেই।’

শ্রেয়া চুপচাপ সবার কথা শুনছিল আর আড়চোখে প্রত্যুষ চৌধুরীকে দেখছিল। লোকটার ব্যক্তিত্ব ভীষণ ভালো লেগে গেছে শ্রেয়ার। সে নিজের জন্য ঠিক এমন একজন জীবনসঙ্গী খুঁজছিল।কথাবার্তা শেষ করে শ্রেয়া ও ফাতেমা বিদায় নিয়ে চলে আসে। আসার সময় ফাতেমাকে থামিয়ে প্রত্যুষ চৌধুরী বলে ওঠেন,
‘আশা করি আমাদের আবার দেখা হবে।’

ফাতেমা মৃদু হেসে বলে,
‘ইনশাল্লাহ।’

এরপরেই শ্রেয়া ও ফাতেমা দুজনে চলে আসে। প্রত্যুষ চৌধুরী স্মিত হাসে।


ফাতেমা বাসায় এসেই ফয়সাল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে। সোহেলকে শাস্তি দিয়েই সে এখন চুপ করে বসে থাকতে পারে না। কারণ ফাতেমা নয়নার সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানে। নয়না যে এখন তার উপর ক্ষেপে গিয়ে তার বড় কোন ক্ষতি করবে এটা বোঝা তার জন্য খুব একটা কঠিন না। এই জন্য ফাতেমা চায় এখন নয়নারও একটা ব্যবস্থা করতে। নয়না মূলত একটা মশলার ফ্যাক্টরির মালকিন। যা সে তার বাবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। নয়নার কোন ভাই নেই। সে আর তার এক বড় বোন আছে। তাদের বাবার দুটি বড় ফ্যাক্টরি ছিল। যা তিনি দুই বোনকে ভাগ করে দিয়েছেন। ফয়সাল ইসলাম ফোন রিসিভ করতেই ফাতেমা বলে ওঠে,
‘চাচা আপনি কি কোন ইনফরমেশন পেলেন?’

ফয়সাল ইসলাম আশেপাশে তাকিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেন যে আশেপাশে কেউ নেই। তাই তিনি নিশ্চিত মনে বলেন,
‘হ্যাঁ, আমি এই ফ্যাক্টরির কিছু কালো সত্য বের করতে পেরেছি। এই ফ্যাক্টরিতে যে মশলা সাপ্লাই করা হয় তাতে মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিছু উপাদান রয়েছে। যা থেকে এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগও হতে পারে। এসব উপাদান ব্যবহার করে তিনি বেশি প্রোফিট করতে গিয়ে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’

‘আপনি কি এসবের কোন প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন?’

‘হ্যাঁ,পেয়েছি। আমি খুব শীঘ্রই তোমাকে এসবের প্রমাণ দিচ্ছি।’

বলেই তিনি ফোন রেখে দেন। ফাতেমা নিশ্চিত হয়। এবার সে নয়নারও একটা ব্যবস্থা করতে পারবে। তারপর তার জীবনের সব সমস্যা দূর হবে৷ নিজের মেয়েকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।

২৪.
রাতে শ্রেয়ার পরিবারের সাথে খেতে বসে ফাতেমা। ফারিয়াও বসে ছিল তার সাথে। ফাতেমা নিজের হাতে মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ করে বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠে৷ শ্রেয়া গিয়ে দরজা খুলেই হতবাক হয়ে বলে,
‘তুই?!’

নয়না শ্রেয়াকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে তাদের বাসায় ঢুকে পড়ে। শাবানা বেগম দাঁড়িয়ে রেগে বলেন,
‘এটা কি ধরনের অসভ্যতা? কে তুমি?’

নয়না সরাসরি ফাতেমার সামনে গিয়ে বলে,
‘কাজটা তুই ভালো করিস নি৷ সোহেলকে জেলে পাঠিয়ে কি ভেবেছিস খুব প্রতিশোধ নিয়ে ফেলেছিস? কচু। আমি সোহেলকে খুব শীঘ্রই জেল থেকে বের করে আনব। তারপর দেখিস আমি তোর কি ব্যবস্থা করি।’

ফাতেমা হঠাৎ করে হাসতে থাকে। ভীষণ জোরে জোরে। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে,
‘কি বললি তুই? সোহেলকে তুই জেল থেকে বের করে আনবি? সোহেলকে জেল থেকে বের করে আনার কথা পড়ে ভাবিস আগে নিজেকে কিভাবে বাঁচাবি সেটা ভাব। তোরও শ্রীঘরে যাওয়ার সময় এলো বলে!’

‘মানে? কি..কি বলছিস তুই? আমি কেন জেলে যাবো? কি করেছি আমি?’

‘তোর অপরাধের ফিরিস্তি তো বলে শেষ করে যাবে না। জানি না, যত অপরাধ করেছিস তাতে আল্লাহর দরবারে তোর কি শাস্তি হবে। যদি শরীয়া বিধান প্রচলিত থাকত তাহলে তো প*কীয়ার জন্য ভয়াবহ শাস্তি পেতি। তবে আশা করি, পৃথিবীতে না পেলেও মরার পর এই সব কিছুর শাস্তি তুই পাবি। আপাতত তুই পৃথিবীতে যা শাস্তি পাস সেটা আমি দেখি। দেখে নিজের মানসিক শান্তির ব্যবস্থা করি।’

নয়নার কাছে সব কথাই কেমন যেন ধাঁধার মতো লাগতে ছিল। সে বুঝছিল না ফাতেমার মনে কি চলছিল। সে কেন তাকে শ্রীঘরে যাওয়ার কথা বলছিল! এর মাঝেই ঘটে গেল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা! ফাতেমার আর নয়নাকে সহ্য হচ্ছিল না। তাই ফাতেমা নয়নার চু**লের মুঠি ধরে ঘুরায়। তারপর শ্রেয়াকে বলে,
‘ঝাটা নিয়ে এসো। ও তো আজ শ্রীঘরে যাবেই তার আগে আমরা ওর একটা ব্যবস্থা করি।’

শ্রেয়া ঝাটা নিয়ে আসে। পরপর ফাতেমা,শ্রেয়া, শাবানা বেগম সবাই মেয়েটাকে ঝাটা দিয়ে পেটায়। এখানেই থেমে থাকে না। শ্রেয়া পচা পানি এনে ঢেলে দেয় নয়নার গায়ে। নয়না হতবাক হয়ে যাচ্ছিল। ফাতেমা বলে,
‘এসব কিছু করব বলে ভাবি নি। তবে তুই যখন নিজে থেকে সুযোগ করে দিলি তখন আমি সেই সুযোগ টা কাজে লাগাবোই।’

বলে নয়নাকে ইচ্ছা মতো চড় থাপ্পড় দিতে থাকে। এরমধ্যে শ্রেয়া বলে,
‘এতক্ষণে মনে হয় সব প্রমাণ পুলিশের হাতে চলে গেছে। আমি যাই পুলিশকে ফোন করে ইনফর্ম করে দেই যে অপরাধী আমাদের বাড়িতে আছে।’

নয়না কিছু বুঝতে না পেরে হতবাক হয়ে চেয়ে থাকে। এরমধ্যে শ্রেয়া পুলিশকে ইনফর্ম করে দেয়। ফাতেমা নয়নার চুলের মুঠি ঘুরিয়ে বলে,
‘অপেক্ষা কর। একটু পরেই পুলিশ এসে তোকে জেলে নিয়ে যাবে। সোহেলকে খুব মিস করছিলি না? এখন যা গিয়ে একসাথে জেলে গিয়ে সংসার কর।’

নয়না রেগে তাকায়। কিন্তু তার কিছু আর করার ছিল না। কিছু সময় পর পুলিশ চলে আসে। শ্রেয়া দরজা খুলে দিয়ে বলে,
‘আপনারা এসেছেন?’

‘মিসেস নয়না মির্জা এখানে রয়েছেন?’

‘হ্যাঁ।’
পুলিশ ভেতরে এসে বলে,
‘মিসেস নয়না মির্জা, মসলায় ক্ষতিকর উপাদান মিশিয়ে জনগণের স্বাস্থ্য হানির অপরাধে আমরা আপনাকে গ্রেফতার করছি।’

কয়েকজন মহিলা পুলিশ নয়নাকে হাতকড়া পড়িয়ে তাকে নিয়ে যেতে ধরে। তবুও নয়নার তেজ কমে না। সে যেতে যেতে বলে,
‘আমি হলাম বিখ্যাত বিজনেসম্যান নাহিদ মির্জার মেয়ে নয়না মির্জা। কোন জেলের সাধ্য নেই আমায় আটকে রাখার। আমি খুব শীঘ্রই বের হবো। আর তারপর তোর জীবন জাহান্নামে পরিণত করব।’

এরমধ্যে পুলিশ তাকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
[নয়নার শাস্তি দেখে আপনাদের কেমন লাগল?]

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here